Notes
02
হাদিস
তাফসীর – “… বল, আমি
আল্লাহ্র উপর ঈমান আনলাম, এবং এরপর এর উপর দৃঢ় ও অবিচল থাকো”
সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ আস-সাকাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ “আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি চূড়ান্ত
কথা বলুন যে সম্পর্কে আমার আপনার পরে (অন্য বর্ণনায় রয়েছে –‘আপনি ছাড়া’) আর কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না।’ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘বল,
আমি আল্লাহ্র উপর ঈমান আনলাম,
এবং এরপর এর উপর ইস্তিকামা অবলম্বন করো (দৃঢ় ও অবিচল থাকো)।’ ”
(মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
৬২/৩৮; মুসনাদে
আহমাদ – হাদিস
২/৪১৩)
হাদিসটির ব্যাখ্যা
সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ আস-সাকাফি (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর কাছে যা জানতে চেয়েছিলেন –“ইয়া
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম), আমাকে
ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি চূড়ান্ত কথা বলুন যে সম্পর্কে আমার আপনার পরে (অন্য
বর্ণনায় রয়েছে –‘আপনি
ছাড়া’) আর
কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না।”
এর অর্থ হল, তিনি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর কাছে থেকে এমন একটি ব্যাপক উপদেশ জানতে চেয়েছিলেন, যাতে করে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরে তার আর কারো
কাছে জানার প্রয়োজন না হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, “বল
– আমি
আল্লাহ্র উপর ঈমান আনলাম, এবং
এরপর এর উপর ইস্তিকামা অবলম্বন করো (দৃঢ় ও অবিচল থাকো)।”
এ হাদিসটি পাওয়া যায় আল্লাহ্র এ পবিত্র বাণী থেকে,
إِنَّ
الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّـهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ
الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ
الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ ﴿٣٠﴾
“নিঃসন্দেহে, যারা বলে ‘আমাদের রব (একমাত্র) আল্লাহ’, অতঃপর তারা ইস্তিকামা (আল্লাহ যেসব কাজ
হারাম করেছেন তা থেকে বিরত এবং যেসব কাজ আদেশ করেছেন সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে
আল্লাহ্র একত্ববাদের উপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকা) অবলম্বন করে, তাদের কাছে (তাদের মৃত্যুর সময়)
ফেরেশতারা নাযিল হয়ে বলবে, ‘ভয়
পেয়ো না, দুঃখও
করো না ! সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো যার ব্যাপারে তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া
হয়েছিলো।’ ” (সূরা
ফুসসিলাত, ৪১
:৩০)
إِنَّ
الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّـهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ
وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٣﴾ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا
جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿١٤﴾
“নিঃসন্দেহে, যারা বলে ‘আমাদের রব (একমাত্র) আল্লাহ’, অতঃপর তারা ইস্তিকামা (আল্লাহ যেসব কাজ
হারাম করেছেন তা থেকে বিরত এবং যেসব কাজ আদেশ করেছেন সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে
আল্লাহ্র একত্ববাদের উপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকা) অবলম্বন করে, না তারা ভয় পাবে অথবা দুঃখ পাবে
(পরকালে)। তারাই হবে জান্নাতের অধিকারী,
সেখানে তারা চিরদিন থাকবে,
এ হচ্ছে তাদের সেই কাজের পুরস্কার যা তারা (দুনিয়ায়) করে
এসেছে।” (সূরা
আল আহকাফ, ৪৬
: ১৩-১৪)
فَاسْتَقِمْ
كَمَا أُمِرْتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا ۚ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ
بَصِيرٌ ﴿١١٢﴾
“অতএব
(হে নবী), তোমাকে
যেমনি করে (সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার) আদেশ দেওয়া হয়েছে তুমি ইস্তিকামা অবলম্বন
করো, তোমার
সাথে যারা (তাওবা করে) ফিরে এসেছে তারাও,
তোমরা কখনো সীমালঙ্ঘন করো না,
তোমরা
যা কিছু করছ আল্লাহ অবশ্যই তার সবকিছু দেখছেন।” (সূরা হুদ,
১১ :১১২)
আল্লাহ তার রাসুল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এবং সাহাবীদেরকে
ইস্তিকামা অবলম্বন করার (দ্বীনের উপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকার) এবং সীমালঙ্ঘন না করার
জন্য আদেশ দিয়েছেন। আর তিনি তাদের সব কাজের খবর জানেন। আল্লাহ আরও বলেছেন,
فَلِذَٰلِكَ
فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ۖ
“অতএব
(হে নবী), তুমি
(মানুষদের) এ (দ্বীনের) দিকে ডাকতে থাকো,
তোমাকে যেভাবে আদেশ দেওয়া হয়েছে সেভাবেই এর উপর ইস্তিকামা
অবলম্বন করো, ওদের
খেয়াল খুশীর অনুসরন করো না …” (সূরা
আশ শুরা, ৪২
:১৫)
কাতাদাহ বলেন, “রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) কে তাওহিদের উপর ইস্তিকামা অবলম্বনের আদেশ দেওয়া হয়েছিলো।” আল্লাহ আরও বলেছেন,
قُلْ
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـٰهُكُمْ
إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ ۗ وَوَيْلٌ
لِّلْمُشْرِكِينَ ﴿٦﴾
“(হে
নবী,) তুমি
বলো, আমি
তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু
আমার উপর (এ মর্মে) ওহী নাযিল হয় যে,
তোমাদের মাবূদ হচ্ছে একজন,
অতএব তোমরা ইস্তিকামা অবলম্বন করো এবং তার কাছেই ক্ষমা
প্রার্থনা করো।” (সূরা
ফুসসিলাত, ৪১
:৬)
ইস্তিকামা’র
(দৃঢ় অবিচল থাকা) সংজ্ঞা
ইস্তিকামা বলতে বুঝায় সঠিক পথ থেকে ন্যূনতম বিচ্যুতি না ঘটিয়েই
এই পথ আঁকড়িয়ে ধরে থাকা। সৎ কর্ম করা (গোপনে বা প্রকাশ্যে) এবং হারাম কাজ থেকে
বিরত থাকা ইস্তিকামার অন্তর্ভুক্ত। এভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সেই দৃঢ় থাকার উপদেশের
মধ্যে দ্বীনের সকল ভাল বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত হল।
আল্লাহর বানীঃ “অতএব
তোমরা ইস্তিকামা অবলম্বন করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো” – এই আয়াত ইঙ্গিত করে যে, একজন ব্যক্তির ইস্তিকামার ক্ষেত্রে
ঘাটতি থাকতে পারে। এ কারনে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য যাতে
করে ব্যক্তির ইস্তিকামা পরিপূর্ণ হতে পারে। এখানে বিষয়টি রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) মু’আয
(রাঃ) কে যা বলেছিলেন তার মতো – “যেখানেই
থাকো না কেন আল্লাহ্কে ভয় করো এবং পাপ কাজ হয়ে গেলে সৎ কর্ম করো, যা তোমার সেই পাপ কাজকে মুছে দিবে।” (তিরমিযি –
কিতাব আল বির ওয়াস সিলাহ,
হাদিস ১৯৮৭; তিনি
বলেছেন যে হাদিসটি নির্ভরযোগ্য হাদিস)
পূর্ণাঙ্গ ইস্তিকামা ও নিকটবর্তী (কাছাকাছি) ইস্তিকামা
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দৃঢ়
অবিচল থাকো এবং নির্ভুল হওয়ার চেষ্টা করো।”
(বুখারি – কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
৩৯; মুসলিম
– কিতাব
সিফাত আল মুনাফিকিন, হাদিস
২৮১৬)
ইস্তিকামা বলতে বুঝায় কথা,
কর্ম ও নিয়্যত উত্তমরূপে করা।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে আদেশ করেছিলেন আল্লাহ্র কাছে হিদায়াত ও ইস্তিকামার
ব্যাপারে দুয়া করার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেন, “মনে রাখবে, ইস্তিকামা হল নিখুঁতভাবে তীর নিক্ষেপের
মতো, আর
হিদায়াত হল সঠিক পথটি গ্রহণ করার মতো।”
(মুসলিম – কিতাবুয
যিকর ওয়াদ দুয়া, হাদিস
৭৮/২৭২৫)
নিকটবর্তী ইস্তিকামা হল পূর্ণাঙ্গ ইস্তিকামার জন্য প্রচেষ্টা
করা, কিন্তু
ব্যক্তি সেটা করতে পারে না। ব্যক্তির উচিত ইস্তিকামা অবলম্বনের ব্যাপারে নিয়্যত
রাখা। ব্যক্তি কখনো পূর্ণাঙ্গ ইস্তিকামা অবলম্বন করতে সক্ষম নয়, এর প্রমাণ হল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর হাদিসঃ
“হে
লোকসকল, তোমরা
আমার সব আদেশই সম্পাদন বা বহন করতে পারবে না। তবুও তোমরা ইস্তিকামা অবলম্বন করতে
থাকো এবং নিখুত হওয়ার চেষ্টা করো।”
(আবু দাউদ – কিতাব
আস সালাহ, হাদিস
১০৯৬; মুসনাদে
আহমাদ – হাদিস
৪/২১২; ইবন
খুযাইমাহ তার সাহিহ (১৪৫২) তেও বর্ণনা করেছেন)
এর অর্থ হল, ব্যক্তির
উচিত নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা, কারন
কেউই পরিপূর্ণভাবে ইস্তিকামা অবলম্বন করতে পারবে না।
ইস্তিকামার সারমর্ম
ইস্তিকামার সারমর্ম হল,
আল্লাহ্র একত্ববাদের উপর অন্তরকে ইস্তিকামা অবলম্বন করতে হবে; যেমনটি আবু বকর আস সিদ্দিক (রাঃ) এবং
অন্যান্যরা আল্লাহ্র এই আয়াতের ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেছেন –
إِنَّ
الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّـهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ
وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٣﴾
“নিঃসন্দেহে, যারা বলে ‘আমাদের রব (একমাত্র) আল্লাহ’, অতঃপর তারা ইস্তিকামা (আল্লাহ যেসব কাজ
হারাম করেছেন তা থেকে বিরত এবং যেসব কাজ আদেশ করেছেন সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে
আল্লাহ্র একত্ববাদের উপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকা) অবলম্বন করে …” (সূরা আল আহকাফ, ৪৬ :১৩)
তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন দিকে মনোযোগ দিবে না। একবার যদি
অন্তর আল্লাহ সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান লাভ করে,
তাকে ভয় করে, ভালবাসে, সম্মান করে, তাকে ডাকে, তার সম্পর্কে আশা করে এবং তার প্রতি
ভরসা রাখে; তবে
অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য করবে না। অন্তর হল সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
রাজা যেখানে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার সৈনিক। রাজা যদি একবার দৃঢ় অবিচল হয়ে যায়, তবে তার সৈন্যরা ও অধিনস্তরা তার অনুসরন
করবে এবং ঠিক তার মতো হয়ে পড়বে।
ইস্তিকামার ব্যাপারে অন্তরের পর একজন ব্যক্তির সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল তার জিহবা, কারন
অন্তর যা লুকিয়ে রাখে এটি তা প্রকাশ করে। এ কারনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবীদের
ইস্তিকামার ব্যাপারে উপদেশ দেওয়ার পর তিনি তাদেরকে জিহবার ব্যাপারে ইস্তিকামার
আদেশ দিয়েছিলেন।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ্র উপর বিশ্বাসী ব্যক্তির ঈমান
অবিচল হবে না যদি না তার অন্তর দৃঢ় অবিচল হয়। তার অন্তর দৃঢ় অবিচল হবে না যদি না
তার জিহবা দৃঢ় অবিচল হয়।” (মুসনাদে
আহমাদ – হাদিস
৩/১৯৮)
আবু সাই’দ
আল খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সকালে প্রত্যেক মানুষের অঙ্গগুলো
জিহবাকে উপদেশ দেয় এবং বলে, ‘আল্লাহ্কে
ভয় করো। তুমি যদি অবিচল থাকো তবে আমরাও অবিচল থাকবো। যদি তুমি পথভ্রষ্ট হও তবে
আমরাও পথভ্রষ্ট হবো।’ ” (তিরমিযি
– কিতাবুয
যুহদ, হাদিস
২৪০৭)
হাদিসের তাফসীরটি ইমাম ইবন রজব আল-হানবালি’র কিতাব জামি'আল 'উলুম
ওয়াল হিকাম এর ইংলিশ ভার্শন থেকে ট্রান্সলেশন করা হয়েছে।
হাদিস
তাফসীর – “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর …”
‘আবদুল্লাহ
বিন ‘উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিলাম, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর
স্থাপিত – এ
ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসুল, সালাত
কায়েম করা, যাকাত
দান করা, হজ
করা এবং রামাদান মাসে সিয়াম পালন করা।”
(বুখারি
–কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
৮; মুসলিম
– কিতাবুল
ইমান, হাদিস
১৬/২১)
হাদিসটির অর্থ
হাদিসটি যে অর্থ প্রকাশ করে তা হল - দ্বীন ইসলামের ভিত্তি হল
প্রদত্ত পাঁচটি আমলের উপর, যেগুলো
দ্বীন ইসলামের পুরো কাঠামোটির ভারবহনের জন্য স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। ইসলাম ও
বস্তুগত কাঠামোর মধ্যে যে সুস্পষ্ট তুলনা এখানে প্রকাশ করা হয়েছে তা এটা ইঙ্গিত
করে যে, কোন
গঠনই একটি দুর্গ হতে পারবে না যদি এটি কোন স্তম্ভ দ্বারা সমর্থন লাভ না করে।
অনুরূপভাবে, প্রদত্ত
পাঁচটি আমল ছাড়া ইসলাম কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না, যখন কিনা অন্যান্য ইসলামিক আমলগুলো পুরো
কাঠামোর শক্তিকে আরও পরিপূর্ণ করে। এর অর্থ হল,
যদি প্রদত্ত পাঁচটি আমল ছাড়া যদি অন্য কোন ইসলামিক আমলের অভাব
হয়, তবে
কাঠামোটির শক্তি যথেষ্ট নয় বলে বিবেচিত হবে। পক্ষান্তরে, প্রদত্ত পাঁচটি আমলের অনুপস্থিতি
নিঃসন্দেহে দ্বীন ইসলামের পুরো কাঠামোটিই বিনষ্ট করে দিবে। এর ফলে, দুই সাক্ষ্য‘র অনুপস্থিতি (আল্লাহ্ও তার রসুল
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনার সাক্ষ্য) ইসলামের অস্তিত্বকে বিনষ্ট করে দিবে।
ইমাম বুখারি কতৃক বর্ণিত অপর বর্ণনায় এই দুই সাক্ষ্য‘র অর্থ পাওয়া যায় এই বর্ণনার মাধ্যমে – “দ্বীন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের
উপরঃ আল্লাহ্র ও তার রসুল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করা .....।” (বুখারি –
কিতাবুত তাফসীর,
হাদিস ৪৫১৪)
ইমাম মুসলিম থেকে আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায় এই বর্ণনার মাধ্যমে – “দ্বীন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি – আল্লাহ্র একত্ববাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য
দেওয়া .....।”
ইমাম মুসলিম থেকে পাওয়া আরেকটি বর্ণনা হল – “দ্বীন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি – আল্লাহ্র ইবাদাহ করা এবং অন্য সকল কিছুকে
প্রত্যাখ্যান করা।” (মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
১৬/১৯-২০)
এটি ইঙ্গিত করে যে,
আল্লাহ ও তার রসুল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনার
বিষয়টি ইসলামের মুল বিষয় হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে,
যেভাবে উপরোক্ত হাদিসগুলোতে এই সিদ্ধান্তে আসা গিয়েছে।
ইসলামে সালাতের অবস্থান
এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনেক হাদিস আছে
যে, যে
ব্যক্তি ফরয সালাত আদায় করা ছেড়ে দেয় সে একজন মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হবে না।
জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সালাত বর্জন করা হল একজন মুসলিম এবং
শির্ক ও কুফরীর মধ্যে অন্তরায়।” (মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
৮২/১৩৪)
মুয়ায (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ইসলাম হল সমস্ত কিছুর চুড়া এবং সালাত হল
এর স্তম্ভ।” (তিরমিযি
– কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
২৬১৬, এটি
একটি ভালো নির্ভরযোগ্য হাদিস; মুসনাদ
আহমাদ – খণ্ড
৫, পৃষ্ঠা
২৩১,২৩৭)
হাদিসটি হল একটি উপমা যা ইসলামে সালাতের অবস্থানের তুলনা করা
হয়েছে (এভাবে) যে, একটি
তাঁবুর স্থান ধ্বসে পড়লে সে তাঁবুটি সুস্পষ্টভাবেই বিনষ্ট হয়ে যাবে।
উমার বিন আল খাত্তাব (রাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করে ইসলামের জন্য তার করার কিছুই নেই।” (মুওাত্তা মালিক – কিতাবুত তাহারাহ, হাদিস ৫৩)
রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীরা এবং আলী ইবন আবি তালিব (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করলো সে ইসলাম
প্রত্যাখ্যান করলো।” (ইবন
আবি শাইবাহ -১১/৪৭, ৪৯)
‘আবদুল্লাহ
বিন শাকিক বলেন, “রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীরা সালাত বর্জন ছাড়া কোন কোন কাজকেই এমন মনে করতেন না যা
একজন ব্যক্তিকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়।”
(ইবন আবি শাইবাহ -১১/৪৭,
৪৯)
আইয়ুব আশ শিখতায়ানি বলেন,
“সালাত বর্জন নিঃসন্দেহে দ্বীন বিরোধী।” এই যথার্থ মতটি প্রথম যুগের একদল আলিম
এবং পরবর্তী আলিমগণ কতৃক গৃহীত হয়েছিলো,
তাদের মধ্যে রয়েছে ইবন আল মুবারাক, ইমাম আহমাদ এবং ইসহাক। ইসহাক বলেছেন যে
এই মতের উপর সকল আলিমগণ একমত আছেন।
মুহাম্মাদ বিন নাসর আল মারওয়াযি বলেন, “হাদিসের বেশীরভাগ আলিম যে মতটি গ্রহণ
করেছেন এটি সেই একই মত।
আলিমদের এক দল এই মতটি গ্রহণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের পাঁচটি
স্তম্ভের কোন একটি বর্জন করে সে নিজেকে একজন কাফির ব্যক্তিতে পরিণত করে। এই মতটি
পাওয়া যায় সা’ইদ
বিন জুবাইর, নাফি’ এবং আল হাকাম থেকে। এছাড়াও তা পাওয়া যায়
ইমাম আহমাদ থেকে যা তার কিছু অনুসারী গ্রহণ করেছেন। মালিকি মাযহাবের আলিম ইবন
হাবিব একই মতটি গ্রহণ করেছেন।
সালাত বর্জন যে দ্বীন বিরোধী কাজ তার দলীল হিসেবে ইমাম আহমাদ
এবং ইসহাক উল্লেখ করেছেন শয়তান কতৃক আল্লাহ্র আদেশের সেই বিরোধীতা যা সে করেছিলো
আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করার মাধ্যমে। ইমাম আহমাদ এবং ইসহাক এ ব্যাপারে বলেছেন, “তবে কোন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্কে
সিজদাহ’র
ব্যাপারটি কিরূপ হবে, যিনি
কিনা আদম থেকেও শ্রেষ্ঠ ?”
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যদি
কেউ সিজদাহ’র
আয়াত তিলাওয়াত করে এবং এরপর আল্লাহ্কে সিজদাহ করে,
তখন শয়তান কাঁদে আর বলে,
‘আমার উপর দুঃখ আপতিত হোক ! আদমের সন্তানকে আদেশ করা হল
(আল্লাহকে) সিজদাহ করার জন্য আর সে তা মান্য করলো,
যেটার জন্য তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। কিন্তু আমাকে
সিজদাহ করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিলো আর আমি তা অমান্য করলাম, যার কারনে আমাকে দোযখে প্রবেশ করানো
হবে।’ ” (মুসলিম
–কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
৮১/১৩৩)
ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আরেকটি নিকটবর্তী হাদিস এটা প্রমাণ
করে যে, যদি
কোন মূল বিষয়ের অধীনে বিভিন্ন অপরিহার্য অংশ থাকে,
তবে উক্ত মূল বিষয়টি এর কিছু অপরিহার্য অংশের অনুপস্থিতির
কারনে অবধারিতভাবে বিনষ্ট হয়ে যায় না। এই ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জন্য আলিমরা
ঈমান এবং বিভিন্ন শাখা বিশিষ্ট একটি গাছের মধ্যে তুলনা করেছেন। যদি এই গাছের কিছু
শাখা দেখতে পাওয়া না যায় বা পড়ে যায়,
তবে মূল গাছটি এরপরও সেই গাছের নামটি বহন করবে, যদিও সে গাছের কিছু শাখা অনুপস্থিত।
মহান আল্লাহ প্রায় একই উপমা উল্লেখ করেছেন কুরআনেঃ
أَلَمْ تَرَ
كَيْفَ ضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ
أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ ﴿٢٤﴾
تُؤْتِي
أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّـهُ الْأَمْثَالَ
لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ﴿٢٥﴾
“তুমি
কি দেখছ না, আল্লাহ
কিভাবে একটি রূপক ব্যাখ্যা করছেন ?
এটি একটি চমৎকার বানী - সেটা যেন একটি উৎকৃষ্ট (জাতের) গাছ, যার মূল (জমিনে) সুদৃঢ়, যার শাখা প্রশাখা আসমানে (বিস্তৃত), সেটি প্রতি মৌসুমে তার মালিকের আদেশে ফল
দান করে।” (সূরা
ইবরাহীম, ১৪
:২৪-২৫)
এই রুপকে যে ‘বানী’ ’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা হল আল্লাহ্র
একত্ববাদের ব্যাপারে সংশোধিত হওয়া,
আর ‘মূল’ বলতে বুঝানো হয়েছে মুমিন বান্দার
অন্তরের গভীরে গেথে যাওয়া ঈমানকে, আর
‘ফল’ বলতে বুঝানো হয়েছে মুমিনদের সৎ আমলকে।
রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) ইমানদার মুসলিমদেরকে খেজুর গাছের সাথে তুলনা করতে গিয়ে (দেখুন –বুখারি –
কিতাবুল ইলম, হাদিস
৬১,৬৩; মুসলিম –
মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য,
হাদিস ২৮১১) একইরকম রূপক ব্যাখ্যা করেছেন, যার কিছু শাখা পতিত হওয়ার পরও এটি একটি ‘খেজুর গাছ’ নামটিই বহন করবে।
জিহাদ এবং ইসলামের স্তম্ভ
যদিও জিহাদ হল ইসলামের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল, কিন্তু এটা ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত
এ হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি।
মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ইসলাম
হল সবকিছুর চুড়া, আর
জিহাদ হল ইসলামের কাঠামোর সবচেয়ে উঁচু প্রান্ত।”
(তিরমিযি – কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
২৬১৬; মুসনাদ
আহমাদ – খণ্ড
৫, পৃষ্ঠা
২৩১,২৩৭)
এর অর্থ হল, ইসলামের
ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জিহাদ নেই,
এর কারন হলঃ
প্রথমতঃ অধিকাংশ আলিমরা এ ব্যাপারে একমত যে জিহাদ একটি
সমষ্টিগত দায়িত্ব (ফারযে কিফায়াহ) এবং এটা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ন্যায় একটি
ব্যক্তিগত দায়িত্ব (ফারযে ‘আইন)
নয়।
দ্বিতীয়তঃ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত জিহাদের ফারযিয়্যাহ সমাপ্ত হবে
না, যেমনটি
জিহাদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাবের পর আর দুনিয়ার বুকে একমাত্র ইসলামই
দ্বীন হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, যখন
কিনা সকল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। এটি ইসলামের সেই পাঁচটি স্তম্ভের মতো সকল
ইমানদারদের জন্য ব্যক্তিগত ফরয আমল নয়,
যাদেরকে সেগুলো মেনে চলতে হবে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত বা
কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত।
হাদিসের তাফসীরটি ইমাম ইবন রজব আল-হানবালি’র কিতাব জামি'আল 'উলুম
ওয়াল হিকাম এর ইংলিশ ভার্শন থেকে ট্রান্সলেশন করা হয়েছে।
হাদিস
তাফসীর – “দ্বীন হল নাসিহাহ”
আবু রুকাইয়্যাহ তামিম বিন আউস আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে
যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সালাম) বলেছেন, “দ্বীন
হল নাসিহাহ।” লোকেরা
জিজ্ঞেস করলো, “কার
জন্য (নাসিহাহ) ?” রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সালাম) বললেন, “আল্লাহ’র জন্য,
তার কিতাবের জন্য,
তার রসূলের জন্য,
মুসলিমদের নেতাদের জন্য আর মুসলিম জনসাধারণের জন্য (নাসিহাহ)।”
(মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান)
হাদিসটির গুরুত্ব
যে হাদিসগুলোর উপর ফিকহশাস্ত্র বিশেষভাবে নজর দেয়, এ হাদিসটি সে হাদিসগুলোর একটি।
আল-হাফিজ আবু নু’আইম
বলেছেন, “এ
হাদিসটির এক মহান অবস্থান রয়েছে।”
নাসিহাহ করা – সুন্নাহতে
এর অবস্থা
মুসলিমদের জন্য নাসিহাহ করার বিষয়টি অনেক হাদিসেই পাওয়া যায়, এদের মধ্যে কিছু হাদিসে মুসলিমদের
নেতাদের জন্য আর কিছু হাদিসে মুসলিম নেতাদের তাদের অধীনস্তদের জন্য নাসিহাহ করার
বিষয়টি এসেছে।
(১)
মুসলিমদের জন্য সাধারণভাবে নাসিহাহ করা
জারির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন, “আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সালাম) এর কাছে সালাত কায়েম
আর যাকাত আদায়ের জন্য বাইয়াত করেছি।”
(বুখারি – কিতাবুল
মাওাকিত আস-সালাহ, মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান)
এ হাদিসটিতে নাসিহাহটি সকল মুসলিমদের জন্যই।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সালাম) বলেছেন, “এক
মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে …”,
আর এই ছয়টি হকের মধ্যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সালাম) বলেছেন – “যদি সে তোমার কাছে নাসিহাহ চায় তবে তুমি
তাকে নাসিহাহ করবে।” (মুসলিম
– কিতাবুস
সালাম)
(২)
কতৃত্বশীল লোকদের নাসিহাহ করা
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সালাম) বলেছেন, “নিঃসন্দেহে
আল্লাহ তিনটি বিষয়ে তোমাদের উপর খুশী হোন আর তিনটি বিষয়ে তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট
হোন। (যে বিষয়গুলোর জন্য) তিনি তোমাদের উপর খুশী হোন (সেগুলো হল) – তার ইবাদাত করা আর তার সাথে কিছুকে
অংশীদার না করা, আল্লাহ’র রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে রাখা আর বিভক্ত না
হওয়া, এবং
যাদেরকে আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে দায়িত্বশীল করেছেন তাদের সাথে পরস্পর
আন্তরিক থাকা …” (আল-আদাবুল
মুফরাদ, সাহিহ
ইবনে হিব্বান)
(৩)
কতৃত্বশীল ব্যক্তিদের অধীনস্তদের জন্য নাসিহাহ করা
মাকিল বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সালাম) বলেছেন, “কোন
বান্দাকে আল্লাহ যদি জনগনের নেতৃত্ব দান করেন আর সে কল্যাণকামিতার সাথে তাদের
তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে
সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (বুখারি
– কিতাবুল
আহকাম, মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান)
আল্লাহ তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, নবীরা তাদের জনসাধারণকে নাসিহাহ করতেন, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে নূহ এবং সালিহ (আ’লাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর উক্তি – “দ্বীন
হল নাসিহাহ” – এই
উক্তি দিয়ে জানা যায়, নাসিহাহ
অন্তর্ভুক্ত করে ইসলাম, ঈমান
ও ইহসানের শাখাগুলোকে; হাদিসে
জিব্রাইলে ইসলাম, ঈমান
ও ইহসানকে একত্রে “দ্বীন” আখ্যায়িত করা হয়েছিলো।
সঠিক নাসিহাহ করাটা অপরিহার্য করে আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা
সম্ভাব্য সবচেয়ে সম্পূর্ণ উপায়ে সম্পাদন করাকে,
যেটা হল ইহসান। আর এভাবেই এটা (ইহসান) ছাড়া নাসিহাহ পরিপূর্ণ
হয় না, যেটা
আল্লাহ’র
আদেশ করা পূর্ণ ভালোবাসা আর উপলব্ধি ছাড়া ঘটে না। এর জন্য প্রয়োজন নফল ইবাদাত করার
মাধ্যমে এবং হারাম ও মাকরুহ (অপছন্দনীয়) ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ’র নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা।
আল-খাত্তাবি বলেছেন,
“ ‘নাসিহাহ’ হল
এমন একটি শব্দ যেটা একটি বাক্যকে প্রকাশ করে –
উপদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করাই হল নাসিহাহ।” তিনি আরো বলেন, “ ‘নাসিহাহ’ শব্দের ভাষাগত মূলের অর্থ হল ‘বিশুদ্ধতা’।”
এটি সেই একই অর্থের,
যেমনটি বলা হয় –
“মক্ষিমল থেকে মধুকে বিশুদ্ধ করা হলো।”
সুতরাং, আল্লাহ’র জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল – আল্লাহ’র
তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসে বিশুদ্ধতা আর তার ইবাদাতে নিয়্যতের আন্তরিকতা।
আল্লাহ’র
কিতাবের জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল তার কিতাবের উপর ঈমান রাখা আর কিতাবের অনুসরণে
আমল করা।
আল্লাহ’র
রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুউওয়াতের প্রতি
ঈমান আনা আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) যা কিছু আদেশ ও নিষেধ করেছেন সেগুলো মেনে চলা।
মুসলিম জনসাধারণের জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল যেটা তাদের জন্য
উপকারী, সেটার
প্রতি তাদেরকে পথ দেখানো।
“নাসিহাহ” – এর ব্যাখ্যা
আদেশকৃত কাজের জন্য যে কোন ব্যক্তি নির্বিশেষে অন্তরের
মনোনিবেশ করাই হল নাসিহাহ। এটি দুই প্রকারের –
ফরজ ও নফল।
আল্লাহ’র
দৃষ্টিতে ফরজ নাসিহাহ হল ফরয কাজ করার ও হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে
ব্যক্তির প্রগাঢ় মনোনিবেশ করা।
নফল নাসিহাহ হল কাউকে ভালোবাসার উপর আল্লাহ’র প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেওয়া। এ
কারনে ব্যক্তি যদি এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় –
তার সামনে দুটো কাজ,
একটি আল্লাহ’র
আর অপরটি নিজের, তবে
তার উচিত হবে নিজের কাজটি স্থগিত রেখে যে কাজটি আল্লাহ’র জন্য সেটাই করা।
আল্লাহ’র
কিতাবের জন্য নাসিহাহ করা হল তার কিতাবের অবস্থানের জন্য এর প্রতি তীব্র ভালোবাসা
ও গভীর শ্রদ্ধা রাখা আর এটি বুঝার জন্য তীব্র ইচ্ছা রাখা, যেহেতু এটি সৃষ্টিকর্তার বাণী।
আল্লাহ’র
কিতাবের জন্য নাসিহাহ করার আরো অর্থ হল,
এই কিতাবের উপর গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার ব্যাপারে প্রচণ্ড
যত্নবান হওয়া, আর
এটা তিলাওয়াত করার সময় থেমে থেমে এর অর্থ খোঁজ করা যে, তার রব স্বয়ং নিজের সম্পর্কে অনুধাবনের
ব্যাপারে তার গোলামদের
জন্য কি ভালোবাসেন (অর্থাৎ, যেভাবে
তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছেন, কুরআনের
আয়াতগুলোর উপর চিন্তা করার মাধ্যমে তাকে সেভাবেই চিনে নেওয়া), আর অনুধাবন করতে পারার পর সেটার উপর আমল
করা।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নাসিহাহ করা ছিল তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আনুগত্যে, তাকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহায্য ও সমর্থন
করা, তিনি
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) সম্পদ ব্যয়ের কামনা করলে সম্পদ ব্যয় করা এবং তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালবাসায়
অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টায় উদ্যমী হওয়া।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পর তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের অনুসরণের
ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, তার
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) নীতি আর আচার-আচরণ পুনর্জীবিত করা,
তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আদেশগুলোকে সম্মান করা আর সেগুলোর উপর আমল করা, দ্বীন থেকে সুন্নাতকে বিচ্ছিন্নকারী
ব্যক্তির প্রতি অত্যন্ত রাগান্বিত হওয়া ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, আর তার প্রতিও রাগান্বিত হওয়া যে কিনা
পার্থিব লাভের জন্য রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের অনসরন করে –
যদিও সে ব্যক্তি এমনটা করার মাধ্যমে ধার্মিক হিসেবে পরিচিত হয়ে
থাকে।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নাসিহাহ করার আরো অর্থ হল –
যে ব্যক্তিই রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (সাথে দ্বীনী
সম্পর্কের) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিল,
যেমন – তার
আত্মীয়রা, বৈবাহিক
সূত্রের আত্মীয়রা, হিজরতের
সমর্থনকারীরা, অথবা
যিনি ইসলামের জন্য দিন বা রাতের এক ঘণ্টা সময়ও তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলেন আর তার
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আচার আচরণ ও পোশাকের ক্ষেত্রে তাকে অনুসরণ করেছিলেন – তাদের প্রতি ভালোবাসা রাখা।
মুসলিমদের নেতাদের (রাজনৈতিক ও আলিম) জন্য নাসিহাহ করার অর্থ
হল – তাদের
সৎ কর্মপরায়ণতা, হিদায়াত, ন্যায়বিচারের জন্য অন্তরে ভালোবাসা রাখা; আর মুসলিম নেতাদের অধীনে মুসলিমদের
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আকাংখা রাখা, আর
মুসলিমেরা তাদের কারনে বিভক্ত হলে সেটা ঘৃণা করাও।
এ নাসিহাহ করার আরো অর্থ হল –
আল্লাহ’র
আনুগত্যে তাদের মেনে চলার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ হওয়া;
আর সে ব্যক্তিদের ঘৃণা করা যারা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে
অথবা আল্লাহ’র
প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের বদলে সে নেতাদের প্রশংসা করে।
মুসলিমদের জন্য নাসিহাহ করার অর্থ হল – আপনি নিজের জন্য যা ভালবাসবেন তাদের
জন্যও সেটা ভালোবাসা, নিজের
জন্য যেটা ঘৃণা করবেন তাদের জন্যও সেটা ঘৃণা করা,
আর তাদের প্রতি সহানুভূতি ও ক্ষমাশীলতা অনুভব করা।
একজন মুসলিমের উচিত তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা, তাদের দুঃখে দুঃখিত হওয়া আর তাদের সুখে
আনন্দিত হওয়া, যদিও
সেটার ফলে তার জীবিকার ক্ষতি হয়ে থাকে;
এটা হতে পারে পণ্যদ্রব্যের দাম কমানোর মাধ্যমে, যদিও এর ফলে তার ব্যবসায় লাভ না করার
ক্ষতিটি হয়ে থাকে। একইভাবে, মুসলিমদের
ক্ষতি করতে পারে এমন অনুভূতিগুলোয় একজন মুসলিমের সাধারণভাবে অংশীদার হওয়া উচিত, আর যা তাদের কল্যাণ করে সেটাতে তার
আনন্দিত হওয়া উচিত, তাদের
অবিরাম সাফল্যেও আনন্দিত হওয়া উচিত,
এবং তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য সমর্থন করা উচিত, আর তাদের কাছ থেকে সব আঘাত বা ক্ষতিকর
কিছু দূরে সরিয়ে রাখা উচিত।
তাদের জন্য নাসিহাহ করার কিছু উপায় হল – তাদের কাছ থেকে আঘাত বা ক্ষতিকর কিছু
দূরে সরিয়ে রাখা, তাদের
মধ্যকার দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া,
অজ্ঞদের শিক্ষা প্রদান করা,
কথা বা কাজে যে ব্যক্তিই পথভ্রষ্ট হয়েছে তার কাছে ভদ্রতার সাথে
ফিরে যাওয়া, সৎ
কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে তাদের সাথে ভদ্র আচরণ করা, তাদের যে কোন দুর্নীতি দূর হওয়াটাকে
ভালোবাসা – যদিও
এর ফলে ব্যক্তির নিজের জীবনে কোন ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমনটা কিছু সালাফ বলেছিলেন, “আমি চাই এ সৃষ্টি যেন আল্লাহ’র আনুগত্য করুক, যদিও এর জন্য আমার শরীর থেকে মাংস
বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজন হয়।”
নাসিহাহ করার ধরণসমূহ
আল্লাহ, তার
কিতাব ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নাসিহাহ করার ধরণগুলোর মধ্যে একটি ধরণ আলিমদের জন্য
নির্দিষ্ট, যেমন
– কুরআন
ও সুন্নাহ দিয়ে এমন কামনা বাসনার পিছু নেওয়া যেটা একজন ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করতে
পারে আর এমন কামনা বাসনার বিরুদ্ধে প্রমাণ স্পষ্ট করা। একইভাবে, এটি অন্তর্ভুক্ত করে আলিমদের ভুলগুলো
থেকে দুর্বল বক্তব্যগুলো প্রত্যাখ্যান করা আর সেগুলোর জবাবে কুরআন ও সুন্নাহ’র দলিলগুলো স্পষ্ট করা; আর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিসগুলো থেকে
যেটা সঠিক সেটা স্পষ্ট করা, আর
হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে কারা গ্রহণযোগ্য আর কারা গ্রহণযোগ্য নয় সেটা স্পষ্ট
করার মাধ্যমে অনির্ভরযোগ্য হাদিস স্পষ্ট করা;
এবং সেই সাথে বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারীদের বর্ণনাগুলোর ভুলগুলো
স্পষ্ট করাটাও।
শ্রেষ্ঠ নাসিহাহ গুলোর মধ্যে একটি হল, যদি কোন ব্যক্তি তার ব্যাপারে নাসিহাহ
চায় তবে তাকে নাসিহাহ করা, যেমনটা
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের
মধ্যে কাউকে যদি তার (মুসলিম) ভাই তাকে নাসিহাহ করার জন্য বলে, তবে তাকে নাসিহাহ করবে।” (তিরমিযি –
কিতাবুল আদাব)
কিছু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে,
মুসলিমদের একে অপরের উপর হকগুলোর মধ্যে একটি হল মুসলিমের
অনুপস্থিতে তার জন্য নাসিহাহ করা। (দেখুনঃ তিরমিযি –
কিতাবুল জানাইয,
মুসনাদে আহমাদ)। এর অর্থ হল,
যদি কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে লোকেরা তার সম্পর্কে খারাপ কথা
বলে, তবে
একজন মুসলিমের উচিত সে (অনুপস্থিত) মুসলিমকে সমর্থন করা আর তার জন্য জবাব দেওয়া।
যদি সে (সমর্থনকারী মুসলিম) পরে সেই অনুপস্থিত মুসলিমকে দেখতে পায়, তবে তার উচিত হবে না সেই ব্যাপারটি
উল্লেখ করা। কারন কারো অনুপস্থিতিতে নাসিহাহ করাটা নাসিহাহকারীর নিয়্যতের
আন্তরিকতার দিকেই ইঙ্গিত করে, বরং
এই নাসিহাহ তার উপস্থিতিতে করা হলে তার তোষামোদ করা হবে, অথচ তার অনুপস্থিতিতে তার সাথে প্রতারণা
করা হবে।
নাসিহা করার পদ্ধতি
সালাফরা কাউকে নাসিহাহ করার ক্ষেত্রে এমনই গোপনীয়তা অবলম্বন
করতেন যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইকে নিজেদের দুজনের মধ্যেই উপদেশ
দিলো, সেটা
নাসিহাহ। কিন্তু কেউ যদি তাকে লোকদের সামনেই উপদেশ দেয়, তবে সেটা তো একটি কঠোর ভর্ত্সনা।”
হাদিস তাফসীরটি ইমাম ইবনে রজব আল-হানবালি (রাহিমাহুল্লাহ)’র কিতাব জামি’ আল উলুম ওয়াল হিকামের ইংলিশ ভার্সন থেকে
অনুবাদ করা হয়েছে।
হাদিস
তাফসির – “…প্রত্যেক আমল তার নিয়্যতের উপর নির্ভর
করে…”
আবদুল্লাহ বিন আল জুবাইর আল হুমাইদি (র.) থেকে …… আলকামাহ বিন ওয়াক্কাস আল লাইসি (র.)
থেকে বর্ণিত, উমর
ইবনে আল খাত্তাব (রা.) কে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ
“আমি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক আমল শুধুমাত্র নিয়্যতের উপর নির্ভর করে আর
প্রত্যেক মানুষ কেবল সেটাই পাবে যেটার জন্য সে নিয়্যত করে। তাই যে হিজরত করবে
দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে – তার হিজরত সেটার জন্যই হবে, যেটার জন্য সে হিজরত করবে।”
আল হুমাইদি (র.) থেকে বর্ণিত
আল হুমাইদি (র.) হলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একজন আত্মীয় এবং
সেই সাথে তিনি খাদিজা (রা.) এর বংশের লোকও। ইমাম বুখারি কুরাইশ ব্যক্তির বর্ণনাকে
সামনে রেখে তার কিতাবটি রচনা করতে চাচ্ছিলেন,
সম্ভবত এ কারনে তিনি এই কুরাইশের বর্ণনা দিয়ে তার কিতাব শুরু
করেছিলেন।
কিতাবের প্রথম অধ্যায় “ওহীর
শুরু” তে
আল হুমাইদি (র.) এর বর্ণনা দিয়ে শুরু করার আরেকটি কারন হতে পারে আল হুমাইদি (র.)
মক্কার নাগরিক ছিলেন, ঠিক
যেমনটি ছিলেন তার শিক্ষক (এই হাদিস তিনি যার থেকে বর্ণনা করেন) সুফিয়ান বিন ‘উয়াইনাহ (র.), কারন ওহী প্রথম নাযিল হয় মক্কাতেই এবং
এরপর ইমাম বুখারি এই অধ্যায়ে পরবর্তী বর্ণনা দেন মালিক থেকে যিনি একজন মাদানী, কারন পরবর্তীতে মদিনাতে ওহী নাযিল
স্থানান্তরিত হয়েছিলো।
“ওহীর
সূচনা” অধ্যায়ের
নামের সাথে হাদিসটির সম্পর্ক
ইবনে নাজ্জার বলেন,
“এই অধ্যায়ের নামকরনের সাথে সূরা আন নিসার ১৬৩ নাম্বার আয়াত এবং
এই হাদিস – উভয়েরই
সম্পর্ক আছে, কারন
আল্লাহ তার বার্তাবাহকদের প্রতি এবং সবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লম) এর প্রতি ওহী নাযিল
করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষের কর্মকাণ্ড তার নিয়্যতের উপর নির্ভর করে, যেমনটি কুরআনে বলা হয়েছেঃ
وَمَا
أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّـهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ ﴿٥﴾
‘এবং
তারা এটা ছাড়া আর অন্য কিছুর জন্য আদিস্ট হয় নি যে তারা ইখলাসের সাথে সকল বাতিল
ধর্ম ও দ্বীন বর্জনকারী এবং একমাত্র সত্য দ্বীন ইসলামকে অনুসরণকারীদের মতো ইবাদাহ
করবে ..... ’ (সূরা
আল বাইয়্যিনাহ, ৯৮
: ৫)
আবুল আলিয়াহ বলেন,
“মহান আল্লাহ্র বাণী –
شَرَعَ لَكُم
مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا
‘আল্লাহ
তোমাদের জন্য সেই দ্বীন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যার আদেশ দিয়েছিলেন তিনি নুহকে...’ (সূরা আশ শুরা, ৪২ : ১৩),
এবং তিনি তাদেরকে ইখলাসের সাথে (একনিষ্ঠভাবে) তাঁর ইবাদাত করার
আদেশ দিয়েছিলেন।”
অনেক আলিম বলেছেন যে এই হাদিসটির সাথে প্রথম অধ্যায়টির নামের
সাথে সম্পর্ক আছে, কারন
মহান আল্লাহ্র নিয়্যতের ফলে ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তার রসুল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর প্রকৃতি এমনভাবে তৈরি করেছেন যেন তা তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে
এবং তিনি সকল মিথ্যা উপাস্যকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করেন।
আবার কিছু আলিম হাদিসটির সাথে এ অধ্যায়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) রিসালাতপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই হিরা গুহায় নির্জনতা অবলম্বনের মাধ্যমে
আল্লাহ্র দিকে হিজরত করেছিলেন।
হাদিসটির গুরুত্ব
আব্দুর রহমান আল মাহদি,
ইমাম শাফিই, আহমাদ
বিন হানবাল, আলী
বিন আল মাদিনি, আবু
দাউদ, আত
তিরমিযি, আল
দারাকুতনি এবং আল কিনানি – এ
সকল ইমামগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করেছিলেন যে,
এই হাদিসটি ইসলামের এক-তৃতীয়াংশ,
অথবা কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ।
এই ব্যাপারে বায়হাকি ব্যাখ্যা করেন যে, মানুষের আমল (কাজ) সংঘটিত হয় তার অন্তর, জিহ্বা আর অঙ্গের মাধ্যমে, তাই নিয়্যত এর এক-তৃতীয়াংশ এবং আমলের
ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইমাম শাফিই বলেছেন যে এই হাদিস জ্ঞানের অনেক শাখা ধারন করে।
আরও যারা এই হাদিসটি বর্ণনা করেন
ইমাম মালিক (তার কিতাব মুওাত্তা আল মালিকে) ছাড়া সব বিখ্যাত
আলেমরা এই হাদিসটি তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য বুখারি, মুসলিম এবং নাসাঈ ইমাম মালিক থেকে পাওয়া
এই বর্ণনাটিই তাদের কিতাবে বর্ণিত করেছেন।
উমর থেকে শুরু হয়ে ইয়াহইয়া বিন সাইদ পর্যন্ত হাদিস
বর্ণনাকারীদের শুধুমাত্র একটি সনদ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে অনেক
ব্যক্তি হাদিসটি বর্ণনা করার কারনে ইয়াহইয়া থেকে অনেক সনদে এই হাদিসটির বর্ণনা
পাওয়া যায়। এছাড়াও এই হাদিসের আরও কিছু সনদ পাওয়া যায় যেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়।
তাই হাদিসের পরিভাষা অনুযায়ী এটি একটি ফারদ (একক) ধাঁচের
বর্ণনা। যেহেতু অনেক হাদিসেই এই বর্ণিত হাদিসের অর্থ পাওয়া যায়, তাই এটি মুতাওাতির মা’নাওি (অবিচ্ছিন্ন, অর্থাৎ অনেক বর্ণনা দেখা যায় যেখানে
শব্দগুলো একইরকম নয় কিন্তু হাদিসগুলো একই অর্থ প্রকাশ করে) পর্যায়ের হাদিস।
হাদিসটির ব্যাখ্যা
“ মিম্বরের
উপর দাঁড়িয়ে ”
এই মিম্বর হল মদিনাতে অবস্থিত মাসজিদ আন-নববী’র মিম্বর।
“ প্রত্যেক
আমল শুধুমাত্র নিয়তের উপর নির্ভর করে ”
এখানে আমল ও নিয়্যত বহুবচন,
অর্থাৎ প্রত্যেক আমল তার নিজস্ব নিয়্যতের উপর নির্ভর করে।
আল খুবি বলেন, “বর্ণনায়
মনে হচ্ছে তিনি ইঙ্গিত করতে চাচ্ছেন,
নিয়্যত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমনিভাবে আমলও বিভিন্ন ধরনের
হয়ে থাকে। উদাহারনস্বরূপঃ একজন ব্যক্তি কোন একটি কাজ করতে পারে এই নিয়্যতের উপর
ভিত্তি করে যে, সে
আল্লাহ্র কাছ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার জন্য তা করছে অথবা ঐ কাজের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত
কিছু পাওয়ার জন্য কাজ করছে অথবা তাঁর শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কাজটি করছে।”
অন্যান্য বর্ণনায় দেখা যায়,আমল
এর ক্ষেত্রে বহুবচন অথচ নিয়্যতের ক্ষেত্রে একবচন ব্যাবহার করা হয়েছে; যেমনটি দেখা যায় সাহিহ বুখারির কিতাবুল
ঈমান অধ্যায়ে ইমাম মালিক থেকে বর্ণিত হাদিসে –
“আমল (বহুবচন) নির্ভর করে নিয়্যতের (একবচন) উপর”; কারন বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে আমল সংঘটিত
হয় তাই আমলের ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যাবহার করা হয়েছে,
কিন্তু নিয়্যত শুধুমাত্র ইখলাস (একনিষ্ঠতা) এর উপর নির্ভর করে
তাই এটির ক্ষেত্রে একবচন ব্যাবহার করা হয়েছে।
বুখারিতে আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে আমল ও নিয়্যত উভয়ের ক্ষেত্রেই
একবচন ব্যবহার করা হয়েছে – “আমল
(একবচন) নির্ভর করে নিয়্যতের (একবচন) উপর।”
এখানে আমল বলতে বুঝানো হয়েছে ইবাদাতকে।
“ নিয়্যতের
উপর নির্ভর করে ”
“উপর” শব্দটি দিয়ে হয় এটা বুঝানো হচ্ছে যে, নিয়্যত তার আমলের অখন্ড অংশ অথবা এটিই
আমল করার পিছনে কারন।
বলা হয়ে থাকে যে এর অর্থ হল - “আমলগুলোকে
বিচার করা হয় তাদের নিয়্যতের ভিত্তিতে”
অথবা “আমল
সম্পূর্ণভাবে নিয়্যতের উপর নির্ভর করে”
অথবা “নিয়্যতের
উপর নির্ভর করে আমলের বৈধতা” অথবা
“নিয়্যত
ছাড়া কোন আমলই সম্পূর্ণ বা বৈধ নয়”
অথবা “নিয়্যতের
অনুসরনে আমল হয়ে থাকে”।
আমল বলতে সেসব কাজ বুঝানো হয় যা বিভিন্ন অঙ্গ দ্বারা সঙ্ঘটিত
হয়, এর
মধ্যে রয়েছে মুখ নিঃসৃত শব্দ আর অন্তরের আমল।
“ প্রত্যেক
মানুষ কেবল সেটাই পাবে যেটার জন্য সে নিয়্যত করে ”
ইমাম কুরতুবি বলেন,
“এখান থেকে এ ব্যাপারে দলীল পাওয়া যায় যে, নিয়্যত ও ইখলাস হল আমলের পূর্বশর্ত”, আর তিনি নিয়্যাত করাকে মুওাক্কাদাহ
হিসেবে বিবেচনা করতে চেয়েছেন।
অন্যান্য আলেমরা বলেছেন যে এই দুটি বাক্য – “আমল তার নিয়্যতের উপর নির্ভর করে” এবং “প্রত্যেক
মানুষ তাই পায় যেটার জন্য সে নিয়্যত করে”
– উভয়ই পৃথক পৃথক অর্থ প্রকাশ করে।
প্রথম বাক্যটি থেকে জানা যায় যে আমল ও নিয়্যত একে অপরের সাথে
যুক্ত, এবং
আমল তার নিয়্যতের অনুগামী হয় (অর্থাৎ নিয়্যতের অনুসরনে আমল হয়), তাই এর উপর ভিত্তি করেই বিচার করা হবে।
পরবর্তী বাক্য থেকে জানা যায়,
আমলকারী সেটা ছাড়া কিছুই পাবে না যেটা করার ব্যাপারে সে নিয়্যত
করে।
ইবন দাকিক আল ঈদ বলেন,
“দ্বিতীয় বাক্যটি এই অর্থ প্রকাশ করে যে, কোন ব্যক্তি যেটার জন্য নিয়্যত করে সে
সেটাই পাবে; উদাহারনস্বরূপ
– কেউ
একটা আমল করলো ঐ আমলের পূর্বশর্তের কারনে অথবা এমনকি সে ঐ আমল করা থেকে বিরত থাকল
কোন বৈধ গ্রহণযোগ্য অজুহাতে। সে যেটার জন্য নিয়্যত করে নি, সে সেটা পাবে না।”
হাদিসের এই বাক্যটি –
“সে যেটার জন্য নিয়্যত করে নি”
– এটা বলার মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন নির্দিষ্টভাবে অথবা
সাধারনভাবে কোন নিয়্যত না করা। সে যদি কোন নির্দিষ্ট নিয়্যত না করে, কিন্তু তার একটি ব্যাপকভাবে নিয়্যত থাকে, যা কিনা অন্তর্ভুক্ত করে সেটিকে - যেটির
ব্যাপারে সে নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করে নি;
- এক্ষেত্রে আলেমরা ইখতিলাফ করেছেন এবং এ থেকে অনেক ঘটনা উদ্ভুত
হতে দেখা যায়।
কখনো এমন হয় যে একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কাজ করে আর সে এমন
কিছু লাভ করে যার ব্যাপারে সে নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করে নি; যেমনঃ একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে
বসার আগেই ফরয অথবা রতিবাহ সালাত (আল সুনান আল রাওাতিব – ফরজ সালাতের সাথে সম্পর্কিত ১২ রাকআত
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ সালাত) আদায় করলো,
এতে প্রকৃতপক্ষে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত (মসজিদে প্রবেশ করার
পর বসার পূর্বে ২ রাকআত সুন্নাহ সালাত) আদায় করা হয়ে গেল – সে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাতের জন্য
নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করুক বা না-ই করুক,
কারন তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায়ের কারন ইতিমধ্যেই সম্পাদিত
হয়ে গেছে আর এ ‘কারন’ টা হল দুই রাকআত সালাত আদায়ের পূর্বে না
বসা।
এই ব্যক্তির উদাহরণটি সে ব্যক্তির উদাহারন থেকে ভিন্ন, যে জুমুআর দিনে জানাবাহ এর গোসল
(অপবিত্রতার গোসল) করে। শক্তিশালী অভিমত হল এটা,
এই ব্যক্তি জুমুআর দিনের সুন্নাহ গোসল করেছে বলে বিবেচিত হবে
না কারন জুমুআর গোসল একটি ইবাদাহ, যা
শুধুমাত্র শরীর পরিষ্কার করা নয়; তাই
এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়্যত থাকতে হবে আর এটা তাহিয়্যাতুল মাসাজিদ থেকে ভিন্ন, যেখানে ব্যাপক নিয়্যতই যথেষ্ট। আল্লাহই
সবচেয়ে ভাল জানেন।
ইমাম নববী বলেন,
“দ্বিতীয় বাক্যটি (‘প্রত্যেক
মানুষ কেবল সেটাই পাবে যেটার জন্য সে নিয়্যত করে’)
থেকে জানা যায়,
নির্দিষ্ট নিয়্যত করার ক্ষেত্রে এটি একটি পূর্বশর্ত; যেমন –
যে ব্যক্তিকে কাযা সালাত আদায় করতে হবে তার জন্য কেবলমাত্র
এটাই যথেষ্ট নয় যে সে কাযা সালাত আদায় করতে যাচ্ছে,
বরং তাকে এটাও নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত করতে হবে সেটি কোন
ওয়াক্তের সালাত।” এটা
স্পস্ট যে (এটা তখনই প্রযোজ্য) যখন তাকে একাধিক কাযা সালাত আদায় করতে হবে।
ইবন সূম‘আনি
বলেন, “এই
দ্বিতীয় বাক্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যেসব কাজ ইবাদাত এর অন্তর্ভুক্ত নয় সেগুলো করার
ক্ষেত্রে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন না,
যদি না সে এই কাজের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের নিয়্যত না
করে; যেমন
আল্লাহ্র ইবাদাত করার শক্তি অর্জনের নিয়্যতে খাবার গ্রহণ করা।”
অন্যান্য আলেমরা বলেছেন,
“এর অর্থ হল নিয়্যত করাকে থামিয়ে রাখা যাবে না (অর্থাৎ নিয়্যত
করা চালিয়ে যেতে হবে)। এটি হল মূল নীতি। কিছু উদাহারন এই মূলনীতির ব্যতিক্রম, যেমন - ওয়ালি (অভিভাবক) তার সন্তানকে হজ
ও উমরাহ করানোর জন্য নিয়্যত করেছে।”
ইবন আবদিল সালাম বলেন,
“প্রথম বাক্য (প্রত্যেক কাজ শুধুমাত্র নিয়্যতের উপর নির্ভর করে)
দিয়ে নির্দিষ্টভাবে বুঝানো হয়েছে কোন আমল গ্রহণযোগ্য আমল হিসেবে গণনা করা হবে এবং
দ্বিতীয় বাক্য (প্রত্যেক মানুষ কেবল তাই পাবে যেটার জন্য সে নিয়্যত করে) দিয়ে
বুঝানো হয়েছে ঐ আমলের ফলাফল কি হবে। এটি এ অর্থও প্রকাশ করে যে, নিয়্যত কেবল সেই ইবাদাতগুলোর ক্ষেত্রেই
পূর্বশর্ত যেগুলো অন্যান্য কাজ থেকে (যে কাজগুলো ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত নয়)
স্বতন্ত্র। তাই সে ইবাদাতের আমল, যেগুলো
পরিস্কারভাবে স্বতন্ত্র; যেমন
আল্লাহ্র স্মরণ (যিকর), দুয়া
করা, কুরআন
তিলাওয়াত করা ইত্যাদি হল ঐসব পদ্ধতি থেকে নির্ধারণযোগ্য, যে পদ্ধতিতে এগুলো সম্পন্ন করা হয়।”
এটি সুস্পষ্ট যে,
এটি ইবাদাতের মূল পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইবাদাত যদি
অভ্যাসবশত কারনে ঘটে, যেমন
– আশ্চর্য
হলে অথবা আল্লাহ্র প্রশংসায় ‘সুবহান
আল্লাহ’ বলা, তাহলে উপরোক্ত কথা প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া আল্লাহ্র নিকটবর্তী হওয়ার নিয়্যত সহকারে যিকর করা হলে এতে সওয়াব রয়েছে।
তাই সংক্ষেপে বলা যায়,
প্রত্যেক আমলের (ইবাদাতের ক্ষেত্রে) নিয়্যত করা দরকার। এর
মধ্যে সেই আমলও অন্তর্ভুক্ত যা করার ব্যাপারে ব্যক্তি ইচ্ছুক নয়। এই যেমন, ব্যক্তি যদি আল্লাহ্র শাস্তির ভয়ে কোন
নির্দিষ্ট আমল করা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,
তাহলে সে এর কারনে আল্লাহ্র কাছ থেকে পুরস্কৃত হবে। তার এই
ব্যাপারটি সে ব্যক্তির থেকে আলাদা,
যে কিনা কোন গুরুত্তই দেয় না সেই অন্যায়ের ক্ষেত্রে যা আল্লাহ্র
অবাধ্যতার কারনে হয়ে থাকে, আর
সেই অন্যায় কাজ কোন নিয়্যত ছাড়াই ছেড়ে দেয়।
“ তাই
যে হিজরত করবে দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে ”
[ ইমাম
বুখারি এ হাদিসে হাদিসটির একটি অংশ বাদ (খারম) দিয়ে বর্ণনা করেছেন – “যে আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত হবে আল্লাহ ও তার রসূল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্যই।” ]
ইমাম বুখারি তার কিতাবের এ অধ্যায়ে হাদিসটি বর্ণনা করার সময়
উপরোক্ত অংশটুকু বাদ দিয়েই হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসের পুরো বর্ণনা বুখারির
হিজরতের অধ্যায়ে পাওয়া যায়ঃ
“প্রত্যেক
কাজ শুধুমাত্র নিয়্যতের উপর নির্ভর করে এবং প্রত্যেক মানুষ কেবল তাই পাবে যেটার
জন্য সে নিয়্যত করে। তাই যে হিজরত করবে দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে অথবা কোন নারীকে
বিয়ে করার উদ্দেশ্যে – তার
হিজরত সেটার জন্যই হবে, যেটার
জন্য সে হিজরত করবে। আর যে আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য হিজরত করবে
তার হিজরত হবে আল্লাহ ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর জন্যই।”
এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে।
প্রথমত, কিছু
আলেম বলেছেন যে এই হাদিসটি ইমাম বুখারি তার কিতাবের প্রথম হাদিস হিসেবে বর্ণনার
মাধ্যমে একে কিতাবের ভুমিকা হিসেবে রেখেছেন সেসব কিতাব লেখকদের মতো,যারা তাদের কিতাবে ভুমিকা লিখেন তাদের
কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করার জন্য। তাই ইমাম বুখারি তার কিতাবের সূচনা করেছেন তার
নিয়্যতকে নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে, যা
নির্দেশ করে তার কিতাব রচনার জন্য নিয়্যতের একনিষ্ঠতা শুধুমাত্র আল্লাহ্র জন্যই
আর আল্লাহ তাকে তার নিয়্যত অনুসারে বিচার করবেন। তাই তিনি জেনেশুনেই হাদিসের একটি
অংশ ছেড়ে দিয়েছিলেন এই অধ্যায়ে (পূর্বেই বলা হয়েছে এই অংশের ব্যাপারে), যাতে তিনি আত্ম প্রশংসা ও আত্মশোধন থেকে
নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন, কারন
এখানে লেখক (ইমাম বুখারি) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তার নিয়্যত ছিল এই কিতাবটি
লেখা।
এছাড়াও ইমাম বুখারির মতে কোন হাদিসের অংশবিশেষ বর্ণনা করা আর
আসল শব্দের অর্থ বর্ণনা করা অনুমোদনযোগ্য,
তিনি এই হাদিসের ক্ষেত্রে উভয়ই ব্যবহার করেছেন। এটি ইমাম
বুখারির একটি কর্মপদ্ধতি যে তিনি মাঝে মাঝে কিছু শব্দ বাদ দিয়ে (এমনকি সেটা
বর্ণনার মধ্যে থেকে হলেও) হাদিস বর্ণনা করেন। এটাও তার একটা কর্মপদ্ধতি যে তার যদি
একাধিক সনদ বিশিস্ট একই বর্ণনা থাকে তাহলে তাহলে তিনি বর্ণনাটি এক স্থানে (অর্থাৎ
অধ্যায়ে) এক সনদের উল্লেখ করে এবং অপর স্থানে আরেক সনদের উল্লেখ করে বর্ণনা করেন।
তিনি এটা তখনই করেন যদি সেটার নির্ভরযোগ্যতা সেই পর্যায়ে পৌছায় যে পর্যায়ে পৌঁছালে
তার শর্ত অনুযায়ী একটা হাদিস নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু যদি সেই পর্যায়ে না পৌছায়
(তার শর্ত অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য হাদিস হওয়ার ক্ষেত্রে), তবে তিনি বর্ণনাটি সনদ ছাড়া অথবা সনদের
কোন অংশ (মু’আল্লাক)
ছাড়া বর্ণনা করেন। এটা তিনি করেন হয় নির্দিষ্টতার সাথে, যেমন এইভাবে বর্ণনা করেন – “তিনি বলেছেন এটা এবং এটা” – যদি হাদিসটি নির্ভরযোগ্যভাবে বর্ণিত হয়ে
থাকে কিন্তু তার শর্ত অনুসারে নির্ভরযোগ্যতা পায় না;
অথবা তামরিয সহকারে বর্ণনা করেন যেমন - “বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন এটা এবং এটা” - এভাবে,
যদি হাদিসে কিছু দুর্বলতা থাকে।
আর যদি তার কাছে এক সনদ বিশিষ্ট বর্ণনা থাকে (আরও পরিস্কারভাবে
বলতে গেলে, তিনি
এ ব্যাপারে যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন সে পর্যন্ত),
সে ক্ষেত্রে তিনি সেই বর্ণনা স্বাধীনভাবে বর্ণনা করেছেন – এর কোন অংশ এক স্থানে এবং অন্য অংশ আরেক
স্থানে (তার নামকরন করা অধ্যায়ের প্রয়োজন অনুসারে)।
এটি খুবই বিরল যে তিনি তার কিতাবের একাধিক স্থানে কোন বর্ণনার
একই পাঠ ও একই সনদ পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ করেছেন। আমি (ফাতহুল বারির তাফসিরকারক – ইবন হাজার) এক আলিমের সাথে সাক্ষাত
করেছিলাম যিনি আমাকে বলেছেন যে তিনি যত্নশীলভাবে বুখারি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে
ইমাম বুখারি একাধিক স্থানে একই সনদ সহকারে সম্পূর্ণ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন এমন
বর্ণনা তিনি বুখারি শরীফে প্রায় ২০ টি স্থানে খুজে পেতে সক্ষম হয়েছেন কেবল!
“ যে
হিজরত করবে ”
হিজরতের আক্ষরিক অর্থ হল কোন কিছু ত্যাগ করা, আর “কোন
কিছুর দিকে হিজরত করা” বলতে
বুঝায় অন্য কিছু থেকে আরেকটা কিছুতে স্থানান্তরিত হওয়া।
ইসলামিক পরিভাষায় হিজরত বলতে বুঝায় -“এমন কিছু ত্যাগ করা যার ব্যাপারে আল্লাহ
নিষিদ্ধতা জারী করেছেন।”
ইসলামিক পরিভাষায় হিজরত দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
প্রথমত, ভয়ভীতিপূর্ণ
কোন স্থান ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ স্থানে হিজরত করা,
যেমন ঘটেছিল আবিসিনিয়া হিজরতের ক্ষেত্রে আর প্রথম দিকে মক্কা
থেকে মদিনায় হিজরতের ক্ষেত্রে;
দ্বিতীয়ত, কুফফারদের
ভুমি থেকে ইসলামের ভুমির দিকে হিজরত করা,যেমন
মদিনায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিষ্ঠা লাভের পর সেখানে হিজরত করা।
মক্কা বিজয়ের পর দ্বিতীয় প্রকারের হিজরত শুধু মদিনায় সীমাবদ্ধ
থাকে নি, তবে
ইসলামের সকল ভূমিতে হিজরত করাটা ব্যাপক হিসেবে পরিনতি লাভ করে।
“ অথবা
কোন নারীকে ”
যদিও ‘দুনিয়া’ শব্দটির প্রাধান্যতার কারনে নারীকে
বিবেচনা করা হয় (যেমন –দুনিয়াবি
লাভ), কিন্তু
নারীকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কারন নারীজনিত ফিতনা অনেক মারাত্মক, এ কারনে এই ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্তের
সাথে এর ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
আবার অনেক আলিম বলে থাকেন যে এই হাদিসটি বর্ণনার পিছনে একটি
বিশেষ ঘটনা রয়েছে যা তাবারানির বর্ণনায় ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে জানা যায়, সেটি হল এমন - এক ব্যক্তি মদিনাতে হিজরত
করলো কায়লাহ উম কায়েস নামক এক নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, এ কারনে ঐ ব্যক্তিকে বলা হতো ‘উম কায়েসের মুহাজির’ (যেহেতু উম কায়েসকে বিয়ে করার নিয়্যতে
হিজরত করেছিলো)। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদিসের
নির্দিষ্ট কারন কি এই ঘটনা কিনা।
“ তার
হিজরত সেটার জন্যই হবে যেটার জন্য সে হিজরত করবে ”
এর দ্বারা এটা বুঝানো হয়নি যে কোন ব্যক্তি বিয়ে অথবা দুনিয়াবি
লাভের জন্য হিজরত করলে সকল ক্ষেত্রেই তার সে হিজরত পরিপূর্ণভাবে বাতিল বা নিন্দনীয়
বলে গণ্য হবে। উদাহারন হিসেবে বলা যায়,
এক ব্যক্তি কুফফারদের ভুমি থেকে হিজরত করলো (মুসলিম শাসিত
ভুমির দিকে) যার একই সাথে বিয়ে করার নিয়্যতও রয়েছে,
এক্ষেত্রে তার সওয়াব সেই ব্যক্তির তুলনায় কম হবে যিনি
শুধুমাত্র আল্লাহ্র জন্যই হিজরত করেছেন। নিন্দিত বলে গণ্য হবে সেই ব্যক্তি যে
শুধুমাত্র সম্পূর্ণরূপে নারীকে পাওয়ার জন্য হিজরত করবে।
ঠিক একইভাবে, কোন
ব্যক্তি যদি বিয়ের কারনে হিজরত করে যার দ্বারা সে নিজেকে পবিত্র রাখার মাধ্যমে
আল্লাহ্র সন্তুষ্টি হাসিল করতে চায়,
তবে এটি সওয়াবের কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ব্যাপারে একটি
উদাহারন হল, আনাস
(রাঃ) এর মা উম সুলাইম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আবু তালহার পূর্বেই। যখন আবু তালহা
তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, উম
সুলাইম তাকে বলেন যে তিনি আবু তালহাকে বিয়ে করতে রাজি যদি আবু তালহা ইসলাম গ্রহণ
করেন। এতে আবু তালহা রাজি হোন এবং তাদের উভয়ের এই বিয়ের মোহর ছিল আবু তালহার ইসলাম
গ্রহণ। (ইমাম নাসাঈ এটি বর্ণনা করেছেন)। ব্যাপারটি এমন যে আবু তালহা তার নিজের
ইচ্ছাতেই ইসলাম গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন আর এই নিয়্যতের সাথে তিনি বিয়ে করার নিয়্যতও
যুক্ত করেন, ঠিক
তেমনি যে কিনা সিয়াম পালন করে এক সাথে ইবাদাহ ও ফিটনেস উভয়ের নিয়্যতে।
এই হাদিস থেকে প্রাপ্ত ফিকহ
এই হাদিসকে নিন্মোক্ত ফিকহগুলোর দলীল হিসেবে ব্যবহার করা যায়ঃ
(১)
কোন কাজের নিয়মকানুন না জেনে এর উপর আমল অনুমোদনযোগ্য না, কারন কোন কাজের নিয়মকানুন জানা ছাড়া সেই
কাজের জন্য নিয়্যত করাটা সঠিক না।
(২)
যে ব্যক্তি জ্ঞান রাখে না তাকে হিসাব দিতে বাধ্য করা যাবে না; কারন নিয়্যত তো তখনই হয় যদি যেটা করার
ব্যাপারে নিয়্যত করা হবে তা জানা থাকে,
তাই এই ব্যক্তি যে কাজ করেছে সেটার ব্যাপারে নিয়্যত করতে পারে
না, কারন
তার তো সেই ব্যাপারে জ্ঞানই নেই।
(৩)
কোন ব্যক্তি যদি দিনের কোন অংশে নফল সিয়াম পালনের নিয়্যত করে (এর পূর্বে সাহরির
শেষ সময়ের পর কোন খাদ্য গ্রহণ না করা অবস্থায়),
তবে তিনি নিয়্যত করার সেই সময় থেকে সওয়াব পাবেন, এই হাদিস সেই অর্থই প্রকাশ করে।
আবার এটাও বলা হয় যে তিনি পূর্ণ সওয়াব পাবেন যার দলীল পাওয়া
যায় আরেক হাদিস থেকে – “যে
ব্যক্তি এক রাকআত সালাত (জামাআতে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই জামাআত অবস্থায় পেলো” (এর দ্বারা একাকী সালাত আদায়ের তুলনায়
জামাআতে সালাত আদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়)। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ্র তরফ থেকে
তার বান্দাদের প্রতি বিরাট এক নিয়ামত।
(৪)
যদি কোন বিশ্বস্ত ব্যক্তি কিছু লোকজনের সমাবেশে উপস্থিত থাকে আর সেই সমাবেশ থেকে
শোনা কিছু অন্যান্যদের কাছে বর্ণনা করে,
তবে তার সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার কারনে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য
হবে, এমনকি
যারা শুনেছে তাদের কোন একজনও যদি সেই সমাবেশে উপস্থিত নাও থাকে। এই হাদিসে দেখা
যায় যে আলকামা-ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি উমার (রাঃ) মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে যা বলেছেন
তা নির্ভরযোগ্যভাবে বর্ণনা দিয়েছেন।
(৫)
যেটাকে আমল বলে গণ্য করা হয় না তার ব্যাপারে নিয়্যত পূর্বশর্ত নয়। উদাহারনস্বরূপ, দুই সালাত একত্রে মিলিয়ে পড়া আমল নয় বরং
আমল হল সালাত। এ ব্যাপারে প্রমাণ হল এটি - রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুক যুদ্ধে তার
সালাতগুলো একত্রে আদায় করেছিলেন আর তাঁর পিছে যারা সালাত আদায় করেছিলেন তিনি
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এই একত্রে সালাত কায়েমের ব্যাপারে জানান নি।
(৬)
যদি কোন এক শ্রেণীর কর্মের ফলে বিভিন্ন কর্মের উৎপত্তি হয়, তবে কেবল সেই শ্রেণীর কর্মের জন্যই
নিয়্যত করলে হবে। উদাহারনস্বরূপঃ এক ব্যক্তি কাফফারা (এটি এক শ্রেণীর কর্ম) আদায়ের
জন্য তার দাসকে মুক্ত করে দিতে চায় কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোন নিয়্যত না করলেও চলবে
যে কোন পাপের (এই শ্রেণীর কর্মের জন্য কারন থাকা দরকার) কারনে তিনি এই কাফফারা
আদায় করছেন; কারন
হাদিসে বুঝানো হয়েছে “প্রত্যেক
আমল তার নিয়্যতের উপর নির্ভর করে।”
এখানে উদ্দিস্ট কর্ম হল ফরজ কাফফারা থেকে নিজেকে মুক্ত করা আর
যে কারনে কাফফারা ফরজ হয়েছে সেই কারনটির উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন নেই। অতএব যদি সে
ব্যক্তি এটা জানে যে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে কিন্তু তিনি এটা স্মরণ করতে না
পারেন যে কি কারনে তাকে এটা আদায় করতে হচ্ছে,
তবে এটাই যথেষ্ট যে তিনি কাফফারা ফরজ হওয়ার কারণটি
নির্দিষ্টভাবে নিয়্যত না করেই কাফফারা আদায় করতে পারবেন।
(৭)
এই হাদিসের কারন যদি ‘মুহাজির
উম কায়েস’ এর
ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে হাদিসটি এ অর্থ প্রকাশ করে যে,
দুনিয়াবি লাভ উল্লেখ করার ব্যাপারটি ছিল অতিরিক্ত কিছু যা
সতর্কতাকে ব্যাপক করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবেই মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট
বিধিনিষেধে নির্দিষ্ট কারন ফল হিসেবে পাওয়া যায়,
তবে এই বিধিনিষেধ ব্যাপক হতে পারে। তাই এই হাদিসের ব্যাপক অর্থ
ব্যাবহার করা যাবে যদিও প্রকৃত কারন নির্দিষ্ট।
বুখারির অন্যান্য স্থানে এই হাদিসের উদাহারন
কিতাবুল ঈমানে এই হাদিসের ব্যাপারে আরও আলোচনা আসবে (লেখক ইবনে
হাজার তার কিতাব ফাতহুল বারীর দিকে নির্দেশ করে বলেছেন) যেখানে ইমাম বুখারি এটি
আবারও বর্ণনা দিয়েছেন।
(এই
হাদিসটি দারুস সালাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত সহিহ বুখারির ১,৫৪,২৫২৯,৩৮৯৮,৫০৭০,৬৬৮৯ এবং ৬৯৫৩ নং হাদিসে পাওয়া যাবে)
Bukhariexplanation.com সাইটে
ফাতহুল বারি’র
ইংলিশ ট্রান্সলেশনের প্রজেক্ট শুরু হয়েছিলো বাট এখন সাইটটি মে বি টেম্পোরারিলি
ক্লোজ,সেই
ইংলিশ ট্রান্সলেশন থেকে এর অনুবাদ করা হল।
হাদিস
তাফসীর – “তোমরা সবাই যদি আল্লাহ’র
প্রতি যথাযথভাবে তাওয়াককুল করো …”
উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ আমি রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি –
“তোমরা
সবাই যদি আল্লাহ’র
প্রতি যথাযথভাবে তাওয়াককুল (ভরসা) করো,
তবে নিশ্চয়ই তিনি তোমাদেরকে সেভাবে রিযক দিবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের রিযক দিয়ে থাকেন -
তারা ক্ষুধার্ত হয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে আর সন্ধ্যায় ভরা পেট নিয়ে ফিরে আসে।”
(জামি’ আত-তিরমিযি – কিতাবুয যুহদ, হাদিস ২৩৪৪; সুনানে নাসাঈ; সুনানে ইবনে মাজাহ – হাদিস ৪১৬৪; মুসনাদে আহমাদ – ১/৩০;
সাহিহ ইবনে হিব্বান –
হাদিস ৭৩০; মুসতাদরাকে
হাকিম – ৪/৩১৮; ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে নির্ভরযোগ্য
বলেছেন।)
হাদিসটির ব্যাখ্যা
এই হাদিসটি দ্বীন ইসলামের মৌলিক পাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম, এটি আল্লাহ’র উপর তাওয়াককুল (ভরসা) করার বিষয়টির
ব্যাখ্যায় ভূমিকা রাখে, আর
তাওয়াককুল করার বিষয়টি হল আল্লাহ’র
রিযক অর্জনের শ্রেষ্ঠ একটি কারন, যেমনটি
আল্লাহ বলেন -
“যে
কেউ আল্লাহ’র
প্রতি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ
তার জন্য পথ করে দিবেন আর তাকে রিযক দান করবেন তার ধারণাতীত উৎস থেকে; যে ব্যক্তি আল্লাহ’র উপর তাওয়াককুল অবলম্বন করে, তার জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট …” (সূরাহ আত-তালাক, ৬৫ :২-৩)
লোকেরা যদি মুত্তাকী (আল্লাহ’র
প্রতি তাকওয়া অবলম্বনকারী) হয় আর আল্লাহ’র
প্রতিই ভরসা করে, তবে
তিনি তাদের প্রতি যথেষ্ট হবেন – যে
পর্যন্ত তাদের পার্থিব কল্যাণ আর আখিরাতের বিষয়গুলো সম্পর্কিত থাকবে। এ বিষয়টি
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত – “আল্লাহ্কে
হেফাজত করো, আল্লাহ
তোমাকে হেফাজত করবেন” – এ
হাদিসের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
একজন আলিম বলেছিলেন,
“একজন ব্যক্তিকে উদ্বেগ করে এমন যে কোন কিছুতেই আল্লাহ’র উপর ভরসা করা তার জন্য যথেষ্ট।”
আল্লাহ’র
উপর ভরসা করার অর্থ হল, ব্যক্তি
তার স্বার্থ অর্জন আর নিজেকে মন্দ কিছু থেকে হেফাজতের জন্য তার অন্তরকে
একান্তভাবেই আল্লাহ’র
প্রতি নিয়োজিত করবে – যে
পর্যন্ত এই দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়গুলো সম্পর্কিত থাকবে। ব্যক্তির এ ব্যাপারে
নিশ্চিত থাকতে হবে যে, একমাত্র
আল্লাহই কোন কিছু দান করেন, তিনিই
দান করা থেকে বিরত থাকেন আর একমাত্র তার কারনেই উপকার ও ক্ষতি হয়।
সাইদ বিন জুবাইর বলেছেন,
“আল্লাহ’র
প্রতি ভরসা করা হল ঈমানের সারমর্ম।”
ওয়াহব বিন মুনাব্বিহ বলেছেন,
“ঈমানের চূড়ান্ত সমাপ্তি হল আল্লাহ’র উপর ভরসা করা।”
আল-হাসান বলেছেন,
“আল্লাহ’র
প্রতি ভরসা করা অর্থ তো এটাই যে, আল্লাহ
ছাড়া বান্দা আর কারো উপর ভরসা করবে না।”
আল্লাহ’র
প্রতি ভরসা করার বিষয়টি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিপরীত নয়
কোন কাজে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে তো আল্লাহই
আদেশ করেছেন আর এটা তো যেকোন ঘটনারই স্বাভাবিক কার্যধারা, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা
তাওয়াককুলের বিপরীত নয়, আল্লাহ
বলেছেন –
“হে
ঈমানদারগণ, (শত্রুর
মুকাবিলায়) তোমরা (সবসময়) সতর্কতা গ্রহণ করো (অস্ত্রে সজ্জিত থাকার মাধ্যমে, সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে, শক্তি দৃঢ় করার মাধ্যমে ইত্যাদি উপায়ে) …” (সূরাহ আন-নিসা, ৪ :৭১)
“তোমরা
কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত
রাখবে, যা
দিয়ে আল্লাহ’র
শত্রু আর তোমাদের শত্রুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করবে,
এ ছাড়া অন্যান্যদেরকেও –
যাদেরকে তোমরা জানো না কিন্তু আল্লাহ জানেন …” (সূরাহ আল-আনফাল, ৮ :৬০)
“এরপর
যখন (জুমুয়ার) নামায শেষ হবে, তখন
তোমরা (কাজকর্মে) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহ’র
অনুগ্রহ তালাশ করো, আর
(বেচাকেনার অবস্থাতেও) আল্লাহ্কে বেশী বেশী স্মরণ করো …” (সূরাহ আল- জুমু’আহ,
৬২ :১০)
সাহল আত-তুস্তুরি বলেছেন,
“যদি একজন ব্যক্তি কোন কাজের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্জন
করে, তবে
সে তো সুন্নাহ বর্জন করলো। আর সে যদি আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুল করা বর্জন করে, তবে
ঈমানকেই প্রত্যাখ্যান করলো। আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুল করাটা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর কাজের ধরণ, আর
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাও রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অভ্যাস। যে
ব্যক্তি তার কাজের ধরনের প্রতি অনুগত,
তার তো উচিত নয় রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ বর্জন
করা।”
আল্লাহ’র
গোলাম কতৃক সম্পাদিত কাজ
আল্লাহ’র
গোলাম কতৃক সম্পাদিত কাজ তিন ধরণের –
প্রথম প্রকারঃ আল্লাহ’র
আদেশকৃত সৎ কাজ – যা
ব্যক্তিকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে আর দোযখ থেকে হেফাজত করে। এ কাজগুলো অবশ্যই
আল্লাহ’র
উপর ভরসা রেখে আর তার সাহায্য প্রার্থনা করে সম্পাদন করতে হবে। ব্যক্তি যদি
প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পাদন না করে তবে সে এই দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির যোগ্য হবে।
দ্বিতীয় প্রকারঃ আল্লাহ কতৃক আদেশকৃত চিরাচরিত অভ্যাস, যেমন –
ক্ষুধা পেলে (হালাল) খাবার খাওয়া, তৃষ্ণা পেলে (হালাল) কিছু পান করা আর
শীত অনুভূত হলে নিজেকে (হালাল কোন উপায়ে) উষ্ণ করা। কোন ব্যক্তি যদি এমনভাবে এ
ধরণের অভ্যাসগুলো বর্জন করে যা তার ক্ষতির কারন হবে,
তবে সে শাস্তির যোগ্য হবে।
এ সত্ত্বেও, আল্লাহ
তার কিছু গোলামকে কিছু পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা দান করেন, যে পরিস্থিতি অন্যান্যদের জন্য সহনীয়
নয়। উদাহারনস্বরূপ, রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) সাওমে বেসাল (পরপর দুদিন ধরে রোজা রাখা) করতেন, কিন্তু তিনি সাহাবীদেরকে তা করতে নিষেধ
করেছিলেন, তিনি
তাদেরকে বলেছিলেন, “আমি
তোমাদের মতো নই, আমাকে
পানাহার করানো হয়।” (বুখারি
– কিতাবুস
সাওম, হাদিস
১৯৬২; মুসলিম
– কিতাবুস
সিয়াম, হাদিস
১১০২)
আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে যে তিনি বলেছেন, “আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান।” (বুখারি –
কিতাবুস সাওম, হাদিস
১৯৬৪; মুসলিম
– কিতাবুস
সিয়াম, হাদিস
৬১/১১০৫)
তৃতীয় আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে যে তিনি বলেছেন, “আমার জন্য একজন খাদ্য পরিবেশনকারী থাকেন, যিনি আমাকে আহার করান আর একজন পানীয়
পরিবেশনকারী আমাকে পান করান।” (বুখারি
– কিতাবুস
সাওম, হাদিস
১৯৬৩)
এর অর্থ হল, আল্লাহ
তাকে ভোজন করান আর শক্তিদান করেন ঐশ্বরিক জ্ঞান ও পুরস্কার দ্বারা – যা তাকে খাবার ও পানীয় ছাড়াই বাঁচিয়ে
রাখে। যদি কোন ব্যক্তি এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আর এটির অনুসরণ যদি তাকে আল্লাহ’র আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে না দেয়, তবে সে নিন্দিত হবে না। এ সত্ত্বেও, এটি তার জন্য নির্ধারিত কিছু কাজ করা
থেকে তাকে বিরত রাখে, (তাই)
এটি একটি প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ।
তৃতীয় প্রকারঃ সাধারণ কাজ –
যেগুলোর উপর এই পার্থিব জীবন নির্ভর করে। এ ধরণের কাজগুলো কিছু
লোকদের জন্য লঙ্ঘিত হতে পারে, যেভাবে
আল্লাহ চান। উদাহারনস্বরূপ, ঔষধ
ছাড়াই রোগমুক্ত হওয়া। আলিমদের মধ্যে এ নিয়ে ইখতিলাফ আছে যে, ব্যক্তির কি ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নাকি
আল্লাহ’র
উপর তাওয়াককুল করা উচিত।
ইমাম আহমাদের মত হল,
এক্ষেত্রে আল্লাহ’র
উপর তাওয়াককুল করাটাই অধিকতর ভালো,
যদি এটির প্রভাবের উপর ব্যক্তির সমর্থ হওয়ার ক্ষমতা থাকে; যেমনটা আমাদের জানিয়েছেন রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) – “তোমাদের
মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে আর বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” তিনি তাদের ব্যাপারে জানিয়েছেন, “তারা কোন দাগ লাগাতো না, ঝাড়ফুঁকের শরণাপন্ন হতো না আর কুযাত্রা
মানতো না। তারা কেবল তাদের রবের উপরই তাওয়াককুল করতো।” (বুখারি –
কিতাবুর রিকাক,
হাদিস ৬৪৭২)
যেসব আলীমগণ ঔষধ গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের দলীল এই যে, ঔষধ গ্রহণ তো রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর রীতিই ছিল, আর
তিনি তো সবচেয়ে সেরা কাজটিই চর্চা করতেন। তারা (বরং) এ হাদিসটিকে ঝাড়ফুঁক হারাম
হওয়ার দলীল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
এ ধরণের নীতি হয়তো কিছু লোকের জন্য লঙ্ঘিত হবে; এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা
থেকে আল্লাহ যাদের জন্য উপায় করে দিয়েছেন,
তাদের জন্য এ নীতির লঙ্ঘন দেখা যেতে পারে। একজন ব্যক্তিকে যদি
আল্লাহ’র
তরফ থেকে অতি মাত্রায় তাওয়াককুল প্রদান করা হয় আর সে জানে যে, তার নিজের কোন প্রচেষ্টা করা ছাড়াই
আল্লাহ তাকে রিযক প্রদান করবেন, তবে
তার জন্য রিযক সন্ধান বর্জন করা অনুমোদিত। হাদিসটি এ ধারনাই বিশদভাবে তুলে ধরেছে।
এটি ইঙ্গিত করে যে, এই
দুনিয়াতে লোকেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে,
কারন তারা তাওয়াককুলের সত্যিকারের অর্থ বুঝতে পারে না। তারা
যদি আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুলের ব্যাপারে আন্তরিক হয়,
তবে তাদের সামান্য চেষ্টাতেই আল্লাহ তাদেরকে রিযক প্রদান করবেন, যেমনটি তিনি পাখিদের প্রদান করেন – তারা ক্ষুধার্ত পেতে সকালে ঘুম থেকে উঠে
আর সন্ধ্যাতে ভরা পেট নিয়েই ফিরে আসে।
পাপের কারনে একজন ব্যক্তি রিযক থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে, যেমনটি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একজন বান্দা তার পাপের কারনে রিযক থেকে
বঞ্চিত হয়।” (মুসনাদে
আহমাদ – ৫/২৭৭, ২৮০;
ইবনে মাজাহ – হাদিস
৯০; সাহিহ
ইবনে হিব্বান – হাদিস
৮৭২)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একজন ব্যক্তি তার সমস্ত রিযক পাওয়ার আগ
পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। তাই আল্লাহ্কে ভয় করো আর হালাল উপায়ে রিযক খুঁজো।
হালাল অর্থ গ্রহণ করো আর অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বর্জন করো।” (ইবনে মাজাহ – হাদিস ২১৪৪; সাহিহ ইবনে হিব্বান – হাদিস ৩২৩৯-৩২৪১)
উমার বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) বলেছিলেন, “বান্দা তো তার তাকদিরে নির্ধারিত রিযক
পাবেই। যদি সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে,
আল্লাহ তাকে অনুরূপ রিযক প্রদান করবেন। যদি সে তা অর্জন করতে
গিয়ে পাপ করে, সেগুলোর
চেয়ে তার আর বেশী কিছু থাকবে না।”
যদি একজন ব্যক্তি রিযক খোঁজার জন্য কোন চেস্টাই না করে, তবে সে একজন অক্ষম ও পাপী ব্যক্তি।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মযবুত
ঈমানদার আল্লাহ’র
কাছে দুর্বল ঈমানদার থেকে প্রিয়, অবশ্য
প্রত্যেকের মধ্যেই ভালো বৈশিষ্ট্য আছে। তোমার পক্ষে যা উপকারী ও কল্যাণপ্রদ, সে বিষয়ে আগ্রহ করো, আল্লাহ’র
কাছে সাহায্য কামনা করো। হিম্মতহারা হয়ো না,
কোন বিপদে পড়লে এমন বলো না –
‘যদি এটা করতাম তাহলে এমন এমন হতো (বা হতো না)।’ বরং বলো –
আল্লাহ’র
(দেওয়া) তাকদিরে তো এটাই ছিল, তিনি
যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। কারন ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজ উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম –
কিতাবুল কদর, ৩৪/২৬৬৪)
একজন ব্যক্তির উচিত কাজ করার পূর্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
করা, এরপর
সে কাজের পূর্বশর্ত সম্পাদনের জন্য উদ্যমী হয়ে চেষ্টা করা, আর এরপরই আল্লাহ’র প্রতি তাওয়াককুল করা। আল্লাহ’র প্রতি তাওয়াককুল করাটা কোন কাজের
পূর্বশর্ত সম্পাদনের জন্য চেষ্টা করার বিপরীত নয়।
মুওাওিয়া বিন কুররাহ থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ উমার বিন আল-খাত্তাবের
সাথে কিছু ইয়েমেনি লোকের সাক্ষাৎ ঘটলো,
তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমরা কারা ?” তারা
বলল, “আমরা
আল্লাহ’র
উপর তাওয়াককুলকারী।” তিনি
বললেন, “না, যে ব্যক্তি আল্লাহ’র উপর তাওয়াককুল করে, সে তো প্রথমে চেষ্টা করার জন্য উদ্যমী
হয়, এরপরই
সে আল্লাহ’র
উপর তাওয়াককুল করে।”
আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুল করার অর্থ হল এই যে,
ব্যক্তি খুব ভালোভাবেই জানে যে আল্লাহ তার রিযকের নিশ্চয়তা দেন
আর সেই রিযক ঈমানদার ও কাফির উভয়ের জন্যই তাকদিরে নির্ধারিত রয়েছে, যেমনটি আল্লাহ বলেন –
“আর
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই,
যার রিযক আল্লাহ’র
যিম্মায় নেই …” (সূরাহ
হুদ, ১১
:৬)
আল্লাহ সমস্ত জীবিত সৃষ্টিকেই রিযক দিয়ে সাহায্য করেন, যদিও সেগুলোর অনেকেই দুর্বল আর রিযক
অর্জনে অক্ষম। আল্লাহ আরো বলেন –
“এমন
কতো জীবজন্তু আছে যারা নিজেদের খাদ্য মওজুদ রাখে না,
আল্লাহই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিযক দান করেন …” (সূরাহ আল-আনকাবুত, ২৯ :৬০)
বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে, ততক্ষন পর্যন্ত তার রিযক আল্লাহ কতৃক
নিশ্চিত। তারা নিজেরা রিযক অর্জনের চেষ্টা না করলেও হয়তো আল্লাহ তাদের সাহায্য
করবেন।
ইমাম আহমাদের একজন অনুসারী আল-মুসান্না আল-আনবারি বলেছিলেন, “রিযক নিয়ে উদ্বেগ করো না আর আল্লাহ’র দেওয়া রিযকের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ো না।”
আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুলের ফল হল আল্লাহ’র
নির্ধারিত তাকদির নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। যে ব্যক্তির তার সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ’র প্রতি সমর্পণ করে আর তার তাকদিরের
প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে
তো ইতিমধ্যেই আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুল অবলম্বন করছে। আল-হাসান আর আল-ফুদাইল এভাবেই তাওয়াককুলকে ব্যাখ্যা
করেছেন।
ইবনে আবিদ্দুনিয়া বলেছেন,
“এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন –
‘আল্লাহ’র
প্রতি তাওয়াককুলের তিনটি মাত্রা আছে –
প্রথমটি হল (তাকদিরের ব্যাপারে) অভিযোগ করা ত্যাগ করা, এটি যুহদের মাত্রা; দ্বিতীয়টি হল (তাকদিরে) সন্তুষ্ট থাকা, এটি আন্তরিক ও সৎকর্মপরায়ণ লোকদের
মাত্রা; তৃতীয়টি
হল (তাকদিরকে) ভালোবাসা, এটি
রসূলদের তাওয়াককুলের মাত্রা।’ ”
একজন ব্যক্তি যখন আল্লাহ’র
উপর ভরসা রাখে আর আল্লাহ’র
নির্ধারিত তাকদিরের উপর সবর করে, সে
তখনই একজন সবরকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়। যদি সে আল্লাহ’র নির্ধারিত তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্ট
থাকে, তবেই
সে একজন সন্তুষ্ট ব্যক্তি। আল্লাহ’র
নির্ধারিত তাকদির ছাড়া যদি সে কোন কিছুই পছন্দ না করে, তবে সে আল্লাহকে মুহাব্বাতকারী।
উমার বিন আবদুল আযিয বলেছেন,
“আমার সুখের মূল উৎস হল আল্লাহ’র
নির্ধারিত তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।”
হাদিস তাফসীরটি ইমাম ইবনে রজব আল-হানবালি (রাহিমাহুল্লাহ)’র কিতাব জামি’ আল উলুম ওয়াল হিকামের ইংলিশ ভার্সন থেকে
অনুবাদ করা হয়েছে।
হাদিস
তাফসীর – “এ দুনিয়াতে তুমি (এমনভাবে) থাকো, যেন
তুমি একজন অপরিচিত বা একজন মুসাফির”
‘আবদুল্লাহ
বিন ‘উমার
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) তার কাঁধ ধরে বললেন, “এ
দুনিয়াতে তুমি (এমনভাবে) থাকো, যেন
তুমি একজন অপরিচিত বা একজন মুসাফির।”
ইবনে ‘উমার
(রাঃ) বলতেন, “যদি
তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকো, তবে
সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করো না। যদি তুমি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকো, তবে সন্ধ্যার প্রত্যাশা করো না। সুস্থ
থাকা অবস্থায় তুমি অসুস্থতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো, আর বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত
করো মৃত্যুর জন্য।”
(সাহিহ
বুখারি – কিতাবুর
রিকাক, হাদিস
৬৪১৬)
হাদিসটির ব্যাখ্যা
দীর্ঘ জীবনের আশা ছোট করা
এই হাদিসটি দীর্ঘ জীবনের আশা ছোট করার সাথে সম্পর্কিত। একজন
মুমিনের এটা মনে করা উচিত নয় যে, সে
এই দুনিয়াতে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে,
বরং তার তো কেবল একজন মুসাফিরের মতোই হওয়া উচিত। সকল নবীগণ আর
তাদের অনুসারীগণ এ ব্যাপারে একমত। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا قَوْمِ
إِنَّمَا هَـٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ
الْقَرَارِ ﴿٣٩﴾
“হে
আমার জাতি, দুনিয়ার
এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, নিঃসন্দেহে
পরকালই হল স্থায়ী বসবাসের আবাস।” (সূরাহ
গাফির, ৪০
:৩৯)
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দুনিয়ার
সাথে আমার কি ? দুনিয়া
আর আমার সম্পর্ক হল (এমন যে), আমি
তো কেবল একজন আরোহীর মতোই, যে
কিনা একটি গাছের ছায়ার নিচে বসে, এরপর
সে তা ছেড়ে চলে যায়।” (তিরমিযি
– হাদিস
২৩৭৭, ইবনে
মাজাহ – হাদিস
৪১০৯, মুসনাদে
আহমাদ – হাদিস
১/৩৯১)
এক ব্যক্তি আবু যার (রাঃ) এর বাসায় গিয়ে তার বাসা দেখতে
লাগলেন। এরপর তিনি বললেন, “হে
আবু যার, আপনার
আসবাবপত্র কই ?” আবু
যার (রাঃ) বললেন, “আমাদেরকে
তো আরেকটি বাড়িতে যেতে হবে।” লোকটি
বললেন, “যেহেতু
আপনি এখানে আছেন, তাই
আসবাবপত্র তো অবশ্যই থাকতে হবে।” আবু
যার (রাঃ) বললেন, “বাড়ির
মালিক আমাদেরকে এখানে থাকতে দিবেন না।
কিছু লোক এক ধার্মিক ব্যক্তির বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়িটি দেখে
বললেন, “আপনার
বাড়ি তো একজন মুসাফিরের বাড়ির মতোই।”
তিনি বললেন, “আমি
তো সফর করবো না, আমি
বিদায় নিবো।”
আলি বিন আবু তালিব (রাঃ) বলেছেন,
“দুনিয়া অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে আর পরকাল চলে আসছে। এদের
প্রত্যেকেরই পুত্র আছে। পরকালের পুত্র হও,
কখনো এই দুনিয়ার পুত্র হয়ো না। আজ তো তুমি আমল করছো, এর জন্য তোমাকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে
না; কিন্তু
কাল তোমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে, তখন
তুমি আর আমল করতে পারবে না।”
এই দুনিয়াতে মুমিনের অবস্থা
যদি একজন মুমিন জেনে থাকে যে,
এই দুনিয়াতে সে অনন্তকাল জীবনযাপন করবে না, তবে তার উচিত হবে বিদেশে থাকা সেই
অপরিচিত ব্যক্তির মতো এই দুনিয়াতে অবস্থান করা,
যে ব্যক্তি তার ঘরে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে তার ভ্রমণকালীন
জিনিষপত্র প্রস্তুত করছে; অথবা
একজন সফরকারী ব্যক্তির মত অবস্থান করা,
যে ব্যক্তি তার গন্তব্যে পৌঁছার জন্য দিন-রাত হেঁটে যাচ্ছে।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) ইবন ‘উমার
(রাঃ) কে এই দুটোর কোন একটি হওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন।
প্রথম উদাহারনটির ব্যাপারে বলা যায়, একজন মুমিন তো বিদেশে অবস্থান করা ঠিক
একজন অপরিচিত ব্যাক্তির মতোই, মাতৃভূমির
সাথে যার অন্তর লেগে থাকা উচিত। সে তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তার ভ্রমণকালীন
জিনিসপত্র প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত।
ফুদাইল বিন ‘ইয়াদ
বলেছেন, “এই
দুনিয়াতে একজন মুমিন বিষণ্ণ ও চিন্তিত থাকে। নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করা
ছাড়া তার আর কোন লক্ষ্যই থাকে না।”
এ ক্ষেত্রে মুমিন ব্যক্তি সেই ভিনদেশের বাসিন্দাদের সাথে
প্রতিযোগীতা করবে না, আর
না সে তাদের কাছে নিজেকে হীন করবে।
আল-হাসান বলেছেন,
“একজন মুমিন তো ঠিক একজন অপরিচিত ব্যক্তির মতোই। সে নিজেকে অপর
লোকদের কাছে হীন করে না, আর
না সে পার্থিব লাভের জন্য তাদের সাথে প্রতিযোগীতা করে। তার জন্য আছে তার নিজস্ব
করণীয় কাজ, আর
লোকদের জন্যও আছে তাদের নিজস্ব করণীয় কাজ।”
দ্বিতীয় উদাহারনটির ব্যাপারে বলা যায়, মুমিন ব্যক্তিটি নিজেকে একজন মুসাফির
হিসেবে বিবেচনা করবেন, যার
শেষ গন্তব্য হল পরকাল। অন্তরে এই গন্তব্য ঠিক করার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তিটি সফরের
জন্য কেবল প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই অর্জন করবেন। তিনি পার্থিব আনন্দের ব্যাপারে
মোটেই পরোয়া করবেন না। এ কারনে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশ কিছু
সাহাবীদেরকে একজন মুসাফিরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ছাড়া দুনিয়ার আর কোন কিছুর
অধিকারী না হওয়ার ব্যাপারে উপদেশ দিয়েছিলেন। (যেমনটি উপদেশ দিয়েছিলেন ইবন ‘উমার (রাঃ) কে, যা হাদিসটিতে উল্লেখ করা হয়েছে)।
মুহাম্মাদ বিন ওয়াসি’কে
জিজ্ঞেস করা হলো, “আজ
আপনি কেমন আছেন ?” তিনি
জবাব দিলেন, “সেই
ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি মনে করো,
যে কিনা প্রতিটা দিনই পরকালের দিকে সফর করছে ?”
আল-হাসান বলেছেন,
“তুমি তো দিনগুলোর চেয়ে বেশী কিছু না। যখন একটি দিন অতিক্রম করে, তোমাদের মধ্যে কিছু লোক সেই দিনগুলোর
সাথেই অতিক্রান্ত হয়ে যায় (দুনিয়ার জীবন অতিক্রম করে পরকালে যাত্রার মাধ্যমে)।”
তিনি আরো বলেছেন,
“হে আদম সন্তান,
দুটো প্রাণীর উপর তোমরা সওয়ার হয়ে আছো, এগুলো হল দিন আর রাত। রাত তোমাদেরকে
দিনের কাছে হস্তান্তর করে আর দিন তোমাদেরকে রাতের কাছে হস্তান্তর করে, এমনটি চলতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত
তোমরা পরকালের কাছে হস্তান্তর হয়ে যাও। হে আদম সন্তান, তোমাদের কাছে কে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ?”
তিনি আরো বলেছেন,
“মৃত্যু তোমার গন্তব্য,
আর এই দুনিয়ার তো সমাপ্তির ঘটবে।”
ফুদাইল বিন ‘ইয়াদ
এক ব্যক্তিকে বললেন, “আপনার
বয়স কতো ?” ব্যক্তিটি
জবাব দিলেন, “ষাট
বছর।” ফুদাইল
বললেন, “ষাট
বছর ধরে আপনি আপনার রবের দিকে
সফর করছেন, আপনার
তো গন্তব্যে পৌঁছার সময় নিকটবর্তী।”
লোকটি বললেন, “আল্লাহ’র কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।” ফুদাইল বললেন, “আপনি কি এর ব্যাখ্যা জানেন ? যখন কোন ব্যক্তি এটা জানে যে, সে একজন গোলাম আর সে আল্লাহ’র কাছে ফিরে যাবে, সে এটাও জানে যে তাকে তার আমলের
ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর যদি সে জানে যে,
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে,
তবে তার উচিত হবে প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া।” লোকটি বললেন, “আমার কি করা উচিত ?” ফুদাইল বললেন, “এটা তো একটি সহজ বিষয় ?” লোকটি বললেন, “ সেটি কি ?”
ফুদাইল বললেন, “আপনার
জীবনের বাকিটা সময় আপনাকে সিরাতুল মুস্তাকিমের সাথে লেগে থাকতে হবে, এতে করে আল্লাহ আপনার অতীতের গুনাহগুলো
ক্ষমা করে দিবেন। আপনি যদি বাকি জীবন গুনাহ করে যেতে থাকেন, তবে সারাজীবন আপনি যেসব গুনাহ করেছেন
সেগুলোর ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
এই কথার আলোকে এক কবি বলেছেন,
“কোন ব্যক্তি যদি ষাট বছর ধরে কোন গন্তব্যের দিকে হাঁটতে থাকে, তবে গন্তব্য তো খুবই নিকটবর্তী হয়ে যায়।”
একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন,
“কোন ব্যক্তির সওয়ার হওয়ার প্রাণী যদি হয় দিন আর রাত, তবে সে না হাঁটলেও তারা ঠিকই তাকে সাথে
নিয়ে হেঁটে যাবে।”
আরেকজন কবি বলেছিলেন,
“দিনগুলো
তো মৃত্যুতেই শেষ হওয়া ধাপ ছাড়া আর বেশী কিছু নয়,
গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখতে পাবে এক বিস্ময়কর ব্যাপার – মুসাফির বসে আছে !”
ইবনে ‘উমার
(রাঃ) এর উপদেশ
ইবনে ‘উমার
(রাঃ) এর উপদেশটি বর্ণিত হাদিস থেকে পাওয়া যায়। এটিও দীর্ঘ জীবনের প্রতি আশা ছোট
করার সাথে সম্পর্কযুক্ত; আর
এটার সাথেও সম্পর্কযুক্ত যে – যদি
কোন ব্যক্তি সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকে,
তবে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করা উচিত নয়, যদি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে তবে
সন্ধ্যার প্রত্যাশা করা উচিত নয়। তার উচিত এই বিশ্বাস রাখা যে, সেই সময়ের আগেই সে মারা যেতে পারে। অনেক
আলিম এই উপদেশের আলোকে যুহদকে ব্যাখ্যা করেছেন।
আল–মারওয়াজি
বলেছেন, “ইমাম
আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘দুনিয়াতে
যুহদ বলতে কি বুঝায় ?’ তিনি
জবাব দিলেন, ‘দীর্ঘ
জীবনের আশা ছোট করা; এবং
যদি কেউ সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকে তবে তার সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করা না
করা, আর
সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সন্ধ্যার প্রত্যাশা না করা। এটা সুফিয়ানেরও মত।’ ”
ইমাম আহমাদকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, “একজন ব্যক্তি কিভাবে দীর্ঘ জীবনের প্রতি
আশা ছোট করতে পারে ?” তিনি
জবাব দিয়েছিলেন, “সেটা
আমি জানি না। এটি তো আল্লাহ’র
পক্ষ থেকে হিদায়াত।”
আল-হাসান বলেছিলেন,
“একবার তিনজন আলিমের সাক্ষাৎ হল। তাদের একজন আরেকজনকে বললেন, ‘আপনি কি পরিমাণ সময় বেঁচে থাকার আশা
করেন ?’ তিনি
জবাব দিলেন, ‘মাসের
শুরুতে আমি চিন্তা করি, আমি
সে মাসেই মারা যাবো।’ অপর
দুজন আলিম বললেন, ‘আসলে
এটিই তো জীবনে ছোট্ট আশা।’ এরপর
তারা তাদের মধ্যকার অপরজনকে বললেন,
‘আপনি কি পরিমাণ সময় বেঁচে থাকার আশা করেন ?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘সপ্তাহের শুরুতে আমি চিন্তা করি, আমি সে সপ্তাহেই মারা যাবো।’ অপর দুজন আলিম বললেন, ‘এটিই আসলে জীবনে ছোট্ট আশা।’ এরপর তারা তাদের মধ্যকার আরেকজনকে বললেন, ‘আপনি কি পরিমাণ সময় বেঁচে থাকার আশা
করেন ?’ তিনি
জবাব দিলেন, ‘যে
ব্যক্তির আত্মার মালিকানা অন্য কারো কাছে রয়েছে,
তার আবার এ ব্যাপারে আশা কি থাকতে পারে ?’ ”
দাউদ আত-তাঈ বলেছেন,
“আমি আতওয়ান বিন আমর আত-তাইমিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘জীবনে ছোট আশা কোনটি ?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘সেটা তো দুটো নিঃশ্বাসের মাঝে রয়েছে।’ এরপর আমি ফুদাইল বিন ইয়াদকে তার এ কথাটা
জানালে তিনি কাঁদলেন আর বললেন, ‘তিনি
একবার নিঃশ্বাস নিয়ে ভয় করলেন যে তিনি দ্বিতীয়বার নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে পারবেন না; আতওয়ান বিন আমর তো মৃত্যুর জন্য সত্যিই
খুব প্রস্তুত।’ ”
একজন আলিম বলেছিলেন,
“আমি ঘুম থেকে উঠতে পারবো না - এটা চিন্তা করা ছাড়া আমি কখনোই
ঘুমোই নি।”
ইবনে উমার (রাঃ) বলেছেন,
“সুস্থতার সময় তুমি অসুস্থতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো, আর বেঁচে থাকার সময়টাতে নিজেকে প্রস্তুত
করো মৃত্যুর জন্য।”
এর অর্থ হল, একজন
ব্যক্তির উচিত মৃত্যুর পূর্বে সুস্থতার সময়টাতে সৎ কাজ করা। এই উপদেশটি আরেকটি
হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এমন
দুটো নিয়ামত আছে, যে
দুটোতে অনেক মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলো
হলো – সুস্থতা
আর অবসর (সময়)।” (বুখারি
– কিতাবুর
রিকাক, হাদিস
৬৪১২)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) কে এক ব্যক্তিকে নসিহত দিতে শুনেছিলেন,
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাকে বলছিলেন, “পাঁচটি
ঘটনার আগেই পাঁচটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করো –
তোমার বৃদ্ধ বয়সের আগে যৌবনকালকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রতার পূর্বে ঐশ্বর্যকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং
মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে।” (মুসতাদরাকে
হাকিম, হাদিস
৪/৩০৬; আয-যাহাবি
এর বিশুদ্ধতা প্রমাণ করেছেন)
গুনাইম বিন কায়েস বলেছেন,
“ইসলামের শুরুতে আমরা একে অপরকে এটা বলে দ্বীনের দিকে আহবান
করতাম – ‘হে
আদম সন্তান, সৎ
কাজ করো - ব্যস্ততার পূর্বেই অবসর সময়ে,
বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে তোমার যৌবনকালে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতার সময়, মৃত্যুর পূর্বে এই জীবনে আর পরকালের
পূর্বে এই দুনিয়াতে।”
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ছয়টি
বিষয় ঘটবার পূর্বেই সৎ কাজের ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হও – পশ্চিম থেকে সূর্যোদয়, ধোঁয়া,
দাজ্জাল, অদ্ভুত
প্রাণী, মৃত্যু, মহাপ্রলয়।”
এটা এই অর্থ প্রকাশ করে যে,
অনুরূপ বিষয়গুলো একজন ব্যক্তিকে সৎ কাজে বাধা দেয়; হতে পারে সে বিষয়গুলো একজন ব্যক্তির
নিজস্ব কোন বিষয়, যেমন
– দারিদ্রতা, অসুস্থতা,
বৃদ্ধ বয়স বা মৃত্যু,
অথবা হতে পারে সেটি ব্যাপক কোন বিষয়, যেমন –
পুনরুত্থান, দাজ্জাল
ও ফিতনা।
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, “রাতের
অন্ধকারতম অংশের মতো অন্ধকার ফিতনার পূর্বেই সৎ কাজ করার ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর
হও।” (মুসলিম
– কিতাবুল
ফিতান, হাদিস
১২৮/২৯৪৭)
কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কোন সৎ কাজই উপকারে আসবে না, যেমনটি আল্লাহ বলেছেন –
يَوْمَ
يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ
آمَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ۗ
“যেদিন
তোমার রবের কিছু নিদর্শন প্রকাশ হবে,
সেদিনের পূর্বে যারা ঈমান আনেনি,
তাদের তখন ঈমান আনাতে কোন উপকার হবে না, অথবা যারা নিজেদের ঈমান দিয়ে কোন সৎ কাজ
করেনি (তখন সৎ কাজ দিয়ে কোন ফলোদয় হবে না) …
” (সূরাহ আল-আন’আম, ৬ :১৫৮)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “পশ্চিম
থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না। এরপর যখন পশ্চিম আকাশ থেকে
সূর্য উদিত হবে, তখন
সব মানুষই আল্লাহ’র
উপর ঈমান আনবে। কিন্তু এর পূর্বে যে ব্যক্তি ঈমান আনেনি বা ঈমানের সাথে সৎ কাজ
করেনি, সে
ঈমান তার কোন উপকারে আসবে না।” (বুখারি
– কিতাবুর
রিকাক, হাদিস
৬৫০৬; মুসলিম
– কিতাবুল
ঈমান, হাদিস
১৫৭)
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, “যখন
তিনটি নিদর্শন প্রকাশ পাবে তখন কোনো ব্যক্তির ঈমান তার উপকারে আসবে না, যদি সে এর পূর্বে ঈমান না এনে থাকে অথবা
ঈমানের সাথে কোন নেক আমল সঞ্চয় না করে থাকে,
(নিদর্শন তিনটি হল) –
পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়া, দাজ্জালের আবির্ভাব আর দাব্বাতুল আরদ্বা
জমিন থেকে একটি জন্তুর আবির্ভাব।” (মুসলিম
– কিতাবিল
ঈমান, হাদিস
১৫৮)
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, “যদি
একজন ব্যক্তি পশ্চিম থেকে সূর্য উঠার পূর্বেই তাওবা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” (মুসলিম –
কিতাবুয যিকর ওয়াদ-দুয়া,
হাদিস ৪৩/২৭০৩)
আবু মুসা আশয়ারি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মহান
আল্লাহ রাতে নিজ হাতকে প্রসারিত করেন,
যাতে করে দিনের পাপকারী বান্দা তাওবা করে; আর দিনে নিজ হাত প্রসারিত করেন যাতে
রাতে পাপকারী বান্দা তাওবা করে – (এমনটি
হতে থাকবে) যে পর্যন্ত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয়।” (মুসলিম –
কিতাবুত তাওবা,
হাদিস ৩১/২৭৫৯)
অসুস্থতা, মৃত্যু
বা এই নিদর্শনগুলোর কোন একটি নিদর্শন সৎ কাজ করা থেকে বিরত করার পূর্বেই একজন
মুমিনের উচিত সৎ কাজ করার ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হওয়া।
আবু হাযিম বলেন,
“সব লোকই পরকালের মাল বিক্রি করে দেয় না; যারা পরকালের মাল খরচ করে ফেলে, তারা কেউই পরকালের কোন মাল কিনতে সক্ষম
হয় না।”
একজন ব্যক্তি যদি সৎ কাজ না করে তবে তার তো উচিত অনুতপ্ত হওয়া, আর যে অবস্থায় সে সৎ কাজ করতে পারবে সে
অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য আকাংখা করা। আল্লাহ বলেছেন,
وَأَنِيبُوا
إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ
لَا تُنصَرُونَ ﴿٥٤﴾ وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم
مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ ﴿٥٥﴾
أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَا حَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنبِ اللَّـهِ وَإِن
كُنتُ لَمِنَ السَّاخِرِينَ ﴿٥٦﴾
أَوْ تَقُولَ
لَوْ أَنَّ اللَّـهَ هَدَانِي لَكُنتُ مِنَ الْمُتَّقِينَ ﴿٥٧﴾ أَوْ تَقُولَ حِينَ
تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ ﴿٥٨﴾
“সুতরাং
তোমরা তোমাদের রবের দিকে ফিরে আসো আর তার কাছেই (পূর্ণ) আত্মসমর্পণ করো তোমাদের
উপর আল্লাহ’র
আযাব আসার পূর্বেই, (কেননা
একবার আযাব এসে গেলে) এরপর তোমাদের আর কোনো রকম সাহায্য করা হবে না। তোমাদের
অজান্তে তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে কোন রকম আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বেই তোমাদের কাছে
তোমাদের রব যে উৎকৃষ্ট (কিতাব) নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো;
(এরপর
এমন যেন না হয়,) কেউ
(একদিন) বলবে, হায়
আফসোস! আল্লাহ’র
প্রতি আমার কর্তব্য পালনে আমি দারুন শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো (মূলত) ছিলাম ঠাট্টা
বিদ্রুপকারীদেরই একজন। কিংবা (কেউ) যেন একথা না বলে,
যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করতেন, তবে আমি অবশ্যই মুত্তাকীদের দলে শামিল
হয়ে যেতাম।
অথবা আযাব সামনে দেখে কেউ বলবে,
আহা, যদি
আমার (আবার) দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া (নসীবে) থাকতো,
তাহলে আমি সৎ কর্মশীল বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যেতাম।” (সূরাহ আয-যুমার, ৩৯ :৫৪-৫৮)
حَتَّىٰ
إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ ﴿٩٩﴾ لَعَلِّي أَعْمَلُ
صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِن
وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ ﴿١٠٠﴾
“এমনকি
(এ অবস্থায় যখন) এদের কারো মৃত্যু এসে হাজির হবে,
তখন সে বলবে, হে
আমার রব, আপনি
আমাকে (আরেকবার দুনিয়াতে) ফেরত পাঠান,
যাতে করে (সেখানে গিয়ে) এমন কিছু সৎ কাজ করে আসতে পারি, যা আমি (পূর্বে) ছেড়ে এসেছি; (তখন বলা হবে,) না,
তা আর কখনোই হওয়ার নয়;
(মূলত) সেটা হল এক (অসম্ভব) কথা,
যা সে শুধু বলার জন্যই বলবে,
এ (মৃত) ব্যক্তিদের সামনে একটি যবনিকা (তাদের আড়াল করে রাখবে)
সে দিন পর্যন্ত, যেদিন
তারা (কবর থেকে) পুনরুত্থিত হবে।” (সূরাহ
আল-মু’মিনুন, ২৩ :৯৯-১০০)
وَأَنفِقُوا
مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ
رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ
الصَّالِحِينَ ﴿١٠﴾ وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّـهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا ۚ
وَاللَّـهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿١١﴾
“আমি
তোমাদেরকে যা কিছু অর্থ সম্পদ দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহ’র পথে) ব্যয় করো তোমাদের কারো মৃত্যু
আসার পূর্বেই, (কেননা
সামনে মৃত্যু এসে দাঁড়ালে সে বলবে,)
হে আমার রব, আপনি
যদি আমাকে আরও কিছু কালের
অবকাশ দিতেন তাহলে আমি আপনার পথে দান করতাম এবং (এভাবেই) আমি
আপনার সৎ কর্মশীল বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যেতাম। কিন্তু যখন কারো আল্লাহ
নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন
আল্লাহ আর তাকে (এক মুহূর্তও) অবকাশ দিবেন না;
তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) যা কিছু করছো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত
আছেন।” (সূরাহ
আল-মুনাফিকুন, ৬৩
:১০-১১)
সুতরাং একজন মুমিনের উচিত সৎ কাজ করার মাধ্যমে বাকি জীবনটা
ব্যয় করা।
সাই’দ
বিন যুবাইর বলেছিলেন, “একজন
মুমিনের জীবনে প্রতিটা দিনই হল একটি সম্পদ।”
বাকর আল-মুযানি বলেন,
“আল্লাহ’র
সৃষ্টি করা প্রতিটি দিন বলে, ‘হে
আদম সন্তান, আমাকে
ব্যবহার করো, হয়তোবা
তুমি আরেকটি দিন বেঁচে থাতে পারবে না।’
আল্লাহ’র
সৃষ্টি করা প্রতিটা রাত বলে, ‘হে
আদম সন্তান, আমাকে
ব্যবহার করো, হয়তোবা
তুমি আরেকটি রাত বেঁচে থাকতে পারবে না।’
”
হাদিসের তাফসীরটি ইমাম ইবন রজব এর কিতাব জামি'আল 'উলুম
ওয়াল হিকাম এর ইংলিশ ভার্শন থেকে ট্রান্সলেশন করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment