Thursday, February 27, 2020

আওয়ার ইসলাম ‘ইসলাম প্রতিদিন’ বিভাগ - খণ্ড ১ (১ম অংশ)




আওয়ার ইসলাম
ইসলাম প্রতিদিন বিভাগ


খণ্ড ১
























শিশুদের প্রতি মহানবীর ভালোবাসা
OURISLAM24.COM

news-image

মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক : শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা ছিলো অগাধ ও অসীম। রহমতের নবীর প্রীতিময় সোহাগের প্রতিটি বিন্দু অবারিত ছিলো তাদের জন্যে। এমনিতেই তো নবীজির ভালোবাসার উপচে পড়া সিন্ধু ছোট-বড় প্রত্যেকের জন্যে উম্মুক্ত ছিলো। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সেই ভালোবাসার প্রাবল্য যেনো আরো বেশি হয়ে ওঠতো। সীরাতের বইগুলোতে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা সমুজ্জ্বল হয়ে আছে আপন বিভায়। সংখ্যা গুণে নয়, সেখান থেকে মনে ধরেছে, এমন কয়েকটি সুচয়িত গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
আমরা আমাদের যাপিত জীবনে দেখতে পাই, অনেক বাবাই তার সন্তানের জন্যে মুখিয়ে থাকেন না। শিশুর পাশ দিয়ে অনেক বড়কে দেখা যায় হেঁটে যাচ্ছেন নির্বিকার চিত্তে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলবৎ এমন ছিলেন না। কোনো শিশুকে দেখলে তিনি প্রাণবন্ত উচ্ছল না হয়ে পারতেন না। স্নেহের আঁচল ছড়িয়ে কাছে টেনে নিতেন। বুকের মমতায় সিক্ত করতেন। ভালোবাসার প্রীতিময় বাহুডোরে জড়িয়ে রাখতেন।
নবীজির প্রতি মদীনার শিশুদের ভালোবাসাও ছিলো অন্য রকম। পথের মোড়ে, বাড়ির ধারে নবীজির প্রতি দৃষ্টি পড়লেই তারা ছুটে আসতো। কোলে ওঠার বায়না ধরতো। কতোরকম দুষ্টুমিতে মেতে ওঠতো।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়িতে এসে হাসান ও হুসাইনের সঙ্গে খেলা করতেন। প্রিয় নানাজানকে ওরাও খেলায় শরিক করে নিতো। সেজদারত নবীজির পিঠে দুভাই এসে বসে যেতো। অশ্ব বানিয়ে দাপিয়ে বেড়াতো। নামাযরত নবীজি অপেক্ষা করতেন, সংযম প্রদর্শন করতেন। তাদের নিজ ইচ্ছায় পিঠ থেকে নেমে যাওয়ার অপেক্ষায় থেমে থাকতেন।
নামায শেষে নবীজিও তাদের সঙ্গে শিশুসুলভ খেলায় মেতে ওঠতেন। বালখিল্যতা করতেন। তাদের এই দুষ্টুমির জন্যে কখনো তিনি চোখ বড় করেননি। রুক্ষ শব্দ বলেননি। বরং তাদের প্রতিটি আচরণ উপভোগ করতেন।
হয়তো কেউ ভাবছো, আদরের কন্যা ফাতেমার সন্তান হওয়ার কারণে তাদেরকে তিনি ভালোবাসতেনযেমনটি দেখা যায়, প্রত্যেক দাদা-দাদী, নানা-নানী নিজ দৌহিত্রদের সঙ্গে খুন-সুটি করে থাকেন। এমনটি আদৌ নয়। নবীজির ভালোবাসা কোনো আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়তো না। রক্ত ও আত্মীয়তার ব্যবধান ডিঙিয়ে তাঁর ভালোবাসা ছিলো প্রতিটি কোমলমতী শিশুর জন্যে। সব শিশুকেই তিনি সমান স্নেহের চোখে দেখতেন। আর ছেলেশিশু কি মেয়েশিশুএ পার্থক্যের তো প্রশ্নই ওঠে না।
তাই তো দেখতে পাই, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন নামায শেষে উপস্থিত লোকদের বলছেন― ‘আমি অনেক সময় ছোট্ট শিশুর কান্নার কারণে নামায সংক্ষিপ্ত করে ফেলি
কারণ, শিশুর কান্না নবীজির প্রাণে বিঁধতো। আল্লাহঅন্ত মন নিয়ে নামাযে দাঁড়ানো সত্ত্বেও শিশুর কান্না শোনতেই অস্থির হয়ে ওঠতেন। কখন নামায শেষ করবেন, কখন শিশুটিকে জড়িয়ে ধরবেন, কখন তাঁর চোখের লোনা অশ্রুর মুক্তোসদৃশ্য দানাগুলো মুছে দেবেনসেই ব্যাকুলতায় প্রিয় নামাযকেও সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন।
হয়তো তোমাদের কেউ ভাবছে, নবীজি বুঝি শুধু কান্নারত শিশুর জন্যেই হৃদয়ের তারল্য অনুভব করতেন। এমনটি আদৌ নয়। বরং নবীজি ছোট্ট শিশুকেও প্রাপ্য সম্মান জানাতে ভুলতেন না। হযরত আনাস বিন মালিক রাদি. বলেননবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম জানাতেন।
তিনি বলেননবীজিকে আমি সবসময় শিশুদেরকে সালাম দিতে দেখেছি। কোনো দিন তার এ আচরণে ব্যত্যয় ঘটতে দেখিনি। তিনি তাদের সম্ভাষণ জানাতেন। এগিয়ে এসে জড়িয়ে নিতেন। তাদের ভালোবাসতেন। প্রাপ্য সম্মানটুকু জানাতে কোনো দিন কার্পণ্য করতে দেখিনি।
শিশুদের প্রতি নবীজির অসাধারণ মমত্ববোধের কথা সাহাবায়ে কেরাম জানতেন। এ কারণে নবীজি যখন কোনো যুদ্ধ বা সফর শেষে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তারা নবীজিকে অভ্যর্থনা জানাতে শিশুদের পাঠিয়ে দিতেন।
বাড়ি ছেড়ে এতো দূর চলে আসা শিশুদের দেখে নবীজি স্থির থাকতে পারতেন না। নিজে বাহন থেকে নেমে আগত শিশুকে কোলে তুলে নিতেন। এরপর তাকে পেছনে বসিয়ে মদীনার দিকে যাত্রা করতেন। সৌভাগ্যের বাতাবরণে এভাবে তিনি তাদের জড়িয়ে রাখতেন।
মনে পড়ে, মককা থেকে হিজরত করে নবীজি মদীনার প্রান্তসীমায় চলে এসেছেন। নবীজির অভ্যর্থনায় গোটা মদীনা ভেঙে পড়েছে। শিশুরা একসঙ্গে গেয়ে ওঠেছে
ত্বলাআলা বাদরু আলাইনা
মিন সানিয়্যাতিল ওয়াদা‘….
ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা
মাদাআ লিল্লাহি দা‘….
অভ্যর্থনারত শিশুদের দেখে নবীজির কোমল প্রাণ চঞ্চল হয়ে ওঠেছিলো। তিনি হৃদয় ভরে তাদেরকে দুআ দিয়েছিলেন। এই শিশুরাই তো পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন ইতিহাসের একেকজন মহানায়ক। তাদের হাত ধরেই তো সম্পন্ন হয়েছিলো মককা বিজয়।তাদের মাধ্যমেই তো পতপত করে গোটা দুনিয়াতে উড্ডীন হয়েছিলো ইসলামের বিজয়কেতন।
শিশুদের প্রতি নবীজির ভালোবাসার একগুচ্ছ গল্প বললাম। যেখানে নবীজি তাদেরকে ভালোবেসেছেন। সম্মান দিয়েছেন। হৃদয়ের কোমলতায় জড়িয়ে নিয়েছেন। নিজের বাহনে তুলে নিয়েছেন। গায়ের ধুলো-বালি ঝেড়ে দিয়েছেন। খেলা করেছেন।
তাদেরকে তিনি সাত বছর বয়সে নামায পড়তে শিখিয়েছেন। ঈমানের আলোয় দীক্ষিত করেছেন। আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হতে শিখিয়েছেন। রহমতের নবী মানবতার ছবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ভালোবাসাই তো তাঁকে করে তুলেছে মহান। যেই শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় দ্বিতীয় কেউ নেই।






তার সাথে সংসার করতে পারছি না
OURISLAM24.COM

news-image

রাসুলুল্লাহ বলেছেন : তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? মহিলা বলল: হ্যা। পরে সে বাগানটি ফেরত দিল, আর রাসুলুল্লাহ , তাকে তালাক দেওয়ার জন্য তার স্বামীকে নির্দেশ দিলেন। ইবরাহীম ইবনু তাহমান খালিদ থেকে, তিনি ইকরামা থেকে তিনি নাবী থেকে তাকে তালাক দাও কথাটিও বর্ননা করেছেন। অন্য বর্ননায় ইবনু আবূ তামীমা ইকরামা সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ সাবিত ইবনু কায়স- (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসুলুল্লাহ -এর নিকট এসে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ সাবিতের দ্বীনদারী ও চরিত্র সম্পর্কে আমি কোন দোষ দিচ্ছি না তবে আমি তার সাথে সংসার জীবন যাপন করতে পারছি না। রাসুলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যা।
হাদিস নং : 4895


মাযহাব কেন মানবো?
OURISLAM24.COM

প্রশ্ন :
আসসালামু আলাইকুম।
কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে নিজের জীবন গড়তে চাই। কিন্তু বিভিন্ন আলেমের মত বিভিন্ন। তাই কারো কথাই না শুনে শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী যতটুকু জানি আমল করি। আর জানার চেষ্টায় আছি। কিন্তু কুরআন ও হাদীসে এখনো পর্যন্ত মাযহাব অনুসরণ নিয়ে কিছু দলীল পাইনি। দলীল থাকলে জানাবেন।
যদি চার ইমাম/মাযহাব মানা প্রমাণিত হয়, তাহলে আমাদের চার ইমামের লিখা বইগুলোর নাম বলবেন। সেগুলো পড়ে আমল করার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ।কিন্তু কারো অন্ধ অনুসরণ করবো না।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মাযহাব অর্থ ও এর হাকীকত না জানার কারণে আপনার মনে উক্ত প্রশ্নটি উদয় হয়েছে। মাযহাব মানা ছাড়া ইসলামী শরীয়ত মানা বর্তমান সময়ে অসম্ভব।
মাযহাব মানে পথ। যে পথের গন্তব্য হল কুরআন ও সুন্নাহ।তাছাড়া কুরআন ও হাদীসের সবচেবিশুদ্ধ ব্যাখ্যার নাম হল মাযহাবের ইমামদের সংকলিত ফিক্বহে ইসলামী। তাই মাযহাব মানা মানেই কুরআন ও হাদীসেরই বিধান মানা।
যারা মুজতাহিদ নয়, তারা মাযহাব অনুসরণ ছাড়া কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরিপূর্ণ শরীয়ত মানতেই পারে না। এটি তাদের জন্য অসম্ভব বিষয়।
যেমন অজুর ফরজ কতগুলো? অজু ভঙ্গের কারণ কতগুলো? অজু কতগুলো কারণে মাকরূহ হয়? মুস্তাহাব কতগুলো? অজুর সুন্নাত কতগুলো?
নামাযের শর্ত কতগুলো? নামাযের ফরজ কতগুলো? নামাযের ওয়াজিব কতটি? নামাযের মুস্তাহাব কতগুলো? নামাযের সুন্নত কতগুলো? কতগুলো কারণে নামায মাকরূহ হয়? কতগুলো কারণে নামাযে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়? কতগুলো কারণে নামায ভেঙ্গে যায়? ইত্যাদি বিষয় আলাদা শিরোনাম আকারে, সুনির্দিষ্ট নাম্বারসহ তথা অজু ফরজ চারটি, নামায ভঙ্গের কারণ ১৯টি ইত্যাদি শিরোনাম ও নাম্বারসহ কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান নেই।
তাই একজন সাধারণ মুসলিমের পক্ষে শুধু কুরআন ও হাদীসের অনুবাদ পড়েই এসব বিষয়গুলোর নির্দিষ্ট সংখ্যা বের করে সঠিক পদ্ধদিতে ইবাদত করা সম্ভব নয়।
তাই এমন সাধারণ মুসলিমের কিভাবে দ্বীন পালন করবে?
তাদের জন্য সহজ পথ হল, কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ খাইরুল কুরুনের যেসব মুজতাহিদগণ কুরআন ও হাদীস ঘেটে এসব বিষয়গুলো বের করে দিয়েছেন, তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত অনুসরণ করা। এর নামই হল মাযহাব অনুসরণ।
আর এমন দ্বীন বিশেষজ্ঞকে অনুসরণের কথা কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে নির্দেশ এসেছে। যেমন-
وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ [٣١:١٥]
যে আমার অভিমুখী হয়,তার পথ [মাযহাব] অনুসরণ করবে। [সূরা লুকমান-১৫]
মাযহাব মানে পথ। এ আয়াতে আল্লাহ অভিমুখী তথা কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাযহাব অনুসরণ করার পরিস্কার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
আরেক আয়াতে এসেছে-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢١:٧]
অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। [সুরা আম্বিয়া-৭]
এ আয়াতেও না জানলে, না বুঝলে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করে মানতে বলা হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত মানার নামইতো মাযহাব।
এরকম আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা জ্ঞানীদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুসরণ করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের। আর এভাবে কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণে ইসলামী শরীয়ত মান্য করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ করা।
মাযহাব ছাড়া দুআ রাকাত নামায পড়াও অসম্ভব
মাযহাব ছাড়া পূর্ণ দ্বীন মানা সম্ভব নয়, তাই চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা আবশ্যক।
যেমন দুই রাকাত নামায মাযহাবের অনুসরণ ছাড়া আদায় করা অসম্ভব।
উদাহরণতঃ
রুকু করা ফরজ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
রুকুর তাসবীহ পড়া সুন্নত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
রুকুতে গমণের সময় ইমাম জোরে তাকবীর বলে আর মুসল্লি আস্তে তাকবীর বলে। এ মাসআলা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ তা নামাযের মাসআলা। ইমাম যে জোরে তাকবীর বলে, আর মুসল্লি সর্বদা আস্তে আস্তেই তাকবীর বলে এভাবে আমল করার দ্বারা নামায শুদ্ধ হচ্ছে কি না? তা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই।
এর সমাধান মাযহাবের ইমামদের ইজমা তথা ঐক্যমত্ব এর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে।
রুকুতে গিয়ে যদি কেউ ভুল তাকবীর না বলে, রুকুর তাসবীহের বদলে কেউ সেজদার তাসবীহ বলে ফেলল, তাশাহুদের বদলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেললো, জোরে কিরাতের স্থলে আস্তে কিরাত পড়ল, আস্তের স্থলে জোরে পড়ল এসব মাসআলার সমাধান ছাড়াতো সহীহ পদ্ধতিতে নামায পড়া সম্ভব নয়।
আর এসব মাসআলাসহ নামাযের অসংখ্য মাসায়েলের সমাধান না কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস দ্বারা প্রমানিত। বরং এসব সমাধান মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীসের গভীর থেকে মূলনীতি বের করে এর আলোকে উদ্ভাবন করেছেন। আর তাদের উদ্ভাবিত সেসব মাসআলার নামই হল মাযহাব।
এইতো গেল শুধু নামাযের একটি ছোট্ট অংশের উদাহরণ। এমনিভাবে মানুষের জীবনঘনিষ্ট এমন অসংখ্য মাসআলার উপমা পেশ করা যাবে, যার সরাসরি কোন সমাধান কুরআন ও হাদীসে নেই। কিংবা অনেক স্থানেই বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ।
তাই মাযহাব মানা ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের কোন গত্যান্তর নেই। অন্তত দুই রাকাত ও পূর্ণ করে পড়ার জন্য প্রতিটি মুসলমান মাযহাবের প্রতি মুখাপেক্ষী।
তাই যেহেতু মাযহাব ছাড়া দুই রাকাত নামাযও পড়া যায় না, পূর্ণ দ্বীন মানাতো বহু দূরের কথা, তাই গায়রে মুজতাহিদ ব্যক্তিদের জন্য মাযহাব মানা ওয়াজিব।
আপনার মনে উক্ত প্রশ্নটি আসার মূল কারণ হল, “মাযহাবশব্দটি আপনি কুরআনে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই মনে হচ্ছে উক্ত বিষয়টি কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
কোন শব্দটি কুরআনে না থাকা মানে উক্ত বিষয়টি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়, বলা বাচ্চাসূলভ কথা হবে। এমন যুক্তি কোন আকলমন্দ ব্যক্তি দিতেই পারে না। কারণ অনেক বিষয় আছে, আমাদের সমাজে প্রচলিত শব্দ। কিন্তু তার হুবহু শব্দটি কুরআন বা হাদীসে নেই। কিন্তু এর অর্থবোধক বিষয় কুরআন ও হাদীসে আছে।
তো যে বিষয়টির শব্দ না থাকলেও তার অর্থ কুরআন ও হাদীসে থাকার মানেই হল, উক্ত বিষয়টি কুরআন ও হাদীসে আছে। যদিও হুবহু শব্দ না থাকুক।
যেমন, মুসলমানদের কাছে একটি প্রচালিত ও স্বতসিদ্ধ একটি শব্দ হলতাওহীদযা না থাকলে কোন ব্যক্তি মুসলমানই হতে পারে না। কিন্তু কুরআনের কোথাও তাওহীদশব্দটি নেই। এর মানে কি আপনি বলবেন কুরআন দ্বারা তাওহীদ প্রমাণিত নয়? [নাউজুবিল্লাহ]
হুবহু শব্দ না থাকা মানেই উক্ত বিষয়ের অস্তিত্ব অস্বিকার করা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। কুরআনে কারীমে আল্লাহর একাত্ববাদ সম্পর্কিত সকল আয়াতই তাওহীদ বিষয়ক। হুবহু শব্দ না থাকুক।
মাযহাব বিষয়ে আরো পরিস্কার ধারণা পেতে হলে পড়ুন-http://ahlehaqmedia.com/3002-4/
মাযহাব কোনটি অনুসরণ করবো?
এর উত্তরও আমরা পবিত্র কুরআনে পরিস্কার ভাষায় দেখতে পাই-
ইরশাদ হচ্ছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ [٤:٥٩]
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর,নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যেযারা জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞ তাদের। [সূরা নিসা-৫৯]
উক্ত আয়াতে খেয়াল করুন। আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাঃ এর অনুসরণের নির্দেশের পরেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে উলিল আমরতথা বিচারক বা জ্ঞানী প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করতে।
আল্লাহ ও নবীজী সাঃ এর বিধান বিশেষজ্ঞ জ্ঞানীদের বলা হয় মুজতাহিদ।
এখন প্রশ্ন হল, সারা বিশ্বে অসংখ্য মুজতাহিদ থাকতে পারে। ব্যক্তি কোন মুজতাহিদের অনুসরণ করবে?
আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের সমাধান জানিয়ে দিয়েছেন আয়াতের মিনকুমশব্দ দ্বারা। এর অর্থ হল, তোমাদের মাঝেরতথা তোমাদের মাঝে, তোমাদের সমাজের, তোমাদের এলাকার যিনি মুজতাহিদ হবেন, তোমরা তার অনুসরণ করো। দূরের মুজতাহিদের অনুসরণের কথা বলেননি। অর্থাৎ যার থেকে ফায়দা হাসিল করা সম্ভব নয়, তাদের পিছনে ছুটতে বলা হয়নি। বরং যে মুজতাহিদের ইজতিহাদ পাওয়া যায়, সহজলভ্য, যে মুজতাহিদ নিজেদের এলাকায় থাকেন, সেই মুজতাহিদের অনুসরণ করার কথা পবিত্র কুরআনে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়ে আমাদের জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন।
এবার আমরা দেখি এ উপমহাদেশে কোন মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুপাতে ইসলাম আসার পর থেকে ইসলামের যাবতীয় মাসায়েল এসেছে?
নিশ্চয় হানাফী মাযহাবের।
যেদিন থেকে এ উপমহাদেশে ইসলাম নামক জান্নাতী ধর্ম প্রবেশ করেছে, সেদিন ইসলামের সাথে সাথে ইসলামের যেসব বিধানাবলী প্রবেশ করেছে, তা সবই হানাফী মাযহাবের ইমামের ইজতিহাদ অনুপাতে সুবিন্যস্ত কুরআন ও হাদীসের বিধানাবলী।
এ কারণে এ উপমহাদেশের মানুষ মাসায়েল নামায, রোযা, অজু, গোসল ইত্যাদি যাবতীয় মাসায়েলের সুনির্দিষ্ট মাসায়েলগুলো, ওয়াজিব, সুন্নাত, ভঙ্গের কারণ, মাকরূহাত ইত্যাদি সবই হানাফী মাযহাব অনুপাতেই জেনে আমল করে আসছে। এ উপমহাদেশে এ বিষয়ক অসংখ্য গবেষণাগার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কুরআন ও হাদীসের সহীহ ব্যাখ্যা নির্ভর এ মাযহাব অনুসারী অসংখ্য শাইখুল হাদীস, মুহাদ্দিস, মুফতী, মুফাককিরে ইসলাম জন্ম নিয়েছেন। তারা আরো সুবিন্যস্তভাবে এ মাসায়েলগুলোকে মানুষর সামনে তুলে ধরেছেন। এখন একজন মানুষ ইচ্ছে করলেই দ্বীনের যেকোন মাসআলা সুনির্দিষ্ট হুকুমসহকারে আলেম উলামাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতে পারে।
কিন্তু এ উপমহাদেশের কোথাও শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী মাযহাবের মাদরাসা দেখা যায় না। দেখা যায় না, এসব মাযহাব বিশেষজ্ঞ শাইখুল হাদীস, মুফতীয়ানে কেরাম। দেখা যায় না ব্যাপক আকারে তাদের কোন কিতাব।
ফলে এ উপমহাদেশে কোন ব্যক্তি অন্য মাযহাব মানতে চাইলে, তার পক্ষে সেই মাযহাব অনুপাতে সকল মাসায়েল জানতে পারা সম্ভব নয়। কারণ না বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাবে। না পর্যাপ্ত কিতাব।
এ কারণে সহজ সমাধান হল, যে এলাকায় যে মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুপাতে কুরআন ও হাদীসের মাসায়েল ইসলাম আসার পর থেকে আমলী সূত্রে এসেছে, উক্ত এলাকায় উক্ত মাযহাব অনুপাতেই ইসলামী শরীয়ত পালন করবে। তাহলে আর কোন ফিতনা ও বিভ্রান্তি থাকবে না।
এদিকেই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়ে সুরা নিসার ৫৯ নাম্বার আয়াতে বলেছেন মিনকুমতথা তোমাদের মাঝের বিশেষজ্ঞকে অনুসরণ কর।
তাই উপমহাদেশে হানাফী মাযহাব, শ্রীলংকাতে শাফেয়ী মাযহাব, ও মক্কায় হাম্বলী ও মদীনার লোকেরা মালেকী মাযহাব অনুসরণ করে থাকে। এভাবে যে এলাকায় যে মাযহাবের অনুসারীরা দ্বীন এনেছে ও কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক মাযহাবের আমল জারী হয়েছে, উক্ত এলাকায় সেই মাযহাবই মানবে। তাহলে আর কোন বিভ্রান্তি থাকবে না।
আর প্রশ্নকারী যেহেতু বাংলাদেশের অধিবাসী। তাই তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করবেন। এটাই পবিত্র কুরআনের আয়াতের দাবী।
মাযহাবের ইমামদের লিখিত গ্রন্থাবলী
মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীসের মাসায়েলগুলো গবেষণা করে যা বের করেছেন, তা পরবর্তীতে তাদের ছাত্ররা কিতাব আকারে সংকলিত করেছেনযেসবকে ইসলামী ফিক্বহ বলা হয়।
আর হাদীস নবীর হবার পরও সংকলক ইমাম বুখারী মুসলিম হবার কারণে যেমন সংকলনকারীর দিকে নিসবত করে বুখারীর হাদীস, মুসলিমের হাদীস বলা হয়, তেমনি ফিক্বহে ইসলামী সংকলকদের নামেও উক্ত ফিক্বহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। যেমন হানাফী ফিক্বহ, শাফেয়ী ফিক্বহ, হাম্বলী ফিক্বহ, মালেকী ফিক্বহ। যা ইসলামী লাইব্রেরীগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেই আপনার দৃষ্টিগোচর হবে।
মক্কা মদীনার বড় লাইব্রেরীগুলোর দিকে তাকালেই আপনার চোখে মাযহাবের ইমামদের সংকলিত ফিক্বহে ইসলামীর অসংখ্য কিতাব নজরে আসবে।
অন্ধ অনুসরণ!
প্রথমে অন্ধ অনুসরণের অর্থ বুঝে নিন।
অন্ধ ব্যক্তি আরেক অন্ধের পিছনে পিছনে চলার নাম হল অন্ধ অনুসরণ। কিন্তু অন্ধ কোন চক্ষুষমানের পিছু পিছু, তার হাত ধরে চলার নাম কিন্তু অন্ধ অনুসরণ নয়। একে বলা হবে চক্ষুষমানের অনুসরণ।
আপনি যদি বলেন, মুজতাহিদ তথা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অনুসরণ করে দ্বীন মানাও অন্ধ অনুসরণ। তাহলে বলবোঃ
আপনি মুজতাহিদ না হলে, মুখে যতই বলেন, কারো অনুসরণ করবেন না, কিন্তু আপনি কারো না কারো অন্ধ অনুসরণ না করে দ্বীন মানতেই পারবেন না।
সহীহ, জঈফ, মুনকার, মুদাল্লাস, হাসান ইত্যাদি পরিভাষা আপনি মুহাদ্দিসদের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এসব পরিভাষা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই।
কোন রাবীকে সহীহ বলা, বা জঈফ বলা, হাদীসকে সহীহ বা জঈফ বলা, ইত্যাদি আপনি মুহাদ্দিসদের মন্তব্যের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া বলতেই পারবেন না।
দেখা যাবে এক মুহাদ্দিস তার জন্ম নেবার চারশত বছর আগের রাবীর ক্ষেত্রে মন্তব্য করছেন। যা বুঝা যায়, তিনি উক্ত রাবীকে দেখার প্রশ্নই আসে না। তবু আপনার উক্ত মুহাদ্দিসের কথাই মানতে হয় অন্ধভাবে।
যেমন ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী অষ্টম শতাব্দীর লোক। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় শতকের রাবীদের ব্যাপারেও জরাহ করেছেন। তার এসব জরাহ আপনি কিসের ভিত্তিতে মানবেন? নিশ্চয় আপনাকে এ বিষয়ে অন্ধ তাকলীদই করতে হবে।
সুতরাং কারো অন্ধ অনুসরণ করবেন না এটি খুবই চটকদার কথা হলেও বাস্তবে অন্তসারশূণ্য একটি কথা।
তাই এসব পন্ডিতী করে শুধু আপনি সময় বরবাদ করবেন। নিজের মনে পেরেশানী তৈরী করবেন। দ্বীনী মাসায়েল বিষয়ে সন্দেহ হতে হতে [আল্লাহ না করুন] এক সময় পুরো দ্বীনের উপরই আপনার সন্দেহ তৈরীর মত ভয়াবহ অবস্থাও তৈরী হয়ে যেতে পারে।তাই নিজের অজ্ঞতা সত্বেও কুরআন ও হাদীসের বিধানাবলী বিশেষজ্ঞ সাজার এ ভয়াবহ খেল বন্ধ করুন।
বাংলাদেশে প্রচলিত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক সংকলিত হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে মনের প্রশান্তির সাথে ইবাদত করুন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে সহীহ দ্বীনের উপর চলার তৌফিক দান করুন।
















রাত জেগে ইবাদতের ফজিলত
OURISLAM24.COM

news-image

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ও মাহমুদ রহ. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবিতকালে কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে বর্ণনা করত। এতে আমার মনে আকাঙ্খা জাগল যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখলে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করব। তখন আমি যুবক ছিলাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে আমি মসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফেরেশতা আমাকে ধরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাঁতে দুটি খুটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশতা আমাদের সংগে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, ভয় পেয়ো না। আমি এ স্বপ্ন ((আমার বোন উম্মুল মুমিনীন) হাফসা রা. -এর কাছে বর্ণনা করলাম। এরপর হাফসা রা. তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বললেন : আব্দুল্লাহ কতই ভাল লোক ! যদি রাত জেগে সে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত ! এরপর থেকে আবদুল্লাহ রা. খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।


ইয়ামান বিজিত হবে
OURISLAM24.COM

news-image

আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ র. সুফিয়ান ইবনে আবু যুহায়র রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন একদল লোক নিজেদের সাওয়ারী হাকিয়ে এসে স্বজন এবং অনুগতদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনাই তাদের জন্য ছিল কল্যাণকর, যদি তারা জানত।
হাদীস নং ১৭৫৪


হিজরত : কী বলে ইসলাম?
OURISLAM24.COM

প্রশ্ন :
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম।
১) দারুল কুফরে পড়াশোনার জন্য যাওয়া বা স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? দারুল কুফরে অবস্থান করা যদি নাজায়েজ হয় তবে সেখানে জন্মসূত্রে বসবাসকারি মুসলিমরা কি করবে? দারুল কুফরে অবস্থান করে দাওয়াহর কাজ করবে নাকি হিজরত করবে?
২) ফিতনার আশঙ্কায় সব মুসলিমরা হিজরত করলে তো দারুল কুফর কখনই দারুল ইসলামে আনা যাবে না। সাহাবা(রা) গণ দারুল কুফরে গিয়ে দাওয়াহ ও জিহাদের মাধ্যমে দারুল ইসলামে এনেছেন। কিন্তু তার আগে তো উনারা ওই দারুল কুফরেই অবস্থান করেছিলেন।তাই না?
আশা করি জবাব দিয়ে বাধিত করবেন। জাযাকাল্লাহ খায়রান।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের শুরু যুগে তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাথমিক মক্কী জীবনে হিযরত করা ফরজ ছিল। নিরাপত্তা থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু মদীনায় গমণ করার পর এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। এখন বিধান হল, যদি দারুল হরব তথা দারুল কুফরে কোন ব্যক্তি কুফর শিরকে লিপ্ত হওয়া ছাড়াই নিরাপদে তার স্বীয় ধর্ম পালন করতে পারে, তাহলে তার জন্য হিযরত করা জরুরী নয়। উক্ত ব্যক্তি দারুল কুফরে অবস্থান করতে পারে।
আশা করি আপনার উভয় প্রশ্নের জবাব পরিস্কার হয়ে যাবার কথা। যদি দারুল কুফরে থেকে স্বীয় দ্বীন সঠিকভাবে পালন করা যায়, তাহলে হিযরত করে অন্যত্র চলে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। বরং দারুল হরবেই অবস্থান করা যাবে।
قيل اى المقام فى دار الشرك لان الله لم يقبل الاسلام بعد هجرة النبى صلى الله عليه وسلم الا بالهجرة، ثم نسخ بعد فتح مكة فقال النبى صلى الله عليه وسلم لا هجرة بعد الفتح الخ (تفسير بغوى-1/469 سورة النساء-97)
ان فى بدء الاسلام كانت الهجرة البتة واجبة سواء قدر على اقامة دينه او لا، ولا شك فى نسخه وفى الزمان ان لم يتمكن من اقامة دينه بسبب ايدى الظلمة والكفرة يفرض عليه الهجرة وهو الحق، (تفسير احمدى-202، سورة النساء-97
والله اعلم بالصواب















যারা শুধু জুমার নামাজ পড়েন!
OURISLAM24.COM

news-image

প্রশ্ন : যাঁরা শুধু জুমার নামাজ এবং রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাঁদের কি বেনামাজি বলা যাবে?
উত্তর :  কোনো সন্দেহ নেই, এরা বেনামাজি। নামাজ আসলে তারা আদায় করেনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তো সালাত ফরজ করেছেন পাঁচ ওয়াক্ত।
হাদিসের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহ সুবহানতায়ালা দিন ও রাতের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে ফরজ করেছেন। এখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যেটি ফরজ, সেটি যদি কেউ আদায় না করে থাকেন, তাহলে তো তিনি কুফরি করলেন। তার সব ইবাদত, সব আমল আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের কাছে কিচ্ছু না। কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এগুলোর কোনো মূল্য হবে না এবং মিজানের মধ্যে এর কোনো ওজন দেওয়া হবে না।
তাই শুধু জুমার নামাজ বা ঈদের নামাজ যাঁরা লোক দেখানোর জন্য পড়েন, তাঁদের এটি লৌকিক সালাত। এই লৌকিক সালাত শুধু যে অন্যায়, তা নয়। বরং এ ব্যাপারে কোরআনে কারিমের মধ্যে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লিন। আল্লাজিনাহুম আং সলাতিহিম সাহুন। আল্লাজিনাহুম ইউরাউনঅর্থাৎ লোকদের দেখানোর জন্য, অমনোযোগীভাবে শুধু লৌকিক সালাত যারা আদায় করে থাকে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেছেন, ‘এ ধরনের মুসল্লি যারা আছে, তাদের জন্য ধ্বংস।
তাই বেনামাজি বলতে মূলত বোঝায় যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিহার করে বা তরফ করে। সেটি যদি এক ওয়াক্ত কেউ তরফ করে থাকে, তাহলেও সে বেনামাজি। কিন্তু ধরেন, যদি ওজরের কারণে কেউ আজকে নামাজ পড়তে পারলেন না, তাই আগামীকাল আদায় করে নিলেন, তাহলে তাকে বেনামাজি বলা হবে না।












পরিপূর্ণ ঈমানদার কে?

OURISLAM24.COM

মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ]

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।” [সূরা আল কালাম : ৪]







গুনাহ মাফ

OURISLAM24.COM

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে এক শতবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (আমি প্রশংসার সাথে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি)পড়ে, তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির সমান হলেও মাফ করে দেয়া হয়।

{সহীহ আল-বুখারী, ৮ম খন্ড, ৭৫ অধ্যায়, হাদীস নং-৪১৪}












ধর্ষকের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করা কি নারীর জন্য ওয়াজিব?

OURISLAM24.COM

প্রশ্ন: কেউ যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় তখন সেই নারীর উপর আত্মরক্ষা করা কি ওয়াজিব? আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?
 উত্তর: যে নারীর সাথে জোরপূর্বক যেনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে নারীর উপর আত্মরক্ষা করা ফরজ। তিনি কিছুতেই দুর্বৃত্তের কাছে হার মানবেন না। এজন্য যদি দুর্বৃত্তকে হত্যা করে নিজেকে বাঁচাতে হয় সেটা করবেন। এই আত্মরক্ষা ফরজ। ধর্ষণ করতে উদ্যত ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে তিনি দায়ী হবেন না। এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে- ইমাম আহমাদ ও ইবনে হিব্বান কর্তৃক সংকলিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস,

যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে- “যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ” অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী অথবা অন্য কোন নিকটাত্মীয় নারীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল (সে শহীদ)।

যদি স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য লড়াই করা ও ধর্ষকের হাত থেকে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হয় তাহলে কোন নারী নিজের ইজ্জত নিজে রক্ষা করার জন্য প্রাণান্তকর লড়াই করা; এই ধর্ষক, জালিম ও দুর্বৃত্তের হাতে নিজেকে তুলে না দিয়ে নিহত হওয়া সে নারীর জন্য বৈধ হওয়া অধিক যুক্তিপূর্ণ। কেননা তিনি যদি নিহত হন তাহলে তিনি শহীদ। যেমনিভাবে কোন নারীর স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে যদি নিহত হন তিনি শহীদ। শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা অনেক বড়। আল্লাহর আনুগত্যের পথে, তাঁর পছন্দনীয় পথে মারা না গেলে এ মর্যাদা লাভ করা যায় না। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ ধরনের প্রতিরোধকে তথা কোন ব্যক্তির তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে এবং কোন নারীর তার নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে পছন্দ করেন। আর যদি কোন নারী আত্মরক্ষা করতে সমর্থ্ না হন, পাপিষ্ঠ ও দুশ্চরিত্র লোকটি যদি তাকে পরাস্ত করে তার সাথে যেনাতে লিপ্ত হয় তাহলে এ নারীর উপর হদ্দ (যেনার দণ্ড) অথবা এর চেয়ে লঘু কোন শাস্তি কার্যকর করা হবে না। কারণ হদ্দ কায়েম করা হয় সীমালঙ্ঘনকারী, পাপী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির উপর।
ইবনে কুদামা হাম্বলির মুগনীনামক গ্রন্থে এসেছে- যে নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করতে উদ্যত হয়েছে ইমাম আহমাদ এমন নারীর ব্যাপারে বলেন: আত্মরক্ষা করতে গিয়ে সে নারী যদি তাকে মেরে ফেলেইমাম আহমাদ বলেন: যদি সে নারী জানতে পারেন যে, এ ব্যক্তি তাকে উপভোগ করতে চাচ্ছে এবং আত্মরক্ষার্থে তিনি তাকে মেরে ফেলেন তাহলে সে নারীর উপর কোন দায় আসবে না। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন কাসেম বিন মুহাম্মদ থেকে তিনি উবাইদ বিন উমাইর থেকে। তাতে রয়েছে- এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে নাকারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা জায়েয হয় যে সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয তাহলে কোন নারীর তার আত্মরক্ষার্থে, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে- যে গুনাহ কোন অবস্থায় বৈধ নয়- লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ। এইটুকু যখন সাব্যস্ত হল সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া।[আল-মুগনি (৮/৩৩১)] আল্লাহ ভাল জানেন।[আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ (৫/৪২-৪৩)]












টুপি পরা কি সুন্নত?
OURISLAM24.COM

news-image
আওয়ার ইসলাম: টুপি পরিধান করা সুন্নাত, মুস্তাহাব। অনেক হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (সা) সব সময় টুপি পরতেন এবং তার সাহাবীরাও।
ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূল (সা) সাদা টুপি পরতেন; তাবারান অনুযায়ী ইমাম সুয়ুতি বলেন, রাসূল (সা) সাদা টুপি পরতেন। (সিরাজ আল মুনির, ১১২)
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, আনাস বিন মালিক (রা) সাদা টুপি দিয়ে তার মাথা ঢেকে রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮০২)
সমস্ত আলেমগণ একমত যে, টুপি পরা মুস্তাহাব এবং চার ইমামের সকলেই বলেন যে, সলাত আদায়ের সময় টুপি পরিধান করা মুস্তাহাব এবং না পরিধান করাটা মাকরূহ।
সুতরাং টুপি পরিধান করা মুস্তাহাব। কারণ এটা রাসূল (সা) করেছেন।



ফটোগ্রাফি পেশা গ্রহণের হুকুম কী?
OURISLAM24.COM

news-image

আসসালামু আলাইকুম
যারা ফটো তোলে এবং ছাপা করে তাদের টাকা হালাল নাকি হারাম।
বর্তমানে প্রয়োজনের তাগিদে সবাইকে ফটো তোলতে হয়। তাই এই ব্যব্সা বা কাজ কে অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
কিন্তু শুধু পাসপোর্ট সাইজের ফটো তোলে সংসার চালানো কঠিন। তাই বিবাহ অনুষ্ঠানে কনের ফটো তোলে উপার্জন করা কি হারাম। বিয়ের ফটো তো অনেকে স্মৃতির জন্য তোলে থাকে । যারা সংবাদ কর্মী তারাও ফটো তোলে এবং ছাপা করে। তারাও কি হারামের মাঝে আছে।
জাকারিয়া খান। সিলেট।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
জীবিকা নির্বাহের অনেক পথই খোলা আছে। তাই হারাম পথ অবলম্বন করে উপার্জন করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আমরা বেঁচে আছি আখেরাতের পূঁজি কামাইয়ের জন্য। এটাই একজন প্রকৃত মুসলিমের মানসিকতা। একজন প্রকৃত মুসলিম। না খেয়ে মরে যাবে, কিন্তু নিজের উদরে একটি হারাম পয়সা প্রবেশ করতে দিবে না। এটাই সত্যিকার মুমিনের আলামত।
প্রাণীর ফটো তোলা বা আঁকা একই হুকুমএক্ষেত্রে হাদীসে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই এ পেশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক। আর বিয়ে অনুষ্ঠানে কনের ছবি তোলার মাধ্যমে ছবি তোলার হারাম কাজের সাথে সাথে পর্দা লঙ্ঘণের গোনাহও যুক্ত হচ্ছে।
তাই এ পেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যাবশ্যক।
ছবি তোলা ও ছাপানো সবই নাজায়েজ। তাই যারা এসব কর্মে লিপ্ত তাদের উচিত অন্য কোন পেশা খুঁজে নেয়া।
عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُمَّ قَالَ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِمَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ ». وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ.
হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। এতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস রা তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর রাখলেন, এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে শুনেছি। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবেইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর যা প্রাণী নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৬২}
عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أخبره : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة يقال لهم أحيوا ما خلقتم
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে লোকেরা ছবি আঁকে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদের বলা হবে যে, যা তোমরা বানিয়েছো তাতে প্রাণ দাও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৪১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৭, ৭১১৯, ৫৬১২, ৫৬১৬, ৭১১৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৫৭, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৫, }
عبد الله قال : سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, কিয়ামতের দিন বেশি কঠিন শাস্তি হবে ছবি অংকনকারীদের। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৪৩২, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৫৯}
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا تَصَاوِيرُ
হযরত আবু তালহা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে আমি বলতে শুনেছি যে, ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না, যেই ঘরে কুকুর বা জীব-জন্তুর ছবি থাকে। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫২৭২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৪৯, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১০৮৪, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৮০৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৬৬৩, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩০৫৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৩৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৫৫}
عن سعيد بن أبي الحسن قال : كنت عند ابن عباس رضي الله عنهما إذ أتاه رجل فقال يا أبا عباس إني إنسان إنما معيشتي من صنعة يدي وإني أصنع هذه التصاوير . فقال ابن عباس لا أحدثك إلا ما سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول سمعته يقول ( من صور صورة فإن الله معذبه حتى ينفخ فيها الروح وليس بنافخ فيها أبدا ) . فربا الرجل ربوة شديدة واصفر وجهه فقال ويحك إن أبيت إلا أن تصنع فعليك بهذا الشجر كل شيء ليس فيه روح
হযরত সাঈদ বিন আবিল হাসান রহঃ বলেন, আমি একদা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এল। লোকটি এসে বলল-হে ইবনে আব্বাস! আমার উপার্জনের নির্ভরতা আমার হাতের সৃষ্টির উপর, আমি ছবি আঁকিহযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বললেন-আমি তোমার কাছে সেই কথা বর্ণনা করছি, যা আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল সাঃ কে এটা বলতে শুনেছি যে, যেই ব্যক্তি ছবি বানায়, তাকে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিতে থাকবেন যতক্ষণ না সে উক্ত ছবিতে প্রাণ দিতে পারে, আর সেই ব্যক্তি কোনদিন তাতে প্রাণ দিতে পারবে নাএকথা শুনে লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর তার চেহারা পাংশু হয়ে গেল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বললেন-আরে ভাই! যদি তুমি বানাতেই চাও, তাহলে গাছের ছবি আঁকো। আর প্রত্যেক ঐ বস্তুর ছবি আঁকো, যাতে প্রাণ নেই। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৪৩৪, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২১১২, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস নং-২৫৭৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৩৯৪, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৮}

















পাইরেসি করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে?
OURISLAM24.COM
news-image

আসসালামু আলাইকুম,
হযরত, আমার প্রশ্ন, আমরা যে, মাইক্রোসফট অফিস-২০১০ ও মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বা অন্যান্য পাইরেসি করা সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এইটা জায়েজ হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
জাজাকাল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যেই সকল কোম্পানীর বিক্রয় সত্ব কোম্পানীর জন্য সংরক্ষিত তা তাদের অনুমতি ছাড়া কপি করা ও ক্রয়-বিক্রয় করা শরীয়তে জায়েজ নেই। তবে যদি বাজারে এগুলো বা এগুলোর বিকল্প না পাওয়া যায়, কিংবা ক্রয় করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তবে বাধ্য হলে ক্রয় করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু আমাদের জানা মতে এই সকল সফটওয়্যারের বিকল্প বাজারে রয়েছে, সুতরাং বর্তমানে পাইরেটেড সফটওয়্যার বাজার থেকে ক্রয় করা জায়েজ হবে না। কারণ এর দ্বারা চোর বা ছিনতাইকারী তথা অপরাধীকে সহায়তা করা হয়, যা সম্পুর্ণ হারাম।
দলিল:
قوله تعالى- وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ (سورة المائدة-2
অনুবাদ-তোমরা গোনাহ ও সীমালংঘনের ক্ষেত্রে কারো সহায়তা করনা।( সুরা মায়িদা-২)
قوله تعالى-وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُواْ أَيْدِيَهُمَا جَزَاء بِمَا كَسَبَا (سورة المائدة-38
অনুবাদ-চোর এবং চুরিকারিনীর হাত কেটে দাও তারা যা করেছে এর শাস্তিস্বরূপ (সুরা মায়িদা-৩৮)
قوله تعالى-وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ وَإِنَّ كَثِيرًا لَّيُضِلُّونَ بِأَهْوَائِهِم بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِينَ (سورة الانعام-119
অনুবাদ-আর তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে তবে যেসব ক্ষেত্রে তোমরা বাধ্য হয়ে পর (তা ভিন্ন) আর অনেকেই ভ্রষ্ট হয় না জেনেই নিজেদের রীপুর কারণে, নিশ্চয় আল্লাহই অধিক জ্ঞাত সীমা লংঘনকারীদের ব্যাপারে।( সুরা আনআম-১১৯)
وفى سنن البيهقى الكبرى- عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال : من اشترى سرقة وهو يعلم أنها سرقة فقد اشرك في عارها واثمها ( سنن البيهقى الكبرى-كتاب البيوع، باب كراهية مبايعة من أكثر ماله من الربا أو ثمن المحرم، رقم-10608
অনুবাদ-আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেছেন যে, যে ব্যক্তি কোন চুরির বস্তু চুরির মাল জেনেও ক্রয় করে তবে সেও সেই অপরাধে এবং গোনাহে শরীক হবে।(সুনানে বায়হাকী-৫/৩৩৫)





ফজর নামাজ আদায়ের উত্তম সময়
OURISLAM24.COM
প্রশ্ন : ফজর নামাজ আদায়ের উত্তম সময় কোনটি?
উত্তর : শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বেই ফজরের নামায একটু ফর্সা করে পড়া উত্তম। এতটুকু সময় হাতে নিয়ে পড়া উচিত যে, মাসনূন কিরাত অনুপাতে সালাত শেষ করার পরও এতটুকু সময় বাকি থাকে যে, যদি কোন কারণে নামায না হয়ে থাকে, তাহলে সূর্য উদয়ের আগেই যেন আবার পড়া যায়।
হাদীসের মাঝে ফর্সা করে ফজরের নামায পড়া বিষয়ে অধিক সওয়াবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَسْفِرُوا بِالفَجْرِ، فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ»
হযরত রাফে বিন খাদীয রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি শুনেছি যে, তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে পড়, কেননা এর সওয়াব অনেক বেশি। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫৪] হাদীসটি সহীহ।









রমজানে দিনের বেলায় হোটেল খোলা রাখা
OURISLAM24.COM

news-image

আবু সাঈদ যোবায়ের : চলছে রহমতের বসন্ত মাহে রমজান। রহমতের অপার্থিব আমেজে চারিদিক মৌ মৌ করছে।এই রহমতের মাসেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য চোখে পড়ে। হোটেলের বাইরে পর্দা ঝুলিয়ে ভিতরে খাবার দাবারের রমরমা আয়োজন ওগুলোর একটি। এমন পর্দা ঝুলিয়ে গোপন খাবার ব্যবসায় ইসলাম কি বলে?
মহান আল্লাহ তা,আলা বলেন, ‘এসব স্মরণ রেখ। আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলী কে সম্মান করলে এটা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়সুরা হাজ্জ, আয়াত,৩২
আর রমজান তো আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। রমজানের সম্মান রক্ষা করাও প্রতিটি মুসলিমের আবশ্যক কর্তব্য। তাই রমজানে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে হোটেল খোলা রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অনুচিত। যারা শরীয়ত সম্মত বিভিন্ন কারণে রোযা রাখতে অক্ষম তাদেরও উচিত প্রকাশ্য খাবার দাবার পরিত্যাগ করা। তবে বিকেলে ইফতারের পূর্বে হোটেল খোলা রেখে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা বৈধ। এতে অসুবিধার কিছু নেই। বিস্তারিত দেখুন, ফতোয়া রহীমিয়া, প্রশ্ন নং,২৪৬।
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডট কম / এফএফ
















কীভাবে মানুষের পদস্খলন হয়!
OURISLAM24.COM


মাওলানা জমির বিন মাহমূদ, অতিথি লেখকশয়তান মানুষের আজন্ম শত্রু। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে তাকে চিনে এবং তার স্বীকৃতি দেয়। শয়তানকে সবাই শয়তান হিসেবে মানে। আজ পর্যন্ত এমন কোনো লোক পাওয়া যায়নি; যে শয়তানকে ভাল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তদুপরি মানব সম্প্রদায় জেনে বা না জেনে শয়তানের বসংবদে পরিণত হয়।
শয়তানের উপস্থিতি মেনে নিলেও শয়তানের অবয়ব, আয়তন-আকার-আকৃতি আর বর্ণিল রূপ মানুষের অধরাই থেকে যায়। সকল ধর্ম শয়তান এবং তার শয়তানি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছে। সর্বশেষ দ্বীন ইসলাম মানুষকে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ, বাস্তব ও সর্বক্ষণের জন্য গাইড লাইন উপহার দিয়েছে। মানুষের জন্য এক মহা অনুগ্রহ যে, মানুষেরই স্রষ্টাআল্লাহ শয়তানের শয়তানি থেকে বেঁচে থাকার যাবতীয় মন্ত্র দান করেছেন। আল্লাহর রাসুল স. যা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। সুতরাং তাবৎ কল্যাণের স্বার্থে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শয়তানি হতে মুক্ত থাকা অপরিহার্য্য এবং ইসলামই তার জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত জীবন বিধান। যুগে-যুগে মনীষীগণ সে ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করেছেন। চেষ্ঠা করেছেন শয়তানকে মানুষের বোধগম্যের মধ্যে নিয়ে আসতে। বিভিন্ন ঘটনা-উদাহরণের সাহায্যে শয়তানকে মূর্তিমান করার চেষ্টা করেছেন। সকল ধর্ম শয়তানকে মানুষের প্রধান এবং মূল শত্রু হিসেবে বর্ণনা করেছে। শয়তানের উদাহরণ শয়তানই। তাকে চিনে নেয়ার জন্য দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের দুশমন সুতরাং তাকে দুশমন হিসেবেই গ্রহণ কর।সুরা ফাতির : ৬
শয়তান পূর্বে সবচেয়ে বড় আবেদ ছিল। উর্ধাকাশে ফেরেস্তাদের মাঝে আবেদ হিসেবে তার পরিচিতি ছিল ব্যাপক। মহান আল্লাহ আলিমুল গাইব (অদৃশ্যের যাবতীয় খবর সম্পর্কে অবগত)। তিনি এই আজাজিলের পরীক্ষার আয়োজন করেন এবং বড় এক পরিকল্পণার আওতায় মাটির আদমকে নির্মাণ শুরু করেন। ফেরেস্তাগণের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শয়তান তার ইবাদতের ঘোরে অহংকারের পথে পা বাড়ায়; যা তার পদস্খলনের প্রধান ও মূল কারণ। অহংকার তার অতিতের সমস্ত নেক আমলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, প্রসংশিত অবস্থানে অটুট থাকতে দেয়নি। তাকে আজীবনের ফেরারি করে ছাড়ে। মহা আবেদআজাজিল চিরদিনের জন্য শয়তানে পরিণত হয়।
মানুষ বুঝে উঠতে পাওে না, কখন সে অহংকারী হয়ে যায় আর এটাই শয়তানের কৌশল। বড়-বড় জ্ঞানী, ইসলামি চিন্তাবীদ, পীর-বুজর্গ, ওলামা-মাশায়েখ এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে শয়তান তার এই কৌশল প্রয়োগ করে। ইসলামি চিন্তাবীদ ও ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, আমরা তো তাকে চিনি এবং তাকে বয়কট করার মন্ত্রও আমাদের জানা আছে। সুক্ষ অথচ মহা এই ছিদ্র দিয়েই শয়তান তাদের বন্দি করে। তখন মনে হতে থাকে, আমিই সঠিক এবং একমাত্র আমিই হক পথে আছি। এভাবেই অহংকারের চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয় ইলমকে। অহংকারীয় চশমায় সবকিছু রঙ্গিন দেখায়। আল্লাহর রহমত ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ কিছুতেই সম্ভব নয় এবং খুব কম লোকই তা পায়। ওলামা হজরতের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের পরও বলা যায়; এটাই হয়তো যাবতীয় সমস্যার মূল কারণ।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর












পাপমুক্ত জীবনের চেতনা
OURISLAM24.COM

news-image
মাওলানা মুহাম্মদ আরাফাত : রমজান মাস নেক অর্জনের ভরা মৌসুম। ত্যাগ আত্নশুদ্ধি লাভের অনন্য সময়। ধৈর্য ও সংযমের মাস। মুমিন বান্দা লাভ করবে মালিকের দাসত্ব। মালিকের ভয়ে অশ্রু ঝরাবে বুক ভাসিয়ে। গুণাহ মাফ করিয়ে নিবে রমজানের দিন রাতে। গড়বে পাপমুক্ত জীবনের চেতনা।
বান্দা সিক্ত হবে রমজানের অবারিত রহমতে। বাঁচবে শয়তানের ধোঁকা থেকে। বিরত রাখবে অন্যায় অশ্লিলতা আর পাপ পংকিলতা থেকে। রমজানের চাঁদ উদয়ে থেমে যায় আজাবের ফেরেশতা। খুলে যায় রহমত নাজাত আর মাগফিরাতের দুয়য়ার। প্রভু বেঁধে ফেলেন দুষ্ট শয়তানকে। কারাবন্দী রাখেন মাসজুড়ে।
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণিত নবিজি সা. বলেছেন,  ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনকে বেঁধে রাখা হয়। খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দুয়ার। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সব কটি দরজা।’ তিরমিজি শরিফ ৬৭৭
মহান প্রভুর দরবারে এই মিনতি, মাগফিরাতের মাসে কারানিক্ষিপ্ত দুষ্ট শয়তানের হাত থেকে গুনাহগার বান্দাদের দাও মুক্তি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এআর

















রোজা অবস্থায় ইনজেকশান ব্যবহার
OURISLAM24.COM


আবু সাঈদ যোবায়ের : রোগীর রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত একটি সাধারণ পদ্ধতি হল ইনজেকশন। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এই ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে রমজান মাসে। রোগীরা কি করবেন? রোজা অবস্থায়ও কি ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারবেন?
ইসলামি স্কলারগণ বলেছেন, রোজা অবস্থায়ও রোগীরা ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারবেন। এতে তাদের রোজার কোন সমস্যা হবে না। চাই সে ইনজেকশন রগে দেয়া হোক বা মাংসপেশিতে দেয়া হোক। যেভাবেই দেয়া হোক এতে রোজার কোন সমস্যা হবে না। কারণ রোজা নষ্ট হবে সেই সব খাবারের মাধ্যমে যা সরাসরি কণ্ঠনালী দিয়ে পাকস্থলীতে যায়। রগ বা মাংসপেশির মাধ্যমে দেহে কিছু প্রবেশ করলে রোজা নষ্ট হবে না। তাই রোজা অবস্থায়ও রোজাদাররা ইনজেকশন/ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারবেন। বিস্তারিত দেখুন, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন কৃত।
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডট কম / এফএফ








আসুন আমরা কিছুক্ষণ রাসুল সা. এর সঙ্গে কাটাই
OURISLAM24.COM

news-image
মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান : আমাদের কাছে এক মহিমান্বিত মাস, মহান অতিথি এসেছে। আসুন আমরা কিছুক্ষণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কাটাই। দেখি তিনি কিভাবে এই মহান মাসকে বরণ করেছেন, কিভাবে এই মুহতারাম মেহমানের মেহমানদারী করেন। কারণ, তিনি মাসুমআমাদের পিতা মাতা তার প্রতি কুরবান হোক, তাঁর কথার দ্বারা অন্য কথা মাপা হয়তাঁর আমল দ্বারা অন্য আমল ওজন করা হয়তাঁর কাজ দ্বারা সব কাজ দুরস্ত করা হয়তাইতো আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে, এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং আখেরাতের মুক্তির আশা করে, সে বেশি পরিমাণে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে।সুরা আহজাব : ২১
কতই না সফল সে, যে তার আনুগত্য করেছে, তার সুন্নাতের অনুসরণ করেছে, তার সিরাত গ্রহণ করেছে। কত ক্ষতিগ্রস্থ সে, যে তার বাণী উচ্চারণ করেছে সত্য; কিন্তু তার কথা কাজের বিন্দুমাত্র অনুসরণ করেনি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসকে মহা সমারোহে বরণ করতেন। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রমজানের নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন, ‘হে আল্লাহ তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত কর নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। হে চাঁদ আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। হেদায়েত ও কল্যাণময় চাঁদ। সুনানে তিরমিজি : ৩৪৫১
আকাশের নতুন চাঁদকে আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহবলার মধ্যে তাওহিদের কী দৃপ্ত ঘোষণা, বিশুদ্ধ আকিদার কী চমৎকার অনুশীলন। ওই সময়ের আরব মুশরিকরা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে চাঁদের ইবাদত করতো। এ জন্যই যেন তিনি চাঁদকে বলছেন, হে চাঁদ, আমি যেমন আল্লাহর সৃষ্টি, তুমিও তেমন আল্লাহর সৃষ্টিআমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহতুমি আমার লাভ, ক্ষতি, জীবন, মরণ, রিজিক, দৌলত কোনো কিছুর মালিক নও। ওই সব মানুষ তো মহা ভুলে আছে যারা আল্লাহকে ছেড়ে তোমার ইবাদত করে। আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন মাসের ও রমজান আগমনের সুসংবাদ দিতেন।
রমজান এমন এক মহা সুযোগ যার কোনো বিনিময় হতে পারে না। মুসলিম জীবনে এক মহা নেয়ামত। মহান আল্লাহ প্রতি রাতে জাহান্নাম অবধারিত ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর মাসের সর্বশেষ রাতে ওই পরিমাণ পাপীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যে পরিমাণ সারা মাসে দিয়েছেন।
এই শ্রেষ্টত্বের চেয়ে বড় আর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে পারে?
দুনিয়ার বাদশাহদের নিয়ম হলো যখন তাদের গোলাম
গোলামি করতে করতে বৃদ্ধ হয়ে যায়; আযাদ করে দেয়
হে আমার মালিক তুমি তো এর চেয়ে বেশি সম্ভ্রান্ত
আমি তো গোলামিতে বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি; জাহান্নাম থেকে মুক্ত কর আমায়॥
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব লোকের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। আর মাহে রমজানে যখন জিব্রাইল আ. তার সাথে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি আরো বেশি বদন্যতা প্রকাশ করতেন। জিব্রাইল আ. মাহে রমজানের প্রত্যেক রাতেই তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তার কাছে কুরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিব্রাইল আ. এর সাথে সাক্ষাতকালে কল্যাণবহ মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হতেন। মুসলিম : ২৩০৮
মুক্তবাতাসকে আপনি ঝড়ো হাওয়াও বলতে পারেন। যার উল্টোটাকে ঝিরিঝিরি বাতাস বলে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে সবার চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন
যাই চাওয়া হতো তিনি নাবলতেন নাতাশাহহুদ ছাড়া অন্য কোথাও তিনি না বলতেন না, যদি তাশাহহুদ না থাকতো, তাহলে তার নাটা হ্যাঁহয়ে যেত। এ ছাড়াও রমজানে তিনি আরো বেশি বেশি সৎকাজ করতেন। বেশি বেশি দান করতেন। সাধারণ মুসলমানদের সাথে আগের তুলনায় আরো বেশি হাসি মুখে সাক্ষাৎ করতেন। আত্মীয়দের আরো বেশি খোঁজ খবর নিতেন। তার ন¤্রতা যেন আগের থেকে আরো বেড়ে যেত।
তিনি পবিত্র। তার বাণী পবিত্রতম। তার সাক্ষাত পবিত্র। তার দান পবিত্র। তিনি ভেতর বাহির সব দিক দিয়েই সৎ। প্রকাশ্য গোপন সবখানেই তিনি উত্তম।
তিনি এমন দানশীল যে, তার সাথে দানবীর হাতেম তাঈ এর তুলনাই হতে পারে না
তিনি এমন বাহাদুর যে, তার সাথে মহাবীর আনতারার তুলনা দেয়ার সাহস হয় না
তিনি এমন বাগ্মী যে, তার সামনে শ্রেষ্ঠ বক্তা কিস বিন সায়েদার তুলনা করা যায় না
মহান আল্লাহ তাকে কতই না উত্তম বানিয়েছেন… ‘নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত রয়েছেন।সুরা আল কলম : ৪
আল্লাহর অসীম দয়ায় আপনি তাদের জন্য ছিলেন কোমল প্রকৃতির মানুষ। এর বিপরীতে যদি আপনি নিষ্ঠুর ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ হতেন, তাহলে এসব লোক আপনার আশ পাশ থেকে সরে যেতো। আল ইমরান : ১৫৯
তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, তোমাদের কোনো রকম কষ্ট ভোগ তার উপর দুঃসহ বোঝার মতো, তিনি তোমাদের একান্ত কল্যাণকামী, ইমানদারদের প্রতি তিনি  স্নেহপরায়ণ, পরম দয়ালু।সুরা তওবাহ : ১২৮
তিনি রমজান মাসকে বিশেষায়িত করতেন কুরআনের জন্য। অনেক ওলামায়ে কেরাম এটা বুঝেই রমজান মাসে ফিকহ, ফতোয়া, দরস, তাদরিস, বাইরের সব যোগাযোগ, সবকিছু ছেড়ে কুরআন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতেন। পরস্পরে কুরআন পাঠ করতেন। অসুস্থততায় কুরআনের ঔষধ দিতেন। ক্ষতস্থানে কুরআনের মলম লাগাতেন। আকাশ জমিনের অধিপতির অপার অনুগ্রহে সব রোগ বালাই দূর হয়ে যেত। কারণ, কুরআন সব রোগের শেফা।
শবে কদরে নাজিল হয়ে কুরআন মানবজাতির কাছে রমজানে এসেছে, সেই মৃত জাতিকে জীবিত করতে যাদের প্রকৃত জীবনকে চিনত নাসেই জাতির দৃষ্টিকে আলোকিত করতে যারা দৃষ্টির আলো, আলোর দৃষ্টি থেকে মাহরুম ছিলসেই জাতিকে উপরে ওঠাতে যারা ছিল মাটিতে, আরো নিচে… ‘রাসুলের নবুওয়াতের দিনে সকল মাখলূকের প্রতি তাকালেন দয়াময়, তাকিয়ে সবার অবস্থা পরিবর্তন করে দিলেন, বরং যখন সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকের মধ্যে থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং নতুন চাঁদকে নির্বাচিত করলেন, তখন মানুষের সম্মান আরো বাড়িয়ে দিলেন।


আসুন আমরা কিছুক্ষণ রাসুল সা. এর সঙ্গে সময় কাটাইঃ ২য় পর্ব
OURISLAM24.COM

news-image
মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেই সর্ব প্রথম রমযানেই সেই কথাটিই বললেন যা মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোজা স্বত্রন্ত, তা আমারই জন্য, আর আমি তার প্রতিদান দেবো।সহিহ বুখারি : ১৯০৪
কেননা, রোজা তোমার এবং আল্লাহর মাঝে এবং গোপন রহস্য। তোমার রোজা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তোমার রোজাদার হওয়া আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। হতে পারে কোন দেয়ালের আড়ালে গিয়ে খেতেও পারো, পানও করতে পার। প্রকাশ্য, গোপন সব জানেন আল্লাহগোপনে তোমার খাওয়া, পান করা, যৌন কর্ম সব জানেন আল্লাহআল্লাহ আলো, অন্ধকার সব কিছুর প্রভু
যখন তুমি অন্ধকার নির্জনে কোনো পাপের আশংকা কর, আর ঐ অন্ধকারে তোমার রিপু তোমাকে প্রভুর অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে। তুমি তোমার প্রভুর দৃষ্টিকে লজ্জা কর আর ঐ পাপ কাজকে বলো যে, যিনি অন্ধকারকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তো আমাকে দেখছেন।
নামায তো অনেক মানুষের জমায়েতের মধ্যে পড়া হয়। যাকাত মানুষের সামনেই দেয়া হয়। হজ্জ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে করা হয়। কিন্তু রোজা; তুমি অন্ধকার নির্জনে, একাকী খেতেও পারো, পানও করতে পারো, কেউ বুঝতে পারবে না যে, তুমি রোজাদার নও; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তো জানেন যে, তুমি রোজাদার নও।
রোজা তোমার আর মহান আল্লাহর মাঝের এক গোপন ভেদ। আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোজা স্বত্রন্ত, তা আমারই জন্য, আর আমি তার প্রতিদান দেবো।একবার হাদিসের শব্দগুলোর সুক্ষ্মতার প্রতি খেয়াল করুন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘সে পানাহার এবং যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য।
এরপর ইরশাদ করছেন, ‘নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।যখন রোজার ঘ্রাণ ছড়ায় তখন অন্যদের হয়তো কষ্ট হয় কিন্তু সেটা সুগন্ধে পরিণত হয় এবং মহাসুগন্ধ হয়ে মহান মালিকের কাছে ভেসে যেতে থাকে। একেবারে খাঁটি মেশক হয়েমানুষের সব আমলের প্রতিদান এক গুণ, দশ গুণ, সাতশত গুণ থেকে অসংখ্য গুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটা সীমারেখা আছে। কিন্তু রোজার সওয়াব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তিনি জান্নাতে রোজাদারদের জন্য একটি দরজা নির্ধারিত করেছেন। প্রসস্থ দরজা যেটা দিয়ে শুধু রোজাদারই প্রবেশ করতে পারবে। যখন তারা সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মহান মেজবানের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসবে,
তোমরা যারা দুনিয়ায় আমার ভয়ে ভক্ষণ করোনি, এখন আমার অফুরন্ত জান্নাতি খাবার ভক্ষণ কর।
তোমরা যারা দুনিয়ায় আমার ভয়ে পান করোনি, এখন আমার জান্নাতি শরাব পান করে নাও।
তোমরা যারা দুনিয়ায় আমার ভয়ে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করোনি, জান্নাতের নেয়ামত দ্বারা সেই চাহিদা মেটাও। হাদিস শরিফে এসেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে এমন একটি দরজা আছে যার নাম হলো রাইয়ান; সেখান দিয়ে কেবল রোজাদারগণই কিয়ামতের দিন প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ সেদিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।বুখারি :১৯৯৬
রোজাদারগণ আল্লাহর অতি প্রিয়পাত্র। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা ঐ একদিন রোজার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর পরিমাণ পথ দূরে রাখবেন।বুখারি : ২৮৪০
সালাফে সালেহীনগণ এই হাদীসের অর্থ এটাই বুঝেছেন যে, আল্লাহর রাস্তায় থেকে রোজা রাখার অর্থ হলো- আপনি আল্লাহর রাস্তায় ইসলামের শত্রুদের সাথে জিহাদ রত অবস্থায় রোজা রাখবেন। যখন আপনি আপনার প্রিয় প্রাণটি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নজরানা হিসেবে পেশ করছেন তখন আপনি রোজা রাখবেন।
প্রখ্যাত জ্ঞানতাপস ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবি রহ. বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাযি. রোজাদার অবস্থায় মুতার যুদ্ধে গমণ করেন। তার পূর্বে হযরত জায়েদ ইবনে হারেছা এবং হযরত জাফর তাইয়ার রা. শহীদ হয়েছেন। এমন সময় তাকে জিহাদের জন্য ডাকা হলো যখন সূর্য প্রায় ডুবছিল। তিনি তো রোজাদার। ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত। তখন তিনি বললেন, খাবার জন্য কিছু নিয়ে আসো; যাতে আমার কিছুটা শক্তি অর্জিত হয়। ময়দানে তীর তলোয়ার ঝংকিত হচ্ছিল। চারপাশ থেকে ভেসে আসছিল আহতের মরণ চিৎকারএমন সময় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রোজাদার। যখন তিনি তার দ্বীনী ভাইয়েরা জিহাদ জিহাদ করতে করতে শহীদ গিয়েছেন। তিনি বললেন, এক হাড় নিয়ে এসো; খেয়ে একটু শক্তি হাসিল করি। যখন হাড় নিয়ে আসা হলো তিনি বললেন, সূর্য ডুবেছে কি? আমি তো রোজাদার। সঙ্গীরা বললো, না, এখনো সূর্য ডোবেনি।
তিনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে সূর্য ডুবলে হাড়ের টুকরোটি নিলেন খাওয়ার জন্য। কিন্তু খাবারে কোন মজা পেলেন না। পান করার কোন অর্থ খুঁজে পেলেন না। সামান্য সময় খুব বিলম্ব মনে হলো তার কাছে। হাড়ের টুকরোটি জমিনে ফেলে দিলেন। তরবারি কোষমুক্ত করে আসমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হে আমার নফস! আমি কসম করেছি, অবশ্যই সেখানে ঝাপিয়ে পড়বো, যদি লোকেরা কসম খেয়ে তুমুল বেগে আক্রমন করে।
আমার কী হলো যে, তুমি জান্নাতকে অপছন্দ করছো, অথচ তুমি চামড়ার থলেতে এক ফোটা নাপাক পানি ছাড়া আর কিছু নও।এরপর তিনি রোজাদার অবস্থায় জিহাদে ঝাপিয়ে পড়লেন।
আল্লাহর রাস্তায় থেকে রোজা রাখার অর্থ হলো- আপনি আল্লাহর রাস্তায় ইসলামের শত্রুদের সাথে জিহাদ রত অবস্থায় রোজা রাখবেন। যখন আপনি আপনার প্রিয় প্রাণটি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নজরানা হিসেবে পেশ করছেন তখন আপনি রোজা রাখবেন।
দেখুন এই মহাত্মাকে কিভাবে আল্লাহর মত্ত হয়ে ছুটে গেছেন নিজেকে তার প্রেমে বিলীন করার মানসিকতা নিয়ে। আমরা ইসলামের জন্য কি করেছি? না করেছি রাত্রি জাগরণ, না করেছি জিহাদ, না আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করেছি। কিন্তু আমাদের সালাফগণ! তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, রোজা একটি জীবন্ত চিন্তাকেন্দ্র, রেযায়ে এলাহীর সাথে চিরন্তন জীবন। আমি সেই ব্যক্তি যে তরবারি উঠিয়েছে তোমার নাম আকাশের উচু নক্ষত্রের উপর আলোর মিনারা হিসেবে সুউচ্চ করার মানসা নিয়ে। আমরা ছিলাম পাহাড়ের উপরে আরেক পাহাড়হয়ে, আবার কখনো কখনো হয়ে যাই সাগরের ঢেউয়ের উপর আরেক সাগর। হে আমাদের প্রভু! আমাদের প্রাণ আমাদের হাতে নিয়ে আছি তোমার প্রতিদান গনীমত ও সান্নিধ্যের আশায়।
কালিমার বিশ্বাসে জন্ম নেয়া, কালিমার বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা আমার মুসলিম ভাইগন!
মাহে রমযান আপনাদের দোড়গোড়ায় এসেছে। একেবারে কাছে। রমযান মাস যেন আমাদের কেউ বঞ্চিত ও মাহরুম অবস্থায় বিদায় না নেয়। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকে আপনাদের জন্য গনিমত মনে করুন। এটাকে এক অমূল্য সুযোগ মনে করুন। এ তওবার মাসআল্লাহর পক্ষ থেকে কবুলের মাসএ মাসে বেশি বেশি তাসবিহ, তাহলিল, যিকির আযকার, তিলাওয়াতে কুরআনে অভ্যস্থ হোন। নিজেদের ঘরকে তিলাওয়াতে কুরআন দ্বারা আবাদ করুন। অশ্লীল, অনর্থক, বেহুদা গান বাদ্য থেকে বেচে থাকুন। এসবের দ্বারা ক্বলব রাব্বুল ক্বলবের থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকে আপনাদের জন্য গণীমত মনে করুন। যেদিন মহাপরাক্রমশালী প্রভুর সামনে দাঁড়াবেন সেদিন আপনার চেহারা শুভ্র উজ্জ্বল হয়ে যাবেÑ এই মহা নেয়ামতকে গণীমত মনে করুন। সুসংবাদ সেই সব উদরের জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় ক্ষুধার্ত থাকে। মোবারকবাদি ঐ হৃদয়ের যে সন্তুষ্টির জন্য তৃষিত ছিল। মুবারকবাদি আপনাদের জন্য হে সৌভাগ্যশীল উম্মত! আপনারা এই পূণ্যময় মাস পেয়ে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রোজা রেখেছেন। মহান আল্লাহ আপনাদের এই নেক কাজের উত্তম বদলা দিন। এই মাসে আপনাদের গুনাহ মিটিয়ে নিন। তওবা নবায়ন করুন। হে রমযান! সাদর সম্ভাষন তোমাকে। আল্লাহর ফযলে আমাদের গুনাহরাশীকে মিটিয়ে দাও। আমরা যেন হাউজে কাউসারের পবিত্র পানি পান করে চিরদিনের জন্য আমাদের পিপাসা মিটিয়ে নিতে পারি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর










ঘাম মুখে চলে গেলে কি রোজা নষ্ট হবে?
OURISLAM24.COM
ramjan
আবু সাঈদ জোবায়ের : চলছে পূণ্যের বসন্তকাল রমাজান মাস। ওদিকে গরমের তীব্রতায় সেলসিয়াস ডিগ্রির পারদটাও তরতর করে বেড়েই চলছে। গবেষকদের মতে বিগত উত্তর গোলার্ধে বিগত ত্রিশ বছরে দীর্ঘ রোজা এবারই হচ্ছে। এমন গরমে সবাই কমবেশী ঘামছেন। চেহারার উপরিভাগের ঘাম যদি মুখে চলে যায় তাহলে রোজা নষ্ট হবে কি?
এবিষয়ে সঠিক কথা হল, যদি সামান্য পরিমাণ ঘাম মুখের ভিতরে চলে যায়, যার স্বাদ মুখে অনুভূত হয় না, তাহলে এতে রোজার কোন অসুবিধা হবে না। আর যদি বেশি পরিমাণে ঘাম মুখে চলে যায় তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। চোখের পানির ব্যাপারেও একই কথা। অর্থ্যাৎ, খুবই সামান্য পরিমাণ (যার স্বাদ মুখে অনুভূত হয়না) হলে রোজা ভাঙ্গবে না। আর বেশি পরিমাণে হলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। সূত্র ফতোয়া আলমগীরী, ভলিয়ম : ২ পৃ:১৭
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এআর



বাবা তুমি রোজা রাখো না কেন?
OURISLAM24.COM

যুবাইর ইসহাক :
বাবা তুমি এখন খাও কেন?
মেয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আগের মতো নিচ দিকে মাথা দিয়ে ভাত খেতে থাকেন শরীফ আহমেদ। আর সে কী উত্তর দিবে। রমজান মাসে এই দিন দুপুরে খাবার খাচ্ছেন এর উত্তরই বা কী হতে পারে।
শরীফ আহমেদ একজন ব্যবসায়ী। শহরের কয়েকটা কম্পানির মালিক। তবে তিনি ধর্মের ধার ধারেন না। কোন ওয়াক্তিয়া নামাজও পড়েন না।শুধু মাঝে মধ্যে ঈদের নামাজে দেখা যায়। তাছাড়া ইসলামের অন্যান্য বিধানও অাদায় করে না। এমনকি রমজানের রোজা পর্যন্তও।
অন্যান্য মাসের মতো এ মাসেও মদপান করে সেহরির আগে বাসায় ফিরেন। তাকে দেওয়ার কেউ নেই। দোয়া ছাড়া স্ত্রী শাহেদা টু শব্দটিও করতে পারেন না। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে অনেক দিন শাহেদাকে মারপিট করেছে। কথায় কথায় ঝগড়া, বকাবকি তো আছেই। রোজা ছাড়ার অপরাধ গুরতর এ কথা কে তাকে বুঝাবে।
ইসলামে রোজা ভঙ্গকারীর অনেক ভয়াবহ শাস্তির নির্দেশ এসেছে। রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের একটি রোজা ভাঙ্গল, সে যদি সারা বছর রোজা রাখে তারপরও রমজানের এক রোজার সমান হবে না। তাছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারীর কাফ্ফারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছেসর্ব নিম্ন কাফ্ফারা হচ্ছে, একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখা।
রোজার অনেক ফজিলতও আছে, রাসুল সা. বলেছেন, রোজাদারের মুখের দূর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকে আম্বরের চেয়ে পছন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, রোজা কেবল আমার জন্য, আমি তার প্রতিদান দেবো।
রিমি তাদের একমাত্র মেয়ে। শাহেদার সঙ্গে বিয়ের আট বছর পর তাদের কোলে রিমি আসে। এর ভেতরে কোনো সন্তান হয়নি। তাই শরীফ মেয়েকে খুব ভালোবাসে। বর্তমানে রিমির বয়স ১০ বা ১২ হবে। স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। একটু একটু করে সবকিছু বুঝে। মায়ের রোজা রাখা আর বাবার না রাখায় তাকে বেশ চিন্থিত করে।
শরীফ আহমেদ রমজানেরর রোজা না রাখলেও শাহেদা পুরোই বিপরীত। কখন রোজা ভাঙ্গেন না। বরং সময় মতো সব ওয়াক্তের সালাত আদায় করেন। শাহেদা স্বামীকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হন। বরং দিনের বেলা অন্যান্য দিনের মতো শাহেদাকে রেঁধেও দিতে হয়। তা না হলে তার উপর চলে অত্যাচার। তাই বাধ্য হয়ে শাহেদা রাঁধে।আড়ালে চোখ মুছে।
বাবা তুমি রোজা রাখ না কেন? সেঁজুতির বাবা তো রোজা রাখেন। মেয়ের ২য় বার প্রশ্নে শরীফ আহমেদ বেশ লজ্জিত হয়ে গেল।
শাহেদা একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ না কেন?
শরীফ আহমেদের মুখ লজ্জাল লাল হয়। খাবার প্লেট রেখে উঠে যায়। মনে মনে ভাবে আর কখনও মেয়ের সামনে খাবে না।
পরদিন সেহরির সময় রিমি তার মায়ের সঙ্গে উঠে। বাবা তখনও ঘুমে। রিমি মাকে প্রশ্ন করে, বাবা কী সেহরি খাবে না? মা বলে, তোর বাবা রোজা রাখবে না, তাই সেহরিও খাবে না।
কিন্তু রিমির কষ্ট হয়। সে বাবাকে ডাকে। মেয়ের ডাকে শরীফ আহমেদ ঘুম থেকে উঠেন। দ্বিতীয়বারের মতো লজ্জায় তার মুখ লাল হয়। তিনি সেহরি খেতে বসেন। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, কখনো রোজা ভাঙ্গবেন না।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর / আরআর







2 comments:

  1. পোষ্টটি খুবই দরকারী , এ জাতীয় আরো পোষ্ট পরতে এই সাইটে গুরে আসতে পারেন www.ikhlas24.com

    ReplyDelete
    Replies
    1. পোষ্টটি খুবই দরকারী , এ জাতীয় আরো পোষ্ট পরতে এই সাইটে গুরে আসতে পারেন https://ikhlas24.com/

      Delete