Thursday, February 27, 2020

অবিশ্বাসের ভাইরাস (২য় অংশ)








মুক্তমনা(?)র ভবঘুরের ভণ্ডামির নমুনা



সূচনা
মুক্তমনাদের দেহে নৈমিত্তিক বার্ষিক মৌসুমী ভাইরাসের প্রকোপ আস্তে আস্তে দেখা দিচ্ছে। কোরবানীর ঈদ আসছে বলে পশুবলীরনৃসংশতার প্রতিবাদের বয়ানক্ষেত্র তৈরীর কাজ চলছে; এ লক্ষ্যে তাদের অন্যতম ভণ্ড, মিথ্যাবাদী লেখক জনাব ভবঘুরে চোথাবাজী আর প্রতারণায় পূর্ণ এক লেখা প্রসব করেছেন। বিদ্বেষমনা এই লেখক সেই পুরোনো কাসুন্দিই আবার তুলে এনেছেন; আর মুক্ত(?)মনা প্রোডাকশন থেকে নতুন বোতলে সেই পুরোনো মদ আবার বিক্রীর পসরা বসিয়েছেন। বিষয়টা আর কিছু না, উনি উনার লেখাতে দেখাতে চেয়েছেন কোরবানী দেয়া হয়েছিল ইসহাক (আঃ) কে, ইসমাইল (আঃ) কে নয়। ইহুদি আর খৃষ্টানদের গতবাঁধা বয়ানকে উনি উনার লেখার মূল ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে; প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভণ্ডামিপূর্ণ যুক্তি দিয়ে আরো প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন আসলে মা হাজেরা ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ স্ত্রী ছিলেন না, আর ছিলেন না ইসমাইল (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ সন্তান। সাথে সাথে এই সর্ববিজ্ঞ বিদ্যাসাগর আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন যে উপরের প্রস্তাবনাগুলো আসলে কোরান হাদীস অনুসারেই সত্য। তো চলুন দেখা যাক অতি সংক্ষেপে ব্রহ্মাচারী ভ্যাগাবন্ড জনাব ভবঘুরের দাবীগুলো কী?
লেখার শুরুতে ভ্যাগাবন্ড সাহেব ইসলামের বর্ণনা অনুসারে ইব্রাহীম (আঃ) কতৃক ইসমাইল (আঃ) এর কোরবানীর ঘটনার বিবৃতি দিয়েছেন। এরপরে তিনি বলছেন, এই ঘটনাতে বাধ সাধলো ইহুদি ও খৃষ্টানরা, কেননা তারা মনে করেন আসলে ইসমাইল (আঃ)কে নয় বরং ইসহাক (আঃ)কে কোরবানী দেয়া হয়েছিল। এরপরে উনি ইহুদিদের দাবি অনুসারে বলেছেন যে হাজেরা  ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ স্ত্রী ছিলেন না, আর সেই হিসেবে ইসহাক (আঃ) ইব্রাহীম (আঃ) এর বৈধ সন্তান ছিলেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপরে যথারীতি মনের মাধুরি মিশিয়ে মদিনার ইহুদিদের নির্দোষ সাধু-সন্ত বানিয়ে দিয়ে মদিনা থেকে বড় তিনটি ইহুদি গোত্রের মদিনা থেকে নির্বাসন কিংবা যুদ্ধপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার যাবতীয় দোষ মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর চাপিয়েছেন। তারপরে উনি এসেছেন আপাতঃ নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটা যাচাই করতে যে মুসলিমদের দাবী সঠিক না ইহুদিদের দাবী? নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ সাজলেও লেখা পড়ার সময় আমি মনে মনে হেসেছি, কেননা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের উপসংহার কী হবে তা পড়ার আগেই সবাই শতভাগ নিশ্চয়তার সাথেই বলতে পারবে। যাইহোক, এরপরে উনি ইবন আব্বাসের হাদীস দিয়ে তারপরে ব্যাখ্যায় বলছেন,
১। হাজেরা ছিল ইব্রাহীমের দাসী। বিবাহিতা স্ত্রী নয়। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে সেরকমই বলা আছে। বাইবেলে আরও বর্ননা করা আছে-ইব্রাহীম ও সারাহ যখন অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে গেছিল কিন্তু সন্তান জন্ম নিচ্ছিল না , তখন সারাহই ইব্রাহীমকে তার দাসী হাজেরার সাথে সহবাস করতে বলে ও সন্তান উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করে। সেখানেও বিয়ের কথা নেই।
২। কিন্তু যখন হাজেরা ইসমাইলকে প্রসব করে তখন সারাহও আল্লাহর কাছ থেকে অবগত হয় যে সে নিজেও মা হতে চলেছে বা হবে।
ব্রহ্মাচারীর পরবর্তী দাবীগুলো আলোচনার আগে দেখে নিই উপরের করা পয়েন্ট দুটোর সঠিকতা কতুটুকু। সহজ সরল ভাষায় উত্তর হচ্ছে উপরের ২-টা দাবীই মিথ্যা ও মহামিথ্যাবাইবেল অনুসারে আর কোরান/হাদীস অনুসারেও। আর তাই সত্যি কেবল একটাই, তা হচ্ছে মুক্তমনারা হচ্ছে মহা মিথ্যাবাদী ও মহাভণ্ড।
সংক্ষেপে উপরের দাবী দুটির অসারতা দেখুন,
১। বাইবেল অনুসারে সারাহ স্ব-উদ্যোগে ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে হাজেরার বিয়ে দেন
Now Sarai, Abram’s wife, had borne him no children. But she had an Egyptian slave named Hagar; 2 so she said to Abram, “The LORD has kept me from having children. Go, sleep with my slave; perhaps I can build a family through her.”
Abram agreed to what Sarai said. 3 So after Abram had been living in Canaan ten years, Sarai his wife took her Egyptian slave Hagar and gave her to her husband to be his wife.
২। বাইবেল অনুসারে ইসমাইল (আঃ) এর জন্ম হয় ইব্রাহীম (আঃ) এর বয়স যখন ছিয়াশি বছর,
So Hagar bore Abram a son, and Abram gave the name Ishmael to the son she had borne. 16 Abram was eighty-six years old when Hagar bore him Ishmael.
আর ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুখবর দেয়া হয় তখন ইব্রাহীম (আঃ) এর বয়স ৯৯ (দেখুন, জেনেসিস ১৭-১৮)অর্থাৎ ইসহাক (আঃ), ইসমাইল (আঃ) এর চেয়ে ১৪ বছর ছোট ছিলেন। তাই ব্রহ্মাচারীর দ্বিতীয় দাবী যখন হাজেরা ইসমাইলকে প্রসব করে তখন সারাহও আল্লাহর কাছ থেকে অবগত হয় যে সে নিজেও মা হতে চলেছে বা হবে হচ্ছে চিরায়ত মুক্তমনা স্টাইলের আরেকটা ডাহা মিথ্যা কথা। সবকিছুই সাজানো হয়েছে ইসলাম ও মুসলিমদের নীচু করতে আর সেজন্যে প্রয়োজন বোধে তথাকথিত মুক্তমনা নাস্তিকগণ সময়মতো খাস ইহুদি সেজে যান; বাইবেলের নির্ভুলতার অকাট্য সাক্ষী দিতে থাকেন হলফ সহকারে, আর মুহাম্মাদ (সাঃ)কে চোথাবাজ ভণ্ড নবী ঘোষণা দিয়ে ইসলামকে ভণ্ড নবীর ধর্ম বলে ডিক্রী জারি করেন। আসলে বাইবেলের বর্ণনাতে আসা কোরবানীর কথা ও প্রাসঙ্গিক অসামঞ্জস্যতা নিয়ে বছরখানেক আগে একটা লেখা দিয়েছিলাম। সেটারই বেশীরভাগ অংশ আবার এখানে দিলাম। মুক্তমনার মিথ্যার প্রোপাগান্ডা মেশিন তো কখনো বন্ধ হয়না, তাই কী আর করা, পুরোনো লেখার অনেকাংশ এখানে আবারো দিতে হলো।
পূর্বকথাঃ
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, বাইবেল আসমানী কিতাবের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ, গ্রন্থটির মূল/আদি-রূপটি আল্লাহ প্রদত্ত। তবে বাইবেলের অনেক বাণী/ভার্স কালেক্রমে সুবিধাবাদী লোকজন বদলে দিয়েছেন বলে কোরান/হাদীসে উল্লেখ আছে। আর এই কারণেই আল্লাহ সুবহানা-তায়ালা কোরানকে প্রামাণ্য/কর্তৃত্ব-বাহী গ্রন্থ ঘোষণা করে আগের কিতাবগুলোর কর্তৃত্ব লুপ্ত করেছেন। এই লেখাতে আমি দেখাতে চাই যে, বাইবেল অনুসারে যেভাবে হযরত ইসহাক (আঃ)-কে কুরবানী দেয়ার কথা বলা হয়, সেটি সহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক ঘটনাবলী স্ববিরোধী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইব্রাহীম (আঃ) সুমেরীয় উর অঞ্চলে জন্মগ্রহন করেন(বর্তমানে ইরাক)। সেখান থেকে আল্লাহর নির্দেশে কানান দেশের উদ্দেশ্য স্ত্রী সারা, ভ্রাতষ্পুত্র লুত (আঃ) ও আরো অল্প কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন সহ বের হন। পথিমধ্যে হারান দেশে কিছুকাল থাকার পরে উনি কানান-দেশে(বর্তমানের বৃহত্তর ইস্রাইল-প্যালেস্টাইন) আসেন। কানানে থাকার সময় উনি বারকয়েক মিসরে যান। একবার মিসরের সম্রাট হাজেরাকে (ইংরেজীতে Hagar) সারার সেবাদাসী হিসেবে উপহার দেন। অনেক বাইবেল-তাফসিরে হাজেরাকে সম্রাট আবিমেলকের মেয়ে হিসেবে বলা হয়। যাইহোক, যখন সারার গর্ভে সন্তান আসছিলোনা, তখন সারাই স্ব-উদ্যোগে, ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে হাজেরার বিয়ে দেন ও ইব্রাহীম (আঃ) এর ৮৬ বছর বয়সে ইসমাইল (আঃ) এর জন্ম হয়। আর ১০০ বছর বয়সে সারার গর্ভে ইসহাক (আঃ) এর জন্ম হয়। এইটুকু বিবরণে বাইবেল ও মূল ইসলামী স্রোতের ব্যাখ্যাকারীদের মধ্যে বিবাদ নেই। বিবি হাজেরা ও ইসমাইল(আঃ) কে যে ইব্রাহীম (আঃ) জেরুসালেম থেকে মক্কাতে রেখে আসেন তা নিয়েও তেমন মতভেদ নেই; যদিও বাইবেলে প্রথমে বীরশেবা ও পরে পারানদেশে ইসমাইল(আঃ) বড় হন বলে বলা আছে। তথাপি, ইসমাইল (আঃ) যে আরব জাতির অন্যতম আদিপিতা সে নিয়ে কোনো বিবাদ নেই। তাই অনেক মুসলিম বিদ্বানপারানদেশকেই মক্কা বলে বলেছেন।
সমস্যার শুরু
কিন্তু মূল সমস্যা শুরু হয় কোরবানীদেয়ার উদ্দেশ্য ইব্রাহীম (আঃ) কাকে সাথে নিয়েছিলেন এই বিতর্ক থেকে। বাইবেলে বিষয়টা জেনেসিস ২২.২ তে আছে
Then God said, “Take your son, your only son, Isaac, whom you love, and go to the region of Moriah….” (Gen 22.2)
এই ভার্সেই ২ টা অসঙ্গতি দেখা যায়। প্রথমত, “Your only Son” বা একমাত্র পুত্র বলা হচ্ছে কেন? একমাত্র পুত্র বললে তো ইসমাইল (আঃ) এর কথাই বলা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়; কেননা, ইসহাক (আঃ) যেহেতু ছোট ভাই, তাই সে একমাত্র পুত্রহতে পারে না। আর দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে “region or Moriah” নিয়ে। Moriah কোথায় অবস্থিত তা নিয়ে বাইবেল বিশারদদের মধ্যে অনেক বিবাদ আছে (দেখুন)বাইবেলে বর্ণিত অন্যান্য স্থান নিয়ে কিন্তু তেমন বিবাদ নেই। অনেক জায়গার নাম এখনো হুবহু বাইবেলের মতোই আছে; যেমন, হেব্রণ, জেরুসালেম, নাযারেথ, গ্যালিলির সাগর, জর্ডান নদী, বেথেলেহেম, বীরশেবা, নেগেভইত্যাদি। তো আমার প্রশ্ন, বাইবেলের বর্ণিত সব স্থানের নাম নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও মোরিয়া-অঞ্চল কোথায়, তা নিয়ে এত বিবাদ কেনো? উত্তর মনে হয় সোজা। বাইবেলে কোনো সময় জেনেসিসের ভার্সটাতে ইসমাইল(আঃ) এর নাম বদলে জোর-পুর্বক ইসহাক(আঃ) এর নাম বসানো হয়েছে। উপরের ভার্সে ইসহাকের(আঃ) বদলে ইসমাইল(আঃ) ও মোরিয়ার বদলে মারওয়া’ [মক্কার সাফা-মারওয়া পাহাড় দুটির একটি] পড়লে ইসলামী বিবরনের সাথে বেশ মিলে যায়। তবে পরিপূর্ণতার স্বার্থে বলে রাখা ভালো, যে, অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ কোরবানীর স্থান মারওয়া পাহাড় বললেও, অনেকে দ্বিমত করেছেন। দ্বিমতকারীদের মতে কোরবানীর স্থান মীনা কিংবা আরাফাত পাহাড়
ইহুদি/খৃষ্টানদেরএকমাত্র পুত্রের ব্যাখ্যা
ইহুদী/খৃষ্টান-রা জেনেসিস ২২.২ তে ইসহাক(আঃ) কে একমাত্র পুত্রকথাটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, যেহেতু ইসমাইল (আঃ) এর জন্ম দাসীর ঘরে সুতরাং ঐশ্বরিক আশীর্বাদ কেবলমাত্র ন্যায়সঙ্গত সন্তান, অর্থাৎ ইসহাক (আঃ) পাবেন। এভাবে অদ্বিতীয়-পুত্র/একমাত্র-পুত্র/only son বলতে নাকি প্রতিজ্ঞার সন্তানইসহাক (আঃ) কেই বোঝায়। নীচের জেনেসিস ২১.৮-১২ উপরের কথার ব্যাখ্যা হিসেবে তারা দিয়ে থাকেন।
8 The child grew and was weaned, and on the day Isaac was weaned Abraham held a great feast. 9 But Sarah saw that the son whom Hagar the Egyptian had borne to Abraham was mocking, 10 and she said to Abraham, “Get rid of that slave woman and her son, for that slave woman’s son will never share in the inheritance with my son Isaac.”
11 The matter distressed Abraham greatly because it concerned his son. 12 But God said to him, “Do not be so distressed about the boy and your maidservant. Listen to whatever Sarah tells you, because it is through Isaac that your offspring [b] will be reckoned.
অনুবাদে দেখা যাচ্ছে, যখন ইসহাক (আঃ) দুধ ছাড়লেন (ইসলামে দুধ ছাড়ার সময় ২-বছর হলেও তখনকার সময়ের শরিয়ত অনুসারে দুধ ছাড়ার সময় ছিলো ৩-বছর), তখন ইব্রাহীম (আঃ) এক ভোজসভা আয়োজন করলেন। সারাহ সেই অনুষ্ঠানে ইসমাইল (আঃ) কে ভেংচি কাটতে দেখে (খুব সম্ভবত ইসহাক(আঃ) এর উদ্দেশ্যে) রাগান্বিত হন ও ইব্রাহীম (আঃ) কে বলেন, এই দাসী ও তার ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দাও; আর ইসমাইল(আঃ) কখনো ইসহাক (আঃ) এর উত্তরাধিকারের ভাগীদার হবেনা। যদিও সারার সিদ্ধান্তটা ইব্রাহীম (আঃ) কে ব্যাথিত করে, কেননা ইসমাইল (আঃ) ও তাঁর ছেলে; তথাপি আল্লাহ বলেন, “ব্যাথিত হবেনা ইব্রাহীম; সারা যা বলে শোনো, কেননা ইসহাকের বংশ দিয়েই তোমার পরিচিতি পাবে।
উপরের ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা
প্রথম অসামঞ্জস্যতা –“অন্য দাসীর পুত্ররাপ্রতিজ্ঞার সন্তান’–ই থাকলেন
বনী-ইস্রাইল বলতে হযরত ইয়াকুব(আঃ) (ইয়াকুব(আঃ) এর অপর নাম ইস্রাইলতাই তাঁর বংশধর দের বনী-ইস্রাইল বলা হয়) এর ১২ পুত্র ও তাঁদের বংশধরদের বোঝায়। ইহুদীরাও শাস্ত্রগত সংজ্ঞা অনুসারে, এই ১২ গোত্রের একজন না হলে তাকেজাত/জন্মগতইহুদী বলেনা। তাদের বিধাণ অনুসারে, এই ১২ গোত্রের সবাই সমান। বাইবেল অনুযায়ী বনী-ইস্রাইলের ১২ টি গোত্রের ৪ টির সুত্রপাত দাসীর ঘরে। এরা হলেন, ডান(Dan), নাফতালি(Naphtali), গাদ(Gad), আশের(Asher)ডান ও নাফতালি দাসী ও স্ত্রী বিলহাহ এর সন্তান; আর, গাদ ও আশের অপর দাসী ও স্ত্রী জিলফার সন্তান (বিস্তারিত জেনেসিস ২৯-৩০) পরিষ্কার অসামঞ্জস্যতা এখানে দৃশ্যমান। যে অজুহাতে দাসীর ছেলে বলে, ইসমাইল (আঃ) এর সন্তানের অধিকার কেড়ে নেয়া হলো; সেই একই অভিযোগ কিন্ত বনী ইস্রায়েলের ১২ গোত্রের ৪-টির উপর চাপাতে বাইবেল-বিশারদ/ইহুদী/খৃষ্টাণেরা নারাজ।
দ্বিতীয় অসামঞ্জস্যতা –“আল্লাহ আবার ইসমাইলকে(আঃ) ইব্রাহীমের(আঃ) সন্তান বললেন
যুক্তর খাতিরে নাহয় ধরে নিলাম যে, বাইবেল বিশারদরা “The only son” এর ব্যাখ্যা যেভাবে দেন, তাই ঠিক; অর্থাৎ, জেনেসিস ২১.১১ এর পরে ইসহাক(আঃ) কে ‘only son’ বলে আল্লাহ ঘোষণা দেন ও ইসমাইল(আঃ) আর বৈধ সন্তান নন। অতএব আশা করা যায়, যে জেনেসিস ২১.১১ এর পর থেকে ইসমাইল (আঃ) কে আর son বা পুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হবেনা। কিন্ত বাস্তবতা এই যে, এর পরেও son হিসেবেই ইসমাইল (আঃ) কে আবারো আখ্যায়িত করা হয়েছে। জেনেসিস ২৫.৮-৯ এ ইব্রাহীম(আঃ) এর মৃত্যু ও সমাহিত করার কথা বলা আছে;
8 Then Abraham breathed his last and died at a good old age, an old man and full of years; and he was gathered to his people. 9 His sons Isaac and Ishmael buried him in the cave of Machpelah near Mamre,
অর্থাৎ, যখন ইব্রাহীম (আঃ) মারা যান তখন তাঁর সন্তানেরা (sons) তাঁকে মাখফেলাহে সমাহিত করেন। এখানে পরিষ্কারভাবে sons বলা হয়েছে। সুতরাং, এই ভার্সের আলোকে, ইসমাইল(আঃ) ও ইসহাক(আঃ) দুজনেই ইব্রাহীম(আঃ) এর সন্তান/sons
আরেকটি আনুষঙ্গিক অসামঞ্জস্যতা
উপরের আলোচিত জেনেসিস ২১.৮-১২ ভার্স, যেখানে ইসমাইল (আঃ) এর সন্তানের অধিকারশাস্ত্রীয়ভাবে কেড়ে নেয়া হয় বলে বলা হচ্ছে, তার অব্যবহিত পরের ভার্সগুলোর দিকে এখন আমরা মনোযোগ দেব(জেনেসিস ২২.৮-১৯)পাঠকরা একটু মনোযোগ দিয়ে নিচের অংশটুকু পড়ুন।
8 The child grew and was weaned, and on the day Isaac was weaned Abraham held a great feast. 9 But Sarah saw that the son whom Hagar the Egyptian had borne to Abraham was mocking, 10 and she said to Abraham, “Get rid of that slave woman and her son, for that slave woman’s son will never share in the inheritance with my son Isaac.”
11 The matter distressed Abraham greatly because it concerned his son. 12 But God said to him, “Do not be so distressed about the boy and your maidservant. Listen to whatever Sarah tells you, because it is through Isaac that your offspring [a] will be reckoned. 13 I will make the son of the maidservant into a nation also, because he is your offspring.”
14 Early the next morning Abraham took some food and a skin of water and gave them to Hagar. He set them on her shoulders and then sent her off with the boy. She went on her way and wandered in the desert of Beersheba.
15 When the water in the skin was gone, she put the boy under one of the bushes. 16 Then she went off and sat down nearby, about a bowshot away, for she thought, “I cannot watch the boy die.” And as she sat there nearby, she [a] began to sob.
17 God heard the boy crying, and the angel of God called to Hagar from heaven and said to her, “What is the matter, Hagar? Do not be afraid; God has heard the boy crying as he lies there. 18 Lift the boy up and take him by the hand, for I will make him into a great nation.”
19 Then God opened her eyes and she saw a well of water. So she went and filled the skin with water and gave the boy a drink.
এই অংশে কিভাবে ইব্রাহীম(আঃ) তাঁর সন্তান ইসমাইল (আঃ) ও মা হাজেরাকে মক্কাতে (যদিও এখানে বীরশেবা বলা হচ্ছে) রেখে আসেন ও পরে কিভাবে ইসমাইল (আঃ) পিপাসার্ত হয়ে মারা যেতে বসেছিলেন তার কথা বলা হচ্ছে। হাদীসেও ঘটনাটির বর্ণনা আছে। আমরা সবাই কমবেশী ঘটণাটি জানি। যাইহোক, সংক্ষেপে, ইব্রাহীম(আঃ) যখন শিশু ইসমাইল (আঃ) ও মা হাজেরাকে মক্কায় রেখে যান তখন সেখানে কোনো জনবসতি ছিলোনা। রেখে যাওয়া অল্প খাবার আর পানি শেষ হয়ে গেলে দুধের শিশু ইসমাইল (আঃ) [বর্ণনা অনুসারে তখনো ইসমাইল(আঃ) মায়ের দুধ পান করেন; তাই আশা করা যায় উনার বয়স তখন ২ বছরের মত হবে] কাঁদতে আরম্ভ করেন। বিচলিত মা হাজেরা ৭ বার সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে দৌড়াদৌড়ি করার পরে যখন শিশু ইসমাইল (আঃ) এর কাছে আসেন, তখন দেখতে পান যে, জিব্রাঈল(আঃ) তাঁর ডানা দিয়ে জমজমের কূপ খুঁড়ছেন ও একটু পরেই পানি বেরিয়ে আসে।
উপরের বাইবেলের ভার্সগুলোতেও মোটামুটি একই রকম বর্ণনা আছে। এবং ২১.১৮ নং ভার্স অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে আল্লাহ বলছেন ইসমাইল (আঃ) কে কোলে তুলে নিতে। অসামঞ্জস্যটা এখানেই। খুব ভালোভাবে আমরা এখন ঘটনাক্রম পর্যবেক্ষণ করি। আগেই বলা হয়েছে যে বাইবেল অনুসারে ইসমাইল(আঃ) কে যখন ছোটো ভাই ইসহাক (আঃ) এর দুধ ছাড়ার ভোজসভায় সারা ভেংচি কাটতে দেখেন; তার পরেই সারা ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইল (আঃ) ও হাজেরাকে বাসা থেকে বের করে দেন। সহজ হিসেব অনুসারে দুধ ছাড়ার সময় ইসহাক (আঃ) এর বয়স ৩ আর ইসমাইল (আঃ) এর বয়স ৩+১৪ = ১৭। তো পিপাসার্ত ১৭ বছরের ইসমাইল (আঃ) কে কিভাবে ২১.১৮ অনুসারে মা হাজেরা কোলে তুলে নিলেন? উল্টো বরং ১৭ বছরের জোয়ান যুবক ইসমাইল (আঃ) তাঁর মাকে কোলে তোলার ক্ষমতা রাখার কথা। মূল রহস্য হলো, কোরবানীর ভার্স থেকে ইসমাইল(আঃ) এর নাম মুছতে গিয়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। হারিয়ে গেছে ঘটনার পরম্পরা। ২ বছরের শিশু ইসমাইল (আঃ) হয়ে গেলেন ১৭ বছরের কোলে ওঠা শিশু। আর খেয়াল করে যেহেতু সব জায়গায় ভার্স/শব্দ বদলানো হয়নি, তাই জেনেসিস ২২.২ ‘Your only son’ কিংবা ২৫.৯ ‘sons’ ইত্যাদি সঠিক শব্দাবলী রয়ে গেছে। সর্বোপরি সৃষ্টি হয়েছে অসংলগ্নতা/অসামঞ্জস্যতা। আশাকরি, কোরবানীর ঘটনার বিবরণের বাইবেলের অসামঞ্জস্যতা পাঠকরা বুঝতে পেরেছেন।
উপসংহার
১. বাইবেলের জেনেসিস ২২.২ তে ইসহাক (আঃ) কে কুরবানী দেয়ার কথা বলা থাকেলেও ঐ একই ভার্সে ‘Your only son’ ‘region of Moriah’-র উল্লেখ আছে।
২. ইসহাক (আঃ) কে কুরবানী দেয়া হলে ‘Your only son’ এর কোন অর্থ থাকেনা, কেননা ছোট ভাই হওয়াতে ইসহাক(আঃ) একমাত্র সন্তান হতে পারেননা। আর মোরিয়াঅঞ্চল কোথায় তার পুরো ব্যাখ্যা বাইবেল-বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেননি। জেনেসিস ২২.২ তে ইসহাকের জায়গাতে ইসমাইল ও মোরিয়ার জায়গায় মারওয়া (মক্কার সাফা-মারওয়া পর্বত) পড়লে, ইসলামী বিবরণের সাথে বেশ মিলে যায়।
৩. ‘Your only son’ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইহুদী/খৃষ্টাণ বাইবেল বিশেষজ্ঞরা দাসীর ঘরে জন্ম বলে ইসমাইল (আঃ) এর সন্তানের অধিকারনেই বলে বলেন। কিন্তু একই বিবেচনায় ইহুদীদের ১২ গোত্রের ৪টি দাসীর গোত্রে জন্মালেও তাদের সন্তানের অধিকারতারা কেড়ে নেননা; একটা সুস্পস্ট স্ববিরোধী অবস্থান।
৪. যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ইসমাইল (আঃ) এর সন্তানের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে ও সে আর ইব্রাহীম (আঃ) এর সন্তান নন, তাহলে জেনেসিস ২১.১১-১২ এর পরে আর ইসমাইল(আঃ) কে সন্তান/son হিসেবে ডাকার কথা না। কিন্তু জেনেসিস ২৫.৯ অনুসারে ইসমাইল(আঃ) কে আবারো সন্তান/son হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
৫. বাইবেল অনুসারে পিপাসায় কাতর যে ইসমাইল (আঃ) কে কোলে তুলে নিতে মা হাজেরাকে আদেশ দেয়া হলো তাঁর বয়স হিসেব করলে দেখা যায় ১৭ বছর। অতএব, একটা তথ্যকে জোর করে ঢোকাতে গিয়ে বাইবেলে সকল ঘটণার পরম্পরা গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। আর কিছু জায়গায় নাম/তথ্য বদলিয়ে ফেললেও অন্য জায়গা/ভার্স থেকে আমরা ঠিকই জোচ্চুরি ধরে ফেলতে পারছি।




ভ্যাগাবন্ড সাহেবের দুটো স্পষ্ট মিথ্যাচার আর জালিয়াতি ধরিয়ে দেবার পরেও, তিনি যে ভুল করেছেন তা স্বীকার না করে বরং বলছেন; ঐ লেখাতে নাকি বাইবেলকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি। বাইবেল অনুসারে কী ঘটেছিল, ইহুদিরা কী বলে, এমন সাত খণ্ড রামায়ণের মতো বাইবেলের বর্ণনা দেয়ার পরেও বলছেন যে বাইবেলকে রেফারেন্স হিসেবে আনেননি। আরও বলছেন প্রাসঙ্গিক কারণেই উপরোক্ত কথাগুলি নাকি তিনি লিখেছিলেন যা সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে। আবদার দেখেন!!! জ্বালাময়ী সত্যকথন লিখতে বসেছেন, আর মাঝখানে এসে বলছেন, সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে??? এখন আমার প্রশ্ন, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লিখছেন, এখানে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে লিখছেন কেন? পাঠক কীভাবে বুঝবেন আপনি কোনটা সত্যি বলছেন আর কোনটা মিথ্যা? আর যখন বলছেন, সেখানেও বিয়ের কথা নেই কিংবা সে নিজেও মা হতে চলেছে তখন সেগুলো কি বাইবেলের রেফারেন্স নয়? সেখানেও শব্দটার মানে কী? এটা কি বাইবেলকে রেফার করছেন না? আর যখন বললেন সারাহ আল্লাহর কাছে থেকে অবগত হয় যে সে নিজেও মা হতে চলেছে এই লাইনটা কোথা থেকে দিয়েছেন? ব্যাখ্যা হিসেবে বলছেন, প্রাসঙ্গিক কারনেই ওগুলো বলেছেন; তো প্রসঙ্গটা কোথা থেকে পেলেন? নিজের উর্বর মস্তিস্ক থেকে? অবশ্য উর্বর মস্তিষ্কের উপজাত বলাটাই মনে হয় বেশী সঙ্গত, কেননা, যদিও বাইবেল রেফার করেছেন, আদতে বাইবেল অনুসারেই এগুলো সত্য নয়। আকাশ মালিকের মতোই সত্য আর মিথ্যার জগাখিচুরি বানিয়ে আম-জনতাকে খাওয়ানোই হচ্ছে এসব ভণ্ডমনাদের কাজ। মুক্তমনা যখন নিজেকে বলছেন, তখন স্পষ্ট করে বলেন না কেন, উপরের দুটো বিবৃতিতে আপনি মিথ্যা/ভুল বলেছেন; জালিয়াতি/ভণ্ডামি করেছেন। রেকর্ডটা সোজা করার মতো মেরুদণ্ড দেখান। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে, মূল আলোচ্য তা ছিল না, আসল কথায় আসেন, বাইবেল থেকে বলিনি (আবার বলেছিও) এমন ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার মানে কী?
যাইহোক, ভ্যাগাবন্ডের পরবর্তী আবদার গুলোর দিকে যাওয়া যাক। তার লেখা আর কমেন্ট পড়ে মূল যে কথা তিনি বলতে চাচ্ছেন বলে মনে হলো তা হচ্ছে,
আমরা (মুসলিমরা) বাইবেলকে বিকৃত বললে ঐ বিকৃত বাইবেল থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে প্রস্তাবনা প্রমাণের চেষ্টা করি কেন? তিনি আরো বলছেন, কোরান আর হাদীস থেকে উনি উনার প্রস্তাবনা প্রমাণ করেছেন; পারলে আমি যেন তা ভুল প্রমাণ করি; তাহলেই সমস্যার চুড়ান্ত ফয়সালা হবে। তো পাঠক আমরা দেখি ভ্যাগাবন্ডের এই শেষ অস্ত্রগুলো কতটুকু কার্যকরী।
বাইবেল বিকৃত হলে, কেন বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রস্তাবনা প্রমাণ করা হয়?
এই ব্যপারে কিছু কথা আমার আগের লেখাতেই দিয়েছি। ঘিলু থাকলে তা বোঝার কথা। আমি বলেছি,
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, বাইবেল আসমানী কিতাবের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ, গ্রন্থটির মূল/আদি-রূপটি আল্লাহ প্রদত্ত। তবে বাইবেলের অনেক বাণী/ভার্স কালেক্রমে সুবিধাবাদী লোকজন বদলে দিয়েছেন বলে কোরান/হাদীসে উল্লেখ আছে। আর এই কারণেই আল্লাহ সুবহানা-তায়ালা কোরানকে প্রামাণ্য/কর্তৃত্ব-বাহী গ্রন্থ ঘোষণা করে আগের কিতাবগুলোর কর্তৃত্ব লুপ্ত করেছেন।
অর্থাৎ তৌরাত, জবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি কিতাবের সমন্বয়েই বাইবেল সংশ্লেষিত। তবে অবশ্যই আগে যেভাবে বলেছি, এসব আসমানী কিতাবের মূল/আদি-রূপটি আল্লাহ প্রদত্ত। ঐসব মূল কিতাব কালক্রমে বদলে গেছে, সুবিধাবাদী, স্বার্থান্বেষী নানা গোষ্ঠীর দ্বারা। আর কোরান/হাদীস, তথা ইসলাম আমাদের তাই বলে।  ব্যপারটা এমন যে, বাইবেলে হাজার লাইন শুদ্ধ বানী/ইতিহাস থাকলেও মাত্র অল্প কিছু ভার্স/আয়াত অশুদ্ধ/ভুল থাকলেই কিন্তু বইটি বিকৃত বলে গণ্য হবে, কেননা দাবী করা হচ্ছে যে এটা ঐষী বাণী। আর শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা অনুসারে একটি বিকৃত লাইন থাকলেই তা ঐষী বাণী হতে পারেনা। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আল্লাহর পাঠানো আগের কিতাবগুলো বিকৃত হয়ে পড়ার কারণেই মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুয়তের মাধ্যমে আগের আসমানী কিতাব গুলোর শাস্ত্রীয় কর্তৃত্ব লুপ্ত করা হয়েছে। আর কোরান ও সুন্নাহ হয়েছে ইসলামের নতুন শাস্ত্রীয় কর্তৃত্ববাহী সূত্র। আর তাই সঠিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বাইবেলে অনেক সত্য ইতিহাস/তথ্য আছে, তেমনি আছে অনেক মিথ্যা ইতিহাস/তথ্য। তো আমরা কীভাবে বুঝবো যে কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা; কী হবে তার নির্ণায়ক? ইসলামী বিধান অনুসারে নির্ণায়ক বা মাপকাঠি হচ্ছে কোরান ও হাসীস। কোরান আর হাদীসে যা এসেছে বাইবেলের কোনো বাণী বা ভার্স যদি তার বিপরীতে যায় তবে তা মিথ্যা/বিকৃত; পক্ষান্তরে, যে ভার্সগুলো কোরান আর হাদীসের বর্ণনার সাথে মিলে যায় তা হচ্ছে সত্য। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাইবেলে আছে ইব্রাহীম (আঃ) এর ছেলে ইসমাইল (আঃ) ও ইসহাক (আঃ) আর ইসহাক (আঃ) এর ছেলে ইয়াকুব (আঃ) আর ইয়াকুব (আঃ) এর ছেলে ইউসুফ (আঃ)। কোরান/হাদীসের বর্ণনাতেও একই ক্রম আমরা দেখি, সুতরাং বাইবেলের এই বিধৃতিটা সত্য। কিন্তু আবার দেখা যাচ্ছে, বাইবেল অনুসারে লুত (আঃ) নিজের মেয়েদের শয্যা-সঙ্গী হচ্ছেন বংশ রক্ষা করার জন্যে, যা কোরান/হাদীসের বর্ণনা আর ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত, তাই সে ইতিহাস মিথ্যা/বিকৃত। তবে এই দু-রকম এসিড টেষ্ট ছাড়াও বাইবেলে অনেক ঘটনার বর্ণনা আছে যা কোরান/হাদীসে নেই, এবং এই অংশটুকুই বোধকরি সিংহভাগ; সেসব বর্ণনা সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। তাই নবী (সাঃ) প্রথম দিকটাতে বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি তো দূরে থাক, বাইবেল খুলে পড়াকেও বারণ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একবার উমর(রাঃ) বাইবেলের কিয়দংশ পড়ার চেষ্টা করলে রাসুল (সাঃ) বেশ নাখোশ হন, তিনি বলেন, আমি কি এর চাইতে উত্তম বাণী তোমাদের জন্যে আনিনি? নবুয়তের প্রথম দিকটাতে এমন কড়াকড়ির কারণ ছিল সাহাবীদের মধ্যে ইসলামের শক্ত ও নিখাদ ভিত্তি তৈরী করা। এই কড়া বিধি-নিষেধ নবুয়তের শেষভাগে এসে তিনি তুলে নেন ও ইস্রাইলিয়াত (অর্থাৎ ইহুদী) সূত্র থেকে বর্ণনা দিতে অনুমতি দেন, কেননা, তাতে কোনো ক্ষতি নেই (দেখুন বুখারী, আবু-দাউদপ্রমুখ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই কোরান হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন বর্ণনাকেই অনুমোদন করছেন), তবে তাতে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস কোনোটাই স্থাপন করা যাবেনা (দেখুন, ইবন হাজর আস্কালানীর ফাতহুল বারী); কেননা কোরান হাদীস দিয়ে কোনো তথ্য সত্য কিংবা মিথ্যা কোনো কিছুই প্রমাণ না হলে তা সত্য কিংবা মিথ্যা যে কোনোটিই হতে পারে। তবে মোদ্দা কথা, ইসলামে বাইবেল থেকে বর্ণনা বিধৃতি নেয়ার অনুমতি আছে শাস্ত্রীয়ভাবেই, আর তাই একদম প্রাচীন কাল থেকেই; যেমন, ইবন আব্বাসের তাফসিরেও আমরা প্রচুর ইস্রাইলিয়াত ইতিহাসের বর্ণনা দেখতে পাই। আর সেই কারণেই ইসলাম বিশারদগণ যুগে যুগে কোরান/হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাইবেলের বাণী গ্রহণ করেছেন; আর সাংঘর্ষিক ইতিহাস মিথ্যা বলে বর্জন করেছেন। আর সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করা না গেলে তা বর্ণনার অনুমতি আছে, তবে বিধৃতিটি অনুমোদন কিংবা অ-অনুমোদন কোনোটাই করা যাবেনা।
আলোচ্য কোরবানীর ইতিহাস অন্তত বাইবেলে যেভাবে এসেছে তা কোরান হাদীসে বর্ণিত ইতিহাসের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক/বিপ্রতীপ। তাই বাইবেলে ইসহাক (আঃ) কে কোরবানীর উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল বলে বলা হলেও তা বিকৃত তথ্য বলে পরিগণিত হবে। আশা করি বাইবেল থেকে কেন, কীভাবে, কতটুকু বর্ণনা নেয়া যায় তা ভ্যাগাবন্ডের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। এজন্যে অবিকৃত বাইবেল উদ্ধার করার প্রয়োজন পড়েনা। বাইবেলের সত্য-মিথ্যা যাচাই করার কষ্টিপাথর হচ্ছে কোরান ও হাদীস।
ভ্যাগাবন্ড সাহেব, এতক্ষণ তো আমি বললাম বিকৃত হলেও কেন বাইবেল থেকে ভার্স দিয়ে আমার প্রতিপাদ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এবার আপনার করা প্রশ্নটাই আপনাকে করতে ইচ্ছে হচ্ছে যে!!! আচ্ছা বলেন তো, “কোরান হাদীস তো কানাকড়িও মানেন না; বলেন সব মোহাম্মদ (সাঃ) এর লেখা; তাহলে আপনি কেন কোরান/হাদীস থেকে প্রতিপাদ্য প্রমাণ করছেন যে আসলে ইসহাক (আঃ) কেই কোরবানী দেয়া হয়েছিল?” আপনি হয়ত বলবেন, যেহেতু মুসলিমরা বলে কোরান হাদীস অবিকৃত সহীহ কর্তৃত্ববাহী গ্রন্থ, সুতরাং দেখালাম যে কোরান/হাদীস অনুসারেই আসলে ইসমাইল (আঃ) কে নয় বরং ইসহাক (আঃ) কে কোরবানী দেয়া হয়েছিল।আপনার ব্যবহার করা এই পদ্ধতির বাইরে আমি কী কিছু করেছি? আমি কি একইভাবে প্রমাণ করিনি যে, ইহুদি/খৃষ্টানরা যেহেতু বাইবেলকে আল্লাহর অবিকৃত বাণী বলে মনে করে তাই বাইবেল থেকেই প্রমাণ করলাম যে আসলে ইসহাক (আঃ) কে কোরবানী দেয়া হয় নাই; এটা কোনো একসময় জোর করে বাইবেলে ঢোকানো হয়েছে, তাই আনুষঙ্গিক ঘটনাবলী অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে গেছে। আপনি যে পদ্ধতিতে আপনার দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন, আমি তো তার চাইতে বেশী কিছু করিনি; তবে কেন বারবার অভিযোগ আনছেন যে আমি যে গ্রন্থকে বিকৃত বলছি তা থেকেই কেন প্রতিপাদ্য প্রমাণ করছি দেখুন সত্য বলতে কী আমার তো বাইবেল থেকে বিধৃতি দেয়ার অনেক এখতিয়ার আছে; কেননা বাইবেল এর আদিরূপ যে আল্লাহ প্রদত্ত তা বিশ্বাস না করলে আমার নিজের ঈমান থাকেনা, বাইবেলের অনেক ঘটনাও কোরানের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর সবচেয়ে বড় কথা, কিছু লিমিটেশনের মধ্যে থেকে বাইবেল থেকে বিধৃতি দেয়ার শাস্ত্রীয় অনুমতিও আমাদের আছে। পক্ষান্তরে, আপনার কোরান হাদীস থেকে বিধৃতি দেয়ার কী কারণ আছে? আপনি নাস্তিক মানুষ। কোরান, হাদীস, বাইবেল, বেদ, ত্রিপিটক কিছুতেই আপনার বিশ্বাস নাই; হাবেভাবে মনে হচ্ছে কোরান হাদীসে বর্ণিত নবী রাসুলগণ আদতে আসল চরিত্র নাকি কেবল গল্প-উপন্যাসের চরিত্রের মতো, তা নিয়েও সংশয় কাটে নাই, তাহলে শয়ে শয়ে পাতা লিখে যাচ্ছেন সেসব বইয়ের উপর ভিত্তি করে যার উপরে আপনার কানাকড়িও বিশ্বাস নাই। এই ভণ্ডামির মানে কী তাহলে? ভালো কথা আপনি প্রমাণ করলেন যে কোরান আর হাসীস অনুসারেই মা হাজেরা ছিলেন দাসী আর ইসহাক (আঃ) কেই আসলে কোরবানী দেয়া হয়েছিল, এতে আপনার নাস্তিকতার কী এসে গেলো? আপনি কি তাহলে কোরান হাদিসে বিশ্বাস করা শুরু করবেন যেহেতু আপনার মনে হচ্ছে কোরান/হাদীসে আসলে আপনার মতকেই সত্য বলে বলা হচ্ছে?
এবার ভ্যাগাবন্ডের পরের দাবীগুলোর দিকে একে একে যাওয়া যাক
ইবন আব্বাসের হাদীসের বর্ণনা ও ভ্যাগাবন্ডের অদ্ভুত যুক্তিবোধ
ভ্যাগাবন্ড ব্রহ্মাচারী বলেছেন,
এবারে আসা যাক, কাদের দাবী সত্য সেটার বিশ্লেষণে। এ ব্যপারে নিচের হাদিসটি দেখা যেতে পারে-
ইবনে আব্বাস বর্নিত: তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী( সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল, তখন ইব্রাহীম শিশুপূত্র ইসমাইল ও ইসমাইলের মাতা হাজেরাকে লইয়া বাহির হইয়া গেলেন। তাহাদের সাথে একটি মশক ছিল আর তাতে পানি ছিল। ইসমাইলের মাতা মশক হইতে পানি পান করিতেন আর শিশুপূত্রের জন্য তাহার দুগ্ধে প্রাচুর্য আসিত শেষ পর্যন্ত ইব্রাহীম মক্কায় আসিয়া গেলেন এবং হাজেরাকে তার শিশুপূত্র সহ একটি বৃক্ষমূলে বসাইয়া রাখিলেন। তারপর তিনি তার নিজ স্ত্রী সারাহ এর নিকট ফিরিয়া চলিলেন। তখন ইসমাইলের মাতা তাহাকে অনুসরণ করিয়া কিছুদুর গেলেন ও ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসা করিলেন- হে ইব্রাহীম আমাদিগকে কাহার নিকট রাখিয়া যাইতেছেন? ইব্রাহীম বলিলেন- আল্লাহর নিকট। হাজেরা বলিলেন- আমি আল্লাহর নিকট থাকিতেই রাজি। ——————————————————————————————————————————–
ইবনে আব্বাস বলেন, জুরহুম গোত্রের একদল লোক প্রান্তরের মধ্য দিয়া পথ অতিক্রম করিতেছিল, হঠাৎ তাহারা দেখিল, একদল পাখী উড়িতেছে। তাহারা যেন তাহা বিশ্বাসই করিতে পারিতেছিল না।তাহারা বলিল, যেখানে পানি থাকে সেখানেই তো এইসব পাখি উড়িতে দেখা যায়। তখন তাহারা পাখী উড়িবার স্থলে তাহাদের একজন লোক পাঠাইল। সে তথায় গিয়া দেখিল সেখানে পানি মৌজুদ আছে। তখন সে দলের লোকদের নিকট ফিরিয়া আসিয়া তাহাদিগকে পানির খবর দিল। তারপর তহারা সকলেই হাজেরার নিকট আসিল এবং তাহাকে বলিল, হে ইসমাইল জননী! আপনি কি আমাদিগকে আপনার প্রতিবেশী হওয়ার বা আপনার সাথে বসবাস করিবার অনুমতি দিবেন ?হাজেরা তাহাদিগকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এইভাবে অনেক দিন চলিয়া গেল। তারপর হাজেরার শিশুপূত্র প্রাপ্ত বয়স্ক হইলেন, তখন তিনি জুরহুম গোত্রেরই এক কন্যাকে বিবাহ করিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর নির্বাসিত পরিজনের কথা ইব্রাহীম এর মনে উদয় হইল। তিনি তাহার স্ত্রী সারাহ কে বলিলেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিজনের কথা জানিতে চাই। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর ইব্রাহীম তাহাদের নিকট আসিলেন এবং সালাম দিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন- ইসমাইল কোথায় ?ইসমাইলের স্ত্রী বলিল- তিনি শিকারে গিয়াছেন।————— সহী বুখারী, বই-৫৫, হাদিস নং-৫৮৪
উপরোক্ত হাদিসে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে- ইব্রাহীম হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসনে দেয়ার পর দীর্ঘদিন আর তাদের সাথে দেখা করেনি। দেখা করেছে তখন যখন ইসমাইল প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করে দিয়েছে। আরও উল্লেখ্য, উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে- বর্ননাকারী বার বার সারাহ কে ইব্রাহীমের স্ত্রী বলছে, কিন্তু হাজেরাকে শুধুমাত্র ইসমাইলের মাতা বলছে। একবারও কিন্তু দেখা যাচ্ছে না যে হাজেরাকে ইব্রাহীমের স্ত্রী বলা হচ্ছে। ইব্রাহীমের সময়ে যে কেউ দাসীদের গর্ভে সন্তান জন্ম দিতে পারত , এটা দোষণীয় কিছু ছিল না। এমনকি মোহাম্মদের সময়েও এটা দোষণীয় ছিল না। খোদ মোহাম্মদের নিজের এক পূত্র ইব্রাহিমও ছিল তার দাসী মারিয়ার(মিশরের সম্রাট থেকে উপহার পাওয়া) সন্তান। পরে অবশ্য মোহাম্মদ তাকে বিয়ে করে তবে যখন ইব্রাহীম মারিয়ার পেটে আসে তখন তাদের বিয়ে হয়নি।বিষয়টাও আসলে তাই। হাজেরা ছিল ইব্রাহীমের দাসী। বিবাহিতা স্ত্রী নয়। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে সেরকমই বলা আছে। ইব্রাহিম এক সময় মিশর গমন করে, তখন তার সাথে তার স্ত্রী সারাহ ছিল। নানা ঘটনার পর সারাহ সেখানকার বাদশার রাজপ্রাসাদে স্থান পায়, পরে যখন সেখান থেকে চলে আসে তখন বাদশাহ তাকে একটা দাসী উপহার দেয় আর সেই দাসীই হলো হাজেরা। বাইবেলে আরও বর্ননা করা আছে-ইব্রাহীম ও সারাহ যখন অতিশয় বৃদ্ধ হয়ে গেছিল কিন্তু সন্তান জন্ম নিচ্ছিল না , তখন সারাহই ইব্রাহীমকে তার দাসী হাজেরার সাথে সহবাস করতে বলে ও সন্তান উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করে। সেখানেও বিয়ের কথা নেই। কিন্তু যখন হাজেরা ইসমাইলকে প্রসব করে তখন সারাহও আল্লাহর কাছ থেকে অবগত হয় যে সে নিজেও মা হতে চলেছে বা হবে। তখন সারাহ আর হাজেরাকে সহ্য করতে পারে না। কারন দাসীর গর্ভের এক অবৈধ সন্তান তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে বা অন্য সব কিছুতে ভাগ বসাবে তা সারাহ মানতে রাজী হয়নি। সেকারনে সে হাজেরাকে বাড়ী থেকে নির্বাসন দেয়ার জন্য ইব্রাহীমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ঠিক এ প্রচলিত ঘটনাটাকেই ( যা মোহাম্মদের আমলে বাইবেলে লিখিত ও প্রচলিত ছিল) হাদিসে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে- তিনি বলেন যখন ইব্রাহীম ও তাঁহার স্ত্রী( সারাহ) এর যা হইবার তা হইয়া গেল অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হইল । অর্থাৎ সারাহ ও ইব্রাহীমের মধ্যে ব্যপক মনোমালিন্যের উদ্ভব ঘটে হাজেরা ও তার সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে। উল্লেখ্য, হাজেরা ইব্রাহীমের বৈধ স্ত্রী হলে সারাহ কখনই এ ধরনের আচরন করতে পারত না , বা হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসন দিতে ইব্রাহীমকে বাধ্য করাতে পারত না।
তাহলে উপরোক্ত হাদিস যে বিষয়গুলি পরিস্কার তা হলো- ইসমাইল প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে করে সংসার করার আগ পর্যন্ত তার সাথে ইব্রাহীমের দেখা হয় নি। হাজেরা ইব্রাহীমের দাসী ছিল, বিবাহিতা স্ত্রী ছিল না।
উনার ব্যাখ্যার অনেক অংশ যে কী রকমের মিথ্যাচারে ভরা তার প্রমাণ আমি আগের লেখাতে দিয়েছি। এবার আসেন হাদীস অনুসারে উনি শেষমেষ যে দুটি সিদ্ধান্তে আসলেন তার প্রসঙ্গে। উনার সিদ্ধান্ত,
১। ইসমাইল (আঃ) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে করে সংসার করার আগ পর্যন্ত তার সাথে ইব্রাহীমের দেখা হয়নি।
২। হাজেরা ইব্রাহীমের দাসী ছিল, বিবাহিতা স্ত্রী ছিল না।
প্রথম দাবীর জবাবে বলা যায়, ইবন আব্বাস (রাঃ) তার হাদীসে, ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর মধ্যকার দেখা-সাক্ষাতের সবগুলো ইস্নট্যান্সের কথাই যে দেয়া আছে তা ভাববার কারণ কী? হাদীসে পরিষ্কার করে কী বলা আছে যে এই কয়বার ছাড়া আর তাদের কখনোই কোনোভাবেই দেখা সাক্ষাত হয়নি। হাদীসে হাজেরা ও ইসমাইল (আঃ) এর মক্কাতে আসার ও পরবর্তীতে কীভাবে মক্কা শহর গড়ে উঠলো তার বর্ণনা দেয়া আছে। হাদীসে দেখা যাচ্ছে, ইব্রাহীম (আঃ) বেশ কয়েকবারই মক্কাতে আসেন। এখান থেকে বোঝা যায় তিনি প্রায়শই মক্কাতে ইসমাইল (আঃ) এর সাথে দেখা করতে আসতেন। বর্ণনাতে দেখা যাচ্ছে, “তারপর হাজেরার শিশুপূত্র প্রাপ্ত বয়স্ক হইলেন, তখন তিনি জুরহুম গোত্রেরই এক কন্যাকে বিবাহ করিলেন। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর নির্বাসিত পরিজনের কথা ইব্রাহীম এর মনে উদয় হইল। তিনি তাহার স্ত্রী সারাহকে বলিলেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিজনের কথা জানিতে চাই। ইবনে আব্বাস বলেন, অত:পর ইব্রাহীম তাহাদের নিকট আসিলেন এবং সালাম দিলেন।এখন কেন আমাদের ধরে নিতে হবে যে ইসমাইল (আঃ) এর বিয়ের আগে ইব্রাহীম (আঃ) আর মক্কাতে আসেন নাই। যদি বলা হতো যে মক্কাতে শিশু অবস্থায় ফেলে রেখে আসার পরে প্রথমবারের মতো ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাতে আসলেন ইত্যাদি, তাহলে ভ্যাগাবন্ডের কথার যুক্তি থাকতো। বলা আছে অতঃপর নির্বাসিত পরিজনের কথা ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে উদয় হইল; মানে হলো, ইসমাইল (আঃ) এর বিয়ের পরে ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে ইসমাইল (আঃ) এর কথা স্মরণে আসলো; আর এই কথার অর্থ যদি ধরা হয় যে বিয়ের আগে কখনোই তাদের সাথে আর দেখা হয়নি তবে তা হচ্ছে far stretching conjecture. আর কোরান থেকেই যখন প্রমাণিত হয় (আগামী পর্বে প্রামাণ্য) যে ইসমাইল (আঃ) কেই কোরবানী দেয়া হয়, তখন কোরান হাদীস মিলিয়ে আমরা একটাই গ্রহণযোগ্য উত্তর পাই, আর তা হলো, ইবন আব্বাসের বর্ণনাতে ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর সবগুলো সাক্ষাতের কথা আসেনি, তা হাদীসে লেখাও নাই, আর কোরানের বর্ণনার সাথেও তা সাংঘর্ষিক।
আর দ্বিতীয় বিষয়, অর্থাৎ, যেহেতু মা হাজেরাকে সবসময় ইসমাইলের (আঃ) মা বলা হচ্ছে আর ইব্রাহীমের (রাঃ) স্ত্রী বলা হচ্ছে না তাই ভ্যাগাবন্ড ধরে নিয়েছেন যে মা হাজেরা হাদীস অনুসারে ইব্রাহীম (আঃ) এর দাসী ছিলেন। এই যুক্তিও মামা বাড়ীর আব্দারের মতো। কোথাও কী পরিষ্কার বলা আছে ইব্রাহীম (আঃ) তার দাসী হাজেরাকে সাথে নিয়ে মক্কাতে গেলেন? তাহলে এমন সিদ্ধান্তে আসার কারণ কী? আর একটা হাদীস দেখেই সিদ্ধান্তে এসে গেছেন যে মা হাজেরা ইব্রাহীম (আঃ) এর দাসী ছিলেন? অন্য হাদীস দেখেছেন কী? ইবন আসাকির, আল হাকিম, বাইহাকী প্রমুখ বিখ্যাত মোহাদ্দেসগণের হাদীস গ্রন্থে আলী (রাঃ) ও অন্যান্য বর্ণনাকারীদের দ্বারা বিধৃত হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলছেন, “… I was the product of true marriage, not fornication, right down from Adam to my father and mother…”
এই হাদীসে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, রাসুল (আঃ) এর পূর্বসূরী সবাই সঠিক পথেই বিবাহিত ছিলেন। অনেক রাবী নানা সূত্রে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাই মোহাদ্দেসগণ এই হাদীসকে গ্রহণযোগ্য বলেই রায় দিয়েছেন।
অতএব, হাদীস অনুসারেই প্রমাণিত হলো যে মা হাজেরা, ইব্রাহীম (আঃ) এর বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন।



গত পর্বে দেখিয়েছিলাম বাইবেলকে বিকৃত বললেও কেন বাইবেল থেকে প্রতিপাদ্য প্রমাণ করা হয়। সংক্ষেপে যা দেখানো হয়েছিল তা হচ্ছে, বাইবেল এর আদিরূপ আল্লাহ প্রদত্ত; বর্তমান বাইবেলে সত্য ও মিথ্যা উভয় ইতিহাসই আছে। আরো বলেছি যে, বাইবেলের সত্য ও মিথ্যা ইতিহাসের নির্ণায়ক ইসলামী বিধি অনুসারে কোরান ও হাদীস। বলা হয়েছে বাইবেল থেকে বিধৃতি দেয়ার অনুমোদনের কথা। আর এতে ভ্যাগাবন্ড সাহেব অবশ্য অনুযোগ এনেছেন যে ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও ঘটনার ধারাবাহিকতা একেবারে পাশ কাটিয়ে যদি বলা হয় কোরান/হাদীসে যে ইতিহাস আছে কেবল তাই সত্য, তাহলে তার সাথ কীভাবে তর্ক করা যায়? ভ্যাগাবন্ড বলছেন,
আমার আরও বক্তব্য- তৌরাত ও বাইবেল উভয়ই খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে মোহাম্মদেরও জন্মের ৫০০ বছর আগে সংকলিত হয় যা আজকের আকারে দেখা যায়। অথচ আপনি তা মানতে নারাজ কেননা মোহাম্মদ তা স্বীকার করেন নি। এক্ষেত্রে আপনি যে ভুলটি করছেন তা হলো ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা কে আপনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আপনি মোহাম্মদের কথাকেই ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস হিসাবে বিনা প্রশ্নে মেনে নিচ্ছেন।
যাইহোক, ভ্যাগাবন্ড যেভাবে অভিযোগ আনলেন, যে কোরান/হাদীসে যা আছে আমরা কেবল তা মানি আর অন্য ঐতিহাসিক বিবরণ মানিনা; কথাটা উনি ঠিক বলেন নি। আমাদের মুসলিমদের দাবী হচ্ছে, কোরান/হাদীসে যেসব ঐতিহাসিক বিবরণ আছে তা আমাদের বিশ্বাস্বের ভিত্তি; শাস্ত্রীয়ভাবে এর বাইরে আমরা যেতে পারিনা; কিন্তু তার মানে যদি এটা ধরে নেয়া হয় যে আমরা ঐতিহাসিক বিবরণ অস্বীকার করছি তাহলেতো যে কথা বলিনি তাই জোর করে আমাদের মুখে গুঁজে দেয়া হলো। কোরান/হাদীসে বলা কোনো ঐতিহাসিক বিবরণই এখন পর্যন্ত মিথ্যা বলে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়নি এবং কখনো তা হবেও না। অতএব, সঠিক ঐতিহাসিক বিবরণে আমাদের মুসলিমদের অগাধ আস্থাই আছে; এ নিয়ে আমাদের ভয় পাবার কিছু নেই। যাইহোক, ভ্যাগাবন্ডের দাবী অনুসারেই তাহলে দেখা যাক তৌরাত তথা বর্তমানে পাওয়া বাইবেলের ঐতিহাসিক মূল্য কতখানি?
বাইবেলের ঐতিহাসিক মূল্য
ভ্যাগাবন্ডের দেয়া ফর্মূলাতে থেকেই কেবল ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বলা যায় বাইবেল আদি অকৃত্রিম অবস্থায় নাই। এনিয়ে কথা বলতে গেলে পুরো আলাদা পোষ্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ে, তবে একেবারে সংক্ষেপে বলতে গেলে, ৭২২ খৃষ্টপূর্বে অ্যাসিরিয় রাজা শাল্মানেসের সারগন ১০ গোত্রের ইহুদি রাজ্য Kingdom of Israel আক্রমণ করে ধুলিস্মাত করে দেয়। তখন থেকে ইহুদির ১২ গোত্রের ১০ গোত্র হারিয়ে যাওয়া ১০ গোত্র বলে পরিচিত হয়। তখনকার দিনে তোরাহের সব কপি রাখা হতো উপাসনালয়ে যা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়; স্বভাবতই এর সাথে সাথেই তোরাহএর মূল বইগুলোর অনেকাংশ পুরোপরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১২ গোত্রের বাকী ২ গোত্র (kingdom of Judah) জেরুসালেমে কিছুকাল রাজত্ব করলেও ৫৮৬ পূর্বাব্দে নব ব্যবিলনীয় রাজ্যের সম্রাট নেবুখদনেজ্জারের আক্রমণে জেরুসালেম পুরোপুরি ধুলিস্মাত হয়ে যায় আর বেশীরভাগ ইহুদি ঐ ধংসযজ্ঞে মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন তাদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যবিলনে। সুলাইমান (আঃ) এর উপাসনালয় মিশিয়ে দেয়া হয়ে ধুলায়। আর সেই সাথে তৌরাতের মূল কপিগুলো হারিয়ে যায়। এর পর সম্রাট সাইরাসের সময় ব্যবিলন থেকে বন্দী ইহুদিদের আবার জেরুসালেমে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হয়। ঐ সময় এযরা ব্যবিলন থেকে জেরুসালেমে এসে কিছু বই/লেখা/পুথি দেখিয়ে বলেন, এগুলিই তোরাহএজন্যে তাকে বাইবেলের পূনঃপ্রবর্তক বলা হয়। হিব্রু বাইবেলেও এসব বিবরন দেয়া আছে (এযরা ৭-১০; নেহেমিয়াহ ৮)এরপরেও ১৬৮ পূর্বাব্দে রাজা এন্টিওখাস ও ৭০ অব্দে টাইটাসের আক্রমণে জেরুসালেম আরো দুবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ৭০ অব্দের টাইটাসের আক্রমণ ছিল ভয়াবহ। যোসেফাসের ইতিহাস থেকে জানা যায় ঐ আক্রমণে ১১ লক্ষ ইহুদি মারা যান আর বন্দী হন ৯৭ হাজার। মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় দ্বিতীয় উপাসনালয় সেই সাথে লন্ডভন্ড হয়ে যায় তোরাহ ও অনুবর্তী পুরাতন নিয়মের অবশিষ্ট বইগুলো। এভাবে বারংবার বহিঃশত্রুর আক্রমণে তোরাহের ধারাবাহিকতা ও অখন্ডতা নষ্ট হয় ঐতিহাসিকভাবেই। আর বাইবেলের পুরাতন নিয়মের বইগুলোও যে ইহুদি/খৃষ্টান দ্বারা অবিসংবাদিত ভাবে স্বীকৃত তাও ভুল কথা। যেমন, Apocryphal books হচ্ছে ক্যাথলিক আর গ্রীক অর্থডক্সির কাছে স্রষ্টার অপ্তবাক্য বলে পরিচিত ৩৫ খন্ডের গ্রন্থসামগ্রী যা হিব্রু বাইবেলের অংশ নয়। এভাবে আরো অনেক বাইবেলের অধ্যায় আছে যা নিয়ে খোদ ইহুদী/খৃষ্টাণদের মধ্যে বিবাদ আছে। এই অর্থে, তাদের নিজেদেরই ইতিহাস বলে বাইবেল বিকৃত। অতএব, আশা করি ভ্যাগাবন্ড আর বাইবেল বিকৃতির ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় যাবেন না, কেননা এখানেই বাইবেল বিকৃতির অনেক ঐতিহাসিক প্রমাণই দেয়া হলো।
এই গেলো ভ্যাগাবন্ডের আব্দারী যুক্তির কিয়দংশের খন্ডন। এবার তার গার্বেজ লেখার বাকী অংশে যাওয়া যাক। গত পর্বে বলা হয়েছে ইবন আব্বাসের (রাঃ) হাদীস থেকে কোনোভাবেই প্রমাণ হয়না যে ইসহাক (আঃ) কে কোরবানী দেয়া ও মা হাজেরা ইব্রাহীম (আঃ) এর দাসী ছিলেন। আর আপনি যদি মুসলিমদের পথে থেকেই কোরান/হাদীস থেকে আপনার প্রতিপাদ্য প্রমাণ করতে চান, তবে নিয়মের মধ্যে থাকেন। কোরান সহ সকল গ্রহণযোগ্য হাদীসকে একসাথে নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বায়হাকীর হাদীস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে মা হাজেরা ইব্রাহীম (আঃ) এর বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন। ইবন আব্বাসের (রাঃ) হাদীসও বিপরীত কথা বলছে না। কেবল বোখারীর হাদীস নিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে গল্প বানালে হবে না; বিশেষত যদি সে গল্প/রূপকথা অন্য গ্রহণযোগ্য হাদীস কিংবা কোরানের বর্ণনার বিপরীতে যায়। আশাকরি, মেথডলজি নিয়ে আর নিজের বানানো সংজ্ঞাতে চলবেন না। ইসলামে গ্রহণীয় মেথডলজী নিয়ে প্রতিপাদ্য প্রমাণ করতে হবে; যেটা আপনি মোটেও করতে পারেন নাই। আর সত্য মিথ্যার জগাখিচুড়ি বানিয়ে তো ভন্ডামি করেছেনই।
কোরান থেকে ইসমাইল (আঃ) এর কোরবানীর প্রমাণ
যাইহোক, এর পরে ভ্যাগাবন্ড বলেন,
এবার দেখা যাক, এ বিষয়ে কোরান কি বলছে-
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। কোরান, সূরা আস সাফাত-৩৭:আয়াত ৯৯-১১১
উপরোক্ত আয়াতে ইব্রাহীম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে একজন সৎপূত্র দান করার জন্য। অত:পর ৯৯ থেকে ১১১ পর্যন্ত আয়াতে দেখা যাচ্ছে সে পূত্র যখন চলাফেরার বয়সে উপনীত হলো তখনই ইব্রাহীম তাকে কোরবানী করতে নিয়ে যায়। এ চলাফেরা করার বয়স মানে বিয়ে করার মত প্রাপ্ত বয়স্ক না নিশ্চয়ই। বড়জোর শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন পর্যন্ত বুঝানো যেতে পারে। এছাড়াও এ আয়াত গুলোর কোথাও ইসমাইলের নাম গন্ধও নেই। আর পূর্বোক্ত হাদিস থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে- ইব্রাহীম যখন ইসমাইলের সাথে নির্বাসনের পর প্রথম দেখা করে তখন সে কৈশোর উত্তীর্ন হয়ে যৌবনে পদার্পন করেছে এবং বিয়ে করে সংসার করছে। সহী বোখারী, বই-৫৫ এর ৫৮৩ নং হাদিসও হুবহু একই কথা বলে। এছাড়াও ইসমাইল কিভাবে ইব্রাহীমের সব চাইতে প্রিয় কিভাবে হয় সেটাও প্রনিধানযোগ্য। কারন জন্মের কিছুদিন পরই হাজেরা সহ তাকে ইব্রাহীম ত্যাগ করে চলে গেছে। এর পর সারাহ এর গর্ভে ইসহাক এর জন্ম হয়েছে। সারাহ এর গর্ভে সন্তান এসেছিল বলেই তো সারাহ হাজেরা ও তার সন্তানকে আর ইব্রাহীমের সাথে থাকতে দিতে রাজী হয়নি। হাজেরা যদি সত্যি সত্যি ইব্রাহীমের বিয়ে করা বউ হতো, তাহলে কি সারাহ ইব্রাহীমকে বাধ্য করাতে পারত নির্বাসন দিতে? তখন দুইটা কেন শতটা বিয়ে করলেও কোন স্ত্রীর কিছু করার ছিল না, সেটাই ছিল প্রচলিত রীতি। তাই সেক্ষেত্রে ইসহাকই হবে ইব্রাহীমের সবচাইতে প্রিয় পাত্র কারন সেই সব সময় তার সাথে থাকত। একজন পিতার কাছে কোন সন্তান বেশী প্রিয় হয়? যে সন্তানকে পিতা জন্মের কিছুদিন পর থেকে দীর্ঘদিন দেখতে পারে না সে , নাকি যে সন্তান পিতার সাথে সব সময় থাকে সে ? সুতরাং ইসমাইলকে কোরবানী দেয়ার যে কাহিনী আমরা এতকাল শুনে এসেছি, তার ভিত্তি খুব দুর্বল। বরং ইসহাককেই কোরবানী দেয়ার বিষয়টিই উক্ত কিচ্ছা কাহিনী অনুযায়ী সঠিক হওয়াই বেশী যুক্তি সঙ্গত।
এখানে ভ্যাগাবন্ড সুরা সাফফাতের ৯৯ থেকে ১১১ দেখিয়ে বলছেন,
১. সুরায় (সাফফাত ৯৯-১১১) ইসমাইল (আঃ) এর নাম নেই।
২. ইবন আব্বাসের (রাঃ) হাদীস অনুসারে ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে ইসমাইল (আঃ) এর প্রথম সাক্ষাত হয় ইসমাইল (আঃ) এর বিয়ের পরে।
৩. ইসহাক (আঃ) এর জন্ম হয় ইসমাইল (আঃ) এর নির্বাসনের পরপরই, এবং তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে থেকেই বড় হতে থাকেন। সুতরাং, চলাফেরা করার মতো বড় হলে যখন সন্তান কোরবানী দেয়ার প্রশ্ন উঠে, তখন সাথে থাকা ইসহাক (আঃ) কেই কোরবানী দেয়াই সঙ্গত, কেননা তিনিই কাছে আছেন তাই তিনিই সবচেয়ে প্রিয় বস্তু/ব্যাক্তি; নির্বাসনে থাকা ইসমাইল (আঃ) নন।

সবাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ভ্যাগাবন্ড এখানে কীভাবে উর্বর মস্তিষ্ক চালিয়ে আকাশ মালিকের মতো রূপকথা বানিয়েছেন। কোরান/হাদীস/তাফসির/বাইবেল কোথাও বলা নাই যে ইসহাক (আঃ), ইসমাইল (আঃ) এর চেয়ে মাত্র ২-৩ বছর ছোটো। এটা আছে কেবল ভ্যাগাবন্ডের উর্বর মস্তিষ্কে। আর ঐ মস্তিষ্কের উপজাত হসেবেই তিনি বিশাল থিসিস ফেঁদেছেন। বরং মুসলিম আর ইহুদী/খৃষ্টাণদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বিবাদ নেই যে ইসমাইল (আঃ), ইসহাক (আঃ) এর চেয়ে ১৪ বছরের মতোই বড় ছিলেন। বাইবেলের প্রমাণ তো আগেই দিয়েছি। এবার এই সুরা সাফফাত থেকেই প্রমাণ হবে যে ইসহাক (আঃ), ইসমাইল (আঃ) এর চেয়ে প্রায় ১৪ বছরের ছোটো ছিলেন আর ইসমাইল (আঃ) কেই কোরবানী দেয়া হয়; তবে সেজন্যে আলোচ্য সুরা সাফফাতের আরেকটা বেশী আয়াত পড়তে হবে, যা ভ্যাগাবন্ড জ্ঞানপাপীর মতো ভন্ডামি করে তার আলোচনায় বাদ দিয়ে গেছেন। সুরা সাফফাতে ১১২ নং আয়াতে বলা আছে,
আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছি ইসহাকের, সে সৎকর্মীদের মধ্য থেকে একজন নবী।  (وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَقَ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ )
এবার একসাথে ৯৯ থেকে ১১২ পড়ে দেখুন;
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে একসহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলামঅতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন।আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছি ইসহাকের, সে সৎকর্মীদের মধ্য থেকে একজন নবী।
এখানে ঘটনার যে পরম্পরা দেখা যাচ্ছে তা হলো,
১। ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে এক সৎপুত্রের আর্জি করাতে আল্লাহ তাঁকে এক সহনশীল পুত্র দান করলেন।
২। এরপরে সে পুত্র যখন চলাফেরা করার উপযুক্ত হলো তখন তাকে কোরবানী করার আদেশ দেয়া হয়।
৩। কোরবানী করার আদেশের পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হবার ফলে আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) কে প্রতিদান হিসেবে দিলেন, প্রতি সালাতে তাঁর প্রতি সালাম বর্ষণ আর ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ।
এখন উপরের আন্ডারলাইন করা অংশটুকু কেবল পড়ুন, প্রথমে এক সহনশীল পুত্রের সংবাদ দেয়া হলো, আর শেষে ইসহাক (আঃ) এর সুসংবাদ দেয়া হলো। এতে কী কারুর কোনো সন্দেহ থাকার কথা যে যদিও প্রথম সন্তান, অর্থাৎ যাঁকে কোরবানী দেয়া হলো, তার নাম উল্লেখ না থাকলেও সেই আসলে ইসমাইল (আঃ); কেননা ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ এর পরে দেয়া আছে, যখন পিতা ইব্রাহীম (আঃ) সন্তান কোরবানীর পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হলেন। আর এই বিবরণ থেকে এটা বেশ বোঝা যায় যে ইসমাইল (আঃ), ইসহাক (আঃ) এর প্রায় ১৪ বছরের বড় ছিলেন, কেননা যখন সন্তান চলাফেরার উপযুক্ত হয় তখন তাকে কোরবানী দেয়া হয়।
তো পাঠকগণ কোরান অনুসারেই প্রমাণ হলো যে আসলে ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানী দেয়া হয়েছিল। আর এটাও প্রমাণ হলো উর্বর মস্তিষ্কের অধিকারী ব্রহ্মাচারী ভ্যাগাবন্ড ভবঘুরে আসলে এক মহাভন্ড, যে ইচ্ছে করেই জ্ঞাণপাপীর মতো একটা আয়াত কম দেখিয়ে সবাইকে গেলাতে চাচ্ছে যে, যেহেতু কোরানে ইসমাইল (আঃ) এর নাম দেয়া নাই তাই তার উর্বর মস্তিষ্কের উপজাত ও কল্পিত ৩ বছরের অনুজ ইসহাক (আঃ) কেই নাকি কোরবানী দেয়া হয়েছিল। ভবঘুরের এমন ভান্ডামী মার্কা ল্যাংড়া যুক্তিকে আবার মুক্তমনের অধিকারীরা থাম্বস আপ উপহার দেন, আর ব্রাশ ফায়ারের ইমো দিয়ে বলে বলেন, “সবতো ফাটায়া ফেললেন!!!হাসবো না কাঁদবো, একটু বলুনতো পাঠকেরা।



















কৃতজ্ঞতাঃ http://shodalap.org/



©এম আহমদ
©শামস
©এস এম রায়হান
©শাহবাজ নজরুল
©ইমরান হাসান

No comments:

Post a Comment