Tuesday, September 4, 2018

"অন্ধকার থেকে আলোতে" বই রিভিউ - আরিফুল ইসলাম


বই রিভিউ : অন্ধকার থেকে আলোতে

 লেখক : Muhammad Mushfiqur Rahman Minar

(১)
তখন প্রথমবারের মতো ফেসবুকে চালু করা See First অপশনের সাথে পরিচিত হই। অর্থাৎ, কারো পোস্ট/ছবি পছন্দ লাগলে তাকে See First দিয়ে রাখলে নিউজফিডে অন্যদের পোস্টের চেয়ে See First দিয়ে রাখা ব্যক্তিটির পোস্ট আগে আসবে।

ফেসবুকে প্রথম যাকে See First দিয়ে রেখেছিলাম সেটা হলেন এই বইয়ের লেখক মিনার ভাই।
ফেসবুকে ইসলাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি তথ্যবহুল লেখা আমার ফ্রেন্ড লিস্টে মিনার ভাই ই লিখেন, আরো কয়েকজনও আছেন। এই বইটাও তেমনি তথ্যসমৃদ্ধ কিন্ত তথ্যভারাক্রন্ত নয়।

(২)
বইটা পড়ে বুঝলাম যে, লেখক বইটা লিখতে গিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। অর্থাৎ, বইটা একটা গবেষণাধর্মী বই। ১৮১ পৃষ্ঠার এই বইটিতে লেখক মোট ৩১০ টা রেফারেন্স দিয়েছেন। আর রেফারেন্সের সোর্সগুলোও যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য।
ইসলাম নিয়ে তরুণ লেখকদের এরকম গবেষণাধর্মী বই আমি এখনো পড়িনি, সেই হিসেবে লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞ এরকম একটা বই পাঠককে উপহার দেবার জন্য।

(৩)
বইটিতে লেখক ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপন করা প্রশ্নগুলো মূল সোর্স থেকে তুলে এনেছেন। অর্থাৎ, বঙ্গদেশীয় নাস্তিকদের/ইসলামবিরোধীদের আপত্তি গুলোর মূল সূত্র হলো খ্রিষ্টান মিশনারি। তাদের শিখিয়ে দেওয়া প্রশ্নগুলো এদেশীয় নাস্তিকরা করে অনেকটা একচোখা নীতি অবলম্বন করে।
যেমন তারা ধরেই নেয়, বাইবেলে যা বলা আছে তা সত্য আর কুরআনে যা বলা আছে তা ভুল। কুরআনের কোনো তথ্যের সাথে বাইবেলের কোনো তথ্য মিলে গেলে তারা চিৎকার দিয়ে বলে, কুরআন বাইবেল থেকে কপি করা (নাউজুবিল্লাহ)। আবার বাইবেলের কোনো তথ্যের সাথে কুরআনের অমিল থাকলে তখন তারা বলে বাইবেলেরটা সত্য কিন্ত কুরআনেরটা মিথ্যা।

এরকম একচোখা লোকগুলোর প্রশ্নের উত্তরগুলো লেখক বইতে তুলে ধরেছেন কুরআন, বাইবেলের উদাহরণের মাধ্যমে।

বইটা পড়ে বুঝলাম, লেখকের বাইবেল সম্পর্কেও ভালো ধারণা আছে। যার ফলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় কুরআন আর বাইবেলের মতামত কি এবং কোনটা শেষপর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে সেই বিষয়টা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।

(৪)
আমি প্রতি সপ্তাহে দু-তিনটে ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখার চেষ্টা করি। একবার ল্যাপটপে 'সেই পবিত্র শহর' নামে একটা ডকুমেন্টারি ডাউনলোড করে রেখেছিলাম। সময়-সুযোগের অভাবে ভিডিওটা আর দেখা হয়নি।

কয়দিন আগে এক ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই ভিডিওটা দেখেছি কিনা। আমি 'না' বলায় উনি ভিডিওটির কিছু প্রপোগান্ডা আমাকে বলেন। তারমধ্যে একটা ছিলো কা'বা ঘর নিয়ে। তখন আমি এটার উত্তর জানতাম না।

পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের কিছু ভাইয়ের কাছ থেকে উত্তরটা জানতে পারলাম। তাদের উত্তর শুনে আমি মোটামুটি ৮০ ভাগ সন্তষ্ট হলাম, বাকি ২০ ভাগ সন্তষ্ট হলাম এই বইয়ের মাত্র একটা ইনফরমেশন পড়ে।

"সরলরৈখিকভাবে কিবলা থেকে বিচ্যুতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি হতে পারে।"
'সেই পবিত্র শহর' নামক ভিডিওটিতে যেসব প্রপোগান্ডা ব্যবহার করা হয়েছে তা আমার মনে হউ, কম জানা কোনো মানুষ দেখলে বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে। কিন্ত বইটিতে তথ্যবহুল যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে লেখক এই ভিডিওটির এসব প্রপোগান্ডার এমনভাবে উত্তর দিয়েছেন যে, এখন আবার এই ভিডিওটি দেখলে অনেকটা 'Funny Video' -র মতো লাগবে!

(৫)
কুরআনে বর্ণিত হামান নিয়ে কয়েকদিন ধরে জানার চেষ্টা করছি। এই বইটা পড়ে সেই জানার পিপাসা অনেকাংশেই মিটেছে। লেখক এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিষয়টা বুঝিয়েছেন।
বইটিতে নাস্তিকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব না বলে খ্রিষ্টান মিশনারিদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব বলাটা আমার কাছে মনে হচ্ছে যুক্তিপূর্ণ হবে।
বইটি প্রকাশ করেছে সমর্পণ প্রকাশনী।
প্রচ্ছদমূল্য ২৮০ টাকা।

বইমেলায় অন্যরকম প্রকাশনীর স্টলে (স্টল নাম্বার ৪৫৭) বইটি পাওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment