Tuesday, September 4, 2018

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে চেতনাবাজ সেকুলাঙ্গারদের বর্মিজ মানসিকতা


আসসালামু আলাইকুম।

রোহিঙ্গাদের অধিক জন্মহার নিয়ে বাংলাদেশের কিছু চেতনাজীবি জানোয়ার নোংরাভাবে উপহাস করছে, অনেকে এমনও বলছে রোহিঙ্গারা পরবর্তীতে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশ দখল করে নিবে আর ফিলিস্তিনের মত অবস্থা সৃষ্টি করবে।

প্রথম কথা হচ্ছে- ইসলামে আসলেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিষিদ্ধ যদি না কোনো সমস্যা থাকে। শুধুমাত্র রিযিকের চিন্তা করে সন্তান হত্যা করা বা জন্ম হওয়ার সুযোগ না দেয়া হচ্ছে চরম পর্যায়ের জাহেলিয়াত। আধুনিকতার বিষাক্ত ছোবল থেকে রোহিঙ্গারা এখনো অনেক দূরে আছে। ফলে তারা আগের কালের মত ৭-৮ টা সন্তান জন্ম দেয়। কিন্তু এই দেশে এরা আসার পর বাংলাদেশী এনজিওগুলো তাদের মাঝে বেলুন আর পিল সরবরাহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্মহার আটকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাংলাদেশে আজ থেকে ৫০ বছর আগেও এই জাহেলিয়াত ছিল না, এক সন্তান বা দুই সন্তান নীতি। আমাদের দাদা নানারা ১২-১৫ ভাই বোন ছিলেন, আমাদের বাবা চাচা মামারা ৭-৮ ভাইবোন , এটা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। অথচ ৫০ বছর পর এদের ছেলে মেয়েরা অন্য কোনো জাতির জন্মহার নিয়ে সমালোচনা করে, উপহাস করে নিজেকে আধুনিক প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছে, অথচ তারা এসব বুলি কেন তাদের বাবাদের জেনারেশন বা দাদা নানাদের জেনারেশনের কাউকে শোনাচ্ছে না। নিজের বাবাকে কি বলতে পারবে- বাবা, তোমার বাবা কেন বচ্ছর বচ্ছর সন্তান জন্ম দিয়ে ঘরটা ভরে ফেলেছে, দেশের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিছে।
হয়তো তার বাবা তার দাদার ৫ম সন্তান। অধিক জন্মহারের ফসল আজকে অধিক জন্মহারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, অথচ এটা যদি তার দাদার আমলে করা হতো হয়তো সে জন্ম হতো না, হলেও গর্ভের ভেতরেই তাকে নিকৃষ্টভাবে হত্যা করা হতো।

আমরা পশ্চিমের দিকে তাকালে দেখতে পাই শুধু বৃদ্ধ আর বৃদ্ধাদের, তাদের কেউ নাই, তারা সন্তান গ্রহণ করে নি, কারণ সন্তান পালাকে একটা ঝামেলা মনে করা হয়। আর এই চিন্তা চেতনা থেকেই এক সন্তান দুই সন্তান নীতিকে অনেকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ মানুষ ভাবে অধিক সন্তান জন্ম নিলে তার ভাগের রিযিক খেয়ে ফেলবে। অথচ আল্লাহ রব্বুল আলামীন সকলকে নির্দিষ্ট রিযিক দিয়েছেন।

রোহিঙ্গারা যেভাবে সন্তান জন্ম দিচ্ছে সেটাই সঠিক আর স্বাভাবিক পদ্ধতি। আর বাংলাদেশীরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে জন্মের আগেই সন্তান হত্যা করছে। আবার নির্লজ্জ ভাবে অন্যদের জন্মহার নিয়ে উপহাস করছে, এই চেতনাজীবি জানোয়ারগুলাকে তাদের বাবা মা গর্ভে থাকতে নষ্ট না করে বড় ভুল করে ফেলেছে (চেতনাবাজদের সুত্রমতে), নয়তো আজ এই জঘন্য চিন্তাধারীদের বাকওয়াস শুনতে হতো না। বার্মিজরা অস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা কুপিয়েছে আর এই চেতনাবাজরা নিজেদের চিন্তা বুদ্ধি আর আচরণ দিয়ে রোহিঙ্গা কোপাচ্ছে। কেউ কেউ এমন কমেন্ট করছে- এই কারণেই রোহিঙ্গাদের বার্মিজরা বের করে দিছে, (ভালো হইছে), এমন অনেক কথা।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- একজন চেতনাবাজ আর একজন মুসলিমের পার্থক্য হচ্ছে - চেতনাবাজ শুধু জাতীয়তাবাদী চেতনা বুঝে আর কিছু বুঝে না। আর একজন মুসলিমের কাছে জাতীয়তাবাদ বা জাতিভেদ নাই। যারাই মুসলিম তারা একে অপরের ভাই। একজন বাংলাদেশি মুসলিম রোহিঙ্গাদের কখনোই পর মনে করে না, বরং আপন মনে করে, নিজেদের লোক মনে করে। এজন্যই রোহিঙ্গাদের সাহায্যে মুসলিমরা ছুটে গিয়েছিল শরণার্থী শিবিরগুলোতে। আর সেকুলার জানোয়ারের দল প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করছিল, এই অত্যাচারিত মজলুমদের আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে বলছিল, তাদের বের করে দিতে বলছিল, বার্মিজ হায়েনাদের হাতে তুলে দিতে বলছিল। এখনও তেমনই প্রচেষ্টা চলছে।

তৃতীয় কথা হচ্ছে- রোহিঙ্গারা বিদ্রোহ করার মত শক্তি রাখে? যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই তারা কি মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে? নিজের শত্রু ফেলে আশ্রয়দাতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে? সেকুলাররা নিজেদের যেমন ভাবে অন্যকেও তেমন ভাবছে।

আচ্ছা ধরে নিলাম, রোহিঙ্গারা যুদ্ধ করবে। যদি যুদ্ধ করে তবে কিসের ভিত্তিতে যুদ্ধ করবে? জাতীয়তাবাদের পক্ষে, তাই তো? মানে রোহিঙ্গারা নিজেদের জাতি এবং ভাষার জন্য যুদ্ধ করবে সেটা যে ভূমিতেই হোক। তাহলে এখানে ভুল কি আছে? জাতীয়তাবাদের বিষবাস্প তো পশ্চিমারা ছড়িয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্র গঠনের মূলনীতি বানানো হয়েছে এটাকে, তাহলে রোহিঙ্গারা যদি এর ভিত্তিতে যুদ্ধ করে ভুল কিছু কি হবে? বাঙ্গালিরা বাংলাদেশ গঠনের জন্য যুদ্ধ করেছে, তবে রোহিঙ্গাদের কি দোষ?

শেষ কথা হচ্ছে- রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশি মুসলিমদের ভাই, জাতিভেদ উভয়কে আলাদা করতে পারবে না। তারা আমাদের অংশ, আমারা তাদের অংশ। কোনো মুসলিম রোহিঙ্গাদের পর মনে করতে পারে না, এটা আল ওয়ালা ওয়াল বারার দাবি।

চেতনাবাজদের উদ্দেশ্যে এটাই বলবো - আপনারা বেলুন আর পিল ব্যবহার করুন, আপনারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করুন। যারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে না তারা আপনার ভাগের খাবার খেয়ে ফেলবে না। তারা নিজেদের রিযিক থেকেই খাবে। এতো স্বার্থপর আর নিচু চিন্তা বাদ দেন। নিজের খাবার খাদ্য আর বেলুন নিয়ে চিন্তা করেন, অন্যের নয়।


No comments:

Post a Comment