Thursday, February 27, 2020

অবিশ্বাসের ভাইরাস (১ম অংশ)








অবিশ্বাসের ভাইরাস












সদালাপ ব্লগ ( http://shodalap.org )


মুক্তমনা ও নাস্তিক মিলিট্যান্সি

সূচনা
আমাদের সমাজে কিছু কিছু লোক নিজেদেরকে মুক্তমনাভাবেন। তাদের দাবি হচ্ছে তারা নাকি মুক্ত-চিন্তক, যুক্তিবাদী। তারা ট্র্যাডিশন বা প্রাচীন প্রাতিষ্ঠানিকতা-মুক্ত অথবা এগুলো থেকে মুক্ত হতে কাজ করছেন এবং মানুষকে মুক্ত করতেও চাচ্ছেন। তো হঠাৎ করে মানুষের মাথায় কি 'মুক্ত-চিন্তা' এসে হাজির হয়, না চিন্তা আসলে ঐতিহাসিক, মানুষের ক্রমান্বয়িক চিন্তার ফল? যদি তা'ই হয়, তবে বিষয়টি কী তা দেখা দরকার।  
এখানে মুক্তমনাহওয়ার যে দাবি বা বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হচ্ছে আমরা প্রথমে সেটা বুঝার চেষ্টা করব। প্রথমে মুক্তশব্দটি বিবেচনা করি। সরল-সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের ভাষার সকল শব্দ তাদের বিপরীত ধারণার মোকাবেলায় অর্থ লাভ করে। ঠাণ্ডা গরমের মোকাবেলায়, শক্ত নরমের মোকাবেলায়, সত্য মিথ্যার মোকাবেলায় ইত্যাদি। আমরা যখন বলি মুক্ত আকাশের পাখি’, তখনমুক্তকোন্‌ জিনিস তা সহজে বুঝতে পারি। আমরা যখন বলি পাখিটি খাঁচায় বন্দী, অথবা লোকটি এখন রাজার বন্দীশালায় আবদ্ধ, তখন আবদ্ধ, বন্ধন আর মুক্ত অবস্থার কথা বুঝি। উদাহরণের পাখিটি নিজ ইচ্ছায়খাঁচায় গিয়ে আবদ্ধ হয়নি আর বন্দীশালার লোকটিও নিজ ইচ্ছায়বন্দীদশা গ্রহণ করেনি। এখানে সতত ইচ্ছার স্বাধীনতা ও অধীনতা প্রকাশ পায়। আমরা যদি বন্দীশালার লোকটির ব্যাপারে বলি, সে এখন মুক্ত’, তখন বুঝি যে এখন তার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। সে এখন যথেচ্ছ বিচরণ করতে পারে। তার কর্মে ইচ্ছার স্বাধীনতা এসেছে; সে যেখানে সেখানে যেতে পারে। অর্থাৎ এখন সে স্বাধীন: সর্বাবস্থায় মুক্ত।
কিন্তু যে ব্যক্তি কোন বন্দীশালায় আবদ্ধ ছিল না, এবং এখনও নয়, সে যদি বলে, ‘আমি এখন মুক্ত মানুষতাহলে বুঝতে হবে শব্দের রূপকতা (metaphoricity) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরণের রূপক ব্যবহার অনেক ভাবে করা যেতে পারে। এক ব্যক্তি বন্দীশালার ভিতরে থেকেও বলতে পারে, "আমি মুক্ত আকাশের পাখি।" এখানে শ্লেষাত্মক অথবা ব্যঙ্গাত্মক অর্থও আসতে পারে। এমন ব্যবহার সব ভাষাতে আছে। আমি গরীব হয়েও বলতে পারি, "প্রাচুর্যের মধ্যে ডুবে আছি।" আপনি বদ্ধমনাহয়েও বলতে পারেন মুক্তমনা, মুক্ত-চিন্তক। কেননা আপনি নিজের জন্য যখন কোনো শব্দ নির্বাচন করেন, তখন কোন্‌ শব্দটি নির্বাচন করবেন তা একান্ত আপনার ইখতিয়ারে। আপনার কানা ছেলেকেও নাম দিতে পারেন পদ্মলোচনএতে কারো বলার কিছু নেই।
মনে রাখতে হবে যে কোন শব্দের অর্থ তার শব্দের ভিতরেইনিহিত নয়, বরং অর্থ হচ্ছে সামাজিক, প্রথা-ভিত্তিক, ও সামাজিক convention এর অংশ, (আমরা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ভাষিক প্রথার ভিতরেইথাকি, আমাদের অর্থ-বিনিময় [communication] এই প্রথার বাইরে নয়)। আবার অর্থনিছক কোন একটি শব্দ-কেন্দ্রিক নয়, বরং অর্থের-সংযুক্তিতে জড়িত অন্যান্য শব্দের জিঞ্জিরে (chaining with other words) গোটা ভাষা ব্যবস্থার (system of language) মধ্যে পরিব্যপ্ত।
মুক্তমনাযদি স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন প্রত্যয় কেন্দ্রিক হয় এবং এরই প্রেক্ষিতে যদি এক ব্যক্তি বলে, "আমি খোদাতে বিশ্বাস করি না," এবং অন্য ব্যক্তি যদি তার আপন স্বাধীন চিন্তা-চেতনা ও বিবেক অনুযায়ী বলে, "আমি খোদাতে বিশ্বাস করি", তবে উভয়ই মুক্তমনা হওয়া উচিত। কিন্তু, প্রথম ব্যক্তি যখন বলবে, "না, খোদাকে অস্বীকার না করলে মুক্তমনা হওয়া যাবে না", তখন বুঝতে হবে সেই লোকটির কোন মতলবআছে, সে কুযুক্তি উত্থাপন করছে। তারপর যখন সে জেদি হয়ে উঠবে এবং তার শেষ কথা হবে, 'আপনিখোদাকে অস্বীকার করলেই মুক্তমনা হবেন', তখন বুঝতে হবে, এই মুক্তমনাশব্দটি নিয়ে এখনধাপ্পাবাজিশুরু হয়েছে, ভাষার রাজনীতি শুরু হয়েছে। ধাপ্পাবাজ কোন নির্দিষ্ট কারণে নিজের জন্য মুক্তমনাশব্দটি ব্যবহার করছে। সে তার আপন দাবীর বিপক্ষে স্ববিরোধী (inconsistent) হয়ে ভাব ও শব্দের এমন ব্যবহার করছে, কেননা, it cannot be empirically proven that there is no God অর্থাৎ কোন বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খোদা নাই বলে প্রমাণ করা যাবে না, সুতরাং চোখ বন্ধ করে খোদাকে অস্বীকার করলেই মুক্তমনা হওয়া যায় না। বরং এক বিশ্বাস থেকে আরেক্ বিশ্বাসে যাওয়া হয় মাত্র।
আবার মুক্তমনা হতে হলে পূর্ববর্তী সমাজ সভ্যতা, আচরণ, বিশ্বাস সব কিছুতেই সন্দেহবাদীহতে হবে, প্রথাগত বিষয় (tradition) সমঝে না এলেও বর্জনের জন্য আহবান জানাতে হবে এবং আক্রমণাত্মক হতেই হবে, এটা না হলে হলেমুক্তমনাহওয়াই যাবেনা এমন দাবি যখন কোন লোক করবে, তখন সে ব্যক্তিকে মুক্তমনা না বলে বরং বক্রমনাই বলা যেতে পারে। বক্রমনা যদি 'সন্দেহবাদী' হতেই হয়, তবে তার নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে পারে। সে তার নিজ মা-বাপের সন্তান কি-না এটাও সন্দেহে আনতে হবে, ব্যক্তির identity-এর মূল স্থান এখানে। তাকে প্রথমে DNA টেস্ট দিয়ে শুরু করতে হবে। তারপর, তার পরিবারের সবার, তার মা-বাপ সহ। পরিবারের সয়-সম্পত্তি দেখতে হবে। তার পিতা-প্রপিতা ঘুষ ও চুরির মাধ্যমে ধন-সম্পদ অর্জন করলো কি-না তা দেখতে হবে। সম্ভাব্য অসত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করলে সে তার নিজের সাথেই প্রতারণা করবে, তাই এগুলো তার জানা চাই। ভাল কাজ ঘর থেকে শুরু হওয়া উচিত। এগুলো সন্দেহবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসহকারে অনুসন্ধান চালানো দরকার। ধর্ম তো অনেক পরে আসবে।
অতঃপর নিজ-জ্ঞানেরপ্রেক্ষিতের উপর সন্দেহবাদী হতে হবে। সে যা জানে তা কীভাবে জানে এই নিশ্চয়তায়উপনীত হতে হবে। এটা হচ্ছে দর্শনের মূল স্থান। কোন ব্যক্তি তার নিজের জ্ঞানেরস্থান স্পষ্ট হওয়ার আগেই অপরকে সন্দেহবাদী বানানোর ধৃষ্টতা না দেখালেই ভাল।
মূল কথা হচ্ছে এক ব্যক্তি যদি কোন ব্যাপারে সন্দেহপোষণ করে, তবে অপর ব্যক্তি সেখানে সন্দেহনাও করতে পারে, উভয়ের পক্ষে/বিপক্ষে যুক্তির এবং অযুক্তির স্থান থাকতে পারে। কেননা, উভয়ের দেখার প্রেক্ষাপট, দেখার থিওরি, ভিন্ন হতে পারে। ভাষা-বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদিতে এভাবে ভিন্নতায় দেখার প্রেক্ষিত উপস্থাপন করে। আপনার কাছে যা সন্দেহজনক, আমার কাছে সেই সন্দেহ নাও থাকতে পারে, কেননা আমি বিষয়টি অন্যভাবে দেখে নিয়ে থাকতে পারি, আপনার মতো নয়। কিন্তু আপনার সন্দেহবাদকেই আপনি যখন আমার উপর চাপিয়ে দেবেন এবং আমি তা মানতে না পারলে, আপনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবেন, এমনটি হচ্ছে অসভ্য লোকের কাজ, ইতর প্রকৃতির কাজ, হিটলারের কাজ। হিটলারের দলও নিজেদেরকে মুক্তমনা ভাবতো, হিটলার নাস্তিক ছিল, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানবাদের ভিত্তিতে উন্নত সমাজ-সভ্যতার কথা বিবেচনা করত।
অন্ধ বিশ্বাস
মুক্তমনাদের খেলা হচ্ছে ভাষিক ডিগবাজি: প্রতিপক্ষকে নেতিবাচক ব্যাখ্যায় আনা। ধাপ্পাবাজ নিজের জন্য মুক্তমনাশব্দ নির্বাচন করে যখন বলে উঠবে, "আমার আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে অন্ধবিশ্বাসে নয়", তখন রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজদের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ধাপ্পাবাজি অনেকটা বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, বক্তব্যের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
এখানে এই ক্ষুদ্র বাক্যাংশ (phrase), ‘অন্ধ বিশ্বাস’-এর ভাষিক ব্যবহার কীভাবে সমঝের স্থানকে (place of perception) এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখুন। এখানে অন্ধশব্দটি বিশেষণের বাইরে গিয়ে metaphor হয়ে কাজ করছে এবং এই ব্যবহারের মাধ্যমে ধারণার মূলবস্তুকে লক্ষ্যচ্যুত করা হচ্ছে, যুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। অন্ধ রূপকতা (metaphor of blindness) উত্থাপনে চিন্তার লক্ষ্য রূপক বস্তুর দিকে নিবিষ্ট হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট হচ্ছে এবং এই রূপকতার সাথে জড়িত অর্থ-চিত্র (picturesque meaning) ধারণায় উপস্থিত হচ্ছে। কেউ যখন বলে লোকটা কুত্তামনাতখন প্রবক্তা অপর ব্যক্তির মানবতাকে চূর্ণ করে তার বক্তব্যের স্থান তৈরি করে। কাউকে প্রথমেই অন্ধ-বিশ্বাসী আখ্যায়িত করে তার মানবীয় চিন্তাশক্তিকে বিকলাঙ্গ হিসেবে দেখিয়ে, (আক্রমণাত্মক হয়ে), নিজের বক্তব্যের স্থান তৈরি করা হয়। মুক্তমনার ধাপ্পাবাজ প্রবক্তারা এভাবেই ভাষার ব্যবহারে তাদের নাস্তিক-ধর্মের প্রচারণা চালাবার প্রয়াস পায়। এটা মূলত শাব্দিক অর্থের মুক্তমনা-বৈশিষ্ট্য বহন করে না, ধাপ্পাবাজ মানসিকতা বহন করে।
এবারে চিন্তা করুন, যে লোকটি প্রথমে নিজের জন্য মুক্তমনাশব্দটি নির্বাচন করল, তারপর যখন খোদাতে বিশ্বাসীদের মোকাবেলায় তার অবস্থানকে 'চাক্ষুষ' এবং অন্যের অবস্থানকে অন্ধশব্দে আখ্যায়িত করল, তখন তার ভাষিক আচরণ ও ব্যাখ্যার প্রকৃতিও অনেকটা স্পষ্ট হল। সে তার এই বৈশিষ্ট্যই সর্বত্র প্রকাশ করবে, তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে এর রূপায়ন ঘটাবে। এমন লোক বিশ্বাসযোগ্য নয়। যাকে সে অন্ধ বলছে, সে তার নিজ বিশ্বাসেরআলোকে তা করেছে, এটা তার নিজের দেখা ব্যাখ্যা, কিন্তু তার বক্তব্যের বাইরে বাস্তবতা ভিন্ন। অধিকন্তু, সে অপরকে তার নিজ-মতো সংজ্ঞায়িত করছে, হীন করছে। তার বিশ্বাসের প্রচারের জন্য মুক্তশব্দটি বেছে নিয়ে অপরকে 'অন্ধ' আখ্যায়িত করছে। সে যা করছে, সেটা তার "ধর্মীয়" কাজ। সে আরেক ধরণের "ধর্ম-ব্যবসায়ী"। সে মূলত পদ্মলোচন। শাব্দিক ব্যবহারের নব্য-ম্যাজিক দেখিয়ে তার ধাপ্পাবাজি প্রতিষ্ঠা করছে। ভাষার শব্দ সম্ভার থেকে যেগুলো পজিটিভ সেগুলো তার নিজের জন্য এবং যেগুলো নেগেটিভ সেগুলো প্রতিপক্ষের জন্য নির্ধারণ করছে। প্রতিপক্ষের বিশ্বাস অন্ধ”, আর তার নিজের বিশ্বাস চাক্ষুষ (আলোকিত)! হায় চাতুর্য! কী যে তার খেলা! লক্ষ্য রাখতে হবে, সে কীভাবে arbitrarily “অন্ধবিশেষণটি অপরের সাথে জুড়ে দিয়েছে। খোদা নাই” – এটাও তো যুক্তিতে প্রমাণিত নয়, empirically-ও প্রমাণিত নয়, তাহলে নাস্তিক্যবাদও তো সাক্ষাৎ অন্ধহতে পারে।
নতুন বোতলে আরেক ধর্ম
মুক্তমনারা তাদের নতুন ধর্মকে পুরাতন ধর্মের মোকাবেলায় ভাষার মারপ্যাঁচ ও রূপকথায় সাজাচ্ছে: বোতলটা নতুন। মানুষকে এভাবে তাদের নব্য-ধর্মেশিকারকরতে চায়। মুক্তমনা হতে হলে নাকি বংশ পরম্পরায় যা আসে তাকে অস্বীকার করতেই হবে। কোথাও যদি কোন আপ্তবাক্য থাকে যেমন, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তা অমনিই উড়িয়ে দিতে হবে। কেননা এটা বংশ পরম্পরায় চলে এসেছে। কিন্তু কথা হল কোন আপ্তবাক্যিক ধারণা/বিশ্বাস যদি বংশ-পরম্পরায় এসে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে কী অবলীলায় পরিত্যাগ করতেই হবে? এক শ্রেণীর ধারণা পরিত্যাগ করে অন্য শ্রেণীর ধারণা গ্রহণ করাতে, অথবা এক গ্রুপের বিশ্বাস ও আদর্শ বর্জন করে অন্য গ্রুপের বিশ্বাস ও আদর্শ গ্রহণ করাতেমুক্ত-ধারণাআসে কীভাবে? কোন 'স্বাধীন ব্যক্তি' খোদাতে বিশ্বাস করলেই তার ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়ে বসে? এটা তো নীরেট ধাপ্পাবাজি।
মুক্তমনারা কম্পিউটারের উপমা দিয়ে বলতে চায় বিশ্বাসীদের মাথায় নাকি ভাইরাস ঢুকেছে, কিন্তু এই স্থানেও তারা তাদের ইচ্ছেমত অপরের উপর নিজেদের নির্বাচিত শব্দআরোপন করছে। তারা নিজেরাই যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের প্রতিপক্ষও তাই বলতে পারে এবং এর পিছনে যুক্তিও থাকতে পারে। বলা যেতে পারে যে প্রচলিত হাজার হাজার বছরের সামাজিক প্রথায় তারাই ভাইরাস।
এই মুক্তমনাদের আরেকটি হাস্যকর বক্তব্য হচ্ছে তারা নাকি বিজ্ঞানমনষ্ক অন্যরাও বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে, “সংশয়ীদৃষ্টিকোণ দিয়ে, মিথ ও অতিকথাকে বিশ্লেষণ করতে হবে। কিন্তু বিশ্লেষণের পরে কেউ খোদায় বিশ্বাসে উপনীত হতে পারবে না, কেননা সেই সিদ্ধান্তের বিপরীতে গেলেই সর্বনাশ আপনি মুক্তমনা থাকতে পারবেন না! বলতে হয়, হায়রে ঢেঁকি! তুমিও কি অনার্য’?
যুক্তি বটে, মুক্তমনা বটে!
বঙ্গাল মুক্তমনারা নিজেদের জন্য সংজ্ঞাগত কিছু প্রশস্ততা খুঁজছে। তাদের সংজ্ঞাতে, “নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী (agnostic), সংশয়বাদী (skeptic), মানবতাবাদীদের (humanist) সবাইকে সাধারণভাবে মুক্তমনা সদস্যহিসেবে গণ্য করা হয়।[১]
এখানে যাদেরকে সাধারণভাবে (generally) ‘মুক্তমনাধারণার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে তারা (অজ্ঞেয়বাদী/সন্দেহবাদী ও নাস্তিক মহল), ‘সাধারণভাবেমুক্তমনার প্রত্যয় ও দাবীতে নেই। ফুকোঁ (Michel Foucault), লিয়োটার্ড, (Jean-François Lyotard), হাইডেগার (Martin Heidegger), রোরটি (Richard Rorty), ডেরিডা (Jacques Derrida) এবং এমন আরও অনেক পোস্টমডার্ন দার্শনিক রয়েছেন যাদের কেউ অজ্ঞেয়বাদী, কেউ নাস্তিক কিন্তু ওরা এনলাইটনম্যান্টের (বিজ্ঞানবাদ ও যুক্তিবাদের মাধ্যমে মানব জাতির সব সমস্যার সমাধানের চিন্তা, বা তাদের যুক্তিতেই মুক্তি, বিশ্বাসীরা যুক্তিহীন, ভাইরাস-মস্তিষ্কসম্পন্ন ইত্যাদি) metanarrative থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফুকোঁ মুক্তিবাদের (emancipation) বক্তব্যে বিশ্বাসই করতেন না, বরং প্রত্যেক emancipatory বক্তব্যকে এক ধরণের শৃঙ্খল থেকে আরেক ধরণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার আহবান মনে করতেন। রোরটি এগুলোকে ভাষার খেলা মনে করতেন (দেখুন Contingency, Irony, and Solidarity)তার কাছে এগুলো এক শ্রেণীর শব্দমালার মোকাবেলায় আরেক শ্রেণীর শাব্দিক ব্যবহারের যুদ্ধ। সুতরাং এখানে সাধারণভাবে অজ্ঞেয়বাদী ও নাস্তিক্যবাদীদের মুক্তমনার দর্শনে টানাো এক ধাপ্পাবাজি। কেননা, সবাই কিন্তু এই মুক্তমনাবাদী সপ্তদশ/অষ্টাদশ শতাব্দীর এনলাইটনম্যান্টের চিন্তায় নেই, সেই মেটানেরেটিভ এখন মৃত। (তবে এক গোষ্ঠী যে এটাকে ধরে রাখতে চাইবে না, তা নয়)।
এখন একদল গোঁড়াপন্থি-নাস্তিক অপরের ধর্ম নিয়ে ক্যাট-ক্যাট, ঘ্যাঁট-ধ্যাঁটেই আবদ্ধ, যারা বিশ্বের প্রচলিত ধর্মগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে এই জগতে মানব-স্বর্গ রচনা করতে চায় এবং এই উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব/বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মিলিট্যান্ট কর্মকাণ্ডে বিষ্শ্বের সকল নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদী জড়িত নন। আমাদের অনেক শিক্ষক, সহপাটি ছাত্র, কর্মজীবনে অনেক লোকের মধ্যে নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদী দেখেছি কিন্তু তাদের কাউকে মুক্তমনা প্রত্যয় ও কর্মে দেখিনি, কোন উগ্রতাও দেখিনি। সুতরাংউগ্র-বঙ্গাল-গোঁড়া-নাস্তিকরাসকল অজ্ঞেয়বাদী ও নাস্তিককে এক ভাবা তাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে। এই মুক্তমনা নামের উগ্রপন্থিরা  সমাজে যতটুকু সাম্প্রদায়িক সু-সম্পর্ক রয়েছে, সেই অবশিষ্ট শান্তিটুকু নস্যাৎ করে দিতেই ধর্ম-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এরা নাস্তিক মৌলবাদী।  
ধার্মিক কি মুক্তমনা হতে পারে?
ধার্মিক কি মুক্তমনা হতে পারে? না, এটাই মুক্তমনাদের উত্তর। তাদের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি আল্লাহতে বিশ্বাস করবে সে মুক্তমনা হতে পারবে না। কেন? এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে তারা যে যুক্তির কসরত করে, (হাসি সম্বরণ করে) সেই কসরত দেখা যাক। এই নিচের যুক্তিটিমুক্তমনা সাইটের পরিচিতি থেকে গৃহীত [1] )বিষয়টি স্পষ্ট করতে স্কয়ার বন্ধনীর ভিতরে নীল রঙের লেখায় আমার নিজের কথা সংযোগ করেছি ও আন্ডারলাইনিং ব্যবহার করেছি।
কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয় [লক্ষ্য করুন বিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারাকেই’ ‘মুক্তমনাবলা হচ্ছে। বিশ্লেষণের ক্ষমতাই কি সঠিক যুক্তি? তারপর এখান থেকেই পরবর্তী কুযুক্তি লক্ষ্য করুন] কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা তা না করে নিজের ধর্মটিকেই আরাধ্য মনে করেন, কোন কিছু চিন্তা না করেই  নিজের  ধর্মগ্রন্থকে ঈশ্বর-প্রেরিতবলে ভেবে নেন [এখানে অন্যদের উপর নিজ ধারণা প্রক্ষেপণ করা হচ্ছে। ওপিনিয়ন এবং প্রেজুডিস প্রকাশ পাচ্ছে। তারপর, তারা বুঝি কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই নিজ ধর্মকে ঈশ্বর প্রেরিত মনে করেন? কীরে পণ্ডিত! কী হচ্ছে এসব? তারপর, বিশ্বাসীর চিন্তা-ভাবনা  যে কোনো যৌক্তিক, ভাষিক ও দার্শনিক পথ অতিক্রম করে আসেনি এটা কিভাবে জানা হলকী হচ্ছে ? এখানে শুধু  হেয়ালিভাবে বাক্য রচনা হচ্ছে!]  স্রেফ ঘটনাচক্রে  [?] পৈত্রিক-সূত্রে পাওয়া যে ধর্মটিকে নিজেরবলে মনে করেন সেটাকেই ঈশ্বরের মনোনীত একমাত্র ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। [স্রেফ? তারপর, পৈত্রিক সূত্রে কিছু পেলেই কী তা বর্জনীয় হতে হবে? নাস্তিকতাবাদের ধারণা কী মুক্তমনারা নিজেরাই প্রবর্তন করেছে, না তারা অন্যের সূত্রে তা পেয়েছে? এখানে মুক্তমানাদের যুক্তিহীনতাই প্রকাশ পাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে, বিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারার  পরও তা ত্যাগ করতে হবে!  এখানে তাদের নিজ খোঁড়া যুক্তিই বড় সমস্যা।] আমাদের মতে কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র শোনা [শুধুমাত্র শোনা কথা?] কথার ভিত্তিতে বাইবেল, কোরান বা বেদকে অন্ধভাবে [অন্ধভাবে!] অনুসরণ করে, বা নবী-রসুল-পয়গম্বর-মেসীয়তে বিশ্বাস করে নিজেকে কখনোই ফ্রি থিঙ্কারবা মুক্তমনা বলে দাবি করতে পারেন না [কিন্তু অন্ধভাবে খোদা-নাই বললে সে মুক্তমনাই থেকে যাবে?] মুক্তমনাদের আস্থা তাই বিশ্বাসে নয়, বরং যুক্তিতে [১]। [এখানে যুক্তিহীনতা দারুণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রকৃতির লোকই হচ্ছে যুক্তির দাবীদার!]
এই প্যারাগ্রাফটি মুক্তমনাদের যুক্তির একটা নমুনা হিসেবে নেয়া যেতে পারে। প্রথমে কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়কিন্তুমুক্তমনাদের আস্থা তাই বিশ্বাসে নয়, বরং যুক্তিতে।একজন যুক্তিবাদী কিভাবে এই প্যারাগ্রাফ তৈরি করতে পারে এবং নিজের যৌক্তিক দুর্বলতা দেখতে পায়না, সেটাই হয় যৌক্তিক প্রশ্ন। এত ধানাই পানাই কেন? এক ব্যক্তি তার বিশ্বাসের যৌক্তিক justification কার কাছ থেকে গ্রহণ করবে? (প্রোপাগাণ্ডিস্ট ইসলাম-বিদ্বেষী নাস্তিকদের কাছ থেকে?) বড় বড় দার্শনিকদের অনেকে বিশ্বাসী ছিলেন এবং অনেকে ছিলেন না। এই justification এর জন্য কি কোনো স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি রয়েছে যে এর মধ্যে arbitration করবেন, না উপরের বাক্যটি যে মুক্তমনা তৈরি করেছেন তার যুক্তিইহবে শেষ কথা? এই প্যারাগ্রাফে উগ্র নাস্তিকরা যে অন্ধমনা, মৌলবাদী এবং ধাপ্পাবাজ তা নিজেরাই প্রমাণ করে।
এই তথাকথিত মুক্তমনাদের দৃষ্টিতে আজন্ম লালিত ধর্মীয় ও সামাজিক বিবর্তনমূলক সকল সংস্কৃতি 'অপসংস্কৃতি'তাদের জিহাদও তাদেরই যুক্তিপ্রসূতঅপসংস্কৃতিরবিরুদ্ধে!
এখানেও তারা অপরের সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতিবলছে, ইতিবাচক শব্দ তাদের, এবং নেতিবাচক শব্দ ওদের। এবারেই হয়তো স্পষ্ট যে কেন তারা নিজেদের জন্য এক শব্দ-শ্রেণী ব্যবহার করে এবং প্রতিপক্ষের জন্য আরেক ধরণের শব্দ-শ্রেণী (নিজেরা মুক্তমনা, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক ইত্যাদি আর প্রতিপক্ষ ধর্মান্ধ, যুক্তিহীন, বিজ্ঞানবিমুখ) ব্যবহার করে। এটাই তাদের নতুন ধর্ম। এই ধর্ম এতই অন্তঃসারশূন্য যে অপরের বিপক্ষে প্রোপাগাণ্ডা ছাড়া নিজের ধর্মে এমন কিছু নেই যা দিয়ে তাদের প্রচারণা কার্য চালাতে পারে।
মুক্তমনারা কি ধর্ম-বিরোধী?
মুক্তমনাদের ধাপ্পাবাজির নমুনা আরেকটি প্যারাগ্রাফ থেকে নেয়া যাক। এখানেও তাদের শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন ও প্যারাগ্রাফের প্রথমাংশ, মধ্যাংশ এবং শেষাংশের দিকে কী হচ্ছে তা খেয়ালে রাখবেন। আগের মতো, স্কয়ার বন্ধনীর নীল রঙের লেখায় আমাদের কথা এবং বোল্ডিং ও আন্ডারলাইনিং আমাদের, উৎস প্রাগুক্ত।   
মুক্ত-মনারা ধর্ম-বিরোধী নয়, বলা যায় অনেক মুক্তমনাই ধর্মের কঠোর সমালোচক। কারণ তাঁরা মনে করেন ধর্ম জিনিসটা পুরোটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুক্তমনারা সর্বদা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির [বরং সপ্ত/অষ্টাদশ শতাব্দীর  selective দৃষ্টিভঙ্গি!] প্রতি আস্থাশীল, আজন্ম লালিত কুসংস্কারে নয়। কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ আসলে নিজের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। তবে মুক্তমনাদের ধর্ম-বিরোধী হওয়ার [আগের আন্ডারলাইনিংটা স্মরণ করুন এবং হাসি সামলিয়ে পরের generalised প্রোপাগাণ্ডামূলক বাক্য রচনা দেখুন!] একটা বড় কারণ হল, ধর্মগুলোর মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন আয়াত এবং শ্লোকে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে ঢালাওভাবে, কখনো দেয়া হয়েছে হত্যার নির্দেশ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্ম আসলে জ্বিহাদ, দাসত্ব, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হোমোফোবিয়া, অ-সহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন এবং সমঅধিকার হরণের মূল চাবিকাঠি হিসেবে প্রতিটি যুগেই ব্যবহৃত হয়েছে।
মুক্ত-মনারা ধর্ম-বিরোধী নয় তবে মুক্তমনাদের ধর্ম-বিরোধী হওয়ারকারণ আছে। কেননা ধর্ম মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত, ধর্ম কুসংস্কার, আর মুক্তমনারা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিরঅধিকারী! নিজেদের ব্যাপারে সুন্দর সুন্দর বাক্য রচনা, ইতিবাচক শব্দ চয়ন এবং প্রতিপক্ষের ব্যাপারে বিপরীত ধরণের বাক্য ও শব্দ নির্বাচন এগুলো হচ্ছে এই ধাপ্পাবাজদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। যারা একটি প্যারাগ্রাফের সীমানায় যুক্তি টিকিয়ে রাখতে পারে না, তারাই অপরকে যুক্তি শিখাতে চায়, যে নিজেই বিদ্বেষ ছড়ায় সেই আবার অপরের বিদ্বেষ নিয়ে সংগীত রচনা করে, নিজের prejudice অন্যের উপর ধারণ করে। এটাই হচ্ছে উগ্র-পন্থি নাস্তিকদের আলোকিত পথ, এনলাইটনম্যান্ট
মানব জাতির ইতিহাসে মানুষ অনেক পথ অতিক্রম করেছে এবং এখনো করছে। অতীতে যেমন মানুষে মানুষে হানাহানি করেছে, তেমনি আজও করছে। আগেও যুদ্ধ হয়েছে, এখনো হয়। সকল দ্বন্দ্ব সংঘাতে অনেক ধরণের উপাদান কাজ করতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে স্থানভেদে ধর্মও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কিন্তু দ্বন্দ্ব-সংঘাতে মানুষের লোভ-লালসা, তাদের প্রকৃতিজাত হিংস্রতা, আমিত্বের-প্রভাব, সমঝের ভিন্নতা, গোত্রীয় স্বার্থ, রাজকীয় স্বার্থ, রাজ্য বিস্তৃতি, অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি অনেক কিছু কাজ করত এবং এখনো করে। কিন্তু ধাপ্পাবাজ অজ্ঞতাবশত অথবা তার নিজ নাস্তিক্যধর্ম প্রচারের জন্য দুনিয়ার (অতীত-বর্তমানের) সব দাঙ্গা-হাঙ্গামাকে ধর্মের সাথে সংযুক্ত করে, এবং জোড়াতালি দিয়ে ধর্মের বিপক্ষে প্রোপাগাণ্ডা করে। মানুষের বিশ্বাস ও আবেগের স্থানে আক্রমণ করে।
কোন নাস্তিক ব্যক্তি যদি ভাবে যে কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ আসলে নিজের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়”, তবে এটা তার নিজের বেলায় গ্রহণ করাতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু তার নিজ ব্যাখ্যার আলোকে অপরের বিশ্বাস ও প্রথাকে অপসংস্কৃতি সাব্যস্ত করে, তাদের উপর চড়াও হওয়া সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না, এই অধিকার তার নেই। আবার এক ব্যক্তি যদি তার নিজ অযৌক্তিকতাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি মনে করে, তবে সে স্বাধীনতা তার আছে, কিন্তু অন্যের উপর চড়াও হওয়ার স্বাধীনতা তার নেই। এটা সভ্য নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। উগ্র-নাস্তিকতাকে এক ধরণের হিটলার-মানসিকতার সাথে তুলনা করলে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। প্রয়াত মিলিট্যান্ট নাস্তিক হিচেন্স ছিলেন ইরাক আক্রমণের প্রবক্তা, স্যাম হ্যারিস শুধু সে যুদ্ধের পক্ষেরই নন বরং বোমা ফুটিয়ে গোটা আরব-ভূখণ্ডের সকল আরব মুসলমানদেরকে উড়িয়ে দেয়ার পক্ষেও। এই হচ্ছে তাদের মানসিকতা।
ওদের যুদ্ধ, ওদের প্রোপাগাণ্ডা, ওদের মিথ্যাচার হচ্ছে ধর্মের বিরুদ্ধে এটা তাদের নিজ কথাতেই প্রতিষ্ঠিত। তাদের থলের বিড়ালটি তারা বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখতে পারেন না। তাদের প্যারাগ্রাফের শুরুতে এককথা, মধ্যখানে এককথা এবং শেষাংশে আরেক কথা কিন্তু তবুও বিজ্ঞান-মনস্ক, যুক্তিবাদী!
শেষ কথা
আমাদের শেষ কথা হল এই যে আজকের বিশ্ব সভ্যতার মূলে রয়েছে ধর্মীয় সংস্কৃতির রূপায়ণ। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার সমাজের সন্তান। তার সভ্যতা তার ভাষাকে যেভাবে সাজিয়েছে, সে বাল্যকালে ভাষায় প্রবেশ করার সাথে সাথে সেই ভাষাই তার সজ্ঞাকে সচেতন করে, তাকে আমিত্বেরচেতনায় আনে। সে ভাষা ও সংস্কৃতিতে সৃষ্ট চৈতন্যময়ী সত্তা। তার যুক্তির ব্যবহার ভাষিক, কিন্তু ভাষা বস্তুর আয়না নয়, বস্তুর প্রতিনিধিও নয়, যুক্তির ভাষিক ব্যবহারে সে যে সত্য/অর্থউপস্থাপন করে, সেই সত্যের আয়না হয়ে ব্যবহৃত শব্দমালা কাজ করে না। সে যে বস্তুকে তার যুক্তিতে সত্যভাবে, সঠিক ভাবে, তার সত্যের definition-কে পুনরায় যুক্তির scaffolding-এ তুলে ধরলে (এবং পরতে পরতে বিশ্লেষণ শুরু করলে) তার ধারণার ভিন্নতার ভিন্ন ভিন্ন দিক দেখতে পারবে। যুক্তি ও বিজ্ঞানবাদের ধর্মীয়রূপ অনেক পুরাতন। [এ বিষয়ে দু'টি লেখা এখানে [২] এবং এখানে [৩] দেখা যেতে পারে]। এই মুক্তমনারা সপ্ত/অষ্টদশ শতাব্দীর এনলাইটনম্যান্টের ধর্মের-মতোপ্রত্যয়ে নিমজ্জিত।
অনেকক্ষণ যারা লেখাটি পড়েছেন, তারা এই প্রসঙ্গের সাথে মিল-রাখা একটি ভিডিও দেখে শেষ করতে পারেন, যদি সে ধৈর্য্য থেকে গিয়ে থাকে। [৪]
________________________
[১] মুক্তমনা এডমিন, (২০০৮) মুক্তমনা কী? মুক্তমনা [অনলাইন] available at: http://mukto-mona.com/bangla_blog/?page_id=519 [Accessed 10 Oct 2012]
[২] এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত লেখা (উপরে লিঙ্ক করা) হল, যুক্তি, বিশ্বাস ও কোরান লেখাটি দেখা যেতে পারে এবং সাথে করে  মন্তব্য সেকশন মন্তব্য 4.1, দ্বিতীয় আলোচনাঃ যৌক্তিক সমস্যা
[৩] এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত দ্বিতীয় লেখা (উপরে লিঙ্ক করা) 'Rationality and religion'
[*] এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত আরেকটি লিঙ্ক করা লেখা এখানে 'দ্যা এনলাইটনম্যান্ট
[৪] videonation. (2008). Hedges Vs. Hitchens. [Online Video]. Feb 22, 2008. [Accessed: 13 October 2012]. (URL Address দিলে ভিডিও লিঙ্ক ডবল হয়ে যায়, তাই এখানে repeate করা হল না)



অবিশ্বাসের দর্শন (কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন!)

[অবিশ্বাস- শুরুটা অ উপসর্গ যোগে, মানে নাই, এর আবার দর্শন- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন!]
রসময়গুপ্তের মত মুসলিম ও ইসলাম নিয়া আজাকাল দুএক কথা বললেই নাস্তিক হওয়া যায়- বাংলা নেটে ঘুরলে এটা চোখে না পড়ার কথা না। সস্তা হ্যাংলামোর জন্য তাদের অনেক সময় দৌড়ের উপর থাকতে হয়। তাতে তো আর রসের ভাণ্ডার খালি হয় না! বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে কায়দা করে এখান ওখান করে রংচটাইলেই আস্তিকতা তথা ইসলামের শ্রাদ্ধ করা হয়! আস্তিকতা খারাপ আর সেটাই নাস্তিকতা!
আসলে সেটা ছাড়া তাদের আর বিশেষ  উপায়ও দেখি না। তালগাছটা বগলে রাইখাবারডেন অব প্রুফআস্তিকদের দিয়া দাও- স্রষ্টা আছে বইলা আস্তিকরা যখন বলে তখন সেটা তারাই প্রমাণ করুক! আবেগ অনুভূতি দেখা যায় না কেবল বিশ্বাস করা যায়, স্রষ্টাও বিশ্বাসের জিনিষ। সমস্যা হইল আবেগ অনুভূতিরে বিশ্বাস করলেও নাস্তিক হওয়া যায়, কিন্তু স্রষ্টারে বিশ্বাস করলে নাস্তিক হওয়া যায় না! কথা হইল স্রষ্টারে প্রমাণের দায় আস্তিকদের কেন! আপনে স্রষ্টায় বিশ্বাস করেন, যেটা শতকরা ৯৯% মানুষই কোন না কোনভাবে করে। এখন তাদের কাছে যদি বলে স্রষ্টা নাই, তাইলে প্রমাণের দায়টা তাদের (আস্তিকদের) উপর কেমনে পড়ে!
নাস্তিকদের খেদ ইসলাম ও মুসলিম নিয়া, তাই লোকে তাগোরে ইসলাম বিদ্বেষী কয়! তারা বুইঝা পায় না যেই আল্লাহ মানুষরে আগুনে পুড়ানোর ভয় খাওয়ায়, ভয়ানক শাস্তির কথা কয় তারে ভালবাসা যায় কেমনে! পিতা কিন্তু পুত্ররে শাসায়- তুই যদি পড়ালেখা ঠিকমত না করস আজ থিকা তোর খাওয়া বন্ধ। যদি ঐ বাউন্ডুলেটার সাথে তোরে আর দেখি তাইলে মাইরা তক্তা কইরা ফালামু! বাপে আসলে খাওয়া বন্ধ করে নাই, মারছে তয় তক্তা বানায় নাই। বাপে খারাপ, আল্লায়ও খারাপ! অবশ্য তখন মনে হয় নাস্তিকগো ঈমান, ঈমানদার মুসলিমগো চাইতেও বেশী-জাহান্নামের আগুনের প্রতি তাগো কি অগাধ বিশ্বাস!
আমজনতা বইলা প্রায়ই টাস্কি খাই, নাস্তিকরা মনে হয় সব বিজ্ঞানের ছাত্র। এইটাতো সম্ভব না! কলা, বাণিজ্য, সাহিত্যওয়ালা নাস্তিকদের যাদের বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক নাই তারা নাস্তিক হয় কেমনে! পরে জানলাম বিজ্ঞান না জানলেও সমস্যা নাই- বিজ্ঞানমনস্ক হইতে হইবে! বিজ্ঞানের না জানলেও বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যায়- অনারারি ডিগ্রীর মত! এই বিজ্ঞান-মনস্করাই বাংলাদেশে নাস্তিকতার আলো ছড়াইতেছে! সমাজতান্ত্রিক নাস্তিকরাও বিজ্ঞান ছাড়া চলতে পারে নাই! শুধু সমাজতন্ত্রে কি আর যুত আছে- তাই বৈজ্ঞনিকল্যাঞ্জাটা আগে লাগাইয়া নাম দিছে বৈজ্ঞনিক সমাজতন্ত্র- কিম্ভূতকিমাকার অবস্থা। সমাজতন্ত্র কেমনে বৈজ্ঞনিক হয় সেইটা এখনো বুঝি নাই বিজ্ঞান-মনস্কের মত কিছু একটা হয়তো! বিজ্ঞানের প্রতি আপামর নাস্তিকদের এই মোহ নিয়া কৌতুহল এখনও শেষ হয় নাই।
নিম্নমানের জিনিষের প্রতি নাস্তিকদের আসক্তি তীব্র- অবাক হবার কিছু নেই! যেকোন নাস্তিকরে প্রশ্ন করেন কুরআন ও হাদিস কেমন মানের বই। শতকরা একশত জনই বলবে- অতি নিম্নমানের। এবার তার ওয়ালে যান বা তার গ্রুপে যান বা তার দ্বিপদী, চতুষ্পদী বিচরণক্ষেত্রে যান, তার ব্যস্ততা নিম্নমানের জিনিষ নিয়া! তাদের জন্য একটা উচ্চমানের বই লেখা আসলেই জরুরী হইয়া পড়ছে!
তাদের রুচির কথা যখন আসলোই তখন গোমুত্র না হইলেও উটের মুত্র আলোচনার দাবী রাখে, সেটা দিয়াই শেষ করব। মুসলিমদের কাছে উটের মুত্র প্রিয় না হইতে পারে কিন্তু নাস্তিকদের কাছে কিন্তু ঠিকই আছে! নবী একটা পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কিছু লোককে উটের মুত্র পান করতে বলছেন। তিনি যেহেতু এইটারে নিষিদ্ধ করেন নাই, তাগো (নাস্তিকদের) কথামতো মুসলিমদের উটের মুত্র পান যেন ফরয হইয়া পড়ছে! ভাইবা দেখলাম ঘটনার মধ্যে একটু প্যাঁচ আছে! উটের মুত্র খাওয়া লোকগুলা আসলে মুসলিম না, মুনাফিক! মুনাফিকদের উটের মুত্রে নাস্তিকরা তাই ভাগ চায়!!!











অভিরায়ের বিজ্ঞানমনস্কমুরিদদেরকে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখির জন্য আহ্বান

কিছু গুরুত্বপূর্ণ নোট:
  • সকল বিষয়ে নোবেল-বিজয়ীসহ গ্যালিলিও-নিউটন-আইনস্টাইনের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের কেউই কোনো ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না, এখনো নেই। গ্যালিলিও ও নিউটন বরং আস্তিক ছিলেন। আর আইনস্টাইন অন্তত স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন না। এদিকে তিন জন বিজ্ঞানীসহ যে'কজন মুসলিম নামধারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের সকলেই ইসলামে বিশ্বাসী।
  • বৈজ্ঞানিক জার্নাল থেকে শুরু করে বিজ্ঞান-ভিত্তিক সেমিনার-কনফারেন্স, বিজ্ঞানের পাঠ্য বই-পুস্তক, সারা বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, নাসা, কিংবা জাতিসংঘের অধিবেশনের কোথাও ইসলামবিদ্বেষ বা ধর্মবিদ্বেষ নেই। বৈজ্ঞানিক জার্নালে বরং কুরআন-হাদিসের পক্ষেই আলোচনা আছে। [সূত্র]
  • সর্বোচ্চ প্রতিভাবান (Great Genius) ব্যক্তিরা কখনো ধর্মবিদ্বেষী হয় না। যেমননোবেল ও অস্কার পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে কোনো ধর্মবিদ্বেষী নেই। অনুরূপভাবে, খেলাধূলা ও অভিনয়-সহ যেকোনো বিষয়ে সর্বোচ্চ আসনপ্রাপ্তদের মধ্যেও কোনো ধর্মবিদ্বেষী নেই। আবার কৃষক-শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যেও সহসা কোনো ধর্মবিদ্বেষী খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার মানে ধর্মবিদ্বেষীরা বড়জোর মাঝারি মানের (mediocre quality) হয় – বিশেষ করে মুসলিম নামধারী থেকে যারা ইসলামবিদ্বেষী হয়েছে তাদের সকলেই নিম্ন থেকে মাঝারি মানের। ইট'স আ ফ্যাক্ট!
​​১. অভিরায়ের 'বিজ্ঞানমনস্ক' মুরিদদের আইডিগুলো যদি যাচাই করা হয় তাহলে সেখানে ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষী আবর্জনা আর হাবিজাবি প্রলাপ ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে নিজস্ব গবেষণামূলক কিছু তো দূরে থাক, এমনকি বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখিরও তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না। তবে ইসলাম  মুসলিমদের বিরুদ্ধে লিখার উদ্দেশ্যে কারো কারো ব্লগে বিজ্ঞান বা বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু বিনোদন পাওয়া যেতে পারে। অথচ অভিরায় নাকি তাদেরকে 'বিজ্ঞানমনস্ক' বানিয়েছে! 'বিজ্ঞান'-এর নামে এর চেয়ে বড় শুভঙ্করের ফাঁকি আর কী হতে পারে?
নিচে 'আবুল কাশেম' ছদ্মনামে অভিরায়ের বাবার বয়সী এক বিশিষ্ট (এক্স-মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট) মুরিদের বিশাল গুবেষণা ভাণ্ডারের একটি নমুনা সবাই দেখে রাখেন। তার ইংরেজীতে লিখা 'কামকেলি ভাণ্ডার' আবার কোনো এক কামসূত্র-প্রেমী বাংলায় অনুবাদ করে 'খেলারাম পাঠক' নিকে ধর্মের মতো করে সারা অন্তর্জালে প্রচার করেছে। এজন্য তাকে কী পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হয়েছে, ভাবা যায়!
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/07/ak.png
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/07/ak1.png
অভিরায়ের এই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ মুরিদের 'মানসিকতা' বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তার নিজের যৌনউন্মাদীয় চিন্তাভাবনাকে ইসলামের নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছে! হাবিবুর রহমান নামে অভিরায়ের আরেক বাবার বয়সী মুরিদও ছদ্মনামের আড়ালে একই ধরণের আকাম-কুকাম করেছে। আর 'থাবা বাবা' নিকে রাজীব হায়দারের লেখার 'বিষয়বস্তুসম্পর্কেও অনেকেই অবগত। অভিরায় এগুলোকে দিনে দুপুরে সবার সামনে 'মুক্তচিন্তার চর্চানামে চালিয়ে দিয়েছে! তার নিজের গুবেষণা ভাণ্ডার থেকেও 'মুক্তচিন্তার চর্চা'-র একটি নমুনা দেখা যাক- 
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/07/aviroy.jpg
ইসলাম ও ইসলামের নবীকে নিয়ে রাজিবের বিদ্বেষপূর্ণ চটি লেখাকে কেউ 'যুক্তিবিহীন অশ্লীল' বললে, তাতে অভিরায়ের চরম প্রতিক্রিয়াশীল মগজের অনুভূতিতে আঘাত লাগে! ক্যামনে কী! এজন্য কুরআনের মধ্যে অশ্লীল আর মিথ্যা তথ্য গুঁজে দিয়ে 'প্রমাণ' করে দেয় যে, রাজিবের চেয়ে ঢের আশ্লীল, কুৎসিত এবং বিদ্বেষী বক্তব্য কুরআনেই আছে! অভিরায় এভাবে মিশন্যারী স্ট্যাইলে কুরআন-হাদিসের নামে অসংখ্য মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচার করেছে।

যাইহোক- বিজ্ঞানীরা যেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাতদিন গবেষণা আর পরিশ্রম করে মানব কল্যানে একের-পর-এক আবিষ্কার করছেনভিনগ্রহে পানি ও জীবের সন্ধান করছেনসেখানে 'নাস্তিক-মুক্তমনা-বিজ্ঞানমনস্ক'রূপী বঙ্গাল অভিগ্যাং বিজ্ঞান  বিজ্ঞানীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে চৌদ্দশ' বছর পেছনে যেয়ে ইসলাম ও ইসলামের নবীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গুবেষণা করে 'বিশ্বাসের ভাইরাস' আর 'কামকেলি' আবিষ্কার করেছে!!! 😛 শুধু তা-ই নয়, অভিরায়ের মুরিদরা কোনো এক ভারতীয়র দুটি প্যাটেন্ট চুরি করে নিজেদের ধর্মগুরুর নামে চালিয়ে দিয়ে তাকে 'বিজ্ঞানী' বানাতে যেয়ে হাতেনাতে ধরাও খেয়েছে! [সূত্র] বিজ্ঞানের ইতিহাসে এইটা সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে থাকবে।

২. অভিরায়ের 'বিজ্ঞানমনস্ক' মুরিদরা বিজ্ঞানের বই-পুস্তক ছেড়ে 'গভীর অনুধাবন'-সহকারে মাতৃভাষা বাংলায় সমগ্র কুরআন পাঠ শেষ করে মুসলিমদেরকেও একই আহ্বান জানিয়েছে! বাব্বাহ্‌! মুসলিমদের মধ্যে যারা এখনো মাতৃভাষা বাংলায় একটিবারের জন্যেও সমগ্র কুরআন বুঝে পড়েনি তাদের জন্য সত্যিই করুণা হয়! তাদের মনে কি ইচ্ছাটুকুও জাগে না?
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/07/cq.png

৩. 'রায়হান আবীর' নামে এক যুবক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোনো একটি বিষয় থেকে পাশ করে ঢাবি-তে পিএইচডি শুরু করেছিল। কিন্তু অভিরায়ের খপ্পরে পড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতে যেয়ে আম-ছালা (পিএইচডি-গবেষণা) সব খুইয়ে অবশেষে কাহিনী ফেঁদে অ্যাসাইলাম ভিসায় স্ত্রী-সন্তানসহ ক্যানাডায় আশ্রয় নিয়ে দান-খয়রাতের জন্য হাত পাততেছে! [সূত্র] এদিকে 'দাঁড়িপাল্লা ধমাধম' নামে অনেক পুরাতন একটি 'খাঁটি মুক্তমনা' আইডি থেকে অভিরায় হত্যার পেছনে তাকেই দায়ি করা হয়েছে! [সূত্র] ল্যাও ঠ্যালা! আমার নামের সাথে মিল থাকার কারণে অভিরায় প্রায়ই তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে আমাকে বিভিন্নভাবে ব্যক্তি-আক্রমণ ও হেয় করতো। একই কাজ সে তার মডারেটমনা মুরিদ আজীম মাহমুদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গেও করেছে।
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/08/arraam.jpg
(আহ্‌! আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম আর যেখানে সেখানে হয়রান হতাম!)
একজন সাম্প্রদায়িকমনা মিশন্যারীর কাছে নোবেল-বিজয়ী বিজ্ঞানী কিংবা জামাল নজরুল ইসলামের মতো পদার্থবিদের চেয়ে নিম্ন থেকে মাঝারি মানের খৎনাধারী নাস্তিকরা অনেক বেশি মূল্যবান ছিল! কেননা নিম্ন থেকে মাঝারি মানের খৎনাধারীদেরকে বিজ্ঞানের নামে সহজেই মস্তক ধোলাই করে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়।

৪. কিছুদিন আগে একজন একটি পোস্টের লিঙ্ক শেয়ার দিয়ে বলেছে যে, বন্যা আহমেদ TEDx- লেকচার দিয়েছেন। আমি খুশী হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ধরে নিয়েছি যে, লেকচারটি অবশ্যই বিবর্তনবাদ নিয়ে হবে। কেননা অভিরায়ের সার্বিক সহযোগিতায় তার (দ্বিতীয়) স্ত্রী বিবর্তনবাদ নিয়ে মিশন্যারী স্ট্যাইলে একটি বই লিখেছেন। সেই বই পড়ে মুসলিম পরিবারের কিছু তরুণ নাস্তিকও হয়েছে। তো যাইহোকবিবর্তনবাদ নিয়ে লেকচার শোনার আশায় সেই লিঙ্কে ক্লিক করে শোনা শুরু করি। প্রথম বাক্যটা শুনে কিছুটা সন্দেহ হয়। উনি শুরু করেছেন এভাবে-
"In 2015 February, my husband Avijit Roy Avi and I were attacked by the Islamist fundamentalists…" (নোট: এখানে অভিরায় স্ট্যাইলে অপরাধীদের ধর্মীয় পরিচয়কে হাইলাইট করা হয়েছে, তাও আবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই।)
এটুকু শুনে মনে করলাম পরে অবশ্যই বিবর্তনবাদ নিয়ে উনার নিজস্ব গবেষণামূলক কিছু বক্তব্য থাকবে। কিন্তু না! শুনতে শুনতে পুরোটাই শোনা হয়ে গেল, অথচ বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি বাক্যও কানে এলো না! প্রচণ্ড হতাশ হয়ে সেই পোস্টের সূত্র ধরে TEDx-এর সাইটে যেয়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। উনি বিবর্তনবাদ নিয়ে 'গবেষণা' ছেড়ে দিয়ে টেক্সাসের অস্টিনে ইসলামিক মৌলবাদ নিয়ে গোবেষণা করছেন! চোখের সামনে এমন বিবর্তনও দেখতে হলো! তবে মজার বিষয় হচ্ছে উনার এহেন 'বিবর্তন' নিয়ে মনাদের মধ্যে কোথাও কোনো রকম অভিযোগ, অনুযোগ, বিকার বা হাসিঠাট্টা জাতীয় কিছুই নেই as though it's absolutely alright!
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/07/bahmed.png
মোদ্দা কথা হচ্ছে অভিরায়ের নিজ হাতে তৈরী একজন মুসলিম নামধারী (বাম-নাস্তিক) মুরিদ ও বিজ্ঞানের ছাত্রী বিজ্ঞানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক মৌলবাদ নিয়ে গোবেষণা করছেন! বিজ্ঞান-বিবর্তনবাদ চুলায় যাক! তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ স্কলার হিসেবে সুযোগ পেতে হলে সেই বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে নাকিউনি ঠিক কী যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে ইসলামিক মৌলবাদের উপর গোবেষণার সুযোগ পেয়েছেন, কে জানে! উনার 'আহমেদ' নাম আর 'নাস্তিক' পরিচয়টাই হয়তো এক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে! উনি হয়তো বুঝে গেছেন যে, বিবর্তনবাদ নিয়ে অভিরায় স্ট্যাইলে সারা জীবন ধরে 'গবেষণা' করেও কিছুই করা যাবে না। তার চেয়ে বরং তসলিমা নাসরিন বা আয়ান হিরসী আলীর মতো মাথা না-খাটানো সহজ পথ ধরলে রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়া যাবে। ফলাফলও হাতেনাতে পেয়েছেন। যতদিন পর্যন্ত উনি বিবর্তনবাদ নিয়ে 'গবেষণা' করেছেন ততদিন পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের কোনো মহল থেকেই লেকচারের জন্য ডাক পড়েনি! অথচ (দ্বিতীয়) স্বামীর হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে 'ইসলামিক মৌলবাদ' নিয়ে গোবেষণা শুরুর পর ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত থেকে উনার 'জ্ঞানগর্ভ লেকচার' শোনার জন্য একের-পর-এক ডাক পাওয়া শুরু করেছেন! এমনকি তসলিমা নাসরিনের মতো ইতোমধ্যে কিছু পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়েছেন!

৫. বছর খানেক আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ নায়ক রাজ্জাক এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক আব্দুল জব্বার মারা গেলেন। এর আগে-পরে সাংস্কৃতিক জগতের আরো কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও মারা গেছেন। অথচ তাদের কাউকে নিয়েই 'মুক্তমনা' ব্লগে কোনো লেখা আসেনি! কেউ কেউ বড়জোর তাদের কোনো একটি গানের ইউটিউব লিঙ্ক দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে!!! অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক ও গায়ককে নিয়ে তারা একটি লাইনও ব্যয় করার প্রয়োজন মনে করেনি! কিন্তু কেন? কারণ: ১মত- তাদের কেউই ইসলামবিদ্বেষী কিংবা স্বঘোষিত নাস্তিকও ছিলেন না২য়ত- তাদের কারো বিরুদ্ধে হুজুরদের কোনো ফতোয়া নেই, এবং ৩য়ত- তাদের কেউই অভিরায়ের ভাষায় 'সহি ইসলামিক চাপাতি'র কোপে নিহত হয়নি। এই তিনটি কারণের কোনো একটির পক্ষে যদি পরোক্ষভাবেও কিছু তথ্য-প্রমাণ থাকতো, তাহলে সেটিকে পুঁজি করে ঠিকই বেশ কিছু লেখা দেখা যেত। এই হচ্ছে অভিরায়ের তৈরী 'বিজ্ঞানমনস্ক' মুরিদদের অবস্থা। অথচ তাদের প্রায় প্রত্যেকেই তাদের গুরুজীকে নিয়ে হাজার হাজার লাইন ব্যয় করেছে।

যাইহোক- খোঁজ নিলে দেখা যাবে অভিরায়ের খপ্পরে পড়ে মুসলিম পরিবারের অনেক তরুণ-যুবকের সর্বনাশ হয়েছে। 'ঈশ্বরহীন' ওরফে সামীর মানবাদী নামে এক যুবক তো আত্মহত্যাই করেছে। তাছাড়া স্বয়ং অভিরায়ের ১ম স্ত্রীর আত্মহত্যার পক্ষেও জোরালো যুক্তি আছে। তার ছড়ানো ভাইরাসে আক্রান্ত রুগীরা কোনো এক স্বর্গের লোভে বছরের-পর-বছর ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে লেগে আছে। তাদেরকে পেছন থেকে লাইক-কমেন্ট-সুরসুরি দিয়ে চাঙ্গা রাখছে অভিরায়ের স্বগোত্রীয়রা। অন্যান্য ধর্মীয় পরিবারের নাস্তিকদের কাউকেই টানা ১৬-১৮ বছর তো দূরে থাক, এমনকি একটানা দু-এক বছর ধরেও তার সাবেক ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বিদ্বেষপূর্ণ প্রপাগ্যাণ্ডা ছড়াতে দেখা যায় না। এতেই প্রমাণ হয় যে, ইসলামবিদ্বেষ একটি রোগের মতো। তবে এই রোগে আক্রান্ত রুগীদের চিকিৎসার জন্য কোনো ঔষধপত্রের দরকার নাই। তাদেরকে শুধু বিজ্ঞান-মুখী করতে পারলেই এই রোগ এমনি এমনি সেরে যাবেকেননা বিজ্ঞানে ইসলামবিদ্বেষ বলে কিছু নেই। বৈজ্ঞানিক জার্নালে বরং ইসলামের পক্ষেই আলোচনা আছে। [সূত্র]

পয়েন্টস টু বি নোটেড: অভিরায়দের দাবি অনুযায়ী মুসলিমরা বিজ্ঞান বোঝে না, বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে না। এমনকি তারা ইসলামও বোঝে না! তারা 'বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত রুগী, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অসভ্য, বর্বরঅন্ধকারের যাত্রী, পশ্চাৎপদ; তারা সপ্তম শতাব্দীর প্রাচীন একটি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে মাথা গুঁজে থাকে। ইত্যাদি। ইত্যাদি। এজন্য সে নিজে 'নাস্তিক-মুক্তমনা' সেজে 'আলোর মশাল' হাতে মুসলিম নামের অন্ধকারের যাত্রীদেরকে ইসলাম ও বিজ্ঞান শিখিয়ে থাবা বাবা আর আবুল কাশেমের মতো 'আলোকিত' করার মিশন হাতে নিয়েছিল। অথচ সে নিজে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা না করে অধিকাংশ সময় সপ্তম শতাব্দীর 'অন্ধকার গুহা'র মধ্যে মাথা গুঁজে থেকেছে! দেবতার লীলাখেলা বলে কথা! তার মুরিদরাও তার দেখানো পথ অনুসরণ করছে।
"Alif. Lam. Ra'. This is a Book (Al-Qur'an) which We have revealed to you (Muhammad) that you may bring forth mankind from every kind of darkness into light, and direct them, with the leave of their Lord, to the Way of the Mighty, the Innately Praiseworthy." [Qur’an 14:1]
কুরআনের এই আয়াত পড়ার পর অভিরায় নিজেই 'নবী' (আলোর মশাল!) সেজে মুসলিম নামক অন্ধকারের যাত্রীদেরকে 'আলোর পথ' দেখানোর মতো গুরুদায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিল কি-না, কে জানে!

উপসংহার: 
অভিরায় পারিবারিক সূত্রে ব্রাহ্মণ থেকে নিজেকে 'নাস্তিক-মুক্তমনা' দাবি করে বিভিন্ন ইস্যুকে পুঁজি করে কথায় কথায় ইসলামকে 'ভাইরাস', 'অযৌক্তিক', 'অবৈজ্ঞানিক', 'অমানবিক', 'নারী-বিদ্বেষী', 'নাস্তিক-বিদ্বেষী', 'ইহুদী-খ্রিস্টান-বিদ্বেষী', 'জঙ্গি-সন্ত্রাসের উৎস', ইত্যাদি বানিয়ে দিয়ে বিশাল বিশাল প্রবন্ধ লিখেছে। তার সাথে ভারত-বাংলাদেশের তার স্বগোত্রীয় নাস্তিক-ধার্মিকরাও যোগ দিয়েছে। অথচ ভারতে এ পর্যন্ত কয়েক জন মুক্তচিন্তককে হত্যা করা হয়েছে। গোমাংস খাওয়ার বা বহন করার গুজব তুলে একের-পর-এক মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। নিম্ন বর্ণের মানুষদেরকেও নিয়মিত হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে। আর এগুলোর সবই করা হচ্ছে ধর্মের নামে। অথচ এগুলোকে পুঁজি করে মুক্তমনা ব্লগে কিংবা ভারতীয় কোনো ব্লগেও সেই ধর্মের বিরুদ্ধে অভিরায় স্ট্যাইলে কোনো পোস্ট দেখা যায় না। এ থেকে যেকারো বুঝার কথা যেবাংলা অন্তর্জালে ইসলামবিদ্বেষের নেপথ্যে-নেতৃত্বে আছে তারাই।
অভিরায় তার নামের কারণে সব সময় নাস্তিকতা ও বিজ্ঞানকে 'ঢাল' বানিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে লিখেছে। এজন্য তাকে 'বিজ্ঞান' নিয়ে অনেক লেখালেখিও করতে হয়েছে। নামের কী জ্বালা-রে বাবা! অন্যদিকে সে তার খৎনাধারী মুরিদদেরকে ধর্ম নিয়ে লিখার জন্য তাগাদা দিয়েছে। যার কারণে তার মুরিদরা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা ছেড়ে দিয়ে বা গবেষণা না করে ইসলাম ও ইসলামের নবীকে নিয়ে গুবেষণা করছেচটি লিখছে, বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যাচার করছে। কেউ কেউ দীর্ঘ ১৬-১৮ বছর ধরে, কেউ কেউ বা ৮-১০ বছর ধরে চাবি মেরে দেওয়া অটো-মেশিনের মতো বিরতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে থেকে অভিরায় পেয়েছে 'বিজ্ঞানী'-সহ অসংখ্য ভালো ও মহান খেতাব, অনন্ত বিজয় দাশ পেয়েছে 'বিজ্ঞানমনস্ক লেখক' খেতাব, নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় পেয়েছে 'সমাজকর্মী' খেতাব — আর অন্যদিকে রাজীব হায়দার (থাবা বাবা), ওয়াশিকুর বাবু, নাজিমুদ্দিন সামাদের মতো খৎনাধারীরা পেয়েছে 'কচু' খেতাব! ইসলামে 'কাম ও কামকেলি'-র আবিষ্কারক আবুল মোল্লা কী খেতাব পেতে পারে, পাঠক?
এদিকে অভিরায়ের অন্যান্য ইসলামবিদ্বেষী মুরিদদের প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে 'জামাতী', 'বামাতী', 'বামৈসলামিক', 'বামছাগু', 'লালছাগু', 'রাজাকারের বাচ্চা', 'আইসিসইত্যাদি খেতাব পেয়েছে! পান থেকে চুন খসার সাথে সাথে এই 'খেতাবগুলো' দিচ্ছে অভিরায়ের স্বগোত্রীয়রাই। যাদের জন্য চুরি-চামারি করা, তারাই আবার কথায় কথায় 'চোর-ছ্যাঁচ্চর' বলে গালি দিচ্ছে! এমনকি মুক্তমনা ব্লগের দীর্ঘদিনের মডুকেও একাধারে 'জামাতী', 'বামাতী', 'ছুপা ইসলামিস্ট', 'পার্ভার্ট', এবং 'আইসিস' পর্যন্ত বলা হয়েছে! তাহলে দেখা যাচ্ছে দিন শেষে অভিরায় একজন 'বিজ্ঞানী', আর তার ইসলামবিদ্বেষী মুরিদরা নামের কারণে 'ছাগু-জঙ্গি'-ই রয়ে গেছে! অভিরায় তার ধর্মান্তরিত মুরিদদের গা থেকে 'ছাগু-জঙ্গি' গন্ধটাই মুছে যেতে পারেনি! কী লজ্জা! কী লজ্জা! নাম ও খৎনা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তাদেরকে সারা জীবন ধরে 'ছাগু', 'বামাতী', 'বামৈসলামিক', 'বামছাগু', 'লালছাগু', 'রাজাকারের বাচ্চা', 'আইসিসইত্যাদি হয়েই থাকতে হবে যে! 😛
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/04/bivasm.png
http://shodalap.org/wp-content/uploads/2018/05/ladibaba.jpg
http://www.shodalap.org/wp-content/uploads/2011/05/rafiq18.jpg
http://www.shodalap.org/wp-content/uploads/2011/05/rahatkhan2.jpg
http://www.shodalap.org/wp-content/uploads/2011/05/fahimreza4.jpg
(আমুব্লগের 'মানবতাবাদী'-সহ মনাব্লগের 'রফিক', 'রাহাত খান', 'ফাহিম রেজা' আইডিগুলোর কথা আজীম মাহমুদ বেমালুম ভুলে গেছে! আফসোস! অথচ এই আইডিগুলো থেকে তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে কত কিছুই না করা হয়েছে! এমনকি তাকে ঘোল খাইয়ে 'নরেশ মন্ডলের হিন্দু পোলা' বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল! আজীম মাহমুদ অবশ্য তাতে কোনো আপত্তি করেনি! আজীম মাহমুদের দৃঢ় অন্ধ বিশ্বাস যে, এই আইডিগুলোর আড়ালে একেক জন করে 'ছাগু' ছিল যারা অভিরায় ও সুশান্তের ব্লগে ঢুকে পড়ে ইসলাম ও মুসলিম ব্লগারদের উপর অতর্কীতে হামলে পড়েছিল! সেই আইডিগুলোর সাথে অভিরায়ের নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে তারা আজীম মাহমুদকে ঘোল খাইয়ে 'নরেশ মন্ডলের হিন্দু পোলা' বানিয়ে দিয়ে অক্কা গেছে! অভিরায়ের মস্তক-ধোলাই অন্ধ পূজারীরা ঠিক এভাবেই বিশ্বাস করে আমাদেরকে গালিগালাজ করেছে!)
অভিরায়ের খপ্পরে পড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করার পর আজ পর্যন্ত কারো পিএইচডি বা বৈজ্ঞানিক জার্নালে পেপার প্রকাশ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরিবর্তে বরং কাউকে কাউকে পিএইচডি গবেষণা ছেড়ে দিয়ে ইসলাম নিয়ে গুবেষণা করতে দেখা যাচ্ছে। বাকিরাও বিজ্ঞান ছেড়ে মূলত ইসলাম ও ইসলামের নবীকে নিয়ে গুবেষণা করছে। কেউ কেউ বিজ্ঞান ছেড়ে কলাবিজ্ঞান নিয়ে লিখছে! কেউ কেউ আবার অ্যাসাইলাম ভিসায় উন্নত বিশ্বে আশ্রয় নিয়েও ইসলাম নিয়ে গুবেষণা করছে। কিন্তু কোথাও বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা নাই!
অভিরায়ের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার পঞ্চাশোর্ধ-ষাটোর্ধ মুরিদদের কেউ কেউ যৌনউন্মাদের মতো আচরণ করা শুরু করেছে। তারা ইসলামের নবী ও তাঁর একজন স্ত্রীকে নিয়ে চরম অশ্লীল কার্টুন প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ নিজেদের যৌনউন্মাদীয় চিন্তাভাবনাকে ইসলামের নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ ইসলামের নবীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে চেঙ্গিস খানকে 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানব' আখ্যা দিয়েছে। কেউ কেউ আবার জার্মানিতে বসে গুবেষণা করে কুরআনকে 'সেরা চটিগ্রন্থ (দ্যা হলি শিট্‌)' প্রমাণ করেছে। [সূত্রএগুলোই হচ্ছে অভিরায়ের মৌলিক শিক্ষা। অভিরায় নিজেসহ তার মুরিদরা ইসলামের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করেছেমুসলিমদের অনেকেই তার একাংশ সময়ও ইসলামের পক্ষে ব্যয় করে না!

যাইহোক- এই পোস্টের পাঠকদেরকে সাক্ষী রেখে অভিরায়ের 'বিজ্ঞানমনস্ক' মুরিদদেরকে বিজ্ঞান (Natural Science) নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। মুসলিম ব্লগাররা তাদের আইডিগুলোর দিকে নজর রাখতে পারেন। তারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা  লেখালেখি শুরু করে কি-না, দেখুন।

দ্যা ট্রিলিয়ন-ডলার প্রশ্ন: 'নাস্তিক-মুক্তমনা'রাই যেখানে বিজ্ঞান ছেড়ে ইসলাম নিয়ে গুবেষণা করে 'বিজ্ঞানমনস্ক' হচ্ছে, সেখানে মুসলিমরা কোন্‌ যুক্তিতে ইসলাম ত্যাগ করে 'বিজ্ঞানমনস্ক' হবে!?
সত্যি বলতে- আধুনিক যুগে ইসলাম ছাড়া বিজ্ঞানের আলোচনা তেমন একটা জমে না! মুক্তমনা ব্লগের 'বিজ্ঞান' নিয়ে পোস্টগুলোই তার পক্ষে জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে। যে'সকল পোস্টে বিজ্ঞান আছে কিন্তু ইসলাম নেই, সেগুলো মোটেও জমেনি! কিন্তু যে পোস্টগুলোতে ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয়ই আছে, সেগুলো বেশ জমেছে! তবে যেগুলোতে শুধুই ইসলাম আছে, সেগুলো মনে হয় আরো বেশী জমেছে! তাহলে দেখা যাচ্ছে 'নাস্তিক-মুক্তমনা-বিজ্ঞানমনস্ক'দের কাছে ইসলাম ছাড়া বিজ্ঞানের তেমন কোনো কদর নাই! তাদের প্রত্যেকের আইডি ধরে একে একে চ্যালেঞ্জ করা হলে তাদের অবস্থা যে কতটা নাজুক হতে পারে, সেটা বুদ্ধিমান পাঠক ইতোমধ্যে বুঝতে পারার কথা।






















ভণ্ডমনাদের ভণ্ডামির নমুনা


আমাদের বাংলা বুদ্ধিজীবী আর লেখকদের চরম অন্ধকার সময়ে (!) আলো হাতে নিয়ে আসা (নাকি আগুন ধরাতে আসা) কিছু চমৎকার ভণ্ড নিজেদের ভণ্ডামির এক শেষ সাইট "ভণ্ডমনা"তে ভণ্ডামির এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এই মনাদের ব্যাঙ্গা ব্লগের এক 'অপার্থিব' লেখক প্রদীপ দেব তার "পার্থিবঃ অপার্থিব বিশ্বাসের নির্মোহ ব্যবচ্ছেদ" লেখাতে বলেছে,
ধর্মগ্রন্থে যেভাবে মহাপ্লাবন ঘটেছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে – (চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত ধরে বৃষ্টি পড়েছিল, পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়-পর্বত ডুবিয়ে দিয়ে আরো পনের হাত উপরে উঠে গেল বন্যার পানি, দুনিয়া একশপঞ্চাশ দিন ডুবে রইলো বন্যার পানিতে ইত্যাদি) এবং নুহের নৌকার মাধ্যমে কীভাবে নুহের পরিবার ও অন্যান্য প্রজাতির প্রাণিদের একজোড়া করে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল তা আদৌ বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সম্ভব কিনা তা সাধারণ পাটিগণিতের হিসেবে সহজভাবে দেখানো হয়েছে এ অধ্যায়ে। সমস্ত পৃথিবীপৃষ্ঠ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হলে ১০৮০ মিলিয়ন কিউবিক কিলোমিটার জায়গা পানি দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে হবে। অত বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হওয়া কি সম্ভব? মেঘ তৈরি না হলে তো বৃষ্টি সম্ভব নয়। বাতাসে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকতে পারে তা দিয়ে সারা পৃথিবীর উপরিতলের মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার (এক ইঞ্চিরও কম) পানি ঢালা সম্ভব যা সহজেই শোষিত হয়ে যায় মাটিতে। পৃথিবীর সবগুলো পাহাড়কে ডুবিয়ে দেয়ার মত বৃষ্টি হতে হলে প্রায় পৌনে নয় কিলোমিটার গভীর পানির দরকার। যা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এক্ষেত্রে সে বেশ কিছু জায়গায় ইচ্ছাকৃত ভাবে সস্তা ভণ্ডামির অবতারণা করেছে। এই উপরিউক্ত বিষয়টি বাইবেল থেকে বর্ণিত। এটা মূলত বাইবেলের কাহিনী। কিন্তু এটা কি মনা ব্লগে বলা হয়েছে যে এটা মূলত বাইবেলের কাহিনী? বরং বলা হয়েছে একই জিনিস সব গ্রন্থেই আছে!
যাই হোক কিন্তু এর সাথে কুরআনিক বৈসাদৃশ্য না দেখিয়ে তারা অবতারণা করেছে এক অসাধারণ কল্পকাহিনীর। নিচের কাহিনী তাদেরই ব্লগের কথা,
যে নুহের নৌকায় (৩০০ হাত লম্বা, ৫০ হাত চওড়া আর ৩০ হাত উঁচু) সব ধরণের প্রাণির আশ্রয় জুটেছিল বলা হচ্ছে তার মোট ক্ষেত্রফল মাত্র নয় হাজার বর্গমিটার। সেখানে পৃথিবীর প্রায় দশ কোটি প্রজাতির প্রাণি – (যাদের মধ্যে তিমি, হাতি, জিরাফ, জলহস্তির মত বিশাল প্রাণিও আছে) কীভাবে ঠাঁই পেলো? তাছাড়া পৃথিবী ১৫০ দিন পানির নিচে ডুবে ছিল। ১৫০ দিনের খাবার-দাবারও নৌকায় রাখতে হয়েছিল নিশ্চয়। যৌক্তিক অসম্ভাব্যতার প্রশ্ন উঠলেই গোঁজামিল দিতে হবে এখানে। মানুষ যখন নুহের নৌকায় অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলে তখন অহংবোধের কারণেই গোঁজামিল দিয়ে হলেও নিজেদের অন্ধবিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে চায়। বিশ্বাসীরা নিজেরাও জানেন যে অংকের হিসেবে গন্ডগোল হচ্ছে, কিন্তু স্বীকার করতে লজ্জা পান। তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য মারমুখী হয়ে ওঠেন। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজের চোখে দেখেছি মহাপ্লাবন ও নুহের নৌকার ঘটনার অসম্ভাব্যতা প্রমাণ করে দেয়ায় যুক্তিবাদী অধ্যাপককে জামার আস্তিন গুঁটিয়ে মারতে আসেন অন্ধবিশ্বাসী অধ্যাপক। সেই যুক্তিবাদী অধ্যাপককে পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে আর অন্ধবিশ্বাসী অধ্যাপকটি ক্রমশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পর্যন্ত হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কি যুক্তিবাদীরা থেমে গেছেন? থেমে যান নি বলেই তো এখন পার্থিবর মত সাহসী বই প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেই।
এখানে আমার কথা একটিই, সেটা এই যে বাইবেলে যে অনেক ভুল তত্ত্ব আছে সেটা মুসলিম মাত্রই বিশ্বাস করে। সেজন্য কেউ যদি বিবলিক্যাল কোন ভুল দেখাতে যান তাহলে কোনো যুক্তিবাদি অধ্যাপককে যে কেউ শার্টের হাতা গুটিয়ে মার দেবার জন্য প্রস্তুতি নিবে না সেটা বলাই বাহুল্য।
নূহের মহাপ্লাবনের বিষয়ে যে কুরআন আর বাইবেলে সুস্পষ্ট তফাত আছে, এটাকে একেবারেই না দেখিয়ে তারা দেখাতে লাগল বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মহাপ্লাবন এর বর্ণনা, আর তার অসারতা। এভাবেই তারা এড়িয়ে গেল একটা অনেক বড় পয়েন্ট। আর বিবলিক্যাল ভুলকে কুরআনের মধ্যে আর সর্বোপরি মুসলিমদের মধ্যে গুঁজে দিতে প্রাণান্তকর চেষ্টা আর নাটক করা হল এখানে। নিচের প্যারাতে দেখুন কিভবে দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে,
রোমান, সুমেরিয়ান, আসামের লুসাই, চীনের দক্ষিণাঞ্চলের ললোবাসীদের মধ্যে এবং পূর্ব আফ্রিকার মাসাইদের আঞ্চলিক লোকগাথায় মহাপ্লাবন ও তার হাত থেকে মানুষ সহ আরো কিছু প্রজাতির রক্ষা পাবার কথা বর্ণিত আছে। ওল্ড টেস্টামেন্ট, বাইবেল ও কোরানে এ লোকগল্পের অন্তর্ভুক্তি তাই হঠাৎ করে হয়ে ওঠেনি। এবং এসাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর কোনটাই অলৌকিক নয় বরং লোক-কাহিনি নির্ভর।
এখন আমার কথা হচ্ছে এই রকম কথা বলে তারা কী বোঝাতে চাইছে? আচ্ছা একই কাহিনী এত জায়গায় কেমন করে প্রচলিত হল আর এর সাথে কুরআনকে টেনে আনার কী সম্বন্ধ? থাক সে কথা এখন, তবে এখানকার মূল বক্তব্য যে সেমিটিক ধর্মের অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। আর এখানে কান টানলে মাথা আসে এই নীতিতে বাইবেল থেকে কুরআনের দিকে একটা ইঙ্গিত করার প্রচ্ছন্ন চেষ্টা করা হয়েছে আর বলা হয়েছে একেবারে নির্জলা কিছু মিথ্যা কথা। যদি কোন অজ্ঞ মুসলিমের হাতে এটা ধরিয়ে দেয়া হয় সে স্বভাবতই বিভ্রান্ত হবে কিন্তু এজন্যই সবার জন্য আমি দিচ্ছি নিচের প্যারাগুলো।
কোরআনে বর্ণিত নূহের প্লাবনের বর্ণনাটা আগে দেখে নেয়া যাক:
“And it was revealed to Nuh: That none of your people will believe except those who have already believed, therefore do not grieve at what they do. And make the ark before Our eyes and (according to) Our revelation, and do not speak to Me in respect of those who are unjust; surely they shall be drowned. And he began to make the ark; and whenever the chiefs from among his people passed by him they laughed at him. He said: If you laugh at us, surely we too laugh at you as you laugh (at us). So shall you know who it is on whom will come a chastisement which will disgrace him, and on whom will lasting chastisement come down. Until when Our command came and water came forth from the valley, We said: Carry in it two of all things, a pair, and your own family– except those against whom the word has already gone forth, and thosand those who believe.” (11:36-40)
বাহ! এখানে তো কি সুন্দর অন্ধবিশ্বাস(!) এর অবতারণা করা হয়েছে! একেবারে নূহের নৌকাতে সমস্ত প্রাণীকূলকে চড়িয়ে সারা পৃথিবী ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে! বাহ! আমরা তো একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম মুক্ত(ভণ্ড)মনাদের জ্ঞানের বহর দেখে। এরা তো দেখি সবাই একেকজন ধর্ম বিশেষজ্ঞ! আর কুরআন জানেন আমাদের স্কলারদের থেকেও বেশী।
এবার দেখা যাক বাইবেলে কী বলা আছে,
 Genesis 6:15 This is how you are to build it: The ark is to be 450 feet long, 75 feet wide and 45 feet high.
অনুবাদঃ আর এভাবেই তুমি এটাকে নির্মাণ করবে। আর্ক হবে ৪৫০ ফুট দীর্ঘ ৭৫ ফুট প্রশস্ত আর ৪৫ ফুট উঁচু
এছাড়া্, 7.2 তে বলা আছে Genesis 7:2-3, God instructed Noah to take seven pairs of every kind of clean animal, and two of every kind of unclean animal.
এখন আমাদের জন্য বাইবেলের সব বাণী বিশ্বাস করা কি অপরিহার্য? আর এখানে যৌক্তিক অসম্ভাব্যতার কথা কি কুরআনের কোথাও আছে (বাইবেলে আছে কিনা সেটা আমার বিষয় না)? তাহলে যেখানে জেনেসিস-এ নূহের নৌকার আকৃতি বলে দেয়া এবং প্রাণী উঠানোর বর্ণনা আছে সেখানে কুরআনে এমন কিছু সম্পর্কে কী বলা আছে সেটা একবার দেখে নিই।
আল-কুরআন ২৩:২৩-২৭-
"আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তোমরা কি ভয় কর না। তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের-প্রধানরা বলেছিলঃ এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। সে তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই নাযিল করতেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি। সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়। সুতরাং কিছুকাল তার ব্যাপারে অপেক্ষা কর। হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর; কেননা, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে। অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরী কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।"
এখানে কি নুহ(আ) এর গোত্র ছাড়া আর কারো কথা আছে? এখানে কি বলা আছে এই বন্যায় সমস্ত পৃথিবীই প্লাবিত হয়েছিল? মুক্তমনাদের মতে তো এটা তা-ই বোঝাচ্ছে তাই না? আর যদি কোন সংশয় থাকে তাহলে নিচের আয়াতগুলো পড়ে নেবার অনুরোধ থাকল।
২৩:২৯-৩১-
"আরও বলঃ পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী। এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং আমি পরীক্ষাকারী। অতঃপর অন্য এক সম্প্রদায় আমি তার স্থলাভিষিক্ত করেছিলাম।"
এখানে স্পষ্টভাবে 'গোত্র' কথাটির উল্লেখ আছে। এরপরেও যদি কেউ ত্যানা প্যাঁচানোকে ব্রত মনে করে তবে আর কিছুই বলার নেই। আর বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই বন্যা বা মহাপ্লাবন এর বর্ণনা কেন দেয়া আছে সেটার আলোচনা অন্য একটা পোস্টে দেয়া হবে।
এর প্রেক্ষিতে যে ঘটনা বলা হয়েছে ১৯৯১ সালে সেটা কি সত্যিই কোন অধ্যাপক করতে পারেন? যদি তিনি বাইবেল আর কুরআনের পার্থক্য বুঝেন তবে এটা করা তার জন্য উচিত? আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমন সামান্য বিষয় জানবেন না সেটা কেমন ভাবে হয়? আর প্রাণী তোলা নিয়ে যে অবতারণা করা হয়েছে সেটার জবাব এটা হতে পারে যে, নূহ(আ) এর গোত্রের মধ্যে থেকেই এক জোড়া করে প্রাণী নেয়া হয়েছে আর্কের ভেতর আর একটা গোত্রের প্রাণী সংখ্যা যতই হোক সেটার ভিতর থেকে এক জোড়া নেয়া কোন অবিশ্বাস্য ব্যাপার কখনই না। কোন এলাকাতে আচমকা বন্যার পানি ঢোকা শুরু করলে যা এখানে বলা হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। এরকম একটি বর্ণনা পড়ে অবৈজ্ঞানিক বা গাঁজাখোরী তো দূরে থাক নিদেনপক্ষে চা-খোরী বলতেও বিবেকে বাধা দেয়ার কথা।
এমন একটি কথা কিভাবে একটি 'দেশ-বিখ্যাত' মিডিয়া বা ব্লগে প্রকাশিত হয়? এটা সবার নিকট প্রশ্ন? এই বিশ্লেষণ কতখানি নিরপেক্ষ? নাকি এর গা থেকে চরম একচক্ষু মানসিকতার গন্ধ আসছে? এটা বিচার করার ভার আপনাদের।














No comments:

Post a Comment