Sunday, September 2, 2018

জন্মান্তরবাদ একটি ভ্রান্ত থিওরি!!!




[বিঃদ্রঃ গোটা বেদ (যা হিন্দুধর্মের প্রধান গ্রন্থ) এর কোথাও জন্মান্তরবাদ এর কোনোরূপ সরাসরি উল্লেখ নেই। স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতী নিজের মত মনগড়া কিছু বৈদিক মন্ত্র এর রেফারেন্স দিয়েছেন যা কিছুই সঠিকভাবে প্রমাণ করে না। দয়ানন্দজির ভুল ব্যাখ্যার জবাব দেখুন এই লিঙ্কেঃ
https://vedkabhed.wordpress.com/…/no-reincarnation-no-moks…/ ]
.
.
জন্মান্তর বলে বাস্তবে কিছুই নেই।[১]
জন্মান্তরের ক্ষেত্রে বড় জোর কেবল দুটো প্রমাণই পেশ করা যেতে পারে।
.
প্রথমটা হল আগের জন্মের কথা অনেকের মনে আছে - এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে আসলে কিছুই প্রমাণ হয় না! গবেষণায় দেখা গেছে এটা আসলে এক ধরণের অসুস্থতা, বিস্তারিত উত্তর এখানে পড়ে দেখতে পারেনঃ
https://vedkabhed.wordpress.com/2014/01/01/836/
.
যদি ধরেও নিই যে, কিছু জাতিস্মর পাওয়া যাবে যারা হুবহু সব আগের জন্মের কথা বলে দিয়েছে, তাতেও কিছুই প্রমাণ হয় না। এর কারণ সে কেবল অন্য ব্যক্তির স্মৃতি পেয়েছে মাত্র, আর এর মাধ্যমে আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) তাকে পরীক্ষা করে থাকতে পারেন, যেহেতু কোরআনে আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) আমাদের জানাচ্ছেন যে, এই জীবনের সব কিছু আসলে আখিরাতের (পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের) জন্য কেবল একটা পরীক্ষা মাত্র!
.
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًاۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
.
"যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"
(আল-কোরআন, ৬৭:২)
.
.
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِۗ وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةًۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
.
"জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।"
(আল-কোরআন, ২১:৩৫)
.
.
দ্বিতীয় যে প্রমাণটি পেশ করা হয়ে থাকে সেটি হল, এই জীবনের বর্তমান অবস্থার জন্য পূর্বের জন্মের কৃতকর্ম দায়ী। তাই কোনো ব্যক্তি ধনী, দরিদ্র, সুস্থ বা অসুস্থ ইত্যাদি অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ সে নীচু বা উচু কূলে জন্মে থাকে। এতেও কিছুই প্রমাণ হয় না। কেননা আগেই বলেছি যে, এই জীবনের সব কিছুই প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের (পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের) জন্য পরীক্ষা। কিন্তু এর পাশাপাশি পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের জন্য বর্তমান জীবনের অবস্থা দায়ী হলে, দরিদ্র ব্যক্তি তার পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের জন্য এই জন্মে দরিদ্র হয়েই থাকবে, কারণ এটাই হল তার যোগ্য কর্মফল। অথচ আমরা দেখি অনেক দরিদ্র ব্যক্তি রাতারাতি নিজের চেষ্টায় ধনীও হয়ে যায়। তাহলে এখানে তো তার ধনী হওয়ার কথা নয়! পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের ফল ভোগ করার পরিবর্তে সে নিজেই নিজের নিয়তি পরিবর্তন করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখছে??? এর মানে সে হিন্দু দর্শনের ঈশ্বরের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান!!!
.
এমনকি বেদ নাস্তিকদের হত্যা করার কথাও বলে।
(বিস্তারিত পড়ুন এখানেঃ
https://vedkabhed.wordpress.com/…/killing-infidels-in-vedas/)
.
অথচ আজ পশ্চিমা নাস্তিকরা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের অনেকেই অনেক ব্রাহ্মণদের থেকেও জ্ঞান বিজ্ঞানে বেশ অনেকটাই এগিয়ে।
কিন্তু তারা আগের জন্মে খারাপ কাজ করে থাকলেই কেবল এই জন্মে নীচ কূলে ম্লেচ্ছ নাস্তিক হয়ে জন্মাবে! কিন্তু তাহলে নাস্তিকদের মত ম্লেচ্ছ, যবনের দল জ্ঞান বিজ্ঞানের আশীর্বাদ কেন পেল?
আগের জন্মে খারাপ কাজের জন্য এই জন্মে ম্লেচ্ছ, যবন হয়ে জন্মে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বিবর্জিত হয়েও কীভাবে তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে গেল!!! এটাই প্রমাণ করে যে, জন্মান্তর একটা ভুয়া থিওরি ছাড়া আর কিছুই না!!!
.
.
• জন্মান্তরবাদ নিয়ে এক ভাইয়ের সন্দেহের জবাব :
.
জন্মান্তরবাদ বিষয় নিয়ে এক মুসলিম ভাই আমাকে একবার এই মেসেজটি করেছিলেন:
.
///আসসালামু আলাইকুম। ভাই, হিন্দুরা বলে, জন্মান্তরবাদ নাকি মনোবৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। রেফারেন্স হিসেবে "টেলিপ্যাথি"-কে টেনে আনে যেটা প্যারাসাইকোলোজির একটা অংশ।
আর বাস্তবে প্রমাণ হিসেবে তারা যেটাকে দাঁড় করায় সেটা হলো, "ভারতের কোথায় যেন এক তিন বছরের বাচ্চা ছেলে তার পূর্বের জন্মের কথা বলে দিতে পারে যা হুবহু মিলে যায়। তারা বলে এটা কিভাবে সম্ভব যে ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না সে এটা কিভাবে বললো। অনেক বিজ্ঞানী নাকি এটায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।"
জন্মান্তরবাদকে যখন বিজ্ঞানের দোহায় দেওয়া হয় তখন কিছুটা সন্দেহ লাগে।।।///
.
.
তার প্রশ্নের জবাবটা মেসেজে দিয়েছিলাম যেটা সকলের উদ্দেশ্য এখানে আবার দিলামঃ-
.
দেখুন, কোন্ বিজ্ঞানী কীসে বিশ্বাস করবে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার পোস্টে দেখুন আমি লিঙ্ক দিয়েছি যেখানে আগের জন্মের কথা বলতে পারে এমন ব্যক্তিদের ওপর সাইন্টিফিক রিসার্চ এর আলোচনা হয়েছে এবং দেখা গেছে এটা আসলে একটা মানসিক অসুস্থতা। [লিঙ্কঃ https://vedkabhed.wordpress.com/2014/01/01/836/]
.
যদি ধরেও নিই যে, এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া, তবে সেক্ষেত্রে তাদের গোড়াতে থাকা মূল দর্শনটা দেখুন। হিন্দু দর্শন অনুযায়ী সৃষ্টি অনন্ত কাল ধরে বিরাজমান। কেবল সৃষ্টির এক অংশ তৈরি হচ্ছে আবার সেটা ধ্বংস হচ্ছে। আবার সৃষ্টি হচ্ছে আবার ধ্বংস হচ্ছে এবং এভাবে চলতেই আছে। তারা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি এই চারটে যুগের কথাও অনেকে বলে থাকে যে চারটে যুগ ক্রমান্বয়ে বার বার আসে; এর অর্থ হল এই যে, সৃষ্টি এবং ধ্বংস চক্রাকারে চলতেই থাকে এবং তাই এর কোনো শেষ নেই; অর্থাৎ প্রকৃতি অনন্তকাল ধরে বিরাজ করছে।
.
কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, প্রকৃতি অনন্তকাল ধরে ছিল না। স্টিফেন হকিং এর The Grand Design বইটা দেখতে পারেন, এর ইংরেজি, বাংলা দুটো ভার্সনের বই ইন্টারনেটে পিডিএফ আকারে পাবেন। এই বইয়েও রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে যে, আধুনিক বিজ্ঞানে আজ এটা প্রমাণিত - সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল না,[২] এর একটা চূড়ান্ত শুরু বা সূচনা আছে "বিগ ব্যাং" নামক প্রাকৃতিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একেবারে শূন্য হতে।[৩] তাহলে হিন্দু দর্শনের গোড়াটাই আসলে অবৈজ্ঞানিক!
.
এখানে হিন্দু দর্শনে যেহেতু সৃষ্টি চক্রাকারে আসে এবং যায়, তাই কোনো একটি সৃষ্টির পূর্বের কাজের ফল এর প্রভাব পরবর্তী কালে প্রতীয়মান হয় বলে ধরা হয়। যেমন আমি এখন এই মেসেজটা লিখছি; এটা তখনই লিখছি যখন আমি আপনার মেসেজটা দেখলাম। তাই আমার মেসেজটা হল পূর্বে আপনার মেসেজটা দেখার ফল। একইভাবে হিন্দুদের যুক্তি হল, যেহেতু বর্তমানের কোনো বিষয় আসলে পূর্বের কোনো ঘটনার ফল, তাই বর্তমানের জীবনের অবস্থাও পূর্বের জীবনের কর্মের ফল। আর পূর্বের কাজ এবং ঘটনার স্মৃতি অবচেতনভাবে মনের মধ্যে থেকে যায় যার প্রভাব পড়ে পরবর্তী জন্মে। এটা তখনই সঠিক বলা যাবে, যখন এই বিষয়টিকে আমরা স্বীকার করব যে, সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল। কারণ অনন্তকাল ধরে থাকলেই কেবল পূর্বের জন্মের কাজের ফলগুলো পরবর্তী জন্মে ক্রমশ সঞ্চারিত হতে থাকবে এবং এই প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে চলতেই থাকবে। কিন্তু আমরা আজ বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ করেছি যে, সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল না, আর কোরআনও একই কথা বলে যে, সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল না, আল্লাহ তাআলা একে সৃষ্টি করেছেন একেবারে কিছু নেই এমন অবস্থা থেকে কেবল "হও" নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে।[৪] তাই হিন্দুদের এই ভ্রান্ত দাবিগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক!!! এরা কেবল চটকদার কথা বলে লোকজনের চিন্তা অন্য দিকে নিতে চায়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কুফর এবং শির্কের পথে চলতে চলতে আজ মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
.
.
লেখকঃ Ahmed Ali
#সত্যকথন
.
.
_________________________
তথ্যসূত্র:
.
[১] কেউ কেউ বলে থাকেন যে, জন্মান্তরবাদ সঠিক নয়, কেননা সেক্ষেত্রে পশুপাখির সংখ্যা বেড়ে যেত কারণ পাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে আর পাপ বাড়লে মানুষ নীচ কূলে জন্মাবে। এটি সঠিক যুক্তি নয়। কারণ এখানে নীচ কূলে জন্মানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থান কেবল পৃথিবীই হতে হবে এমন বাধ্য বাধকতা নেই। হিন্দু দর্শনে গোটা সৃষ্টিজগতকেই পরমাত্মার অংশ বলা হয়েছে। তাই সৃষ্টিজগতের যেকোনো একটি অংশে নীচকূলে জন্মালেই এই থিওরি প্রযোজ্য হবে।
.
[২] **“The first actual scientific evidence that the universe had a beginning came in the 1920s.**
.
As we said in Chapter 3, **that was a time when most scientists believed in a static universe that had always existed.**
.
The evidence to the contrary was indirect, based upon the observations Edwin Hubble made with the 100-inch telescope on Mount Wilson, in the hills above Pasadena, California. By analyzing the spectrum of light they emit, Hubble determined that nearly all galaxies are moving away from us, and the farther away they are, the faster they are moving. In 1929 he published a law relating their rate of recession to their distance from us, and concluded that the universe is expanding. If that is true, then the universe must have been smaller in the past. In fact, if we
extrapolate to the distant past, all the matter and energy in the universe would have been concentrated in a very tiny region of unimaginable density and temperature, and **if we go back far enough, there would be a time when it all began—the event we now call the big bang….”**
(“The Grand Design” by Stephen Hawking and Leonard Mlodinow/Chapter 6: Choosing Our Universe)
.
.
[৩] আল-কোরআন, সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩০
(বয়ান ফাউন্ডেশন এর অনুবাদ হতে বিবৃত)
.
أَوَلَمْ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَٰهُمَاۖ وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَىٍّۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
.
"যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল*, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম, আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?"
.
*আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আদিতে আকাশ, সূর্য, নক্ষত্র ও পৃথিবী ইত্যাদি পৃথক সত্তায় ছিল না; বরং সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি। পরবর্তীকালে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ও গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়। এটিই বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ থিওরী।
.
[৪] আল-কোরআন, সূরা আল-বাকারাহ ২:১১৭
(মুজিবুর রহমান এর অনুবাদ হতে বিবৃত)
.
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
.
"তিনি আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং যখন তিনি কোন কাজ সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন তখন তার জন্য শুধুমাত্র ‘হও’ বলেন, আর তাতেই তা হয়ে যায়।"


#সত্যকথন_২৬৯

No comments:

Post a Comment