Sunday, September 2, 2018

"সম্পাদনা" - আরিফ আজাদ


ভীষণ ব্যস্ততম সময় পার করছি। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে দেখা করা, খোঁজ-খবর নেওয়া, পারস্পরিক মতবিনিময়- সবকিছুই কেমন যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। সময়টাকে গুছিয়ে নিতে আর বুঝে নিতে বড্ড হিমশিম খাচ্ছি।

ব্যক্তিগতজীবনের হাহাকার জানানোর জন্যে এই লেখার অবতারণা করিনি। এই লেখাটা লিখছি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রসঙ্গে। প্রসঙ্গের প্রাসঙ্গিকতার রেশ বোঝাতেই নিজের জীবন থেকে এক টুকরো কাহিনী ফেঁদে বসার লোভ সামলাতে পারলাম না।

গত বেশ কয়েকমাস থেকে বেশ কয়েকজন প্রকাশক আমাকে নক করেছেন। ফোন দিয়েছেন। তাদের আন্তরিকতা, সম্মানবোধ এবং সারল্যতা আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। আমি একজন পেশাদার লেখক না হওয়া সত্ত্বেও তারা আমার ব্যাপারে যেরকম 'লেখকসুলভ' মনোভাব দেখিয়েছেন, আমি তাদের কাছে কৃতার্ত এবং কৃতজ্ঞ।

দু'জন প্রকাশক আমাকে অনুরোধ করেছেন যেন আমি তাঁদের দু'টো বই সম্পাদনা করে দিই। সম্পাদনা বলতে ভাষার দূর্বোধ্যতা দূর করে ভাষাকে সহজ এবং সাবলীল করে তোলা। কোন রচনাকে পাঠকের পাঠোপোযোগী করে তোলাই সম্পাদকের প্রধাণতম কাজ। আমার অদক্ষ হাত এবং অপরিণত অভিজ্ঞতাকে তারা এ ব্যাপারে ভরসা করেছেন- এতেই আমি ভীষণ আনন্দিত এবং আপ্লুত। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখের সাথে তাদেরকে আমার 'না' বলতে হয়েছে। সময় সংকুলতার কারণে আমি তাদের অনুরোধ গ্রহণে অপারগতা জানাতে বাধ্য হই।

তাদের একজন বললেন, 'তাহলে আমাদের একজন সম্পাদক জোগাড় করে দিন যিনি আমাদের আসন্ন বইগুলো সম্পাদনা করে দিতে পারবেন'।

পরবর্তী সংলাপে যাওয়ার আগে আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে 'সম্পাদনা' সম্পর্কে আরেকটু আলোকপাত করতে চাই, যেহেতু ইতোমধ্যে কয়েকটা বই সম্পাদনা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমি মনে করি, একটা বই লেখা যতোটা সময়সাপেক্ষ, এর পেছনে যতোটা সময়, শ্রম এবং ধৈর্য্য দরকার, একটা বই সম্পাদনা করতেও ঠিক সেরকম সময় এবং শ্রম দিতে হয়। প্রতিটা লাইন ধরে ধরে পড়তে হয়, বুঝতে হয়। নিজেকে সম্পাদকের আসন থেকে নামিয়ে একজন সাধারণ পাঠকের আসনে বসিয়ে দেখতে হয় পুরো ব্যাপারটা। কোন বাক্যে সাধারণ পাঠক অভ্যস্ত , কোন শব্দচয়ন পাঠক সহজে অনুধাবন করতে পারবে ইত্যাদি বিষয় একজন সম্পাদকে মাথায় রাখতে হয়। শুধু কি তাই? বিশাল বিশাল বাক্যকে ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তুলতেও একজন সম্পাদকের মুন্সিয়ানা থাকা চাই....
প্রথমবার সম্পাদনা শেষে দ্বিতীয়বার, দ্বিতীয়বার সম্পাদনা শেষে তৃতীয়বার... এমনকি, যদি দরকার হয় চতুর্থ, পঞ্চমবারও সম্পাদনা করা লাগে। প্রত্যেকবারই নতুন নতুন জিনিস সামনে আসে। নতুন নতুন জিনিস নতুন করে সাজানো লাগে। সেটা হতে পারে বাক্য, সংলাপ, শব্দ কিংবা যতিচিহ্ন। কোনোটাই বাদ দেওয়া যাবেনা। কারণ, একজন পাঠকের হাতে যখন আমরা বই তুলে দিই, তখন সেটা কেবল বই নয়, তার পেছনে থাকে আমাদের স্বপ্ন আর ভালোবাসা। আর পাঠক যখন সেই বই কিনে নেয়, তখন তার পেছনে থাকে পাঠকের আশা, আকাঙ্ক্ষা এবং দাবি। সেই আশা, আকাঙ্ক্ষা এবং দাবিতে যদি আমরা ঘাটতি রেখে দিই, যদি আমাদের কোন অসাবধানতা এবং অমনোযোগিতা তাদের মন খারাপের কারণ কিংবা দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা নিশ্চিতরূপে আমাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষম।
আমি আরো মনে করি, একজন সম্পাদককে একাধারে প্রচুর পড়তে হয় এবং প্রচুর লিখতে হয়। তার শব্দভান্ডার এবং তথ্যভান্ডার হতে হয় সমৃদ্ধ।

একজন সম্পাদক হয়তো পেশাদার লেখক নন, কিন্তু তিনি একজন লেখকের চেয়ে কোন অংশে কম নন। একজন সম্পাদক একজন লেখক হতে পারেন, কিন্তু সব লেখক সম্পাদক হতে পারে না।
সে যাহোক, ওই প্রকাশককে আমি একজন সম্পাদক জোগাড় করে দেবো বলে আশ্বস্ত করলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি যাদের লেখা পছন্দ করি, তাদের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু তারাও আমার মতো ব্যস্ত। একটি প্রকাশনীর 'সম্পাদক' পদে কাজ করার মতো সময় তাদের হাতেও নেই।

এরপর, আমি আরো বেশকিছু লোকের লেখায় চোখ বুলিয়ে দেখলাম। তাদের লেখা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু, সম্পাদনা কাজের জন্য তাদেরকে আরেকটু কাঠখড় পুঁড়াতে হবে। আরেকটু যত্নশীল, আরেকটু পরিচ্ছন্ন হতে হবে বলে আমার মনে হয়েছে।
দুঃখের ব্যাপার এই যে, ওই প্রকাশকদের আমি এখন পর্যন্ত কোন সম্পাদক জোগাড় করে দিতে পারিনি। এটা কি আমার অযোগ্যতা, নাকি আসলেই বাংলা ইসলামি সাহিত্যাঙ্গনে একটা আকাল, সেটা বুঝে উঠতে পারছিনা।

আমরা অনেকেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবি। আমার মনে হয়, আমরা যারা টুকটাক লিখি, এবং দ্বীন-ধর্ম নিয়ে জানতে, পড়তে এবং জানাতে চাই, এই ক্ষেত্রটাতে কিছু অবদান রাখতে চাই, আমরা চাইলেই এই জগতে ক্যারিয়ার করতে পারি। নিজের পড়ার এবং জানার পরিধিটা বাড়ালে, এবং সেই সাথে সেগুলোকে কাজে রূপ দিতে পারলেই অনেকদূর যাওয়া সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।

আমাদের ইসলামি সাহিত্য জগতে বিপ্লব ঘটাতে অনেক অনেক লেখক দরকার। অনেক সম্পাদক এবং অনুবাদক দরকার। যে অনুপাতে দরকার সেই অনুপাতে কিন্তু আমাদের লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক নেই। হয়তো এমন অনেকে আছেন, যারা খুব ভালো লিখেন, ভালো অনুবাদ করেন, ভালো সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন- কিন্তু আমরা তাদের চিনিনা। তারা হয়তো আমাদের দৃষ্টির আড়ালে। তাদেরকে যদি তুলে আনা যেতো, কি এক দূর্দান্ত কাজটাই না হতো!

গত দু'মাসে পাঁচজন দ্বীনি ভাই-বোনকে 'অনুবাদ' কাজের জন্য কিছু প্রকাশনীতে রেফার করেছি। তারা খুব ভালোমতো কাজও করছে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। এই যে তাদের একটা হালাল রিযিকের পেছনে 'মাধ্যম' হতে পেরেছি, এটাও আমার জন্য বিরাট সৌভাগ্যের, আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমাদের এই অঙ্গনে যে ঘাটতি, যে সমস্যা, সেই ঘাটতি পূরণে এবং সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের সকলের এগিয়ে আসা কর্তব্য বলে মনে করি।
যদি আপনি নিজেকে একজন ভালো সম্পাদক মনে করেন, একজন প্রতিশ্রুতিবাণ অনুবাদক মনে করেন, এবং একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক মনে করেন, অথবা একজন ভালো আঁকিয়ে বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার যিনি রুচিসম্মত বইয়ের প্রচ্ছদ করতে পারেন, তাহলে আপনি আমাকে বা আমাদের এই গ্রুপে সে ব্যাপারে জানাতে পারেন। ইন শা আল্লাহ, আমরা চেষ্টা করবো আপনার মেধাটাকে ছড়িয়ে দিতে। দ্বীনের জন্য আপনার প্রয়াসটাকে আরো প্রসারিত করতে, আপনার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দান করতে এবং পাশাপাশি আপনার একটি হালাল রুজির সংস্থান করতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ।
যেকোনো প্রয়োজন এবং জিজ্ঞাসার জন্য আমাকে মেইল করতে পারেন। ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের চেয়ে আমি মেইলেই বেশি রেসপন্সিভ।

আমার ইমেইলঃ arifazad.bd@outlook.com

আল্লাহ যেন আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে, আমাদের তাঁর রহমতের চাদরে আবৃত করে নেন। আ-মী-ন।

আরিফ আজাদ
২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮

No comments:

Post a Comment