Sunday, September 2, 2018

উম্মে হাবীবা (রাঃ)

মক্কার সর্দার এবং মুশরিক নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা রামলাহ। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা) এর ফুফাতো ভাই উবাইদুল্লাহ বিন জাহশ আল আসাদীর স্ত্রী। স্বামী উবাইদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করলে রামলাহ'ও তার সাথে ইসলাম গ্রহন করেন। অথচ তাঁর পিতা আবু সুফিয়ান তখন ছিলেন কুফরের উপর অটল। রামলাহ প্রথম দিকের মুসলিমদের সাথেই মক্কার কাফিরদের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য স্বামীকে নিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন, সকল আত্মীয় স্বজন ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে হাবশায় হিজরত করেন।
.
হিজরত করে হাবশায় গিয়ে তো উঠলেন কিন্তু আরামের জীবন কাটানো এই ধৈর্য্যশীলা মহীয়সী নারীর কপালে লেখা ছিলো না। হাবশার মাটিতে তিনি তাঁর কন্যা হাবীবাকে জন্ম দেন, যার নামানুসারে তাঁকে উম্মে হাবীবা ডাকা হয়। এরই মধ্যে আচমকা তাঁর স্বামী ইসলাম ধর্ম থেকে বেরিয়ে গিয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়। তাঁকেও ইসলাম ধর্ম থেকে বের করার অনেক চেষ্টা চালায়, কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন এবং নিজ ধর্মে অটল থাকেন। এভাবে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
.
সেই সময়টা এমনই এক কঠিন সময় ছিলো যখন সব ধরনের বিপদ-আপদ আর পরীক্ষা তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিলো। তিনি তাঁর শিশু কন্যাকে নিয়ে বিদেশ বিভুঁই- এ পড়ে আছেন, পিতা আর স্বামীর সাথে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাঁর ছোট্ট মেয়েটির বাবা খ্রিষ্টান, নানা মুশরিক এবং ইসলামের পরম শত্রু। যে রাসূল (সা) কে তিনি মেনে নিয়েছেন, যে দ্বীনে তিনি প্রবেশ করেছেন, এগুলোর বিরূদ্ধে সেই 'নানা' যুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছেন। কিন্তু এতসব বিপদেও উম্মে হাবীবা (রা) ধৈর্য্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে টিকে থাকেন।
.
উম্মে হাবীবার (রা) এই দুর্দিনে তাঁকে সকল দুঃখ-দুর্দশা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন স্বয়ং রাসূল (সা)। মদীনায় রাসূল (সা) এর কানে উম্মে হাবীবার (রা) খবর পৌছালে তিনি সম্রাট নাজ্জাশীর কাছে দূত পাঠান। সম্রাট যেনো তার রাজ্যে আশ্রয় নেয়া, মক্কাধিপতি আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে হাবীবার (রা) সাথে রাসূল (সা) এর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। নাজ্জাশী আনন্দের সাথে এই বিয়ের সব ব্যবস্থা করেন এবং বিয়ের পর একদল মুহাজিরের সাথে উম্মে হাবীবাকে (রা) মদীনায় পাঠিয়ে দেন।
.
আর এভাবেই রামলাহ বিনতে আবু সুফিয়ান, উম্মে হাবীবা (রা) আল্লাহর রাসূলের স্ত্রী আর মুমিনদের 'মাতায়' পরিণত হন।
.
সময় গড়াতে লাগলো। মক্কা বিজয়ের সময় নিকটবর্তী হয়ে এলো। মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত হয়ে 'আবু সুফিয়ান' কে দূত হিসাবে মদীনায় আলোচনার জন্য পাঠালো। আবু সুফিয়ান মদীনায় এসে প্রথমে কন্যা উম্মুল মু'মিনীন উম্মে হাবীবার (রা) নিকট যান। সেই কতবছর আগে হাবশায় হিজরত করেছিলেন এর পর পিতাকে তিনি আর দেখেননি। কন্যা পিতাকে দেখে রাসূল (সা) এর বিছানা গুটিয়ে বসতে দেন। আবু সুফিয়ান মেয়েকে প্রশ্ন করেন, "মেয়ে! তুমি বিছানা গুটিয়ে নিলে। তা বিছানা আমার বসার উপযুক্ত মনে না করে, না আমাকে বিছানার উপযুক্ত মনে না করে? " মেয়ে বললেন, " এটা রাসূল (সা) এর বিছানা। আর আপনি একজন মুশরিক ও অপবিত্র। এ কারনে আমি চাইনি যে আপনি রাসূল (সা) এর বিছানায় বসুন।" মেয়ের এমন কথা শুনে আবু সুফিয়ান সেখান থেকে উঠে রাসূল (সা) এর নিকট গিয়ে বসেন এবং মেয়েকে বলেন :
"আমাকে ছাড়ার পর তোমার মধ্যে অনেক মন্দ ঢুকেছে" (আল-বিদায়া-৪/২৮০; তাবাকাত-৮/৯৯,১০০)
.
এভাবেই উম্মে হাবীবা (রা) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্যের দাবী মিটিয়েছেন। স্বামী যখন দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীন ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হয়ে গেলো, তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। নিজের বিশ্বাসে অটল থাকলেন। অচেনা প্রবাসে একা পড়ে থেকে নিঃসঙ্গতা-একাকীত্ব-দুঃশ্চিন্তা আর কষ্টের নির্মম অত্যাচার সহ্য করলেন। তাও ভেঙে পড়েননি। সেই দুর্বিষহ মুহূর্তে তাঁর প্রয়োজন ছিলো একজন পুরুষ,একজন স্বামী,যে তাঁকে প্রতিকূল পরিবেশে হিফাজত করবে,তাঁকে সঙ্গ দেবে,তাঁর ছোট শিশুটির দায়িত্ব নেবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মে হাবীবার (রা) প্রয়োজন পূরণ করেছেন। এমনভাবে করেছেন তৎকালীন সমাজে যা কেবল নারীদের স্বপ্নেই স্থান পেতো । তাঁকে রাসূল(সা) এর সাথে বিয়ে দিয়েছেন। সাধারন 'মানবীয়' স্তর থেকে 'মুমীনদের মা-র' স্তরে উঠিয়ে এনেছেন, পরম করুণাময় এর বিনিময় তো এমনই হয়।
.
(গ্রন্থ সহায়িকা- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা ৫ম খন্ড - ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ)
.
#UmmHabibaRa
#KnowYourRoot
#FootstepsOfSahabiyaat

No comments:

Post a Comment