Thursday, February 27, 2020

৮৩ সুন্নাত







৮৩ সুন্নাত











ঘুমানোর সময়



১. ইশার নামাযের পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করা, যাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ হয়।
(
বুখারী, হাঃ নং ৫৪৭)
বি.দ্র. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমীন, চৌকি, কাপড়ের বিছানা, চাটাই, চামড়ার বিছানা ইত্যাদির উপর শয়ন করেছেন বলে হাদীসে বর্ণিত আছে।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২০৬৯/ শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)
২. উযু করে শয়ন করা।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১১)
৩. শোয়ার পূর্বে বিছানা ভালভাবে ঝেড়ে নেয়া।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩২০)
৪. শয়নের পূর্বে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে ঘুমের কাপড় পরিধান করা।
(
আল মাদখাল, ৩ : ১৬২)
৫. শয়নের পূর্বে বিসমিল্লাহবলে নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো করা : ক. দরজা বন্ধ করা। খ. মশক বা পানির পাত্র এবং খাদ্য দ্রব্যের পাত্র ও অন্যান্য পাত্রসমূহ ঢেকে রাখা। যদি ঢাকার জন্য কোন বস্তু না পাওয়া যায়, তাহলেবিসমিল্লাহপড়ে তার মুখে একটি লাটি বা ছড়ি রেখ দেয়া, গ. বাতি নিভানো।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬২৩-২৪)
৬. ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানা।
(
মুস্তাদরাক, হাঃ নং ৮২৪৯)
৭. ঘুমানোর পূর্বে কিছু পরিমাণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। যথা : আলহামদু শরীফ, সূরা কাফিরূন, আয়াতুল কুরসী, আমানার রসূল থেকে সূরা বাক্বারার শেষ পর্যন্ত, সূরা মুলক, আলিফ লাম মীম সিজদাহ ইত্যাদি তিলাওয়াত করা বেশি পড়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ছোট ২/ ৩ টি সূরা পড়ে নেয়া।
(
তাবারানী কাবীর হাঃ নং-২১৯৫) (আল আদাবুল মুফরাদ, হাঃ নং ১২০৯/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৩২৭৫)
৮. ঘুমানোর পূর্বে কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং তাসবীহে ফাতেমী অর্থাত ৩৩ বার সূবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৩১১৩)
৯. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস প্রত্যেকটা তিনবার করে পড়ে হাতে দম করে যতটুকু সম্ভব মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে হাত মুছে দেয়া। তিনবার এরূপ করা।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫০১৭)
১০. ঘুমানোর সময় ডান কাতে কিবলামুখী হয়ে শোয়া সুন্নাত। উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এভাবে শয়ন করাকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১৪/ সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ৫৫৪৯)
১১. শয়ন করে এ দুআ পড়া :
باسمك ربى وضعت جنبى وبك ارفعه، ان امسكت نفسى فارحمها وان ارسلتها فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين
(
বুখারী শরীপ, হাঃ নং ৬৩২০)
১২. ঘুমানোর পূর্বে তিনবার এই ইস্তিগফার পড়া :
استغفر الله الذى لا اله الا هو الحى القيوم واتوب اليه
(
তিরমিযী, হাঃ নং ৩৩৯৭)
১৩. এই দুআটিও পড়া :
اللهم باسمك اموت واحيى
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১৪)
১৪. সর্বশেষে এ দুআটি পড়া :
اللهم اسلمت وجهى اليك وفوضت امرى اليك والجأت ظهرى اليك رغبة ورهبة اليك لاملجأ ولا منجا منك الا اليك- اللهم امنت بكتابك الذى انزلت وبنبيك الذى ارسلت-
(
বুখারী, হাঃ নং- ২৪৭)
১৫. শয়ন করার পর ভয়ে ঘুম না আসলে এই দুআ পড়া :
اعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشرعباده ومن همزات الشياطين وان يحضرون-
(
তিরমিযী, হাঃ নং ৩৫২৮)
১৬. স্বপ্নে ভয়ংকর কিছু দেখে চক্ষু খুলে গেলে তিনবার
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
পড়ে বাঁ দিকে থু-থু ফেলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া। তাতে ক্ষতির আর কোন আশংকা থাকে না এবং এ দুআটি পড়া :
اللهم انى اعوذبك من شر هذه الرؤيا-
(
মুসলিম, হাঃ নং ২২৬২)
১৭. সুযোগ হলে দুপুরে খানার পর কিছুক্ষণ কাইলূলাহ করা অর্থাত শয়ন করা। চাই ঘুম আসুক বা না আসুক।
(
বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৩৯)



ঘুম থেকে জেগে

১. ঘুম থেকে উঠেই উভয় হাত দ্বারা মুখমণ্ডল এবং চক্ষুদ্বয়কে হালকাভাবে মর্দন করা, যাতে ঘুমের ভাব দূর হয়ে যায়।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ১৮৩)
২. ঘুম হতে উঠার পর এই দুআ পড়া :
الحمد لله الذى احيانا بعد ما اماتنا واليه النشور
আলহামদুল্লিলা হিল্লাজি আহইয়ানা বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩২৪)
৩. যখনই ঘুম হতে উঠা হয়, তখনই মিসওয়াক করা একটা সুন্নাত। উযু করার সময় উযুর সুন্নাত হিসেবে মিসওয়াক করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৪৫/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৪৭)







বাথরুমে গেলে

১. বাথরুমে যাওয়ার সময় এই দুআ পড়বে।
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।
২. বাথরুমে সর্ব প্রথম বাম পা ঢুকাবে।
৩. বাথরুমে জুতা বা সেন্ডেল পরিধান করবে।
৪. মাথা ঢেকে বাথরুমে প্রবেশ করবে।
৫. পেশাব পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা না থাকলে খোলা মেলা কোন জায়গায় বসলে এমনভাবে বসতে হবে যেন কারও নজরে সতর না দেখা যায়।
৬. পেশাব পায়খানা দাঁড়িয়ে না করে বসে করা।
৭. পানি অথবা টিসু পেপার ব্যবহার করা।
৮. বসার নিকটতম হয়ে সতর খুলবে এবং কিবলার দিকে মুখ ও পিঠ দিয়ে বসবে না।
৯. পেশাব ও নাপাক পানির ছিঁটা থেকে বেঁচে থাকবে।
১০. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
১১. পেশাব এমন জায়গায় বা এমনভাবে করবে যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা উপরে উঠে শরীর নাপাক হবে না।
১২. বের হয়ে এ দুআ পড়বে। উচ্চারণঃ গুফরানাকা ।
১৩. বাথরুম থেকে ডান পা দিয়ে বের হবে।
১৪. বাথরুমে প্রবেশের আগে কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম রাসূল সা. এর নাম লেখা আংটি থাকলে খুলে প্রবেশ করবে।
















পানি খাওয়া

১. ডান হাতে
পান করা
. বসে পান করা  
. ৩ ঢোকে পান করা
. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
. খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা













খাবার খাওয়া

১. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৬১)
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৮৬)
বি.দ্র. (ক) মাটিতে বসে খাওয়া, একাধিক লোক সাথে নিয়ে খাওয়া।
(খ) দস্তরখানা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এর উপর ঝুটা (উচ্ছিষ্ট খাবার) হাড্ডি ইত্যাদি না ফেলা বা তাতে পা না রাখা উচিত। (মুসলিম হাঃ নং ২০৩৩)
৩. (উঁচু স্বরে) বিসমিল্লাহ পড়া। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)
৪. ডান হাত দিয়ে খাওয়া। (বুখারী, হাঃ নং ৫৩৭৬/ মুসলিম, হাঃ নং ২০২০)
৫. খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযুর্গ, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো। (মুসলিম, হাঃ নং ২০১৭)
৬. খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)
৭. খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া। (মুসলিম, হাঃ নং ২০৩৩)
# তিন আঙ্গুলে, চার আঙ্গুলে বা পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা খাওয়া। দুই আঙ্গুলে না খাওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, দারা কুতনী)
৮. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৯৮)
৯. খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪০৯)
১০. জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাঃ নং ৭১২৯)
১১. খানার সময় তিনভাবে বসা যায়।
ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে। (মুসলিম, হাঃ নং ২০৪৪)
খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। (শরহুস্ সুন্নাহ, হাঃ নং ৩৫৭৭)
গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাত নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৭৩)
বি.দ্র. উযরের কারণে আসন দিয়ে বসারও অনুমতি আছে। (সূরা নূর, আয়াত-৬১/ আল ইতহাফ, ৫ : ৪৮০)
১২. আহার গ্রহণ শেষে খানার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্রসমূহ আহারকারীর জন্য মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে দুআ করে। হাতের আঙ্গুলসমূহ যথাক্রমে মধ্যমা, শাহাদাত, বৃদ্ধা চেটে খাওয়া। (মুসলিম, হাঃ নং ২০৩৩/ তিরমিযী, হাঃ নং ১৮০৪/ তাবরানী আউসাত, হাঃ নং ১৬৪৯)
১৩. খানা শেষে এই দুআ পড়া :
الحمد لله الذى اطعمنا وسقانا وجعلنا من المسلمين
(আবু দাউদ, ৩৮৫০)
১৪. খানা শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ, হাঃ নং ৩২৯৫)
১৫. দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খানা উঠানোর সময় এই দুআ পড়া :
الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه غير مكفى ولا مودع ولا مستغنى عنه ربنا
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪৫৮)
১৬. খানা খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। (তিরমিযী, হাঃ নং ১৮৪৬)
১৭. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪৫৫)
১৮. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়ার পর খানার মাঝে এই দুআ পড়া : بسم الله اوله واخره
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৬৭)
১৯. কারো মেহমান হয়ে খানা খেলে প্রথমে আল্লাহর শুকর আদায়ে ১৩নং এ বর্ণিত দুআ পড়ার পর মেযবানের শুকরিয়া আদায়ে এই দুআ পড়া :
اللهم اطعم من اطعنى واسق من سقانى
(মুসলিম, হাঃ নং ২০৫৫)
হাদীসে মেযবানকে শুনিয়ে এ দুআটি পড়তেও উতসাহিত করা হয়েছে :
اكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملائكة وافطر عندكم الصائمون
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৮৫৪)
২০. খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)



মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায়

বিসমিল্লাহ! যারা যাদু আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা তো বটেই, তাদের সাথে আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া আমলগুলো যত্নসহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।
সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দুয়া ও যিকর হাদিসে আছে, সবকিছু বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা তো সম্ভব না। আর সবসময় সবগুলোর ওপর আমলও সম্ভব না। তাই আমরা এখানে অল্প কিছু মাসনুন দোয়া এবং আমল নিয়ে আলোচনা করবো।
আল্লাহ আমাদের এসবের প্রতি যত্নবান হবার তাওফিক দেন। আমিন।
# সকাল-সন্ধ্যার আমল
১. আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)
২. বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মাআসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামিউল আলীম।
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে..। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)
৩. সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ-
حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (সুনানে আবি দাউদ)
৪. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতের জন্য এটা রাসুল স. এর শিখানো আমল। (সুনানে আবি দাউদ)
৫. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
প্রতিদিন সকালে ১০০ বার পড়া। এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরিক্ষিত আমল। (বুখারি, মুসলিম হাদিস নং ৪৮৫৭) একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
# অন্যান্য সময়ের আমল
১. সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোন আজওয়া খেজুরেও হবে। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী)
২. ঘুমের আগের আমল
ক. ওযু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দুয়া করতে থাকে। ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। (মুজামুল আওসাত; সনদ হাসান-জায়্যিদ)
খ. শোয়ার পূর্বে কোন কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (মুসলিম)
গ. আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারী) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। (বুখারী)
ঘ. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দেয়া, এরপর পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)
৩. টয়লেটে ঢুকার পূর্বে দোয়া পড়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জ্বিন ও খারাপ পরী থেকে। (সহীহ মুসলিম, ৩৭৫)
৪. বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া [*]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
[*] এবিষয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, অনেকে এটি স্ত্রীর মাথায় হাত রেখেই পড়তে হবে। কিছু হাদিসে মাথায় হাত রেখে পড়ার কথা থাকলেও, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে কিন্তু স্ত্রীর কাছে গিয়ে শুধু পড়ার কথা আছে। (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)
৫. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া।
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা। (বুখারী, ৪৮৭০)
৬. দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)
৭. বিসমিল্লাহ বলে দরজা-জানালা লাগানো। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা।














বিবাহের সুন্নাত

(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২)
(২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০)
(৩) শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯)
(৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭)
(৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬)
(৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি (আবু দাউদ/২১৬০)
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দুআ পড়ে নিবেঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনা শাইতনা ওয়া জান্নিবিশশাইতনা মা রকাজকতনা” (মুসলিম/১৪৩৪)
(উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী)
(৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭)
(৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)
(১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১)
(১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭)
(১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪)



No comments:

Post a Comment