Tuesday, September 4, 2018

নারী পুরুষের সম্পর্ক ও আখেরী জামানাহ





১. এটা কি ফ্যান্টাসির বিষয়?

ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে।

সে জানে ইসলাম তাকে অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু কোন এক অজানা কারণে তার সে সুপ্ত মনোবাসনা পূর্ণ হচ্ছে না। এ অজানা কারণটা তৈরি করেছে এ দাজ্জালী সমাজ। কারণ দাজ্জালী সমাজ যদিও অনেক টেনেটুনে, অনেক প্রতীক্ষার পর এক বিয়ের অনুমতি দেয় কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়ের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।

কারণ দাজ্জাল বিয়ে জিনিসটাই পছন্দ করে না। সে চায় ফ্রি মিক্সিং। যা তরুণদের কাছে কাছে আসার গল্প নামে পরিচিত। ফলে যারা সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয় তাদের কাছে নারী কিছুই না।

আমি এমনও লোক দেখেছি মানিব্যাগে কনডম রাখে। বলা যায় না, চলতে ফিরতে কখন কার সাথে রিলেশন বিল্ড আপ হয় আর মানিব্যাগে রাখা জিনিসটা কাজে লেগে যায়। যেহেতু রিলেশনটা হয় স্বল্প সময়ের জন্য কাজেই দোকান পর্যন্ত যাওয়ার রিস্ক নিতেও রাজি না। এর মধ্যেও রিলেশন ব্রেক আপ হয়ে যেতে পারে। ফলে তাদের কাছে নারী তেমন কোন দামি বিষয় না। ডালভাতের মতো।

কিন্তু যারা ইসলামিক মন মানসিকতার অধিকারী তাদের জন্য ব্যাপারটা কিন্তু সহজ নয়। কারণ প্রতি মুহূর্তে আখিরাত, শরিয়ত, তাকওয়া ইত্যাদি নানা কিছু তার গতি রোধ করে দেয়।

ফলে সে না পারে অবাধ মেলামেশায় অভ্যস্ত হতে, না পারে দ্বিতীয় আরেকটা বিয়ে করতে। কারণ দ্বিতীয় বিয়ে করার মতো শরীয়তী ইলেম ও মানসিক শক্তি তার কখনো হয়ে উঠে না।

ফলে সে একটা দ্বিতীয় বিয়ের ফ্যান্টাসির রাজ্যে বসবাস শুরু করে। সে মনে করে হয়তো কোন তাকওয়াসম্পন্ন, পরহেজগার নারী তার জীবনে আসবে, কারণ ফেসবুকে এরকম অনেক নারীর দেখা মেলে, আর সে নারী এসে তার জীবন পরিপূর্ণ করে দেবে। তাকে আগলে রাখবে, তার পূর্বতন স্ত্রীর সাথে বান্ধবীর মতো সদ্ভাব থাকবে, আবার তার সন্তানগুলোকেও আদর করবে।

এরকম একটা কল্পনার জগতে বসবাস করা আসলেই খুব কষ্টের। যেহেতু সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে সে মনে করে স্ত্রী বোধহয় তার কষ্ট কিছু বুঝবে। বা অন্তত তার কথায় সায় দেবে।

কারণ সে দেখে তার স্ত্রীও মাশাআল্লাহ ভালো দ্বীনদার। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, পর্দা করে। ফলে তার একটা বিশ্বাস জন্মে যে সে অন্তত তার কথায় ইয়েস ইয়েস করবে। এদিকে দুর্বল মুহূর্তে সে তার সাথে বিষয়টা শেয়ার করে বসে। এমনকি তাদের পারসোনাল মুহূর্তেও এ ধরনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বসে।

এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, এটা খুবই গর্হিত ব্যাপার, কারণ এটা ঠিক নয়। এতদিন সংসার করেও সে নারী জাতির মন বুঝতে পারেনি। এমনকি নারী জাতির মান সম্মানও বুঝতে পারেনি। আমি খুব অবাক হই, একজন স্বামী কিভাবে তার স্ত্রীর কাছে আরেক বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতে পারে। তার কাছে অনুমতি চাওয়া মানে তাকে অপমান করা।

এ বিষয়টি আমাদের আইন প্রণেতারাও বুঝতে পারে নাই। যতদূর জানি, তারা দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতির নেয়ার একটি আইন করেছেন। তারা কি জানেন না, একজন নারীর সামনে কখনো আরেকজন নারীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করা যায় না? হোক সেটা হাস্যচ্ছলে বা খেলার ছলে। যার সাথে ঘর করেন, তাকে এ সম্মানটুকু দেবেন না?

রাসূল ছাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামও কখনো এক স্ত্রীর সামনে আরেক স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলতেন না, আমার জানামতে। যার যার ঘর আলাদা আলাদা। একজন নারী যখন বিয়ে করে, তার ন্যূনতম চাহিদা হচ্ছে একটা আলাদা ঘর, মানে প্রাইভেসি। সেখানে শাশুড়ি, ননদ, সতিনের আসা যাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় এসব না আসাই উচিত। যতক্ষণ স্ত্রীর কাছে থাকেন ততক্ষণ শুধু তাকে নিয়েই থাকেন। স্ত্রী আপনাকে ভালবাসবে।

আরেকটা বিয়ে করতে যদি ইচ্ছে করে, সেটা করেন, ইসলাম আপনাকে নিষেধ করেনি, আপনার স্ত্রী মানবে কি না সেটা তার ব্যাপার, আশা করি মানবে, কিন্তু তার কানের সামনে তাকে খাটো করে অন্য নারীর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা ভালোমানুষী নয়, তবে ছেলেমানুষি অবশ্যই। আর নারীরা ছেলেমানুষ পছন্দ করে না। তারা পছন্দ করে পুরুষমানুষ। আমার এখানে নারী পাঠক আছেন, তারা জানেন আমি ভুল কিছু বলেছি কি না।

২.

নারী পুরুষের সম্পর্ক ও আখেরী জামানাহ

ইসলাম নারী পুরুষের সমন্বয়ে একটি গতিশীল সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী। নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশী জরুরী হচ্ছে তার যৌনতা ও নিরাপত্তা। নারীদের মা হওয়াও এতো জরুরী নয় যতটা বেশী জরুরী সে যৌনতার দিক দিয়ে সেটেলড থাকা। দাজ্জালী সমাজব্যবস্থায় নারীদের ক্যারিয়ারকে বড় করে দেখানো হয়। পলিগ্যামি ও মাল্টিম্যারেজকে সমার্থকরূপে দেখানো হয়। পলিগ্যামি মানে বহুবিবাহ / মাল্টিম্যারেজ মানেও বহুবিবাহ। কিন্তু এটা আমাদের কাছে আশ্চর্য বিষয় নয় যে আমরা যারা শেষ যুগ বিষয়ে অধ্যয়ন করি, দাজ্জালী সমাজব্যবস্থায় পলিগ্যামি নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু মাল্টিম্যারেজ নিষিদ্ধ। ঘরে এক স্ত্রী রেখে আরো অসংখ্য নারীর মধুপান করলেও তা দোষনীয় নয়। পৃথিবীর কোন আদালতে এর বিচার হবে না। অধিকন্তু সেই স্ত্রী নারীটি যদি স্বামীর এ লাম্পট্যের কথা প্রকাশ করে তাহলে স্ত্রী বেচারাকেই সমাজের কাছে হাস্যস্পদ হতে হয়। মানুষ বলে, আরে, পুরুষের ও একটু আধটু মুদ্রাদোষ থাকেই। বর্তমান জমানায় এর চেয়ে ভালো ছেলে কোথায় পাবে? অথবা মন্তব্য জোটে, তুমিই বোধহয় তোমার স্বামীকে খুশী রাখতে পারো নি। এক কথায় পলিগ্যামির কোন বিচার নেই। ওয়েস্টার্ণ কালচারে যান, বা ওয়েস্টার্ন কালচারে অভ্যস্ত আমাদের দেশের শো বিজ জগত বা সভ্য সমাজে তাকান পলিগামি সেখানে কোন বিষয় নয়, বরং ডালভাত। কিন্তু আপনি যে মেয়েটার সাথে যৌনতা করতে চান তাকে কিছু স্বর্ণ বা মুদ্রা মোহরানা দিয়ে তাকে সম্মানিতা করুন, তার জীবনের চলার পথে সাথী হোন, তখন সবাই বলবে, আরে বাপরে বাপ, কত বড় আনকালচার্ড। ছিঃ এই যুগে কেউ দুই বিয়ে করে? হয়তো আপনার প্রথমা স্ত্রীর বাপ ভাইয়েরা বলবে, এই একে জেলে ঢুকানোর ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের মেয়ে সতীনের সংসার করবে, হতেই পারে না। — আসলে এই লোকগুলোই দাজ্জালী সমাজব্যবস্থার ব্রেন ওয়াশড প্রোডাক্ট। তারা মোটেই ইসলাম বুঝে নাই। হতে পারে তারা আলেম মাওলানা মুফতি, কিন্তু তাদের ব্রেনে দাজ্জালের পেশাব ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার পরিচিত এক ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করাতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। সে লোকগুলো আলেম ছিল, হাফেজ ছিল।

একটি গতিশীল সমাজব্যবস্থার জন্য পলিগ্যামি অপরিহার্য। ইসলাম কিন্তু পলিগ্যামিকে উৎসাহিত করে। তবে তা নিয়মের মাধ্যমে। সেটা হলো মাল্টিম্যারেজ। মাল্টিম্যারেজ যে শুধু ছেলেদের জন্যই তা কিন্তু নয়। অনেকে ভুলবশত মনে করে ইসলাম শুধু ছেলেদের মাল্টিম্যারেজের অধিকার দিয়েছে। একেবারে ভুল তথ্য। মেয়েরা স্বামী থেকে তালাক নিয়ে বা বিধবা হলে ইদ্দত পালনের পর পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। সন্তানের পিতা নির্ণয়ের জন্যই এটা জরুরী। স্বামীকে যদি ভালো না লাগে বা তার ভরণপোষনে সন্তুষ্ট না হলে একজন নারীর সুযোগ আছে তার থেকে বিচ্ছেদ নিয়ে অন্য স্বামী গ্রহণ করার। ইসলাম গতিশীল। ইসলাম মানুষের শারীরিক ও মনের চাহিদাকে মূল্যায়ন করে।

একজন নারী রাসূল ছাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, আমি আমার স্বামী থেকে তালাকের পর ইদ্দত পালন শেষ দ্বিতীয় একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করি। কিন্তু এর কাছে তো কাপড়ের পুটলির মতো ছাড়া আর কিছুই নেই। বলে তিনি তার চাদর দিয়ে কাপড়ের পুটলি বানিয়ে দেখাতে লাগলেন। নবীজী সা মুচকি হেসে বললেন, এখন কি তাহলে তুমি আগেরজনের কাছে ফিরে যেতে চাও? কিন্তু তা হবে না যতক্ষণ তুমি তার মধু পান না করছো এবং সে তোমার মধু পান না করছে। লা- হাত্তা তাযুকি উসাইলাতাহু ওয়া ইয়াযুকা উসাইলাতাক।

আজ এই আধুনিক সমাজে কোন নারী এই স্বাধীনতা প্রকাশ করতে পারবে? হয়তো হৃদয়ের চাহিদাকে মেরে ফেলে মুখ বুজে সব মেনে নিবে অথবা অন্তরের বাসনা পূরণ করার জন্য হারাম উপায়ের আশ্রয় নেবে। আর আধুনিক যুগে হারাম উপাদান, হারাম সম্পর্ক, হারাম মানুষ হাতের নাগালে, সহজলভ্য। বরং বিবাহ তালাক সব কিছু এমন কঠিন করে ফেলা হয়েছে যে মানুষ সহজে হালাল রাস্তা অবলম্বন করতে চায় না।

আজকের যুগের অনেক আলেম উলামা রাসূল সা এর অনেক স্ত্রী নিয়ে মনে হয় বিব্রত বোধ করেন। তারা মিনমিনে স্বরে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন যে, এতোগুলো স্ত্রী আসলে ইসলামের প্রয়োজনে ছিল। দ্বীনের দাওয়াতের সুবিধার জন্য। কিন্তু তারা কাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন? যেসব মুনাফিক কাফেররা নিজেরাই পলিগ্যামির জীবনে অভ্যস্ত তাদের কাছে কিসের সংকোচ? আলেমরা কেন উঁচু গলায় বলেন না, পলিগ্যামি ও মাল্টিম্যারেজ রাসূল সা-এর প্রিয় সুন্নত। নারী ও পারফিউম। আর চোখের শীতলতা ছিল সালাতে। এতে দ্বীনের স্বার্থ যেমন ছিল তার চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না নারী ও পুরুষদের যৌন ও সামাজিক জীবন পবিত্র ও গতিশীল রাখার উদ্দেশ্য। শুধুমাত্র মিসওয়াক ও ঢিলা কুলুখের সুন্নত পালন করলে হয়তো শরীর পরিষ্কার থাকবে। কিন্তু মাল্টি ম্যারেজের সুন্নত সমাজে চালু হলে সমাজ পবিত্র থাকবে।

যেসব নারীরা দ্বীনী বিষয়ে অগ্রগামী তারাও বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেন না। যদি তারা রাসূল সা এর এই সুন্নতকে মন প্রাণ দিয়ে গ্রহণ না করেন তবে আমার আশংকা হয় তারা শেষ যুগে দাজ্জালের দলেই থাকবেন, ইমাম মাহদী য়ালাইহিস সালামের দলে শামিল হতে পারবেন না।

২।। উম্মুল মু’মিনীনদের মধ্যে হযরত যায়নাব বিনতে জাহাশ রাযি আমার খুব বেশী প্রিয়। তিনি সেই সাহাবী যার থেকে ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর ছিদ্র হওয়ার হাদীসটি প্রকাশ পেয়েছে। তাই ইসলামী ইস্কেটোলজির একজন ছাত্র হিসেবে তার প্রিয় হওয়ার কারণ আছে। এছাড়া তার মাধ্যমে শেষ যুগের বিয়ে শাদী সম্পর্কিত অনেক মাসায়েল আদব ও আচার অনুষ্ঠান শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

তিনি এমন একজন মানুষ যার কথা কুরআনে এসেছে। তিনি ছিলেন হযরত যায়েদ রাযি এর স্ত্রী এবং রাসূল সা এর ফুফাতো বোন। যায়েদ রাযি ছিলেন রাসূল সা এর প্রথমা স্ত্রী হযরত খাদিজা রাযি এর গোলাম। রাসূল সা পরে তাকে আযাদ করে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। যায়েদ রাযি প্রথম চার জনের একজন যারা ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু কুরাইশ বংশীয় নারী হিসেবে একজন আযাদ হওয়া গোলামকে যায়নাব রাযি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। যায়েদ রাযি-ও তালাক দিতে চাচ্ছিলেন। রাসূল সা যায়েদ রাযি কে উপদেশ দেন সম্পর্কটাকে ধরে রাখতে। কিন্তু আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ছিল যায়নাব রাযি রাসূল সা এর স্ত্রী হবেন।

ইসলাম ধর্ম কিন্তু যায়েদ বা যায়নাব রাযি কে বাধ্য করেনি তার মনের বিপরীতে সংসার করার জন্য। কারণ ইসলাম হচ্ছে গতিশীল। যায়েদ কর্তৃক তালাক প্রদানের পর ইদ্দত পূর্ণ হলে আল্লাহ্‌র রাসূল যায়েদ রাযি-কে পাঠালেন তার পক্ষে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। দেখুন ইসলাম কিন্তু এমন করেনি যে তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক চিরশত্রুতায় রূপ নেবে। বরং গাইরে মাহরাম হিসেবে একজন মুসলমানের সাথে আরেকজন মুসলমানের যতটুকু সম্পর্ক থাকা দরকার ততটুকুই থাকবে।

যায়েদ রাযি তার কাছে গেলেন। সে সময় যায়নাব রাযি আটার খামীর বানাচ্ছিলেন। যায়েদ রাযি বলেন, যায়নাবকে দেখে আমার খুব গুরুগম্ভীর ও মর্যাদাসম্পন্ন মনে হলো। কেননা খোদ রাসূল সা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাই আমি তার দিকে তাকাতে পারলাম না। আমি তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে বললাম, হে যায়নাব, রাসূল সা আমাকে তোমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। যায়নাব রাযি বললেন, আমি আমার রবের সাথে পরামর্শ ছাড়া কিছু করতে পারি না। তাই তিনি ইস্তেখারার সালাত পড়তে চলে গেলেন। এদিকে কুরআনে আয়াত নাযিল হলো, তাই রাসূল সা এর জন্য আর অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হলো না। তিনি যায়নাবের ঘরে গেলেন। বেশ বেলা হলে রাসূল সা সবাইকে রুটি ও গোশত খাওয়ালেন। এভাবেই রাসূল সা একটি বকরি জবাইয়ের মাধ্যমে যায়নাব রাযি এর বিয়ের ওয়ালিমা করলেন। রাসূল সা আর কোন স্ত্রীর জন্য এতো আয়োজন করেন নি।

উপস্থিত লোকদের অনেকে চলে গেলেও কিছু লোক বসে রইল। ফলে রাসূল সা-ও বসে রইলেন আর যায়নাব রাযি ঘরের দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলেন। তখন আল্লাহ্‌ আয়াত নাযিল করলেন যাতে গৃহস্বামীর বাড়ির আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়। অযথা গল্পে মশগুল হয়ে যেন বাড়ির মালিককে কষ্ট দেয়া না হয়।

এরপর পর্দার আয়াত নাযিল হলো। আনাস রাযি ঘরে প্রবেশ করতে গেলে রাসূল সা পর্দা টেনে আড়াল করে দিলেন।

৩।। আজকাল বেগানা নারী পুরুষের মধ্যে আড্ডা দেয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এরকম আড্ডা থেকেই কত যে কেলেঙ্কারী হয়। ঘরে স্ত্রী রেখে বাহিরে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় সময় নষ্ট করাকে পৃথিবীর কোন আইন নিষেধ করবে না। এখান থেকেই উৎপন্ন হয় মাদকসেবীরা, ড্রিঙ্কস করে আর নাচে গানে ভরপুর করে তোলে। কিন্তু যখন বলা হয় এরকম আড্ডা দিয়ে নিজের জীবনকে ক্ষত বিক্ষত না করে বিয়ে করো, আড্ডা দিতে চাও তো একাধিক বিয়ে করো। কি বলবে সভ্যসমাজ কল্পনা করতে পারেন?

রাসূল সা এর নয় জন স্ত্রীর মধ্যে তিনি পালাবন্টন করে থাকতেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে নবম দিনে এসে পৌঁছতেন। যে ঘরে নবী সা যেতেন সেই ঘরে সব স্ত্রী এসে রাতের প্রথম ভাগে একত্রিত হতেন। কত যে হৃদয়ের অনুভব হাসি মান অভিমান সেসবে জড়িয়ে ছিল তা অধমের কলম ধারণ করতে অক্ষম। বাতিহীন অন্ধকার ঘরগুলোতে আলো হতো জান্নাত থেকে। একদিন নবিজী সা আয়েশা রা এর ঘরে ছিলেন। ইতিমধ্যে যায়নাব রাযি এলেন। রাসূল সা তার দিকে হাত বাড়ালেন। আয়েশা রাযি বললেন, এ তো যায়নাব। তখন নবী সা হাত গুটিয়ে নিলেন। এ নিয়ে আয়েশা ও যায়নাব রাযি বাক্য বিনিময় করলেন। এমনকি তা কথা কাটাকাটিতে পরিণত হলো। ইতিমধ্যে সালাতের ইকামত দেয়া হলো আর আবু বকর রাযি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কথা শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল আপনি ওদের এসব রেখে সালাতের জন্য আসুন তো।

নবীজি সা বেরিয়ে গেলে আয়েশা রাযি বললেন, এখনই সালাত শেষ হবে আর আমার পিতা আবার আসবেন এবং আমার সাথে যা আচরণ করার তাই করবেন। নামায শেষ হলে আবু বকর রাযি আবার আসলেন, এবং কঠোর ভাষায় তার মেয়েকে (আয়েশা রাযি) তিরস্কার করলেন, “তুমি কি তার সাথে (যায়নাব রাযি) এমন আচরণই করে থাকো?”

সতীনের সাথে কিরূপ আচরণ করতে হয় তা আমাদের বাবারা তাদের মেয়েদের শিক্ষা দিবেন কবে? আজকাল তো সতীন থাকলে মা বাবা তাদের কুমারী মেয়েদের সেখানে বিয়েই দেন না। যেন এটা বিরাট এক অপরাধ।

৪।। আর আমাদের মেয়েরাই বা কবে সতীনের সাথে হাসি আনন্দ মান অভিমানে সময় কাটিয়ে জীবনকে স্মৃতিময় করে রাখবেন? টিভি সিরিয়াল বা সিনেমা দেখে আমাদের মেয়েরা তো ব্রেন ওয়াশড, সতীন মানেই ঝগড়া, সতীন মানেই তার একার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

রাসূল সা এর এক স্ত্রী ছিলেন সাওদা রাযি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির মহিলা। কিন্তু আয়েশা রাযি তাকে এতো বেশী ভালোবাসতেন যে আয়েশা রাযি-র কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয় কোন স্ত্রীলোক ছিল না। আয়েশা রাযি বলতেন, ইস্ সাওদার দেহের ভেতর যদি আমি থাকতে পারতাম। অর্থাৎ আমি যদি সাওদা হতাম। সাওদা রাযি-র বয়স যখন একটু বেড়ে যায় তখন এমনকি তার পালার দিন তিনি আয়েশা রাযি কে দিয়ে দিলেন। সুতরাং আয়েশা রাযি রাসূল সা-কে দুই দিন পেতেন।

রাসূল সা-ও আবার তার সব স্ত্রীর দিকে নযর রাখতেন। উম্মু সালামা রাযি-র সাথে বিয়ের পর তার সাথে একাধারে ৩ দিন থাকেন। তারপর তাকে বলেন, তুমি তোমার স্বামীর কাছে নগণ্যা নও। আমি চাইলে তোমার কাছে ৭ দিনও থাকতে পারি, তবে সেক্ষেত্রে আমার অন্যান্য স্ত্রীদের কাছেও তো ৭ দিন থাকতে হবে। এভাবে বুঝিয়ে বলেন।

আমরা জীবনে কতদিন আমাদের ‘এক স্ত্রীর’ কাছে একথা বলেছি, তুমি তোমার স্বামীর কাছে নগণ্যা নও? বরং সেই এক স্ত্রী-ই যে কত নগণ্য তার প্রমাণ হরহামেশাই দেয়া হয় আর তা লোকেদের চোখও এড়ায় না।

৫।। আজকাল মেয়েরা স্বামীর সাথে কিভাবে মজা করতে হয় তাও বোধহয় ভালোভাবে জানে না। শুধু তাদের চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ হলেই হলো। ফলে সংসার থেকে বিদায় নেয় আমোদ আনন্দ। আর জীবন হয়ে পড়ে একঘেয়ে। ফলে মানুষ আনন্দের জন্য পিকনিক জন্মদিন কত কিছুই না করে।

একবার ওমর রাযি এর মেয়ে হাফসা রাযি-র ঘরে গেলে তিনি রাসূল সা-কে মধুর শরবত পান করান। রাসূল সা -এর অন্য স্ত্রীরা ফন্দি করলেন কিভাবে একটা মজা করা যায়। রাসূল সা সাওদা রাযি -র কাছে গেলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল, আপনি কি মাগাফির খেয়েছেন? তিনি বললেন, না তো। সাওদা রাযি বললেন, তাহলে এই দুর্গন্ধ কিসের? রাসূল সা বললেন, হাফসা আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। সাওদা বললেন, হুম, তাহলে মৌমাছি বোধহয় মাগাফির ফুল থেকে মধু পান করেছে। রাসূল সা এর মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে এটা শুনে নবীজী খুবই বিব্রত হলেন।

একটু পর প্লান অনুযায়ী আয়েশা রাযি একইভাবে তাকে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল, গন্ধ কিসের? আবার একটু পর সাফিয়া রাযি -ও একইরূপ কথা বললেন।

এদিকে হাফসা রাযি এতো ঘটনা জানেন না। পরবর্তীতে রাসূল সা আবার হাফসা রাযি-র কাছে গেলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি কি আপনাকে ঐ জিনিস (মধুর শরবত) পান করাবো? রাসূল সা বললেন, না আমার আর তাতে প্রয়োজন নেই।

ফলে রাসূল সা -এর স্ত্রীরা খুব দুঃখ পেলেন, সাওদা রাযি বলতে লাগলেন, “সুবহানআল্লাহ, আল্লাহ্‌র শপথ, আমরা তার জন্য তা হারাম করে দিলাম?” আয়েশা রাযি, বলতে লাগলেন, “চুপ করো।” হাসিখুশি মজা করতে গিয়ে সবাই দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়লেন।

৬।। আমাদের মেয়েরা কোনভাবেই স্বামীকে শেয়ার করতে চায় না। রাসূল সা-কে এজন্য কোন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়নি। রাসূল সা এর স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে শেয়ার করতে কোন সংকোচ বোধ করেন নাই। এতে তাদের মান ইজ্জত মাটিতে মিশে যায় নাই। আমাদের মেয়েরা কি রাসূল সা এর স্ত্রীদের চেয়েও নিজেকে মূল্যবান মনে করেন?

রাসূল সা এর স্ত্রীরা নিজের থেকে তার জন্য পাত্রী খুঁজে আনত। আবু সুফিয়ান রাযি এর মেয়ে উম্মু হাবীবা রাযি একবার রাসূল সা কে বলে বসলেন, আমার বোনকে কি আপনার প্রয়োজন আছে? রাসূল সা বললেন, তার জন্য আমি কি করতে পারি বলো। উম্মু হাবীবা বলেন, তাকে বিয়ে করুন। রাসূল সা বললেন, তুমি কি তা চাইবে? উম্মু হাবীবা রাযি বললেন, কেন নয়? শুধু একাই তো আমি আপনার স্ত্রী নই। আপনার তো আরো স্ত্রী আছে। আর ভালো কাজে যে আমার অংশীদার হবে সে আমার বোন হোক তা আমি সবচেয়ে ভালো মনে করি। রাসূল সা বললেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। উম্মু হাবীবা তখন বললেন, তাহলে আপনার আরেক স্ত্রী উম্মু সালামার আগের ঘরের মেয়ে দুররাকে। রাসূল সা বললেন, সেও তো আমার জন্য হালাল নয়। কারণ সে আমার স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। আর তাছাড়া উম্মু সালামার আগের স্বামী আবু সালামা সে তো আমার দুধ ভাই। হালিমার কাছে যাওয়ার পূর্বে আবু লাহাবের দাসী সুয়াইবিয়া কিছুদিন রাসূল সা কে দুধ পান করিয়েছিলেন। আবার আবু সালামাও সুয়াইবিয়ার দুধ পান করেছেন। আর দুধ চাচার সাথে আপান চাচার মতোই বিয়ে হারাম। সুতরাং তোমরা আমার কাছে তোমাদের কন্যা ও বোনদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসো না।

৭।। এভাবে ইসলাম মানুষের দাম্পত্য জীবন বা যৌন জীবনকে সবসময় গতিশীল রেখেছে। বিয়ে শাদীর এতো উদার নীতির পরও ইসলাম মালাকাল ইয়ামীনের ব্যবস্থা রেখেছে। মালাকাল ইয়ামীন হলো মালিকানাভুক্ত নারী। ইংরেজীতে এদের বলে Right hands possess, এরা দাসী নয়। বরং এসব নারীরা নিজের থেকে নিজেকে কোন পুরুষকে দান করে। শেষ যুগে মালাকাল ইয়ামীনের বিরাট ভূমিকা আছে। দাজ্জালী সমাজ আমাদের মালাকাল ইয়ামীন শব্দটা ভুলিয়ে দিয়েছে। আলেম উলামারাও এখন শব্দটি ব্যবহার করতে লজ্জা পান। বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু রাসূল সা যা পছন্দ করতেন তা নিয়ে বিব্রত হওয়া কি কোন শুভ কাজ হতে পারে?
রাসূল সা তার জীবনের শেষ কথা বলেছেন, সালাত, সালাত, আল্লাহ্‌কে ভয় করো তোমার মালাকাল ইয়ামীনদের ব্যাপারে। আজকে আলেমদের কাছে এই হাদীস শোনা যায় না। তার মালাকাল ইয়ামীনদের কথা উচ্চারণ করেন না। কখনো যদিওবা করেন, তবে তার ভুল ব্যাখ্যা করেন। মালাকাল ইয়ামীনদেরকে দাসী বলেন।

আয়েশা রাযি তাদের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করতেন যেসব নারী নিজেদের রাসূল সা এর প্রতি হেবা বা দান করেছিলেন। তিনি ভাবতেন কোন নারী কি নিজেকে একজন পুরুষের কাছে দান করতে পারে? কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়ালা আয়াত নাযিল করলেন, “হে নবী যেসব মেয়েরা আপনার জন্য নিজেদের দান করে তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনি নিজের কাছে স্থান দিন, যাকে ইচ্ছা দূরে সরিয়ে দিন।” এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর আয়েশা রাযি রাসূল সা-কে বললেন, ওয়াল্লাহি, আমি দেখছি, আল্লাহ্‌ তো আপনার ইচ্ছা মাফিক দ্রুত হুকুম নাযিল করেন।

কাজেই এমন সমাজ ব্যবস্থায় নারী পুরুষের যৌনতার স্বাধীনতা হালাল উপায়ে সংরক্ষিত হয়। এটাই রাসূল সা-এর সুন্নাত। আর এটাই কাফের সমাজের বাছবিচারহীন পলিগ্যামির সাথে মুসলিম সমাজের পলিগ্যামির পার্থক্য গড়ে দেয়। যেখানে কাফেরদের সমাজ মুখ থুবড়ে পড়ে, সেখানে মুসলমানদের সমাজ সচল ও গতিশীল থাকে।

একজন নারীর স্বাধীনতা চাকরী করার মধ্যে নয়, ডাক্তার ইঞ্জিনীয়ার, পাইলট, জজ ব্যারিস্টার হওয়ার মধ্যে নয়। একজন নারীর স্বাধীনতা হালাল উপায়ে তার যৌন ইচ্ছা পূরণ করার মধ্যে। ইসলাম নারীদের এই সম্মান দিয়েছে। আর কাফের ও মুনাফিকরা নারীদের যৌন আকাঙ্খাকে পূজি করে তাদের পণ্য বানিয়েছে।

মুসলিম সমাজের উচিৎ লক্ষ লক্ষ টাকা দেনমোহর, গায়ে হলুদ, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ওয়ালিমার ভোজ খাওয়ানো ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিত্যাগ করা ও ইসলাম নির্দেশিত নারী পুরুষের সম্পর্কের গতিময়তাকে বাঁধা না দেয়া।

হাল আমলে কিছু সুন্নতপ্রেমী লোকদের মধ্যে মসজিদে বিয়ে করানো, ইজতেমায় বিয়ে করানো, ফাতেমী মোহর প্রদান করা ইত্যাদি বিষয়ে সুন্নতের নামে খুব বাড়াবড়ি লক্ষ্য করা যায়। অথচ এগুলো আদৌ উল্লেখযোগ্য কোন আমল নয়। বরং বহুবিবাহ, মোহর, মালাকাল ইয়ামীন, তালাক ইত্যাদি যেসব বিষয়ে আমাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআন ও হাদীসে বারবার আলোচনা করা হয়েছে সেসব বিষয়ে মানুষ কতই না উদাসীন। মুসলমানদের পুনরায় একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনের জন্য মূলের দিকে ফিরে আসার কোন বিকল্প নেই।

#কালেক্টেড পোস্ট

বিঃদ্রঃ https://eschatologygroup.wordpress.com থেকে সংগৃহীত। লেখক কে জানি না। শেষের দিকে কিছু সুন্নতকে গুরুত্বহীন বলা হয়েছে, এর সাথে একমত না। লেখা দুটো আখেরী জামানা বা ইস্কেটলজি বিষয়ে উৎসাহী কেউ লিখেছেন, পোস্টে সম্ভবত ইমরান নযর হোসাইনের চিন্তার প্রভাব রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে লেখাটি তথ্যবহুল উপকারি মনে করায় শেয়ার করলাম।

No comments:

Post a Comment