Tuesday, September 4, 2018

বই নিয়ে নয় লেখাটি, তবুও...... (১৯) - আরিফ আজাদ



কথিত আছে, সক্রেটিসের সাথে তাঁর স্ত্রীর কখনো বনিবনা হতোনা। প্রায়শই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। অবশ্য, ঝগড়া হতো একপেশে। সক্রেটিসের স্ত্রী মনের ঝাল মিটিয়ে বেচারা সক্রেটিসকে আচ্ছামতো গালাগাল করতো আর সক্রেটিস বসে বসে কেবল হাসতো। একদিন সক্রেটিস বাসায় এসে দেখলেন তার স্ত্রী খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে। স্ত্রী চাচ্ছে সহজ-সরল বেচারা সক্রেটিসকে যেভাবেই হোক রাগিয়ে দিতে। কিন্তু সক্রেটিসও বদ্ধপরিকর। উনি কোনোভাবেই রাগবেন না। টুঁ শব্দও করবেন না।

ঘরের মধ্যে স্ত্রীর শব্দ নির্যাতন চলছে তো চলছেই। সক্রেটিস হাসি হাসি মুখ নিয়ে ঘরের বাইরে এসে বারান্দায় মনের সুখে হাওয়া খেতে বসে পড়লেন। এমন নির্লিপ্ত, নিষ্ক্রিয় আচরণ দেখে সক্রেটিসের স্ত্রীর মাথা গেলো আরো গরম হয়ে। তাঁর স্ত্রী করলো কি, হাঁড় কাঁপানো শীতের মধ্যে এক বালতি ঠান্ডা পানি এনে দিলেন সক্রেটিসের মাথায় ঢেলে। সক্রেটিস তবুও রাগলেন না। হাসতেই লাগলেন।

উপরে বর্ণিত গল্পটি কতোটুকু সত্য তা জানিনা। সক্রেটিসের জীবন-কর্ম সম্পর্কিত যতো বই পড়েছি, কোথাও এই ঘটনাটির উল্লেখ পাইনি। তবুও, ঘটনাটি তার নামেই রটেছে বিধায় উল্লেখ করলাম।
জীবন পথে চলতে গিয়ে জীবনসঙ্গী হিসেবে আপনি একেবারে 'মনের মতো' কাউকে পাবেন না। আপনি যেরকম হাসি পছন্দ করেন, সে হয়তো সেভাবে নাও হাসতে পারে। আপনি হয়তো অল্পভাষী, দেখা যাবে সে হয়তো চঞ্চল। অথবা আপনি চঞ্চল, সে স্বল্পভাষী। এরকম খুচরো কিছু মিল-অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু, এই খুঁটিনাটি অমিলগুলো যেন কখনোই 'সমস্যা' না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

একবার উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য খাবার তৈরি করে আনলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এটা দেখে ভীষণ ঈর্ষান্বিত হোন। তিনি এক আছাড় দিয়ে উম্মে সালমার হাতে থাকা খাবারের প্লেট ভেঙে দু'টুকরো করে দেন। এমন অবস্থায় রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করেছেন জানেন? তিনি মাটি থেকে ভাঙা প্লেট এবং সেই খাবারগুলো কুড়িয়ে নিয়ে নিজে খেলেন এবং সাহাবীদেরও খেতে দিলেন। আল্লাহু আকবার! আপনি-আমি হলে কি করতাম? আমাদের সন্তানরা যখন আমাদের সামনে একটা গ্লাস ভেঙে ফেলে, আমরা কি করি? কানের নিচে জোরে একটা চড় লাগাই।

আমাদের রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে শিখতে হবে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। স্বামী এবং স্ত্রী দু'জনের মধ্যেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো মেন্টালিটি তৈরি করতে হবে। বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল হলে সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকবে।

ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনার স্ত্রী আপনাকে বললো যে তিনি বিরিয়ানি খেতে চান এবং আগামীকাল বাসার সবার জন্য বিরিয়ানি হবে। আরো ধরুন, বিরিয়ানি আপনার অপছন্দ। এখন, আপনি যদি স্ত্রীর মুখের উপর বলে বসেন,- 'বিরিয়ানি আমি অপছন্দ করি, তাই আমি বিরিয়ানি খাবো না', তাহলে আপনার স্ত্রী কষ্ট পেতে পারে। আপনি যদি বলেন,- 'বিরিয়ানি আমি যে খুব পছন্দ করি, তা নয়। তবে, সবাই যা খাবে আমিও তাই খাবো। কোন সমস্যা নেই'।

আপনার স্ত্রী জানে আপনি বিরিয়ানি খান না। কিন্তু তাকে খুশি করতে আপনি যখন 'না' বলেননি, তখন তার হৃদয়টা এত্তোবড়ো হয়ে যাবে। আর, একদিন বিরিয়ানি খেলে আপনার শরীরে যে খুব অসুবিধা হয়ে যাবে, তাও নয়। জীবনপথে চলতে-ফিরতে সেক্রিফাইসের নামই ভালোবাসা।

এগুলো হলো সাইকোলজি। হিউম্যান সাইকোলজি। পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করতে পারাটা ম্যাচিউরিটি। নারী-পুরুষের মধ্যে সাইকোলজিক্যাল অনেক পার্থক্য আছে। এ বিষয়ে খুব পপুলার একটা বই পড়েছিলাম। নাম ছিলো- 'Men are from Mars, Women are from Venus'। নারী-পুরুষের মধ্যকার সাইকোলজিক্যাল পার্থক্যগুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে বইটাতে।

জীবনসঙ্গীকে 'মনের মতো' বানানোর চেষ্টা না করে, পরিস্থিতিটাকে 'মনের মতো' বানিয়ে নিন। এটাই কল্যাণকর!

No comments:

Post a Comment