Friday, February 28, 2020

আন্দালুস হারানোর ৫২৭ বছর #আন্দালুস_সপ্তাহ, ২০১৯ (৩য় অংশ)




খেলাফাত
তুমি হারিয়ে গেছ
তোমার ত্রিশ বছর বয়সে
বহুধারীয় তন্ত্রের ভীড়ে
তুমি আজ মৃত
তুমি জাননা খিলাফাত
তুমি ছিলেনা বলে
কত যুলুম অত্যাচার
ক্রন্দন রোনাজারি ও রক্তপাতের
দরিয়া দেখেছে আসমান ও সৌরজগত
তুমি জাননা তোমার অভাবে
কত মাশুল গুণেছে এই পৃথিবী
কত আহাজারি অনুশোচনায় দ্যুলোক ও ভূলোক
অতীত বিবরণে তোমাকে আর
ব্যথিত করতে চাইনা হে খিলাফাত
তুমি জেনে রাখ
জঠর জ্বালা ভুলে
তোমাকে পুনর্জন্ম দিতেই
আমাদের আগমন
তুমি জাননা খিলাফাত
আমাদের মাঝে কে আছে
এবং অচিরেই তুমি জানতে পারবে
তোমাকে জন্ম দিতে কারা এগিয়ে আসছে
তোমাকে ওয়াদা করছি হে খিলাফাত
আগামীতে আর কোন
দেশ বিদেশের নয়
নয় কোন জন্মদিন
কোন রাষ্ট্র ও সমাজের
নয় কোন জন্মদিন
আর কোন সীমানা ও সংবিধানের
আগামীতে কেবল এবং একমাত্র
তোমার জন্মদিনই পালন করবে আ-বিশ্ব

(( অপরিমার্জিত ও সংক্ষিপ্ত ))
২৫/১২/২০১৮
#মুহাম্মাদ_মুজাহিদুল_ইসলাম_কবিতায়












ইতিহাসের শিক্ষা:২২
সালাহুদ্দীনের ইহুদি চিকিৎসক
আতিক উল্লাহ

এক: এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকায় (১৯৮৪) বিজ্ঞানের ইতিহাস (হিস্ট্রি অব সায়েন্স) প্রবন্ধে লেখা হয়েছে:
--- যখন ইসলামী সভ্যতা যখন উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছিল, ইউরোপ তখন ছিল অজ্ঞাতনতার নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত। সপ্তম শতাব্দী থেকে ইসলামের বিজয় পতাকা চারদিকে উড়তে শুরু করেছে, দশম শতাব্দী আসতে আসতে অবস্থা এমন দাঁড়াল, ইরান থেকে নিয়ে স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃীর্ণ ভূখন্ড আরবী ভাষার অধীনে চলে এল।
*** ইসলাম যেখানেই গিয়েছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ব্যাপক পাঠচর্চার বিকাশ ঘটিয়েছে। কর্ডোভার পাঠাগারেই তখন কিতাবের সংখ্যা ছিলা প্রায় পাঁচ লাখ। অথচ পুরো ইউরোপ ঢুঁড়েও পাঁচ হাজার কিতাব পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ।
*** মুসলমারা শুধু নিজেরাই এগিয়ে যায় নি, অমুসলিমদেরকেও আগে বাড়ার সুযোগ দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছে ইহুদিরা। মধ্যযুগে ইউরোপে যখন ইহুদিদের বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে পড়েছিল, সে সময় তারা স্পেনে ছিল রাজার হালে।
দুই:
-মূসা বিন মায়মুন (১১৩৫-১২০৪)। তিনি ছিলেন একজন ইহুদি বিজ্ঞানী। তিরি ক্যালডীয় ভাষা, গ্রীক ভাষা, হিব্রু ভাষা, আরবী ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন।
ইহুদিদের কাছে তার এতটাই মর্যাদা ছিল যে, তারা তার ব্যাপারে বলতো:
-মুসার (আ.) পরে মুসার (বিন মায়মুন) মতো আর কোনও মূসা জন্ম নেয় নি।
*** মুসা বিন মায়মুন কর্ডোভায় জন্ম গ্রহণ করেন। সেখানেই লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠা। পরিণত বয়েসে তিনি মিসরে চলে আসেন। তখন মিসরের শাসক ছিলেন গাজী সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ.)। সুলতান চিকিৎসা শাস্ত্রে তার ব্যুৎপত্তি দেখে, তাকে খাস চিকিৎসক হিশেবে নিয়োগ দেন।
*** মুসা বিন মায়মুন ইহুদিদের কাছে আরো একটা কারণে আদরণীয়। বর্তমানে ইসরাঈলের রাষ্ট্র ভাষা হলো হিব্রু। তিনি কর্ডোভায় থাকাকালে, এই হিব্রু ভাষাকে সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করেন। এবং আরবী ব্যাকরণের আদলে হিব্রু ভাষারও ব্যকরণ রচনা করেন।
*** হিব্রু ভাষা ও আরবী ভাষা অনেক দিক দিয়েই এক। অবশ্য সমস্ত সেমেটিক ভাষাগুলোর মাঝেই ব্যাপক সাদৃশ্য আছে। বিশ্বের অন্য ভাষাগুলোর চেয়ে সেমেটিক ভাষাগুলোর আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো ডান দিক থেকে শুরু হয়।
*** সে সালাহুদ্দীনকে ইহুদিরা আজ ঘৃণা করে, যার পৃষ্ঠপোষকতাতেই তারা একদিন বেড়ে উঠেছিল, তাদের ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছিল। অথচ তারা এখন সব ভুলে গেছে।
*** মুসলমানরাই ইহুদি-খ্রিস্টানদেরকে টেনে আলোর পথ দেখিয়েছে, তারাই আজ মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে তার প্রতিদান দিচ্ছে।
** মুসলিম শাসকরা অমুসলিম প্রতিভাগুলো যথাযথ কদর করতে কখনোই পিছপা হননি। বলা ভাল, মুসলিম শাসকদের উদারতার কারণেই আজ বিশ্বে অন্য ধর্মমত টিকে আছে। না হলে পরিস্থিতি ভিন্নতর হওয়ারও সুযোগ-সম্ভাবনা ছিল।











কেন হৃত মুসলিম দেশগুলো আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারছি না।
কারণ, আমরা উদাসিন। আমরা শয়তানের ক্রিড়নক। আমরা অনুভূতি শক্তিহীন। আত্মমর্যাদাবোধ আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আমরা ভুলে বসেছি আমাদের সোনালি অতীত।
এই পয়লা জানুয়ারি গোটা পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান অনেক ধুমধাম করে থার্টিফাস্টনাইট উদযাপন করল।
অথচ!
অথচ খৃস্টান স্পেন ঠিকই মুসলমানদের কর্তৃত্ব থেকে আন্দালুসকে ছিনিয়ে নেয়ার ঈদ উদযাপন করবে আজ।
হাঁ প্রতি বছর ২জানুয়ারী তারা এই অনুষ্ঠান উদযাপন করে। অনেক ঘটা করে পালন করে।
এই অনুষ্ঠানে খৃস্টান স্পেনের জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয়- একজন আবু আব্দুল্লাহ অসহায় হয়ে খৃস্টান রাজার হাতে গ্রানাডার চাবি হস্তান্তর করছে এরপর চিরবিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছে নিরুদ্দেশের পথে।
আফসোস! ওরা ওদের গৌরবের ইতিহাস উদযাপন করে,
আর আমরা আমাদের অতীত ভুলে গিয়ে বিধর্মীদের উৎসব উদযাপন করি!!
খোদার কসম! যতদিন না আমরা জাগ্রত হবো, আমাদের অতীত ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ না হবো ততদিন আমরা কিছুই করতে পারব না। - আব্দুল্লাহ তালহা







আজকের তামান্না:
আল হামরা চত্বরে উচ্চকণ্ঠে একবার আযান দিয়ে সালাত আদায় করা।






এক চুমুকে ইতিহাস: ২৫২
আতিক উল্লাহ্‌

মুসলমানদেরকে সিরিয়া থেকে নির্মূল করার জন্যে ‘ক্রশেড জোট’ গঠিত হয়েছে। ঠিক এমন এক ঘটনা কয়েকশ বছর আগেও ঘটেছিল। ১৫৭৮ সালে। মরক্কো থেকে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে মিটিয়ে দেয়ার জন্যে, পোপের উস্কানিতে খ্রিস্ট জোট করেছিল: পুর্তগাল-জার্মানি ও স্পেন।
.
বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে খ্রিস্টানরা এগিয়ে এলো। তখন মরক্কোর সুলতান ছিলেন আবদুল মালেক (১৫৭৬-১৫৭৮)। তাকে সাহায্য করার জন্যে এগিয়ে গিয়েছিল উসমানি খিলাফাহ। যুদ্ধটার নাম ছিল ওয়াদি মাখাযির যুদ্ধ বা তিন রাজার যুদ্ধ। খ্রিস্টান পক্ষে ছিল আশি হাজার সেনা। খ্রিস্টপক্ষ সম্পূণরূপে পরাজিত হয়েছিল। খ্রিস্টানদের তিন সেনাপতিই নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল।
.
এখানেই শেষ নয়, এই যুদ্ধে খ্রিস্টানদের পক্ষ হয়ে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে একজন মুসলিম রাজাও অংশ নিয়েছিল: মুহাম্মাদ মুতাওয়াক্কিল (১৫৭৪-১৫৭৬)। এই রাজাও পানিতে ডুবে মরেছিল। পালাতে গিয়ে।
.
আরও মজার ব্যাপার হলো, যুদ্ধটা হয়েছিল আগস্টের ৪ তারিখে। এই দিনকে মরক্কোর ইহুদিরা আজো, ঈদের দিনের মতো আনন্দের দিন হিশেবে পালন করে। কারন? মরক্কোর ইহুদিরা এসেছিল স্পেন থেকে পালিয়ে। পুর্তগালের সম্রাট ঘোষণা দিয়েছিল: এই যুদ্ধে জয়লাভ করার পর, মরক্কোর ইহুদিদেরকে ধরে ধরে, একটা একটা করে ছুরি দিয়ে যবেহ করবে, যদি তারা খ্রিস্টান হতে না চায়। ইহুদিরা এই যুদ্ধে মুসলমানদের জয়কে সরাসরি ‘জিহোভা’-এর দান বলে মনে করেছিল।
.
আজও খ্রিস্ট জোটের বিরুদ্ধে লড়ছে খিলাফাহ ও কিছু মুসলিম দল। খ্রিস্টানদের সাথে এবারও ‘ইসলামী জোট’ আছে। ফলাফল কী হবে আল্লাহই বলে দিবেন।




ইসলামি সভ্যতা ও ইতিহাস: ৭
আতিক উল্লাহ

সউদী বাদশাহ সউদ বিন আব্দুল আজীজ দুইবার, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্পেন সফর করেন। ১৯৫৭ সালে আবার ১৯৬২ সালে। তখন স্পেনের ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকো। বাদশাহর সফরকালে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। সফরসঙ্গী এক ডাক্তার বলেন, সফরের এক পর্যায়ে বাদশাহ জামে‘ কুরতুবা যিয়ারত করতে গেলেন। স্পেনে মুসলমানদের চরম বিপর্যয়ের পরপরই এই মসজিদটিকে গীর্জায় রুপান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানেও গীর্জা ও দর্শনীয় স্থান হিসেবেই আছে। বাদশাহ মসজিদ যিয়ারতের এক পর্যায়ে হঠাত পরিধেয় স্বর্ণখচিত আলখাল্লা মেঝেতে বিছিয়ে জোর আওয়াজে নামাজ শুরু করে দেন। সঙ্গে থাকা যাজকরা হতভম্ভ হয়ে গেল। তারা বুঝে উঠতে পারছিল না করবে। মসজিদ যিয়ারত শেষে বাদশাহ সউদ, ফ্রাংকোকে মসজিদটি ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। হাদিয়া হিসেবে বলেন তিনি দশ মিলিয়ন ডলার দেবেন। পুরো মসজিদ দিতে হবে না, সপ্তাহে তিনদিন মুসলমানদেরকে নামাজ পড়তে দিলেই হবে। পাশাপাশি আরেকটা প্রস্তাবও তিনি ফ্রাংকোকে দেন, মাসজিদকে আপন অবস্থায় রেখে গীর্জাকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলেন। পুরো নির্মাণব্যয় নির্বাহ করারও দৃঢ় প্রতিশ্র“তি দেন। মরহুম বাদশাহর প্রস্তাবকৃত হাদিয়ার অংকটা ছিল অবিশ্বাস্য। স্পেনে তখন চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। ফ্রাংকোর কাছে প্রস্তাবটা ছিল অত্যন্ত লোভনীয়। কিন্তু বাদ সাধল পাদরিরা। ১৯৬৬ সালের ঘটনা হলেও এতদিন বিষয়টা গোপনই ছিল। ২০১১ সালে উক্ত গীর্জার (জামে‘ কুরতুবা) প্রধান পাদরী মৃত্যুর পূর্বে, তার দিনলিপি প্রকাশ করলে সেখানে এই তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে জানা যায়, আর্চ বিশপ হোসে মারিয়াই গীর্জা স্থানান্তরে বাদ সাধার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।
ফ্রাংকো এই বিষয়টা তদারক করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার রাফায়েল ডি লাহুজকে। রাফায়েল বলেন, আমার ও ফ্রাংকোর স্বপ্ন ছিল মাসজিদকে যথাস্থানে রেখে গীর্জাকে স্থানান্তরের। এই প্রসঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, মাসজিদটা (গীর্জা) স্পেন সরকার বা জেনারেল ফ্রাংকোর আওতাধীন ছিল না। এই মসজিদের (গীর্জার) মূল মালিক হচ্ছেন ভ্যাটিকানের পোপ বা ভ্যাটিকান চার্চ। ও আল্লাহ! আমাদের মসজিদ কার মালিকানায় সেটা জানিও না বুঝিও না, আপনি আমাদেরকে মসজিদ ফিরিয়ে দিন। আমীন



ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস:২৬
আতিক উল্লাহ্‌

আন্দালুসের কর্ডোভা। তখন খলীফা আবদুর রহমান নাসির (রহ.) এর খিলাফতকাল চলছে। তিনি ছিলেন বিদ্যানুরাগী। পাঠমনস্ক।
কর্ডোভার কুতুবখানায় তখন সংগৃহীত কিতাবের সংখ্যা ছিল তখন প্রায় ছয় লাখ।
.
কর্ডোভাতে কিতাবের অনুলিপি করা ও অনুবাদ করা একটা সম্মানজনক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
.
কিতাবপত্র, পড়াশোনার এত ছড়াছড়ির কারণে কর্ডোভার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘জাওহারাতুল আলাম’বিশ্বের মণি।
.
ইউরোপ তখন ডুবে ছিল অজ্ঞতার চরম অন্ধকারে।
.
খলীফা নাসির (রহ.) দেশকে পুরোপুরি নিরক্ষরতামুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুরোপুরি নির্মূল করে ফেলেছিলেন অজ্ঞতাকে। অজ্ঞানতাকে।
.
এক হাজার বছর যাবত আন্দালুসে নিরক্ষরতার হার ০%। স্বাক্ষরতার হার ছিল ১০০%।
.
আর আমরা এখন কী করছি? ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় পর্যন্ত শিক্ষার হার ১০০%। তাদের দেশে সব ধরনের শিক্ষাই বেতনমুক্ত। শিক্ষার সব ব্যয়ভার বহন করে সরকার।






গল্পসল্প- স্বল্পগল্প:৪৫৪
চামচরীতি
আতিক উল্লাহ

মালিক বিন নবি। একজন কুরআন গবেষক। কুরআন কারীম নিয়ে তার বিখ্যাত কিছু রচনা আছে। তার স্মৃতিচারন:
-১৯৩০ সালের কিছু পরের কথা। আমি শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আমি ফ্রান্সে উচ্চডিগ্রি নিতে গিয়েছি। আমাদের আলজেরিয়া থেকে তখন অনেকেই ফ্রান্সে যেত। দেশতো তখন এক ছিল। বেশি ঝামেলা পোহাতে হতো না।
আমি সাধারণত রান্না করেই খেতাম। একদিন ভার্সিটিতে কাজের চাপ পড়ে গেল। বাধ্য হয়ে একটা ক্যাফেতে খাওয়া সারতে গেলাম। পুরো ক্যাফেটোরিয়া ছাত্রছাত্রীতে গিজগিজ করছে। কোথাও বসার জায়গা না পেয়ে, কী করা যায় ভাবছি।
দূরে এককোনে দেখলাম এক টেবিলে একটা আসন খালি আছে। আরেক পাশে দুইটা মেয়ে খাবার খাচ্ছে। বেশভূষা দেখে মনে হলো, তারা আমার ভার্সিটিরই ছাত্রী। কিন্তু তাদের খাওয়ার ধরন দেখে মনে হলো, তারা অভিজাত কোনও পরিবার থেকে এসেছে।
আমি অনুমতি নিয়ে বসে পড়লাম। খাবারের অর্ডার করে চুপচাপ অপেক্ষা করছি। খাবার এল। আমি আমাদের আলজেরিয়ার রীতি অনুযায়ী, হাতা গুটিয়ে হাত দিয়েই খেতে শুরু করলাম। লক্ষ্য করলাম মেয়ে দু’টো আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, আমার হাত দিয়ে খাওয়াটা তারা মেনে নিতে পারছে না। একজন ফস প্রশ্ন করে ফেললো:
-তুমি সবার মতো চামচ ব্যবহার করছো না কেন? হাত দিয়ে খেতে তোমার ঘেন্না লাগছে না?
আমি মুখের খাবারটুকু গিলে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম:
-চামচ বানানো হয়েছে যাদের হাত ময়লা তাদের জন্যে। আমি আমার হাত সব সময় পরিষ্কার রাখি। দিনে কমপক্ষে পাঁচবার ধুই।
তোমাদেরকে একটা প্রশ্ন করি:
-চামচ দিয়ে খাবার খাওয়ার প্রচলন কে করেছে সেটা জান?
-জ্বি না। আমরা তো ছোটবেলা থেকেই চামচ দিয়ে খেয়ে আসছি।
-তাহলে শোন! চামচ দিয়ে খাওয়ার প্রচলন কিন্তু একজন মুসলিমের করা।
-এটা তো অবিশ্বাস্য! কে তিনি?
-তিনি হলেন আমার মতোই একজন কালো মানুষ। মুসলিম বিজ্ঞানী-সংগীতজ্ঞ-ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ‘যিরয়াব’তিনিই বাগদাদ থেকে স্পেনে এসে, খলীফা আব্দুর রাহমান (২য়)-এর দরবারে এ রীতির উদ্ভব ঘটান।
সভ্যতার বিকাশে মুসলিমদের অবদানঃ প্রেক্ষিত ফ্যাশন

জাইরাব ছিলেন নবম শতাব্দীর একজন মুসলিম ফ্যাশন আইকন। তিনি বাগদাদ থেকে কর্ডোভায় আসেন। লেখক জেসন ওয়েবস্টার (Jason Webster) তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন - “ তিনি তার সাথে করে সব ফ্যাশন নিয়ে আসেন। বাগদাদ ছিল সে সময়ের প্যারিস এবং নিউইয়র্ক এবং............ সে সময় আধুনিক ধ্যান ধারণার প্রবাহ ছিল বাগদাদ থেকে কর্ডোভার দিকে। তিনি তার সাথে করে (বাগদাদ থেকে) আনলেন টুথপেস্ট, ডিওড্রেন্ট, এবং ছোট চুল।......এটাই হল বাস্তবতা; কর্ডোভায় স্থাপিত হল রাস্তার বাতি, আবর্জনা-পরিশোধন কেন্দ্র, বহমান জলাধার”
ইরাকের বাগদাদ ছিল সে সময়ের সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্র। জাইরাব সেখান থেকে তৈজসপত্র (tableware) এবং সেলাই করা কাপড়ের ফ্যাশন নিয়ে আসলেন। এমনকি কর্ডোভায় দাবা এবং পোলোর মত খেলার প্রচলনও তারই হাত দিয়ে হয় । এছাড়াও তিনি বাগদাদ থেকে নিয়ে আসেন চামড়ার তৈরি বিভিন্ন আসবাব পত্র।
তার সূক্ষ্ম ফ্যাশনশৈলী দিয়ে তিনি সে সময়ের খলিফার রাজ দরবার ডিজাইন এবং নির্মাণ করেন। কর্ডোভার সাধারণ লোকেদের কাছে তার ছোট চুলের ফ্যাশন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ফ্রেঞ্চ ঐতিহাসিক হেনরি ট্যারেস (Henry Terrace) জাইরাবের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন যে, তিনি কর্ডোভায় গরম এবং শীতকালের জন্য আলাদা পোশাকের প্রবর্তন করেন। সেই সাথে কোন পোষাক কবে থেকে ব্যবহার করা সবচেয়ে উপযোগী তিনি সে ব্যপারে দিন তারিখ নির্ধারণ করেন। এ ছাড়াও তিনি এই দুই ঋতুর পরিবর্তনের মধ্যবর্তী সময়ের জন্যেও বিশেষ পোষাক ডিজাইন করেন। তার মাধ্যমে স্পেন এ প্রাচ্যের বিলাসবহুল পোষকের আগমন ঘটে। তার হাত ধরেই গড়ে উঠে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি যেখানে সে সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং চমকপ্রদ পোশাক তৈরি হত। জাইরাবের অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার নামে তৈরি হয় সড়ক, হোটেল এবং ক্যাফে।
এরপর ধীরে ধীরে আন্দালুসিয়ার মুসলিমরা বিভিন্ন ঋতুর জন্য আরামদায়ক লাইফস্টাইল গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। তারা বছরের বিভিন্ন সময়ের জন্য উপযোগী খাবার ও পোশাকের ঐতিহ্য গড়ে তুলে। তারা শীতকালে ব্যবহারের জন্য গাঢ় রঙের উলের তৈরি পোশাক এবং গরম কালে ব্যবহারের জন্য সুতা ও সিল্কের তৈরি হালকা কাপড়ের পোশাকের প্রচলন করে।
আন্দালুসিয়ার মুসলিমরা রোমানদের কাছ থেকে ওক গাছের সোল নির্মিত জুতা তৈরির কৌশল রপ্ত করেছিল। তারা রোমানদের কাছ থেকে লব্ধ জ্ঞানকে ভিত্তি করে গবেষণা করতে থাকে এবং এ জুতার শৈল্পিক মানের বিকাশ ঘটায়। এক সময় এ জুতা তারা বিদেশেও রপ্তানি করতে থাকে।
আল সাকাতি এবং ইবন আদুনের মত মুসলিম লেখকদের বিবরণীতে ওক কর্ক-সোল জুতা নির্মাণের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। হালের ব্যবহৃত জনপ্রিয় হাই-হিল জুতা তৈরির কলা কৌশলও উক্ত লেখকদ্বয়ের লেখায় পাওয়া যায়।
তাই এরপর যখন আপনি কোন সিজনাল কাপড়, বিশেষ হেয়ার কাট কিংবা ফ্যাশনেবল জুতা কিনতে যাবেন সে সময় জাইরাবের ক্রিয়েটিভ মুসলিমদের কথা চিন্তা করে গর্বিত হতেই পারেন !
(সংগৃহিত)














এক চুমুকে ইতিহাস: ১২৮
আতিক উল্লাহ


আমাদের কর্ডোভা:
স্বর্ণযুগে আমাদের কর্ডোভার জনসংখ্যা ছিল এক মিলিয়ন (দশলাখ)।
বড় বড় প্রাসাদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। তারমধ্যে দশটাই ছিল রাজকীয়।
এগার লক্ষ ত্রিশ হাজার ঘর।
সাতশ মসজিদ।
নয়শ গণগোসলখানা।
তেতাল্লিশ হাজার ছোট হাট।
পাঁচ হাজার বাজার মাড়াইযন্ত্র।
তাদের কর্ডোভা:
ছোট্ট আটপৌরে একটা শহর। জনসংখ্যা লাখখানেক। আগের তুলনায় অনুন্নত।









এক চুমুকে ইতিহাস: ২৭৭
যাহরা প্রাসাদ! কর্ডোভা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আন্দালুসের অষ্টম উমাইয়া খলীফা আবদুর রহমান নাসির রহ. (৮৯১-৯৬১) এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাসাদটা ছিল হুবহু দামেশকের রাজপ্রাসাদের আদলে তৈরী। এমনকি গাছপালাও দামেশক থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাপ-দাদার স্মৃতি ভুলতে পারেননি তারা। আব্বাসীদের ভয়ে সমুদ্র পার হতে না পারলেও, সেখানে আরেকটা দিমাশক গড়েপিটে নিতে চেয়েছিলেন হয়তো বা!
ছবির ইয়াসমীন ফুলগুলোও খলীফা নাসিরের আমলে লাগানো। আজো সেই স্মৃতি বহন করছে! ফুল আছে কিন্তু বাগানের মালিরা আজ অনুপস্থিত! –আতিক উল্লাহ



এক চুমুকে ইতিহাস: ২৭১
হিজরী ৮৬ সাল। উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান মৃতুশয্যায় শায়িত। চারপাশে আত্মীয়-স্বজন ঘিরে আছে। তার খিলাফতকালে ইসলামী রাষ্ট্র বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। চারদিকে আরবদের জয়জয়কার। পুরো বিশ্বের চারদিকে মুসলিম সেনাপতিরা ছড়িয়ে পড়েছিল।
পাশে ছিল বড়ছেলে ওলীদ বিন আবদুল মালিক। তার কান্নভেজা চেহারা দেখে, বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন:
-তুমি কাঁদছ? তোমার মতো মানুষের পক্ষে কাঁন্না শোভা পায় না। তুমি হবে শক্ত-সমর্থ পুরুষ! অনঢ়-অবিচল! তুমি আমার সাথে ওয়াদা করো, আমার শুরু করা বিজয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
-আমি ওয়াদা করলাম! ইয়া আমীরাল মুমিনীন!
-
বাবার সাথে করা ওয়াদা ওলীদ বিন আবদুল মালিক ঠিকই পূরণ করেছিলেন। তার আমলই ছিল মুসলিম বিজয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়গুলোর একটি। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পূর্বে চীনে আর পশ্চিমে আন্দালুসে গিয়ে ঠেকেছিল।
তার আমলে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ. সিন্ধু জয় করেছিলেন।
কুতাইবা বিন মুসলিম প্রায় পুরো মধ্য এশিয়া জয় করেছিলেন।
মুসা বিন নুসাইর ও তারেক বিন যিয়াদ পশ্চিম আফ্রিকা ও স্পেন জয় করেছিলেন।
-আতিক উল্লাহ







অতীত জানি, পাথেয় আনি (ইসলামের ইতিহাস):
ইতিহাসে এই দিন: ১৩ সেপ্টেম্বর
--
১: স্পেন ও পুর্তগালের রাজা ফিলিপ (২য়) মারা যায় (১৫৯৮)। তার পুরো জীবনটা কেটেছিল খ্রিস্টরাজ্য প্রতিষ্ঠায় ও মুসলিম নিধনে। তার পিতা ছিল স¤্রাট শার্লাকান। পঞ্চম ফার্নান্দো ও প্রথম ইসাবেলার নাতি। স্পেনে তার শাসনকাল ছিল ১৫৫৬-১৫৯৮। পুর্তগালে তার শাসনকাল ছিল ১৫৮০-১৫৯৮।
.
তার আমলে, মুসলিম নিধন চরম আকার ধারণ করে। রাজা ফিলিপ মুসলিম দমনে অসংখ্য ডিক্রি জারী করে:
এক: মুসলিমরা কোনও অস্ত্র বহন করতে পারবে না।
দুই: মরিস্ক (স্পেনিশ মুসলিম) আরবী ভাষায় কথা বলতে পারবে না।
তিন: মরিস্করা আরবীয় পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যাবহার করতে পারবে না।
চার: হাম্মাম ব্যবহার ও গোসল করতে পারবে না। সমস্ত হাম্মাম (গোসলখানাগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল)।
পাঁচ: মুসলিম রীতিতে আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না।
ছয়: মুসলিম নারীরা হিজাব ব্যবহার করতে পারবে না।
সাত: দাড়িতে খেজাব-মেহেদি লাগানো যাবে না।
আট: আরবী নাম ও পদবি ব্যবহার করা যাবে না।
এছাড়াও:
নয়: ফিলিপ মরিস্কদের দ্বারা সংগঠিত ‘বাশারাত বিপ্লবকে অমানুষিক নির্মমতায় দমন করে।
-আতিক উল্লাহ





দিনলিপি-৮৯
(১১-০১-২০১৫)
প্রপাগান্ডা!
-
*** আমরা যারা সাধারণ পর্যায়ের চিন্তক, গড়পড়তা মানুষ, তারা পরিণত বয়েসের একজন ভাল মানুষ দেখলে, অনেক সময় মনে মনে ভাবি, এই লোকটা নিশ্চয়ই যৌবনে অনেক কিছুই করেছে। না হলে এত ভাল হওয়ার তো কথা নয়।
*** এটা কোনও সুস্থ্য চিন্তা নয় যে, ভাল হওয়ার আগে মন্দ হতেই হবে। এসব হলো আমার মতো দুষ্টদের চিন্তা। এটুকু হলেও চলতো। কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। ‘আল গাযবুল ফিকরি’ বা চৈন্তিক আগ্রসনের কুফলসমূহের মধ্যে এটাও একটা যে তারা এই চিন্তাটা আমাদের মানসে বসিয়ে দিয়েছে যে, ভালর আগে মন্দ থাকবেই থাকবে।
*** প্রাচ্যবিদরা এটাকে আরও ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। ইতিহাসের নিরপেক্ষ-নির্মোহ পাঠের নামে তারা সাহাবায়ে কেরামকেও ছাড়েনি। এমনকি নবীজিকেও (সা.) ছাড়েনি।
*** রাবেয়া আল আদাবিয়্যাহ বা রাবেয়া বসরি (রহ.)। তিনি মুসলিমদের কাছে একজন আল্লাহর খাস বান্দী হিশেবে পরিচিত। তিনি আজীবন আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা জীবন কাটিয়ে গেছেন। এজন্য বিয়ের কথাও ভাবার সুযোগ পাননি। অথচ তার কাছে অনেক বড় বড় ব্যক্তিরাও প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।
*** তার মাধ্যমেই সূফিবাদের একটা ধারা, ‘ইশকে ইলাহি’র প্রবর্তন ঘটে।
*** তিনি ছেলেবেলাতেই (বয়েস দশ হওয়ার আগেই) মা-বাবাকে হারিয়ে পুরোপুরি ইয়াতীম হয়ে যান। তিনি ১০০ হিজরির মানুষ। ৭৭২ ঈসায়ী। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের চতুর্থ সন্তান তাই তার নাম হয় রাবেয়া। তিনি বসরার অধিবাসী।
*** মুসলিম বিশ্বে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মিসর। আর মুক্ত চিন্তায় এগিয়ে আছে তিউনিস। পাশ্চাত্য চিন্তার ধারকবাহক হলেও, চলচ্চিত্রের গুণগত মানের উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে মিসর এখনো অনেক পিছিয়ে। তাদের চলচ্চিত্র পুরোটাই অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। সে তুলনায় তুরস্ক ও সিরিয়া চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক অগ্রগাতি লাভ করেছে। মুসলিম ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ইরানের পরেই সিরিয়ার স্থান। তার অনেক পরে আছে তুরস্ক।
*** অবশ্য সংখ্যার বিচারে মিসরেই ইসলামের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের বিকৃতিও হয়েছে বেশি। ইরান ও সিরিয়া শিয়া। তাদের শিয়া মতবাদই তারা প্রচার করবে। সেটা তারা করেও। তাদের চলচ্ছিত্রেই সেটা বেশ ভালভাবে ফুটে ওঠে। কিন্তু মিসর শিয়াদের চেয়েও মারাত্মক মতবাদ দ্বারা আক্রান্ত।
*** মিসরের শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতা-চলচ্চিত্র সবকিছুতেই প্রাচ্যবিদদের প্রবল আধিপত্য। আর প্রাচ্যবিদদের নাকে দড়ি বেঁধে ঘোরায় ইহুদিরা। মিসরে শুরু থেকেই, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর পেছনে ইহুদিরা জায়গা করে নিয়েছে। তারা কলকাঠি নাড়ে। জল পড়ে পাতা নড়ে।
*** রাবেয়া বসরীকে নিয়ে একটা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে মিসরে। সেটাতে পরিচালক দেখানোর চেষ্টা করেছেন, রাবেয়া বসরী প্রথম জীবনে খুবই উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করেছেন। শেষ জীবনে এসে ভাল হয়েছেন। আর মানুষ এটা দেখে বিশ্বাসও করছে। এর আগে খালিদ বিন ওয়ালীদ (রা.) কে নিয়েও তারা বেশ কয়েকটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। সেখানেও তারা এই মূলনীতি মানতে কসুর করেনি: তুমি এখন ভাল, তার মানে আগে খারাপ ছিলে।
*** বর্তমানে ইওরোপিয়ান সিভিলাইজেশন প্রচারের মূল স্তম্ভই হলো চলচ্চিত্র। হলিউড। যেমনটা ভারতীয় আগ্রাসনের অন্যতম স্তম্ভ হলো বলিউড।
*** পুরো চলচ্চিত্র শিল্পটাকেই কিছু মতবাদের ফ্রেমে বন্দী করে রেখেছে তারা। এই ফ্রেমের মধ্য দিয়েই পুরো বিশ্বে তাদের মতবাদ প্রচার হয়। এই ফেমের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তাহলে যে অস্কার, গ্র্যামি এওয়ার্ড ইত্যাদিতে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। জাতে ওঠা যাবে না!
*** এই নিগড় ভাঙ্গা সহজে সম্ভব হবে না। কারণ এই ফ্রেমের বাইরে দিয়ে কেউ খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। সুবিধা করতে দেয়া হয়নি। টুঁটি চেপে মেরে ফেলা হয়েছে।
-আতিক উল্লাহ





“সাকরু কুরাইশ” কুরাইশ গোত্রের বাজপাখি।
আব্দুর রহমান আদ-দাখিল (১১৩-১৭২হি) (৭৩১-৭৮৮খৃ)
কুরাইশ গোত্রীয় ছিলেন। আন্দালুসে তাঁর দূরদর্শী ও চৌকশ পদক্ষেপে মুগ্ধ হয়ে আবূ জাফর আল-মানসূর তাঁকে “সাকরু কুরাইশ” কুরাইশদের বাজপাখি উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৩২ হিজরীতে আব্বাসীদের হাতে দামেস্কে উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতন হলে তিনি আন্দালুসে এসে পাড়ি জমান। উমাইয়া খেলাফতের তিনিই প্রথম খলিফা, যিনি আন্দালুসের মাটিতে প্রথম পদার্পন করেন। তাই তাকে “আদ-দাখিল” বলা হয়।
আন্দালুসে তিনি খেলাফতে উমাইয়া প্রতিষ্ঠা করেন। যখন আন্দালুসে আগমন করেন, তখন তা বিদ্রোহ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার কবলে জর্জরিত। কিন্তু তিনি সে আন্দালুসকে স্থিতিশীল ও শান্তির ফিরদাওসে রূপান্তরিত করেন।











#তারেক_বিন_যিয়াদ_রহ_কর্তৃক_মুসলিম_সৈন্যবাহিনীর_জাহাজ_পুড়িয়ে_দেয়া!#বাস্তবতা_কতটুকু?
ইসলামি ইতিহাসে একটি ঘটনা ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, তা হলো আন্দালুসের বিজয়ী তারেক বিন যিয়াদ কর্তৃক মুসলিম সৈন্যবাহিনীর জাহাজগুলো পুড়িয়ে দেয়া যেন কেউ যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়নের সুযোগ না পায়।
কিন্তু বিষয়টিকে যদি গভীর দৃষ্টিতে যাচাই করা হয়, তবেই বুঝা যাবে যে ঘটনাটি প্রমাণিত নয়; বরং ইউরোপীয়ান ইতিহাসবেত্তাদের বানানো মনগড়া কাহিনী! ইতিহাসবিদদের কেউ ঘটনাটিকে বাস্তব মনে করেন আর কেউ মনে করেন তা অসত্য। আর অসত্য ও অবাস্তব হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ঘটনাটি প্রমাণিত ও সত্য না হওয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ:
#১. আমরা সকলেই জানি কোনো বর্ণনা সহিহ হতে গেলে তার সনদ সহিহ হতে হয়। চাই তা হাদিসের বর্ণনা হোক বা ইতিহাসের কোনো বর্ণনা হোক। উক্ত ঘটনাটি মুসলিম ঐতিহাসিকদের কোনো নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়নি। বরং তা আমাদের কাছে ইউরোপিয়ান ইতিহাসগ্রন্থগুলোর মাধ্যমে পৌঁছেছে।
#২. উক্ত জাহাজগুলো মূলত তৈরী করেছিলেন মুসা বিন নুসাইর রহ.। আর তারেক বিন যিয়াদ রহ.কে আন্দালুস অভিযানে পাঠিয়েছিলেনও তিনি। যদি বাস্তবেই জাহাজ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি ঘটত, তাহলে পুড়িয়ে দেয়ার কারণে অবশ্যই তারেক বিন যিয়াদকে মুসা বিন নুসাইর বা তৎকালীন খলিফা ওলীদ ইবনে আব্দুল মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হতো । তারা এই পুড়িয়ে দেয়ার কারণ সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জিজ্ঞসা করতেন। অথচ যেসমস্ত ইতিহাসগ্রন্থে এই ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে এই জবাবদিহিতা সম্পর্কে কিছুই লেখা হয়নি। দ্বিতীয়ত জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা না ঘটলেও মুসলিম সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে এরকম জাহাজ পুড়িয়ে দেয়া বৈধ না অবৈধ, এ নিয়ে অবশ্যই উলামায়ে ইসলাম কোনো না কোনো আলোচনা করতেন। কিন্তু ইতিহাসগ্রন্থগুলো ঘাটলে দেখা যায় এ ধরনের কোনো আলোচনাও পূর্বেকার উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। তাই এ দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে উক্ত ঘটনাটির শুদ্ধতার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
#৩. ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিকরা তাদের রচিত ইতিহাসগ্রন্থগুলোতে এই ঘটনা বর্ণনার মূল রহস্য হলো, তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা এবং মুসলমানদের যুদ্ধের ময়দানে বিজয়লাভের আসল কারণ সম্পর্কে জানতে না পারা। তারা ভেবেছে মাত্র বারো হাজারের বাহিনী রডারিকের একলক্ষ সৈন্যের বাহিনীর বিরূদ্ধে কীভাবে বিজয় লাভ করল? অথচ রডারিকের বাহিনীর সকলেই ছিল অশ্বারোহী, ছিল পূর্ণ অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত, প্রচুর পরিমাণে যুদ্ধের সরঞ্জাম তাদের কাছে মজুদ ছিল। আবার যুদ্ধও সঙ্ঘটিত হয়েছিল তাদের নিজেদের দেশে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের প্রায় সকলেই ছিল পদাতিক,অস্ত্রসস্ত্রও তেমন ছিল না। এই অস্বাভাবিক বিজয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে তারা লিখল, মুসলমানরা যেন খ্রীষ্টানদের এত বড় বাহিনী দেখে ভয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন না করে তাই তারিক বিন যিয়াদ তাদের জাহাজগুলোকে পুড়িয়ে দেন। কেননা এই পোড়ানোর ফলে মুসলমানদের সামনে মাত্র দু’টি পথই খোলা থাকবে, হয়তো সমুদ্র ঝাপ দিবে আর না হয় খ্রীষ্টানদের এই বিরাট বাহিনীর হাতে নিজেরা ধ্বংস হবে। আর উভয় পথেই নিশ্চিত মরণ। তাই তারিক বিন যিয়াদ এমন পন্থা অবলম্বন করলেন যেন মুসলমানরা কোনো উপায় না দেখে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। কারণ কেউ যখন দেখে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ নেই তখন সে খুব জোরালোভাবে আক্রমন করে। সুতরাং তাই হলো, আর এরই ধারাবাহিকতায় মুসলমানরা বিজয়লাভ করল! অন্যথায় যদি মুসলমানদের জাহাজগুলো বাকি থাকত তাহলে তারা কোনোক্রমেই যুদ্ধে রত হত না, বরং জাহাজে করে নিজেদের দেশে ফিরে যেত!
এই ধারণার ভিত্তিতেই তারা নিজেদের রচনাগুলোতে এই কাহিনীর অবতারণা ঘটায়। কারণ তারা তো এই বস্তুজগত ছাড়া আর কিছুই বুঝে না! আল্লাহর এই অমোঘ বিধান,كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ (249) এমন কত ছোট দলই না রয়েছে যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে!(বাকারা: ২৫০) সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ।
ইসলামি ইতিহাস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা সকলেই জানে মুসলামান কখনো সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে না। বরঞ্চ এমন হয়েছে যে, সংখ্যাধিক্যের উপর ভরসার বিন্দুমাত্র চিন্তা করার কারণে তাদের পরাজিত হতে হয়েছে! হুনাইনের যুদ্ধ তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
#৪. মুসলমানদের যুদ্ধের ময়দানে অটল-অবিচল রাখার জন্য এই জাহাজ পুড়িয়ে দেয়ার কী প্রয়োজন! স্বল্পসংখ্যক মুসলমান বহুসংখ্যক কাফেরের বিরূদ্ধে যুদ্ধ তো আর একবার করেনি, বহুবার করেছে! তো সেখানে কিসের মাধ্যমে তাদের অবিচলতা স্থির থাকত? আসল কথা হলো মুসলমান কখনো বাহ্যিক উপায় উপকরণের ওপর ভরসা করে জিহাদের ময়দানে লড়াই করে না। বরং তাঁরা শাহাদাতের তামান্না নিয়েই জিহাদের ময়দানে উপস্থিত হয়। তাই এই জাহাজ পুড়িয়ে দিয়ে অবিচলতা ধরে রাখা অন্যদের জন্য হলেও অন্তত মুসলমানদের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রয়োজন নেই।
#৫. তারিক বিন যিয়াদ রহ. এর মতো একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ সেনাপতির থেকে কখনো এমন কাজের আশা করা যায় না। কারণ আল্লাহ না করুন যদি মুসলমানরা পরাজয় বরণ করত!আর তা অসম্ভবও না! তাহলে কি অবস্থা হতো?! দ্বিতীয়ত যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যাওয়া মানেই তো দূষণীয় না! কারণ আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ (15) وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (16)
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কাফেরদের মুখোমুখি হও, যখন তারা চড়াও হয়ে আসে, তখন তাদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করো না। তবে কেউ যদি যুদ্ধ কৌশল হিসেবে এ রকম করে অথবা সে নিজ দলের সাথে গিয়ে মিলতে চায়, তার কথা আলাদা...। (আল আনফাল: ১৫-১৬।)
সুতরাং এই সম্ভাবনাও তো ছিল যে, মুসলমানরা কোনো নতুন কৌশল হিসেবে বা অন্য কোনো দলের সাথে মিলে একযোগে আক্রমন করার জন্য সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন হতো! তখন তারিক বিন যিয়াদ কী করতেন? এটাতো কোনোভাবেই শরিয়ত অনুমোদন দেয় না! আর এমন একটি শরিয়ত বহির্ভূত কাজ তারিক বিন যিয়াদের পক্ষ থেকে হওয়া মোটেও সম্ভব না। আর যদি তা হয়েও থাকত তাহলে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম অবশ্যই এ নিয়ে আলোচনা করতেন । কিন্তু কোথাও এমন কোনো আলোচনা বর্ণিত হয়নি।
#৬. ঐ জাহাজগুলোর সব মুসলমানদের ছিল না। বরং কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, সাবতার রাজা জুলিয়ানও কিছু জাহাজ ভাড়া দেয়ার শর্তে দিয়েছিল। তো তারিক বিন যিয়াদ যদি জাহাজ পুড়িয়ে দিতেন তাহলে নিজেদেরগুলো না পুড়তে পারতেন কিন্তু তাদের জাহাজ কীভাবে পুড়তেন? সে অধিকারতো তার ছিল না।
##মোটকথা তারিক বিন যিয়াদ কর্তৃক জাহাজ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। কাহিনীটি বানানোই হয়েছে মুসলমানদের আন্দালুস বিজয়কে খাটো করে দেখানোর জন্য।
--ডক্টর রাগেব সারজানি লিখিত "قصة الأندلس"এর ভাব অবলম্বনে।










দিনলিপি-৩২৬
(২৩-০৯-২০১৫)
টেরোরিস্ট বনাম ইরহাবী!
--------------
(এক):
মক্কা বিজয় হলো। নবিজী (সা.) এবার প্রবেশ করছেন। একটা চমৎকার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, তিনি উটের পিঠে সওয়ার। বিনয়ে মাথাটা একদম নুয়ে আছে। পাগড়ীর ‘গাছা’টা প্রায় উটের পিঠের সাথে লেগে যাওয়ার উপক্রম।
.
তিনি মক্কাবাসীকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
-আমি আপনাদের সাথে কেমন আচরন করবো বলে ধারনা করেন?
-আমাদের একজন মহৎহৃদয় ভাই, একজন উদারহৃদয় ভাতিজাই মনে করি আপনি!
-ঠিক আছে, আপনারা সবাই আজ মুক্ত। স্বাধীন।
.
একজন বিজেতা আচরণ যদি এমন হয়, তাকে কোনও ভাবে সন্ত্রাসী ধর্মের প্রবক্তা-উদগাতা আখ্যা দেয়া যায়?
তিনি প্রেরিত প্রতিনিধি দলের নেতাদেরকে বলেছিলেন:
-তোমরা লড়াই করো, বাড়াবাড়ি-সীমালঙ্ঘন করো না। গাদ্দারি-বিশ্বাসঘাতকতা করো না। অহেতুক অঙ্গহানি করো না। শিশু হত্যা করো না।
এমন মানুষকে বুঝি সন্ত্রাসী ধর্মের উদ্যোক্তা বলা যায়?
.
(দুই):
প্রথম খলীফা আবু বাকর (রা.)। তিনি দায়িত্ব নিয়েই প্রথমবারের মতো অভিযানে পাঠাচ্ছেন ওসামা বিন যায়েদকে, সিরিয়ার দিকে। বিদায় বেলায় দিলেন দশটা ওসিয়ত:
ক: নারীদের হত্যা করবে না।
খ: শিশুদের হত্যা করবে না।
গ: বয়োবৃদ্ধদেরকে হত্যা করবে না।
ঘ: ফলদার বৃক্ষ কর্তন করবে না।
ঙ: বসতিপূর্ণ জনপদকে ধ্বংস করবে না।
চ-ছ: খাবারের প্রয়োজন ছাড়া ছাগল-উট বধ করবে না।
জ: খেজুর গাজ জ্বালিয়ে দেবে না।
ঝ: ধোঁকা দেবে না।
ঞ: কাপুরুষতা করবে না।
এত সুন্দর মানবিক উপদেশ বিশ্ব-ইতিহাসে কোনও জেনারেলকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান দিয়েছে কখনো? দেখাতে পারবে কেউ? অন্য কেউ দিয়ে থাকলে, তাকেও সন্ত্রাসবাদী বলা হবে?
.
(তিন):
ইসলাম বড় বড় বিজয়ের পরও, আচরণে ছিল দয়া ও ইনসাফের মূর্তপ্রতীক। মুজাহিদগন জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানোর জন্যে তলোয়ার হাতে নেন নি। দ্বীনের দাওয়াত, এক আল্লাহর নাম বুলন্দ করার দাওয়াতের পরিবেশ সৃষ্টি করতেই তরবারি ব্যাবহার করেছেন। তাওহীদের দাওয়াতের পথের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্যেই শুধু তরবারি ব্যাবহার করেছেন। যেখানে দাওয়াত-তাবলীগ বাধাগ্রস্ত হয়নি সেখানে তরবারি ব্যাবহৃত হয়নি।
.
ফরাসী ঐতিহাসিক গুস্তাভ লেবূন বলেছেন:
-বিশ্ব ইতিহাসে আরবদের চেয়ে দয়ালু বিজেতা আর দেখা যায় নি।
.
টমাস আরনল্ড তার প্রিচিং অব ইসলাম বইয়ে লিখেছেন:
-মুসলমানরা বিজিত এলাকায় কেমন ন্যায়য়ানুগ আচরণ করতো?
= মুসলিম বাহিনী জর্দানে পৌঁছল। সেনাপতি আবু ওবায়াদা (রা.) একটা চিঠি পেলেন। সেখানকার খ্রিস্টানরা লিখেছে
-আপনারা আমাদের কাছে রোমকদের চেয়েও বেশি প্রিয়। তারা আমাদের ধর্মের লোক সত্য, কিন্তু তাদের তুলনায় আপনার বেশি ওয়াদ রক্ষাকারী। আমাদের প্রতি বেশি দয়ালু। আপনারাই তাদের চেয়ে বেশি রক্ষাকারী। তাদের চেয়ে ভাল শাসক। তারা আমাদের দেশ জয় করেছিল। আপনার আমাদের হৃদয় জয় করেছেন।
.
এটাই হলো ইসলাম। দয়া ও ন্যায়ের প্রতীক।
.
.
.
আর ইউরোপ? তাদের আচরণ কেমন ছিল? একটু দেখা যাক।
(চার):
১: পোপ দ্বিতীয় আরবান মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ‘পবিত্র’ যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। পুরো ইউরোপকে ঘোষণা দিয়েছেন, মুসলমানদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমূল করতে হবে। এ-যুদ্ধ চলেছিল দুইশত বছর ধরে।
= এটা সন্ত্রাস নয়তো কোনটা?
.
২: পঞ্চম ফার্ডিন্যান্ড। তিনি আন্দালুসের শেষ সুলতান আবু আবদুল্লাহর সাথে স্বাক্ষর করা সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে, সেখানকার মুসলমানদের ওপর চালিয়েছিলেন নির্যাতনের স্টীম রোলার। হালাল ঘোষণা করেছিলেন তাদের রক্তকে। জোরপূর্বক খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন।
.
গুস্তাভ লেবুন লিখেছেন:
-১৬১০ সালে যখন আরবদেরকে স্পেন থেকে নির্বাসিত করার ব্যবস্থা হলো, মুসলমানদেরকে হত্যা করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। প্রায় তিন মিলিয়ন (ত্রিশ লাখ) মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
= এটাকে কী বলবো? সভ্যতা? নাকি সন্ত্রাস?
.
অথচ মুসলামনরা যখন স্পেনে প্রবেশ করেছিল, সেখানকার অধিবাসীদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। তারা তাদের ধর্ম পালন করতো নিজের মতো করে। তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতো। তাদেরকে শুধু সামান্য পরিমানে জিযিয়া আদায় করতে হতো। তারা আগের গথিক রাজাদেরকে যে পরিমাণ বার্ষিক কর দিত তার চেয়েও কম।
.
জার্মান গবেষক সেগরেড হোঙ্কা লিখেছেন:
-স্পেনে আরবদের ন্যায়পরায়নতা এত উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছিল, বর্তমানের মানুষগুলো কল্পনাও করতে পারবে না।
তিনি আরও লিখেছেন:
-লা ইকরাহা ফিদ্দীন। ধর্মে কোনও জোর-জবরদস্তি নেই। এটা শুধু কথার কথা নয়। ইসলামে এটা একটা অবশ্য পালনীয় সংবিধান। এই আয়াতের লক্ষ্যমাত্রা জোর করে ইসলাম প্রচার বা বিশ্বজুড়ে আরবদের বিজয়ডঙ্কা ওড়ানো ছিল না। এটার লক্ষ্যমাত্রা ছিল পৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা।
.
মুসলিম রাষ্ট্রে একজন খ্রিস্টান তার ধর্মেই থেকে যেতে পারতো। একজন ইহুদি তার ধর্মে থেকে যেতে পারতো। যেমনটা সে আগে ছিল। কেউ তাকে তার ধর্ম পালনে বাধা দিতো না। কেউ তাদের ধর্মগুরুদের অসম্মান করতো না। কেউ তাদের ধর্মালয়ের সম্মানহানি করতো না।
= এটাই কি সন্ত্রাস?
.
= প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কারা লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে?
= হিরোশিমা-নাগাসাকিতে কারা আণবিক বোমা ফেলেছে?
= কারা স্পেনের লাইব্রেরীগুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে?
= কারা বাগদাদের কিতাব দিয়ে দিজলা-ফোরাতের পানি কালো করে ফেলেছিল?
= কারা স্পেনে ইনকুইজিশনের মাধ্যমে লাখো মানুষকে খ্রিস্টান বানয়েছিল?
= কারা নতুন বিশ্বে (আমেরিকায়) লাখো রেড ইন্ডিয়ানকে একেবারে নির্মূল করে দিয়েছিল?
= কারা আলজেরিয়াতে দুই মিলিয়ন মুসলমানকে শহীদ করেছিল?
= কারা বর্বর হত্যাকান্ড চালিয়ে বসনিয়ার সেব্রেনিৎসায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ তিনভাগের একভাগে কমিয়ে এনেছিল?
= সোভিয়েত ইউনিয়ন কতো কতো মানুষকে হত্যা করেছিল? কমিউনিষ্ট সোভিয়েতের অপরাধের কথা কি কারো মনে নেই?
= যুগোশ্লাভিয়ার একনায়ক মার্শাল টিটোর বর্বরতম অপরাধের কথা কি মনে নেই?
= হালাকু খাঁর কথা কি মনে নেই?
=চেঙ্গিস খাঁর কথা মনে নেই?
= বায়তুল মুকাদ্দাস দখলের সময় খ্রিস্টানদের গণহত্যার কথা মনে নেই? পোপের আদেশেই তো সেটা ঘটেছে?
= স্পেনের বারবাসতারের গণহত্যা, মা‘আররা নু‘মানের গণহত্যা, সাবরা-শাতীলার গণহত্যা, দের ইয়াসীনের গণহত্যা কথাও কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো?
= ল্যাটিন আমেরিকার মায়া-এ্যাজটেক-ইনকা সভ্যতার কথা ভুলে গেলে চলবে? এই তিনটা সভ্যতাকে করা ধ্বংস করেছে? কারা এখানকার অধিবাসীদেরকে হত্যা করেছে?
.
=কোনও ইহুদি বা খ্রিস্টান কি কখনো নিজেদের ধর্মের কোনও দলকে সন্ত্রাসী বলেছে?
= তাদের কেউ কি কখনো বলেছে, মধ্যযুগের নাইটরা সন্ত্রাসী?
.
.
এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে, ইহজীবনেও মানবতার বিরুদ্ধে অমুসলিমদের বর্বরতার কাহিনী ফুরোবে না।
কিন্তু অদ্ভূতভাবেই তারা, সব সময় মুসলমানদের দিকেই অভিযোগের আঙুল ওঠায়।
সাধারন মানুষ ও অজ্ঞ মুসলমানরা তাদের এই প্রচারণাকে বিশ্বাসও করে। কিছু জ্ঞানপাপী আবার জেনেশুনেও বিশ্বাস কর বা ভান করে।
.
.
ইতিহাস স্বাক্ষী। কুরআন স্বাক্ষী। হাদীস স্বাক্ষী। জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক স্বাক্ষী:
= ইসলাম কখনোই অশান্তির ধর্ম ছিল না। ইসলাম ছিল শান্তি-দয়া-ইনসাফের ধর্ম।
আর সন্ত্রাস বলতে যা বোঝায়, সেটা পাশ্চাত্যের সৃষ্টি। পরবর্তীতে তারা সেটাকে ইসলামের সাথে যোগ করে দেয়।
.
একটা কথা পরিষ্কার থাকা দরকার:
-কিছু লোক আবার ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে, ইসলামে কোনও যুদ্ধবিগ্রহ নেই। কড়াকড়ি নেই।
-ইসলাম শুধু শান্তির ধর্ম নয়, ক্ষেত্রবিশেষে ইসলাম শান্তির জন্যে ধর্ম।
= কথার পার্থক্যটা প্রণিধানযোগ্য।
-আতিক উল্লাহ
দিনলিপি-৭৯
(০২-০১-২০১৫)
জুমাবার
*** গত বছরের আগের বছর। আমরা এই দিনে, আমরা বিশ্বব্যাপী একটা আন্দোলন করেছিলাম:
= আন্দালুস উদ্ধার আন্দোলন।
*** আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচী ছিলো, সবাই এইদিন আন্দালুস মানে স্পেন নিয়ে কিছু না কিছু লিখব। আমাদের হারানো ফিরদাওস (আল ফিরদাউসুল মাফকূদ) কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবো। কিভাবে আমাদের এই কলিজার টুকরাকে পুনরুদ্ধার করা যায়, চিন্তা-ফিকির করবো।
*** এই ইভেন্টে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজরেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। সঙ্গত কারণেই সবাই আরবিতেই স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। কমেন্ট করেছিল।
*** আমার জন্যে একটা আনন্দের ব্যাপার ঘটেছিলো। তা হল, আমি শায়খ আলি তানতাভি থেকে ধার করে, স্পেনের জন্যে বিশেষণ হিশেবে ‘আল ফিরদাউসুল মাফকূদ’ বাক্যটা ব্যবহার করেছিলাম। সবাই বাক্যটাকে একদম লুফে নিয়েছিলো। ওরা ভেবেছিলো এটা আমার আবিষ্কার। আমিও আর ভেঙে বলিনি যে, এটা ধার করা। সবার সে কি বাহবা! এখন বুঝতে পারছি, পরের ধনে পোদ্দারি করে কোনও আনন্দ নেই।
*** এবারও এই ইভেন্টটা হচ্ছে। কিন্তু অতটা ঘটা করে নয়। কেমন যেন নির্লিপ্তভাবে। মানুষ বেশিদিন একটা বিষয়ে উৎসাহ ধরে রাখতে পারে না। আমার উৎসাহ কিন্তু সেই আগের মতোই আছে। স্পেন সম্পর্কে জানার পর থেকে, কখনোই স্পেনের কথা ভুলে যাই নি। না না, মৌসুমি স্মরণ নয়, সার্বক্ষণিক স্মরণ।
*** আমাদের সেই ইভেন্টে বেশির ভাগ মানুষ ছিলো মিসর ও তিউনিসিয়ার। আমি তাদের পড়াশোনা, জানাশোনার পরিধি দেখে অবাক। আর তারা অবাক, বাংলাদেশের মানুষও আরবি জানে!।
*** ওই ইভেন্টে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো, লাইভ ব্রডকাস্ট। অর্থাৎ, স্পেন থেকেই বিভিন্ন মুসলিম স্থাপনাগুলোতে সশরীরে গিয়ে ধারাবর্ণনা দেয়া। তিউনিসিয়ার দুইজন তো শুধু এই ইভেন্ট উপলক্ষে স্পেনে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে তারা অনেক ভিডিও-অডিও আপলোড করেছিলো। সেসব দেখে ও শুনে সবাই খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল।
*** আরও অবাক করা বিষয় হলো, সে দুই জনের একজন ছিলো মেয়ে। মানে জামাই-বউ দুজনেই ঘর-সংসার ফেলে চলে গিয়েছিলো। মেয়েটা কত চটফটে, অথচ পূর্ণ শরয়ী পর্দা মেনেই এত কিছু করেছে। এই দম্পতির ত্যাগের কারণেই কিনা জানি না, এখন অনলাইনে, বিশেষ করে ফেসবুকে আন্দালুস নিয়ে অনেকগুলো পেজ আছে। পেজগুলো বেশ সক্রিয়ও।
*** বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, সামাহ মানে বউটা ছিলো সন্তানসম্ভবা। ডাক্তার বলেছেন ছেলে হতে পারে। আমরা সবাই প্রস্তাব রাখলাম, ছেলেটার নাম আবদুর রাহমান রাখতে হবে।
*** এবার একটু কুইজ: আবদুর রহমান কে ছিলেন?
*** আমাদের নিয়ত আছে, আমাদের মাদরাসায় আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দিলে, নিয়মিত এ ধরনের অনলাইন ইভেন্ট পরিচালনার জন্যে একজন স্বতন্ত্র ‘দায়িত্বশীল’ নিয়োগ দিবো। ইনশাআল্লাহ
*** আজকের এই এই দিনে, স্পেনকে নিয়ে একটা কল্পভ্রমণ-কাহিনী লেখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু স্পেনের কোনও জায়গার নাম তো জানি না। তাই ‘সন্যাসিনী’ দিয়ে, মাসুদ রানার সাথে একটু স্পেন ঘুরে এলাম। বইটা ফুড়ুৎ করে শেষ হয়ে গেল, কিন্তু কোনও ভ্রমণকাহিনী দাঁড়াল না।
-আতিক উল্লাহ









একনজরে ইতিহাস (হারানো ফিরদাওস):২
-
প্রথম ধাপ
আন্দালুসে অভিযান শুরু হয় মূলত ওলীদ বিন আবদুল মালিকের খেলাফতের মাঝামাঝিতে। ৯২ হিজরীতে। ওলীদের খিলাফতকাল ছিলো: ৮৬-৯৬ হিজরী। ৭০৫-৭১৫ খ্রিস্টাব্দ। আন্দালুস বিজয়টা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। বৃহত্তর মাগরিব অঞ্চল ও আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল জয়ের ধারাবাহিকতাতেই আন্দালুস বিজয়ের পালা আসে।
মুসা বিন নুসাইরকে মাগরিব অঞ্চলের ওয়ালি বা গভর্নর নিয়োগ করা হয়। মাগরিব বলতে: মরক্কো-তূনিস-আলজেরিয়াকে বোঝায়। বর্তমানে সুনির্দিষ্টভাবে শুধু মরক্কোকে মাগরিব বলে। আফ্রিকা জয় শেষ। ওপারে ইউরোপ। মুসা খলীফা ওলীদের কাছে অনুমতি চাইলেন। আন্দালূসে অভিযান পরিচালনা করার। খলীফা প্রথমে পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে বললেন। মুসা তখন তরীফ বিন মালিককে পাঠালেন। ৫০০ সেনা দিয়ে। ৯১ হিজরীতে। ৭১০ খ্রিস্টাব্দে। অগ্রগামী অনুসন্ধানী দল অভিযান শেষে ইতিবাচক রিপোর্ট দিলো। মুসা এবার চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। এক বছর সময় নিয়ে সবকিছু গোছালেন। মুসা রহ. ছিলেন ধীরস্থির প্রকৃতির মানুষ। একজন তাবেয়ী। হাদীসও বর্ণনা করেছেন।
.
অধীনস্থ তারিক বিন যিয়াদকে পাঠালেন আন্দালূসে। সাথে দিলেন ৭০০০ সৈন্য। ৯২ হিজরীর শা‘বান মাসে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দের জুনে। তারিক আন্দালুসে গিয়েছিলেন ‘সাবতা’ দ্বীপ হয়ে। তারীফ বিন মালিকও এখানে ঘাঁটি গেঁড়েছিলেন। স্পেনের শাসক ছিল রডারিক। তার অত্যাচারে দেশবাসী অতিষ্ঠ ছিল। সাবতার প্রশাসক জুলিয়ানও রডারিকের প্রতি বেজায় অসন্তুষ্ট ছিল। মুসলিম বাহিনী এজন্য সাবতায় উষ্ণ সহযোগিতা পেয়েছিল।
.
রডারিকের কাছে মুসলিম আগমনের সংবাদ পৌঁছর। খবরটা তেমন পাত্তা পেল না তার কাছে। সে মনে করলো, একদল লুটেরা এসেছে। সহজেই তাড়িয়ে দেয়া যাবে। ভাগ্নের নেতৃত্বে একদল সেনা পাঠালো। আগত বাহিনী যুদ্ধে পরাস্ত হলো। পরাজয়ের সংবাদ শুনে রডারিকের টনক নড়লো। এবার নিজেই এক লাখ সেনা সমাবেশ ঘটালো। সসৈন্যে এগিয়ে এলো। তারিক বিশাল সেনাবাহিনীর আগমন সংবাদ পেয়ে, প্রধান সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর রহ.-এর কাছে সংবাদ পাঠালেন। মুসা তখন ছিলেন ‘কায়রাওয়ানে’। বর্তমানে তিউনিসিয়ার একটি শহর। মুসা দ্রুত সাড়া দিলেন। তরীফ বিন মালিকের নেতৃত্বে আরো ৫০০০ সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন। মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা দাঁড়ালো প্রায় বারো হাজারের মতো।
.
তারিকের বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য ছিল আমাযীগ (বারবার) গোত্রের। মুসা ও তারিক উভয়ও ছিল বারবার। ওয়াদি লাক্কাতে উভয় বাহিনী মুখোমুখি হলো। এখান থেকে শুরু হলো মুজাহিদ বাহিনীর জয়ের ধারা। ৯২ হিজরীর রামাদানের ২৮ তারিখ রোববারে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে ১৯-শে জুলাই। যুদ্ধ একাদিক্রমে আটদিন পর্যন্ত চললো। এর মধ্যে রামাদান শেষ হয়ে, শাউয়াল এসে গেলো। মুসলমানরা দীর্ঘ সময় লাগলেও বিপুল বিক্রমে লড়াই চালিয়ে গেলেন। আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদ বাহিনীকে বিজয় দান করলেন। তারিক প্রথম জয় নিয়ে বসে থাকলেন না। একের পর এক শহর জয় করে চললেন। ছোট ছোট দলে ভাগ করে, মুজাহিদ বাহিনীকে বিভিন্ন দিকে পাঠালেন। চারদিকে একযোগে জয়যাত্রা শুরু হলো।
তারিক প্রায় ৭০০০ মুজাহিদ নিয়ে রাজধানী তুলায়তালার দিকে রওনা করলেন। ইতিমধ্যে কর্ডোভা-গ্রানাডা-মালাকা-মুর্সিয়াসহ বড় বড় শহরে মুজাহিদ বাহিনী পাঠানো হয়ে গেছে। প্রতিটি দলে সাতশ’র বেশি সেনা ছিল না।
.
মুসা রহ. আগে বলে দিয়েছিলেন তারিককে। জাইয়ান শহর বা কর্ডোভা শহর পার না হতে। রাজধানী তুলাইতালা জয়ে তাড়াহুড়া না করতে। তারিক দেখলেন, তুলায়তালা জয়টা অতি সহজেই হয়ে যাবে। তাই তিনি ভাবলেন:
-মুসা শত্রুদের অধিক্য ও শহরটার দুর্ভেদ্যতার কথা ভেবে, আর মুজাহিদ বাহিনীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, শত্রুদেরকে অনায়াসে হারিয়ে দেয়া সম্ভব। তাই তিনি এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
.
এদিকে মুসা রহ. দেখলেন তারিক নির্দিষ্ট সীমরেখা পার হয়ে আরও সামনে অগ্রসর হয়ে গেছে। তার চিন্তা হলো, মুসলমানরা না জানি এই দ্রুতগতির বিজয়ে বিপদে পড়ে যায়? মুসা ছিলেন অত্যন্ত স্থিরমস্তিস্কের মানুষ। ধীরেসুস্থে কাজ করার পক্ষপাতি। তাই তারিকের কাছে নির্দেশ পাঠালেন, তিনি না আসা পর্যন্ত বিজয় অভিযান স্থগিত রাখতে। অভ্যন্তরীন গোছানোর কাজ করতে।
.
মুসা স্বয়ং আন্দালুস যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। আঠার হাজার সেনার নতুন একটা বাহিনী প্র্স্তুত করলেন। তারিকের সাথে যাদেরকে পাঠানো হয়েছিল, তারা ছিলো প্রায় সবাই বারবার। এবার মুসার সাথে যারা যাচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই ছিল আরব। ইরাক শাম ও ইয়ামান থেকে এসেছে। নতুন দেশ জয়ের জিহাদে অংশ নিতে। শুরু হলো নতুন করে বিজয়াভিযান। তারিক সাবতা থেকে তুলাইতালা পর্যন্ত আসতে এক বছর লেগেছিল। এবার মুসা রহ.-এর নেতৃত্বে বাদবাকী অঞ্চল জয় করতে আরো এক বছর লাগলো। মোট দুই বছরে আজকের স্পেনের প্রধান প্রধান শহর, বর্তমানের পুর্তগাল পর্যন্ত মুজাহিদ বাহিনী পৌঁছে গেলো।
শুরু হয়েছে:
৯২ হিজরীর রামাদানে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে।
মোটামুটি একটা ধাপ শেষ হলো
জিলকদ, ৯৪ হিজরী। আগস্ট ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ।
এরপর মুসা ও তারিক উভয়ের সম্মিলিত বাহিনী নবউদ্যমে অভিযান শুরু করলো। এবার শুরু হলো দক্ষিণ দিকের জয়। সারাকুস্তা, বার্সেলোনা জয় হলো। মুজাহিদ বাহিনী চলতে চলতে পিরেনিজ পর্বতমালার পাদদেশে উপনীত হলো। তখন ৯৫ হিজরী ও ৭১৪ খ্রিস্টাব্দ চলছিল। এরমধ্যে খলীফা ওলীদ বিন আবদুল মালিকের পক্ষ থেকে সংবাদ এলো: দু’জন দিমাশকে ফিরে এসো। মুসা রহ. তার পুত্র আবদুল আযীযকে আন্দালুসের দায়িত্ব দিয়ে দিমাশকের পানে রওয়ানা দিলেন। সাথে নিলেন তারেক বিন যিয়াদকে ও আরও অসংখ্য গনীমত।
.
মুসা বিন নুসাইর রহ. ও তারিক বিন যিয়াদ রহ. আর আন্দালুসে ফিরে আসেন নি। এখানকার শাসন চলতে লাগলো খলীফার নিয়োগ করা ওয়ালি বা গভর্নরদের মাধ্যমে। তারিক বিন যিয়াদ থেকে শুরু করে শেষ ১৩৮ হিজরী পর্যন্ত ছেচল্লিশ বছরে সর্বমোট তেইশ জন প্রশাসক আন্দালূসের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। গড়ে একেক জন দুই বছর করে দায়িত্বে ছিলেন।
.
অনেক হিশেব-নিকেশ বাকী আছে। অনেক অভিযোগের উত্তর রয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ পরে হবে।
-আতিক উল্লাহ









একনজরে ইতিহাস (হারানো ফিরদাওস):৩
-
দ্বিতীয় ধাপ
তাকে বলা হয় সক্বরু কুরাইশ। কুরাইশের বাজ। উপাধিটা আপনজনের দেয়া নয়, জনমশত্রুর দেয়া। আবদুর রাহমান বিন মু‘আবিয়া বিন হিশাম। জন্ম ১১৩ হিজরী। ৭৩১ খ্রিস্টাব্দ। মৃত্যু: ১৭২ হিজরী। ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দ।
.
উমাইয়া খিলাফার সর্বশেষ খলীফার নাম ছিলো মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ। যোগ্য খলীফা। আব্বাসীদের সাথে জানপ্রাণ দিয়ে লড়েও শেষরক্ষা করতে পারলেন না। সময়টাই ছিলো তার প্রতিকূলে। বিলুপ্ত হয়ে গেলো উমাইয়া বংশ। ১৩২ হিজরীতে। আব্বাসীরা রীতিমতো চিরুনি অভিযান চালিয়ে উমাইয়াদেরকে হত্যা করতে থাকলো। উমাইয়া শাহযাদারা যে যার মতো পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে শুরু করলো। এমন এক শাহযাদা ছিলেন, আবদুর রহমান বিন মু‘আবিয়া। তিনি লালিত পালিত হয়েছিলেন দাদা খলীফা হিশাম বিন আবদুল মালিকের কাছে। রাজ প্রাসাদে। বাবা মু‘আবিয়া মারা গিয়ের্ছিলেন ভরা যৌবনে ১১৮ হিজরীতে। আবদুর রহমান তখন পাঁচ বছরের। এতিম নাতিদেরকে দাদা নিজের কোলে তুলে নিলেন। দাদাজান তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। আপন চাচা বীর মুজাহিদ মাসলামাহ বিন আবদুল মালিকও ভাতিজাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি নিজ হাতে ভ্রাতুষ্পুত্রকে যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়েছেন। সাহসী করে তুলেছেন।
.
আব্বাসীদের ধাওয়া খেয়ে আবদুর রাহমান নানার বাড়িতে পালালেন। মা ছিলেন বারবার গোত্রের। আফ্রিকার। সেখানে গিয়েও তিষ্ঠোতে পারলেন না। স্থানীয় প্রশাসকরা ভয় পেলো, দলছুট উমাইয়া শাহযাদারা এসে তাদের ক্ষমতায় ভাগ বসাতে পারে, এই ভেবে তারাও আব্বাসীদের মতো খড়গহস্ত হয়ে উঠলো। তারপরও এদিক-সেদিক করে পাঁচ বছর লুকিয়ে থাকলেন। সুযোগের অপেক্ষায় থাকলেন। ১৩৬ হিজরীতে একান্ত অনুচর বদরকে পাঠালেন আন্দালুসে। সেখানে বনু উয়াইয়ার অনেক হিতাকাঙ্খী আছে। আন্দালুস এতদিন তো উমাইয়াদেরই অধীন ছিলো।
উমাইয়া শাসনের শেষ দিকের কয়েকজন খলীফা ছিলো অত্যন্ত অযোগ্য। তাদের অকর্মন্যতার সুযোগে আন্দালুস হয়ে পড়েছিল চরম নৈরাজ্যপূর্ণ একটি অঞ্চল। সেই শুরু থেকেই আন্দালুসে আগত মুসলমানদের মধ্যে সূক্ষè একটা বিভেদ ছিলো। আরব ও বারবারদের মধ্যে। ক্রমে ক্রমে সেটা বড় হয়েছিল। আরবদের মধ্যেও কয়েকটা ভাগ তৈরী হলো: ইয়ামানী আরব। কায়স গোত্রীয় আরব। মুদার গোত্রীয় আরব। নানামুখি সংঘাতে আন্দালূসের অখন্ডতা ভেঙে পড়েছিল। একেকটা গোত্র একেকটা অঞ্চল দখল করে শাসন করতে শুরু করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে আন্দালুসে আসেন আবদুর রাহমান।
.
তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করলেন। নিজের কিছু অনুসারী আগে থেকেই তৈরী হয়েছিল। আসার পর কৌশলে অগ্রসর হতে লাগলেন। কোনও দলের প্রতিই সমর্থন দেখালেন না। আস্তে আস্তে শক্ত একটা ভিত তৈরী হলো। গড়ে তুললেন একটা রাষ্ট্রীয় কাঠামো। একে একে জয় করতে থাকলেন বিভিন্ন শহর। গোত্রীয় শাসন ভেঙে আবার আন্দালুসকে ফিরিয়ে আনলেন একক শাসনাধীনে।
.
আন্দালূসে শক্তিশালী একটা উমাইয়া সালতানাত গড়ে উঠুক এটা আব্বাসীদের হজম হওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয় আব্বাসী খলীফা ছিলেন আবু জা‘ফর মনসুর। তিনি বাইশ বছর খলীফা ছিলেন। ৭৫৪-৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ। আবু জা‘ফর বাগদাদ থেকে কলকাঠি নেড়ে আন্দালূসে একজন অনুচর তৈরী করতে সমর্থ হলেন। আলা বিন মুগীস। এই প্রথম বারের মতো আবদুর রাহমান কঠিন বাধার সম্মুখীন হলেন। ১৪৬ হিজরীর কথা এটা। আলা বিন মুগীস প্রায় দুই মাস অবরুদ্ধ করে রাখলেন আবদুর রহমানকে। কারমূনা শহরে।
.
আবদুর রহমান দেখলেন এভাবে বন্দী হয়ে থাকলে কোনও সমাধান আসবে না। করুণ পরিণতি বয়ে আনবে এই অবরোধ। তার চেয়ে বীরের মতো লড়াই করে মরাই ভাল। দুর্গ ছেড়ে সসৈন্যে বেরিয়ে পড়লেন। তুমুল লড়াইয়ের পর আলা বিন মুগীস পরাজিত হলো। আবদুর রহমান এক অভিনব কাজ করলেন। তিনি আলা বিন মুগীসের মস্তক কর্তন করে, আব্বাসী খলীফার দরবারে ‘শ্যুভেনির’ হিশেবে পাঠালেন। ছিন্নমস্তার সাথে আলার সেনাদের কান কেটে, প্রতিটি কানের সাথে মালিকের নাম লিখে পাঠালেন। আবু জা‘ফর তখন মক্কায় হজের সফরে ছিলেন। উমাইয়া যুবকের এহেন কান্ড দেখে আবু জা‘ফর বাকহারা হয়ে গেলেন। সম্বিত ফিরে পেয়েই সেই বিখ্যাত উক্তিটা করলেন:
-আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমার ও সেই শয়তানের মাঝে একটা সাগর রেখেছেন।
বক্তব্যের ভাবটা এমন ছিলো: সাগর না থাকলে, ওই ব্যাটা না জানি আরো কত কি করতো! আবু জা‘ফর তখনই সেই উপাধিটা দিলেন: সকরু কুরাইশ।
.
অভ্যন্তরীন গোলযোগ শেষ হলো। এবার দেখা দিল বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশংকা। কিছু আরব তার প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারে নি। এভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসা! বিদ্রোহী আরবরা তলে তলে ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগলো। তারা ফরাসী স¤্রাট শার্লাম্যান (৭৪২-৮১৪)-কে ডেকে আনলো। শার্লাম্যান বোকার মতো সাড়া দিলো। ১৬১ হিজরীতে। ৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে। পিরেনিজ পর্বত পেরিয়ে এলো ক্রশেডার বাহিনী। সারকুস্তা শহরের উত্তরে দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো। প্রায় সমূলে বিনাশ হলো খ্রিস্টান ক্রুশেডারদের। শার্লাম্যান ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন ফ্রান্সে। শার্লাম্যানের সেনাপতিদের মধ্যে ছিল রোল্যান্দ নামের বীর নাইট। সেও এই যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। রোল্যন্ডকে নিয়ে রচিত হলো বিখ্যাত ফরাসী মহাকাব্য।
.
আবদুর রাহমান ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী। ১৬৪ হিজরীর দিকে, শাল্যামেনের আহবানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সম্মত হলেন। আপাতত ভেতরে ও বাইরে আর কোনও শত্রু রইল না। দেশে স্থাপিত হলো স্থিতিশীলতা। রাজধানী কর্ডোভাবে গড়ে তুললেন ফেলে আসা স্মৃতির শহর ‘দিমাশকের’ মতো করে। দিমাশক আজীবন আবদুর রাহমানকে উদাস করে তুলতো। তিনি ছিলেন একজন কবি। যুদ্ধ ও প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি চমৎকার সব কবিতাও রচনা করে গেছে। মাত্র বিশ বছর বয়েসে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।
দাদাজি হিশামের প্রাসাদের নাম ছিল ‘রুসাফা’। আবদুর রাহমানও কর্ডোভায় দাদার স্মৃতি বিজড়িত প্রাসানের নামে হুবহু আরেকটি রুসাফা তৈরী করলেন। এটার নামও দেয়া হলো রুসাফা। শতভাগ মিল রাখতে, দিমাশক থেকে খেজুর গাছ এনে রোপন করা হলো। প্রায় তেত্রিশ বছর শাসন করেছেন আন্দালুসকে। গড়ে দিয়ে গেছেন, অনাগত ভবিষ্যতের দীর্ঘ অভিযাত্রার পথকে।
.
১৭০ হিজরীতে শুরু করলেন কর্ডোভা মসজিদ নির্মাণ। সাত বছর লাগলো সমাপ্ত হতে। ‘সাকালেবা’ বাহিনী গঠন করলেন। খ্রিস্টান এলাকা থেকে কিনে আনা ছোট ছোট বালকদের কিনে আনা হতো। এদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হতো। ঠিক উসমানীদের ‘জানেসারীন’ বাহিনীর মতো।
.
.
হিশাম বিন আবদুর রহমান
বাবার পর মসনদে আরোহণ করলেন হিশাম। ১৭২-১৮০ হিজরী। বাবার মতো না হলেও, হিশাম যোগ্য মুসলিম শাসক ছিলেন। অত্যন্ত দ্বীনদার আর জ্ঞানানুরাগী মুত্তাকী ছিলেন তিনি। তার শাসনামলেই আন্দালুসে মালেকী মাযহাবের বিস্তার ঘটে। ইমাম মালেক রহ.-এর খাস শাগরেদ ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া লাইস রহ.-এর হাত ধরে। হিশাম একলক্ষ্য মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করেছিলেন। সীমান্তের কাছে খ্রিস্টান সৈন্যদের হাতে বাধাপ্রাপ্ত হন। যুদ্ধ হলো। খ্রিস্টানরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। হিশাম আর অগ্রসর হলেন না। গনীমত নিয়ে ফিরে এলেন। এটা ছিলো ১৭৭ হিজরী ৭৯২ খ্রিস্টাব্দের কথা।
.
.
হাকাম বিন হিশাম
১৮০-২০৬ হিজরী।
বাপ-দাদার সুনাম রক্ষা করতে পারেন নি। নিজেকে ভোগ-বিলাসে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। দুর্বলতা ঢাকা দিতে প্রজাদের প্রতি অত্যন্ত রূঢ় আচরন করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। এমনকি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ফকীহ ইয়াহইয়া রহ.-এর গায়েও হাত তোলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন নিগৃহীত প্রজাদের অনেকেই আন্দালুস ত্যাগ করে মরক্কো ও অন্যান্য শহরে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছিল।
বড় বড় উজীর ও আমীররা হাকামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাতে শুরু করলো। ২০২ হিজরীতে দরিদ্র ও বঞ্চিতরা নাগরিক বিদ্রোহ শুরু করলো। হাকাম অত্যন্ত নির্দয়ভাবে বিদ্রোহ দমন করলো।
দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলার সুযোগে ফরাসি স¤্রাট শার্লাম্যান বার্সেলোনা দখল করে নিলো। ১৯০ হিজরীতে। হাকামও বেশিদিন বাঁচলো না। শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছিল। নিজের অতীত কর্মকান্ডে অনুতাপও শুরু হয়েছিল মনে মনে। ভাল হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন শেষদিকে। হায়াতে কুলোয়নি।
.
আবদুর রাহমান বিন হাকাম
২০৬-২৩৮
বাবার চেয়ে ছেলে ভাল। পরদাদার মতো যোগ্য ও চৌকশ না হলেও, আবদুর রাহমান একেবারে অযোগ্য ছিলেন না। কোমলে-কঠোরে মেশানো ছিল তার চরিত্র। বুঝতেন ঠিক কোথায় কঠোর হতে হবে, কোথায় নরম হতে হবে। বাবার আমলে নিগৃহীত মুফতি ইয়াহইয়াকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হলো। পদটা ছিলো বর্তমানের ধর্মমন্ত্রী ও বিচারপতির সমন্বিত পদ।
.
এই আমলে উল্লেখযোগ্য দুইটা ঘটনা ঘটে:
এক: জলদস্যু
আন্দালুসের উপকূলে নর্মান জলদস্যুদের আক্রমন। কালো কালো পাল সম্বলিত দ্রুতগতির নৌকায় করে তারা আসতো। নিরাপদ জায়গা দেখে ঘাঁটি গাড়তো। উপকূলবর্তী এলাকায় দ্রুতগতিতে ব্যাপক লুঠতরাজ চালিয়ে আবার পালিয়ে যেতো। তাদেরকে শায়েস্তা করা যাচ্ছিল না। এতদিন পর্যন্ত আন্দালুসের শাসকরা নৌশক্তির দিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পাননি। প্রয়োজনও হয়নি। আবদুর রাহমান এদিকে মনোযোগ দিলেন। দুটি নৌবহর গড়ে তুললেন:
ক: ভূমধ্যসাগরের নৌবহর।
খ: আটলান্টিক মহাসাগরের নৌবহর।
.
এছাড়াও আগের সেই গোত্রীয় কলহ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। মুদার ও ইয়ামানী গোত্রের মধ্যে। আন্দালুসের পূর্বাঞ্চলের মুর্সিয়াতে। প্রায় সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল এ অন্তঃকলহ। আবদুর রহমান এই দ্রোহকে দক্ষতার সাথে নিভিয়ে এনেছিলেন।
.
দুই: মুস্তা‘রিব
আন্দালুসে ইসলাম আগমনের পর, স্থানীয় খ্রিস্টানদের অনেকেই মুসলমান হয়েছিল। খ্রিস্টান থেকে যাওয়া বেশির ভাগই ভাষা ও সংস্কৃতিতে আরব হয়ে উঠেছিল। চলনে বলনে নিজেদেরকে আরব করে তুলতে সচেষ্ট থাকতো। যদিও ধর্মকর্মে তারা খ্রিস্টানই ছিল। এদেরকে মুস্তা‘রিব বলা হতো।
.
নিজ ধর্মের মানুষের এভাবে খোলস বদলে রক্ষণশীল খ্রিস্টান পাদ্রীরা চিন্তিত হয়ে উঠলো। একজন চরম ধর্মান্ধ পাদ্রী গোপনে খ্রিস্টানদেরকে সংগঠিত করে তুলতে শুরু করলো। নিজ ধর্মের অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাল। আস্তে আস্তে একটা আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলো। এদের কর্মকান্ড অনেকটা আত্মঘাতি ও আত্মাহুতিমূলক অন্তর্ঘাতি ছিল। আবদুর রহমান কৌশলে এদের আন্দোলকে প্রশমিত করে আনেন। তার শাসনকাল ছিল ২০৬-২৩৮ হিজরী। দীর্ঘ সময় পেয়েছিলেন।
-আতিক উল্লাহ















আল-আন্দালুস: আমাদের হারানো ফিরদাওস:৯
৩০ ডিসেম্বর। ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, গ্রানাডার মুসলমানদের অবস্থা ছিল কয়েক ধরনের:
এক: কিছু পরিবার মরক্কো ও অন্য মুসলিম দেশে চলে গিয়েছিল। কিছু পরিবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
.
দুই: কিছু পরিবার খ্রিস্টানদের সাথে চুক্তির ওপর নির্ভর করে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
.
তিন: কিছু পরিবার খিস্টানদের সাথে চুক্তিতে বিশ্বাসী বা আস্থাশীল ছিল না। তবুও অজানার পথে পা না বাড়িয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অথবা আন্দালুসকে ভালোবেসে।
.
চার: একজন মানুষই ছিলেন ব্যতিক্রম। মুসা বিন আবি গাসসান রহ.। তিনি এই চুক্তি মেনে নিতে পারেন নি। তিনি গ্রানাডা ত্যাগ করেন। একাই খ্রিস্টানদের সাথে গেরিলা যুদ্ধে নেমে পড়েন। খ্রিস্টানদের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। -আতিক উল্লাহ










মুসা বিন নুসাইর -এর বার্সেলোনা
তারেক বিন যিয়াদ -এর বার্সেলোনা
শুরুতে বার্সেলোনার প্রতি একরকম দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। খেলার পাতায় বার্সেলোনার খবর দেখলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতাম।
কিন্তু এখন সেই বার্সেলোনার খবর চোখে পড়ে। বুকটা চিনচিন করে উঠে। খবর আর পড়া হয় না। লজ্জায়, অনুতাপে চোখ ফিরিয়ে নেই। আমাদের হাতেই তো তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন এ স্বপ্নিল শহর। ইতিহাসখ্যাত দুজন মুসলিম সেনাপতি:
১. মুসা বিন নুসাইর
২. তারেক বিন যিয়াদ।
-জুবাইর বিন আলতাফ











এক চুমুকে ইতিহাস: ১১৮
-
ছবিটা তোলা হয়েছে ১৮৯৯ সালে। স্পেনের টলেডো (তুলাইতালা) শহর থেকে। নদীতীরে দুটি নারী। লাজুক-শালীন পোষাকে। পানি নেয়ার পাত্রটির ডিজাইনও মুসলিম যুগের।
.
আন্দালুস একেবারে সম্পূর্ণরূপে হাতছাড়া হয়েছে ১৪৯২ সালে।
.
টলেডো হাতছাড়া হয়েছে আরও আগে। ১০৮৫ সালে।
প্রায় ৯৩০ বছর পরও ইসলামের প্রভাব মুছে যায় নি।
গ্রানাডা পতনের প্রায় ৪০০ বছর পরও ইসলামকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেনি।
-আতিক উল্লাহ


আল-আন্দালুস: আমাদের হারানো স্বর্গ:৬
১৫৬৭ সালে একটা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দালুসের সমস্ত হাম্মাম (গোসলখানা) ভেঙে দেয়া হয়।
মুসলিম আগমনের পূর্বে স্পেনে ও ইউরোপে গোসল করা ছিল একটা ধর্মীয় অপরাধ। আটশ বছর পর, স্পেন আবার আগের নোংরা অতীতে ফিরে গিয়েছিল। -আতিক উল্লাহ














দিনলিপি-৪১৯
(২৭-১২-২০১)
দুই ‘মা’!
--
বর্তমানে একটি মুসলিম দেশের রানী। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে ইবাদী খারেজী। সম্প্রতি এক ঘোষণায় বলেছেন:
-আল হামদুলিল্লাহ! আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো।
.
কৌতূহল জাগাই স্বাভাবিক! কী সেই স্বপ্ন?
এটা তো সবার জানা আছে, বায়তুল মাকদিস ফিলাস্তীনে হলেও, এটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে জর্দানের রাজ পরিবার। অফিসিয়ালভাবে আরকি। বাস্তবে কতটুকু কী হয় আল্লাহই ভালো জানেন। তাহলে কি তার স্বপ্ন: আলআকসা মুক্ত হওয়া?
= জ্বি না।
.
জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্যের প্রচার-প্রসারে রাজপরিবারের বেশ নামডাক আছে। তাহলে কি রানীর স্বপ্ন কোনও মুসলিম বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার?
= জ্বি না।
.
তার স্বপ্ন কি আণবিক বোমা আবিষ্কার, যার মাধ্যমে জর্দান ইসরাঈলের গোলামি থেকে মুক্তি পাবে?
-তাও না।
.
রানীর স্বপ্ন কি সিরিয়া-ইরাক-কাশ্মীর-শীশান-আন্দালুস-নির্যাতিত মুসলিম ভূখন্ড থেকে কুফফার শক্তিতে বিতাড়ন?
-তা নয়।
.
রানীর স্বপ্ন কি পুরো কুরআন কারীম হিফয করা? সাত কেরাতের সাথে?
= জ্বি না।
.
তার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিলো: নির্দিষ্ট একটা ব্র্যান্ডের বেলজীয় চকলেট সংগ্রহ করে খাওয়া। সেটা পূরণ হওয়াতে রানী বিপুল উৎসাহে মিডিয়াকে জানাচ্ছেন।
এই একই রানী আগে বেশ ঘটা করে যুবরাজ হাশিমকে ‘বার্সেলোনা’ ক্লাবের ম্যাচজয়ের সংবাদ দিয়ে হৈ চৈ ফেলেছিলেন।
.
এই একজন নেতৃস্থানীয় মায়ের যদি এই হালত হয়, ভবিষ্যত সিংহাসনের উত্তরাধিকারীকে এভাবে চকলেট আর ফুটবলের সবক দিয়ে লালন-পালন করেন, তাহলে অন্যদের কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়!
.
.
আরেক মায়ের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তিনি সন্তানকে ছেলেবেলাতেই, কোলে নিয়ে, গল্পবলার ছলে বলছেন:
-মুহাম্মাদ! ওই যে দেখা যায়, কনস্টান্টিনোপল। আমাদের নবিজী সুসংবাদ দিয়ে গেছেন: এই শহর একদিন মুসলমানরা জয় করবে। আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করছি, শহরটা যেন আল্লাহ তোমার হাতেই মুসলমানদের পদানত করেন!
.
এই সন্তান কি জীবনে আর কখনো মায়ের দু‘আর কথা ভুলতে পারবে? সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে মা তার মধ্যে স্বপ্নের বীজ বুনে দিলে, সেটা কি মুছে যেতে পারে? আর সেটা যদি এমন বৃহত আর মহত কোনও স্বপ্ন হয়?
আর যদি স্বপ্নের সাথে আসমানী ইশারা আর নববী দু‘আ থাকে, আর কিছু লাগে?
.
বর্তমানে কয়জন মা তার সন্তানকে এমন প্রেরণা দিয়ে বড় করে?
কয়জন মা তার সন্তানকে বিশ্ব মুসলমানের দুর্দশার কথা বলে, কষ্টের কথা বলে?
কয়জন মা সন্তানকে বায়তুল মুকাদ্দাস জয়ের স্বপ্ন দেখায়?
.
আজ শতকরা কয়জন মা জর্দানী রানীর মতো?
আজ শতকরা কয়জন মা মুহাম্মাদ আলফাতিহের মায়ের মতো?
-আতিক উল্লাহ






এক চুমুকে ইতিহাস: ৪০
---
মু’তামিদ বিন আব্বাদ (১০৬৯-১০৯১)। তিনি ছিলেন বনী আব্বাদ শাসকদের মধ্যে তৃতীয় ও শেষ শাসক। তিনিই মুরাবিত শাসক ‘ইউসূফ বিন তাশাফীন (রহ.) কে আন্দালুসে ডেকে এনেছিলেন।
.
আবুল হাসান ওবাইদুল্লাহ ছিল তার ছেলে ও যুবরাজ। বাবাকে বললো:
-আপনি যে মুরাবিতদেরকে ডেকে আনছেন, তারা তো আপনার ক্ষমতাও ছিনিয়ে নিবে!
-বেটা! আমি তো দারে ইসলাম (আন্দালুস)-কে দারে কুফুরে পরিণত হতে দিতে পারি না। আমি এদেশকে খ্রিস্টানদের হাতেও ছেড়ে দিতে পারি না। এমনটা যদি হতে দিই, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানরা আমার ওপর লা‘নত করতে থাকবে না!
.
খোদার কসম! মারাকেশের সুলতানের উট চরানো আমার কাছে বেশি প্রিয়, খ্রিস্টানদের শুকর চরানোর চেয়ে!
.
এরপরেই সংঘটিত হয় ইতিহাসখ্যাত ‘যাল্লাকার যুদ্ধ’মু‘তামিদ সে যুদ্ধে বীরের মতো জিহাদ করেন।
-আতিক উল্লাহ








আহ, কর্ডোভা..!
আহ, গ্রানাডা.....!
আহ, সালাগা......!!
আহ, মালাকা........!!
আহ, মুরশিয়া..........!!
আহ, টলেডো............!!
আহ, মালকুন.............!!
আহ, উন্দুলূস..............!!!
আহ, দুনিয়ার স্বর্গ.........!!!!









*** এক নজরে আন্দালুসে আমাদের কাল ***
৩০শে এপ্রিল ৭১১ থেকে ২রা জানুয়ারি ১৪৯২ পর্যন্ত আন্দালুসিয়া আমাদের কর্তৃত্বে ছিল।
৭১১ থেকে ৭৫৬ পর্যন্ত উমাইয়া খিলাফাহর অধীনেই ছিল।
খিলাফতের গভর্নরগণ:
★ মুসা বিন নুসাইর, ৭১১-৭১৪
★ আব্দুল আযিয ইবনে মুসা বিন নুসাইর, ৭১৪-৭১৬
★ আইয়ুব ইবনে হাবিব লাখমি, ৭১৬
★ হুর ইবনে আব্দুর রহমান সাকাফি, ৭১৬-৭১৮
★ সামহ ইবনে মালিক খাওলানি, ৭১৯-৭২১
★ আব্দুর রহমান গাফিকি, ৭২১-৭২২
★ আমবাসা আল কালবি, ৭২১-৭২৬
★ উযরা আল ফিহরি, ৭২৬
★ ইয়াহইয়া আল কালবি, ৭২৬-৭২৮
★ হুযাইফা আল কায়েসি, ৭২৮
★ উসমান খাসআমি, ৭২৮-৭২৯
★ হাইসাম আল কিলাবি, ৭২৯-৭৩০
★ মুহাম্মাদ আল আশজায়ি, ৭৩০
★ আব্দুর রহমান গাফিকি, ৭৩০-৭৩২ (২য় বার)
★ আব্দুল মালিক আল ফিহরি, ৭৩২-৭৩৪
★ উকবা ইবনে হাজ্জাজ, ৭৩৪-৭৪০ (কোনো কোনো মতে, ৭৩৭-৭৪২)
★ আব্দুল মালিক আল ফিহরি, ৭৪০-৭৪২ (কোনো কোনো মতে, আব্দুল মালিক একবারই শাসন করেন ৭৩২-৭৩৭ এবং উকবা ৭৩৭-৭৪২ পর্যন্ত)
★ বালজ আল কুশাইরি, ৭৪২
★ সালাবা আল আমালি, ৭৪২-৭৪৩
★ আবুল খাত্তার আল কালবি, ৭৪৩-৭৪৫
★ ছুওয়াবা আল জুযামি, ৭৪৫-৭৪৬
★ আব্দুর রহমান আল লাহমি, ৭৪৬-৭৪৭
★ ইউসুফ আল ফিহরি, ৭৪৭-৭৫৬
৭৫৬ এর ১৫ই মে "প্রথম আব্দুর রহমান" ইমারতে কুরতুবা প্রতিষ্ঠা করেন।
ইমারতে কুরতুবার আমিরগণ :
★ আব্দুর রহমান (১ম), ৭৫৬–৭৮৮
★ হিশাম (১ম), ৭৮৮–৭৯৬
★ হাকাম (১ম), ৭৯৬–৮২২
★ আব্দুর রহমান (২য়), ৮২২–৮৫২
★ মুহাম্মাদ (১ম), ৮৫২–৮৮৬
★ মুনযির, ৮৮৬–৮৮৮
★ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ, ৮৮৮–৯১২
★ আব্দুর রহমান (৩য়), ৯১২–৯২৯
১৬ই জানুয়ারি ৯২৯ এ তৃতীয় আব্দুর রহমান কুরতুবা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।
খিলাফতে কুরতুবার খলীফাগণ:
★ আব্দুর রহমান (৩য়), ৯২৯-৯৬১
★ হাকাম (২য়), ৯৬১–৯৭৬
★ হিশাম (২য়), ৯৭৬–১০০৮
★ মুহাম্মাদ (২য়), ১০০৮–১০০৯
★ সুলাইমান ২য়, ১০০৯–১০১০
★ হিশাম (২য়), ১০১০–১০১২ (২য় বার)
★ সুলাইমান (২য়), ১০১২–১০১৬ (২য় বার)
★ মুই'তি, (দানিয়ায়), ১০১৪–১০১৬
★ আব্দুর রহমান (৪র্থ), ১০১৭
★ আলি ইবনে হাম্মুদ আন-নাসির, ১০১৬–১০১৮
★ কাসিম ইবনে হাম্মুদ আল মা'মু, ১০১৮–১০২১
★ ইয়াহইয়া ইবনে আলি ইবনে হাম্মুদ আল-মু'তালি, ১০২১–১০২৩
★ কাসিম ইবনে হাম্মুদ আল মা'মু, ১০২৩ (২য় বার)
★ আব্দুর রহমান (৫ম), ১০২৩–১০২৪
★ মুহাম্মাদ (৩য়), ১০২৪–১০২৫
★ ইয়াহইয়া ইবনে আলি ইবনে হাম্মুদ আল-মু'তালি, ১০২৫–১০২৬ (২য় বার)
★ হিশাম (৩য়), ১০২৬–১০৩১
উল্লেখিত খলীফাগণের মাঝে "হাম্মুদ" শব্দ থাকা খলীফাগণ হাম্মুদি খলীফা নামে পরিচিত। বাকিরা উমাইয়া। (এখানেও অনেক ভাঙ্গাগড়ার ঘটনা পরতে পরতে লুকিয়ে আছে...)
১০৩১ সালে উমাইয়া খেলাফত ভেঙে টুকরো টুকরো রাজ্যে পরিণত হয়। এই রাজ্যগুলো ইতিহাসে "তাইফা" নামে পরিচিত।
















*** এক নজরে আন্দালুসে আমাদের কাল *** (২য় পর্ব)
১০১০ সাল থেকেই আন্দালুসে উমাইয়া খেলাফত বিভিন্নভাবে ভাঙ্গতে থাকে এবং ১০৩১ সালে সম্পূর্ণই ভেঙ্গে যায়।
পরবর্তী যুগকে চারভাগ করা যায়।
১. তাইফা; তাইফা বিভক্ত অঞ্চলগুলোকে বলা হয়ে থাকে। এই যুগকে আন্দালুসের ফিতনার যুগও বলা হয়ে থাকে।
২. মুরাবিতিন।
৩. মুওয়াহহিদিন।
৪. ফিতনার যুগ।
★ তাইফাগুলোর তালিকা;
* তাইফা পশ্চিম শিন্তমুরিয়া, ১০১১-১১০৪
* তাইফা খাদ্বরা উপদ্বীপ, ১০৩৫-১০৫৭
* তাইফা আলমুরিয়া, ১০১১-১০৯১
* তাইফা আলবুনাত, ১০০৯-১১০৬
* তাইফা আরকুশ, ১০১১-১০৬৮
* তাইফা বাতলিউস, ১০০৯-১০৯৪
* তাইফা কারমুনা, ১০১৩-১০৯১
* তাইফা সাবতা, ১০৬১-১০৮৪
* তাইফা কুরতুবা, ১০৩১-১০৯১
* তাইফা দানিয়াহ এবং শারকি উপদ্বীপ, ১০১০-১০৭৬
* তাইফা গারনাতাহ, ১০১৩-১০৯০
* তাইফা খিরিকা, অজানা
* তাইফা লিশবুনা, ১০২২- তাইফা বাতলিউসের সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত।
* তাইফা লুরকা, ১০৫১-১০৯১
* তাইফা মালাকা, ১০২৬-১০৫৮
* তাইফা মাইউরিকা, ১০১৮-১২০৩
* তাইফা মিরতুলা, ১০৩৩-১০৯১
* তাইফা মুলিনা, খেলাফত থেকে আলাদা হওয়া থেকে ১১০০ ঈসাব্দ
* তাইফা মুরুর, ১০১৩-১০৬৬
* তাইফা মার্সিয়া, ১০১১-১০৬৫
* তাইফা সাগুন্তু, ১০৮৬-১০৯২
* তাইফা লিবলা, ১০২৩-১০৯১
* তাইফা রুনদা, ১০৪০-১০৬৫
* তাইফা রাওইদা, ১১১৮-১১৩০
* তাইফা ওইলবা ও শালতিস উপদ্বীপ, ১০১২-১০৫৩
* তাইফা পূর্ব শিন্তমুরিয়া, ১০১৮-১০৫১
* সিজুরবি, ১০৬৫-১০৭৫
* তাইফা ইশবিলিয়া, ১০২৩-১০৯১
* তাইফা শিলব, ১০৪০-১০৬৩
* তাইফা তালিতা, ১০১০-১০৮৫ (কোনো কোনো মতে, ১০৩১ থেকে ১০৮৫)
* তাইফা তরতুশা, ১০৩৯-১০৬০
* তাইফা বালানসিয়া, ১০১০-১০৯৪
* তাইফা সারকাস্তা, ১০১৮-১১১৮
আলফানসু ষষ্ঠকে প্রতিহত করতে তাইফা ইশবিলিয়ার আমির মুতামিদ দাউলাতুল মুরাবিতিনের আমির ইউসুফ বিন তাশফিনকে আন্দালুসে আনলে সেই ধারাবাহিকতায় আন্দালুস মুরাতিবিন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। যা মোটামুটি ১১৪৭ পর্যন্ত থাকে। তারপর মুওয়াহহিদিনরা আগমন করে তারা ১২৪৮ পর্যন্ত আন্দালুসিয়ায় ক্ষমতা আকড়ে থাকে। এরপর আবার উপরোক্ত তাইফাগুলোই একক বা একাধিক মিলে ছোট ছোট রাজ্য সৃষ্টি করে। (মুরাবিতিন ও মুওয়াহহিদিন যুগেও এর ধারা অব্যাহত ছিল।) এর মধ্যে ইমারাতু গারনাতাহ ১২৩০-১৪৯২ পর্যন্ত মৌলিকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল এবং ছিল আন্দালুসের তৎকালীন মুসলমানদের শেষ সেই....... খড়কুটা......
* উল্লেখ্য, নামগুলো আরবি থেকে অনুবাদ করেছি। কুরতুবা, ইশবিলিয়া, তালিতা, তরতুশা, বালানসিয়া, গারনাতাহ, লিশবুনা যথাক্রমে কর্ডোভা, সেভিল, টলেডো, টরটোসা, ভ্যালেন্সিয়া, গ্রানাডা, লেসবনের আরবিরূপ। অন্যান্যগুলোও এরূপ পার্থক্য থাকতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ আমার নজর খুবই ছোট। এক নজরে দেখেছি। ভুলত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। ভুল ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো। আর বিনয় নয়, প্রকৃত সত্য হলো- আমি আন্দালুসের তারিখের উপরে প্রাথমিক ছাত্র।
আর আন্দালুস পুনরুদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা সেই পুরনো কাফেলার এক নগণ্য যাত্রী.......
ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ...
  • ভাই আবু দাউদ

আল-আন্দালুস: আমাদের হারানো ফিরদাওস:৭
আন্দালুসেও খিলাফাহ ছিলো। ১০২০ থেকে ১০৩০ খ্রিস্টাব্দ। এই এক দশকের মধ্যেই খিলাফাহ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রধান কারণ ছিলো দু‘টি:
ক: বারবার জাতির বিদ্রোহ।
খ: গোত্রীয় রাজাদের উদ্ভব।
.
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ১২টারও বেশি নগররাষ্ট্র জন্ম নিয়েছিল: গ্রানাডা। ইশবীলিয়া। আলমেরিয়া। ভ্যালেন্সিয়া। তুলাইতালা। সুরকুস্তাহ। আলবারাযীন। বিতলিউস।
এরা একে অপরের সাথে নিরন্তর লড়াইয়ে লেগেই থাকতো।
.
ইশবীলিয়া ও তুলাইতালাহর শাসকরা চড়াও হয়েছিল কুরতুবার শাসকের ওপর। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়েছিল মু‘তামিদ বিন আব্বাদ। তিনি ছিলেন ইশবীলিয়ার শাসক। ১০৭৮ সালে।
.
কুরতুবা হারিয়ে ফেলেছিল এতদিনকার রাজধীনি হিশেবে থাকা অবস্থান। সাথে সাথে খিলাফাহর শেষ চিহ্নটা মুছে গেলো।
-আতিক উল্লাহ









ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস:১৬
কান্নার ৫২৭ বছর
-
*আন্দালুস (স্পেন) আমাদের। আর কারও নয়। আন্দালুস আমাদের ভালোবাসা। আন্দালুস আমাদের হৃদয়ের রানী।
* ২রা জানুয়ারি হলো আন্দালুস হারানো দিবস। আন্দালুস আমাদের থেকে হাতছাড়া হয়েছে ৫২৩ বছর হলো।
*আগামী ২ জানুয়ারী আন্দালুস হারানোর ৫২৩ বছর পূরণ হবে।
*আমরা প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করার চেষ্টা করি। ইসলামে দিবস পালনের সংস্কৃতি নেই। তারপরও আমাদের সুবিধার্থে আমরা এই দিবসটিকে বেছে নিয়েছি। আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়ে থাকি, তা এই :
এক: আমরা বেশি বেশি আন্দালুসের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি।
দুই: সবাই কিছু হলেও স্পেনের ইতিহাস নিয়ে লেখার চেষ্টা করি।
তিন: আমাদের পতনের কারণগুলো বের করার চেষ্টা করি।
চার: আমাদের এই হারানো স্বর্গকে ফিরে পাওয়ার জন করণীয় কি, সেটা বের করার চেষ্টা করি।
পাঁচ: ভবিষ্যতে যাতে আমাদের কোনও মুসলিম দেশ কাফিরদের হাতে চলে যেতে না পারে, তার জন্য কর্মকৌশল নির্ণয় করি।
ছয়: সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু‘আ করি। তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন।
*স্পেন হলো আমাদের হারানো ফিলিস্তিন। আমরা প্রায় আটশ বছর এই দেশ শাসন করেছি। এই দেশের আকাশে-বাতাসে আমাদের কথা ছড়িয়ে আছে।
*আন্দালুস হলো আমাদের নয়নের মণি।
-আতিক উল্লাহ




এক চুমুকে ইতিহাস: ৩৮
---
আন্দালুস বিজেতা মুসা বিন নুসাইর (রহ.) এর একটা পা ছিল খোঁড়া।
.
প্রতিবন্ধীত্ব সত্ত্বেও নিজেই সেনাবাহিনির নেতৃত্ব দিতেন। স্বয়ং ময়দানে উপস্থিত থেকে জিহাদে অংশ নিতেন। এভাবে ৮০ বছর বয়েস পর্যন্ত।
.
তিনি জীবনে একটা যুদ্ধেও হারেন নি। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন:
-জন ও জীবন সঙ্গ দিলে, আমি পুরো রোম সা¤্রাজ্য জয় করে ফেলতে পারবো। ইনশাআল্লাহ।
-আতিক উল্লাহ












একনজরে ইতিহাস (হারানো ফিরদাওস):১
-
আন্দালুস ছিল আমাদের অমূল্য রত্ন। অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এক ফিরদাওস। আন্দালুসের পরতে পরতে মিশে আছে:
তারীফ বিন মালিকের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ।
তারিক বিন যিয়াদের দৃঢ়-সংকল্প।
মুসা বিন নুসাইরের অবিচলিত ঈমান।
আবদুর রহমান দাখিলের দুঃসাহস।
আবদুর রহমান গাফেকীর উচ্চাশা।
সামাহ বিন মালিক খাওলানীর অকুতোভয় শৌর্য।
ইউসুফ বিন তাশাফীনের দৃঢ়চিত্ততা, মহানুভবতা।
.
৯২ হিজরী থেকে ৮৯৭ হিজরী। প্রায় আট শ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের ইতিহাসকে মোট দশটা স্তরে ভাগ করা হয়।
প্রথম ভাগ: ৯২-১৩৮ হিজরী।
৯২ হিজরীতে শুরু হয় আন্দালুস জয়ের অভিযান। উমাইয়া খিলাফাহর একটা প্রদেশের মর্যাদা পায় আন্দালুস। বীর মুজাহিদ বাহিনী আন্দালুসে অভিযান চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৩৮ হিজরীতে উমাইয়া খিলাফাহর বিলুপ্তি হয়। আব্বাসীদের হাত থেকে পালিয়ে আবদুর রহমান দাখিল আন্দালুসে প্রবেশ করেন। শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
.
দ্বিতীয় ভাগ: ১৩৮-২৩৮ হিজরী।
আগে আন্দালুস ছিল উমাইয়া খিলাফার অধীন একটা প্রদেশ। এবার হলো স্বাধীন রাষ্ট্র। নতুন করে বিজয় অভিযান শুরু হয়। আন্দালুস আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে উন্নতি ও উৎকর্ষের দিকে।
.
তৃতীয় ভাগ: ২৩৮-৩০০ হিজরী।
অবনতি ও বিভক্তির যুগ। এটা অব্যাহত থাকে আবদুর রহমান নাসিরের শাসনকালের সূচনা পর্যন্ত।
.
চতুর্থ ভাগ: ৩০০-৩৬৮ হিজরী।
আন্দালুসে ঐক্য পুনরুদ্ধার। খিলাফতের ঘোষণা।
.
পঞ্চম ভাগ: ৩৬৮-৩৯৯ হিজরী। উযীর ও আমীরদের ক্ষমতার ভাগাভাগি। আমেরী সালতানাতের প্রতিষ্ঠা।
.
ষষ্ঠ ভাগ: ৩৯৯-৪২২ হিজরী
দ্বিতীয় অধঃপতন যুগের সূচনা। উমাইয়া বংশীয় শাসনের সমাপ্তি।
.
সপ্তম ভাগ: ৪২২-৪৮৪ হিজরী।
তওয়ায়েফ বা গোত্রীয় শাসকদের যুগ। আন্দালুসের প্রায় বড় শহরকে কেন্দ্র করেই একটা নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।
.
অষ্টম ভাগ: ৪৮৪-৫৩৯ হিজরী।
মুরাবিতীনের যুগ।
.
নবম ভাগ: ৫৩৯-৬২০ হিজরী।
মুয়াহহিদীনের যুগ।
.
দশম ভাগ: ৬২০-৮৯৭ হিজরী।
বনু আহমার ও বনু নাসরের রাষ্ট্র। মুসলিম শাসনসীমা শুধু গ্রানাডায় সংকোচন। মুসলিম শাসনের অবলুপ্তি।
-আতিক উল্লাহ









এক চুমুকে ইতিহাস: ১৩৮
-
আন্দালুস বিজয় হয়েছিল উমাইয়া খিলাফতকালে। কিন্তু চিন্তাটা প্রথম শুরু হয়েছিল উসমান রা. আমলে। মুসলিম বাহিনী তৃতীয় খলীফার আমলে কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। অবরোধও করেছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। তখন উসমান (রা.) বলেছিলেন:
-সাগর জয়ের আগে, কনস্টান্টিনোপল বিজয় সম্ভব নয়। তোমরা যখন আন্দালুস জয় করবে, তবে তোমরাও শেষ যমানায়, কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সওয়াবে অংশীদার থাকবে।
.
উকবা বিন নাফে ৬৩ হিজরীতে চেষ্টা করেছিলেন সাগর পার হতে। তবে চেষ্টাটা সফল হয়নি।
.
চিন্তাটার যথার্থ বাস্তবায়ন ঘটেছিল উমাইয়া খলীফা ওলীদ বিন আবদুল মালিকের আমলে। খলীফা আর মুসা বিন নুসাইর বসে আন্দালুস বিজয়ের একটা রোডম্যাপ তৈরী করেছিলেন।
-আতিক উল্লাহ










জিলহজ্জ, হিজরী সনের শেষ মাস। আজ ২৮ তারিখ। ২৯, ৩০; আর মাত্র দুইদিন পরেই শেষ হতে যাচ্ছে হিজরী ১৪৩৯ সনের। শুরু হবে ১৪৪০ হিজরী সাল। ইসলামে বছর শেষে বা নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে কোন সুন্নাহ বা কালচারাল প্রোগ্রাম বা অন্যকোন দায়িত্ব নেই। যা আছে হিজরী বর্ষ ও মাস গণনার দায়িত্ব।
“তিনি সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোময়। অতঃপর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন কিছু মনজিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছর গণনা এবং দিন-তারিখের হিসাব” (ইউনুস : ৫)
আমরা চাঁদ ও সূর্যের মাধ্যমে বছর গণনা করে থাকি।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে কালেমা ছাড়া বাকি চারটি স্তম্ভ আমলের উপর নির্ভরশীল। এরমধ্যে নামাজই কেবল সূর্যের সাথে সম্পৃক্ত। অন্য তিনটি সিয়াম, হজ্ব ও যাকাত চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। কখন রমাদান শুরু করতে হবে, কখন কুরবান, আশুরা, আইয়ামে বীজের রোযা হবে, কখন যাকাত ফরজ হবে ইত্যাদি চাঁদই বলে দেয়। নামাজ ব্যতীত আমাদের অন্যান্য ধর্মীয় কাজগুলো চাঁদের উপরই নির্ভরশীল।
-
সৌরবর্ষের মাসের নামগুলো রোমানদের বিভিন্ন শয়তান ও সম্রাটের প্রতীক। যেমন ‘জানুয়ারি’ নামটি দেওয়া হয়েছে ‘জানুস’ নামের শয়তানের সম্মানে। রোমানদের মতে, ‘জানুস’ এর ছিল দুটি মুখ। একটি সামনে, অন্যটি পেছনে। একটি মুখ তাকিয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, অন্যটি বিদায়ী অতীত পানে। তাই জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস করা হয়েছে। তাই তারা জানুসকে খুশি করতে বর্ষবিদায় ও নববর্ষের আগমনে ঘটা করে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অনুষ্ঠান পালন করে। মুসলিমরাও বর্ষবিদায় ও নববর্ষের ইহুদি সংস্কৃতিতে নিজেদের বেশ জড়িয়ে নিয়েছে। নবী (স) এমনে এমনে বলেননি যে, “যে তাদের অনুসরণ করবে, সে তাদেরই একজন।”
এছাড়াও সাপ্তাহিক দিনের নামও বিভিন্ন শয়তানের পরিচয় বহন করে। যেমন- স্যাটারডে বা শনিবার; রোমানরা বিশ্বাস করত যে, চাষাবাদের জন্য ‘স্যাটান’ নামের একজন শয়তান আছে, যে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে। তাই তার সম্মানার্থে সপ্তাহের একটি দিনের নাম স্যাটারডে রাখা হয়।
-
মুসলমান হিসেবে হিজরী সাল ও মাসের সাথে আমাদের ব্যাপক পরিচয় থাকার কথা ছিল। মুহাররম, রমাদান, যুলকা’দা, যুলহাজ্জ্বা; কী সুন্দর নাম।
সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা শনিবার, রবিবার, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এইসব নামগুলো পাল্টে ফেলব এবং তৎপরিবর্তে ফেরেশতাদের নাম, সাহাবাগণের নাম, ঐতিহাসিক যুদ্ধের নাম বা এমন কোন নাম রাখব, যা ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের পরিচয় বহন করবে।
এবং তার প্রস্তুতি শুরু হোক ১৪৪০ হিজরী সাল থেকে। এখন থেকে আপনি নিজে ও আপনার পরিবারে হিজরী মাসকে আবার পরিচয় করিয়ে দিন এবং তার চর্চা করুন।
-মুহাম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম













আল-আন্দালুস: আমাদের হারানো ফিরদাওস:১০
কর্ডোভা আমাদের ছিল। কর্ডোভার জামে মসজিদ আমাদের ছিল। এখন নেই। সেটা আর মসজিদও নেই। গীর্জায় রূপান্তরিত হয়েছে।
শত শত বছর ধরে সেখান তিন খোদার পূজা হচ্ছে। এক আল্লাহর ইবাদত সেখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু ১৯৭৭ সালে ঘটেছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। তৎকালীন বিশপ ছিলেন একজন উদার মানসিকতার মানুষ। বাদশাহ ফয়সলের স্পেন সফর। জেনারেল ফ্রাংকোর ব্যক্তিগত আগ্রহ সব মিলিয়ে একবার জামাতে নামায পড়ার অনুমতি দেয়া হয়।
বর্তমানে সেখানে একাকী নামায পড়াকেও অপরাধ হিশেবে গন্য করা হয়। নিচের ছবিটা দুর্লভ এক ঘটনার স্বাক্ষী! আমাদের মসজিদ কেঁদে কেঁদে ডাকছে! সাচ্চা মুমিনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে!
-আতিক উল্লাহ




অান্দালু‌সের খিলাফা‌তের বারাকাতঃ
বাদশাহ হাকাম বিন হিশাম ও কাজীঃ
উমাইয়্যা বং‌শোদ্ভূত হাকাম বিন হিশাম ছি‌লেন মুস‌লিম স্পে‌নের সুদক্ষ শাসক।তি‌নি খুবই উন্নত চ‌রি‌ত্রের অ‌ধিকারী ছি‌লেন।তা‌কে নি‌য়ে সামান্য একটু অা‌লোকপাত করার চেষ্টা।
একবার তাঁর একজন কর্মচারী কো‌নো এক ব্য‌ক্তির বাঁদী‌কে জোরপূর্বক হস্তগত ক‌রে এবং উপহার হি‌সে‌বে বাদশাহ হাকা‌মের দরবা‌রে পা‌ঠি‌য়ে দেয়।ক্ষ‌তিগ্রস্ত লোক‌টি কাজীর নিকট বাদশা‌হের বিরু‌দ্ধে মামলা ক‌রে দেন।
বিচারক বাদশাহ হাকাম‌কে অাদাল‌তে হাজির হওয়ার নি‌র্দেশ দি‌লেন।বাদশাহ কাজীর দরবা‌রে হাজির হ‌লেন।কাজী অা‌দেশ ক‌রলেন-
"‌বিচার ঐ পর্যন্ত সুষ্ঠু হ‌বে না,যতক্ষন পর্যন্ত না ঐ বাঁদী‌কে হাজির করা‌নো হয়।হয়ত কৃতদাসী‌কে হা‌জির করুন,না হ‌লে অামা‌কে এ পদ থে‌কে অপসারণ করুন।"
হাকাম বল‌লেনঃএর চে‌য়ে উত্তম ব্যবস্থা কী নেই ?
কাজী বল‌লেনঃ সেটা কী?
হাকাম বল‌লেনঃদাসীর প্রকৃত মা‌লিক থে‌কে তা‌কে অ‌ধিক মূ‌ল্যে ক্রয় করা যে‌তে পা‌রে।
কাজী বল‌লেনঃসমস্ত সাক্ষী প্রস্তুত এবং সমস্ত প্রমাণা‌দি উপস্থা‌পিত।অতএব,এখন অার কো‌নো ক্রয়-‌বিক্র‌য় চল‌তে পা‌রে না।এখন শুধু ন্যায়‌বিচার কার্যকর করার সময় অামা‌দের হা‌তে র‌য়ে‌ছে।এখন প্রকৃত হক্বদার‌কে তার হক্ব বু‌ঝি‌য়ে দেওয়ার সময়।
বাদশাহ হাকাম কাজী সা‌হে‌বের অা‌দেশ মা‌ফিক তাঁর শাহী মহল থে‌কে অা‌লোচ্য কৃতদাসী‌কে নি‌য়ে অাসার হুকুম দি‌লেন।তাৎক্ষ‌ণিকভা‌বে দাসী‌কে কাজীর সম্মু‌খে হা‌জির করা হল।সাক্ষ্য-প্রমাণের ভি‌ত্তি‌তে কাজী সা‌হেব রায় দি‌লেন,
"দাসী‌টি‌কে তার পূ‌র্বের মা‌লি‌কের নিকট ফেরত দেওয়া হোক।"
দাসী তাঁর পূ‌র্বের মা‌লি‌কের নিকট ফেরত গে‌লো।
কাজীর এ ন্যায়‌বিচার ও অপূর্ব সাহ‌সিকতার রোমাঞ্চকর কা‌হিনী যুগ যুগ ধ‌রে স্পেনবাসীরা তাঁ‌দের পরবর্তী বংশধর‌দের নিকট গর্ব সহকা‌রে বর্ণনা ক‌রে থা‌কে।
অাহ!যখন খিলাফাত ছিল,তখন হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ ছিল সবর্প্রথম পালনীয়।এর রক্ষণা‌বেক্ষ‌ণে খ‌লিফা পর্যন্ত নি‌জের গর্দান‌কে ঝু‌কি‌য়ে দি‌তেন!‌
কিন্তু উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক ও অন্যতম মাধ্যম খিলাফাহ যখন বিলুপ্ত হল,তখন দু‌নিয়াটা হল উম্ম‌তের জন্য স‌ত্যিকার বসবা‌সের অযোগ্য জায়গা!
  • তাসজিদ আহসানি











আন্দালুস নিয়ে আল্লামা ইকবালের কবিতা।
ہسپانیہ تُو خُونِ مسلماں کا امیں ہے
مانندِ حرم پاک ہے تُو میری نظر میں
پوشیدہ تری خاک میں سجدوں کے نشاں ہیں
خاموش اذانیں ہیں تری بادِ سحَر میں
روشن تھیں ستاروں کی طرح ان کی سنانیں
خیمے تھے کبھی جن کے ترے کوہ و کمر میں
پھر تیرے حسینوں کو ضرورت ہے حِنا کی؟
باقی ہے ابھی رنگ مرے خُونِ جگر میں!
کیونکر خس و خاشاک سے دب جائے مسلماں
مانا، وہ تب و تاب نہیں اس کے شرر میں
غرناطہ بھی دیکھا مری آنکھوں نے و لیکن
تسکینِ مسافر نہ سفر میں نہ حضَر میں
دیکھا بھی دِکھایا بھی، سُنایا بھی سُنا بھی
۔ ہے دل کی تسلّی نہ نظر میں، نہ خبر میں







আল-আন্দালুস: আমাদের হারানো ফিরদাওস:৮
এমন মনকাড়া, হৃদয়ছোঁয়া, উদাসকরা ছবিটা দেখে: একটুও কি মনটা কাঁদে না!
১৪৯২ সালে, ৫২৪ বছর আগে, আমরা এটাকে হারিয়েছিলাম। এই দিনে। ২রা জানুয়ারী।
ইনশাআল্লাহ! আমাদের এই নাড়িছেঁড়া ধন, আবার আমাদের হবে!
সানাখূযু মা‘আরিকানা মা‘আহুম!
ওয়া আন্দালুসাহ! ও আমার আন্দালুস! – আতিক উল্লাহ




।। আন্দালুস বিষয়ক পিডিএফ বই সংকলন ।।
.
মুসলিম স্পেনের রাজনৈতিক ইতিহাস - www.pathagar.com/book/detail/1694
সৈয়দ ইসমাইল হোসেইন সিরাজী রচিত বই স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা- https://bn.wikisource.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%B8%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A6%BE
নিবন্ধঃ গ্রানাডা ট্র্যাজেডি: মুসলিম মিল্লাত এখনো সেই তিমিরেই - http://www.pathagar.com/article/detail/26
.
উপন্যাসঃ
১. স্পেনের রুপসী কন্যা ১ম ও ২য় খণ্ড (আলতামাশ) - http://www.pathagar.com/book/detail/1506
http://www.pathagar.com/book/detail/1507
২.আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে (আলতামাশ) - http://www.pathagar.com/book/detail/1475
৩ সীমান্ত ঈগল (নসীম হিজাজী) - http://www.pathagar.com/book/detail/746
৪ ইউসুফ বিন তাশফিন (নসীম হিজাজী) - http://www.pathagar.com/book/detail/750
৫ শেষ বিকেলের কান্না (নসীম হিজাজি) - http://www.pathagar.com/book/detail/745
৬ কর্ডোভার অশ্রু (সাইমুম ১২) - saimumseries.com%2F12.pdf&usg=AOvVaw0_j-NG-Q4X0y0HZ_lCMYcl&fbclid=IwAR00G7XEAUtTBEaN_eM5pfOP8JBzhCJ1YVAubcLMMJDpbz3feJtDpLXudq0








হে আন্দালুস,
তোমার প্রেমিকেরা আসছে,
শীঘ্রই আসছে, খুব শীঘ্রই (ইনশা-আল্লাহ্‌)……

No comments:

Post a Comment