Sunday, September 2, 2018

আল-কায়েদা ও তালেবান সম্পর্ক, অপপ্রচারকারীদের বিভ্রান্তির জবাব!


কিছু ভাই মেহেরবানি করে একটি বিষয় আমার নজরে এনেছেন এবং এ নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। আল্লাহ তাঁদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। বিষয়টি হল ফেসবুকে বর্তমানে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এবং জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদ-এর সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে লিখালিখি করছেন। এসব লেখার মধ্যে কিছু তথ্য অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ভাইদের অনুরোধে এবং উক্ত লেখাগুলোর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত তথ্যগত বিভ্রাট ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখকদের মনমতো ব্যাখ্যা দেখে এ ব্যাপারে কিছু লেখার ব্যাপারে মনস্থির করেছি। সংশয় নিরসনের চেয়ে উত্তম বিষয় হল এর ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে পুনরায় আবার আলোচনা উপস্থাপনও করারও সুযোগ হবে ইনশাআল্লাহ। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।
.
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদের সম্পর্কের ব্যাপারে এমন কিছু লেখা আমি দেখেছি। যেমন- কেউ একজন একটি আরবী ফোরাম থেকে কিছু লেখা আর লেখকের রায় হুবহু তুলে দিয়েছেন। আরেকজন ইচ্ছামতো নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাস ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করছেন কোন উৎস ছাড়াই, আল্লাহ জানেন এসব ইতিহাস ও বিশ্লেষণ তিনি কোন সূত্রে উল্লেখ করছেন। তৃতীয় আরেকজনকে দেখলাম তালিবান বর্তমান মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ডগুলোর শাসকদের উপর তাকফির করে না, এ কথা উল্লেখ করে বলতে চাচ্ছেন যে আল-কায়েদার উসুল অনুযায়ী তাহলে তালিবানকে মুরজিয়া বলা উচিত! চতুর্থ আরেকজন বলছেন আল-কায়েদা নাকি সবসময় “যাহা আল কায়েদা তাহাই তালিবান” এমন দাবি করে আসছে! প্রাথমিকভাবে লেখাগুলো দেখে যা বুঝতে পারলাম তা হলে ফেসবুক হল এমন একটি স্থান যেখানে কোন বিষয়ে বিশদ ও প্রাথমিক উৎস থেকে জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ফেসবুকের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া। সত্য বলতে গেলে এসব লেখার চেয়ে বরং জামাতুল বাগদাদির পক্ষ থেকে ২০১৩-১৪ সালে যেসব বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা উপস্থাপন করা হতো সেগুলো তথ্য, যুক্তি ও বুঝের দিক দিয়ে আরো কম দুর্বল ছিল। সেগুলোই সত্যের সামনে ভেঙ্গেচুড়ে গেছে, রয়ে গেছে জামাতুল বাগদাদীর বাস্তবতাহীন নিস্ফল আস্ফালন।
.
ইমারতে ইসলামিয়াহ আফগানিস্তান ও জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদের সম্পর্কের ব্যাপারে ও এ নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির ব্যাপারে বিস্তারিত ও পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা ইনশাআল্লাহ উপস্থাপন করা হবে। তবে একটি বিষয় নিয়ে বেশ কৌতুক বোধ করছি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় –
.
শাইখ উসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদা আমীরুল মুমিনীন মুল্লাহ মুহাম্মাদ ওমরকে বাইয়াতুল উযমা দেন যখন তালিবান ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থায়, রাহিমাহুমুল্লাহ।
.
আল-কায়েদা ও শাইখ উসামার জন্য ইমারতে ইসলামিয়া ও আমীরুল মুমীনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ ওমরের কুরবানীর বিষয়টি স্বীকৃত। যখন পাকিস্তান থেকে শীর্ষ আলিমরা মুল্লাহ ওমরকে অনুরোধ করতে যান যে উসামাকে যেন আমেরিকানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন তিনি অশ্রুসজল চোখে উলটো তাঁদের কাছে উসামার জন্য দোয়া চেয়েছেন। এটি আলিমদের সাক্ষ্য দ্বারা সাব্যস্ত বিষয়।
.
ইমারতে ইসলামিয়ার জন্য আল-কায়েদার কুরবানী একটি স্বীকৃত বিষয়। যেমন শাইখ উসামার নির্দেশে তালিবানের ইমারতের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ শত্রু আহমাদ শাহ মাসুদকে হত্যা করে আল কায়েদার মুজাহিদীন। এখনো আল-কায়েদার মুজাহিদীন আফগানিস্তানে ইমারতের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। এবং শাইখ আইমান আজ-জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ এর সর্বশেষ বক্তব্যেও বলা হয়েছে যে ইমারতে ইসলামিয়ার সুরক্ষা ও প্রসার জামাতের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্যসমূহের একটি।
.
আলহামদুলিল্লাহ আল কায়েদার বাংলাদেশী মুজাহিদিনও ইমারতে ইসলামিয়ার হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং ইনশাআল্লাহ শহীদ হয়েছেন। যার অসংখ্য প্রমাণ আছে, যার মধ্যে সর্বশেষ হলে “আল জিবাল মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত জিহাদের পাথেয়” নামক ভিডিওটি। অন্যদিকে যারা তালিবান আর আল কায়েদার মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করে আল কায়েদাকে পথভ্রষ্ট চরমপন্থী আর তালিবানকে মধ্যমপন্থী প্রমাণে সচেষ্ট তাদের কেউ আর না তাদের সাথে সম্পর্কিত কেউ জিহাদের ময়দানে উপস্থিত আছে!
.
ইমারতের দ্বিতীয় আমীর মুল্লাহ আখতার মানসুর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর অডিও বার্তায় যাদের বায়াত গ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রথমে তিনি বায়াত গ্রহণ করেছেন জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদের আমীর শাইখ ড. আইমান আজ-জাওয়াহিরির হাফিজাহুল্লাহ বায়াত।
আল কায়েদার প্রতিটি ঘোষিত শাখা বারবার স্পষ্টভাবে বলেছে তাদের বায়াত শাইখ আইমান আজ-জাওয়াহিরির হাফিজাহুল্লাহ এর মাধ্যমে ইমারতে ইসলামের আমিরের কাছে, এবং তারা একে শরয়ী দায়িত্ব মনে করেন।
.
মুল্লাহ ওমর থেকে শুরু করে হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা পর্যন্ত কেউ জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদের ব্যাপারে ঐ ধারণা রাখেন না যা এসব সমালচনাকারীরা রাখেন, যেমন – আল কায়েদা চরমপন্থি, গুলাত, উম্মাহর জন্য ক্ষতিকর, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি। কারণ তারা ক্রমাগত জামাআতের মুজাহিদিন, আহলুস সুন্নাহ, সম্মানিত ভাই ইত্যাদি বলছেন।
.
আল-কায়েদার জন্য তালিবান রক্ত দিচ্ছে, আর ইমারতের জন্য আল কায়েদা রক্ত দিচ্ছে। তারা একে অপরকে সাহায্য করছে, একত্রিত হয়ে জিহাদ করছে। তাঁদের পরস্পরের অবস্থান তাঁদের দুই পক্ষের কাছে অজানা নয়। এ দুই জামা’আতের মধ্যে সম্পর্ক কেমন তা বুঝার জন্য এ বাস্তবতাগুলি কি যথেষ্ট নয়?
.
এতো কিছুর পরও ফেসবুকে এসে আমাদের জানতে হচ্ছে অনলাইনে ইমারতে ইসলামিয়ার সুরক্ষায় হিজরত, রিবাত ও ক্বিতাল করা আল-কায়েদার মুজাহিদিনের সমালোচনা যারা বাংলাদেশে বসে করছে, তারা আল-কায়েদার চেয়ে ইমারতে ইসলামিয়ার অধিকতর নিকটবর্তী! যারা ইমারতের জন্য জান দিয়েছে আর যাদের জন্য ইমারত জান দিয়েছে, তাঁদের চেয়ে যারা হিজরত, রিবাত, ক্বিতাল, কিংবা ময়দানে পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিতি কোন কিছুই করেনি তারা ইমারতের বড় শুভাকাঙ্ক্ষী! মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ শুধু বেশি না বরং যেন উপচে পড়ছে!
.
এতো কিছুর পর কার কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট না যে এ দুটি জামা’আতের মধ্যে কী ধরণের সম্পর্ক বিদ্যমান? আর কারা কোন অবস্থান কেমন কথা বলছে? আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।
.
ইনশাআল্লাহ অচিরেই এ ব্যাপারে সৃষ্ট বিভ্রান্তিগুলোর ব্যাপারে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা তুলে ধরা হবে।
.
[খানিকটা সম্পাদিত আকারে সংগৃহীত]

No comments:

Post a Comment