#একটি_বিনীত_আকুতি_মা-বাবার_কাছে
আমার আকুতি টা মা বাবার কাছে। আমার মা বাবা না, অন্য সব মা বাবার কাছে। যে
মেয়েটা গর্ভে বাচ্চা নিয়ে বসে এই লেখাটা পড়ছে তার কাছে।যে মেয়েটা বাচ্চার
কপালে ইয়া বড় কালো চাঁদ একে ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে সে মেয়েটার কাছে।সে মেয়েটার
কাছে যে মেয়েটা বাচ্চা কে কোন স্কুলে ভর্তি করাবে এই চিন্তায় চিন্তিত হয়ে
আছে। এই আকুতি সব মা বাবার কাছে।
আমি দুয়া করি আমার এই আকুতি যেন সবার মনে দাগ ফেলে।
আমার একটা ব্যাচ আছে,কুরআন হেফজো ব্যাচ। এই ব্যাচ আমার জন্য অনেক বড় একটা
শিক্ষণীয় ব্যাচ। এই ব্যাচের মুহতারামারা সবাই এডাল্ট। কেউ গৃহিণী, ছোট ছোট
বাচ্চার মা,কেউ ছাত্রী আবার গৃহিণী, কেউ সন্তান সম্ভবা, কেউ পড়তে পড়তে
কাদে,কেউ কাঁদতে কাঁদতে পড়ে। এই কান্না গুলো অভিমানের। বুকে জমে থাকা দীর্ঘ
দিনের গ্লানি।দীর্ঘ দিনের পরাজয়ের অভিমান। ৩০ পারা হেফজো করতে না পারার
অভিমান। হেফজো করে মনে রাখতে না পারার অভিমান।এই অভিমান টা কারো প্রতি না
আসলে। এই অভিমান ভাংগানোর কেউ নাই। এই অভিমান শুধুই জমবে মনে। জমতে জমতে
খুব প্রকট হবে। কেউই জানবে না সেটা।
আচ্ছা ভেবে দেখেন তো, এই বয়সে
এসে কেন মাথায় এই ভুত ঢুকে আমি হেফজো করবো? হেফজো না করেও তো নাজারা পড়া
যায়। আল্লাহ তো বলেন নাই হেফজো করতে।শুধু বলেছেন “ইক্বরা”
কেন
হেফজো করেন? কেন ছোট বাচ্চা কাঁদতে থাকে আর মা হেফজো চালিয়ে যান, কেন সব
ফেলে একটু আলাদা হয়ে ছাদে বসে এরপর পড়েন? কেন পেশেন্ট রেখে হস্পিটালের
বারান্দায় এসে পড়া দেন?
এরা কি পাগল সবাই? কিসের এতো প্রেম এই হেফজো করার প্রতি? কিসের?
হায়! যদি বুঝতেন ...
আপনার মুখস্তে যত বিদ্যা আছে এই কালাম হেফজোর কাছে সব চুনোপুঁটি।আমি একজন
ডক্টর বা আমি ইঞ্জিনিয়ার বলে আপনি যে তৃপ্তি পান সেটা আসলে মেকি। আসল
তৃপ্তি তো এই অনুভূতি তে, “আমি একজন কুরআনে হাফেজ ”
ছোট বেলায়
মাক্তাবে বা ঘরে হুজুর রেখে আলিফ বা আর কয়েকটা সুরাহ পড়া পর্যন্তই আমাদের
আরবি শিক্ষা। এই শিক্ষা টুকু নিয়ে আমরা কবরে শয়ন করি। এই শিক্ষা টুকু নিয়ে
আল্লাহর কাছে দাড়াই।
একটু ভাবেন না,আপনার এক্সাম হচ্ছে অংকের, রাত জেগে না ঘুমিয়ে ধুমায়ে পড়ে গেলেন ব্যাকরণ। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে কেমন লাগবে?
এই ব্যাচের মুহতারামারাহ কেন এই বয়সে হেফজো টা শুরু করলেন ?
কিসের এতো প্রেম? আমি উত্তর পেয়েছি,আপনি পেয়েছেন?
মানুষ যখন বুড়া হয়,তখন অসুস্থ হলে তাকে খুব অল্প খরচে চিকিৎসা করতে চাই
আমরা, কারন জানিই সে মারা যাবে,শুধু শুধু টাকা অপচয় করে লাভ আছে? যদি কঠিন
রোগ হয়, অনেক খরচের চিকিৎসা হয়ে থাকে,হয়ত করিও না খুব একটা। বা করলেও কম।
রোগ টা সারবেও না,জোয়ান মানুষ এর মত সুস্থও হবে না,মরার টাইম হয়ে আসছে
আরকি। খামাখা টাকা বরবাদ।
দুনিয়া বুড়া হয়ে গেছে, মরে যাবে যে কোন
সময়, দাজ্জালের ফিতনা নামক রোগে আক্রান্ত। আর আপনি আপনার বাচ্চা কে এই কবরে
এক পা রাখা দুনিয়া মেরামতের জন্য বরবাদ করছেন।
আপনি কত বোকা যদি বুঝতেন !
একদিন আপনার ও কান্না আসবে,অভিমান জমবে,চেষ্টা করবেন কিন্তু পারবেন না হেফজো করতে।
একদিন আপনার বাচ্চাদের এমন কান্না আসবে। তারা নিরবে অশ্রু ফেলবে আর বলবে কেন মা বাবা ছোট বেলায় হেফজো করান নাই।
তারা বার বার কুরআন হাতে নিয়ে হেফজো করবে,আর বার বার পরাজয়ের গ্লানি তে কুরআনে বন্ধ করে কপালে লাগিয়ে কাঁদবে,
“ নাহ, কাধে এতো দায়িত্ব, মাথায় এতো চিন্তা নিয়ে আমাকে দিয়ে হেফজো করা হবে না ”
দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি মুকুট কোন টা? নিশ্চই রাজার মাথার মুকুট টা তাইনা? আপনার কেমন লাগবে যদি স্বয়ং রাজা আপনাকে মুকুট টা পরিয়ে দেয়?
ভেবে দেখেন একজন হাফেজের মা বাবা হতে পারলে বিচার দিবসে আপনাকে আল্লাহ
নুরের তাজ পরাবেন।কেমন লাগবে তখন? আসে পাশে সবাই বিবস্ত্র, ভীত, আর আপনি
হাস্যমুখে নুরের তাজে নূরান্বিত।
আপনার বাচ্চা কে বেস্ট স্টুডেন্ট এওয়ার্ড দিলে কেমন লাগে? আশেপাশে সব বাচ্চাদের মা বাবার সামনে আপনি কত টা উঁচু হয়ে যান তাইনা?
ভেবে দেখেন তো, দুনিয়ার সব মানুষের সামনে আপনার হাফেজ বাচ্চার
জন্য আল্লাহ আপনার মাথায় এওয়ার্ড বসিয়ে দিবেন। কেমন লাগছে ভাবতে?
আপনার বাচ্চা যদি ১২/১৩ বছর বয়স থেকে দুনিয়াবি পড়াশুনা শুরু করে খুব বেশি লস হয়ে যাবে কি এর জন্য বিচার দিবসে?
আপনার বাচ্চা টা যদি ১০ বছর বয়সেই হেফজো টা শেষ করে ফেলে খুব লজ্জিত হতে হবে কি সমাজের কাছে?
বাচ্চাদের কে কেন শিক্ষাসফরের একদম শুরুতেই হিফজো করাবেন?
করাবেন কারন ঐ বয়সে এক বসায় সে যত টা গভির ভাবে হিফজো করতে পারবে এই বুড়া কালে সেটা ৫ বছরেও পারবে না।
আব্বা সব সময় বলেন, ছোট বেলায় হেফজো করা মানে তুই পাথরে খোদাই করে লিখে
দিচ্ছিস,যা কখনো মুছবে না। আর বড় হয়ে হেফজো করা মানে সমুদ্র তীরে লিখা,যা
খানিকপরেই ঢেউ এসে মুছে দিবে।
আমি ছোট থাকতে আম্মা পারা আর বাকারার
১ম পারাটা মুখস্ত করেছিলাম। আর বড় হয়ে বাকারার বাকি টা আর ২য় পারা থেকে
করছি, আমি না ব্যাস এক টা দিন হেফজো টা ঝালাই না করলে সব ভুলে যাচ্ছি,অথচ
ওই আম্মা পারা আর বাকারার এক পারা আমার কোনদিনই ঝালাই করা লাগে নাই। সেগুলো
যেন ২ এর নামতার মত।
এবার বুঝেন কেন আমার হেফজো ব্যাচের ছাত্রী রা কাদে!
আর বুঝেন কেন আপনার বাচ্চাকে ওই বাচ্চা কাল থেকেই হেফজো টা পড়াবেন।
নিয়ত টা বদলে ফেলুন,আপনার বাচ্চা যেন জীবন সংসারের বোঝা বইতে যেয়ে নিরবে অশ্রু না ফেলে, অভিমান যেন না জমে।
আপনার বাচ্চা ডক্টর ইঞ্জিনিয়ার হবে না আগে ,আপনার বাচ্চা দেশের সব চেয়ে
ভাল স্কুলে ভর্তি হবে না আগে,আপনার বাচ্চা হাফেজ হবে আগে,আপনার বাচ্চা
হেফজোখানায় ভর্তি হবে,সে আগে হেফজো শেষ করবে। এরপর আপনি তাকে বুড়া দুনিয়ায়
বিচরণ করতে ছেড়ে দিবেন।
পেটে হাত টা বুলিয়ে বলুন আপনার এই বাচ্চাকে
আগে হাফেজ বানাবেন। আপনার বাচ্চার কপালের কালো চাঁদ মুছে দিয়ে নিয়ত করুন
তাকে হাফেজ বানাবেন। স্কুলের ব্যাগ জামা বই খাতা কেনার প্ল্যান বাদ দিয়ে
তার জন্য একটা কায়েদা কিনুন,একটা কুরআন কিনুন, রিহাল কিনুন,ছোট একটা সাইড
ব্যাগ কিনুন,হিজাব বোরকা,জুব্বা টুপি কিনুন।
আপনি ডক্টরে মা বাবা না, আপনি ইঞ্জিনিয়ারের মা বাবা না, আপনার পরিচয় আপনি একজন হাফেজের মা বাবা।
আপনার এই বাচ্চা আপনার নাজাতের উসিলা হবে ইন শা আল্লাহ। যে ক্বলবে আল্লাহর কালাম থাকবে সে ক্বলবে শয়তান রাজত্ব করতে পারবে না।
বাচ্চাদের উপর রহম হবে অনেক, মনে করেন নিয়ত করলেন আপনার বাচ্চা অনেক বড়
আর্কিটেকচার হবে। কিন্তু দেখা গেলো অনেক বড় আর্কিটেকচার হওয়ার আগে কেয়ামতের
বড় বড় আলামত গুলো প্রকাশ হওয়া শুরু করেছে। সে সময় তো সবাই ঈমান বাঁচাতে
ব্যস্ত হবে।
সে সময় কি কারো দুনিয়া সাজাতে মন চাবে?
আসলে
বাচ্চা নিয়ে আমাদের দাদার বাবারা যেমন প্ল্যান করেছিলেন,আমরা সেরকম করতে
পারিনা। কারন উনাদের জামানায় কেয়ামত টা দূরে ছিল উনাদের থেকে। কিন্তু এখন
!!
নিচে তাকিয়ে দেখেন আপনার পায়ের বুড়া আংগুলের নখের মাথায় লেগে আছে। আর এক কদম বাড়াবেন সাথে সাথে কেয়ামতের গর্তে পরে যাবেন।
কথিত আছে আরবি শিক্ষা করতে টাকা পয়সা বেশি লাগে না,মকতবের পড়া, মাদ্রাসার
পড়া, হেফজো খানার পড়া যে খরচ বহন করে তা খুব কম, গরিব দের সামর্থ্য হয়না
নামি দামি স্কুলে পড়ানোর,তাই নাকি মাদরাসায় পড়ায়, মানে হলো গরিব মিসকিন রাই
পড়ে মাদরাসায়।
জানেন জান্নাতে আগে গরিব মিসকিন রা প্রবেশ করবে।
বুঝলেন তো কেন?
একটু আগে এক আপুর আম্মা পারা হেফজো টা শেষ হলো আলহামদুলিল্লাহ্, শেষ আয়াত
গুলো তিলাওয়াতের সময় উনি খুব কান্না করছিলেন।উনার সাথে আমারই গলা ধরে
আসছিল। আমিও কান্না করে দিয়েছি। উনি মেডিকেলের স্টুডেন্ট বা ডক্টর হবেন।
উনার জীবনে এই ১ পারা কত বড় অর্জন যদি আপনি বুঝতেন !
চলেন,নিজেরা শুরু করি,বাচ্চাদের কেও লাগিয়ে দেই
No comments:
Post a Comment