১০ টি বিতর্কিত বিষয়ে
প্রশ্ন এবং উত্তর
১/ ইসলাম কি গণতন্ত্র সমর্থন করে?
উত্তরঃ না, কখনোই না। গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে কুফর। প্রায় সকল উলামা এ বিষয়ে এক মত হয়েছেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এতে লিপ্ত হওয়ার বিধান নিয়ে মতভেদ থাকতে
পারে,
কিন্তু এটা যে কুফর এ ব্যাপারে কিছু বিচ্ছিন্ন মতাধারী আলিম বাদে উম্মাতের
সকল উলামা একমত হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু দুঃখজনক এই যে গণতন্ত্রের নামে চোষণব্যবস্থাকে অজ্ঞ মুসলিমরা
সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, ইসলামের সাথে এর সামঞ্জস্যতা প্রমাণ করতে
নানা রকম কুযুক্তি নিয়ে এসে ইনিয়ে বিনিয়ে একে জায়েজ করার প্রাণপণ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। রাজনীতির ব্যাপারে ইসলামের মৌলিক নীতি রয়েছে। সুতরাং যারা ইসলামের দেয়া রাজনীতি বাদ দিয়ে অন্য কোনো মতবাদের
রাজনীতিকে সমর্থন করবে তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে
অস্বীকার করছে, যদিও মুখে তা প্রকাশ করছে না।
গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যা জনগণের দ্বারা, জনগণের
জন্য। জনগণ আইন তৈরি করবে জনগণের জন্য। কিন্তু ইসলাম বলে বিধানদাতা আল্লাহ, আর
সেই বিধান মানুষের জন্য। আল্লাহ ছাড়া
আর কোনো বিধান দাতা নেই। আল্লাহর জমিনে একমাত্র আল্লাহর আইন চলবে। মানুষের বানানো আইন কুফর। অথচ গণতন্ত্র মানুষকে সেই কুফরের দিকে ডাকে। গণতন্ত্র বলে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। এতো জঘন্য কুফরী নীতি থাকার পরেও ইসলাম এটাকে কি করে সমর্থন জানাতে
পারে?
বরঞ্চ এর বিরুদ্ধে ইসলাম যুদ্ধ ঘোষণা করে। সকল রকম কুফর আর জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটনের জন্য ইসলামের আগমন।
গণতন্ত্র শব্দটা যদিও শ্রুতিমধুর, কিন্তু
এটাই সকল জুলুমের শিকড়। মিষ্টি মিষ্টি
কথার আড়ালে এটা দিয়ে জালেমদের স্বার্থসিদ্ধি হয়। গণতন্ত্র এক কুফর না, বরং হাজার কুফরের আহ্বানকারী। গণতন্ত্র যদি কুফর নাও হতো বিজাতীয় মতবাদ হিসেবে এটাকে গ্রহণ করা
জায়েজ হতো না।
সুতরাং যারা এই কুফর সম্পর্কে অবগত হবেন তাদের জন্য এর প্রতি ঘৃণা
রাখা,
বিরোধিতা করা (মন থেকে হলেও), এর সমর্থকদেরও সমর্থন না দেয়া এবং মানুষকে এ সম্পর্কে জানানো অতীব জরুরী।
আল্লাহ আমাদেরকে এই কুফর থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন।
২/ জাতীয়তাবাদ বা বাঙালী হিসেবে গর্ববোধ করা
ইসলামের দৃষ্টিতে কেমন?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সরাসরি হাদিস আছে। সুতরাং এটা যে জাহেলিয়াত, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নাই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতার কারণে জাতীয়তাবাদ সমর্থন করছে
এবং এর দিকে মানুষকে আহ্বান করছে।
ইসলামে সকল প্রকার জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ এবং ইসলামের বাইরে সকল
মতবাদ নিষিদ্ধ। তবে নৃতাত্ত্বিক পরিচয়কে ইসলাম অস্বীকার করে না, কিন্তু এ নিয়ে
বাড়াবাড়ি বা গর্ববোধ অনুৎসাহিত করে।
বাঙালী হিসেবে গর্ববোধ করার কিছু নাই। আল্লাহ যদি আমাদের ইংরেজ বানাতেন তবু গর্ব করার কিছু থাকতো না। নিজ
মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা কিংবা নিজ এলাকার মানুষের প্রতি দরদ থাকা একটি সাধারণ
বিষয়; ইসলামে এটা নিষিদ্ধ না। নিষিদ্ধ হচ্ছে জাতীয়তাকে দ্বীন হিসেবে নেয়া,
বাড়াবাড়ি করা।
আশা করি ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে।
৩/ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ, মুসলিমদের দেশপ্রেমিক হতে হবে
ইত্যাদি কথা শোনা যায়, এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক?
উত্তরঃ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ এটা রাসূলের নামে বানানো জাল
হাদিস। এটা উদ্ভাবন করে যে রাসূলের নামে চালিয়ে দিয়েছে তার উপর আল্লাহর লানত।
ইসলামে জাতীয়তাবাদ নিষিদ্ধ, আর এর ভিত্তিতে যে বর্ডার হয় সেটাই দেশ, এমন দেশকে
ভালোবাসা কি করে জায়েজ হতে পারে? তার উপর গণতন্ত্র সহ মানবরচিত আইন তো আছেই।
একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন, দেশ বলতে শুধু ভূমি বোঝায়
না, বরং রাষ্ট্রযন্ত্রের কারণে যে দেশ সেই দেশকে ভালোবাসা ইসলাম সমর্থন করে না।
মুসলিমদের উচিৎ নয় ইসলাম বাদে অন্য মতবাদে গঠিত কোনো দেশকে ভালোবাসা। বরং কুফরী
মতবাদে জর্জরিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঘৃণা করা, বিরোধিতা করা কর্তব্য। অনেকে এর সাথে
ভূমিকে গুলিয়ে ফেলেন। ইসলামের সাথে ভূমির কোনো শত্রুতা নেই, বরং দেশপ্রেম তার
রাষ্ট্রযন্ত্রের কারণে হারাম, ভূমির জন্য না। ভূমির প্রতি ঘৃণা নাই। কারণ এই
ভূমিতে শরীয়াহ আইন কায়েম হলে সেই শরীয়াহ রাষ্ট্রকে ভালোবাসা ঈমানের দাবিতে পরিণত
হয়।
সুতরাং যারা ভারতীয় মুসলিম তারা ভারতের মত কাফির রাষ্ট্রকে
ভালোবাসবে না বরং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঘৃণা করবে, যারা বাংলাদেশি মুসলিম বা ইংরেজ
মুসলিম তাদের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। এরকম দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ নয় বরং ঈমানের
জন্য হুমকিস্বরূপ।
৪/ মুক্তিযুদ্ধ কি জিহাদ?
মুক্তিযুদ্ধকে জিহাদ বলে কিছু পেটজীবী আলেম দ্বীনকে বিক্রি
করে দিচ্ছে, আর এতে কত মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এক কথায় সার্বিকভাবে
মুক্তিযুদ্ধ জিহাদ ছিল না। যারা জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র আর সব বাতিল মতবাদের জন্য
যুদ্ধের দিকে আহ্বান করেছে বা নিহত হয়েছে তাদেরকে শহীদ বলা সত্যিকারের শহীদদের
অপমান করার শামিল। এদের মৃত্যু বরং নিকৃষ্ট মৃত্যু।
তবে যে সকল মুসলিম নিজেদের সম্পদ, পরিবার কিংবা মহিলাদের
ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছে তাদের মৃত্যুকে শাহাদাত বলা যেতে পারে। কিন্তু
বাংলাদেশ গঠনের নামে মুসলিমদের মাঝে গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা না মুজাহিদ আর না
শহীদ। জালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আর মুসলিমদের বিভক্ত করে রক্তপাত ঘটানো এক বিষয়
নয়। সবাই সবার নিয়ত নিয়ে চলে গেছে। এ নিয়ে অতিরিক্ত বলার কিছু নাই।
মুক্তিযুদ্ধকে জিহাদ তো বলা দূরে থাক, এর সাথে ইসলামের কোনো
সম্পর্কই নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কিছু ইসলামপন্থী দাবিদার ভাই মুক্তিযুদ্ধকে
জিহাদ, স্বাধীনতার সাথে ইসলামের সম্পর্ক ইত্যাদি প্রমাণ করতে নিকৃষ্ট পন্থা
অবলম্বন করছেন। আল্লাহ আমাদের এবং তাদের হেদায়েত দিন।
৫/ বাংলাদেশের ব্যাপারে মুসলিমদের কর্তব্য কি?
উত্তরঃ এই বাংলার ভূমিতে শরীয়াহ কায়েম করাই মুসলিমদের
কর্তব্য। সাইয়েদ আহমাদ শহীদের অনুসারী এবং হাজী শরীয়তুল্লাহ ও তীতুমীরের সেই
প্রচেষ্টা আমাদেরকে এখনো চালিয়ে যেতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রত্যেকটি
ভূমিতে কালেমাখচিত পতাকা উড়ানো বিশ্বমুসলিমের কর্তব্য।
৬/ ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতা কেমন?
উত্তরঃ এটা কুফর।
৭/ মানবরচিত আইনকে (যেমন
বাংলাদেশের সংবিধান) সমর্থন দেয়া, শ্রদ্ধা
করা কিংবা স্বীকার করে নেয়া কেমন?
উত্তরঃ কুফরকে সমর্থন দেয়া তো কুফর-ই হয়। আহলে সুন্নাতের অধিকাংশ উলামার মতে যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে
মানবরচিত আইনে শাসন বিচার ফয়সালা করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। এটা এতো ভয়াবহ বিষয়। আর এটাকে সমর্থন
দেয়া,
শ্রদ্ধা করা কত ভয়াবহ হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৮/ আইনস্টাইন, নিউটন,
রবীন্দ্রনাথ এদের দুনিয়াবী অবদানের কারণে শুধু ভালোটুকু পছন্দ করা ইসলামের
দৃষ্টিতে কেমন?
উত্তরঃ একজন কাফিরের বিভিন্ন অবদান থাকতে পারে, বিজ্ঞান,
মানবসেবা ইত্যাদি। কিন্তু এই অবদানের
কারণে তাদের কাজটাকে ভালোবাসা কিভাবে বৈধ হতে পারে যেখানে কিনা ‘আল্লাহর
জন্য ভালোবাসা’ ছাড়া অন্য কোনো ভালোবাসা বৈধ নয়। এটা তো বরং ‘নফসের জন্য ভালোবাসা’। তাদের থেকে শিক্ষা নেয়া যায়, তাদের বই পড়া যায়,
কিন্তু তাদের (কথিত) অবদানের
কারণে ভালোবাসা মূলত নফসের বা প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর আমরা যেটাকে অবদান মনে করছি সেটা দুনিয়ার প্রয়োজন মাত্র, আল্লাহর
কাছে এর কোনো মূল্য নেই। কোনো কাফির
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রোমট করা একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্যের সাথে যায় না। যারা তাদের ভালোবাসে হাশরের ময়দানে তাদের-ই সঙ্গী
হতে হবে।
৯/ ইসলামকে কটূক্তিকারী ব্লগার, তথাকথিত লেখক, কবিদের হত্যা করা কেমন?
উত্তরঃ এটা খুব বরকতময় কাজ, বিলুপ্তপ্রায় সুন্নাহ। এটার পুনরুজ্জীবনে যেসব ভাই কাজ করেছেন এবং জালেমের কারাগারে নিক্ষেপিত
হয়েছেন আল্লাহ তাদের হেফাযত করুন। শাতিমে রাসূল
বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারীর রক্ত হালাল, আর
সেই অপবিত্র রক্ত বইয়ে দেয়া মুসলিম ব্যক্তিটি সৌভাগ্যবান। সুতরাং বাংলাদেশে যে ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঘটে তাকে সমর্থন জানানো
প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। আর যারা এর
বিরোধিতা করে তারা যে মুনাফিক তাদের মুখোশ তারা নিজেরাই খুলে ফেলেছে।
১০/ ইসলামী গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাস্তবতা
কি?
উত্তরঃ গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েম যে সম্ভব না তা আর বিশেষ
করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সব বিষয় স্পষ্ট, বাস্তবতা সবাই জানি। অনেকে এরদোয়ানের
কথা বলবে, কিন্তু তাদের জানা উচিৎ এরদোয়ান ইসলাম নয় বরং সেকুলারিজমের খাপে আটকানো
ইসলাম কায়েম করেছেন। এতো শ্রম পরিশ্রম জেল যুলুমের পর মাত্র ৫ বছরের জন্য ইসলাম
কায়েমের স্বপ্ন যারা দেখেন তাদের চেয়ে বোকা আর কে আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ত্যাগ করলে এরুপ হওয়াই স্বাভাবিক।
৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত উপমহাদেশে ইসলামী রাজনীতি চলছে, অথচ আজ
পর্যন্ত ১০ পারসেন্ট ভোট পাওয়ার নজীর তাদের নেই, না পাকিস্তানে, না বাংলাদেশে, আর
ভারত তো দূরের কথা। তবু গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে ৫০০ বছর পরে হলেও এরা ৫ বছরের
জন্য ইসলাম কায়েম করতে রাজি তবু জিহাদ করতে রাজি নয়। জিহাদ কিভাবে হবে সেটা পরের
কথা, কিন্তু দারুল হারবে জিহাদ যে ফরজ হয়ে যায় এটা অস্বীকার করার উপায় আছে কি?
সুতরাং জিহাদ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
দেখানো পথ। এ পথ ছেড়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনীতি করে ইসলাম কায়েম যে দিবাস্বপ্ন তা
বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসলেও সেই একই সিস্টেমের মধ্যে
বন্দী থাকতে হয় যে সিস্টেমকে গুড়িয়ে দিতে ইসলামের আগমন। গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েম
করা যায় না, বাস্তবতা এটাই, এটা মাথায় রেখেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা উচিৎ। কিন্তু
আজকাল কিছু গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে, এটা নিতান্তই
একগুঁয়েমি আচরণ। তাদের ধারণা গণতন্ত্র ছাড়া ইসলাম কায়েম একেবারেই সম্ভব না। অথচ
গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের একটা উদাহরণ তারা দিতে পারবে না। তাই হে গণতান্ত্রিক
ইসলামপন্থী ভাইয়েরা, রাজনীতি করার আগে বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিন এরপর পদক্ষেপ
নিন।
No comments:
Post a Comment