Monday, September 3, 2018

সূরা বাকারার আলোকে "মুনাফিক"

সুরা বাকারা

সুরা বাকারার প্রথম ২০টি আয়াতে মানবজাতিকে মোটা দাগে ৩ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। মুমিন (১-৫ আয়াত)
২। কাফির (৬-৭ আয়াত)
৩। মুনাফিক (৮-২০ আয়াত)

মুমিনদের চেনার উপায় আমরা প্রথম পর্বে আলোচনা করেছি। কাফেরদের নিয়ে আমরা দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেছি। ইনশা আল্লাহ আজ আলোচনা করব মুনাফিকদের চিহ্নিত করার উপায় নিয়ে।
৮ম থেকে ২০আয়াত পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে মুনাফিকদের নিয়ে বলা হয়েছে। এর কারণ কাফের ও মুমিনদের চেনা তুলনামুলক সহজ। কিন্তু মুনফিকদের চিহ্নিত করা কঠিন। তাছাড়া মুনাফিকরা কাফেরদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ, কাফেররা প্রকাশ্যে ইসলামের ক্ষতি করে। কিন্তু মুনাফিকরা গোপনে ইসলামের ভেতর ঢুকে ইসলামের ক্ষতি করে।




৮ম-১০ম আয়াতঃ
"কিছু মানুষ বলে, আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখি। কিন্তু তারা মুমিন নয়।"
"তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করতে চায়। কিন্তু তারা না বুঝে নিজেরাই নিজেদের সাথে প্রতারণা করে।"
"তাদের অন্তরে ব্যধি রয়েছে। আল্লাহ সেই ব্যধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে কারণ তারা মিথ্যাবাদী।"

মুনাফিকদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যঃ
১। তারা কাফির
২। তারা নিজেদের মুমিন বলে দাবী করবে
৩।তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে
৪।তাদের মনে এমন ব্যধি রয়েছে যা স্বয়ং আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন
৫। তারা মিথ্যাবাদী

*প্রতারণা কি?- মুখে এক কথা বলা ও মনে আরেক কথা রাখা।
*মুনাফিক কারা?
-মহানবী (সা) মুনাফিকদের চেনার উপায় আমাদের বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
"মুনাফিকদের চিহ্ন ৩টি। কথা বললেই মিথ্যা বলে, ওয়াদা খেলাপ করে, আমানত খিয়ানত করে।"
অন্য হাদিসে চতুর্থ বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে, "গালি গালাজ করে।"
*মুনাফিকদের অন্তরে কি ব্যধি রয়েছে?-সংশয়/বিভ্রান্তি। (ইবনে কাসীর)

১১-১৩তম আয়াতঃ
তাদের ২টি কথা বলা হলে তারা এর জবাবে ২টি কথা বলে। যথাক্রমে,
১) জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। মুনাফেকি জবাব- আমরা তো শান্তির জন্য কাজ করি।
২) মুমিনদের ন্যায় ঈমান আন।
মুনাফেকি জবাব- আমরা নির্বোধদের মত ঈমান আনব? (সেটা কিভাবে সম্ভব?)
তাদের জবাবে আল্লাহর পালটা জবাব,
"খবরদার! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বোঝে না।"
"সাবধান! এরাই নির্বোধ। কিন্তু এরা তা জানে না।"
অর্থাৎ বোঝা গেল মুনাফিকরা নিজেদের অজান্তে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আরো বোঝা গেল অন্যকে প্রতারিত করে তারা নিজেদের বুদ্ধিমান ভাবে। কিন্তু তারা এর দ্বারা নির্বোধের মত নিজেদেত জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে সেটা তারা বোঝে না।

১৪-১৫ আয়াতঃ
এই দুটি আয়াতে তাদের জঘন্য প্রতারণার একটি সাধারণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
"যখন তারা মুমিনদের সাথে মেশে তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। যখন নিজেদের শয়তানের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা ওদের সাথে কেবল তামাশা করি।"
*শয়তান আরবী শাতানুন ধাতু থেকে আগত। যার অর্থ সত্য পথ থেকে সরে যাওয়া। এখানে শয়তান বলতে জ্বীন, মানুষ বা নিজের নফস ও হতে পারে।
এর জবাবে আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহ বরং ওদের সাথে তামাশা করেন ওদের বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খাওয়ার অবকাশ দেন।"
*তামাশা করা আল্লাহর শানে শোভা পায় না। এর মুল তাতপর্য হল, তাদের কর্মকান্ডের জন্য এরা নিজেরাই তামাশার পাত্রে পরিণত হয়।
*বিভ্রান্তিতে ঘুরার অবকাশ মানে?- তাদের অন্তরের কুফরি ও বিভ্রান্তিকে আল্লাহ মিটিয়ে দেন না। বরং তাদের কর্মকান্ডের জন্য তা প্রাকৃতিক নিয়মে বাড়তে থাকে। আল্লাহ সাথে সাথে পাকড়াও না করে তা বাড়তে দেন।

১৬তম আয়াতঃ
"এরাই হেদায়েতের বিনিময়ে অন্ধকার ক্রয় করেছে। তাদের এই ব্যবসা লাভজনক হয় নি। তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত ও নয়।"

১৭-২০ আয়াতঃ
মুনাফিকদের ব্যাপারে কোরআনে ২টি উপমা দেওয়া হয়েছে।
১) এক ব্যক্তি আগুন প্রজ্জলিত করল। সেই আগুন যখন চারদিক আলোকিত করল, আল্লাহ হঠাত করে সেটি নিভিয়ে দিলেন। ফলে অন্ধকারে সবাই পথ হারিয়ে ফেলল।
২) আকাশে বিদ্যমান ঘন কালো মেঘ। মেঘের বিদ্যুৎচমকে তার চোখ ঝলসে যায়। যখন ক্ষণিক আলো দেখা যায় তখন তারা সামনে এগিয়ে চলে। যখন বিদ্যুৎচমক থেমে যায় তখন তারা থমকে দাঁড়িয়ে যায়।
তাফসীর ইবনে কাসীর এর মতে এখানে দুই ধরনের মুনাফিকের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
এক ধরনের মুনাফিক প্রথম দিকে ঈমানের স্বাদ পায় ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে কুফুরের দিকে চলে যায়। কিন্তু বাহ্যিকভাবে ঈমানদারের খোলস পড়ে থাকে।

আরেক ধরনের মুনাফিক যখন ঈমানের সংস্পর্শে আসে তখন কোরআন এর বাণী তাদের অন্তরকে কাপিয়ে তোলে। তারা তা সহ্য করতে না পেরে কানে আঙ্গুল দেয়। আবার কুফরি পরিব্রশে গেলে চেঞ্জ হয়ে যায়।

No comments:

Post a Comment