Monday, September 3, 2018

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য...



"এই শুনছো,অমুকের মেয়ে নাকি নতুন পর্দায় ঢুকছে!! মনে হয় কোন দল টলে যোগ দিছে।"

"জানো,অমুকের মেয়ে কারো সামনে বের হয় না। আপন চাচাতো ভাইয়ের সামনেও সেদিন বের হয়নি। পায়ে ধরে সালাম করা তো ছেড়েই দিয়েছে। বেয়াদ্দপ মেয়ে।"

"ইইহহহ দুনিয়াবি পাপ কামাই করে এখন পর্দায় ঢুকছে। এখন আর পর্দায় ঢুকে কি হবে যা আকাম করার তা তো করেই ফেলছে।"

"অমুকের ছেলে বাপের আগে দাড়ি রেখে দিছে। খবর নাও!! আমার তো মনে হয় জঙ্গিদের দলে যোগ দিছে।"

"এখন হাদিস দৌড়াও "সিগারেট হারাম"?? কয়দিন আগে নিজেও সিগারেট খেতে, ভুলে গেছ??"

"হাহাহাহা প্রেম হারাম তোমার মুখে শুনলে হাসি পায়। দুদিন আগেও নিজে এই হারাম প্রেমে অন্ধভাবে জড়িত ছিলে।"

হঠাৎ করে আল্লাহর পথে আসা ছেলে/মেয়ের পেছনে বা সামনে উপরিউক্ত কথাগুলো বলা হয়। পিছনে তারা যা বলে তা যখন সেই মেয়েটি/ছেলেটি জানতে পায় তখন তার মনের অবস্থা কি হয় তা কি আপনি একবারো ভেবে দেখেছেন?? এই পিছনে কথা বলাকে আমরা গীবত বলে জানি। গীবত কবীরা গুনাহ!!
আল্লাহ বলেন, "হে মু’মিনগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। কতক ধারণা পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ ক্ববূলকারী, অতি দয়ালু।" (সূরা আল হুজুরাত আয়াত ১২)
আর হাদিসে আছে; আল-মুসতাওরিদ (রাঃ) হতে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক লোকমা ভক্ষন করবে আল্লাহ তাকে এজন্য জাহান্নাম হতে সমপরিমাণ ভক্ষন করাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষত্রুটি বর্ণনার পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে অনুরূপ জাহন্নামের পোশাক পরাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির (কুৎসা) রটিয়ে খ্যাতি ও প্রদর্শনীর স্তরে পৌছবে, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাকে ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর জায়গাতেই (জাহান্নামে) স্থান দিবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৮১)

একটি ছেলে/মেয়ে হুট করে তখনই দ্বীনের পথে আসে যখন সে আল্লাহকে মন থেকে ভালবাসে আর আল্লাহর আদেশ নিষেধকে মন থেকে ভালোবেসে পালন করে। সামনা সামনি যখন আপনি তার অতীতের গুনাহের কথা মনে করিয়ে দেন তখন তার মনের অবস্থা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝবে না!!! দ্বীনের পথে আসা কি এতই সোজা মনে করেন?? যারা উত্তপ্ত গরমেও পরিপূর্ণ পর্দা করে তারা কি নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে?? যেই ছেলেরা নিজের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে দাড়ি রাখে, টাখনুর উপর প্যান্ট পড়ে তারা কি অন্যকে দেখিয়ে বেড়ানোর জন্য করে?? নিজের আরামকে বাদ দিয়ে এত কষ্ট কি তারা নিজের জন্য করে?? আসলেই যখন কেউ এরকম বলে তখন মনের মধ্যে একটি কথাই বেজে উঠে "হে আল্লাহ,আমরা যারা আপনার সন্তুষ্টির জন্য,আপনার শাস্তি ভয়ে এত কষ্টের পরও অটল আছি। আপনি যেন আখিরাতে আমাদের এর উত্তম প্রতিদান দান করেন।" আচ্ছা, সে তো তাওবা করে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছে। কিন্তু আপনি?? হয়তবা তাকে আল্লাহ অতীতের সব গুনাহ ক্ষমাও করে দিয়েছেন। সেই মূর্খ লোক গুলো জানে না যে যারা তাওবা করে ফিরে আসে তাদের খারাপ কাজকে আল্লাহ ভাল কাজে রূপান্তরিত করে দেন সুবহানআল্লাহ। দেখুন আল্লাহ কি বলেন??

আল্লাহ বলেন, "তবে তারা ব্যতীত যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ এদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।"(সূরা আল ফোরকান আয়াত ৭০)

তাই পরনিন্দা করা, আর দ্বীনের পথে আসা ছেলে/মেয়েকে অতীতের জন্য খোঁটা দেয়া বন্ধ করুন। হয়তবা সে আল্লাহর কাছে আপনার থেকেও অনেক উত্তম অবস্থানে আছে!!

লিখাঃ Ummey Hosne Ara



No comments:

Post a Comment