Sunday, September 9, 2018

কুরআনের মুসহাফে লেগে থাকা পবিত্র ধুলো লাগাই মোর সফেদ জামায় - মুহাম্মাদ আতিক উল্লাহ



মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ ( আদীব হুজুর ) নিয়মিত রামাদানের শেষ দশকে ই‘তিকাফে বসেন। অনেক আগে থেকে হুজুরের এই আমল জারি আছে। হুজুর সবকিছু থেকে একসূ-একাগ্র হয়ে ইবাদত-বন্দেগি আর লেখালেখিতে নিমগ্ন থাকেন। সারারাত জেগে একটানা লিখে যেতে থাকেন। মসজিদের এক কোণে। নিরবে।

ফাঁকে ফাঁকে কুরআন কারীম তিলাওয়ারত চলতে থাকে। কখনোবা দীর্ঘ মুনাজাত। সাধারণত আসরের পরই কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হুজুরের কুরআন তিলাওয়াতের আলাদা একটা ধাঁচ আছে। সুর আছে। শুনলেই বোঝা যায় বড়ই আন্তরিক এই তিলাওয়াত। বুঝে বুঝেই তিলাওয়াত করছেন। কোনদিকে না তাকিয়ে। এক মনে এক ধ্যানে।

হুজুর আবার সব কুরআন থেকে তিলাওয়াত করতে অভ্যস্ত নন। হুজুরের নির্দিষ্ট একটা কুরআন কারীম আছে। একবার ওটা কিভাবে যেন পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানা গেল এই বিশেষ ধরনে ছাপা হওয়া একটা কুরআন কারীম এক জায়গায় আছে।


সেখান থেকে অনুমতি নিয়ে কুরআন কারীমটা ফটোকপি করে নিয়ে আসলাম। হুজুরের মুখে আকাশের চাঁদ পাওয়ার হাসি ফুটল। স্মিতহাস্যেই বললেন:
সারা ছেলেবেলা এই কুরআন কারীমের সাথে চোখ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মাথার ভেতরে নির্দিষ্ট একটা নকশার ছাপ বসে গেছে। ভিন্ন আঙ্গিকের ছাপা সেটা যত সৃদ্যশ্য আর মনোরমই হোক, চোখে সয় না।


শিক্ষা তিন:
রামাদানের শেষ দশক। একদিন মসজিদে হুজুরের পেছনের কাতারে বসে বসে কুরআন তিলাওয়াত করছি। একচোখ হুজুরের দিকে। কখন কী প্রয়োজন হয়। হুজুরের নড়াচড়া দেখে বুঝলাম এবার তিলাওয়াত করবেন। ছুটে গিয়ে কুরআন কারীম এনে দিলাম। ঢাকা শহর ধুলোর শহর। সামান্য আগে মুছে রাখলেও ধূলির আস্তর জমে যায়।


আমি কুরআন কারীমখানা হাতে নিয়ে ধুলো মোছার জন্য রুমাল খুঁজছিলাম। হুজুর মুচকি হেসে আমার হাত থেকে কুরআন কারীমখানা নিয়ে, পরিহিত ধবধবে শাদা জামায়, বুকের কাছে লাগালেন। আদর করে, ইহতিরামের সাথে ধুলোগুলো মুছে ফেললেন। শাদা জামায়, বুকের কাছখানটিতে কালো হয়ে গেল সেদিকে ভ্রক্ষেপ নেই।


আমি শিখলাম কুরআন কারীমের গায়ে ধুলোগুলোও সম্মানের যোগ্য। বুকে মাখার যোগ্য। আহ!
এই ফাঁকে আরেকটা কথা বলে রাখি। আমার হযরত, প্রফেসর হামীদুর রাহমান সাহিব বলেছেন, মাওলানা আবরারুল হক সাহিব ইরশাদ করেছেন:
আমরা কুরআন কারীমের জুঝদান ধোয়ার পর পানিগুলো নর্দমায় বা আবর্জনায় ফেলি। এতে কুরআন কারীমের সাথে বে-আদবি হয়। আমরা জুঝদান ধোয়া পানিগুলো পবিত্র স্থানে বা গাছের গোড়ায় ঢালব। নাপাক জায়গায় ফেলব না। ইনশাআল্লাহ কুরআন কারীম কিয়ামতের দিন আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।

- শাইখ আতিকুল্লাহ সাহেব

No comments:

Post a Comment