Tuesday, September 4, 2018

শিকল ও পর্নোগ্রাফী



#লস্ট_মডেস্টি_প্রবন্ধ_লিখন_প্রতিযোগিতা_সেপ্টেম্বর

প্রবন্ধের শিরোনামঃ "শিকল (Chain)"

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। পর্ণোগ্রাফীর মত ভয়ানক ব্যাধি আজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ব্যাধি আসলে মৌলিক নয়, বরং শত শত সামাজিক ব্যাধির শিকলের একটি ব্যাধিমাত্র।

সেই শিকলটা কি, কেমন?

শিকলটা হচ্ছে জাহেলিয়াতের শিকল, ইসলামকে বাদ দিয়ে সামাজিক নীতি গ্রহণের ফলাফল। পর্ণোগ্রাফীকে প্রতিহত করতে ইসলামী সামাজিক নীতি ছাড়া অন্য আইন নিয়ম কানুন কিছুই কার্যকর হবে না। এটাই বাস্তবতা। কারণ এই শিকলের গোঁড়া যেটা সেটাকেই ইসলাম উপড়ে ফেলবে। অথচ চর্মচক্ষে সেই গোঁড়াটাকে মন্দ মনে হয় না, তাই মানুষ এতে নিয়মিত পানি দেয়, আর এটা ফুলে ফেঁপে উঠে, এবং একসময় যখন তা অন্যান্য পাপের ন্যায় পর্ণোর প্রসার ঘটায় তখন মানুষ বলে পর্ণো বন্ধ হোক, কারণ এটা আমাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর। অথচ যে গোঁড়া থেকে এর জন্ম সেটার বিষয়ে কিছু বলে না, কারণ গোঁড়া উপড়ে ফেললে বহু মানুষ নিজের নফসের খায়েশ পূরণ করতে পারবে না।

ইসলামী সামাজিক নীতি কি এবং কেমন?

প্রথমে ইসলাম সম্পর্কে বলি, এটা হচ্ছে একটা জীবনাদর্শ, স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা। মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ সব চাইতে ভালো জানেন মানুষের জন্য কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। তার দেয়া বিধানটাই শ্রেষ্ঠ এটা প্রতিটা মুসলিমের বিশ্বাস। কিন্তু মানার সময় অনেকে আল্লাহর দেয়া জীবনাদর্শকে গ্রহণ না করে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। শয়তান সবসময় আমাদের ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে, এর ফলে আমরা শয়তানের ফাঁদে পড়ে যাই। তাই আমাদেরকে আল্লাহর দেয়া এই জীবনাদর্শকে গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম শুধু নামায রোযার ধর্ম নয়, বরং ইসলাম রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক নীতি সবকিছু নিয়ে সবচেয়ে উত্তম পন্থা বাৎলে দেয়। ইসলামের সামাজিক নীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ করলে অপরাধ শুধু কমে আসবে না, বরং অপরাধ তৈরির ফ্যাক্টরিটা ধ্বংস করে দিবে।

ইসলামে রয়েছে পুরুষ ও নারীর জন্য পর্দার বিধান। একজন মুসলিম পুরুষ ১৪ জন মাহরাম বাদে কখনো কোনো মহিলার দিকে তাকাবে না, কোনো অত্যন্ত জরুরী কারণ ছাড়া সাক্ষাৎ করবে না বা কথা বলবে না।

আমরা যে নাটক সিনেমা দেখি, সেখানে মেয়েদেরকে দেখা কি জায়েজ হচ্ছে? অথবা ক্লাসমেট মেয়েটার সাথে বান্ধবী পাতানো, কথা বলা? এগুলাই হচ্ছে পর্ণোগ্রাফীর পথে প্রথম ধাপ। যদিও অনেকে এ ব্যাপারে কুতর্ক করবে, মানতে চাইবে না।

একজন মুসলিম যদি প্রথম থেকেই এসব বিষয় থেকে চোখকে হেফাযত করে তবে শেষ পরিণতিতে পর্ণোআসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কেউ একদিনে পর্ণো আসক্ত হয়না, হয় ধীরে ধীরে। প্রথমে একজন বেগানা নারীর দিকে তাকাতে ভালই লাগে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বারবার তাকায়। মাঝেমাঝে নিজের কাছে অস্বস্তি লাগে। কিন্তু যখন তাকাতেই থাকে, তখন অস্বস্তি লাগাটাই হারিয়ে যায়। ফলে ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়। আর যার পাপবোধ হয় না তার কাছে পাপটা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

যারা নিয়মিত নাটক দেখে তারা মূলত শালীন কাপড়ে অভিনয় করা মেয়েদেরকেই দেখে। এরপর যখন সে সিনেমা দেখা শুরু করে তখন দেখে ছোট কাপড়ে অভিনয় করা মেয়েদের। যে কখনোই মেয়েদের দিকে তাকাতে স্বস্তিবোধ করে না তাকে যদি ছোট কাপড়ে এক অভিনেত্রীকে দেখানো হয় সে ছিহ ছিহ বলে চোখ সরিয়ে নেবে। আবার যারা শালীন কাপড়ে মেয়েদের দেখে অভ্যস্ত তাদের হঠাত করে নগ্ন মেয়ের দৃশ্য দেখালে সেও দেখতে প্রথমে অস্বস্তিবোধ করবে। কারণ এখনো তার কাছে এটা স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক তখন হবে যখন ছোট ছোট পদক্ষেপে অনেক বড় অপরাধের দিকে শয়তান তাকে নিয়ে যাবে। যখন ছোট কাপড়ের অভিনেত্রী দেখে কারো মন ভরবে না তখন সে নগ্নতার দিকে যাবে।

আমাদের সমাজে নাটক মুভির যে ব্যাপক মহামারী, এগুলো মূলত পর্ণোগ্রাফীর দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ মাত্র। মুসলিমদের জন্য যেখানে বেগানা নারীদের দিকে তাকানো জায়েজ নেই তাদের দেশে নাটক সিনেমা কিভাবে এতো জনপ্রিয় হতে পারে? নাটক সিনেমা তো আসলে অশ্লীলতার দিকে আহবানকারী। মানুষকে বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমে উৎসাহিত করাই এসবের মূল উদ্দেশ্য।

পর্ণোগ্রাফী নিয়ে অনেকে বলবে, বলার লোকের অভাব হবে না। কিন্তু এর গোঁড়া যতক্ষণ না কাটা যাবে এর থেকে পরিপূর্ণ নিস্তার নেই মানুষের। দুইটা উপায় আছে এর থেকে মুক্তির- ১) ইসলামের পর্দার বিধান ব্যাপকভাবে প্রসার করা, আদতে ইসলামের প্রসার করা। মানুষ যখন বেগানা নারীর থেকে চোখ হেফাযত করবে তখন পর্ণো তো অনেক অনেক দূরের ব্যাপার, ভুলে কারো দিকে চোখ গেলেও পাপবোধ হবে।
২) পর্ণোর মত নাটক সিনেমা রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করার মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যদিও এটা সম্ভব না, তাই এরকম অপরাধ, অর্থাৎ পর্ণো, যিনা, ধর্ষণ কিছুই বন্ধ সম্ভব না। শুধুমাত্র শরীয়াহ কায়েমের মাধ্যমে তা সম্ভব। তাই পর্দার বিধান প্রসারের পাশাপাশি আমাদেরকে শরীয়াহ কায়েমের দিকে আহবান জানাতে হবে। এটাই আপাতত সমাধানের পথ।

আমাদেরকে তাকওয়ার চর্চা বাড়াতে হবে, যুবকদের তাকওয়া অবলম্বনের দাওয়াত দিতে হবে। কিভাবে মেয়েদের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকা যায়, চোখের হেফাযত করা যায়, নাটক সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা যায় এসব ব্যাপারে আলোচনা বাড়াতে হবে। বিনোদনের নামে গান সিনেমা ইত্যাদিতে সময় অপচয় এবং নিজের চোখ কান ও মগজকে কলুষিত না করে কিভাবে সময়কে প্রোডাক্টিভ কাজে লাগানো যায়, দ্বীনী কাজ, পারিবারিক বা সামাজিক কাজ বা জীবিকা উপার্জনে ব্যয় করা যায় তার ফিকির করতে হবে। অবসরকে দ্বীনী কাজে লাগাতে হবে। নিজে দ্বীনদার হতে হবে এবং বন্ধু নির্বাচনে দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

অনেকে আছেন যারা পর্ণোর বিরুদ্ধে, কিন্তু নাটক সিনেমা এগুলোকে স্বাভাবিক মনে করেন। অথচ এগুলো একই শিকলের অংশ, একটি আগে, তো অন্যটি পরে। একজন মুসলিমকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে এসব হারাম, এসব গুনাহের কাজ। হারামকে হালাল মনে করা কুফর। তাই কেউ দেখুক বা না দেখুক, হারামকে হারাম বলেই বিশ্বাস করতে হবে। যারা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করি তারা চেষ্টা করবেন ঘর থেকে টিভি বের করতে, এগুলা বাচ্চাদের আর মহিলাদের মগজ খাচ্ছে। সংবাদ শোনার অভ্যাস থাকলে দৈনিক পত্রিকা আর ইন্টারনেটে নির্ভর করতে হবে, তবু টিভি ঘরে রেখে একটা ভালোর জন্য ১০টা খারাপের জন্ম দিবেন না দয়া করে।

অনেকে ভুল বুঝতে পারেন তাই বলছি- ইসলাম আসলে একতরফা নাটক সিনেমার বিরুদ্ধে নয়, নাটক সিনেমা হারাম হয়েছে এর কন্টেন্ট বা অনৈসলামী বৈশিষ্ট্যের কারণে। শরীয়াহর সীমার মধ্যে থেকে নাটক সিনেমা হওয়া সম্ভব যদিও আজকের দুনিয়ায় তেমন দেখা যায়না। তাই প্রচলিত অর্থে নাটক সিনেমাকে নিষিদ্ধের জন্য বলছি। আর ইসলাম সেটাই বলে।

আল্লাহ আমাদেরকে সকল হারাম গান বাজনা, নাটক সিনেমা এবং শয়তানের বাক্স থেকে হেফাযত করুন। এগুলো হচ্ছে সিঁড়ির এক একটি ধাপ, শেষের ধাপটি হচ্ছে ধর্ষণ অথবা যিনা। এর আগের আগের ধাপটি হচ্ছে পর্ণো এবং হস্তমৈথুন।

সকল অপরাধের গোঁড়া হচ্ছে জাহেলিয়াত, এই গোঁড়াকে উপড়ে ফেলতেই ইসলামের আগমন। সুতরাং হে মুসলিম যুবকেরা, নিজেদের জীবনে ইসলামকে ধারণ করো, আর জাহেলিয়াতকে উপড়ে ফেলো। ১৪০০ বছর আগে যেভাবে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার ইসলামের আলোয় দূরীভূত হয়েছিল, একবিংশ শতাব্দীর জাহেলিয়াত ভাঙতে আবার জালাতে হবে ইসলামের মশাল। কে আছো প্রস্তুত?




No comments:

Post a Comment