Tuesday, September 4, 2018

জাহেলী সাহিত্য, ইসলামি সাহিত্য এবং পাঠকের হিপোক্রেসি - আরিফুল ইসলাম



এক.
তখন আব্বাসীয় খিলাফতের যুগ। আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন খলিফা আল মামুন (৮১৩-৮৩৩)।

একমাত্র গ্রীক রচনাবলী অনুবাদ করতেই তিনি তখনকার তিন লক্ষ দিনার ব্যয় করেন।
একবার রোমের শাসক কায়সারকে তিনি চিঠি লিখলেন যে, এরিস্টটলের বইসহ অন্যান্য কোনো বই রোমে থাকলে তা যেন বাগদাদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক পাদ্রী কায়সারকে কিছু Banned Book এর সন্ধান দেন। খৃষ্টধর্মের ক্ষতি হবে এই আশংকায় বইগুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। প্রত্যেক রোমান সম্রাট ক্ষমতায় এসে ঐ তালাবদ্ধ বাক্সে আরেকটা করে নতুন তালা লাগিয়ে দিতেন।

পাদ্রীর পরামর্শে সম্রাট কায়সার এ সকল নিষিদ্ধ বইগুলো পাঁচটি উটে বোঝাই করে বাগদাদ পাঠিয়ে স্বস্তি লাভ করেন এই ভেবে যে, এবার এইসব নিষিদ্ধ বইগুলো পেয়ে মুসলমানদের ধর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খলিফা আল মামুন এই অমূল্য ধন (!) পাওয়া মাত্র দার্শনিক আল-কিন্দিকে এগুলো অনুবাদে নিযুক্ত করেন। [১]

ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়, খলিফা আল মামুনের পাওয়া সেই অমূল্য ধনভাণ্ডার (!) তখনকার সমাজে এতোটাই প্রভাব বিস্তার করে যে মুসলমানরা গ্রীক দর্শন দিয়ে এক পর্যায়ে কুর'আন বিশ্লেষণ করা শুরু করে। গ্রীক দর্শন আর তাদের যুক্তির বিরুদ্ধে কুর'আনের কোনো আয়াত পাওয়া গেলে তারা সেগুলো অস্বীকার করতো!

সেই যুক্তিবাদী দলটি মু'তাযিলা নামে পরিচিত এবং একটা বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) এইসব মু'তাযিলাদের বিপক্ষে বিতর্ক করেছিলেন, কলম ধরেছিলেন।
খলিফা মামুন সেই নিষিদ্ধ বইগুলো আমদানি করে যেনো খাল কেটে কুমির এনেছিলেন।


দুই.
আমর ইবনু শারীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সফরসঙ্গী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কি উমাইয়া ইবন আবিসসালাতের কোনো কবিতা মুখস্থ আছে?

শারীদ বললেন, জ্বি আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবৃত্তি করে যেতে বললেন।
শারীদ একটি পঙক্তি শোনালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ক্যারি ওন/চালিয়ে যাও।
শারীদ আরো একটা কবিতা শুনালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার বললেন, ক্যারি ওন/চালিয়ে যাও।
এভাবে শারীদ একে একে ১০০ টি পঙক্তি সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনালেন।[২]
এই উমাইয়া ইবন সালাত (কবি) ছিলেন একজন কাফের কবি। ইসলামের দাওয়াত পেয়েও কাফের অবস্থায়তেই মৃত্যুবরণ করেছেন। [৩]
তবুও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমাইয়া ইবন সালাতের কবিতা শুনতে পছন্দ করতেন এবং তার সম্পর্কে বলেছেন, উমাইয়া ইবন সালাত তো প্রায় মুসলিম হয়েই গিয়েছিলো (যদিও মুসলিম হয়নি)। [৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমাইয়া ইবন সালাতের কবিতা এজন্যই পছন্দ করতেন যে, তার কবিতায় তাওহীদ ও আখিরাতের কথা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে (যদিও সে কাফের ছিলো)।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার কবিতা ঈমানগ্রহণ করেছে, কিন্তু তার হৃদয় কুফুরি করেছে। [৫]
একজন কাফেরের যে কবিতাগুলো ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো না, ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই কবিতাগুলো শুনতে পছন্দ করতেন।


তিন.
আমাদের পাঠকদের মধ্যে ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করা করা যাচ্ছে, আমরা ইসলামী সাহিত্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, একই সময়ে জাহেলী সাহিত্যের প্রশংসায়ও পঞ্চমুখ।
এটা এরকম যে, যখন কেউ একজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মধ্যকার রেইস কম্পিটিশন নিয়ে একটা লেখা লিখলো তখন সেটাতে আমরা কমেন্ট করলাম, 'মা-শা-আল্লাহ, অনেক সুন্দর ঘটনা, অনুপ্রেরণা যোগায়'।
ঠিক পরের পোস্টে যখন দেখলাম একটা নিষিদ্ধ প্রেমের (বিবাহ বহির্ভূত) গল্প, কবিতা, চিঠি সেটাতেও কমেন্ট করলাম, 'বাহ বেশ সুন্দর প্রেমের গল্প/কবিতা/চিঠি! লেখার প্রতিটা লাইনে লাইনে ভালোবাসা খুঁজে পাই, এরকম সুন্দর প্রেমের গল্প আরো চাই'।
দুইধারার লেখনীতে এমন প্রশংসনীয় কমেন্টের কারণ আমার কাছে দুটো মনে হয়; হয় আমরা পরিচয়হীনতায় ভুগছি (Identity Crisis) নতুবা আমাদের মধ্যে হিপোক্রেসি আছে।
পরিচয়হীনতায় ভুগা মানে, আমি আসলেই জানিনা আমি কোন পরিচয়, কোন আদর্শ লালন করি। আমি কি ইসলামি আদর্শ লালন করি, নাকি সেকুলার আদর্শ। এজন্য দুইধারার লেখাতেই আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই, যেহেতু আমি নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ লালন করিনা।

আর হিপোক্রেসি হলো, সবাইকে সন্তুষ্ট করার ইচ্ছা। ইসলামী সাহিত্যের পাঠকের কাছে আমি তাদের একজন আর জাহেলী সাহিত্যের পাঠকের কাছে আমি তাদেরই একজন বলে পরিচয় দেওয়াটা হিপোক্রেসি।
যেমন, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দ্বৈরথের আগে আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের কাছে গিয়ে বললাম, আমি আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি আবার ব্রাজিলের সাপোর্টারদের কাছে গিয়ে বললাম, আমি ব্রাজিল সাপোর্ট করি।
খেলা যখন শুরু হলো তখন আমি জার্মানির জার্সি পরে খেলা দেখতে গেলাম, যাতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের খেলা শেষে সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল শুরু হলে বলতে পারবো, আমি আসলে এই কোন্দলে নাই, আমি জার্মানি সাপোর্ট করি!

চার.
জাহেলী সাহিত্য বলতে আমি এখানে স্রেফ নিষিদ্ধ প্রেমোপাখ্যানকে বুঝাচ্ছি। আমার আলোচনার মূল বিষয় এটা না যে, জাহেলী সাহিত্য পড়া যাবে কি যাবেনা।
আলোচনার মূল বিষয় এটা যে, জাহেলী সাহিত্য পড়ে সেই জাহিলী সাহিত্যের দাওয়াত (রিভিউ/প্রশংসা) মানুষকে দেওয়া যাবে কি না?
বিষয়টা এরকম যে, একজন হলিউড-বলিউডের মুভি দেখেন। মুভি বলতে রোমান্টিক মুভি (রোমান্টিক মুভি মানে অশ্লীল মুভি)। মুভিগুলো দেখার পর একজন মুসলমান সেই মুভিগুলোর রিভিউ/দাওয়াত/প্রশংসা করতে পারবেন কিনা সেটাই আমার আলোচনার মূল বিষয়।
একজন মুসলমান, সে জানে এরকম অশ্লীল মুভি দেখা পাপ। সেই পাপকাজ প্রথমত সে নিজে করছে, আর সবচেয়ে বড় কথা সেই পাপ কাজটা সে প্রকাশ করছে এবং সে পাপ কাজের দাওয়াত/রিভিউ সবাইকে দিয়ে বেড়াচ্ছে।
আল্লাহ পবিত্র কুর'আনে বলেন:
مَّن يَشْفَعْ شَفٰعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفٰعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُۥ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ مُّقِيتًا
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করে, তাহলে তাতে অবশ্যই তার অংশ থাকবে। আবার যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজের ব্যাপারে সুপারিশ করবে (তার সৃষ্ট অকল্যাণেও) তার অংশ থাকবে। আল্লাহ তা'আলা হচ্ছেন সকল কাজের একক নিয়ন্ত্রক। [৬]
একটা নিষিদ্ধ (ইসলামের দৃষ্টিতে) প্রেমের গল্প, উপন্যাস, কবিতা পড়ে সেই বইটির প্রশংসনীয় রিভিউ লিখে আরেকজনে দাওয়াত দেওয়া, 'বইটা পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে' এর মানে কী?
হয় আমরা এই নিষিদ্ধ প্রেমগুলোকে নিষিদ্ধ বলে মনে করিনা, নতুবা নিষিদ্ধ প্রেমের দাওয়াত দেওয়াকে নিষিদ্ধ মনে করিনা।
যারা পাপ করে সেটা প্রচার করে বেড়ায় (Watching a romantic movie, Reading a romantic fiction) তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল।" [৭]


পাঁচ.
একজন সত্যপ্রিয় মানুষ যদি তার কথায় সত্যবাদী হয়, তাহলে সে মিথ্যা কথা পছন্দ করতে পারেনা। একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ যদি তার কথায় সত্যবাদী হয়, তাহলে সে অন্যায় পছন্দ করতে পারেনা। ঠিক তেমনি একজন দ্বীনদার মানুষ যদি তার কথায় সত্যবাদী হয়, তাহলে সে বে-দ্বীন পছন্দ করতে পারেনা।
একজন মানুষ, যে রিলেশন করাকে হারাম মনে করে, রিলেশন করা থেকে বিরত থাকে, সেই মানুষটাই আবার তার ফেসবুক বন্ধু-বান্ধবীর গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোলা ছবিতে লাভ রিএক্ট দেয়, কমেন্ট করে 'Nice Couple' লিখে!
তারমানে তো রিলেশনকে সে হারাম মনে করছে এইজন্য যে, সে সুযোগ পাচ্ছেনা রিলেশন করার। সুযোগের অভাবে সে সৎ!
গত সেমিস্টারের একটা কোর্সের একটা টার্ম ছিলো Cognitive Dissonance যার কঠিন বাংলা জ্ঞানীয় অনৈক্য। কোর্স টিচার বিষয়টা খুব সুন্দর একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছিলেন।
একজন লোক সিগারেট খাওয়া পছন্দ করেনা, তার পরিচিত যারা সিগারেট খায় তাদেরকে সিগারেট খেতে নিষেধ করে। ঠিক সেই লোকটা যখন BAT (British American Tobacco) কোম্পানিতে একটা হ্যান্ডসাম স্যালারিতে চাকরীর অফার পেলো, তখন সাথে সাথে বলে উঠলো 'লাব্বাইক-লাব্বাইক'!
এই কগনিটিভ ডিজোনেন্স হলো মনোভাবের সাথে আচরণের মিল না থাকা। অর্থাৎ কথায় কাজে মিল নাই।
হারাম রিলেশন অপছন্দ করা, কিন্তু কেউ যখন হারাম রিলেশনকে খুব সুন্দর ছন্দে, খুব সুন্দর সাহিত্যিক উপমায় উপস্থাপন করে তখন সাথে সাথেই হারাম-হালালের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে 'ওসোম ওসোম' বলে চিৎকার করাটাইতো জ্ঞানীয় অনৈক্য!
যেখানে ছয় ডিজিটের স্যালারির অফার পেয়ে সিগারেট পানের অপকারীতার কথা বলার মানসিকতা পরিবর্তন করে BAT এর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা যায়, সেখানে সাহিত্যিক উপমার মোড়কে হারাম রিলেশনকে 'হালাল' করে নিতে অসুবিধে কী!!


ছয়.
জন্মদিন পালন করাকে পাপ মনে করি। কিন্তু প্রিয় সাহিত্যিকের জন্মদিন আসলে তখন ঘরের মধ্যে তার ছবি টানিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই! ঘর বলতে ভার্চুয়াল ঘর, ফেসবুকের কাভার ফটো। জন্মদিন পালন করা নিয়ে ইসলামের কোনো বিধিনিষেধ আছে কিনা, কিংবা জন্মদিন পালন করার রীতি কোথা থেকে আসলো সেটা মুহূর্তের জন্য ভুলে যাই। [৮]
ঠিক তদ্রুপ, প্রিয় লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী আসলে একইভাবে ঘরে ছবি টানিয়ে বিলাপ করতে থাকি, হায় হায়! লোকটা যদি আরো কয়েকদিন বেঁচে থাকতো, তাহলে তো আরো কিছু প্রেমের গল্প, উপন্যাস, কবিতা পেতাম। মৃত লেখকের মৃত্যুদিবসে শোক প্রকাশ করি, মাতম করি।
অথচ ইসলামে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। [৯]
প্রিয় সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে এসব নিষেধ আর মানতে হয় নাকি? তাকে ভালোবেসেই তো আমরা এসব করি।
কোনো এক বিদ্বান (!) বলে গেছেন, Everything is fair in love and war!
সাত.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন বলেছেন, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয [১০] ঠিক তেমনি অপকারী জ্ঞান থেকে তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেতে বলেছেন [১১]।
পবিত্র কুর'আনে আল্লাহ নিন্দনীয় ইলম সম্পর্কে বলেছেন:
يَعْلَمُونَ ظٰهِرًا مِّنَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْءَاخِرَةِ هُمْ غٰفِلُونَ
তারা দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিক সম্পর্কে জানে, আর আখিরাত সম্পর্কে তারা গাফিল। [১২]
জাহেল সাহিত্যিকদের লেখনী পড়লেই দেখা যায়, দুনিয়ার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে তারা বড় বড় কিতাব লিখেছেন, কিন্তু আখিরাতের ব্যাপারে তারা একেবারেই সাইলেন্ট।
বঙ্গদেশীয় সেক্যুলার, নাস্তিকরা বিজ্ঞানের বড় বড় থিওরি পড়ে নাস্তিক, আজ্ঞেয়বাদী হয়নি বরং জাহেলদের কিতাবপত্র পড়েই তারা নিজেকে নাস্তিক, মুক্তমনা দাবি করে। এজন্য এইসব হুজুগে পাঠকদের নাম দেওয়া হয়েছে 'কলাবিজ্ঞানী'!
খলিফা মামুন যেমন খাল কেটে কুমির এনেছিলেন, ঠিক তেমনি বঙ্গদেশীয় পাঠকরা জাহেল সাহিত্যিকদের কিতাবাদী পড়ে সেই সাহিত্যিকদের আদর্শ লালন করা শুরু করে; যার উদাহরণ পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে বের হলে পাঠকদের উদ্ভট আচরণ দেখে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফের কবির কবিতার প্রশংসা করেছেন, যেগুলো আমাদের বিশ্বাস এবং চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক না।
আমরাও জাহেলী সাহিত্যের প্রশংসা করতে পারি, প্রশংসার যে বর্ডার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেধে দিয়েছেন সেভাবে।
তাদের যে লেখাগুলো আমাদের বিশ্বাস এবং চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক না সেগুলোর প্রশংসা করতে পারি, আর যেগুলো আমাদের বিশ্বাস এবং চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক এরকম কোনো লেখা পড়লে অন্তত সেগুলোর দাওয়াত দেওয়া/রিভিউ লেখা/প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকতে পারি।


আট.
লেখাটা শেষ করছি একটা ঘটনা বলে। ঘটনাটি যার সাথে ঘটেছে তিনি আমাদের এলাকার একজন স্কলার। তার মুখ থেকেই ঘটনাটা শুনেছি, সনদ নিয়ে কোনো সমস্যা নাই।
আমাদের এলাকার একজন সাহিত্যিক ছিলেন। সেক্যুলার ধারার সাহিত্যিক। দৈনিক পত্রিকায় তার লেখাগুলো প্রকাশ হতো। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে কবিতাও লিখেছেন।
এক বৃষ্টির দিনে সেই স্কলার ঐ সাহিত্যিকের বাড়িতে আশ্রয় নেন, বৃষ্টির কবল থেকে বাঁচতে। সেই সাহিত্যিকের আবার একটা শখ ছিলো তার একটা ডায়েরিতে তার লেখা সম্পর্কে বিভিন্ন গুণীজনের মন্তব্য লিখে রাখতেন।
সেই সাহিত্যিক ঐ স্কলারকে তার লেখা কবিতা পড়তে দিয়ে বলেন, আপনি এবার এই ডায়েরিতে কবিতা পড়ে আপনার কেমন লাগলো সেটা লিখুন। সেই স্কলার বারবার 'না' করছেন, ঐ ডায়েরিতে তার লেখা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে।
তিনি বারবার বলছেন, দেখো, এই লেখাগুলো আমার বিশ্বাস এবং চেতনার সাথে যায়না। এগুলো সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবোনা।
নাছোড়বান্দা সেই সাহিত্যিক অনুরোধ করতেই থাকলেন, যা ইচ্ছা কমেন্ট করার জন্য, তিনি কিছু মনে করবেন না।
শেষমেশ সেই স্কলার ঐ ডায়েরিতে মাত্র একটা বাক্য লিখে চলে আসেন।
কিছুদিন পর সেই স্কলার দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা খুলে দেখলেন ঐ সাহিত্যের একটা লেখা। আশ্চর্য হলেন, এই লেখক এইধারার লেখা কেন লিখলেন? আস্তে আস্তে দেখলেন ঐ সাহিত্যিক আসলেই সেক্যুলার ধারা ছেড়ে ইসলামি ধারায় লেখা শুরু করেছেন।
তিনি (স্কলার) একদিন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি হঠাৎ এই ধারায় লেখালেখি শুরু করলেন কেন বুঝলাম না।
সেই সাহিত্যিক তখন বললেন, আমার ডায়েরিতে আপনার লেখা ঐ একটা বাক্য আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
বাক্যটা ছিলো এমন:
"এই কলম কিয়ামতের দিন হয় তোমার পক্ষে নতুবা তোমার বিপক্ষে সাক্ষী দেবে।"


রেফারেন্স:
১। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান
- মুহাম্মদ নুরূল আমীন, পৃষ্ঠা ৩৯২।
২। সহীহ মুসলিম, হাদীস নাম্বার ৫৭৭৮।
৩। আত-তানওয়ীর শারহ জামি' সাগীর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১।
৪। সহীহ মুসলিম, হাদীস নাম্বার ৫৭৮২।
৫। ফাতহুল বারী,
- হাফিজ ইবনে হাযার আসক্বালানী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৫৪।
৬। সূরা আন-নিসা ৪:৮৫।
৭। সহীহ বুখারী, হাদিস নাম্বার ৬০৬৯।
৮। জন্মদিন উদযাপনের ইতিহাস নিয়ে লিখা একটা আর্টিকেলের লিংক :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2052051425035812&id=100006929225979
৯। সহীহ বুখারী, হাদীস নাম্বার ৩১৩।
১০। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নাম্বার ২২৪।
১১। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নাম্বার ৩৮৪৩।
১২। সূরা রূম ৩০:৭।


জাহেলী সাহিত্য, ইসলামি সাহিত্য এবং পাঠকের হিপোক্রেসি
- আরিফুল ইসলাম



No comments:

Post a Comment