Sunday, September 2, 2018

তালেবান আফগানিস্তানকে কী দিয়েছে? (১ম পর্ব)




ভূমিকাঃ-

আমি তখন কাবুলে ছিলাম। আমি আমার যিন্দেগীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বছর তালেবানের বরকতময় ইসলামী হুকুমতের সময় এখানে কাটিয়েছি। আমি তালেবানের বরকতময় যুগের বিভিন্ন স্মৃতির পৃষ্ঠাগুলো উল্টাচ্ছিলাম। তখন এখানে শতভাগ ইসলামী নেযাম চালু ছিল। এখানে মানুষ এবং মানবতা নিরাপদ ছিলো। আদর্শ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করত। কিন্তু এই বরকতময় নেযাম কাফের এবং মুনাফিকরা এক চোখেও দেখতে পারত না। যখন সকাল হওয়ার দৃশ্য এবং দাশতে লায়লার কেয়ামত সাদৃশ দাস্তানের দৃশ্য মনে পড়ে, তখন চোখদ্বয় শ্রাবণের বর্ষা ঝড়াতে থাকে। কেল্লায়ে জঙ্গীর মর্মান্তিক ঘটনা তো কেবল ধারণাকেই থমকে দিতে পারে, কিন্তু কিন্তু তালেবানের কুরবানী এবং ত্যাগের এমন অবিচল ঘটনাও রয়েছে, যেগুলো দেখে খাইরুল কুরুনের কথা মনে পড়ে যায়। ইসলাম প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনের জন্য হাজারো নয় বরং লাখো উম্মাহ নিজের জান এবং মালের নজরানা পেশ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। মায়েরা তাদের সন্তাদেরকে দুলহার মত সাজিয়ে রণাঙ্গনে পাঠিয়েছেন। তারা এই দৃঢ় সংকল্প মনে ধারণ করে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন যে, "বিজয় অথবা শাহাদাত, গাজী নতুবা শহীদ।" এছাড়া তৃতীয় কোন রাস্তা তাদের সামনে ছিল না। আর তাদের কেউ কেউ তো শাহাদাতের মুহুর্তে এই অসীয়তও করে গেছেন যে, "আমরা কালাশনিকভ জড়িয়ে ধরে চিৎকার করছি, তোমরা এই পবিত্র রক্তের মান রেখো, একে হেফাজত করো!

যতক্ষণ না আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হবে এবং মুসলিম উম্মাহ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে আপন রবের ইবাদত করতে পারবে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে থাকবে।

আগত পৃষ্ঠাগুলোতে দেখবেন, তালেবানরা তাদের শাসনামলে তাদের শহীদানের ওসিয়তের উপর কতটুকু অটল ছিলেন আর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন। তারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যাতে করে ছন্নছাড়া আফগান জাতি এত দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও শান্তি ও নিরাপত্তার জীবন-যাপন করতে পেরেছে এবং উম্মতে মুসলিমাহ তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে (এখনও আবার নতুন করে পেতে যাচ্ছ)।

আপনি দেখুন! তালেবান আফগানিস্তানকে কী দিয়েছে?


★★★★★★★ শান্তি ও নিরাপত্তা ★★★★★★★

তালেবানের আগে আফগান জনগন শান্তি তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। কারোরাই জানমাল নিরাপদ ছিল না।
(যেটা #তালেবান_আন্দোলন_উত্থান_ইতিহাস ধারাবাহিক এর ____তম পর্বে উল্লেখ করেছি) সশস্ত্র ব্যক্তি যে কাউকে হত্যা করতে পারতো। তালেবান এসে যুগযুগ ধরে চলে আসা এই অবৈধ হত্যাযজ্ঞ থেকে জনগনকে বিরত রাখে এবং পুরোপুরিভাবে এই রক্তের হোলি খেলাকে বন্ধ করে দেয়। আআফগানিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উপমাহীন নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। যতদিন যেখানে তালেবানের নেতৃত্ব থাকে, ততদিন সেখানে কখনো কোন আইনি সমস্যা সামনে আসেনি, আলহামদুলিল্লাহ।


★★★★★★★★ ন্যায় ও ইনসাফ ★★★★★★★★

তালেবান যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে, সেখানে ন্যায় ও ইনসাফও প্রতিষ্ঠা করেছে। তালেবানরা জনসাধারণকে দ্রুত এবং খুব সহজে ইনসাফ উপহার দিয়েছে। তালেবানের দোস্ত কিংবা দুশমন সকলেই একথার সাক্ষী দিবে যে, তালেবানের কাছে বিনামূল্যে এবং দ্রুততম সময়ে ইনসাফ পাওয়া যেত। জনসাধারণেরর জন্য সহজে আদালত পর্যন্ত পৌঁছা নিশ্চিত করতে তারা কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। শুনানিভুক্ত মামলাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি সহজে আদালত পর্যন্ত যাতায়াতের খরচ পর্যন্ত হুকুমত বহন করে। মামলা চলাকালীন যদি তাকে আদালতের নিকট থাকা প্রয়োজন হয়, তবে তাও তালেবান বিনামূল্যে ব্যবস্থা করে। বাদি-বিবাদি উভয়জনই সরাসরি কাজির (জজ) সাথে সরাসরি কথা বলার অনুমতি ছিল। জনসাধারণের জন্য উকিল ধরার কোন প্রয়োজন হত না। তালেবানের যুগে আফগানিস্তানই একমাত্র এমন রাষ্ট্র ছিল, যেখানে শয়তানের কোন বাচ্চা ছিল না।
কাজী (জজ) কুরআন, সুন্নাহ এবং হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ফায়সালা করতেন। অফিসার, মন্ত্রী এমনকি প্রেসিডেন্টও আইনের উর্ধ্বে ছিল না। কাজি তালেবানের কর্মীদেরকেও আদালতে ডাকতেন এবং অন্যায় প্রমাণিত হলে শাস্তির রায় দিতেন। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও জনগণের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আদালতের কাছে দায়বদ্ধ ছিল।

#একটি_ঐতিহাসিক_ঘটনা-০১
১৯৯৭ সালের ঐতিহাসিক সেই মুকাদ্দমা কেবলই আন্তরিক প্রশান্তির খোরাক ছিল, যেটি তৎকালীন তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের আদালতে হয়েছিল। তাতে একজন মাযুর (ওযরগ্রস্ত/অসহায়) ব্যক্তি তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনের মালিকানা দাবী করে আদালতে মুকাদ্দমা পেশ করেন। শেষপর্যন্ত ঐ ব্যক্তি মামলায় জয়ী হয় এবং প্রমাণিত হয় যে, মূলত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঐ ভবনটি মাযুর ব্যক্তির মালিকানায়-ই পড়ে।
আদালত রায় প্রকাশ করে তৎক্ষনাৎ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদেরকে ভবনটি মাযুর ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করে এবং ঐ দিনই পুরো ভবনটি খালি করে ঐ ব্যক্তির জন্য গুছিয়ে দিয়ে চলে যান।


★★★★★★★ শরয়ী শাস্তি ★★★★★★★

তালেবান মানবতৈরী কোন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র রাজতন্ত্রসহ কোন তন্ত্রমন্ত্র আইনের অধীনস্ত নয়। শরীয়তে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধীনে ফয়সালা করে শরয়ী শাস্তি বাস্তবায়ন করে থাকে। আর তালেবান কর্তৃক এই ইসলামী আইন, শাস্তি এবং কেসাসকে জীবিত করার বরকতে মানুষের মাঝে আখেরাতের চিন্তা এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় জন্মাতে থাকে। ফলে তালেবান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমুহে অপরাধ প্রবণতা শূণ্যের কোটায় নেমে আসে।


★★★★★★★ অপরাধের প্রতিকার ★★★★★★★

ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার বরকতে তালেবানরা আফগানিস্তানে অধিকাংশ অপরাধই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। চুরি, ডাকাতি, মদ, ব্যাভিচার এবং অন্যায়ভাবে হত্যার মত অপরাধগুলো তো হতো না বললেই চলে। আফগানিস্তানে অপরাধ যেখানে গর্বের বস্তু ছিল, ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার বরকতে সেখানে অপরাধকে ত্রুটি মনে করা হতে থাকে এবং এথেকে বেঁচে থাকা জনসাধারণের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগের মত দৃশ্য দেখা যেতে শুরু করে।

#একটি_ঐতিহাসিক_ঘটনা-০২
২০০১ সালের ১০-ই মে আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে একজন অবিবাহিত নওজোয়ান ৪ বার ব্যভিচারে লিপ্ত হবার কথা স্বীকারোক্তি দিয়ে তার ওপর শরয়ী শাস্তি প্রয়োগের দরখাস্ত পেশ করে। আদালতের বাউন্ডারিতে সকলের সামনে তাকে ১০০ দোররা লাগানো হয়। শাস্তির পর নওজোয়ানের চেহারায় আনন্দ প্রকাশ পায়। নিঃসন্দেহে তার ঈমান ঈর্ষা করার মতো। সে এই ফেতনা ফাসাদের যুগেও হযরত মায়েজ আসলামী রাযিঃ এর স্মৃতি তাজা করে দেয়। আর এটি কেবল ইসলামী আইনের কারণেই সম্ভব হয়েছে।


★★★★★★ কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ★★★★★★

তালেবানের আগে আফগানিস্তানে কেন্দ্রীয় হুকুমতের কেবল নামটাই ছিল। বাস্তবে প্রত্যেক এলাকায় একেকজন যুদ্ধবাজ নেতা কর্তৃত্ব করতো। আফগানিস্তান মূলত টুকরো টুকরো ছিল। তালেবান সাধারণ জনগণকে একটি শক্তিশালী এবং প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা দান করে। যার প্রধান ছিলেন আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রাহিঃ। তিনি দেশের ৯৮% এলাকায় ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন এবং হানাফী মাযহাবকে নাগরিক আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। যারাফলে পশ্চিমা শক্তিগুলোর আশার গুড়ে বালি পড়ে।

No comments:

Post a Comment