রোজা রেখে যেসব কাজ করবেন না
OURISLAM24.COM
আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ যুবায়ের : আবু হুরায়রা
রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সা. বলেছেন, সিয়াম
ঢাল স্বরূপ। সুতরাং
অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া
করতে চায়, তাঁকে
গালি দেয়, তবে
সে যেন দুইবার বলে- আমি সওম পালন করছি।
ওই সত্তার
শপথ, যার
হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই
সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ
আল্লাহর নিকট মিশকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য, তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব।
আর প্রত্যেক নেক কাজের পরিমাণ দশ গুণ। -সহিহ বুখারির সওমের ফযিলত অধ্যায়
এ হাদিস থেকে চারটি বিষয় পাওয়া যায় যা
রমযান মাসে করা যাবে না।
১। কোন প্রকার অশ্লীল কাজ করা যাবে না।
২। মূর্খের মত কাজ করা যাবে না। প্রতিটা
কাজ ভেবে চিন্তে করতে হবে। হুট হাট কাজ করা যাবে না। জ্ঞান-বুদ্ধি খাঁটিয়ে সকল কাজ
করা।
৩। ঝগড়া করা যাবে না। এমনকি কেউ যদি
গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে তাঁকেও ‘আমি রোজাদার’ বলে সতর্ক করতে হবে এবং তাঁকেও ঝগড়া
থেকে বিরত রাখতে হবে।
৪। কাউকে গালি দেয়া যাবে না। কেউ গালি
দিতে উদ্যত হলে তাঁকে থামিয়ে দিতে হবে। ‘আমি
রোজাদার’ বলে
সতর্ক করতে হবে।
রমযান মাসের বাইরেও এসব কাজ করতে ইসলাম
বারণ করেছে। রমযান মাসে আমরা এসব
কাজ থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ নিব এবং রমযানের বাইরে সেই
প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে
নিজেও ভালো থাকব অন্যকেও ভালো রাখব।
‘সওম
পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের গন্ধের চেয়েও উৎকৃষ্ট’ এর অর্থ এই নয়, আমরা রমযান মাসে মুখ অপরিচ্ছন্ন রাখব।
বরং সেহরি খাওয়ার পর ফজরের
ওয়াক্ত হওয়ার আগে আমরা ভালোভাবে মুখ পরিচ্ছন্ন করব। সারাদিন সুযোগ মত মিসওয়াক
করব। এর পরেও যে গন্ধ মুখ থেকে বের হবে সেটাই হল রোজাদারের মুখের আসল
গন্ধ।
‘প্রত্যেক
নেক কাজের পরিমাণ দশগুণ’ রমযান
মাসে তাই বেশি বেশি নেক কাজ করব।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর
রোজা সংরক্ষণে নবিজির নির্দেশনা
OURISLAM24.COM
মুফতি
মুহাম্মদ আবু সালেহ : মুসলমানের জীবনে
যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আছে, রোজা
তার মধ্যে অন্যতম। কুরআন এবং
হাদিসে এর গুরুত্বের কথা বহু জাগায় বর্ণিত হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে
এর বিশাল ফজিলতের
কথা। রোজাদার যখন যথাযথভাবে রোজার হক আদায় করবে,
তখনই সে এই
ফজিলতসমূহের যোগ্য হবে। তাই রোজার ফযিলতের বিষয়টা রোজা
সংরক্ষণের সাথে সম্পর্ক
রাখে। যার রোজা যতবেশি সংরক্ষিত সে ততো ভাগ্যবান।
মুসলিম হিসেবে প্রত্যেক রোজাদার সতর্ক।
যেন কোন কারণে তার রোজা নষ্ট না
হয়। কে চায় সারাদিনের কষ্টটা ভেস্তে যাক? তাই রমজান মাসে প্রত্যেকেই যার যার
মত করে নিজকে গুটিয়ে ফেলে অন্যায় অপরাধ থেকে। সমাজে আমরা এর বাস্তবতাও দেখি।
বেনামাজির মাথায় টুপি। ঘরে ঘরে কুরআনের আওয়াজ। এরপরও অনেক সময় পরিস্থিতির
অবনতি ঘটে। দেখা যায়, ব্যক্তিগতভাবে
সে অপরাধে আগ্রহী নয়, কিন্তু পরিস্থিতি
তাকে অপরাধ করতে বাধ্য করছে। এমন অবস্থায় একজন রোজাদার কিভাবে তার রোজার সংরক্ষণ করবে? কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে নিজকে? আর নিজের মহামূল্যবান আমলকে ধ্বংসের হাত
থেকে রক্ষা করবে।
উম্মতের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ সা.
পরিস্থিতির এ স্পর্শকাতর বিষয়টির
প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন। এ মুহূর্তে রোজাদার কিভাবে নিজের রোজা
সংরক্ষণ করবে, এ
ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, যদি কোনো রোজাদারের সাথে অন্য কেউ ঝগড়া
করে অথবা তাকে গালি দেয়, তাহলে সে যেনো বলে, ‘আমি রোজাদার।’ বুখারি শরিফ : ১৮৫৬
এ হাদিসে নবিজি উম্মতকে সতর্ক করছেন।
সাথে সাথে রোজা সংরক্ষণের
নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে হাদিসে বর্ণিত ‘আমি রোজাদার’ কথাটি বলার পদ্ধতি কেমন হবে,
এ ব্যাপারে দুইটি মত পাওয়া যায়। এক মতে, রোজাদার ব্যক্তি গালিদাতাকে উদ্দেশ্য করে মুখে উচ্চারণ
করে বলবে; ভাই
আমি রোজাদার। অন্যমতে, রোজাদার নিজকে সম্বোধন করে মনে মনে বলবে, আমি রোজাদার। এবং নিজকে ঝগড়া
বিবাদ থেকে বিরত রাখবে। (উক্ত হাদিসের টীকা দ্রষ্টব্য)
মোট কথা,
যখনই কোনো রোজাদার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, রাসুলের এ নির্দেশনাকে আমলে আনবে। সংরক্ষণ করবে
নিজের রোজাকে। সতর্ক থাকবে, যেনো অন্যের
কারণে নষ্ট না হয় নিজের মূল্যবান এ ইবাদত। যেন হাতছাড়া না হয়, রোজার ঘোষিত ফাজায়েল।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর
রোজা প্রভুর সাথে মিলনের সেতু বন্ধন
OURISLAM24.COM
মাওলানা মুহাম্মদ আরাফাত, অতিথি লেখক : রোজা
মহান প্রভুর পালনীয় বিধান। রাসুলের ফরমান। হিজরি ২য় বর্ষের ফরমান। মুমিনের
ইবাদত। মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত উৎসব। রোজা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা। সওয়াব ও
মালিকের নৈকট্য
লাভের আশায় বুক বাঁধা।
রোজা প্রভু সন্তুষ্টির ভরা বসন্ত। রোজা
প্রভু ভক্তের নজরানা । নবি
প্রেমের অনন্য চেতনা। তাকওয়া ও খোদা ভীরুতার সোনালি সিঁড়ি।
রোজা পয়গাম্বরি আদর্শ।
নবিদের আমল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে
মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ
করা হয়েছে। যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর করা হয়েছিল। যেন
তোমরা তাকওয়া
অর্জন করতে পার। সুরা বাকারা : ১৮৩
ত্যাগ সংযম আত্নশুিদ্ধর সিয়াম সাধনা।
সাহরি ইফতার ও তারাবিতে ঐক্যের
মোহনা। রহমত মাগফেরাত আর নাজাতে ঘেরা এ মাস। এক মুঠো অন্নের
অভাবী অসহায় গরিব
হতদরিদ্রের প্রতি সৃষ্টি হয় ধনীদের অনুসূচনা। জাগ্রত হয় গরিবের প্রতি সহানুভূতির
চেতনা। সৃষ্টি হয় এতিমের মাথায় হাত বুলানোর প্রেরণা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে তোমার কাছে সাহায্য চায় তাকে তাড়িয়ে
দিওনা। সুরা দোহা : ১০
এ মাস বান্দা দিনাতিপাত করে অনাহারে । সহ্য করে ক্ষুধার যাতনা।
কষ্ট সহ্য
করে গরিব। করে ধনীও। রোজা যেন মনিবের
পূর্ণ দাসত্বের ঠিকানা।
রোজাদারের ঘর খাবারে পরিপূর্ণ। পেটটা খাবার শূন্য। অথচ সামনে
উপস্থিত ইফতারের
অন্ন। বুকে আল্লাহর ভালবাসা আর ভয়। তাই মুখে খাবার না তুলে রয়। এ রোজা
আল্লাহর জন্যে। শুধুই আল্লাহর জন্যে। এই ত্যাগ আর কষ্ট মাবুদের কদমে। এই
সংযম আর অনাহার মাওলার দাসত্বের। এই
সিয়াম সাধনা প্রভুর সাক্ষাতের। এ
রোজার প্রতিদান প্রভুর কাছে । পুরস্কার আল্লাহর হাতে। বিতরণ
করবেন নিজ হাতে।
পুরস্কার হবেন আল্লাহ নিজেই। জান্নাতের বড় নেয়ামত আল্লাহ পাকের সাক্ষাৎ।
মাওলা পাকের দিদার লাভ করবে শুধুই রোজাদার। রোজাদারের জন্য রোজা হবে
প্রভুর সাথে মিলনের সেতুবন্ধন। হাদিসে রাসুল সা. বলেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময়। অপরটি
প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের। তিরমিজি
: ৭৬৬
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসুল
সা. এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা
বলেন, রোজা
আমার সন্তুষ্টির জন্য। এর পুরস্কার আমি নিজে দেব। বুখারি : ১৭৮৩
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর
কুরআন নাজিলের সূচনা ০২
OURISLAM24.COM
ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ : আল্লাহপাক অন্যান্য
কিতাবের মত কুরআনকেও একবারে নাজিল করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।
কেননা কুরআন একবারে নাজিল করার মত কোনো কিতাব নয়। অনুরূপভাবে এই কুরআনে
প্রচলিত বইয়ের মত একই বিষয়বস্তুর ওপর ধারাবাহিক আলোচনাও করা হয়নি। কুরআন
একটি অভিনব কিতাব। মহান আল্লাহ আরব দেশের মক্কা নগরীতে প্রথমে তাঁর এক
বান্দাকে নবি করে পাঠালেন। নিজের শহর ও গোত্র (কুরাইশ) থেকে দাওয়াতের সূচনা
করার জন্য। এরপরে তাঁকে নির্দেশ দিলেন,
কাজ শুরু করতে। কুরআন নাজিলের প্রথম দিকে শুধু প্রয়োজনীয় বিধানই নবি
সা. কে দেয়া হত। এ বিধান প্রধানত
তিনটি বিষয়বস্তু সন্বলিত ছিল।
এক : নবিকে শিক্ষা দান। এই বিরাট ও মহান
দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি
নিজেকে কিভাবে তৈরি করবেন এবং কোন পদ্ধতিতে কাজ করবেন তা তাঁকে
শিখিয়ে দেয়া হত।
দুই : যথার্থ সত্য সম্পর্কে প্রাথমিক
তথ্যাবলি সরবরাহ এবং সত্য সম্পর্কে
চারপাশের লোকদের মধ্যে যে ভুল ধারণাগুলো পাওয়া যেতো সংক্ষেপে
সেগুলো খ-ন করা
হত।
তিন : সঠিক কর্মনীতির দিকে আহবান।
আল্লাহর বিধানের যেসব মৌলিক চরিত্র
নীতির অনুসরণ মানুষের জন্য কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তাবহ সেগুলো
দিকেই আহবান করা
হত।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরআর
শিশুর প্রতি রমজানের শিক্ষা
OURISLAM24.COM
আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক : সন্তান জীবনের
সৌন্দর্য ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের অনুপ্রেরণা। সু-সন্তান পরকালীন জীবনের জন্য বড় সম্পদ, চির কল্যাণের প্রবাহ। হজরত আবু হুরায়রা
রা. থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সা. ইরশাদ করেন, যখন
মানুষ মারা যায়, তখন তার
তিনটি বিষয় ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। এক. সাদাকায়ে জারিয়া, দুই. এমন ইলম (জ্ঞান) যারা দ্বারা উপকার পাওয়া
যায়, তিন.
সু-সন্তান যে তার জন্য দোয়া
করে। [সহি মুসলিম : ১৬৩১]
সন্তানকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার
সুন্দর সুযোগ পবিত্র রমজান। কেননা
আল্লাহ তায়ালা রমজানকে তাকওয়া তথা খোদাভীতি অর্জনের মাস ঘোষণা
করেছেন। এ মাসে
আল্লাহ রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেন এবং পাপ কাজের প্রতি প্রলুব্ধকারী শয়তানকে
অবরুদ্ধ করে রাখেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,
রাসুলুল্লাহ সা.
বলেছেন, ‘রমজান-
বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ
মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে
দেয়া হয়, বন্ধ
করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্টু শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ
কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার
মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো,
সে বঞ্চিত হলো (মহা
কল্যাণ হতে)।’ [সুনানে
তিরমিজি : ৬৮৩]
রমজানে পরিবারের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো, সন্তানকে রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা
সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও হাদিস সম্পর্কে অবহিত করা। রমজান মাসে যে, আল্লাহ তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেন, প্রতি পুণ্যের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন, বান্দার প্রার্থনা কবুল করেন, পাপ মোচন করেন, শয়তানকে অবরুদ্ধ করেন এবং
রমজান মাস যে, বছরের
বাকি সময়ের জন্য রসদ অর্জনের সময় তা তাদের বুঝিয়ে বলা। যেনো তার ভেতর পুণ্যের প্রতি আগ্রহ
ও পাপ কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি
হয়।
রোজা একটি শারীরিক ফরজ ইবাদত। রোজা
পালনে মানুষের মাঝে ধৈর্য্য, সংযম, সহিষ্ণুতা ও ইচ্ছার দৃঢ়তার মতো মহৎ
গুণাবলী সৃষ্টি করে। সুতরাং সন্তানকে
রোজা রাখার প্রতি উৎসাহিত করুন। আর রোজা একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত।
ছোট থেকে অভ্যস্ত
না হলে বড় হয়ে রোজা রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই শৈশব থেকেই সন্তানকে রোজা
রাখার প্রতি উৎসাহিত করুন। সন্তানকে উৎসাহিত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো
নিজে রোজা রাখা এবং রোজার আমলগুলোতে সন্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষত
পরিবারের এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে শিশুরা রোজাসহ অন্যান্য আমলের প্রতি
উৎসাহিত হয়। যেমন, ইফতার, সাহরি,
তেলাওয়াত, দোয়া
ও মোনাজাতে তাদেরকে সাথে
রাখা। যেনো সে আমলগুলোর সাথে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়। আমলের গুরুত্ব ও মর্যাদা
তার অন্তরে গ্রথিত হয়।
শিশুর অন্তরে রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা জাগ্রত করতে এবং তার ভেতর উত্তম চরিত্র ও গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে তাকে কয়েকটি বিশেষ আমলের অনুশীলন করানো যেতে পারে। বিশেষত যে আমলগুলোর প্রতি রাসুলুল্লাহ সা. রমজান মাসে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন। যেমন,
শিশুর অন্তরে রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা জাগ্রত করতে এবং তার ভেতর উত্তম চরিত্র ও গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে তাকে কয়েকটি বিশেষ আমলের অনুশীলন করানো যেতে পারে। বিশেষত যে আমলগুলোর প্রতি রাসুলুল্লাহ সা. রমজান মাসে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন। যেমন,
১. রোজা পালন : সন্তানকে
শৈশব থেকেই রোজা রাখতে অভ্যস্ত
করুন। সন্তান যখন বুঝমান হয়ে উঠবে তখন থেকে তাকে সাহরিতে ডাকুন। হয়তো
সে রোজা পূর্ণ করতে পারবে না; অথবা
তাকে পূর্ণ করতে দেয়া উচিৎ হবে না,
তবুও সে রোজার একটি আমলে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এবং ধীরে ধীরে রোজা
সম্পন্ন করার
সামর্থ্য লাভ করবে। একইভাবে তাকে ইফতারের দস্তরখানে ডাকুন। তাকে ইফতারে
দোয়া ও সুন্নাতসমূহ শিক্ষা দিন। ইফতারের সময় দোয়া করুন এবং তাকে দিয়ে
দোয়া করান। এতে রোজার প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। অন্তত সাহরি ও ইফতারের
বরকত সে লাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
‘সাহরির খাবার
গ্রহণকারীকে আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১]
২. কুরআন তেলাওয়াত : আধুনিক
শিক্ষা কারিকুলামে কুরআন শিক্ষার
উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক শিশুর সাথে আরবি বর্ণমালারই কোনো পরিচয় নেই। আবার অনেক
শিশুই পারিবারিক উদ্যোগে কুরআন
তেলাওয়াত শিখলেও তাদের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়। হাজারে দুয়েক জনের
তেলাওয়াত শুদ্ধ
হলেও তারা সারা বছর কুরআনমুখী হয় না। তাই কুরআন নাজিলের মাস রমজানে সন্তানের
কুরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধকরণ এবং তেলাওয়াতে তাকে অভ্যস্ত করে তুলুন। হাদিসে
এসেছে, রাসুলুল্লাহ
সা. রমজান মাসে বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রমজান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ
সা. কে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে,
কিংবা ভোর অবধি সালাতে
কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি
নি।’ [সহি মুসলিম
: ১৭৭৩]
৩. জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় : আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র কুরআনে
নিজের পরিবার তথা সন্তান-সন্তুতি ও অধীনস্তদেরকে নামাজের নির্দেশ দিতে
বলেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘আপনার পরিবারকে নামাজের নির্দেশ দিন এবং তার উপর আপনি অবিচল থাকুন।’ [সুরা ত্বহা : ১৩২]
নামাজে অবহেলা করলে সন্তানকে শাসন করার নির্দেশনাও ইসলামি শরিয়তে রয়েছে। রমজান মাসে আমরা মসজিদে যেয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করি। মসজিদে যাওয়ার সময় বুঝমান শিশুকেও মসজিদে নিন। এতে তারা জামাতে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত হবে। বিশেষত তারাবির জামাতে কিশোর সন্তানকে সাথে রাখুন। দীর্ঘ সময়ব্যাপী এ নামাজে শৈশব থেকে অভ্যস্ত না হলে তারা বড় হয়ে ক্লান্তি অনুভব করবে। নবী কারিম সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব অর্জনের আশায় রমজানে কিয়ামু রমজান (সালাতুত তারাবিহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ [সহি বুখারি : ২০০৯]
নামাজে অবহেলা করলে সন্তানকে শাসন করার নির্দেশনাও ইসলামি শরিয়তে রয়েছে। রমজান মাসে আমরা মসজিদে যেয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করি। মসজিদে যাওয়ার সময় বুঝমান শিশুকেও মসজিদে নিন। এতে তারা জামাতে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত হবে। বিশেষত তারাবির জামাতে কিশোর সন্তানকে সাথে রাখুন। দীর্ঘ সময়ব্যাপী এ নামাজে শৈশব থেকে অভ্যস্ত না হলে তারা বড় হয়ে ক্লান্তি অনুভব করবে। নবী কারিম সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব অর্জনের আশায় রমজানে কিয়ামু রমজান (সালাতুত তারাবিহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ [সহি বুখারি : ২০০৯]
৪. পুণ্যের কাজে উৎসাহ প্রদান : সহি
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী
রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি পুণ্যের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। সুতরাং
সন্তানকে বেশি পরিমাণ পুণ্যের কাজ করতে উৎসাহিত করুন। আবু হুরায়রা রা.
থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেছেন, ‘এ
মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ
বলে আহ্বান করতে থাকে যে,
হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে
অসৎ কাজের পথিক, তোমরা
অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জানো?)
এ মাসের
প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কতো লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি
দিয়ে থাকেন? [সুনানে
তিরমিজি : ৬৮৪]
৫. মন্দ কাজ পরিহারের নির্দেশ : পবিত্র
রমজানে কুমন্ত্রণাদানকারী
শয়তান অবরুদ্ধ থাকে। সুতরাং এ মাসে যে কোনো মন্দ কাজ ও স্বভাব পরিহার করা অন্য মাসের তুলনায়
সহজ। তাই আপনার সন্তানকে মন্দ স্বভাব ও
কাজসমূহ পরিহারের নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোজা রাখে, সে যেনো তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে
বিরত থাকে। রোজা রাখা
অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেনো বলে, আমি রোজাদার।’ [সহি মুসলিম : ১১৫১]
৬. সন্তানকে উপহার দিন; তাকে দানে অভ্যস্ত
করুন : রমজান
মাসের আগমন উপলক্ষ্যে শিশু সন্তানকে উপহার দিন। কেননা হাদিসে পরিবার ও সন্তানের
জন্য খরচ করাকে সর্বোত্তম দান বলা হয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যে সন্তানকে উপহার দিলে তার কাছে রমজান কল্যাণের
বাহক মনে হবে। রমজানে অধিক
পরিমাণ দানের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং নিজে দান করুন এবং
সন্তানের হাতে দান করান।
এতে সে উৎসাহ লাভ করবে এবং মনে প্রশস্ততা সৃষ্টি হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস
রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ
সা. ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি
দানশীল আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো।’ [সহি বুখারি : ১৯০২]
৭. সন্তানকে নিয়ে মুনাজাত করুন : দোয়া
একটি গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদাত। রমজান মাসে একাধিক সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার কথা হাদিসে এসেছে। যেমনÑ শেষ রাতে,
সাহরি ও ইফতারের সময়। এসব সময়গুলোতে সন্তানকে সাথে নিয়ে
আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোয়া করুন। আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করুন। তাতে সন্তানের হৃদয়
ঈমান ও ইসলামের জন্য সজীব ও সতেজ হবে।
ইনশাআল্লা! হাদিসে এসেছে,
‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই
চলতে থাকে।’ [জামিউস
সগির : ৩৯৩৩]
৮. ধর্মীয় বই-পুস্তক পাঠে উৎসাহ দান : সন্তানকে প্রয়োজনীয়
ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়া পিতা-মাতার দায়িত্ব। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক
পড়াশোনার জন্য অনেক সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সন্তানকে রমজান মাসে ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত
করুন। বিশেষত ইসলামের মৌলিক
বিশ্বাস, শিক্ষা
ও বিধানাবলী যেনো শিখতে পারে এমন পঠনসামগ্রী তাকে কিনে দিন। কেননা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা
প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ।
এখানে মাত্র কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা
হলো। বাকিটা আপনার বিবেচনাধীন। আপনি
সন্তানের জন্য যা যা করণীয় ও কল্যাণকর মনে করবেন, তাই করবেন। বস্তুত পবিত্র রমজানে সন্তানকে এমন জীবনযাপনে
অভ্যস্ত করুন যেমনটি তাকে আপনি সারা
বছর দেখতে চান। এমনভাবে পরিচালিত করুন যেনো সে তাকওয়াপূর্ণ
আদর্শ জীবনের সাথে
পরিচিত হয়। ঈমান ও ইসলামের সাথে তার সখ্য হয় এবং সে পরকালে আপনার মুক্তি
ও কল্যাণের অবলম্বন হয়। আপনার এই চেষ্টাটুকু তার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্বল
হয়ে থাকবে। সন্তানকে উত্তম জীবনাদর্শ শিক্ষা দেয়াই তার প্রতি পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠ সওগাত। রাসুলুল্লাহ
সা. ইরশাদ করেন পিতা-মাতা সন্তানকে
ভালো আদব কায়দা ও স্বভাব-চরিত্র শিক্ষাদান অপেক্ষা উত্তম কোনো
দান করতে পারে
না। [সুনানে তিরমিজি : ১৯৫২]
তাই আসুন! পবিত্র রমজানে আমরা এমন আদর্শ
জীবনযাপন করি যা দেখে সন্তান
নিজেই অনুপ্রাণিত হয়। তাকে এমন শিক্ষা উপহার দেই যেনো সুন্দর
জীবন ও ভবিষ্যত
লাভ করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানের সমূহ কল্যাণ দান করুন। আমিন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর
রোযার কাযা ও কাফ্ফারা
OURISLAM24.COM
হাসান আল মাহমুদ : রোজা আল্লাহ
তায়ালার ফরয বিধান। ইসলামের
পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম বিধান। এই রোযা
পূর্ববর্তী জাতির উপরও
অত্যাবশ্যক ছিল এবং এই উম্মতে মুসলিমার
উপরও অত্যাবশ্যক।
ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর
ফরয করা হয়েছে। যেন তোমরা
তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩ ) প্রত্যেক জ্ঞানসম্পন্ন, সুস্থ মস্তিষ্ক মুসলমানের উপর পবিত্র মাহে
রমযানের রোযা রাখা
আবশ্যক।আল্লাহর এই ফরয বিধানে কোনো শিথিলতা চলবে
না। বরং শরিয়তের
মুকাল্লাফ ব্যক্তির উপর অবস্থা ভেদে
পর্যায়ক্রমে নিম্মোক্ত বিষয়গুলো
অবধারিত হবে।
রোযার কাফ্ফারা
শরয়ী কোনো কারণ ছাড়াই কোনো ব্যক্তি যদি রোযা না
রাখে কিংবা রেখেছে কিন্তু
রাখার পরে পানাহার, সহবাসের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা
ভেঙ্গে ফেলে তাহলে এমন ব্যক্তির
যিম্মায় সে রোযার
কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টিই আবশ্যক থাকবে।শরয়ী
কারণ ছাড়া এক রমযানের
যতোটি রোযা রাখেনি বা ইচ্ছাকৃতভাবে
সহবাস, পানহারের মাধ্যমে ভেঙ্গে
ফেলেছে এমন ব্যক্তির
জন্য কাযা স্বরুপ যতোটি রোযা রাখেনি বা ভেঙ্গে
ফেলেছে ততোটি
রোযা কাযা হিসেবে রাখা আবশ্যক
হওয়ার সাথে
সাথে কাফ্ফারা স্বরুপ
আরো ৬০টি রোযা একাধারে বিরতিহীন
পূর্ণ দুইমাস রাখতে
হবে।
এই দুইমাস
রোযার মাঝখানে কোনো রোযা
ছুটে গেলে কিংবা মহিলাদের
ক্ষেত্রে নেফাস
বা আরেকটি
রমযান মাস এসে যাওয়ার কারণে
বিরতি হলেও কাফ্ফারা আদায়
হবে না
বরং পুণরায় আবার পূর্ণ ৬০টি
রোযা একাধারে রাখতে হবে। এই
জন্যে কাফ্ফারার রোযা
এমন দিন থেকে
শুরু করতে হবে যেন মাঝখানে রমযান
মাস, মহিলাদের ক্ষেত্রে নেফাস বা শরিয়ত
কর্তৃক বছরের নিষিদ্ধ দিন
যেমন দুই ঈদের দিন ও ঈদুল
আযহার পরের
তিনদিন না এসে যায়। হ্যাঁ, মহিলাদের
ক্ষেত্রে কাফ্ফারার রোযা রাখার মাঝখানে
হায়েযের দিন
(নেফাসের নয়) এসে যাওয়ার কারণে যে
কয়দিন হায়েযের কারণে বিরতি
হবে তাতে অসুবিধে নেই বরং হায়েয
শেষ হওয়া মাত্রই
৬০ দিনের পূর্ণ বাকী
কাফ্ফারার রোযা আদায়ে লেগে
যেতে হবে। এভাবে যে ব্যক্তির জীবনে যতোটি রমযানের
রোযা না রাখা
হবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলবে সে ব্যক্তির
যিম্মায় কাযা স্বরুপ
ততোটি রোযা এবং কাফ্ফারা স্বরুপ একেক রমযান
মাসের জন্য একটি কাফ্ফারা
তথা একাধারে বিরতিহীন পূর্ণ ৬০টি করে রোযা
রাখা আবশ্যক থেকে
যাবে।
রোযার কাযা
কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক, জ্ঞান সম্পন্ন মুসলিম ব্যক্তি রোযা
রাখার পর যদি অখাদ্য বস্তু যেমন
কাঠ, লোহা, মাটি, পাথর, ময়লা ইত্যাদি খেয়ে ফেলে, বিড়ি,
সিগারেট, হুক্কা
সেবন করে, ভুলে পানাহার করার পর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে
করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে
কোনো কিছু পানাহার করে
বসে, হস্তমৈথুন
বা স্ত্রী কিংবা কোনো নারীকে শুধু
স্পর্শ প্রভৃতি করায় বীর্যপাত
ঘটে গেলে, কানে বা নাকে ঔষুধ প্রবেশ
করানোর দ্বারা পেটে
চলে গেলে, কুলি
করার করার সময় অনিচ্ছাবশত:
কন্ঠনালিতে পানি চলে
গেলে, পেশাবের
রাস্তায় বা স্ত্রীর
যোনিতে কোনো
ঔষুধ প্রবেশ করায়, নস্যি বা কানে তেল ঢালে, থুথুর চেয়ে
পরিমানে বেশি দাঁত
দিয়ে বের
হওয়া রক্ত কন্ঠনালির নীচে চলে গেলে, রোযাদারের মুখে জোরপূর্বক কোনো কিছু দেওয়ায় তা কন্ঠনালিতে পৌঁছে
গেলে, ইচ্ছাকৃতভাবে
মুখ ভরে
বমি করে বা অল্প
বমি আসার পর তা গিলে ফেলে, সুবহে সাদিকের পর দাঁতে আটকে
থাকা খাদ্য টুকরা মুখ থেকে বের
করার পরে তা মুখে পুরে গিলে ফেলে, ইফতারির সময় হয়নি, দিন রয়ে গেছে
অথচ সময় হয়ে গেছে মনে করে ইফতারি করে ফেলে, অনুরুপ রাত আছে মনে করে সুবহে
সাদিকের পরে সাহরী খায়, অথবা রোযার কোনো নিয়ত না করে বা করলেও নিয়ত
দুপুরের পর করে, তাহলে এমন ব্যক্তির যিম্মায় একেক রোযার পরিবর্তে
শুধু কাযা বিকল্প
আরেকটি রোযা রাখা আবশ্যক থেকে যাবে। আর এই
কাযা রোযা রমযানের
পর যথাশীঘ্রই আদায় করে নিতে হবে।কারণ
ছাড়া দেরী করলে গোনাহগার
হবে।
আর কাযা
রোযার জন্যে
সুবহে সাদিকের পূর্বেই
রোযার নিয়ত
করতে হবে।অন্যথায় কাযা রোযা সহীহ
হবে না বরং সুবহে সাদিকের
পর নিয়ত
করলে সে রোযা নফল হয়ে যাবে।
ঘটনাক্রমে একাধিক রমযানের কাযা রোযা
কারো যিম্মায় একত্রিত হয়ে
গেলে নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে-আজ
অমুক বৎসরের
রমযানের রোযা কাযা
করছি।আর যে কয়টি রোযা কাযা
হয়েছে তা একাধারে রাখা মুস্তাহাব, বিভিন্ন সময়ে রাখাও দুরস্ত আছে।কাযা রোযা শেষ
করার পূর্বে যদি নতুন রমযান মাস
এসে যায় তাহলে উপস্থিত
রমযানের রোযাই রাখতে হবে।কাযা রোযা পরে
আদায় করে নিতে
হবে।
উল্লেখ্য,
এক দেশে রোযা শুরু
করার পরে অন্য
দেশে চলে গেলে সেখানে
যদি নিজের দেশের তুলনায় ঈদ
আগে হয়ে যায় তাহলে নিজের দেশের হিসেবে যে কয়টা
রোযা ছুটে
গিয়েছে তার বিকল্প হিসেবে ছুটে যাওয়া
রোযা পরিমান রোযা কাযা
করতে হবে।এবং সেখানে গিয়ে
যদি রোযা এক-দুটু বেড়ে যায় তাহলে তা রাখতে
হবে।আর রমযান ব্যতীত
অন্য নফল রোযা ভঙ্গ হলে শুধু কাযা ওয়াজিব
হবে;কাফ্ফারা
নয়।
আকাবিরের রমজান
OURISLAM24.COM
আমিন আশরাফ : হযরত রশিদ
আহমদ গাঙ্গুহী রহ.। তাঁর
রমজান বা সিয়াম সাধনা ছিল চোখ কপালে উঠার
মতো। বয়স সত্তরের কোঠা পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি ইবাদাত এতো বেশি পরিমাণে করতেন, রীতিমতো একজন সামর্থবান মানুষও এতোটা
কষ্ট সাধনা করার কথা কল্পনাও
করতে পারবে না।
দিনভর রোজা রাখতেন এবং মাগরিবের পর ছয়
রাকাতের পরিবর্তে বিশ রাকাত
আওয়াবিন পড়তেন। আর এই নামাজের রুকু সিজদা এতো লম্বা হতো যে, অচেনা কেউ দেখলে ভাববে মনে হয় তিনি নামাজের কথা
ভুলেই গেছেন।
তারপর তারাবির সময় হয়ে এলে যথেষ্ট সময়
নিয়ে তিনি ইশা ও তারাবির নামাজ
পড়তেন। সাড়ে দশটা অথবা এগারোটার দিকে ঘুমোতে যেতেন। আড়াইটার
দিকে উঠে যেতেন।
আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দিতেন। অনেক সময় সেবকরা পাঁচটার
সময় সাহরি প্রস্তুত করে এসে দেখতেন হযরত তখনও তাহাজ্জুদে নামাজ পড়ছেন।
ফজরের পর আটটা সাড়ে আটটার পর্যন্ত
জিকির-আজকার, বিভিন্ন
ধরনের আমল মুরাকাবা
ধ্যানমগ্নে থাকতেন। ইশরাকের সময় হলে ইশরাক আদায় করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতেন। এর মাঝে ডাক পিয়ন এসে গেলে
প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র পড়ে তার উত্তর
দেয়ার প্রয়োজন পড়লে সেগুলোর জওয়াব লিখতেন।
জরুরি ফতোয়া ও মাসআলা-মাসায়েল লিখাতেন।
এরপর চাশতের নামাজ পড়ে কায়লূলা
বা আরাম করতেন। জোহরের পর দরজা বন্ধ করে দিতেন। তারপর থেকে
আসরের আজান পর্যন্ত
কুরআন তিলাওয়াত করতেন। পাঠককে আবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, তখন তার বয়স ছিল সত্তরের বেশি। শুধু তা নয়
এটা ওই রমজানের দিনরাত যে রমজানে
তাঁর বার্ধক্য ছাড়াও কোমরে এতো তীব্র ব্যথা ছিল, তাঁর রুম থেকে শৌচাগার পর্যন্ত
যার দূরত্ব্ ছিল মাত্র ষোল কদমের পথ। সে পর্যন্ত যেতে যেতে মাঝখানে একবার
তাকে বসে পড়তে হতো। এতো কষ্ট সত্ত্বেও ফরজ তো ফরজই,
নফল নামাজও তাকে
বসে আদায় করতে দেখা যায়নি।
ঘণ্টার ঘণ্টা তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে
থাকতেন। সেবকরা বারবার অনুরোধ করতো
যে, হযরত!
এতোটা কষ্ট না করলে নয় কি? কিন্তু
বলতেন, না।
এতো কম বড় হিম্মতের কথা।
কি আশ্চর্য সাহস ও হিম্মত। আর কেনই বা হবে না?
রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
‘আমি কি শোকরগুজারি হবো না’?
রাসুলের সেই
মহাবাণীর মর্যাদা রক্ষা করা তার উত্তরাধিকারীর পক্ষে এমন
হিম্মত ও আল্লাহর রাস্তায়
পা রাখার দূর্জয় সাহস ছাড়া কখনো সম্ভব নয়।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর
মাহে রমজান সাম্যমৈত্রীর অনন্য মাধ্যম
OURISLAM24.COM
আমিনুল ইসলাম হুসাইনী : পশ্চিম আকাশে
এক চিলতে বাঁকা চাঁদের হাসিতে বিশ্ব মুসলিম আজ পুণ্যের আলোয় উদ্ভাসিত। তৎপর পুণ্যময় ব্যস্ততায়।
কেননা এ যে মাহে রমজানের চাঁদ। আর মাহে
রমজান মানেই পুণ্যের বসন্তকাল।
রমজান মাস, কল্যাণ,
ক্ষমা আর মুক্তির মাস। আত্মসংযম আর আত্নশুদ্ধির মাস। এ
মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এ মাস সম্পর্কে রাসূলে কারীম
সা. বলেছেন, ‘যে
ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমান
যে অন্য মাসে একটি ফরয আদায় করল।’ ( মিশকাত
শরীফ, ১৮৬৮)
মাহে রমজানের রহমতের দশ দিন বিদায় নিয়ে শুরু হয়েছে মাগফিরাতের দশ দিন। এভাবে বিদায় নেবে মাগফিরাত আর নাজাতের দশ দিনও। কিন্তু আমরা মাহে রমজানের ফয়েজ কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি?
মাহে রমজানের রহমতের দশ দিন বিদায় নিয়ে শুরু হয়েছে মাগফিরাতের দশ দিন। এভাবে বিদায় নেবে মাগফিরাত আর নাজাতের দশ দিনও। কিন্তু আমরা মাহে রমজানের ফয়েজ কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি?
প্রতিবছর রমজান আসে মুমিনের হৃদয় মিনারে
প্রোজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে। রমজান
আসে সাম্য-মৈত্রী গড়ে তোলার দ্বীপ্ত শপথ নিয়ে। কবি রমজানকে বরণ
করেন নিখিলের
চির কল্যাণ হিসেবে, ‘তোমারে
সালাম করি নিখিলের হে চির
কল্যাণ/ জান্নাতের
পুণ্য অবদান।’
রমজান মাস শুদ্ধ হওয়ার মাস। প্রতি বছর
রমজান আসে রমজান যায়, কিন্তু
আমরা কি
শুদ্ধ হতে পারি? রমজান
মাস আত্নসংযমের মাস, কিন্তু
আমরা কি আত্নসংযমী হতে
পেরেছি? রমজান
মাস সৌহার্দ-সম্প্রীতি, পরোপকার, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস, কিন্তু আমরা কি নিজেদের মাঝে এ গুণগুলো
অর্জন করতে পারি? বরং
রমজানকে কেন্দ্র
করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারেই আমরা ব্যস্ত থাকি।
প্রতিবছর রমজান এলেই এক শ্রেনীর অসাধু
ব্যবসায়ীরা খাদ্য-দ্রব্য মজুদ করে
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। যে কারনে দ্রব্য-মূল্যের উর্ধগতি
লাগামহীন হয়ে পড়ে।
অথচ এভাবে বাড়তি মুনাফা লাভের জন্য পণ্য মজুদ রেখে অর্থ উপার্জন করা সম্পূর্ণ
হারাম। হাদীসে এসেছে, ‘জনগণের
জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি
খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করে সে অপরাধী। আর জেনে রাখো, সে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।’ -সহিহ মুসলিম ১৬০৫ অন্য হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিক
প্রাপ্ত হবে, আর
যে ব্যক্তি গুদামজাত করবে সে অভিশপ্ত হবে।’
-ইবনে মাজাহ
২১৪৪
অপরদিকে সমাজের বিত্তবানরা রসজানে
খাবারের ক্ষেত্রে অসংযমী হয়ে পড়েন।
ইফতার সেহরীতে ১০-২০ পদ খাবার নিয়ে বসেন। যতটুকু খান তার চেয়ে
বেশি অপচয় করেন।
অথচ এভাবে অপচয় জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা খাও ও পান কর;
এবং কোনো
অবস্থায়ই অপচয় করো না। আল্লাহ তা’আলা
অপচয় কারীকে কখনো পছন্দ করেন
না।’ -সুরা
: আরাফ ৩১
আত্নসংযম আর আত্নশুদ্ধির মহান বার্তা
নিয়ে পবিত্র রমজান এখন আমাদের মাঝে
উপস্থিত। নিজেদের গঠন করার এখনই সুবর্ণ সুযোগ। তাই আসুন! অন্তত
এই রমজানে দরিদ্রদের
নিয়ে ভাবি, তাদের
পাশে দাঁড়াই। মানবতার ধর্ম ইসলাম সাম্য-মৈত্রীর যে মহান শিক্ষা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন
করি
কেউ খাবার অপচয় করবে আর কেউ খেতেই পাবে
না এমনটা ইসলাম সমর্থন
করে না। কেউ পুণ্য সংযম মৈত্রী সৌহার্দ-সম্প্রীতি জঘন্য ধন-রত্ন আর ঐশ্বর্যের
প্রাচুর্যে আত্মহারা হবে, আর
কেউ দারিদ্রের যাতনায় জর্জরিত হবে
এমনটা তো ইসলাম কখনোই পছন্দ করে না। ইসলাম বলে, প্রত্যেক ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সম্পদে গরীবদের প্রাপ্য
রয়েছে। ইসলাম বলে, তুমি
নিজের জন্য যা পছন্দ
কর অপরের জন্যও তাই পছন্দ কর।
মাহে রমজানের রোযা এ উপলব্ধিই যোগায়
যে যারা দু’বেলা
দু’মুঠো
খেতে পায় না
তাদের ক্ষুধার জ্বালা কতটা কষ্টের! পবিত্র রমজান অভাবহীনদের শিক্ষা দেয় সমাজের
দারিদ্র, পীড়িত, ক্ষুধাতুরদের অবস্থা অনুধাবন করে তাদের
প্রতি সহমর্মিতা
প্রকাশ করতে। তাদের সাথে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের সেতুবন্ধন তৈরি করতে।
তাই বলা যায়, মাহে
রমজান সাম্য-মৈত্রীর অনন্য মাধ্যম।
এই পৃথিবীতে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি
অর্জনে পরকালের সুখময় জীবন লাভ করা। আর মানবসেবা বা পরোপকার হচ্ছে মহামহিমের সন্তুষ্টি অর্জনের
শ্রেষ্ঠ উপায়। কবি শেখ সাদী রহ. যেন সে
কথাই তাঁর কবিতার ছন্দে তুলে ধরেন,
‘সেজদা ও তসবিহ দেখে
খোদ এলাহি ভুলবে না,
মানব সেবার চাবি ছাড়া
স্বর্গ দ্বারও খুলবে না।’
‘সেজদা ও তসবিহ দেখে
খোদ এলাহি ভুলবে না,
মানব সেবার চাবি ছাড়া
স্বর্গ দ্বারও খুলবে না।’
এই মানবসেবা বা পরোপকার শুধুমাত্র পরের
জন্যই নয়, বরং
তা নিজেরও অনেক কল্যাণ
সাধন করে। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন,
‘অবশ্যই একজন মুসলমানের সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে, অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়। তার থেকে অহংকার
ও অহমিকা দূর করে।’ -মুজামুল কাবীর ১৩৫০৮
আসুন না আমরা শুধুমাত্র নিজেদের নিয়েই
ব্যস্ত না থেকে আমাদের পাশের
বাড়ির যে লোকগুলো না খেয়ে পড়ে আছে তাদেরকে নিয়েও একটু ভাবি।
তাদের জন্য সাহায্যের
হাত বাড়াই। এটাই হোক পবিত্র এই রমজানে আমদের মিশন। মহামহিমের পাক
দরবারে এই প্রার্থনাই করি, পবিত্র
রমজান আমাদের জন্য বয়ে আনুক
শান্তি-সুখের বার্তা। কল্যাণময় হয়ে উঠুক আমাদের সবার জীবন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, আদ্রা জামে মসজিদ। কসবা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ
রোযার
ফিদিয়া দেওয়ার বিধান
OURISLAM24.COM
হাসান
আল মাহমুদ : অতি বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে না পারলে বা এমন মারাত্নক ও
দীর্ঘমেয়াদী রোগ যাতে সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে এবং রোযা রাখলে ক্ষতি হওয়ার আশংকা
থাকে ইত্যাদি কারণে যদি নিজের যিম্মায় ওয়াজিব হওয়া কাযা-কাফ্ফারা কিংবা উপস্থিত
রমযানের রোযা রাখার উপর একেবারে অসমর্থ হয়ে পড়ে তাহলে এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির জন্য
ফিদিয়া বা ক্ষতিপূরণ দেয়া আবশ্যক। প্রতিটা রোযার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর পরিমান পণ্য
বা তার মূল্য যাকাত খেতে পারে এমন গরীব-মিসকীনকে দান করাই হল এক রোযার ফিদিয়া। আর
কাফ্ফারা বাবত বিরতিহীনভাবে ৬০ দিন রোযা রাখার সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তির জন্য ৬০
জন গরীব-মিসকীনকে বা একজনকে ৬০ দিন পরিতৃপ্তির সাথে দু-বেলা খানা খাওয়াতে হবে বা
৬০ দিনের প্রত্যেকটা রোযার পরিবর্তে একেক মিসকীনকে সদকায়ে ফিতর পরিমান পণ্য বা তার
মূল্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু একজনকে ৬০ দিনেরটা একদিনেই দিয়ে দিলে কাফ্ফারা
আদায় হবে না বরং তাতে মাত্র একদিনের কাফ্ফারা আদায় হবে।এই ফিদিয়া স্বয়ং সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির উপর আবশ্যক।সে মৃত্যু বরণ করলে তার ওয়ারিসগণ তার ফিদিয়া আদায় করে
দিবে।মোটকথা, আল্লাহ তায়ালার অকাট্য বিধান পবিত্র
রমযান মাসের রোযা রাখা প্রত্যেক আকেল, বালেগ, সুস্থ
মস্তিষ্ক মুসলমানের জন্যে আবশ্যক ওঅত্যাবশ্যকীয়। তা না রাখলে বা উল্লেখিত বিভিন্ন
কারণে ভেঙ্গে গেলে অবস্থা ভেদে শরীয়তের হুকুম বিচারে কোথাও রোযার বিকল্প আরেকটি
রোযা কাযা হিসেবে আদায় করতে হবে আবার কোথাও বিকল্প রোযার সাথে সাথে কাফ্ফারা
হিসেবে আরো ৬০টি রোযা একাধারে বিরতিহীন রাখতে হবে।মারাত্নক অসুস্থ, অতি বার্ধক্য কারণে জীবদ্দশায় নিজের যিম্মায় আবশ্যক হওয়া আল্লাহর ফরয
বিধান রোযা রাখতে না পারলে ক্ষতিপূরণ স্বরুপ রোযার ফিদিয়া দিলে বা দেওয়ার ওসিয়ত
করে গেলে কিংবা অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে দিয়ে দিলে করুণাময় আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার
আশা করা যায়।(সূত্রঃরদ্দুল মুহতার ৩/৩৪৬-৩৯০ , ফতোয়া আলমগিরী ১/২০১-২০৭, ফতোয়া মাহমুদিয়া ১৫/১৬৭-২১৮,আহকামে , যিন্দেগী ২৫০-২৫৫,ফতোয়া রহীমিয়া ,৭/২৬৪-২৭২)
রোজার নিয়ত নিয়ে যতকথা
OURISLAM24.COM
আবু সাঈদ যোবায়ের : শুরু হল
অবারিত রহমত, বরকত
আর মাগফিরাতের মাস মাহে রমাযান। এমাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল রোজা পালন। রোজার
নিয়্যাত নিয়ে অনেকে নানা দ্বিধাদ্বন্দে
ভোগেন। রোজার আরবী নিয়ত না জানলে বা না পারলে এ দ্বিধা শংকায়
রুপ নেয়। দেখা যাক
ইসলাম কি বলে?
নিয়ত শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। যে কোন নেক
কাজের জন্য অন্তরের ইচ্ছাকেই নিয়ত বলা হয়।
প্রতিটি নেক কাজের জন্য নিয়ত শর্ত।
অর্থ্যাৎ, প্রতিটি
নেক কাজের জন্য মনে
সুস্পষ্ট ইচ্ছা থাকা জরুরী। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। তবে কেউ যদি
অন্তরে ইচ্ছার পাশাপাশি মুখেও উচ্চারণ করে তাতে কোন অসুবিধা নেই।এক্ষেত্রে কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য।
১. প্রত্যেক রোজার জন্য আলাদা নিয়ত তথা
অন্তরের ইচ্ছা জরুরী। (বেহেশতী জেওর)
২.নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, বরং অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট। এমনকি সাহরী
খাওয়াই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। যেহেতু রোজা রাখার উদ্দ্যেশেই সাহরী খাওয়া
হয়, তাই
সেহরীর সময় মনের মাঝে যে ইচ্ছাটুকু থাকে,
তাই রোজা সহীহ
হওয়ার জন্য যথেষ্ট।(ইলমুল ফিকহ,
ভলি:৩পৃ:১৮)
৩. প্রত্যেক রোজার জন্য স্বতন্ত্র নিয়ত
জরুরী। অর্থাৎ, কততম
রোজা রাখছে তা
স্পষ্ট হওয়া উচিত। তবে রমজানের রোজা রাখছি এমন নিয়ত দ্বারাও রোজা সহীহ হবে।
৪.অনেকে আরবীতে নিয়ত করেন। একে জরুরী
মনে না করে নিয়ত করলে কোন অসুবিধা
নেই। তবে যারা আরবী জানেনা তাদের জন্য বাংলায় নিয়ত করাই
শ্রেয়।।
সিয়াম ও কিয়ামের মাস
OURISLAM24.COM
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : মুসলিম
জাতির কাছে রমজান মাসের আগমন ঘটে রোযা ও তারাবীহর বার্তা নিয়ে। এটা রমজান
মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য,
পূর্ণ নিষ্ঠা ও
আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতœবান
হওয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ
করেছেন হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে
তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী)
হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩
একটি হাদিছে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট
বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের রোজা ফরয করেছেন।
এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে
শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন
একটি রাত আছে, যা
হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।
মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭১৪৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৩৮৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৯৫৯
হজরত আশরাফ আলী থানভি রহ. এর রমজান
OURISLAM24.COM
আমিন আশরাফ : মামুলাতে আশরাফিয়াতে আছে, রমজানের তারাবিতে অধিকাংশ সময় তিনি
নিজেই কুরআন তেলাওয়াত
করে শোনাতেন। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে তিনি তারাবি পড়ানো কখনো বাদ
দিতেন না। ১২ রমজান পর্যন্ত সোয়াপারা করে এবং পরে প্রতিদিন একপারা করে তেলাওয়াত
করতেন।
প্রায় বছরেই ২৭ রমজান তারাবি শেষ করতেন।
হযরতের তেলাওয়াতের মধ্য কী গভীর
মাধুর্যতা ছিল তা নিজকানে যারা শুনেনি, তাদেরকে কখনো বলে বুঝানো যাবে না।
ওয়াক্তিয়া নামাজের মতো তারাবির নামাজও
তিনি ধীরে সুস্থে পড়াতেন।
প্রয়োজনে দ্রুত পড়লেও শব্দের উচ্চারণ আস্তে আস্তে পড়ার মতো
পড়তেন। তিনি তিলাওয়াত
করার সময় ওয়াকফ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি যেভাবে খেয়াল রাখতেন অন্যদের
মাঝে তার নজীর পাওয়া যেত না। তার স্মরণ শক্তি এতই প্রখর ছিল যে, তার খুবই কম এক আয়াতের সঙ্গে অন্য
আয়াতের প্যাচ লাগতো মানে মুশাব্বাহ হতো।
কুরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে তার স্বভাবজাত
সম্পর্ক ছিল। কুরআনের প্রথম আয়াত
থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি লাইন তার চোখের সামনে ভাসতে থাকতো।
কানুপুরে থাকাকালীন
তারাবিতে লোকজন এতো বেশি আসতো যে, জায়গা
পাওয়ার জন্য মাগরিবের পর পরই
মসজিদে চলে আসতে হতো। আর এতো বড় জামাতে সিজদার আয়াতের সেজদা আদায় করা খুব
মুশকিল হয়ে যেত।
এমনকি অনেকের নামাজও নষ্ট হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা হতো। এজন্য এক বছর থানভি
রহ. এ মাসআলার উপর আমল করলেন যে,
সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করার সঙ্গে সঙ্গে যদি রুকুতে চলে যাওয়া হয় এবং তাতে যদি
তিলওয়াতে সিজদার নিয়ত করা হয় তাহলে
সিজদা আদায় হয়ে যায়। আশ্চর্যের কথা হলো, এতদ্বসত্ত্বেও নামাজের রাকাতসমূহ ছোট
বড় হতো না। সব সময় একই রকম থাকতো।
তিনি সাধারণত মাদরাসায় মেহমানদের সঙ্গে
ইফতার করতেন। তারপর হাত ধুতেন, কুলি
করতেন। এরপর ধীরে সুস্থে, মাগরিবের
নামাজের জন্য দাঁড়াতেন। আজান ও
জামাতের মাঝে এতোটুকু ব্যবধান হতো যে, একজন মানুষ ধীরে সুস্থে উজু করে তাকবিরে
উলার সঙ্গে মাগরিবের জামাতে শরীক হতো।
মাগরিবের পর আনুসাঙ্গিক আমল শেষ করে
খাবার খেতেন। ইশার সময় হলে আস্তে
আস্তে তারাবি পড়া শুরু করতেন। তারাবির চার রাকাত পর পর বিভিন্ন
দুআ-দুরুদ পড়তেন।
অন্যান্য নামাজের মতো খুবই ধীর-স্থিরভাবে রুকু সিজাদ করতেন। তাহাজ্জুদেও অধিকাংশ সময় আস্তে আস্তে
কিরাত পড়তেন। তবে মাঝে মাঝে জোরেও
পড়তেন।
তিনি যখন ইতেকাফ করতেন, তখন তাহাজ্জুদের সময় দুচার জন তার পেছনে
এসে দাঁড়িয়ে
যেত। তিনি তাদের কাউকে নিষেধ করতেন না। তবে জামাতের সঙ্গে তাহাজ্জুদ পড়ার কোনো ব্যবস্থা করা হতো
না। একবারও এমন দেখা গেছে, ঘুম
থেকে উঠতে
দেরি হওয়ায় মাত্র দুই রাকাতে তিলাওয়াতের নির্ধারিত পরিমাণ আদায় করার পর
বললেন, তোমরা
সাহরি খেয়ে নাও। সাহরির শেষে সময় পেলে নিজে নিজে তাহাজ্জুদ পড়ে নিও।
তাহাজ্জুদের পর কিছুক্ষণ আরাম করে ফজরের
প্রস্তুতি নিতেন। দিনরাতের আমল
ঠিক ঠিক মতই করে যেতেন। তিনি রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন
আবার কখনো শেষ তিনদিনও
ইতেকাফ করতেন। এ সময় যেন সর্বত্র আলো ফোয়ারা বইতো। ইতেকাফের মধ্যে লেখালেখির
কাজও করতেন। ‘কসদুস
সাবিল’ গ্রন্থটি
তিনি মাত্র আটদিনে ইতেকাফ
অবস্থায় লিখে শেষ করেন।
সে সময় তিনি কসদুস সাবিলের সঙ্গে আল
ফুতুহু ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিররুহি
নামক কিতাবটিও লিখেন।{তিনিসহ
আকাবিরদের রমজান পালন সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পড়ুন আকাবির কা রমজান কিতাবটি} [মামুলাতে আশরাফিয়া]
আরআর
শূকরের মাংসে ক্যান্সার ঝুঁকি : কুরআন কী বলে?
OURISLAM24.COM
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ : সম্প্রতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO-ওয়ার্ল্ড
হেলথ অর্গানাইজেশন) রিপোর্টে
বলা হয়েছে, যারা
নিয়মিত শূকরের মাংস খায় তাদের ক্যান্সারে ঝুঁকি রয়েছে প্রকট। এ ধরণের প্রসেসড ফুডে ক্যান্সারের
মত মরণব্যাধি গ্রাস করতে পারে
যে কোন ব্যক্তিকে।
রিপোর্ট থেকে পাওয়া তথ্যে বলা হয়, অ্যাসবেসটস এবং আর্সেনিকের মত ক্ষতিকারক
পদার্থ থাকার ফলে মানব অঙ্গে নিরবে ক্ষতের সৃষ্টি ঘটায়।
গবেষকরা বলেন, এর ক্ষতিকারক দিক সিগারেট বা তামাকজাত
দ্রব্য থেকেও ভয়ানক।
যা একজন সুস্থ্য মানুষকে ধীরে ধীরে মৃতু্ মুখে ঠেলে দেয়। অথচ আমেরিকান বাজারে বহুল বিক্রিত খাবারের
মধ্যে জনপ্রিয় হল এই শূকরমাংস।
অনেকের কাছেই খাবারটি দারুণ মুখরোচক। তবে শূকরপ্রেমীদের জন্য
এটি হতাশার দুঃসংবাদ।
সূত্র : জিনিউজ
সম্প্রতি এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হুবহু
আল্লাহর নির্দেশিত বাণীর সঙ্গে
মিলে যায়। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে তাই হালাল কেরেছেন যা
মানুষের জন্য কল্যাণকর।
আর যা হারাম তা মানুষের জন্য বিপদজনক। শূকরের মাংসও এদের একটি ।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “অবশ্যই তিনি মৃত, রক্ত ও শূকরের মাংস এবং আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারো নামে বলি দেয়া জন্তু হারাম করে দিয়েছেন…” [বাকারা ১৭৩]
এ মাংস মানুষের জন্য বিপদজনক হওয়ার আরও
চারটি কারণ
এতে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর
শুকরের মাংসে পেশি তৈরির উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়, যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ৫০ ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।
শুকরের মাংসে পেশি তৈরির উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়, যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ৫০ ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।
শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী
এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে
নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের
মল ও ময়লাপূর্ণ
জায়গায়। আল্লাহ তাআলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টিকূলের ধাঙর,
মেথর বা ময়লা
পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন। আজ থেকে
পঞ্চাশ কি ষাট বছর
আগেও যখন সেনিটারি পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের পায়খানার ধরণ
ছিল, পেছন
থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ
নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব
বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।
অনেকেই হয়তো এখন বিতর্কে নেমে পড়বেন
উন্নত বিশ্বে এখন শুকরের পরিচ্ছন্ন
খামার করা হয়েছে যেখানে ওগুলো লালিত পালিত হয়। তাদের এই অনেক
উন্নত, স্বাস্থ্যকর
খামারেও ওগুলো নোংরা। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই ওরা ওদের নিজেদের ও সঙ্গিদের
বিষ্ঠা নিয়ে ওদের চোখ নাক দিয়ে নাড়া চড়া করে আর উৎসবের খাদ্য হিসেবেই খায়।
নির্লজ্জ পশু
ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায়
নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা
তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের
ডেকে নেয়। আমেরিকার
ও ইউরোপের অধিকাংস মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকরের মাংস। খাদ্যভ্যাস আচরণে
প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের
এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয়
সংস্কৃতি ডান্স পার্টিগুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনায় উন্মত্ত হয়
তখন একে অপরের সাথে
বউ বদল করে। অনেকেই আবার জীবন্ত নীল ছবির স্বাদ দিতে জন্য স্ত্রীর সাথে
মিলিত হতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। এসব প্রমাণ করে শুকরের মাংস মানুষকে নির্লজ্জতার
দিকে ধাবিত করে।
সেহরি ইফতারে সাইরেন বাজানো যাবে কি?
OURISLAM24.COM
আবু সাঈদ যোবায়ের : সুস্বাদু
সব আইটেম রেডি। রকমারি আয়োজনে দস্তরখান ঠাঁসা। কিন্তু কেউ খাচ্ছে না।
অপেক্ষা শুধু সাইরেন বাজার। সাইরেন বাজলেই সবাই খাবার শুরু হবে। আমাদের
দেশে ইফতারের এটি একটি সরল চিত্র। সেহরিতেও একবার বাজানো হয় এই সাইরেন
সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য। প্রশ্ন হল,
সেহরি ও ইফতারে
এমনভাবে সাইরেন বাজানো যাবে কি?
ইসলামি স্কলারগণ এ প্রশ্নের উত্তরে
লিখেছেন, সেহরিতে
মানুষকে ঘুম থেকে জাগানো
এবং ইফতারে সময়ের ব্যাপারে জানান দেয়ার জন্য সাইরেন ব্যবহার জায়েজ। তবে
অবশ্যই তা গান বাজনার আওয়াজের মত হতে পারবে না এবং এই আওয়াজে মানুষের যেন
কষ্ট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা আবশ্যক। বিস্তারিত দেখুন, ফতোয়া শামি, কিতাবুল হাজরি ওয়াল ইবাহাহ, ফতোয়া রাহিমিয়্যাহ। প্রশ্ন নং : ২৯৬
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এআর
মাহে রমজানে অধিনস্তদের সাথে আচরণ
OURISLAM24.COM
আল আমিন আলম : রমজান মাসে আমরা যেমন
রোজা রাখি তেমনই আমাদের
অধীনস্থরাও রাখে। বিশেষ করে বাড়ির গৃহকর্মী,
ড্রাইভার, ও
নিরাপত্তা রক্ষী।
আর রোজার সাথে সাথে শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তিবোধ
চলে আসে সবার মাঝে। এ
জন্য রমজান মাসে আমাদের ঘরের এই সমস্থ মানুষজনদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া চাই।
কোনো কোনো পরিবারে গৃহকর্মী মাত্র একজন
থাকে, আবার
কোথাও হয়ত খণ্ড সময়ের
জন্য থাকে। তারা যদি রোজাদার হন তাহলে তাদের প্রতি ঘরের অভিভাবকদের কিছু
দায়িত্ব চলে আসে। সেটি হচ্ছে, কাজেকর্মে
তাদের সহযোগিতা করা। অর্থাৎ
যে কাজটি সে একা করত,
সেটিতে বাড়ির মানুষদের নিজেদের সাহায্য করা যা অন্য মাসে
আমরা সাধারণত করি না। এছাড়া রোজা অবস্থায় নির্ধারিত দায়িত্ব থেকে তার
সেবা কিছু কম গ্রহণ করেও এটা করা যায়। অর্থাৎ অন্যান্য সময়ের হিসাব ধরে
রমজানে তাকে সবটুকু কাজ করতে বাধ্য না করা।
আরও উত্তম হয় যদি রমজানে তার সেবার
বিনিময়ে অন্যান্য মাসের তুলনায়
পারিশ্রমিকও কিছু বাড়িয়ে দেয়া। রোজাদার গৃহ কর্মী, গৃহকর্মীও আল্লাহর বান্দা -এ অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত রেখে
রমজানে তার প্রতি যতটুকু সদয় হওয়া
যায়। এভাবে অধিনস্তদের ব্যাপারে সদয় আচরণ রমাজানে ছওয়াব
হাসিলের এক বিশাল
উপলক্ষ হতে পারে।
একইভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
রমজানে রোজাদার কর্মচারীদের ওপর কাজের চাপ কমানোর অনেক বড় আমাল
হতে পারে। সাধারণ
সময় আর রমজান এর ব্যবধান আকাশ পাতাল। একজন রোজাদার অন্য সময় যা পারে রমজানে
সেই পরিমাণ কাজ কোনোভাবেই পারবে না এটা অবশ্য মানবিকতারও দাবি। সারাদিন
অনাহারে থাকা একজন ব্যক্তির কাছে ওই পরিমাণ কাজ আশা করা যা সাধারণ সময়ে
করা হয়। আশা করা যায় আল্লাহ্ তায়ালা বরকত দিবেন।
আর এ ক্ষেত্রে একটি বিষিয় কর্মচারীদেরও
খেয়াল রাখা চাই। যাতে রমজানের
উসিলায় কাজে কোন রকম গাফিলতি না হয়। যে ধরনের চুক্তিতে আমি কাজ
শুরু করেছি ওভাবেই
কাজ করা চাই। আর প্রতিষ্ঠানের মালিকও এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন যেন রমজান
উপলক্ষে তার অধিনস্ত কর্মীরা কিছুটা সুবিধা পান।
যেসব সম্পদে জাকাত আসে
OURISLAM24.COM
মুফতি জাহিদুজ্জামান : রমজান
মাস। এ মাসে জাকাত আদায় করেন ধনীরা। জাকাত আদায় করা ইসলামের একটি ফরজ
বিধান। যাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্বেরও একটি। তাই প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য
এর বিধিবিধান স্পষ্ট জানা এবং তদনুযায়ী আমল করা। যে সব সম্পত্তির ওপর
জাকাত ফরজ হয় এর বিবরণ দেওয়া হলো,
১. ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফলফলাদি
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করো।’ (সূরা বাকারা : ২৬৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আসমান ও ঝরনার পানিতে কিংবা স্বেচ্ছা উৎপাদিত ফসলের মধ্যে এক দশমাংশ আর যা সেচের মাধ্যমে আবাদ হয় তার মধ্যে ২০ ভাগের এক ভাগ জাকাত প্রদেয়।’ (বোখারি : ১৪৮৩)।
ফসলের ওপর জাকাত ফরজ হওয়ার নির্ধারিত পরিমাণ হলো পাঁচ ওসক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শস্য বা ফলমূলের ওপর জাকাত ফরজ হবে না। যতক্ষণ তা পাঁচ ওসক পরিমাণ না হয়।’ (মুসলিম : ৯৭৯)।
আর ওসকের পরিমাণ হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ব্যবহৃত সা’য়ের ৬০ সা’ সমপরিমাণ। তাহলে নিসাব হলো, ৩০০ সা’, আর এক সা’র পরিমাণ হলো ২ হাজার ৪০ গ্রাম (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম)। সুতরাং নিসাবের পরিমাণ দাঁড়াল ৬১২ কেজি। তাই এর কমে জাকাত ফরজ নয়। ওই নিসাবে বিনাশ্রমে প্রাপ্ত ফসলের জাকাতের পরিমাণ হলো এক দশমাংশ আর শ্রম ব্যয়ে প্রাপ্ত ফসলের এক বিশমাংশ।
ফলমূল, শাকসবজি, তরমুজ ও জাতীয় ফসলের ওপর জাকাত ফরজ নয়। ওমর (রা.) বলেন, ‘শাকসবজিতে জাকাত নেই’। আলী (রা.) বলেন, ‘আপেল বা এ জাতীয় ফলের ওপর জাকাত ফরজ নয়। তাছাড়া যেহেতু এগুলো (নিত্যপ্রয়োজনীয়) খাবার, জাতীয় শস্য বা ফল নয়, তাই এর ওপর জাকাত নেই। তবে যদি এসব টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় তাহলে মূল্যের ওপর নিসাব পূর্ণ হয়ে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাকাত ফরজ হবে।
২. গবাদি পশু
উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের জাকাত ফরজ। যদি এসব প্রাণী ‘সায়েমা’ হয় তথা মাঠে চরে চষে খায় এবং এগুলোকে বংশ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় এবং তা নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে এদের জাকাত দিতে হবে। উটের নিসাব ন্যূনতম ৫টি, গরুর ৩০টি আর ছাগলের ৪০টি।
‘সায়েমা’ ওই সব প্রাণীকে বলে, যেগুলো সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। যদি এসব প্রাণী সায়েমা না হয়, তবে এর ওপর জাকাত ফরজ নয়। কিন্তু যদি এগুলো দ্বারা টাকা-পয়সা কামাই করার উদ্দেশ্য থাকে; যেমন, বেচাকেনা, স্থানান্তর ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা-পয়সা আয় করা, তাহলে তা ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর তখন সেগুলো সায়েমা কিংবা মা’লুফাহ (যাকে ঘাস কেটে খাওয়ানো হয়) যা-ই হোক না কেন তাতে ব্যবসায়িক পণ্যের জাকাত আসবে; যদি তা এককভাবে নিসাব পরিমাণ হয় অথবা এসবের মূল্য অন্য ব্যবসায়িক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত করলে নিসাব পরিমাণ হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করো।’ (সূরা বাকারা : ২৬৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আসমান ও ঝরনার পানিতে কিংবা স্বেচ্ছা উৎপাদিত ফসলের মধ্যে এক দশমাংশ আর যা সেচের মাধ্যমে আবাদ হয় তার মধ্যে ২০ ভাগের এক ভাগ জাকাত প্রদেয়।’ (বোখারি : ১৪৮৩)।
ফসলের ওপর জাকাত ফরজ হওয়ার নির্ধারিত পরিমাণ হলো পাঁচ ওসক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শস্য বা ফলমূলের ওপর জাকাত ফরজ হবে না। যতক্ষণ তা পাঁচ ওসক পরিমাণ না হয়।’ (মুসলিম : ৯৭৯)।
আর ওসকের পরিমাণ হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ব্যবহৃত সা’য়ের ৬০ সা’ সমপরিমাণ। তাহলে নিসাব হলো, ৩০০ সা’, আর এক সা’র পরিমাণ হলো ২ হাজার ৪০ গ্রাম (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম)। সুতরাং নিসাবের পরিমাণ দাঁড়াল ৬১২ কেজি। তাই এর কমে জাকাত ফরজ নয়। ওই নিসাবে বিনাশ্রমে প্রাপ্ত ফসলের জাকাতের পরিমাণ হলো এক দশমাংশ আর শ্রম ব্যয়ে প্রাপ্ত ফসলের এক বিশমাংশ।
ফলমূল, শাকসবজি, তরমুজ ও জাতীয় ফসলের ওপর জাকাত ফরজ নয়। ওমর (রা.) বলেন, ‘শাকসবজিতে জাকাত নেই’। আলী (রা.) বলেন, ‘আপেল বা এ জাতীয় ফলের ওপর জাকাত ফরজ নয়। তাছাড়া যেহেতু এগুলো (নিত্যপ্রয়োজনীয়) খাবার, জাতীয় শস্য বা ফল নয়, তাই এর ওপর জাকাত নেই। তবে যদি এসব টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় তাহলে মূল্যের ওপর নিসাব পূর্ণ হয়ে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাকাত ফরজ হবে।
২. গবাদি পশু
উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের জাকাত ফরজ। যদি এসব প্রাণী ‘সায়েমা’ হয় তথা মাঠে চরে চষে খায় এবং এগুলোকে বংশ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় এবং তা নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে এদের জাকাত দিতে হবে। উটের নিসাব ন্যূনতম ৫টি, গরুর ৩০টি আর ছাগলের ৪০টি।
‘সায়েমা’ ওই সব প্রাণীকে বলে, যেগুলো সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। যদি এসব প্রাণী সায়েমা না হয়, তবে এর ওপর জাকাত ফরজ নয়। কিন্তু যদি এগুলো দ্বারা টাকা-পয়সা কামাই করার উদ্দেশ্য থাকে; যেমন, বেচাকেনা, স্থানান্তর ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা-পয়সা আয় করা, তাহলে তা ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর তখন সেগুলো সায়েমা কিংবা মা’লুফাহ (যাকে ঘাস কেটে খাওয়ানো হয়) যা-ই হোক না কেন তাতে ব্যবসায়িক পণ্যের জাকাত আসবে; যদি তা এককভাবে নিসাব পরিমাণ হয় অথবা এসবের মূল্য অন্য ব্যবসায়িক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত করলে নিসাব পরিমাণ হয়।
৩. স্বর্ণ-রৌপ্য
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে না (জাকাত দেয় না)। আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান করুন। কেয়ামত দিবসে ওই সোনা-রুপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠে সেকা দেয়া হবে এবং বলা হবে, এ হলো তোমাদের সেসব ধন-সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে। সুতরাং আজ জমা করে রাখার স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সূরা তওবা : ৩৪-৩৫)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেসব সোনা-রুপার মালিকরা তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক (জাকাত) আদায় না করে, কেয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্রস্তুত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ওই লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে। তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে আবার চেপে ধরা হবে। ৫০ বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে।’ (মুসলিম : ৯৮৭)।
সোনা-রুপার যাবতীয় সামগ্রীতে জাকাত ফরজ। চাই তা হোক টাকা-পয়সা, চাকা বা টুকরা, পরিধেয় অলংকার বা ধার দেয়ার মতো অলংকার অথবা অন্য প্রকার সোনা-রুপা এসব কিছুর ওপর জাকাত ফরজ।
সোনার নিসাব ২০ দিনার। রাসুলুল্লাহ (সা.) সোনার ব্যাপারে বলেন, ‘(স্বর্ণের জাকাত হিসেবে) তোমার ওপর কিছুই ওয়াজিব হবে না যে পর্যন্ত তোমার কাছে ২০ দিনার পরিমাণ স্বর্ণ না হবে।’ (আবু দাউদ : ১৫৭৩)। দিনার বলতে ইসলামী দিনার উদ্দেশ্য, যার ওজন এক মিসকাল। এক মিসকাল সমান সোয়া চার গ্রাম। সে হিসাবে সোনার নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম, যা এ দেশীয় মাপে ৭.৫ ভরি হয়।
রুপার নিসাব পাঁচ ওকিয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওকিয়ার কম রুপার ওপর জাকাত নেই।’ (বোখারি : ১৪৫৯)। এক ওকিয়া সমান ৪০ ইসলামী দিরহাম। সে মতে রুপার হিসাব হলো ২০০ দিরহাম। আর এক দিরহাম হলো, এক মিসকালের সাত দশমাংশ। এর মোট ওজন ১৪০ মিসকাল, যার বর্তমান প্রচলিত ওজন হলো ৫৯৫ গ্রাম, যা এ দেশীয় মাপে ৫২.৫ ভরি। রৌপ্য ও স্বর্ণের জাকাতের পরিমাণ হচ্ছে, চার দশমাংশ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ।
কাগজের তৈরি নোটের (টাকা) ওপরও জাকাত ফরজ। কারণ নোটগুলো রুপার বদলেই চলমান। সুতরাং এসব রুপার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং এর মূল্যমান রুপার নিসাবের সমপরিমাণ হলে তাতে জাকাত ফরজ হবে। সোনা-রুপা ও কাগজের নোট ইত্যাদির ওপর সর্বাবস্থায় জাকাত ফরজ। চাই তা হাতে মজুদ থাকুক বা অন্য কারও জিম্মাদারিতে থাকুক। সোনা-রুপা ছাড়া অন্য সব খনিজপদার্থ যদিও তা আরও মূল্যবান হয়, তাতে জাকাত ফরজ নয়। তবে তা যদি ব্যবসার পণ্য হয়ে থাকে; তাহলে নিসাব পূর্ণ হলে অবশ্যই ব্যবসায়ীকে পণ্য হিসেবে জাকাত দিতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে না (জাকাত দেয় না)। আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান করুন। কেয়ামত দিবসে ওই সোনা-রুপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠে সেকা দেয়া হবে এবং বলা হবে, এ হলো তোমাদের সেসব ধন-সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে। সুতরাং আজ জমা করে রাখার স্বাদ গ্রহণ করো।’ (সূরা তওবা : ৩৪-৩৫)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেসব সোনা-রুপার মালিকরা তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক (জাকাত) আদায় না করে, কেয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্রস্তুত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ওই লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে। তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে আবার চেপে ধরা হবে। ৫০ বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে।’ (মুসলিম : ৯৮৭)।
সোনা-রুপার যাবতীয় সামগ্রীতে জাকাত ফরজ। চাই তা হোক টাকা-পয়সা, চাকা বা টুকরা, পরিধেয় অলংকার বা ধার দেয়ার মতো অলংকার অথবা অন্য প্রকার সোনা-রুপা এসব কিছুর ওপর জাকাত ফরজ।
সোনার নিসাব ২০ দিনার। রাসুলুল্লাহ (সা.) সোনার ব্যাপারে বলেন, ‘(স্বর্ণের জাকাত হিসেবে) তোমার ওপর কিছুই ওয়াজিব হবে না যে পর্যন্ত তোমার কাছে ২০ দিনার পরিমাণ স্বর্ণ না হবে।’ (আবু দাউদ : ১৫৭৩)। দিনার বলতে ইসলামী দিনার উদ্দেশ্য, যার ওজন এক মিসকাল। এক মিসকাল সমান সোয়া চার গ্রাম। সে হিসাবে সোনার নিসাব হলো ৮৫ গ্রাম, যা এ দেশীয় মাপে ৭.৫ ভরি হয়।
রুপার নিসাব পাঁচ ওকিয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওকিয়ার কম রুপার ওপর জাকাত নেই।’ (বোখারি : ১৪৫৯)। এক ওকিয়া সমান ৪০ ইসলামী দিরহাম। সে মতে রুপার হিসাব হলো ২০০ দিরহাম। আর এক দিরহাম হলো, এক মিসকালের সাত দশমাংশ। এর মোট ওজন ১৪০ মিসকাল, যার বর্তমান প্রচলিত ওজন হলো ৫৯৫ গ্রাম, যা এ দেশীয় মাপে ৫২.৫ ভরি। রৌপ্য ও স্বর্ণের জাকাতের পরিমাণ হচ্ছে, চার দশমাংশ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ।
কাগজের তৈরি নোটের (টাকা) ওপরও জাকাত ফরজ। কারণ নোটগুলো রুপার বদলেই চলমান। সুতরাং এসব রুপার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং এর মূল্যমান রুপার নিসাবের সমপরিমাণ হলে তাতে জাকাত ফরজ হবে। সোনা-রুপা ও কাগজের নোট ইত্যাদির ওপর সর্বাবস্থায় জাকাত ফরজ। চাই তা হাতে মজুদ থাকুক বা অন্য কারও জিম্মাদারিতে থাকুক। সোনা-রুপা ছাড়া অন্য সব খনিজপদার্থ যদিও তা আরও মূল্যবান হয়, তাতে জাকাত ফরজ নয়। তবে তা যদি ব্যবসার পণ্য হয়ে থাকে; তাহলে নিসাব পূর্ণ হলে অবশ্যই ব্যবসায়ীকে পণ্য হিসেবে জাকাত দিতে হবে।
৪. ব্যবসায়ী পণ্য
ব্যবসায়ী পণ্য বলতে বোঝায় এমন যাবতীয় বস্তু যা দ্বারা মুনাফা অর্জন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। যেমন, জমি, জীবজন্তু, খাবার, পানীয় ও গাড়ি ইত্যাদি সব ধরনের সম্পদ। সুতরাং বছরান্তে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে তার চার দশমাংশ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। চাই সেটার মূল্যমান ক্রয়মূল্যের সমপরিমাণ হয় অথবা কম হোক বা বেশি।
মুদি দোকানদার, মেশিনারি দোকানদার বা খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রেতা এবং এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হলো, ছোট-বড় সব অংশের মূল্য নির্ধারণ করে নেবে, যাতে কোনো কিছু বাদ না পড়ে। পরিমাণ নির্ণয়ে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সতর্কতামূলক বেশি দাম ধরে জাকাত আদায় করবে, যাতে সে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বমুক্ত হতে পারে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, বিছানা, আসবাবপত্র, থাকার ঘর, বাহন, গাড়ি, পোশাকের (ব্যবহার্য সোনা-রুপা ছাড়া) ওপর জাকাত নেই। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের দাস-দাসী, ঘোড়ার ওপর জাকাত নেই।’ (বোখারি : ১৪৬৪, মুসলিম : ৯৮২)।
অনুরূপভাবে ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্য যেমন জমিজমা, গাড়ি ইত্যাদির ওপর জাকাত আসবে না। তবে সেসব থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর বছর পূর্তির পর সেটা দ্বারা এককভাবে নিসাব পূর্ণ হোক বা এ জাতীয় অন্য সম্পদের সঙ্গে মিশে নিসাব পূর্ণ হোক, তাতে জাকাত দেয়া ফরজ হবে।
ব্যবসায়ী পণ্য বলতে বোঝায় এমন যাবতীয় বস্তু যা দ্বারা মুনাফা অর্জন কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। যেমন, জমি, জীবজন্তু, খাবার, পানীয় ও গাড়ি ইত্যাদি সব ধরনের সম্পদ। সুতরাং বছরান্তে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে তার চার দশমাংশ বা ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। চাই সেটার মূল্যমান ক্রয়মূল্যের সমপরিমাণ হয় অথবা কম হোক বা বেশি।
মুদি দোকানদার, মেশিনারি দোকানদার বা খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রেতা এবং এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হলো, ছোট-বড় সব অংশের মূল্য নির্ধারণ করে নেবে, যাতে কোনো কিছু বাদ না পড়ে। পরিমাণ নির্ণয়ে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সতর্কতামূলক বেশি দাম ধরে জাকাত আদায় করবে, যাতে সে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বমুক্ত হতে পারে। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, বিছানা, আসবাবপত্র, থাকার ঘর, বাহন, গাড়ি, পোশাকের (ব্যবহার্য সোনা-রুপা ছাড়া) ওপর জাকাত নেই। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের দাস-দাসী, ঘোড়ার ওপর জাকাত নেই।’ (বোখারি : ১৪৬৪, মুসলিম : ৯৮২)।
অনুরূপভাবে ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্য যেমন জমিজমা, গাড়ি ইত্যাদির ওপর জাকাত আসবে না। তবে সেসব থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর বছর পূর্তির পর সেটা দ্বারা এককভাবে নিসাব পূর্ণ হোক বা এ জাতীয় অন্য সম্পদের সঙ্গে মিশে নিসাব পূর্ণ হোক, তাতে জাকাত দেয়া ফরজ হবে।
ইফতার করানো ফযিলত, তবে সতর্কতাও প্রয়োজন
OURISLAM24.COM
ইমতিয়াজ বিন মাহতাব : ইফতার পার্টি, ইফতার মাহফিল একটা কালচারে পরিণত হয়েছে।
রমজান মাসে ইফাতার পার্টির
ধুম পড়ে। ইফতার পার্টিকে রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমও
করছে।
মুসলমান সমাজে অন্যকে ইফতার করানোর এই
রীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে রাসূলুল্লাহু
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে
ইফতার করাবে তার যাবতীয় গুনাহ মাফ
হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন থেকে সে নাজাত পাবে। আর সে ওই
রোজাদারের সমান সওয়াব
পাবে। অথচ এতে ঐ রোজাদারের সওয়াব মোটেও কমবে না।
এ কথা শুনে সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে সকলের তো রোজাদারকে ইফতার করাবার সামর্থ্য নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, যে ব্যক্তি কোনও রোজাদারকে এক ঢোক দুধ কিংবা একটি খেজুর অথবা একটু পানিও পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উক্ত রূপ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তির সাথে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাওসারের এমন পানি পান করাবেন যে, বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত সে আর পিপাসা অনুভব করবে না।
এ কথা শুনে সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে সকলের তো রোজাদারকে ইফতার করাবার সামর্থ্য নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, যে ব্যক্তি কোনও রোজাদারকে এক ঢোক দুধ কিংবা একটি খেজুর অথবা একটু পানিও পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উক্ত রূপ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তির সাথে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাওসারের এমন পানি পান করাবেন যে, বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত সে আর পিপাসা অনুভব করবে না।
এ হাদিসে একটি বিষয় লক্ষ করা উচিত।
এখানে ইফতার করানোর কথা বলা হয়েছে
রোজাদার ব্যক্তিকে। আমরা ইফতার মাহফিলে, ইফতার পার্টিতে যাদের দাওয়াত করি, তাদের কয়জন রোজাদার থাকে? ইফতার করানোর কথা রোজাদার ব্যক্তিকে, অথচ আমরা এ সমস্ত কালচারে দেদারসে বেরোজাদার
ব্যক্তিকে শরীক করছি, তাদেরকেই
ইফতার করাচ্ছি।
হাদীসের শেষাংশে তৃপ্তির সাথে ইফতার করানোর প্রতিদান হিসাবে হাউজে কাউসারের
পানি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এটা শুধু মুসলমানদের প্রাপ্য। আমরা ইফতার
মাহফিল/ইফতার পার্টির নামে যে ভূরিভোজের আয়োজন করছি,
তাতে বিধর্মীদেরও
দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছি। যার বিনিময় হাউজে কাউসারের পানি, তা শুধুই মুসলমান রোজাদারের প্রাপ্য।
বিষয়টা বোঝা উচিত, ভাবা উচিত। ইফতার করানো একটি ইবাদত।
তারপর সেটা কালচার।
আমরা ইবাদতের নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধুই কালচার নিয়ে ব্যস্ত। কোথায়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস আর কোথায় আমাদের ব্যবহারিক
জীবন!
লেখক : ইমাম ও খতীব, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ
ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ
জামায়াতে তারাবির নামাজ শুরু হয় কবে থেকে?
OURISLAM24.COM
মাওলানা মুহাম্মদ আরাফাত : তারাবি।
শাব্দিক অর্থ বিশ্রাম গ্রহণ করা।
প্রতি চার রাকাত পর কিছু সময়
বিশ্রাম নেওয়া হয় তাই নাম তারাবি। তারাবি- রমজানের রাতের নামাজ।
ইশার পর শুরু
হয় ওয়াক্ত। একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত। সকল আকেল বালেগের ওপর তারাবি সুন্নতে
মুয়াক্কাদা। অযথা ছাড়লে হয় গুনাহ। আবার দেয়া যায় না তার কাযা।
তারাবি। একটি উৎসব আনন্দ আমেজ। তারাবি- একটি ভ্রাতৃত্বের
নিদর্শন। একতার সুর।
নারীদের জন্য একাকি ঘরে। পুরুষ পড়বে মসজিদে জামাতে। মাথায় সুন্নতি টুপি।
হাতে জায়নামাজ। মসজিদ পানে যেন মুসল্লির মিছিল। নেই কোন ভেদাভেদ। ধনী গরিব
একসাথে। এক কাতারে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহান প্রভুর দরবারে। হাতে হাতকড়া
পড়ে বিনয়ীর স্বভাবে মুমিন দাঁড়ায় রব্বে কারিমের আদালতে। যেন বিচারকের কাঠগড়ায় আসামির আত্নসমর্পন।
যেন মালিকের চরণে নিজেকে সপে দেয়া।
তারাবিতে হাফেজের সুরে কুরআনের বীণ
বাজে। মুসল্লি শুনে মুগ্ধ হয়ে। শুনে
আবেগ দিয়ে প্রাণভরে। আপ্লুত হয়। বাড়ে ঈমানের চেতনা। তারাবি।
খতমে তারাবি। চলে
রমজানজুড়ে। তারাবিতে কুরআন খতম নবিজির সুন্নাত। সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা
রা. থেকে বর্ণিত, নবিজি
রমজানে তারাবি পড়তে উৎসাহিত করতেন। তবে
অপরিহার্যভাবে আদেশ করতেন না। নবিজি বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের
নিয়তে রমজানে তারাবি পড়বে তার অতীতের পাপ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি: ১৯০৫
নবিজি একা পড়তেন তারাবি। জামাতে পড়েন মাত্র
তিন দিন। উম্মতের দরদে। ফরজ
হয়ে যাবে আশংকায়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. বলেন, নবিজি সা. এক রাত মসজিদে তারাবি
পড়লেন। সাহাবিগণ সঙ্গে শামিল হলেন। দিতীয় রাতে মুক্তাদির সংখ্যা বেড়ে
গেল। তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে নবিজি আর তারাবির জন্য মসজিদে এলেন না। সকালে
সবাইকে বললেন, আমি
তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ করেছি। এ নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাবে এ আশংকায় আমি
তোমাদের কাছে আসিনি। মুসলিম, খ.
১ পৃ.
২৫৯
তারাবি ২০ রাকাত। নবিজি এর সুন্নত। হযরত
সাহাবিগণের ঐক্যমত। ইমামগণের
সহিহপথ। উলামায়ে কোরামের এতেকাদ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রা. বলেন, নবিজি সা. রমজানে বিশ রাকাত তারাবি তিন
রাকাত বিতির পড়তেন। বায়হাকি, আস সুনানুল
কুবরা: ৪৭৯৯
নবিজি সা.এর ওফাত পরবর্তী সময়ে খলিফা
হযরত আবু বকর ও হযরত উমর রা. এর
শাসনামলের প্রথম বছর তারাবি নবীযুগের মত করেই জামাত ছাড়া চলে।
হিজরি ১৪ সালে
খলিফা উমর রা. এর শাসনামলের ২য় বছর হযরত উমর রা. সাহাবিদের সাথে পরামর্শক্রমে
বিশ রাকাত তারাবি জামাতে আদায়ের রুপ দেন। যা আজও সুপ্রতিষ্ঠিত। উম্মতের নয়নসিক্ত
দৃশ্য।
প্রখ্যাত তাবেয়ি হযরত আ. রহমান আলকারী র. বলেন, আমি রমজান মাসে হযরত উমরের
সাথে মসজিদে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা
বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারাবি
পড়ছে। হযরত উমর বলেন,
সকলকে এক ইমামের পেছনে জামাতবদ্ধ করে দিলে মনে হচ্ছে উত্তম
হয়।
হযরত উমর রা. কুরআনের ক্বারী হযরত উবাই
ইবনে কাব এর ইমামতিতে সকলকে জামাতবদ্ধ করে দিলেন। মুয়াত্তা মালেক
ইয়াযিদ ইবনে রুমানসহ একাধিক বর্ণনাকারি
হযরত উমরের যুগে বিশ রাকাত তারাবি জামাতবদ্ধভাবে হওয়ার বর্ণনা করেন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর
নবীজির সুন্নতের প্রতি ভালবাসা
OURISLAM24.COM
মোস্তফা ওয়াদুদ : মানুষ আশরাফুল
মাখলুকাত। সব সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ
তায়ালা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন
শ্রেষ্ঠ করে।
মানুষ পৃথিবীর সব মাখলুকাতের
ওপরে ক্ষমতাবান। সৃষ্টিজীবকে
মানুষের খেদমতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য কেয়ামতের দিন
শুধু মানুষ ও জিন
জাতির হিসাব হবে। অন্য কোনো প্রাণীর হিসাব হবে না। মানুষের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে
নেয়া হবে। হাদিসে আছে, ‘কেয়ামতের
দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর
দেয়ার আগে কোনো মানুষ এক কদমও নড়তে পারবে না।’
(বোখারি, মুসলিম)।
আল্লাহর সেরা মাখলুক মানুষ আরও মূল্যবান
ও দামি
হতে পারবে যখন তার জীবনের
প্রতিটি কর্মই
সুন্নত হিসেবে পালনীয় হবে। প্রতিটি মুহূর্তে
সুন্নতের অনুসরণ
করবে। সুন্নত মোতাবেক
জীবন পরিচালনা করবে। আর মূলত সুন্নতের অনুকরণেই
রয়েছে প্রকৃত শান্তি, সফলতা, কামিয়াবি,
নাজাত ও মুক্তি। জগতে
যে যত
বেশি সফলতা লাভ করেছে সে সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের
মাধ্যমেই সফলতা লাভ
করেছে। সফলতা
অর্জনের মাপকাঠি হলো, সুন্নতে নববির মতো ও তাঁর
দেখানো আদর্শ
পথ। রাসুল
(সা.) এর আনুগত্যের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা
এরশাদ করেন, ‘তোমরা
আল্লাহ ও তার রাসুলের
আনুগত্য করো।’ (সূরা
নিসা : ৫৯)। আবার
সূরা আহজাবের
২০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.) এর মাঝেই
রয়েছে উত্তম আদর্শ।’
রয়েছে উত্তম আদর্শ।’
নবীজির প্রতিটি কাজই আমাদের জন্য আদর্শ। নবীজির প্রতিটি কথা
আমাদের পালনীয়। নবীজির প্রতিটি কর্ম
আমাদের অনুসরণীয়। নবীজি
(সা.) যখন রাস্তায় হাঁটতেন, ডানপাশ দিয়ে
হাঁটতেন। অথচ নবীজির সুন্নতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়ে আজকে
বিভিন্ন পার্কের দেয়ালে
লেখা দেখা যায়, ‘রাস্তার
বামে হাঁটুন।’ এটা কখনোই
উচিত নয়। রাসুল
(সা.) খাবার খাওয়ার সময় দস্তরখান বিছিয়ে
খাবার খেতেন। পানি
খেতেন তো দোয়া পড়ে। আর এখন আমরা ডাইনিং
টেবিলে খাবার খাই। টেবিলের ওপর
দস্তরখান থাকে না। ঝুটা রাখার পাত্র
থাকে না। আমরা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো খাবার খাই।
আমাদের চরিত্র নাসারাদের চরিত্রের
সঙ্গে মিলে
গেছে। নাসারারা রাস্তার বাঁয়ে
হাঁটে। খাবার খায় দস্তরখান ছাড়া। আমরাও তাই
করছি। তবে আলহামদুলিল্লাহ! কিছু
কিছু পরিবারে ডাইনিং টেবিলের
ওপরে দস্তরখান
রাখে। এটা ভালো লক্ষণ। আবার অনেকে
আছে নবীজির সুন্নত মেনে রাস্তার
ডানে হাঁটে। ইসলাম ধর্মের নিজস্ব শিয়ার রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি। নাসারাদের নীতির সঙ্গে ইসলামের নীতি মিলতে পারে না। তাই আমাদের রাসুলের সুন্নত মোতাবেক ইসলামের রীতিনীতি ও সুন্দর আদর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। আমরা যদি দুনিয়াতে নাসারাদের অনুসরণ করি তবে কেয়ামতের দিন নাসারাদের সঙ্গেই আমাদের হাশর হবে।
ডানে হাঁটে। ইসলাম ধর্মের নিজস্ব শিয়ার রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি। নাসারাদের নীতির সঙ্গে ইসলামের নীতি মিলতে পারে না। তাই আমাদের রাসুলের সুন্নত মোতাবেক ইসলামের রীতিনীতি ও সুন্দর আদর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। আমরা যদি দুনিয়াতে নাসারাদের অনুসরণ করি তবে কেয়ামতের দিন নাসারাদের সঙ্গেই আমাদের হাশর হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুসরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।’ (তিরমিজি)। নবী করিম (সা.)
বলেছেন, ‘যখন
আমার উম্মত বিশৃঙ্খলায় ডুবে
থাকবে তখন কেউ মৃত সুন্নতকে জিন্দা
করলে সে একশ’ শহীদের
সওয়াব পাবে।’ (মিশকাত)। তাই আসুন আমরা সুন্নতের ওপর জীবন পরিচালনা করি। আমাদের ঘরে আজকাল
বিভিন্ন মূর্তির ছবি দেখা
যায়। ঘরের চারপাশের দেয়ালে
ছবির সমাহার।
যেন কোনো স্টুডিও। এসব ছবির কারণে
ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না।
নবী করিম
(সা.) বলেন, ‘যে
ঘরে মূর্তি বা কুকুরের ছবি
থাকে তাতে রহমতের ফেরেশতা
প্রবেশ করে না।’ (মুসলিম)। নবীজির
সুন্নতের অনুসরণ না করার ব্যাপারে নবীজি সতর্কবাণী
উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখতা
প্রদর্শন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বোখারি,
মুসলিম)
রোজায় নাক, কান ও চোখে ড্রপ ব্যবহার
OURISLAM24.COM
মুহাম্মদ মাহবুবুল হক : রমজানে
রোজা অবস্থায় অনেক সময় ঔষধ খাওয়া বা সেবন করার প্রয়োজন দেখা দেয় । নাক, কান,
চোখে ড্রপ ব্যবহার করতে হয় । রোজাদার ব্যক্তির মুখ, কান,
নাক, গুহ্যদ্বার, যোনিদ্বার ও পেঠের ক্ষতস্থানে ঔষধ
ব্যবহার করলে যদি তা পাকস্থলি
অথবা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, তাহলে
রোজা নষ্ট হয়ে যায়। কান ও নাকে
ড্রপ ব্যবহার করলে যেহেতু ড্রপের ফোটা মস্তিষ্ক পর্যন্ত চলে
যায়, তাই
রোজা নষ্ট
হয়ে যায়।
অবশ্যই অসাবধানতায় কানে পানি ঢুকে গেলে
রোজার কোন ক্ষতি হয় না । তবে
স্বেচ্ছায় কানে পানি ঢুকালে রোজা নষ্ট হওয়া না হওয়া নিয়ে
ফকিহদের মতানৈক্য রয়েছে।
প্রণিধানযোগ্য কথা হলো, রোজা
নষ্ট হবে না।
সর্তকতার দাবি হলো, রোজা বহাল থাকবে না । চোখে ড্রপ বা
সুরমা ব্যবহার করলে
রোজা ভঙ্গ হয় না । কেননা চোখের সাথে পাকস্থলি ও মস্তিষ্কের কোন সংযোগ নেই।
চোখে মলম বা ড্রপ ব্যবহারের ফলে যদি কন্ঠনালিতে ও থুথুতে স্বাদ অনুভূত হয়,তবুও রোজার কোন সমস্যা হবে না ।
ঊল্লেখ্য যে, বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত আলেম মুফতী
দিলাওয়ার হুসাইন ‘ইসলাম ও
আধুনিক চিকিৎসা ’নামক
গ্রন্থে লেখেছেন-মস্তিস্ক ও কানে ঔষধ ব্যবহার করলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। কারণ গবষেণায়
দেখা গেছে মস্তিষ্ক ও কান থেকে গলা
পর্যন্ত সরাসরি কোন ছিদ্র পথ নেই। পূর্বযুগের ফেকাহর কিতাবাদিতে
মস্তিষ্ক ও কান
থেকে গলা পর্যন্ত ছিদ্র পথ আছে ধারণা করে রোজা ভঙ্গের হুকুম দেয়া হয়েছিল।
সূত্র : বাদায়েউস সানায়ে৯৩/২,মারাকিল ফালাহ:১৩৩,ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ ১৭/২আহছানুল
ফাতাওয়া৪২১/৪
ঈমানের এ কি আজব সম্পর্ক!
OURISLAM24.COM
মাওলানা শাহ আব্দুল মতীন : ঈমান
যার নসিব হয় তার কপাল এত বড় হয় যে,
আল্লাহপাক নিত্য তাকে দিতেই থাকেন। নে, আরো নে…….। দিতেই
থাকেন……, দিতেই
থাকেন……। ঘুম
থেকে জাগলে বলেন, এই
নে, দিলাম
তোরে এই বিশাল রাজত্ব। ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়লো তো এক বিশাল রাজত্ব নসীব হয়ে গেল। আবার ফরয
দুই রাকাআত পড়লো তো আগের চেয়ে কয়েক
হাজার কোটি গুণ শ্রেষ্ঠ রাজত্ব নসীব হয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, ফজরের দুই রাকআত সুন্নত যে পড়ে আসমান-যমীন থেকে বড় দৌলত ঐ মুহূর্তেই নসীব হয়ে য়ায়। সাত আসমান-যমীন থেকে, পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যত হীরা-কাঞ্চন-মতি -সোনা-দানা, বাদশাহী এবং সিংহাসন, রাজ মুকুট সব কিছুর চেয়ে অনেক বেশি দামি ফজরের দুই রাকআত সুন্নত। এজন্য মুসলমান কোন কাঙ্গাল জাতির নাম নয়। মুসলমান এমন এক জাতি যে ঈমান তাকে একদমই বাদশাহ বানিয়ে দেয়। ঈমান তাকে এক মুহূর্তে মস্তবড় সিংহাসনের অধিপতি বানায়ে দেয়। কিন্তু সে এমন সিংহাসনের অধিপতি হয়ে সমগ্র বিশ্বের যিনি অধিপতি সে মহান আল্লাহর সঙ্গে, মহান আল্লাহর সামনে সর্বদা তার মাথা নত এবং সে কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহ সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লালন করে।
কী আজব এ ঈমানী সম্পর্ক! আল্লাহ তিনি মহান আল্লাহ, তিনি মালেক, তিনি খালেক, তিনি বাদশাহ, তিনি রাজাধিরাজ, তিনি মহান স্রষ্টা, মহান লালনকর্তা-পালনকর্তা। কিন্তু তিনি বান্দাকে বলেন, তুমি ঈমানওয়ালা, আমাকে ভালোবাস? আমার রাস্তায় চলবে তুমি? বলে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, আচ্ছা, তুমি আমার বন্ধু? আশ্চর্য! এমন আখলাক রব্বুল আলামীনের! আল্লাহপাক কোরআন শরীফে এসব বিষয়ে বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, ফজরের দুই রাকআত সুন্নত যে পড়ে আসমান-যমীন থেকে বড় দৌলত ঐ মুহূর্তেই নসীব হয়ে য়ায়। সাত আসমান-যমীন থেকে, পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যত হীরা-কাঞ্চন-মতি -সোনা-দানা, বাদশাহী এবং সিংহাসন, রাজ মুকুট সব কিছুর চেয়ে অনেক বেশি দামি ফজরের দুই রাকআত সুন্নত। এজন্য মুসলমান কোন কাঙ্গাল জাতির নাম নয়। মুসলমান এমন এক জাতি যে ঈমান তাকে একদমই বাদশাহ বানিয়ে দেয়। ঈমান তাকে এক মুহূর্তে মস্তবড় সিংহাসনের অধিপতি বানায়ে দেয়। কিন্তু সে এমন সিংহাসনের অধিপতি হয়ে সমগ্র বিশ্বের যিনি অধিপতি সে মহান আল্লাহর সঙ্গে, মহান আল্লাহর সামনে সর্বদা তার মাথা নত এবং সে কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহ সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লালন করে।
কী আজব এ ঈমানী সম্পর্ক! আল্লাহ তিনি মহান আল্লাহ, তিনি মালেক, তিনি খালেক, তিনি বাদশাহ, তিনি রাজাধিরাজ, তিনি মহান স্রষ্টা, মহান লালনকর্তা-পালনকর্তা। কিন্তু তিনি বান্দাকে বলেন, তুমি ঈমানওয়ালা, আমাকে ভালোবাস? আমার রাস্তায় চলবে তুমি? বলে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, আচ্ছা, তুমি আমার বন্ধু? আশ্চর্য! এমন আখলাক রব্বুল আলামীনের! আল্লাহপাক কোরআন শরীফে এসব বিষয়ে বলেছেন।
কোরআন না বুঝলে কি করার আছে! কোরআন যারা
বুঝেন তাদের কাছে গেলে তো
আমাদের জীবন ধন্য হল। মহান রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেন, اَللهُ وَلِىُّ الَّذيْنَ أمَنُوْا যারা ঈমানওয়ালা
আমি আল্লাহ তাদের সকলের বন্ধু
লাগি। আমি তাদের অভিভাবক লাগি। আমিই বন্ধু, আমিই অভিভাবক। আমিই দেখ-ভালকারী।
ওলী শব্দটা এমন যে, এর
মধ্যে সবগুলো অর্থ আছে। ওলী মানে যে
নিকটবর্তী, যে
ঘনিষ্ঠ, যে
অভিভাবক, যে
বন্ধু। আল্লাহপাক মুমিনদের জন্য এমন
একটা শব্দ বলেছেন যে,
আমি তোমাদের ওলী,
আমি তোমাদের অভিভাবক। আমি তোমাদের বন্ধু। আমি তোমাদের দেখভালকারী। এ হলেন
মহান রব্বুল আলামীন!
অনেক বাবা এমন সুন্দর চরিত্রের হন, মাথায় এমন সতেজ এবং প্রখর বুদ্ধি থাকে, এমন বিন্যস্ত বুদ্ধি থাকে যে সন্তানের
সে বাবাও, সন্তানের
সে বন্ধুও। সন্তানকে
তিনি পিতার আসনে থেকে পরিচালনা করতে জানেন। অভিভাকত্ব করতে জানেন,
তার তত্বাবধান করতে জানেন। আবার সন্তানের মনে বন্ধুর ক্ষুধা নিবারণেরও
তিনি যোগ্যতা রাখেন। কেউ এমন বাবা হলে তিনি কতইনা ভাল বাবা। কিন্ত আমরা তো অনেকেই পুলিশের মত বাবা।
সম্ভবত অনেকেই মনে করে যে, বাবা মানেই
মিষ্টার পুলিশ, বা
ওসি সাহেব, অথবা
দারোগা সাহেব। আরে লা হাওলা ওয়ালা
কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! বাবা তো সন্তানকে আদর দিয়ে, ভালোবাসা দিযে, মহব্বত দিয়ে পালবে, স্নেহ দিযে পালবে। শাসনের ক্ষেত্রে
শাসনের দরকার হলে সীমিত মাত্রায়
করা। কিন্ত বাবার ২৪ ঘন্টা এই চরিত্র থাকা চাই না যে, সর্বদা ডান্ডা………
প্রবাসীরা কি দেশে যাকাতের অর্থ পাঠাতে পারবেন?
OURISLAM24.COM
আবু সাঈদ যোবায়ের : জীবিকার তাগিদ, পড়াশোনাসহ নানা কারণে আমাদের দেশের একটি
বড় জনগোষ্ঠি দেশের বাইরে অবস্থান
করে। তাদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থের রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় আয়ে বরাবরই
বিরাট অবদান রাখছে। রমজান মাসে এই প্রবাসীদের অনেকেই দেশে যাকাতের অর্থ
পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের অনেক ধনাঢ্য মুসলিম ব্যক্তিরাও
তাদের যাকাতের অর্থ বিভিন্ন দরিদ্র মুসলিম দেশে পাঠিয়ে দেন।
এখন প্রশ্ন হল, কোন দেশের যাকাত ভিন্ন দেশে
বা কোন শহরের যাকাত ভিন্ন শহরে পাঠানো যাবে কি?
এক্ষেত্রে ইসলামের
সমাধান হল, বিনা
প্রয়োজনে কোন এলাকার (দেশ, শহর, নগর) যাকাত অন্য এলাকায় প্রেরণ
করা মাকরুহ। প্রতিটি এলাকার যাকাত সংশ্লিষ্ট এলাকায় বণ্টন করাই উত্তম।
তবে বিশেষ কিছু কারণে অন্য এলাকায় যাকাতের অর্থ প্র্রেরণ করা যেতে পারে।
যেমন-
১. যাকাতদাতার আত্মীয় স্বজন ভিন্ন এলাকায়
বসবাস করে। এবং তারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। তখন সে এলাকায় যাকাত প্রেরণ
করা উত্তম। কেননা, এতে
দুটি সওয়াব পাওয়া যাবে। একটি হল দানের
সাওয়াব। অপরটি হল,
আত্মীয়দের সাথে সদাচরণের সাওয়াব। সূত্র : ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০)
২. যদি যাকাত দাতার শহরের তুলনায় অন্য শহরের
লোকজন বেশি অভাবগ্রস্থ হয়, তাহলে
তাদের কাছে যাকাত
পাঠানো যাবে। কেননা, যাকাত আদায় করার উদ্দেশ্য হল, অভাবগ্রস্থদের প্রয়োজন পূর্ণ করা। হযরত
মুআয রা. যাকাত উসূল করে অধিকাংশ সময় তা মদীনার দরিদ্র মুহাজিরদের জন্য
পাঠিয়ে দিতেন।সূত্র : ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০
৩. যদি যাকাত দাতা এক শহরে থাকেন, আর তার সম্পদ বা ব্যবসা ভিন্ন শহরে থাকে
তাহলে যে শহরে সম্পদ বা ব্যবসা সে
শহরের দরিদ্ররা যাকাত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
সূত্র : রাদ্দুল মুহতার, ২/৩৩৫
সাদাকাতুল ফিতরের নিয়ামাবলি
OURISLAM24.COM
মুফতি হাশমতুল্লাহ : সাদাকাতুল
ফিতর ইসলামি শরিয়তে ওয়াজিব একটি ইবাদত। সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈদের খুশিতে গরিব
শ্রেণির লোককেও শামিল করে নেয়া। কেননা
ঈদের নামাজের আগেই যখন একজন অভাব-অনাহারি লোক কিছু পায়, তখন তা আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিক বিবেচনা করলে
সাদাকাতুল ফিতর হচ্ছে রোজার জাকাত।
জাকাত যেমন সম্পদকে পবিত্র করে,
তেমনই ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে।
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ করে সাদাকাতুল
ফিতর। মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর
সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ঈদের দিন সুবহে
সাদিক থেকে ফিতরা ওয়াজিব হয়। কাজেই সুবহে সাদিকের আগে কেউ মারা
গেলে তার ফিতরা
দেয়া ওয়াজিব নয়। গৃহকর্তার কোনো সন্তান যদি সুবহে সাদিকের আগে জন্মগ্রহণ
করে, তবে
তার ফিতরা দিতে হবে। এরপর জন্মালে ফিতরা দিতে হবে না। এ হুকুম সুবহে সাদিকের পর কেউ মুসলমান হলে
তার ওপরও। গম, গমের
আটা, জব, জবের আটা এবং খেজুর ও কিশমিশ দ্বারা ফিতরা
আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দ্বারা
ফিতরা আদায় করলে গম অর্ধ সা’
(১ কেজি ৬৬০ গ্রাম) এবং জব বা জবের আটা কিংবা খেজুর
দ্বারা আদায় করলে এক সা’ (৩
কেজি ৩২০ গ্রাম) দিতে হবে। রুটি, চাল
বা অন্য
খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হলে মূল্য হিসেবে দিতে হবে। কিশমিশ দিয়ে ফিতরা
আদায় করলেও এক সা’ দিতে
হবে।
দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য দ্বারা
ফিতরা আদায় করা উত্তম। অন্যান্য সময়
মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম। ঈদুল ফিতরের আগে ফিতরা আদায়
করা জায়েজ। ঈদুল
ফিতরের দিন আদায় না করলেও পরে তা আদায় করতে হবে। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। নিজের এবং নিজের
নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। স্ত্রী এবং
বালেগ সন্তানেরা ফিতরা নিজেরাই আদায় করবে। স্বামী বা পিতার ওপর স্ত্রী-সন্তানদের
ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে দিয়ে দিলে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু পরিবারভুক্ত নয়, এমন লোকের পক্ষ থেকে তার অনুমতি ছাড়া
ফিতরা দিলে আদায়
হবে না।
কোনো ব্যক্তির ওপর তার পিতামাতার, ছোট ভাই বোন ও নিকটাত্মীয়ের পক্ষ থেকে ফিতরা
আদায় করা ওয়াজিব নয়। এক ব্যক্তির ফিতরা এক মিসকিনকে দেয়া উত্তম। তবে একাধিক
ব্যক্তিকেও দেয়া জায়েজ। [ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ১৯২,
কানযুদ্দাকায়িক : পৃষ্ঠা- ২৪]
শিক্ষক. মা’হাদুত তরবিয়াতুল ইসলামিয়া, ঢাকা।
আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস
OURISLAM24.COM
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : আজ
১৭ রমজান, ঐতিহাসিক
বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের ১৭ রমজান ৩১৩ জন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সা.) মদিনা
শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল
দূরে বদর নামক স্থানে কাফেরদের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
অবতীর্ণ হন। ইতিহাসে
এ যুদ্ধকে বদর যুদ্ধ বলে অবহিত করা হয়।
ঐতিহাসিক এ যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। যুদ্ধে
অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি দোয়া করেন- ‘হে আল্লাহ! ক্ষুদ্র এ (মুসলিম) দলটি যদি
আজ শেষ হয়ে যায়, তবে
কিয়ামত পর্যন্ত তোমার নাম নেওয়ার মতো কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
রাসুল (সা.)-এর এই দোয়া থেকেই স্পষ্ট হয়, বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট কী ভয়াবহ ছিল! মহান আল্লাহ দয়া করে সেদিন ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুমিনদের সাহায্য করেছিলেন। যদিও এটি ক্ষুদ্র একটি যুদ্ধ ছিল, কিন্তু এর প্রভাবে বিশ্বের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বাতাসের গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। যারা একদিন আগেও ইসলামের যাত্রাপথ রোধ করাকে সহজ মনে করেছিল, তারা বুঝতে পেরেছে যে ইসলামের এ অগ্রযাত্রাকে রোধ করা কেবল কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে।
রাসুল (সা.)-এর এই দোয়া থেকেই স্পষ্ট হয়, বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট কী ভয়াবহ ছিল! মহান আল্লাহ দয়া করে সেদিন ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুমিনদের সাহায্য করেছিলেন। যদিও এটি ক্ষুদ্র একটি যুদ্ধ ছিল, কিন্তু এর প্রভাবে বিশ্বের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বাতাসের গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। যারা একদিন আগেও ইসলামের যাত্রাপথ রোধ করাকে সহজ মনে করেছিল, তারা বুঝতে পেরেছে যে ইসলামের এ অগ্রযাত্রাকে রোধ করা কেবল কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে।
মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জনবল ছিল মাত্র
৩১৩ জন। এর মধ্যে ৭০ জন মুহাজির ও
বাকিরা আনসার। অন্যদিকে কাফের কুরাইশ বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক
হাজার। তন্মধ্যে
১০০ জন অশ্বারোহী, ৭০০
জন উষ্ট্রারোহী ও বাকিরা পদব্রজী ছিল।
সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমান বিশাল
অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার
অনুসারী কাফের মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করায় সত্য-মিথ্যার চিরপার্থক্য সূচিত হয়ে
যায়। তাই এ দিবসকে সত্য-মিথ্যার
পার্থক্যের দিন বলা হয়।
No comments:
Post a Comment