Monday, September 3, 2018

খলীফা মামুন ও এক ইহুদী পাদ্রী




প্রসিদ্ধ আব্বাসি খলিফা মামুন তখনো খেলাফত পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হননি। তিনি মাঝে মাঝে ইলমী মজলিস বসাতেন। সেখানে বিভিন্ন দীনী বিষয় নিয়ে আলোচনা-মুযাকারা হতো।
একদিন মজলিস চলছিল। এমন সময় হাজির হলো এক ইহুদি জ্ঞানী মানুষ। দেখতে শুনতে অতুলনীয়। বাক-কুশলতায় অসাধারণ। এক মজলিসেই সবাইকে মুগ্ধ করলো ইহুদি পাদ্রীটি।
.
ভাবী খলিফা মামুন বললেন, আপনি মুসলমান হয়ে যান। আপনার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আমি করবো। আপনি শুধু রাজি হয়ে যান।
ইহুদি পাদ্রী বললেন, আমি আমার পিতৃপুরুষের ধর্মের উপর থাকতে চাই। দয়া করে এ নিয়ে চাপাচাপি করবেন না।
এ বলে তিনি মজলিস থেকে বিদায় নিলেন।
.
এক বছর পর যখন মামুন খলিফা হয়েছেন, আবারো এমন একটি দীনী মজলিসে সেই ইহুদি পাদ্রীকে দেখা গেলো। পুরোদস্তুর মুসলিম। ফিকহ ফতোয়ার উপর তাত্বিক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করলেন।
মজলিস শেষ হলে খলিফা মামূন তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনিই সেই ইহুদি ধর্মজ্ঞানী নন, যিনি একবছর পূর্বে এই মজলিসে এসেছিলেন!!
তো কী কারণে মুসলিম হলেন? অথচ সেদিন আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন!!
পাদ্রী বললেন, আমি সেই মজলিস থেকে গিয়ে একটা বিষয় ভাবলাম। চিন্তা করলাম, একটু যাচাই করে দেখি, কোন ধর্মগ্রন্থ নির্ভুল ও সঠিক।
আমার হস্তলিখন অনেক সুন্দর।
নিজহাতে তাওরাতের তিনটি নুসখা লিখলাম। প্রতিটিতে কিছু কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধন ও কম-বেশ করে বাজারে নিয়ে গেলাম। ক্রেতারা সে সব খরিদ করে নিলো। কোনো ভুলই ধরতে পারলো না।
ইঞ্জিল নিয়েও একই কাজ করলাম। সেখানেও কোনো অভিযোগ আপত্তির সম্মুখিন হলাম না।
.
অতঃপর কুরআন কারিমেরও তিনটি হস্তলিখিত কপি তৈরী করলাম। প্রতিটিতে কিছু কমবেশ করলাম। এরপর মুসলিমদের বাজারে নিয়ে গেলাম সেই কুরআন তিনটি। ওয়াররাকরা যখনই সেগুলো পড়ে দেখলো তখনই আমার দিকে ছুড়ে ফেলে দিলো আর বলল, এইসব ভুল-ভ্রান্তিতে পূর্ণ। এগুলো বিক্রয় করা যাবে না।
তখন আমার দৃঢ়বিশ্বাস হয়ে গেলো, কুরআনই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব, যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হেফাজত করা হয়েছে ও কেয়ামত পর্যন্ত হবে।
তখনই আমি মুসলমান হয়ে গেলাম।


 من المنتظم فى تاريخ الملوك والأمم لابن الجوزي 3/220


- আব্দুল্লাহ তালহা

No comments:

Post a Comment