https://justpaste.it/lekhacollection
লেখা সংকলন ১
স্পেন যখন মুসলিমদের ছিল
মোহসিন কামাল
স্পেনকে অধিকাংশ বাঙ্গালী চিনে খেলার কারনে। আহ স্পেন!!
জানেন এই দেশ ছিলো কাদের?
কারা ছিলো এই ভুখন্ডের আলিম?
এভূমিতে জন্মেছিলেন ইমাম ইবনে আব্দিল বার, ইমাম কুরতুবি ও ইমাম ইবনে হাজমের মতো মহান মনীষী। ইবনে রুশদ, আল জাহরাউয়ির মতো দুনিয়া কাঁপানো বিজ্ঞানীরাও এ মাটির সন্তান। মুসলিম আন্দালুস শুধু আজকের স্পেন নয়, বরং স্পেনের সীমানা ছাড়িয়ে পর্তুগালেরও বিরাট একটি অংশ আন্দালুসের অধীন ছিল। আন্দালুস মরক্কো থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। দুই দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক ব্যবধান হয়ে আছে জিব্রাল্টার প্রণালি। যার মূল উচ্চারণ ছিলÑ জাবালুত তারিক। স্পেন বিজেতা মহাবীর তারিক বিন জিয়াদ (রহ.) এর নামে। অপরদিকে পিরেনিজ পর্বতমালা আন্দালুস এবং ফ্রান্সের মাঝে অন্তরায় হয়ে আছে। এ পর্বতশ্রেণী পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৩০০ মাইল বিস্তৃত। মাগরিব (বর্তমান মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া) অঞ্চলের গভর্নর মুসা বিন নুসাইরের নির্দেশে স্পেন বিজেতা তারিক বিন জিয়াদ (রহ.) মাত্র ৭ হাজার সৈন্য নিয়ে আন্দালুসে আসেন। সময়টা ছিল ৯২ হিজরির শাবান মোতাবেক ৭১১ খ্রিস্টাব্দের জুনে। এভাবেই জয়যাত্রা এগোতে থাকে। প্রায় ২ বছরে এ জয় পূর্ণতায় পৌঁছে। মুসলিমদের অধীন এ ভূখ-ের দিকে পুরো মনোযোগী হন পরবর্তী সুলতানরা। রক্ত-ঘামে গড়ে তোলেন এ উদ্যান। সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ভরিয়ে তোলেন পূর্ণতার বহু উপাদানে। শুধু মুসলিম স্থাপত্যের তালিকায় জায়গা পেয়েছে আল হামরা, কর্ডোভা জামে মসজিদ থেকে শুরু করে বিশ্বনন্দিত বহু স্থাপনা। দশম শতকের মাঝামাঝিতে আন্দালুসের ইসলাম স্বর্ণযুগে পৌঁছায়। প্রায় ৫০ লাখ মুসলিমের আবাসস্থল হয় আন্দালুস, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি। একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ উমাইয়া খেলাফত এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। আর আন্দালুস হয়ে উঠেছিল ইউরোপের সবচেয়ে অগ্রগামী এবং স্থিতিশীল অঞ্চল। আন্দালুসের রাজধানী কর্ডোভা আকর্ষণ করছিল গোটা মুসলিম বিশ্বের এবং ইউরোপের জ্ঞানপিপাসুদের। তৎকালীন ইউরোপে গোসলখানাকে হাম্মাম বলে গণ্য করা হতো, অথচ কর্ডোভায় ছিল ৯০০ পাবলিক বাথ। দশম শতকে কর্ডোভায় ছিল ৭০০ মসজিদ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ১৫৬৭ সালে এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দালুসের মুসলিম শাসনামলে নির্মিত সব হাম্মাম (গোসলখানা) ভেঙে দেয়া হয়। আধুনিক শল্যবিদ্যার জনক আবুল কাসিম আল জাহরাউয়ি, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ইবনে রুশদ, জাবির ইবনে আফলা, আবু ইসহাক ইবরাহিম আল জারকালি ও ইবনে জুহরদের ত্রিকোণমিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শল্যচিকিৎসা, ওষুধ ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত গবেষণার ফলে ইসলামী ও পশ্চিমা সমাজ অগ্রগতি অর্জন করে। আন্দালুস ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হতো এবং তা মুসলিম ও খ্রিস্টান বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদানের কেন্দ্র স্থল হয়ে উঠে। উইকিপিডিয়ার মতে, দ্বাদশ শতকের বিখ্যাত ইউরোপিয়ান দার্শনিক বিজ্ঞানী মিশেল স্কট প্রথম ইবনে রুশদের গবেষণা ইউরোপে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে ইউরোপের রেনেসাঁ আন্দোলনে মিশেলের প্রভাব প্রমাণিত ছিল। আবুল কাসিম আল জাহরাউয়ির শল্যচিকিৎসাবিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ আত তাসরিফ এ ভূখ-েই রচিত হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে যা ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত হচ্ছিল। ইমাম কুরতুবি (রহ.) এর বিখ্যাত তফসির ‘আল জামি লি আহকামিল কোরআন’ আজও মুসলিম বিশ্বের লাইব্রেরির অনন্য সংযোজন। ইমাম ইবনে আব্দিল বার (রহ.) এর রচিত হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল ইসতিজকার’ এবং ‘আত তামহিদ’ বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম গবেষকদের কাছে আদৃত সমাদৃত হয়ে আছে। যাই হোক, এ স্বর্ণযুগ চিরকাল স্থায়ী হয়নি। ১১০০ শতাব্দীর দিকে খেলাফত ভেঙে যায় এবং অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেগুলোকে বলা হতো ‘তাইফা’। এতেও রক্ষা হলো না। মুসলিম সাম্রাজ্য ছোট হতে হতে একেবারে গ্রানাডার মানচিত্রে সীমায়িত হয়ে পড়ে। এ গ্রানাডাই ছিল আন্দালুসের শেষ মুসলিম শহর। তারপরের ইতিহাস শুধু অশ্রু আর রক্তের। গ্রানাডার শেষ শাসক মুহাম্মদ। ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে রাজা ফার্ডিনান্দ ও ইসাবেলার সেনাবাহিনী গ্রানাডা শহর চতুর্দিক দিয়ে ঘেরাও করে ফেলে। সুলতান মুহাম্মাদ তার আলহামরা প্রাসাদের মিনার থেকে দেখতে পায় যে, খ্রিস্টান বাহিনী গ্রানাডা শহর বিজয়ের জন্য জড়ো হচ্ছে এবং আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মুহাম্মাদ সবকিছু অন্ধকার দেখতে পায় এবং শেষমেশ কোনো উপায়ান্তর না দেখে ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে খ্রিস্টানদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যা খ্রিস্টানদের গ্রানাডা শহরের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। ২ জানুয়ারি ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে এ চুক্তি কার্যকর হয় এবং স্পেনীয় বাহিনী গ্রানাডায় প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দালুসের সর্বশেষ মুসলিম রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
প্রচলিত ছাত্র রাজনীতিঃ বাস্তবতা
সাজিদ ইসলাম
কট্টর ছাত্রলীগার একজনকে চিনতাম। আমরা যখন হলে উঠি তখন থেকেই একনামে তাকে সবাই চিনত। সবাই তার ভয়ে তটস্থ থাকতাম। ঢাবির হলে সিট বরাদ্ধ পেয়ে আরাম করে সেই সিটে উঠে পড়ার সিস্টেম নেই, ফার্স্ট ইয়ারে তো কল্পনাই করা যায় না। পরিচিত কারো মাধ্যমে ছাত্রলীগের 'ভাইয়া' ধরে কোনমতে গণরুমে থাকার একটু ব্যবস্থা হয়। হলে ছাত্রলীগের গ্রুপ থাকে, হলে উঠতে হলে কোন না কোন গ্রুপের আন্ডারে উঠতে হয়। সেরকম একটা গ্রুপের 'বড় ভাই' ছিলেন ভদ্রলোক, সামনের কমিটির পদ প্রত্যাশী। আমাদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত ছিলো, হলে একটা ছেলেও পাওয়া যাবে না, যার মনে ঐ পাতি নেতার জন্য ক্ষোভ নেই। সমস্ত ছেলের অন্তরের বদ-দু'আ তার সাথে আছে, এবিষয়ে আমরা সবাই একমত ছিলাম।
.
পলিটিক্স করতে গিয়ে ইয়ার ড্রপ দিতে দিতে নিজের ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমাদের বেশ সিনিয়র হলেও একসময় আমাদের জুনিয়রে পরিণত হলেন। রাজনীতির পেছনেই লেগে থাকতেন। সেই রাজনীতির জন্য, একটা পদের জন্য সবার সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করতেন, ঐ যে বললাম- সবার অন্তরের বদ-দু'আ তার সাথে আছে।
.
অবশেষে কমিটি হলো। পুরো ছাত্রজীবন ধরে রাজনীতি করে যাওয়া সেই ভদ্রলোক কোন পদ পেলো না। হল কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি কোথাও না। মুহুর্তেই পুরো দৃশ্যপট চেঞ্জ হয়ে গেলো। একসময় যার ভয়ে সবাই তটস্থ থাকতো, অনেক দূর দিয়ে গেলেও ছুটে গিয়ে হাত মিলাতে সবাই দৌড়াদৌড়ি করতো, এখন সামনে পড়লেও তার দিকে কেউ তাকিয়েও দেখে না। হলের ক্যান্টিন থেকে এখন আর তার জন্য খাবার যায় না, প্রায়ই দেখতাম চুপি চুপি এসে ক্যান্টিনের এক কোণায় বসে খাবার খাচ্ছে, হাতে চাকরীর পরীক্ষার বই নিয়ে ঘুরছে। একদিন তার সময় ছিলো, সেই সময়ে সে মানুষের সাথে যেমন আচরণ করেছে, যখন সময় চলে গেলো, তাকে দেখেই এখন সবাই করুণার চোখে তাকায়।
.
বন্ধুদের অনেকেই রাস্তায় বাস ভাংচুর করে, ক্যাম্পাসে মারামারি করে, হলে শিবির পিঠিয়ে এসব পাতি নেতাদের ডান হাত, বাম হাত হয়েছিলো। পড়াশোনা শেষে এখন রোজ নিয়ম করে লাইব্রেরীতে চাকরীর পড়াশোনা করছে। আগের সেই চলন বলন আর নেই, দেখা হলেই গলার স্বর নিচু।
.
কৌটা আন্দোলনের রাশেদ আমার ভার্সিটির ছোটভাই। নিতান্তই সহজ সরল ছেলে। কারো সাতে পাঁচে নেই। হঠাৎ একদিন দেখি পত্রিকা, টিভি সব জায়গায় তাকে দেখাচ্ছে। কৌটা আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে। যারা এই ছেলেগুলোকে নির্লজ্জের মত পেঠাচ্ছে তাদের কারো কারো চেহারাও চেনা, খুব পরিচিত। এরা সেইসব পাতি নেতা। সামনে কমিটি হবে, পদপ্রার্থী। পত্রিকায়, ফেসবুকে, টিভি ক্যামেরার সামনে কিল, ঘুসি, লাথি মারার চমকপ্রদ পোজগুলো এদের পদ পাওয়ার যোগ্যতা। এগুলো দেখিয়েই তারা কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য এটা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু সময় বড় অদ্ভুত জিনিস। একদিন তোমাদেরও সময়টা পাল্টে যাবে, সবারই যায়। কুত্তার দামও একদিন কেউ তোমাদের দিবে না। সেই সময়টা আসবে, আলবৎ আসবে।
.
মানুষের অভিশাপ, বদ'দু'আ, নিঃশব্দে দু'ফোটা চোখের পানি, আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস- খুবই ভয়াবহ জিনিস। আল্লাহ্ রাব্বুল ইযযাতের দরবারে যদি একটা বদ'দু'আ কবুল হয়ে যায়, যদি এক ফোটা চোখের পানি আরশ মহলে পৌঁছায়, সেটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। 'হাসবুনাল্লা-হু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল
মারওয়ান ইবনুল হাকাম (রা.) : জানা-অজানা
আতীক উল্লাহ আতীক
-আচ্ছা, উমার ইবনে আবদুল আযীয রহ. সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
-সর্বকালের সেরা ন্যায়পরায়ন শাসকদের অন্যতম!
-তাহলে তিনি যদি এমন ন্যায়পরায়ন হয়ে থাকেন, তার বাবা কেমন হবেন?
-বাবা ভাল না হলে কি ছেলে এমন হতে পারেন?
-তার দাদা?
-তার দাদাও অবশ্যই ভাল হবেন! তিনি কে?
-মারওয়ান ইবনুল হাকাম রা.।
-কিন্তু তার সম্পর্কে যে আমরা নানামুখী কথা পড়েছি?
-আপনি কী পড়েছেন না পড়েছেন তার দায় একজন সাহাবীর কাঁধে ফেলবেন কেন? দুষ্ট-ভ্রষ্ট লেখকের ঘাড়ে ফেলুন!
মারওয়ান ইবনুল হাকাম। একজন সাহাবী রা.। যদি বলি তিনি হলেন ইসলামী ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি, খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে বলে মনে হয় না। উসমান রা., মুয়াবিয়া রা ও মারওয়ান রা: এই তিনজনের আলোচনা ছাড়া ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ অসম্পূর্ণই থেকে যায় বলা যায়।
অনেকদিন ধরেই হযরত মারওয়ান রা.-এর সাথে লেগে আছি। উসমান রা.-এর মতো মানুষ কি যাকে তাকে কলমচি নিয়োগ দিতে পারেন? মুয়াবিয়া রা.-এর মতো ন্যায়পরায়ন মানুষ যাকে একাধিক বার মদীনার গভর্নর নিয়োগ দেন, তিনি কি হেলাফেলার লোক হতে পারেন? এই প্রশ্নগুলোই কুরে কুরে খাচ্ছিল বিবেকটাতে! প্রশ্নগুলো ছিলো আবেগপ্রসূত! সাহাবীদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে উৎসারিত! কিন্তু আবেগ-শ্রদ্ধা তো নিজের কাছে, অন্যরা সেটা মানবে কেন? তারা তো ছুতানাতা পেলেই সমালোচনা করতে লেগে পড়ে!
প্রথমেই তার কিছু বৈশিষ্ট্য ক্রমিকাকারে তুলে ধরা যাক:
(এক) আবদে মানাফে গিয়ে নবীজি সা. ও মারওয়ানের বংশধারা মিলিত হয়েছে। তিনি কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত শাখা ‘উমাইয়া’-এর সন্তান। উসমান এবং মুয়াবিয়া রা.ও এই শাখার মানুষ।
(দুই) জন্ম-মৃত্যু ২-৬৫ হিজরী। ৬২৩-৬৮৫ ঈসায়ী। অর্থাৎ নবীজি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করার দুই বছর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মানে দাঁড়াল, নবীজির ওফাতের সময় তার বয়েস ছিল আট। জন্ম হয়েছে মক্কায়। মৃত্যু দিমাশকে। মক্কা বিজয় হয়েছে অষ্টম হিজরীতে। এর প্রেক্ষিতে বলা যায়, ছয় বছর বয়েসে নবীজিকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। মদীনায় এসেছিলেন নবীজির ওফাতের পর। এমনিতে বাবার সাথে তায়েফে থাকতেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় মদীনায় কেটেছে। এযীদের শাসনকালে তাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কারন মদীনা তখন আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর খিলাফতের অধীন হয়ে পড়েছিল।
(তিন) তিনি নবীজি সা. থেকে একটা হাদীস বর্ণনা করেছেন। হোদায়বিয়ার সন্ধি সম্পর্কিত। ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহে হাদীসটা এনেছেন। চার বিখ্যাত সুনানের কিতাবেও তার হাদীস আনা হয়েছে। ইমাম বুখারী রহ. যার হাদীস তার গ্রন্থে এনেছেন, তার সম্পর্কে আর কোনও সনদ লাগে? যারা তার সম্পর্কে এটাসেটা বলে-লিখে বেড়ায় তাদের নিজেদের গায়েই কি থুতু গিয়ে পড়ে না!
(চার) তিনি বড় বড় সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। উমার, উসমান, আলি, যায়েদ বিন সাবিত বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। শেষোক্ত মহিলা সাহাবীটি ছিলেন তার আদরের খালা।
মারওয়ানের কাছ থেকে বড় বড় তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমনকি শী‘আরা যাকে তাদের ইমাম মানে, আলি বিন হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) রহ.-ও তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। শী‘আদের কথা মতো মারওয়ান যদি এতই খারাপ হতেন, তাদের একজন প্রধান ইমাম কিভাবে হাদীস বর্ণনা করলেন?
সাহল বিন সা‘দ রা.একজন বিশিষ্ট সাহাবী। তিনিও মারওয়ান থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(পাঁচ) কুরআন কারীম বিষয়ে মারওয়ান রা.-এর ভিন্নমাত্রার পান্ডিত্য ছিল। মদীনার থাকার দরুন ইলমুল ফিকহ ও ইলমুল হাদীসেও অগাধ দখল এসে গিয়েছিল। হালাল-হারাম বাছবিছার করে চলতেন। ফিকহের ক্ষেত্রে বড় বড় সাহাবী তার মতামতের মূল্য দিতেন। ইমাম মালেক
(ছয়) মুয়াবিয়া রা.তাকে একাধিকবার মদীনার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। সে সুবাদে মারওয়ান দীর্ঘদিন হজের সময় আমীরুল হজ হিশেবে নিয়োজিত ছিলেন। যে কেউ এই পদে বসতে পারে না। নবীজি সা. থেকে শুরু করে চার খলীফা এই পদ অলংকৃত করে গিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে বড় বড় সাহাবী হজ করেছেন। কেউ কোনও আপত্তি তোলেন নি।
(সাত) বড় দানশীল মানুষ ছিলেন। গভর্নর হয়েও সাধারন মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন। বায়তুল মাল থেকে যথাসাধ্য দেয়ার চেষ্টা করতেন। ব্যক্তিগত ভান্ডার থেকেও মানুষকে সাহায্য করতে পিছপা হতেন না। কারবালার ঘটনার পর, আলি বিন হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) রহ. মদীনায় ফিরে এলেন। নিঃস্ব অবস্থায়। অসহায় হয়ে। মারওয়ান তখন আলি বিন হুসাইনকে ৬ হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) করয দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় বড় ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ানকে ওসীয়ত করে গেছেন:
-তুমি আলি বিন হুসাইনের কাছে ছয় হাজার দীনার করয কখনোই ফেরত চাইবে না!
(আট) হাসান ও হুসাইন রা. মদীনায় দীর্ঘদিন মাওয়ানের ইমামতীতে নামায পড়েছেন। কখনো আপত্তি তোলেন নি। বড় বড় সাহাবীও তাকে ইমাম হিশেবে মেনে নিতে কোনও প্রকারের আপত্তি তোলেন নি।
(নয়) মারওয়ানের প্রতি আলি রা.-এরও বিশেষ নযর ছিল। জঙ্গেজামাল বা উষ্ট্রীযুদ্ধের দিন, আলি রা. বারবার মারওয়ান সম্পর্কে খোঁজ করছিলেন। কাছের লোকেরা অবাক হয়ে জানতে চাইলো:
-আপনি তার জন্যে এমন উতলা হলেন কেন? সে তো আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে?
-তা নিক! তার প্রতি আমার এক ধরনের স্নেহ আছে। সে কুরাইশ যুবকদের অন্যতম সর্দার!
(দশ) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মারওয়ানের আদর্শ ছিলেন উমার রা.। তিনি পদে পদে উমার রা.-এর গৃহীত পদক্ষেপ অনুসরনের চেষ্টা করতেন। গভীর বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। গায়ের জোরে কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন না। তার অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য ছিল মুশাওয়ারা। কোনও বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হয়ে পড়লে, মদীনায় বাস করা সাহাবীদের ও মুরুব্বীস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে জমায়েত করে, তাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন।
মদীনায় তখন মাপ-পরিমাপের জন্যে বিভিন্ন রকের বাটখারার প্রচলন ছিল। তিনি সবার সম্মতিক্রমে একটা সুনির্দিষ্ট বাটখারা ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। সেটার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘মারওয়ানী বাটখারা’।
(এগার) তিনি মদীনায় থাকায় বড় একটা সুবিধা এই হয়েছিল: তার দুই ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ান ও আবদুল আযীয বিন মারওয়ান এখানকার ইলমী ও আমলী পরিবেশে বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন। আরও সুখের কথা হলো: নাতি উমার বিন আবদুল আযীযও এমন বিরল সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন জন্মসূত্রেই। ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম! উমার বিন আবদুল আযীয মদীনায় শৈশব কাটানো, আল্লাহরই গায়েবী বন্দোবস্ত!
(বারো) খেলাফতে বনি উমাইয়ার মেয়াদকাল ছিল ৪১-১৩২ হিজরী। ৬৬২-৭৫০ ঈসায়ী। মুয়াবিয়ার রা.-এর নাতি দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর, তার উপযুক্ত কোনও সন্তান ছিল না খলীফা হওয়ার মতো। বংশের মধ্যে একমাত্র উপযুক্ত ছিলেন মারওয়ান বিন হাকাম। তাকে খলীফা নির্বাচিত করা হলো। তার শাসনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত। এক বছরেরও কম ,মাত্র নয়মাসের। সংক্ষিপ্ত হলে কী হবে, তিনি এর মধ্যেই উমাইয়া খিলাফাহকে শক্ত একটা ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। খেলাফতে রাশেদার সাথে থাকার বরকত, মুয়বিয়া রা.-এর সঙ্গ তাকে মেধা-তাকওয়াকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
(তেরো) মারওয়ান যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করেন, তখন অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর খিলাফত দোর্দন্ড প্রতাপে চলছে। মুসলিম জাহানের বেশির ভাগ অঞ্চল তার হাতে বায়আত নিয়েছে। দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর উমাইয়াদের প্রধান দুর্গ দিমাশকের বিরাট একটা অংশও ইবনে যোবায়ের রা.-এর অধীনে চলে গিয়েছিল। খোদ দিমাশকের গভর্নরও বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন। এহেন নড়বড়ে অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানো সাধারন ব্যাপার নয়। হয়তো পারতেনও না, কিন্তু মদীনার কিছু অভিজ্ঞ যোদ্ধা ইবনে যোবায়েরের হাতে দৌড়ানি খেয়ে দিমাশকে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারাই বুদ্ধি-পরামর্শ-সাহস যুগিয়ে মারওয়ানকে আগে বাড়তে সাহায্য করেছে!
(চৌদ্দ) মারওয়ান ইবনুল হাকাম ছিলেন সাহসী যোদ্ধা। শত বিপদেও ধৈর্য ও সাহস কোনওটাই হারাতেন না। উসমান রা.-এর ওপর যখন কুচক্রীরা হামলা করলো, মারওয়ান অসম সাহসিকতার সাথে তাদের মোকাবেলা করেছিলেন। পিছপা না হলে, খলীফাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে তরবারি পরিচালনা করেছিলেন।
(পনের) মারওয়ান ইবনুল হাকামকে বলা হয় উমাইয়া খিলাফতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা। তৃতীয় খলীফা মুয়াবিয়ার পর কার্যত সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। মারওয়ান শুরুতেই কঠোরহস্তে দিমাশককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তারপর নযর দিলেন মিসরের দিকে। গুরুত্বপূর্ণ এই শহরকে করায়ত্ত করে, সেখানে ছোট ছেলে আবদুল আযীযকে বসিয়ে এলেন। এবার মনোযোগ দিলেন ইরাকের দিকে। আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর শক্ত ঘাঁটি! বিশ্বস্ত সেনাপতি ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে প্রধান করে একটা বাহিনী পাঠালেন। বাহিনী ইরাকে পৌঁছার আগেই খবর পেলো: মারওয়ান ইবনুল হাকাম ইন্তেকাল করেছেন। বড় ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ান পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়েস ছিল ৬৩ বছর।
ইবনে খালদুনের মতে: মারওয়ান সব সময় সত্যন্ধানী ছিলেন।
আবু বকর ইবনুল আরবীর মতে: মারওয়ান ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। উম্মাহর সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্যতম।
এতক্ষণ তো তার সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক:
প্রথম অভিযোগ:
নবীজি সা. হাকাম অর্থাৎ মারওয়ানের পিতাকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করে তায়েফে নির্বাসিত করেছিলেন।
উত্তর:
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ-অভিযোগকে বানোয়াাট গল্প বলে আখ্যায়িত করেছেন। মক্কা বিজয়ের পর হাকাম ইসলাম গ্রহণ করার পর, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই তায়েফে বসবাস করতে গিয়েছিলেন। থাকার জন্যে তায়েফ খুবই মনোরম স্থান!
ইবনে তাইমিয়া ছাড়া আরও অনেকেও বলেছেন, নির্বাসনের ঘটনা পুরোটাই বানোয়াট! এই অপবাদপূর্ণ ‘বর্ণনাগুলোর’ একটাও সহীহ নয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ:
আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা!
উত্তর: এটা শী‘আদের চরম মিথ্যাচার। আগেই বলা হয়েছে, হযরত আলি রা. ও অলি বিন হুসাইনের সাথে মারওয়ানের সম্পর্ক কেমন ছিল!
ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর মতে, মারওয়ান আলি বিন হুসাইনের শিক্ষকও ছিলেন।
সুতরাং এখানে শত্রুতার প্রশ্ন কোত্থেকে আসে?
তৃতীয় অভিযোগ:
খলীফার সীলমোহর ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার!
উত্তর: আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার অনুসারীরা একটা কথা বেশ ফলাও করে প্রচার করেছিল: মারওয়ান খলীফার সীল চুরি করে, মিসরের গভর্ননের কাছে চিঠি লিখেছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল: মুহাম্মাদ বিন আবু বাকর ও তার সাথীদেরকে যেন হত্যা করা হয়!
এটাও ইহুদির বাচ্চার উর্বর মস্তিস্কের আবিষ্কার। না হলে ইরাকে যে প্রতিনিধি দল চিঠি গিয়ে গিয়েছিল, তাদের গন্তব্য ছিল পূর্ব দিকে। আরেক দলের গন্তব্য ছিল পশ্চিম দিকে! ঠিক তিনদিন পর উভয় দল কিভাবে একসাথে মদীনায় জমা হতে পারলেঅ! মিসরের চিঠিতে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা ইরাকীরা কিভাবে জানতে পারলো? তাদের তো ইরাক পৌঁছে যাবার কথা?
ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু উসমান রা.-এর নামেই চিঠি লিখে নি, আলি, আয়েশা ও বড় বড় সাহাবীদের নাম ভাঙিয়েও ভূয়া চিঠি লিখে বিভিন্ন শহরে পাঠিয়েছিল। যারা এমন জালিয়াতি করতে পারে, তাদের পক্ষে কি মারওয়ানকে বিপদে ফেলার জন্যে আর দুটা ভূয়া চিঠি লেখা কি অসম্ভব?
আর মারওয়ানের ওপর তাদের আক্রোশ থাকার কারণ হলো, তিনি খলীফাকে আগলে রাখতেন। যোগ্য কলমচির মতোই আমানতদারিতার সাথে দায়িত্ব পালন করতেন। এটাই ইহুদির দোসরদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিল।
–
চতুর্থ অভিযোগ:
তালহা রা.কে হত্যা
উত্তর: এই মিথ্যা অভিযোগটা ছড়িয়েছে ওয়াকেদীর বর্ণনা থেকে। জঙ্গে জামালের দিন যুদ্ধশেষে মারওয়ান দেখলো তালহা রা.একদল লোকের মাঝে আছে। তখন মারওয়ান চিৎকার করে বলে উঠলো:
-আল্লাহর কসম! উসমানের রক্তের জন্যে এই লোক দায়ী!
এরপর তীর ছুঁড়ে তালহাকে হত্যা করেছে।
কতো বড় মিথ্যাচার! কয়েকটা বিষয় তুলে ধরলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে:
(ক): জঙ্গে জামালের দিন তালহা কার পক্ষে ছিল?
-আশেয়া রা.-এর পক্ষে।
মারওয়ান কার পক্ষে ছিল?
-আয়েশা রা.-এর পক্ষে!
তাহলে দু’জনেই একপক্ষে থেকে এতক্ষণ আলির বিরুদ্ধে লড়াই করলো, পরাজিত হয়ে যে যার জান বাঁচাতে ব্যস্ত, এহেন পরিস্থিতিতে মারওয়ান কোন বুদ্ধিতে হত্যা করতে যাবে তালহাকে?
(খ): ওয়াকেদীর বর্ণনা মতে, তালহাকে দেখেই মারওয়ান চিৎকার করে উঠেছিল! বলেছিল: উসমান হত্যার দোসর! কেন এর আগে দেখেনি? একদলে যুদ্ধ করলো, শলা-পরামর্শ করলো, তবুও দেখা হয়নি?
(গ): আর তালহা রা. যে উসমান হত্যার তীব্র বিরোধী ছিলেন সেটা কি মারওয়ানের জানা ছিল না? মারওয়ান তো সব সময় উসমানের কাছেই ছিলেন। তালহা রা. নিজের ছেলে মুহাম্মাদকে উসমান রা.-এর নিরাপত্তাবিধান করার জন্যে পাঠিয়েছেন, এটা বুঝি মারওয়ানের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে? উসমান রা. শহীদ হওয়ার পর, এই অন্যায় হত্যার বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে তালহা রা.-ই তো অগ্রণীদের মধ্যে ছিলেন!
আসলে মারওয়ান বিষয়ক বর্ণনাগুলো মিথ্যা। সবগুলোতেই শী‘আ না হয় মিথ্যা রাবী আছে।
–
পঞ্চম অভিযোগ:
খুতবা পরিবর্তন!
উত্তর: এই অভিযোগ সত্যি। ঈদের দিন আগে নামায পরে খুতবা! কিন্তু মারওয়ানের যুক্তি ছিল নামায পড়ে মানুষ খুতবা শোনার অপেক্ষা না করেই চলে যায়। খুতবায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকে, সবার শোনা দরকার! তাই খুতবাটা আগে হলেই ভাল! তার এই যুক্তি সঠিক নয়। ইসলামের কিছু বিষয় আছে ‘তাওকীফি’ অর্থাৎ আল্লাহকর্তৃক নির্ধারিত। এর কোনও পরিবর্তন নেই। পরে খুতবা দেয়ার বিষয়টাও এমন।
তবে মারওয়ানকে বিষয়টা খুলে বলার পরও তিনি খুতবা নামাযের আগে চালু রেখেছিলেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই।
ষষ্ঠ অভিযোগ:
আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা।
উত্তর: ইবনে হাযম মুহাল্লা কিতাবে লিখেছেন:
-মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিভেদ সৃষ্টি করে আলাদা রাষ্ট্য কায়েম করেন, মারওয়ান! তিনি ইবনে যোবায়েরের বিরুদ্ধে বের হয়েছেন! এছাড়া তার সবই ভাল!
অভিজ্ঞজনেরা ইবনে হাযমের এই অভিযোগকে খন্ডন করে বলেন:
-মারওয়ান কিছুতেই প্রথম বিভেদসৃষ্টিকারী নন! উল্টো ইবনে যোবায়েরের ওপরই কেউ কেউ আপত্তিটা তোলেন! তিনি ইয়াযিদের বিরুদ্ধে সসৈন্যে বের হয়েছিলেন। অথচ অবস্থা-পরিস্থিতি যাই হোক, বলতে গেলে একপ্রকার পুরো উম্মাহই ইয়াযিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলো। ৬০জন বড় বড় সাহাবীও ইয়াযিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন!
-তারা ইয়াযিদকে বায়আত দিলেও ইবনে যোবায়ের বায়আত দেন নি! তাই তার পক্ষে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা অবৈধ বলা যাবে না!
-তাহলে একই যুক্তি তো মারওয়ানের ক্ষেত্রেও খাটে! তিনিও কি ইবনে যোবায়েরের হাতে বায়আত দিয়েছিলেন? না দেন নি!
তদুপরি মারওয়ান মদীনার বৈধ গভর্নর থাকাবস্থাতেই, ইবনে যোবয়ের রা. তাকে মদীনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সে হিশেবে তিনি তার অধিকার ফিরে পেতে অভিযান চালাতেই পারেন। আর ততদিনে মারওয়ান নিজেই খলীফা হয়ে গিয়েছিলেন। দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে এই অভিযান পারিচালনা জরুরী ছিল!
আর আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর মতো সাহাবীগন ইবনে যোবায়ের রা.-এর খেলাফতকে সমর্থন জানাননি! পাশাপাশি এটা ভুলে গেলেও চলবে না, ইবনে যোবায়ের একজন সাহাবী ছিলেন! তার চিন্তাও একেবারে ফেলনা নয়! ইবনে যোবায়ের রা.কে নিয়ে না হয় আরেক দিন হবে!
মারওয়ান রা. সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা আছে। বেশির ভাগই তার নিন্দায়। সেগুলোর সনদের অসারতা প্রমাণ করতে গেলে, বিশাল বই হয়ে যাবে।
১৩-০৮-২০১৬
ইতরগুলো আলাদা হবে...
শরীফ আবু হায়াত অপু
খবিস মানে জানেন?
সূরা আনফাল এর ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর নিজের একটা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
তিনি, খবিস অর্থাৎ জঘন্য খারাপ থেকে পবিত্র বা ভালোকে পৃথক করেন।
অর্থাৎ সমাজে সব কিছু মিলে মিশে ছিল। এর পর তিনি ইতরগুলাকে আলাদা করবেন যাদের এত দিন চেনা যেত না।
খবিসগুলাকে কী করবেন সেটা আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা কুরআনে বলে দিয়েছেন। যাদের আগ্রহ আছে দেখে নেবেন।
খবিসগুলোকে আলাদা করার প্রসেসটা শুরু হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ইতরগুলা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে দিচ্ছে।
এই কুরআন আল্লাহর মুযিজা - তিনি ১৪৩৯ হিজরিতে বাংলাদেশে কী করবেন সেটা বলে দিয়েছিলেন প্রায় দেড় হাজার বছর আগে।
আল্লাহর কালাম এত জীবন্ত, এত সত্য - বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ না দেখলে আমরা কি অনুভব করতে পারতাম?
৬ জুলাই,২০১৮।
আল্লাহর সামনে পাপ করা!
শিহাব আহমেদ তুহিন
“কী করছিলি তুই?”
“কই! কিছু না তো। এমনি মোবাইল নিয়ে বসে আছি।”
আধুনিক প্রজন্মের কয়জন ছেলে-মেয়ে বলতে পারবে এ পরিস্থিতিতে তারা পড়েনি? তাদের এভাবে কারো সাথে মিথ্যা বলতে হয়নি? হতে পারে সেটা নেটে কোনো বাজে ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময়, হারাম রিলেশনশীপে কারো সাথে চ্যাটিং এর সময়। রুমের এক কোণে আমরা চুপচাপ মোবাইল-ল্যাপটপ নিয়ে এ কাজগুলো করি। তারপর হুট করে কেউ রুমে ঢুকে গেলে ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। মিথ্যে বলে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এমনো হয় হয়তো কোনো ইঁদুর পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে, আর আমরা মনে করা শুরু করি এই বুঝি কেউ দেখে ফেলেছে।
.
শুধু এ প্রজন্মের না সকল যুগেই মানুষ এ অবস্থায় পড়েছে। নির্জনে গুনাহ করতে গিয়ে মানুষের কাছে ধরা পড়ে যায় কিনা সে আশঙ্কায় ভুগেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলতেন,
“কোনো গুনাহ করার সময় যখন তোমার ঘরের পর্দা উড়ে যায়, (আর কেউ দেখে ফেললো কিনা ভেবে) তুমি ভয়ে পেয়ে যাও, তোমার এই ভয় পাওয়াটা তুমি যে গুনাহ করছো, তার চেয়েও বেশি খারাপ।” (ফাসলুল খিতাব, ২/২৯)
.
কেন এতোটা খারাপ? ইয়াহিয়া ইবনে মু‘আয (রহ) ব্যাখ্যা করেছেন,
“যে দুনিয়ার সামনে পাপ গোপন করে কিন্তু যিনি সব দেখেন, সেই আল্লাহকেই পাপ দেখিয়ে বেড়ায়, সে সবার দেখার চেয়ে আল্লাহর দেখাটাকে ছোট করে ভেবেছে। আর এটা হচ্ছে নিফাকের নিদর্শন।” (তাফসীরে যামাখশারি, ৪/২৬৫)
.
আমাদের সালাফরা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদেরকে সতর্কবার্তা দিলেন। বলে দিলেন, সবার সামনে আল্লাহর ওলী সেজে নিভৃতে আল্লাহর অরি হবার কোনো মানে হয় না।
“তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর তারা যা করে তা আল্লাহ পরিবেষ্টন করে আছেন।” (সূরা নিসা ৪:১০৮)
গণতান্ত্রিক সিস্টেমের অগ্রহণযোগ্যতা
মঞ্জুরুল করীম
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন প্রোফেসর ও সংসদ বিশেষজ্ঞ ক্লাসে বলেছিলেন,"দেখেন নির্বাচন পদ্ধতির এত ত্রুটি থাকার পরও কেউ কিন্তু এই গণতান্ত্রিক সিস্টেমের পরিবর্তন চায় না। বিরোধীদল ও সরকার দলের ওপর বিভিন্ন দোষ চাপায় অথচ মূল দায় যে সিস্টেমের তা নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই"।
সুখের বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরাও আলহামদুলিল্লাহ সিস্টেমের ত্রুটি বুঝতে পারছেন। দুঃখজনক হচ্ছে ইসলামপন্থী অনেককেই এসব বোঝাতে কালঘাম ছুটে যায়।
ঘাড় ত্যাড়ামি আর কত করবেন?
মোহাম্মদ তোয়াহা আকবর
ইন্টারে পড়ার সময় একটা ইংরেজী বই ছিলো। ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র। ওই বইয়ের ব্যাকরণ অংশটা ছিলো ক্লাস থ্রীর বইয়ের ব্যাকরণের চাইতে অনেক বেশি খুঁটিনাটি সহ বিস্তারিত, অনেক বেশি সম্পূর্ণ। ভাষার গতিপথ, ব্যবহারের নিয়মকানুন বুঝিয়ে নিজের লেখা আর কথাতে ইংরেজীকে ফুটিয়ে তোলার কায়দাকানুন বুঝবার জন্যে প্রতি ক্লাসেই গ্রামার বইগুলো আপডেইটেড হতো, বিস্তারিত আর উন্নত হতো।
.
কিছু শিখে জীবনে প্রয়োগ করবার জন্যে ধাপে ধাপে এভাবে এগুনোটা কিন্তু খুব জরুরী। এবং একজন স্মার্ট আর আন্তরিক শিক্ষক শিক্ষাকে ধাপে ধাপে উন্নত করে শিক্ষার্থীকে সযত্নে সামনে এগুতে সাহায্য করেন, পথ দেখান।
.
সবচাইতে স্নেহময়, দক্ষ আর প্রজ্ঞাময় শিক্ষক তাই যুগের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে জীবনকে সঠিকভাবে পড়ে যাপন করবার ব্যাকরণ বইকে আপডেইট করেছেন, শিখিয়েছেন অতি যতনে। নানান যুগের নানান শ্রেণীকক্ষ পেরিয়ে এই ধারা এসে অবশেষে পরিপূর্ণ হয়েছে, শেষ হয়েছে আল-কুর'আনে। এবং শিক্ষক নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন জীবনকে জানবার, যাপন করবার ব্যাকরণ এই আল-কুর'আন অনুযায়ীই শিখে শিখে প্রয়োগ করতে হবে, আগের সবগুলো কোর্স বাতিল।
.
যেহেতু, এই যুগের মানুষেরা স্মার্ট এবং খুবই আপডেইটেড, তারা ঠিকই এই সত্যটা যাচাই করে বুঝে নেবার ক্ষমতা রাখে। তারা জানে, পরীক্ষায় পাশ করতে হলে যাঁর কোর্স, তাঁর কথামতোই পড়তে হবে, চলতে হবে, লিখতে হবে। নইলে ঠিকঠিক ডাব্বা। আর সব বুঝেশুনেও ডাব্বা মারা মানে হলো, ইচ্ছে করে ডাব্বা মারা। সোজা বাংলায় যাকে বলে পাত্তা না দেয়া, বেয়াদবি করা, ঘাড় ত্যাড়ামি করা। গাদ্দারী করে মুখের উপর বলে দেয়া যে,
"মানলাম না আমি তোর এই ব্যাকরণ! আমি আমার ইচ্ছেমতন ব্যাকরণেই চলসি এবং চলবো। কী করতে পারবি কর!"
.
এদের পরিণতি যে কী পরিমাণ ভয়ংকর হবে তার বিস্তারিতও তাই তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে অতি দয়া আর করুণার কারণে, যেন এরা ভুলেও এই পথে হেঁটে, এই পরিণামকে বেছে না নেয়। সবাই যেন পাশ করে মহাপুরষ্কারপ্রাপ্ত হতে পারে, ভালো থাকতে পারে, এটাই সেই পরম করুণাময় আর নিরন্তর দয়ালু শিক্ষকের চাওয়া।
.
এরপরেও যদি কেউ গাদ্দারী আর ঘাড় ত্যাড়ামি করে ফেইল করতে চায়, খারাপ পরিণতি চায়, তাহলে নিরন্তর দয়ালু তাকে তার ইচ্ছেমতো বেছে নেয়া পরিণতিই দিবেন। জোর করে মহাপুরষ্কার দিয়ে তার সারাজীবনের সিদ্ধান্ত, সাধনার উপরে জুলুম করবেন না।
.
কারণ, উনি একজন ন্যায় বিচারক। উনি জুলুম করেন না। জোর করেন না। তবে, অপরাধের শাস্তি দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন।
ফিলিস্তিনের এ করুণ পরিণতি কেনো?
মিফতাহ আয-যামান
বনু কাইনুকার বাজারে এক মুসলিমাহ’র পোষাক কৌশলে এক ইহুদী ছিড়ে ফেলেছিল। ঠিক তখন সেখানে এক মুসলিম যুবক সেই অভিশপ্তের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে। আর বাকি ইহুদীরা এরপর সেই যুবককে হত্যা করে।
আজকে সেই যুবক কই? অথচ সেদিন দেখলাম যে কিছু যুবক এক মেয়েকে নিয়ে মিউসিকের তালে তালে ড্যেন্স করছে! জিহাদ-রিবাতের এমন ময়দানে মুজাহিদরা পড়ে তাসবীহ, তলোয়ার নেই তো কি হয়েছে? ঈমান তো আছে? কিন্তু নর-নারী একসাথে মিলে বাদ্যের সাথে নাচানাচির মানে কি? এগুলো যদি শয়তানের ইবাদাত না হয় তাহলে কি?!
অথচ দেখুন, এদের পাপাচারের কারণে পুরো জাতির উপর আযাব নেমে আসছে। আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই...
সত্যিকারের ‘শিক্ষা’
মিসবাহ মাহিন
বাবা মায়ের খুব সখ থাকে তাদের সন্তানদের ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলগুলোতে পড়িয়ে "মানুষ" করে তুলবে। অনেক স্কুল আছে যেখানে মান্থলি ফিস ৩০ হাজারেরও উপরে। ভেবে দেখুন, একজন বাচ্চা মাসিক ৩০ হাজার টাকা দিচ্ছে কেবল বেতন হিসেবে। অন্যান্য খরচ বাদ দিলাম। সেই একই দেশে এমন অনেক মাদ্রাসা আছে যেগুলোর সমস্ত ছাত্রের পুরো মাসের খরচই হয়ত ৩০ হাজার এর বেশি নয়। তারপরেও এই মাদ্রাসাগুলো অর্থাভাবে চলতে পারছে না।
.
বাহির থেকে গানওয়ালা, নাচনেওয়ালী এসে একটা টিকেট ১০ হাজার টাকা করে ডিমান্ড করে। আমাদের দু:খ বিলাসী ভাইবোনেরা লাইন ধরে টিকেট কিনে শেষ করে ফেলেন। অথচ কত মাদ্রাসা আছে যেখানে সামান্য সবজি ভাত দিয়েও খাওয়ার মত সামর্থ্য সবসময় থাকে না।
.
আমাদের এমন দেশপ্রেম শেখানো হয় যেখানে দেশের জন্য জীবন দিয়ে দেওয়া যায়, অথচ সেই দেশের মানুষগুলোর ছোট্ট সন্তানেরা কষ্ট করে আল্লাহর কুর'আন শিখছে, তাদের দিকে একটু তাকানো যায় না। বরং সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কিভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে জঙ্গিবাদের আস্তানা বানিয়ে দ্বীন শিক্ষাকে জমিন থেকে মুছে ফেলা যায়!
.
এই "চেতনা" এর পেছনে কত ইনভেস্ট! আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন এই মিথ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা কতটুকু কাজে লাগবে তা সময়ই বলে দেবে।
.
আমরা কখনই আশা করি না তাগুতি সিস্টেম থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্যাট্রোনাইজ করা হবে, সঠিন দ্বীন শিক্ষাকে এনকারেইজ করা হবে। বরং আমাদের উদ্যোগ হতে হবে নিজ অবস্থান থেকে, ব্যক্তিগতভাবে। নিজের বাসার পাশেই খবর নিয়ে দেখি কোথায় মাদ্রাসা আছে, মসজিদ আছে যেখানে অর্থাভাবে দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় নিভু নিভু পর্যায়ে আছে। আপনার সামান্য কিছু দান সদকা হয়তো আল্লাহর জমিনে আরেকজন কুর'আনে হাফিজের জন্ম দিবে, আরেকজন হকপন্থী আলেমের উত্থান ঘটাবেন। আল্লাহ আমাদের নেক নিয়াতগুলো কবুল করুন এবং তা পূরণ করার সামর্থ্য দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
সুন্নাতের গুরুত্ব
মোহসিন কামাল
সব আদেশ-নিষেধের ক্ষেত্রে রসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরন অপরিহার্য। বিদ’আত হারাম এবং প্রবৃত্তি তাড়িত মতামতকে শালিস মানা হারাম।
আবু হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে যা আদেশ দেই, তোমরা তা গ্রহণ করো এবং যে বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাকো। -সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-১।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ حَدَّثَنَا شَرِيكٌ عَنْ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم «مَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا».
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
59:7
وَمَآ ءَاتٰىكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহন কর। আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। -সূরা হাশর।
এ আয়াত দ্বারা সাহাবায়ে কিরাম সবসময়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত যে অবশ্য পালনীয় তা বর্ণনা করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এক মহিলা এসে বলল, শুনেছি আপনি উন্ধি আঁকা ও পরচুলা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করেন? এটা কি আপনি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? নাকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে পেয়েছেন? তিনি বললেন, অবশ্যই হ্যা, আমি সেটা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত সব জায়গায়ই পেয়েছি। মহিলা বলল, আমি তো আল্লাহর কিতাব ঘেটে শেষ করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। তিনি বললেন, তবে কি তুমি তাতে وَمَآ ءَاتٰىكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক” এটা পাওনি? সে বললঃ হ্যা, তারপর ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, পরচুলা ব্যবহারকারিনী, উল্কি অংকনকারীনী, ভ্ৰ ব্লাককারীনীর প্রতি আল্লাহ লা'নত করেছেন। [দেখুন, বুখারী: ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, মুসলিম: ২১:২৫, আবুদাউদ: ৪১৬৯, তিরমিয়ী: ২৭৮২, নাসায়ী: ৫০৯৯, ইবনে মাজাহ: ১৯৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৩২]
অনুরূপভাবে ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলেন যে, “তারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুযাফফাত, (এগুলো জাহেলী যুগের বিভিন্নপ্রকার মদ তৈরী করার পাত্ৰ বিশেষ) এ কয়েক প্রকার পাত্ৰ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তিলাওয়াত করলেন, (আরবি) [মুসলিমঃ ১৯৯৭, আবু দাউদঃ ৩৬৯০, নাসায়ীঃ ১৬৪৩]
সুনানে ইবনে মাজাহর শরাহ আল ইস্তিফাদার অনুবাদ থেকে ও তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া থেকে সংগ্রহ করে নিজের মতো সাজিয়ে লিখা হলো।
আখিরাতে কাদের পাশে থাকতে চাই?
এম মাহবুবুর রহমান
অনেক সময়ই বলে থাকি, এতগুলা ফুটবল প্লেয়ার এর নাম জানেন, দশ-পনেরোজন সাহাবীদের নাম বলতে পারবেন ? আসলে নাম জানলেও যে সাহাবীদের আদর্শ ধারণ করেন সেটা প্রমাণ হবে না, প্রমাণ হবে কাজ দিয়ে। কিন্তু তারপরও, এখানে বদরী সাহাবীদের নাম উল্লেখ করলাম। দেখেনতো উনাদের নাম মুখস্ত করার জন্য ইন্টরেস্ট পান কিনা। যদি ইন্টরেস্ট না পান, তাহলে আসলেই আমাদের জিজ্ঞেস করা দরকার আছে, আমরা আখিরাতে কাদের পাশে থাকতে চাই।
আনাস ইবনে মালিক(রাঃ) বর্ণনা করেন, এক বেদুঈন লোক রাসুলুল্লাহ(সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? নবী (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি সম্বল সংগ্রহ করেছো? সে বললো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের ভালবাসা। নবী (সাঃ) বললেন, তুমি যাকে ভালবাসো তার সাথেই তোমার হাশর হবে।
(মুসলিম,৮ষ্ঠম খন্ড, হা/৬৫২১)
--
মুহাজির সাহাবীঃ
১. হযরত আবু বকর (রাঃ)
২. হযরত উমর ফারুক (রাঃ)
৩. হযরত উসমান (রাঃ)
৪. হযরত আলী মোর্তাজা (রাঃ)
৫. হযরত হামজা (রাঃ)
৬. হযরত যায়েদ বিন হারেছা (রাঃ)
৭. হযরত আবু কাবশাহ সুলাইম (রাঃ)
৮. হযরত আবু মারছাদ গানাভী (রাঃ)
৯. হযরত মারছাদ বিন আবু মারছাদ(রাঃ)
১০. হযরত উবাইদা বিন হারেছ(রাঃ)
১১. হযরত তোফায়েল বিন হারেছ(রাঃ)
১২. হযরত হুসাইন বিন হারেছ(রাঃ)
১৩. হযরত আউফ বিন উসাসা (রাঃ)
১৪. হযরত আবু হুযায়ফা (রাঃ)
১৫. হযরত ছালেম (রাঃ)
১৬. হযরত সুহইব বিন সিনান (রাঃ)
১৭. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জাহাশ(রাঃ)
১৮. হযরত উক্বাশা বিন মিহসান(রাঃ)
১৯. হযরত শুজা’ বিন ওহাব (রাঃ)
২০. হযরত ওতবা বিন রবীআহ (রাঃ)
২১. হযরত ইয়াযীদ বিন রুকাইশ(রাঃ)
২২. হযরত আবু সিনান (রাঃ)
২৩. হযরত সিনান বিন আবু সিনান(রাঃ)
২৪. হযরত মুহরিয বিন নাজলা(রাঃ)
২৫. হযরত রবীআ’ বিন আক্সাম (রাঃ)
২৬. হযরত হাতেব বিন আমর (রাঃ)
২৭. হযরত মালেক বিন আমর (রাঃ)
২৮. হযরত মিদ্লাজ বিন আমর (রাঃ)
২৯. হযরত সুওয়ায়েদ ইবনে মাখশী(রাঃ)
৩০. হযরত উৎবা বিন গাযওয়ান(রাঃ)
৩১. হযরত জুবাইর বিন আউওয়াম(রাঃ)
৩২. হযরত হাতেব বিন আবি বালতাআহ(রাঃ)
৩৩. হযরত সা’দ বিন খাওলা (রাঃ)
৩৪. হযরত মুসআব বিন উমায়ের(রাঃ)
৩৫. হযরত মাসউদ বিন সা’দ (রাঃ)
৩৬. হযরত আঃ রহমান বিন আউফ(রাঃ)
৩৭. হযরত সা’দ বিন আবু উবায়দা(রাঃ)
৩৮. হযরত উমায়ের বিন আবিওয়াক্কাস(রাঃ)
৩৯. হযরত মিক্বদাদ বিন আমর(রাঃ)
৪০. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ(রাঃ)
৪১. হযরত মাসউদ বিন রাবীআ(রাঃ)
৪২. হযরত যুশ্ শিমালাইন (রাঃ)
৪৩. হযরত খাব্বাব বিন আরাত(রাঃ)
৪৪. হযরত বিলাল বিন রবাহ্ (রাঃ)
৪৫. হযরত আমের বিন ফুহায়রা(রাঃ)
৪৬. হযরত ছুহাইব বিন সিনান(রাঃ)
৪৭. হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ্(রাঃ)
৪৮. হযরত আবু সালমা বিন আব্দুল আসাদ(রাঃ)
৪৯. হযরত শাম্মাস বিন উসমান(রাঃ)
৫০. হযরত আকরাম বিন আবুল আকরাম(রাঃ)
৫১. হযরত আম্মার বিন ইয়াছির(রাঃ)
৫২. হযরত মুআত্তিব বিন আউফ (রাঃ)
৫৩. হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব(রাঃ)
৫৪. হযরত আমর বিন সুরাকা (রাঃ)
৫৫. হযরত ওয়াকেদ বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
৫৬. হযরত খাওলা বিন আবু খাওলা(রাঃ)
৫৭. হযরত আমের বিন রবীআহ (রাঃ)
৫৮. হযরত আমের বিন হারিছ (রাঃ)
৫৯. হযরত আমের বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
৬০. হযরত খালেদ বিন বুকাইর(রাঃ)
৬১. হযরত ইয়ায বিন গানাম (রাঃ)
৬২. হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ)
৬৩. হযরত উসমান বিন মাজউন(রাঃ)
৬৪. হযরত সাইব বিন উসমান (রাঃ)
৬৫. হযরত কুদামা বিন মাজউন(রাঃ)
৬৬. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাজউন(রাঃ)
৬৭. হযরত মা’মার বিন হারেছ(রাঃ)
৬৮. হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ(রাঃ)
৬৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাখ্রামা(রাঃ)
৭০. হযরত খাব্বাব মাওলা উৎবা বিন গযওয়ান (রাঃ)
৭১. হযরত আবুস্ সাইব উসমান বিন মাজউন(রাঃ)
৭২. হযরত আমর বিন আবু সারাহ(রাঃ)
৭৩. হযরত সাকাফ বিন আমর (রাঃ)
৭৪. হযরত মুজায্যার বিন যিয়াদ(রাঃ)
৭৫. হযরত খাব্বাব ইবনুল মুনযির(রাঃ)
৭৬. হযরত উমায়ের বিন আবী ওয়াক্কাছ(রাঃ)
৭৭. হযরত মিকদাদ বিন আমর (রাঃ)
৭৮. হযরত নোমান বিন আসার বিনহারেস(রাঃ)
৭৯. হযরত মিহ্জা’ মাওলা উমরফারুক(রাঃ)
৮০. হযরত ওহাব বিন আবী সারাহ(রাঃ)
আনসার সাহাবীঃ
————–
৮১. হযরত সা’দ বিন মুআজ (রাঃ)
৮২. হযরত আমর বিন মুআজ (রাঃ)
৮৩. হযরত হারেস বিন আউস (রাঃ)
৮৪. হযরত হারেস বিন আনাস (রাঃ)
৮৫. হযরত আব্বাদ বিন বিশর (রাঃ)
৮৬. হযরত সালামা বিন সাবেত(রাঃ)
৮৭. হযরত হারেস বিন খাযামা(রাঃ)
৮৮. হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামা(রাঃ)
৮৯. হযরত সালামা বিন আসলাম(রাঃ)
৯০. হযরত উবায়েদ বিন তাইয়িহান(রাঃ)
৯১. হযরত কাতাদা বিন নোমান(রাঃ)
৯২. হযরত উবায়েদ বিন আউস (রাঃ)
৯৩. হযরত নসর বিন হারেস (রাঃ)
৯৪. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন তারেক(রাঃ)
৯৫. হযরত আবু আব্স বিন জব্র (রাঃ)
৯৬. হযরত আবু বুরদাহ্ হানী বিননিয়্যার(রাঃ)
৯৭. হযরত আসেম বিন সাবেত (রাঃ)
৯৮. হযরত মুআত্তিব বিন কুশাইর(রাঃ)
৯৯. হযরত আমর বিন মা’বাদ (রাঃ)
১০০. হযরত সাহল বিন হুনাইফ(রাঃ)
১০১. হযরত মুবাশ্শির বিন আব্দুলমুনযির(রাঃ)
১০২. হযরত রিফাআ বিন আঃ মুনযির(রাঃ)
১০৩. হযরত খুনাইস বিন হুযাফা(রাঃ)
১০৪. হযরত আবু সাবরা কুরাইশী(রাঃ)
১০৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালামা(রাঃ)
১০৬. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সুহাইল(রাঃ)
১০৭. হযরত সা’দ বিন মুআয (রাঃ)
১০৮. হযরত উমায়ের বিন আউফ(রাঃ)
১০৯. হযরত আমের বিন সালামা(রাঃ)
১১০. হযরত ছফওয়ান বিন ওহাব(রাঃ)
১১১. হযরত ইয়ায বিন বুকাইর(রাঃ)
১১২. হযরত সা’দ বিন উবায়েদ(রাঃ)
১১৩. হযরত উওয়াইম বিন সায়েদাহ(রাঃ)
১১৪. হযরত রাফে বিন আনজাদা(রাঃ)
১১৫. হযরত উবায়েদ বিন আবুউবয়েদ (রাঃ)
১১৬. হযরত সা’লাবা বিন হাতেব(রাঃ)
১১৭. হযরত আবু লুবাবাহ আব্দুল মুনযির(রাঃ)
১১৮. হযরত হারেস বিন হাতেব(রাঃ)
১১৯. হযরত আসেম বিন আদী (রাঃ)
১২০. হযরত আনাছ বিন কাতাদা(রাঃ)
১২১. হযরত মাআন বিন আদী (রাঃ)
১২২. হযরত সাবেত বিন আকরাম(রাঃ)
১২৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন ছাহল(রাঃ)
১২৪. হযরত যায়েদ বিন আসলাম(রাঃ)
১২৫. হযরত রিব্য়ী বিনরাফে’ (রাঃ)
১২৬. হযরত সা’দ বিন যায়েদ(রাঃ)
১২৭. হযরত সালমা বিন সালামা(রাঃ)
১২৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যায়েদ(রাঃ)
১২৯. হযরত আসেম বিন কায়েস(রাঃ)
১৩০. হযরত আবুস্ সয়্যাহ বিননোমান(রাঃ)
১৩১. হযরত আবু হাব্বাহ বিন আমর(রাঃ)
১৩২. হযরত হারেস বিন নোমান(রাঃ)
১৩৩. হযরত খাওয়াত বিন যুবাইর(রাঃ)
১৩৪. হযরত মুনযির বিন মুহাম্মদ(রাঃ)
১৩৫. হযরত আবু আকীল আব্দুর রহমান(রাঃ)
১৩৬. হযরত আবু দুজানা (রাঃ)
১৩৭. হযরত সা’দ বিন খায়সামা(রাঃ)
১৩৮. হযরত মুনযির বিন কুদামা(রাঃ)
১৩৯. হযরত মালেক বিন কুদামা(রাঃ)
১৪০. হযরত হারেস বিন আরফাজা(রাঃ)
১৪১. হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ)
১৪২. হযরত মালেক বিন নুমায়লা(রাঃ)
১৪৩. হযরত খারেজা বিন যায়েদ(রাঃ)
১৪৪. হযরত সা’দ বিন রবী’ (রাঃ)
১৪৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনরাওয়াহা(রাঃ)
১৪৬. হযরত বশির বিন সা’দ (রাঃ)
১৪৭. হযরত সিমাক বিন সা’দ(রাঃ)
১৪৮. হযরত সুবাঈ বিন কায়েস(রাঃ)
১৪৯. হযরত আব্বাদ বিন কায়েস(রাঃ)
১৫০. হযরত ইয়াযিদ বিন হারেস(রাঃ)
১৫১. হযরত খোবায়ের বিন য়াসাফ(রাঃ)
১৫২. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কায়েস(রাঃ)
১৫৩. হযরত হারিস বিন যিয়াদ(রাঃ)
১৫৪. হযরত তামীম বিন য়াআর(রাঃ)
১৫৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমায়ের(রাঃ)
১৫৬. হযরত যায়েদ বিন মুযাইন(রাঃ)
১৫৭. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উরফুতাহ্(রাঃ)
১৫৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনরবী’ (রাঃ)
১৫৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিনআব্দুল্লাহ্(রাঃ)
১৬০. হযরত আউস বিন খাওলা (রাঃ)
১৬১. হযরত যায়েদ বিন উবায়েদ(রাঃ)
১৬২. হযরত উকবাহ বিন ওহাব(রাঃ)
১৬৩. হযরত রিফাআহ বিন আমর(রাঃ)
১৬৪. হযরত উসায়ের বিন আসর(রাঃ)
১৬৫. হযরত মা’বাদ বিন আব্বাদ(রাঃ)
১৬৬. হযরত আমের বিন বুকাইর(রাঃ)
১৬৭. হযরত নওফল বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
১৬৮. হযরত উবাদা বিন সামেত(রাঃ)
১৬৯. হযরত নোমান বিন মালেক(রাঃ)
১৭০. হযরত সাবেত বিন হায্যাল(রাঃ)
১৭১. হযরত মালেক বিন দুখশুম(রাঃ)
১৭২. হযরত রবী’ বিন ইয়াছ (রাঃ)
১৭৩. হযরত ওয়ারাকা বিন ইয়াছ(রাঃ)
১৭৪. হযরত আমর বিন ইয়াছ (রাঃ)
১৭৫. হযরত আমর বিন কয়েস (রাঃ)
১৭৬. হযরত ফাকেহ বিন বিশ্র (রাঃ)
১৭৭. হযরত নওফল বিন সা’লাবা(রাঃ)
১৭৮. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সা’লাবা(রাঃ)
১৭৯. হযরত মুনযির বিন আমর (রাঃ)
১৮০. হযরত আবু উসায়েদ মালেক(রাঃ)
১৮১. হযরত মালেক বিন মাসউদ(রাঃ)
১৮২. হযরত আবদে রাব্বিহি (রাঃ)
১৮৩. হযরত কা’ব বিন জাম্মায(রাঃ)
১৮৪. হযরত জমরাহ বিন আমর (রাঃ)
১৮৫. হযরত যিয়াদ বিন আমর (রাঃ)
১৮৬. হযরত হুবাব বিন মুনযির(রাঃ)
১৮৭. হযরত উমায়ের বিন হারাম(রাঃ)
১৮৮. হযরত উমায়ের বিন হুমাম(রাঃ)
১৮৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর(রাঃ)
১৯০. হযরত মুআজ বিন আমর (রাঃ)
১৯১. হযরত মুআউওয়াজ বিন আমর(রাঃ)
১৯২. হযরত খাল্লাদ বিন আমর(রাঃ)
১৯৩. হযরত উকবাহ্ বিন আমের(রাঃ)
১৯৪. হযরত সাবেত বিন খালেদ(রাঃ)
১৯৫. হযরত বিশ্র বিন বারা (রাঃ)
১৯৬. হযরত তোফায়েল বিন মালেক(রাঃ)
১৯৭. হযরত তোফায়েল বিন নোমান(রাঃ)
১৯৮. হযরত সিনান বিন সাঈফী(রাঃ)
১৯৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জাদ(রাঃ)
২০০. হযরত উৎবা বিন আব্দুল্লাহ্(রাঃ)
২০১. হযরত জাব্বার বিন সাখর(রাঃ)
২০২. হযরত খারেজা বিন হিময়ার(রাঃ)
২০৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন হুমায়্যির(রাঃ)
২০৪. হযরত ইয়াযিদ বিন মুনযির(রাঃ)
২০৫. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন নোমান(রাঃ)
২০৬. হযরত জহহাক বিন হারেসা(রাঃ)
২০৭. হযরত আসওয়াদ বিন যুরাইক(রাঃ)
২০৮. হযরত মা’বাদ বিন কায়েস(রাঃ)
২০৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কায়েস খালেদ(রাঃ)
২১০. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দে মানাফ্(রাঃ)
২১১. হযরত খালিদ বিন কায়েস(রাঃ)
২১২. হযরত সুলাইম বিন আমর (রাঃ)
২১৩. হযরত কুতবা বিন আমের (রাঃ)
২১৪. হযরত আন্তারা মাওলা বনীসুলাইম (রাঃ)
২১৫. হযরত আব্স বিন আমের (রাঃ)
২১৬. হযরত সা’লাবা বিন আনামা(রাঃ)
২১৭. হযরত আবুল য়াসার বিন আমর(রাঃ)
২১৮. হযরত উবাদা বিন কয়েস(রাঃ)
২১৯. হযরত আমর বিন তাল্ক (রাঃ)
২২০. হযরত মুআজ বিন জাবাল (রাঃ)
২২১. হযরত কয়েস বিন মুহ্সান(রাঃ)
২২২. হযরত হারেস বিন কয়েস(রাঃ)
২২৩. হযরত সা’দ বিন উসমান(রাঃ)
২২৪. হযরত উকবা বিন উসমান(রাঃ)
২২৫. হযরত জাকওয়ান বিন আবদেকয়েস(রাঃ)
২২৬. হযরত মুআজ বিন মায়েস (রাঃ)
২২৭. হযরত আয়েজ বিন মায়েজ(রাঃ)
২২৮. হযরত মাসউদ বিন সা’দ(রাঃ)
২২৯. হযরত রিফাআ বিনরাফে’ (রাঃ)
২৩০. হযরত খাল্লাদ বিনরাফে’ (রাঃ)
২৩১. হযরত উবায়েদ বিন যায়েদ(রাঃ)
২৩২. হযরত যিয়াদ বিন লাবীদ(রাঃ)
২৩৩. হযরত ফারওয়াহ বিন আমর(রাঃ)
২৩৪. হযরত আতিয়্যা বিন নুওয়াইরা(রাঃ)
২৩৫. হযরত খলিফা বিন আদী (রাঃ)
২৩৬. হযরত উমারা বিন হায্ম(রাঃ)
২৩৭. হযরত সুরাকা বিন কা’ব(রাঃ)
২৩৮. হযরত হারেসা বিন নোমান(রাঃ)
২৩৯. হযরত সুলাইম বিন কয়েস(রাঃ)
২৪০. হযরত সুহাইল বিন কয়েস(রাঃ)
২৪১. হযরত আদী বিন আবুয্ যাগ্বা(রাঃ)
২৪২. হযরত মাসউদ বিন আউস (রাঃ)
২৪৩. হযরত আবু খুজাইমাহ্ বিন আউস(রাঃ)
২৪৪. হযরত রাফে’ বিন হারেস(রাঃ)
২৪৫. হযরত মুআওয়াজ বিন হারেস(রাঃ)
২৪৬. হযরত নোমান বিন আমর (রাঃ)
২৪৭. হযরত আমের বিন মুখাল্লাদ(রাঃ)
২৪৮. হযরত উসাইমা আশযায়ী (রাঃ)
২৪৯. হযরত ওদীআহ বিন আমর (রাঃ)
২৫০. হযরত আবুল হামরা মাওলা হারেস(রাঃ)
২৫১. হযরত সা’লাবা বিন আমর(রাঃ)
২৫২. হযরত সুহাইল বিন আতীক(রাঃ)
২৫৩. হযরত হারেস বিন আতীক(রাঃ)
২৫৪. হযরত হারেস বিন ছিম্মাহ(রাঃ)
২৫৫. হযরত উবাই বিন কা’ব (রাঃ)
২৫৬. হযরত আনাস বিন মুআজ (রাঃ)]
২৫৭. হযরত আউস বিন সামেত (রাঃ)
২৫৮. হযরত আবু তাল্হা যায়েদ বিন ছাহল(রাঃ)
২৫৯. হযরত হারেসা বিন সুরাকা(রাঃ)
২৬০. হযরত আমর বিন সা’লাবা(রাঃ)
২৬১. হযরত সাবেত বিন খানছা(রাঃ)
২৬২. হযরত আমের বিন উমাইয়াহ্(রাঃ)
২৬৩. হযরত মুহ্রিয বিন আমের(রাঃ)
২৬৪. হযরত সাওয়াদ বিন গাযিয়্যাহ(রাঃ)
২৬৫. হযরত আবু যায়েদ কয়েস বিন সাকান(রাঃ)
২৬৬. হযরত আবুল আওয়ার বিন হারেস(রাঃ)
২৬৭. হযরত হারাম বিন মিল্হান(রাঃ)
২৬৮. হযরত কয়েস বিন আবী সা’সা(রাঃ)
২৬৯. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন কা’ব(রাঃ)
২৭০. হযরত উসাইমা আসাদী (রাঃ)
২৭১. হযরত আবু দাউদ উমাইর (রাঃ)
২৭২. হযরত সুরাকা বিন আমর (রাঃ)
২৭৩. হযরত কয়েস বিন মাখলাদ(রাঃ)
২৭৪. হযরত নোমান বিন আব্দে আমর(রাঃ)
২৭৫. হযরত জহ্হাক বিন আব্দে আমর(রাঃ)
২৭৬. হযরত সুলাইম বিন হারেস(রাঃ)
২৭৭. হযরত জাবের বিন খালেদ(রাঃ)
২৭৮. হযরত সা’দ বিন সুহাইল(রাঃ)
২৭৯. হযরত কা’ব বিন যায়েদ(রাঃ)
২৮০. হযরত বুজাইর বিন আবিবুজাইর(রাঃ)
২৮১. হযরত ইৎবান বিন মালেক(রাঃ)
২৮২. হযরত মুলাইল বিন ওবারাহ(রাঃ)
২৮৩. হযরত হেলাল বিন মুআল্লাহ(রাঃ)
২৮৪. হযরত আনাছাহ আল হাবাশী(রাঃ)
২৮৫. হযরত বাহ্হাস বিন সালাবা(রাঃ)
২৮৬. হযরত জাব্র বিন আতীক (রাঃ)
২৮৭. হযরত আবু আয়্যুব আনছারী(রাঃ)
২৮৮. হযরত খিরাশ ইবনুস সিম্মাহ(রাঃ)
২৮৯. হযরত খুরাইম বিন ফাতেক(রাঃ)
২৯০. হযরত খুবাইব বিন ইছাফ(রাঃ)
২৯১. হযরত খুবাইব বিন আদী (রাঃ)
২৯২. হযরত খিদাশ বিন কাতাদা(রাঃ)
২৯৩. হযরত খালেদ বিন সুওয়াইদ(রাঃ)
২৯৪. হযরত রাফে’ বিন আল মুআল্লা(রাঃ)
২৯৫. হযরত রুখায়লা বিন সা’লাবা(রাঃ)
২৯৬. হযরত সাব্রা বিন ফাতেক(রাঃ)
২৯৭. হযরত সুহাইল বিনরাফে’ (রাঃ)
২৯৮. হযরত সুওয়াইবিত বিনহারমালা(রাঃ)
২৯৯. হযরত তুলাইব বিন উমাইর(রাঃ)
৩০০. হযরত উবাদা বিন খাশখাশকুজায়ী(রাঃ)
৩০১. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জুবাইরবিননোমান (রাঃ)
৩০২. হযরত আবু সালামা বিন আব্দুলআসাদ (রাঃ)
৩০৩. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্স(রাঃ)
৩০৪. হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উনায়েছ(রাঃ)
৩০৫. হযরত উবাইদ বিন সা’লাবা(রাঃ)
৩০৬. হযরত উমায়ের বিন নিয়ার(রাঃ)
৩০৭. হযরত মালেক বিন আবীখাওলা(রাঃ)
৩০৮. হযরত মালেক বিন কুদামা(রাঃ)
৩০৯. হযরত মুরারা বিনরবী’ (রাঃ)
৩১০. হযরত মাসউদ বিন খাল্দাহ(রাঃ)
৩১১. হযরত মুআজ বিন হারেস (রাঃ)
৩১২. হযরত মা’কিল বিন আলমুনযির(রাঃ)
৩১৩. হযরত নোমান বিন আছার বিনহারেছ (রাঃ)
জিহাদের ফলঃ আফগান থেকে শাম, উম্মাহর জন্য শিক্ষা (১ম পর্ব)
জামিল হাসান
আল্লাহ তা’আলা শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহঃ কে দিয়ে জিহাদের ময়দানগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তাজদীদ (সংস্কার) করিয়েছেন তা হচ্ছে, জিহাদকে ত্বগুত শাসকদের অধীনতা থেকে মুক্ত করে উম্মাহর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
.
ফলস্বরুপ তাওহীদ ও জিহাদের বিশুদ্ধ মানহাজের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল জিহাদ আজ ফলদায়ক এক মহীরুহে পরিণত হয়ে গোটা দুনিয়ায় তার সুবাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে। দুনিয়ার দিকে দিকে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে একদল মুসলিম আজ দাঁড়িয়ে গেছে। তারা কোনো ত্বগুত শাসকের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এপর্যন্ত আসেনি বরং ত্বগুত শাসকদের সঙ্গে লড়াই করে আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছায় মজবুতীর সাথে টিকে আছে আলহামদুলিল্লাহ্ এবং টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
.
রুশবিরোধী আফগান জিহাদের ব্যর্থতা থেকে শাইখ উসামা রাহঃ অনুধাবন করতে পারলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ ত্বগুত শাসকদের অনুকূলে পরিচালিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই জিহাদের ফল ইসলামের পক্ষে আসবে না। ফলে রাশিয়া এবং রুশপন্থী কমিউনিস্ট দালাল নজিবুল্লার পতনের পর রব্বানী-মাসউদ এর চেহারায় নতুন ত্বগুতের আগমন ঘটে।
.
রুশ হায়েনাদের হাতে প্রায় দেড় মিলিয়ন মুসলিমের শাহাদাতের বিনিময়ে মিলল একটি ত্বগুতী শাসন ব্যবস্থা, যা আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
এমন সঙিন অবস্থায় আল্লাহ তা’আলা বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এমন এক মুজাহিদকে এই উম্মাহর জন্য কবুল করেছিলেন, যিনি একাই একটি উম্মাহ। এই মহান ব্যক্তি শেষ যামানায় প্রথম যুগের ঈমানদীপ্ত ইতিহাস তৈরি করেছেন। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতার এমন নজীর স্থাপন করেছেন, যার দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কিরামের জীবনের সাথে মিলে। তিনি আর কেউ নন আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রাহিঃ।
.
রব্বানী-মাসউদ এর ত্বগুতী শাসনব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে উসমানি খিলাফতের পর এই প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই নবতর ইসলামী রাষ্ট্র দুনিয়ার সকল ঈমানদারদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। দুনিয়ার গুরাবাগণ হিজরত করে দলে দলে সমবেত হতে লাগলেন খোরাসানের সেই বরতকতময় জিহাদের ভূমিতে। মাসজিদে আকসা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশায়, উম্মাহর দুঃখ ঘুচানোর বাসনায়, কুফরের শিরদাঁড়া ভেঙ্গে দিয়ে খিলাফতের বিজয়ডঙ্কা দিকে দিকে উড়ানোর এক মহান স্বপ্ন নিয়ে খোরাসানে ঈমানের তাজাল্লিতে ঝিকঝিক করা মুমিনদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেল গঠিত হয়েছিল। আজ সেই স্বপ্নই গ্লোবাল জিহাদে রুপ নিয়ে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত কুফফফার-মুরতাদদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্।
.
রুশবিরোধী আফগান জিহাদকে ব্যর্থ করে দেওয়ার পর সম্ভবতঃ কুফফারদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হচ্ছে শামের জিহাদকে তারা প্রায় ধংসের পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে ! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’উন। অথচ শামের জিহাদের এঅবস্থা হওয়ার কথা ছিল না।
কিন্তু শামের জিহাদের কেন আজ এই পরিণতি ? কেন পতনোন্মুখ আসাদ আবার বিজয়ীর বেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে ??
.
সেসবের কারণ জানার পূর্বে শামের বর্তমান করুণ প্রেক্ষাপটের একটু বিবরণ দেওয়া দরকার। বর্তমানে সিরিয়ার সকল বিদ্রোহী গ্রুপের কাছে সব মিলিয়ে ১৫-২০% এর মতো এলাকা আছে। এরমধ্যে আইএসের অধীনে আছে ৫% এর মতো এলাকা। আর অন্যদিকে প্রায় ৬০% এলাকা এখন বর্বর, গণহত্যাকারী হায়েনা আসাদের নিয়ন্ত্রণে। অথচ ২ বছর আগে আসাদের নিয়ন্ত্রণে মাত্র ১২-১৫% এলাকা ছিল।
.
সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলো বলতে গেলে প্রধানতঃ ইদলিব প্রদেশে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া দার’আ প্রদেশে কিছু এলাকা আছে, যেখানে বর্তমানে তুমুল লড়াই চলছে। আর কালামুন এলাকায় যৎসামান্য অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিদ্রোহীদের।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আফগান জিহাদ অতঃপর দুনিয়ার বিভিন্ন ময়দানের জিহাদের ফল যে কারণে উম্মাহর পক্ষে আসেনি, ঠিক একই কারণে শামের জিহাদের ফলও ইসলামের পক্ষে আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট শামের জিহাদের শুরু থেকে এপর্যন্ত সময়ের বিবেচনায় সবচেয়ে বেদনাদায়ক অবস্থায় আছে।
.
বেদনাদায়ক এজন্য নয় যে, তারা তাদের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বরং এজন্য যে, শামের অধিকাংশ সশস্ত্র দল এখন কোনো না কোনো ত্বগুত শাসকের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে।
এর পরিণতি কত ভয়াবহ তার সাম্প্রতিক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সিরিয়ায় সৌদি শাসকগোষ্ঠীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ‘জাইশুল ইসলাম’ নামক দলটি রাশিয়ার বিমান হামলার মুখে চুক্তি করে গত কয়েকদিন আগে তাদের মূল ঘাঁটি ও কেন্দ্র গৌতার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়া/আসাদের কাছে সমর্পন করে। এসময় এই দলটি তাদের হাতে থাকা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র অক্ষত অবস্থায় রাশিয়া/আসাদের হাতে তুলে দেয়। তাদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ৫০ টির মতো অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ছিল।
.
শুধু গৌতা নয় বরং কালামুন এলাকা থেকে ‘জাইশুল ইসলাম’, ‘আহরার আশ-শাম’ সহ আরো কিছু দল কোনো ধরণের শক্ত প্রতিরোধ করা ছাড়াই প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আসাদের হাতে তুলে দিয়ে তারা উত্তর সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
.
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সৌদি শাসকগোষ্ঠীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ‘জাইশুল ইসলাম’ নামক দলটি আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আসাদ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কিছুদিন পূর্বে গৌতায় থাকা অপর কিছু সশস্ত্র দল এবং আল-কায়েদার মানহাজের মুজাহিদদের উপর হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা ও বন্দী করে।
.
গৌতায় একাজটি তারা কাজাখস্তানের আস্তানা ও রাশিয়ার সোচি’তে রাশিয়ার সাথে আপোষরফা সম্মেলনের পর ঘটিয়েছে। রাশিয়ার সাথে এই ‘জাইশুল ইসলাম’ এবং আরো কিছু দল চুক্তি করেছে যে, তারা আল-কায়েদার মানহাজের কাছাকাছি চিন্তাধারা রাখে কিংবা তাদের সাথে সুস্পম্পর্ক রাখে এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন পরিচালনা করবে। অতঃপর রাশিয়া, আসাদ ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চূড়ান্ত শান্তি আলোচনা শুরু হবে ! কেননা গৌতায় সৌদি শাসকগোষ্ঠীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ‘জাইশুল ইসলাম’ নামক দলটির প্রধান ঘাঁটি ছিল এবং সেখানে তারা বেশ শক্তিশালী ছিল।
.
সৌদি শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট দালাল এই দলটি মুসলিমদের চেয়ে কাফির-মুশরিকদেরকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছে। মুনাফিক্বরা চিরকালই এরকমটি করে থাকে। নিকৃষ্টতম সমাজতন্ত্রী কাফির রাশিয়ার আশ্বাসে এই ‘জাইশুল ইসলাম’ অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের অনেক ক্ষতি করেছে। বিপরীতে রাশিয়া ঠিকই এদেরকে খালি হাতে গৌতা ছাড়তে বাধ্য করেছে।
.
সিরিয়ার জিহাদ থেকে কুফফারগোষ্ঠী যেনো লাভবান হতে না পারে সেজন্য আল-কায়েদার গ্লোবাল জিহাদের অভিজ্ঞ দায়িত্বশীলগণ সিরিয়ায় আল-কায়েদার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, আইএস নামক দলটির নির্বোধ ও হঠকারী নেতারা সেই বিচক্ষণ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত হতে দিল না। তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য সিরিয়ায় আল-কায়েদার উপস্থিতি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আইএস আল-কায়েদার আনুগত্য থেকে বের হয়ে নিজেরাই ইরাক-সিরিয়া নিয়ে রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয়। আমেরিকা বুঝে গেল, সিরিয়া আল-কায়েদা ও অন্যান্য মুজাহিদদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
.
দুনিয়ার কুফফারগোষ্ঠী (আমেরিকা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা) যেদিন থেকে অনুধাবন করল যে, শামের জিহাদে আল-কায়েদার সাথে যুক্ত মুজাহিদগণ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং বর্বর হায়েনা আসাদের হাত থেকে শামের মুসলিমদেরকে মুক্ত করার জন্য সবচেয়ে সুসংগঠিত ও কার্যকরী দল হচ্ছে আল-কায়েদার মুজাহিদগণ, সেদিন থেকেই কুফফার-মুরতাদ চক্র সিরিয়ার বিভিন্ন দলের উপর তাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে।
.
সিরিয়ার জিহাদ যাতে ইসলামের পক্ষে আসতে না পারে সেজন্য আমেরিকা আরব ত্বগুত শাসকদের মাধ্যমে বিভিন্ন দলকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে থাকে।
সিরিয়ায় আল-কায়েদার চিন্তাধারার মুজাহিদদের ব্যাপক বিস্তার এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা আরব ত্বগুত শাসক এবং আমেরিকাকে শঙ্কিত করে তুলল। তারা আমেরিকাপন্থী বিভিন্ন দলের সাথে আল-কায়েদার সাথে যুক্ত তৎকালীন আইসিস (তখনো তারা বাহ্যিকভাবে আল-কায়েদার মুজাহিদ বলেই চিহ্নিত ছিল) এর সংঘর্ষ বাঁধানোর ফন্দি আঁটতে থাকে।
.
অপরদিকে আইসিস সিরিয়ার বিভিন্ন দলের সাথে নিয়মিত গণ্ডগোল বাঁধাতে থাকে। আইসিসের নির্বিচার তাকফির ও খারিজী মনোভাব সিরিয়ার সকল দলের সাথে যুদ্ধ বাঁধাতে রসদ যোগায়। বন্দুকের নলগুলোর নিশানা পাল্টাতে থাকে। এতোদিন যেসব অস্ত্রের নিশানা ছিল নুসাইরি কাফির বাহিনী এখন সেগুলো ব্যবহৃত হতে লাগলো কোনো মুজাহিদ কিংবা আসাদবিরোধী কোনো গ্রুপের বিরুদ্ধে। আমেরিকা ও আরব ত্বগুত শাসকেরা এই সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগায়।
.
এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে আমেরিকা তার সর্বশক্তি নিয়ে আইএসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অন্যদিকে রাশিয়া আসাদবিরোধী দলগুলোকে নির্মূল করার জন্য আসাদের সপক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করতে থাকে।
(এপর্যন্ত লেখার তারিখ- ০৩ মে, ২০১৮)
চলবে..........
জামাতপন্থীদের ভুল গন্তব্য
জামিল হাসান
তালিবান, আল-কায়েদা ও অন্যান্য জিহাদী সংগঠনকে আমেরিকা-ভারতের তৈরি বলা জামায়াত-শিবির সমর্থকদের জন্য একটি পুরোনো হাদিয়া.....
.
আফগানিস্তানে আমেরিকার হয়ে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আফগান জামায়াত নেতা আহমাদ শাহ মাসুদকে জামায়াত সমর্থক কর্তৃক বীর মুজাহিদ আখ্যাদান বনাম এক মার্কিন দালালের ব্যাপারে সঠিক ইতিহাস। (মাসুদ-রব্বানী-জামায়াতে ইসলামীর প্রামাণিক ইতিবৃত্ত ও কিছু কথা)
.
এই সেই আহমাদ শাহ মাসুদ যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তালিবানদের ইসলামী হুকুমতের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাহায্য চেয়ে আমেরিকার জনগণের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে গণতন্ত্র কায়েমের ওয়াদা করেছে ! উইকিপিডিয়া থেকে আহমদ শাহ মাসুদের উক্ত চিঠির অংরেজি অনুবাদ পড়ুন...... https://bit.ly/2KRxw7Z
.
এই সেই আহমাদ শাহ মাসুদ যে রাশিয়ার বিদায়ের পর ইসলাম কায়েম না করে গণতন্ত্র কায়েম করেছিলো। অতঃপর তালিবানদের ইসলাম কায়েমের সময় আমেরিকার প্রকাশ্য মদদে তালিবানদের ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আফগানিস্তানে গণতন্ত্র কায়েমের জন্য সে লড়াই করেছে,সে নিজেই এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছে। দেখুন.....
The best regime in the future that can have the confidence of the people, where there would be no need for coup d’etats and armed conflicts, is one that comes about as a result of a democracy and elections… a necessity for Afghanistan. Each individual should have the right to cast a vote, and this right should belong to men and women. Both men and women would have the right to elect or be candidates for elections… It is in this regard that I think of a major role for myself… to pave the way for such a regime and such a democracy.
সাক্ষাৎকারের লিংক..... http://www.khaama.com/interview-with-ahmad-shah-massoud
.
এই সেই আহমাদ শাহ মাসুদ যার দল আফগানিস্তানকে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে এক হামলায় নিহত হলেও আমেরিকার আফগান হামলার সময় তার গঠিত জোট আমেরিকার গ্রাউন্ড ফোর্স হিসেবে সরাসরি তালিবানদের ইসলামী হুকুমতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অতঃপর এখনো পর্যন্ত তার দল বর্তমানে ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন,ইহুদী দখলদারিত্ব ইসরায়েলের অবৈধ জন্মদাতা, আমাদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস দখলকারী ইসরায়েলের রক্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাউন্ড ফোর্স হিসেবে আফগানিস্তানে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
.
এই আহমাদ শাহ মাসউদ সিআইএ থেকে কত টাকা পেতো+কী অস্ত্র পেতো এবং সিআইএ'র সাথে আহমাদ শাহ মাসউদের কী সম্পর্ক ছিলো তা বিস্তারিত জানতে মার্কিন পত্রিকা 'ওয়াশিংটন পোস্ট' এর ৫ পেইজের পুরো রিপোর্টটি কষ্ট করে পড়ুন... ........... http://www.washingtonpost.com/…/art…/A62889-2004Feb22_2.html
.
আফগান জামায়াতে ইসলামী, তার সাবেক আমীর বুরহানুদ্দীন রব্বানী এবং বর্তমান প্রধান সালাহুদ্দীন রব্বানী সম্পর্কে.....................
.
আফগান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর এবং রাশিয়া বিরোধী জিহাদের অন্যতম নেতা বুরহানুদ্দীন রব্বানী তালিবানদের বিরুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বে গ্রাউন্ড ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর পুরষ্কারস্বরুপ বুরহানুদ্দীন রব্বানীকে আমেরিকার আফগান তাবেদার সরকারের প্রেসিডেন্ট (কিছুদিনের জন্য) অতঃপর ‘পিস কাউন্সিল’ বা শান্তি পরিষদের প্রধান নিযুক্ত করা হয়।
বুরহানুদ্দীন রব্বানী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন.... https://en.wikipedia.org/wiki/Burhanuddin_Rabbani
.
আফগান জামায়াতে ইসলামী দলগতভাবে তালিবানদের ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকার হয়ে সরাসরি যুদ্ধ করেছে এবং আফগানিস্তানে দালাল-মুরতাদ সরকার কায়েম করেছে।
আফগান জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান প্রধান হচ্ছে বুরহানুদ্দীন রব্বানীর ছেলে সালাহুদ্দীন রব্বানী। সালাহুদ্দীন রব্বানী বর্তমানে ক্রুসেডার আমেরিকার একনিষ্ঠ দালাল সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে বিস্তারিত দেখুন.......
http://mfa.gov.af/…/p…/4091/minister-of-foreign-affairs/4086
https://en.wikipedia.org/wiki/Salahuddin_Rabbani
.
আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চাই, তাদের দৃষ্টিতে আমেরিকার কুফুরী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী আফগান জামায়াতে ইসলামীর হুকুম কী ??
আমেরিকার গ্রাউন্ড ফোর্সের নেতৃত্বদানকারী ও দালাল-মুরতাদ সরকার প্রতিষ্ঠাকারী মাসুদ-রব্বানীদের ব্যাপারে সুধারণার মাধ্যমে কী আমরা ধরে নেবো যে, আমেরিকার একনিষ্ঠ খাদেম মাসুদ-রব্বানীরা যেই কুফুরী সরকার কায়েম করেছে,তারাও কী একই পথ ধরছে ??
.
জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময় তালিবান ও আল-কায়েদাকে আমেরিকার সৃষ্টি বলে প্রচারণা চালায়। অথচ বাস্তব ও নগদ প্রমাণ অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমেরিকার একনিষ্ঠ দালাল হচ্ছে আফগান জামায়াতে ইসলামী। আর আমেরিকার এই দালালরা তালিবান ও আল-কায়েদার বিরুদ্ধে প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকার গ্রাউন্ড ফোর্স হিসেবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
.
আমেরিকার বুট কাঁধে বহন করা আফগান জামায়াতে ইসলামী আমেরিকার সৃষ্টি না হয়ে আমেরিকা ও কুফফার দুনিয়ার বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ তালিবান ও আল-কায়েদা কীভাবে আমেরিকার সৃষ্টি কিংবা আমেরিকার মদদপুষ্ট হয় ???
মস্তিষ্কসমেত কোনো মানুষের পক্ষে আমেরিকার দালাল কে তা চিনে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এখনো বোধশক্তি হারাননি বলে ধারণা রাখতে চাই।
আমরা আশা করছি, জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উপরোক্ত প্রমাণাদি স্বচক্ষে দেখে-পড়ে বিচার-বিবেচনা কাজে লাগাবেন। তাদের দলের নেতারা ইসলাম কায়েমের নামে তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা বুঝতে তারা যেনো আফগান জামায়াতে ইসলামীর বাস্তবতা উপলব্ধি করেন।
গণতন্ত্র নামক গাধার পিঠে আরোহন করে তারা মক্কার পথ ছেড়ে বহু আগেই ওয়াশিংটনের পথ ধরেছে। অথচ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ওয়াশিংটনের পথ অবলম্বনের জন্য তৈরি হয়নি বলেই জানি।
.
আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের যে লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী গঠিত হয়েছিলো, আজকের সচেতন প্রজন্ম সেই লক্ষ্যেই সকল মানবরচিত কুফুরী পথ-মত পরিহার করে কুফরের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত আল-কায়েদার গ্লোবাল জিহাদের সারিতে সীসাঢালা প্রাচীরের কর্মীর ভূমিকা পালন করবে এই প্রত্যাশা রাখছি।
.
জামায়াত সমর্থক কর্তৃক মার্কিন এই দালালকে বীর আখ্যাদান করে সেই লেখা..... http://www.ahmedafgani.com/2016/08/masood.html (এই লিংকটি এখন কাজ করছে না। জানি না, লেখাটি সে সরিয়ে দিয়েছে কিনা। লেখাটি সরিয়ে দিলেও তাদের চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাইনি।)
.
পোস্ট লেখার তারিখঃ ২৩ আগস্ট,২০১৭
জাস্টিস আল্লামা তাকি উসমানি (হাফিজাহুল্লাহ ) বলেন,
“আমাদের উচিত প্রত্যেক মুসলমানকে ভালোবাসা এবং সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা বহুদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে বসতেও প্রস্তুত নই। আমাদের মনে এই ভুল চিন্তা জায়গা করে নিয়েছে যে, আমি যা করছি তাই একমাত্র সঠিক। অন্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করুন। অন্যের কাজকে নিজের কাজ মনে করে কৃতজ্ঞ হোন। আল্লাহতায়ালার শোকর আদায় করুন যে, আপনার কাজকেই তিনি আরেকজনের দ্বারা করিয়ে দিয়েছেন।
এই দেশে আপনারা নিজেদের এভাবে দেখবেন না যে, তিনি সালাফি, তিনি ওয়াহাবি ইত্যাদি। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর চেয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এমন বিষয়ের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। মনে রাখুন! সব মুসলমান ভাই ভাই। আমাদের দায়িত্ব হলো, সর্বসম্মত দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা। সবাই মিলে আমরা কাজ করব। একজন সালাফি যদি কাউকে দ্বীনমুখী করেন তবে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাব। আমি সালাফি ভাইদেরও একই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। ”
তাহাজ্জুদ
আল মুজাহিদ আরমান
তাহাজ্জুদের নামায পড়লে জ্বীনে ভয় দেখায়, এটি একটি মিথ্যা কথা। বরং সহিহ হাদিসে এসেছে, "সেই সময়ের (তাহাজ্জুদের) সলাতে ফেরেশতাগণ সূর্যোদয় পর্যন্ত উপস্থিত থাকেন।" (তিরমিযি, হাদিস নং ৩৫৭৯; নাসাঈ, হাদিস নং ৫৭২)
.
তাহাজ্জুদের নামায পড়লে শরীরের রোগ দূর হয়! হাদিসে এসেছে, "...এ নামায গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে।" (তিরমিযি, হাদিস নং ৩৫৪৯; বায়হাকি, হাদিস নং ৪৮৩৩)
.
আপনি যদি তাহাজ্জুদ সলাত আদায়কারী হন তবে আপনার জন্য সুসংবাদ! আল্লাহ নিজেই তাঁর কিতাবে আপনার প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন, "যে ব্যক্তি রাতের বেলা সাজদাহরত বা দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ভয় করে এবং নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?" (সূরা যুমার, আয়াত ৯)
.
যারা নিজের নফসকে গোনাহ থেকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম হন না তাদের জন্য এই সলাত। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই রাত্রীজাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত কার্যকর।" (সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত ৬)
.
তাহাজ্জুদের দ্বারা জান্নাত লাভ হয়। রাসূল (সা.) বলেন, "হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তা রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সলাত (নামায) আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (তিরমিযি ৪/৫৬২-৫৬৩, সহিহ)
ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ এর ‘ব্যক্তিগত শত্রু কিন্তু মুসলিম’ ভাইয়ের প্রতি উদারতা
মুহাম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম
ইবনুল কয়্যিম তার মাদারিজ আস সালিকিন বইয়ে বলেন-
আমি ইবনে তাইমিয়্যা (র) এর নিকট গিয়েছিলাম একজন আলিমের মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়ার জন্য, যিনি ছিলেন তার শত্রু।
এই আলিম ইবনে তাইমিয়্যার প্রতি এতই শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন যে, তিনি তাকে হত্যা করার জন্য ফাতওয়া দিয়েছিলেন। তিনি বাদশাহর প্রতি এই বলে চিঠি লিখেছিলেন যে, “তাকে হত্যা করাই কর্তব্য এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
কাজেই সে যখন মারা গেল ইবনুল কয়্যিম তার শায়খ ইবনে তাইমিয়্যাকে খুশির সংবাদটি জানাতে গেলেন। ইবনে কয়্যিম বলেন, “আমি তাকে মসজিদে পেলাম এবং তাকে মানুষজন ঘিরে আছে।” তিনি জানতে চাইলেন, “খুশির সংবাদটি কী?” আমি জানালাম যে এই ব্যক্তিটি মারা গিয়েছেন। এটা শোনার পর তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল।
তিনি বললেন, “তুমি আমাকে একজন মুসলিমের মৃত্যুর সুসংবাদ দিচ্ছ? ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন।”
তিনি লোকজনকে বললেন, “আমার সাথে উঠ। তার পরিবারের নিকটে চল। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।”
ইবনে কয়্যিম বলেন, “ওয়াল্লহি, আমরা তার সাথে উঠে দাঁড়ালাম এবং তাদের কাছে চললাম। যখন তাদের কাছে পৌছলাম, আমরা তার সন্তানদের দেখতে পেলাম তাদের চোখ ফাটা কান্না ও আহাজারি সহ। তারা ইবনে তাইমিয়্যার বিরুদ্ধে তাদের বাবার ফাতওয়া জানত। ইবনে তাইমিয়্যাকে তাদের বাবা বেশ কষ্ট দিয়েছিল এবং তার কারণে ইবনে তায়মিয়্যাকে কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছিল।
ইবনে তাইমিয়্যা বললেন, “তোমাদের বাবার সাথে আমার যা ছিল, তা চলে গেছে। আমি তোমাদের বাবার মতই। যদি আমাকে তোমাদের কোন প্রয়োজন হয়, ইনশাআল্লাহ আমি তোমাদের সাথে থাকব এবং তোমরা আমাকে পাশেই পাবে।”
ইবনুল কয়্যিম বলেন, “ইবনে তায়মিয়্যার এমন উদার আচরণ দেখে তারা আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ল।”
- অনূদিত
হারাম খাদ্যের বদআছর
আব্দুল্লাহ তালহা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফরজ এবাদতের হুকুম প্রদান করার সাথে সাথে যে বিষয়টিকে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে নিষেধ করেছেন তা হলো হারাম খাদ্য ভক্ষণ। হারামখাদ্যের মন্দ প্রভাব ও বদআছর অত্যন্ত খারাপ নিকৃষ্ট। হারাম খাদ্যে গড়ে ওঠা শরীর জান্নাতের জন্য হারাম। সেই দেহের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত। শুধু আখেরাতেই নয়, দুনিয়াতেও হারামখাদ্যের বদআছরে মানুষের দেহমনে অনেক ক্ষতি হয়। এর প্রমাণ স্বরূপ অসংখ্য ঘটনা আমরা ইসলামী বই-পুস্তকে দেখতে পাই। এমনই একটি ঘটনা লিখছি, যে ঘটনায় দেখা যাচ্ছে হারামখাদ্যের সামান্য অংশও দেহাভ্যন্তরে প্রবেশের কারণে কত মারাত্মক মন্দ প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
.
- ইমাম আবু মুহাম্মদ জুআইনি সবসময় নিজহাতে কামাই করতেন। সামান্যতর সন্দেহযুক্ত বস্তুও কখনো তার হাতে আসার সুযোগ পায়নি। এই নির্ভেজাল হালাল খাদ্যের উপরই তিনি বিবাহ করেন। তাঁর সংসার আলো করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, যিনি পরবর্তীতে ইতিহাসবিখ্যাত ইমামুল হারামাইন উপাধি লাভ করেন।
ইমাম আবু মুহাম্মদ জুআইনি সন্দেহ রয়েছে এমন কোনো খাবার কখনো সন্তানকে খেতে দেননি। যাতে তাঁর সন্তানের দেহ খালেছ হালাল খাদ্যে তৈরী হয়। বাবার ঐ হালাল খাদ্যের ওসিলাতেই সন্তান একসময় যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম ও আল্লামা হতে সক্ষম হন। একপর্যায়ে তিনি ইমামুল হারামাইন উপাধিতে ভূষিত হন। ইতিহাসের পাতায় এই ইমামুল হারামাইনের ঈমানোদ্দীপক অনেক ঘটনা রয়েছে।
.
একটি ঘটনায় বর্ণিত আছে যে, একবার বাতিলপন্থীদের সাথে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান চলছিল৷ উক্ত অনুষ্ঠানে ইমামুল হারামাইন একটা বিষয়ে বলতে গিয়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে যান।
এমন সময় তাঁর একজন ভক্ত বলে ওঠে, শ্রদ্ধেয় ইমাম! আপনার থেকে তো এমনটি হবার কথা নয়!
তখন তিনি বলেন, এ হলো সেই এক চুমুক দুধের অবশিষ্টাংশের বদ আছর।
লোকজন জিজ্ঞেস করল, এক চুমুক দুধের ঘটনাটি কী?
ইমামুল হারামাইন বললেন, আমি যখন দুধের বাচ্চা তখন একবার আমার মা খাবার রান্না করার জন্য পাকঘরে গেলেন। এমন সময় আমি ক্ষুধায় কাঁদতে লাগলাম। তখন আমাদের প্রতিবেশীর একজন দুগ্ধ-পানকারিনী দাসী এসে আমাকে এক‘দু চুমুক দুধ পান করালো। ঐ মূহুর্তে আমার পিতা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেই দাসীর কাছ থেকে দ্রুত আমাকে নিয়ে বললেন, এই দাসী আমাদের নয়। এই দাসীর মালিক তাকে আমার বাচ্চাকে দুধ পান করানোর অনুমতি দেয়নি। তাই তার দুধ আমার সন্তানের খাওয়াজায়েয নয়৷
.
অতঃপর বাবা আমাকে ধরে ওলট-পালট করলেন, যাতে পেটের দুধটুকু বেরিয়ে আসে। আমার বমি হলো। সেই সাথে দুধের অংশও বের হয়ে আসল। তবে, দুধ তো তরল বস্তু। সর্বাংশ বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। কিছু তো পেটে রয়ে গেলোই।
আজ তোমরা আমার মাঝে যে দ্বিধা ও অস্থিরতা দেখলে তা ঐ সামান্য হারাম দুধের বদআছর।
>>
এবার একটু চিন্তা করে দেখুন, আমাদের কী হাল-অবস্থা! আমরা বিনা যাচাই-বাছাই করে সন্তানদেরকে যা পাচ্ছি খাওয়াচ্ছি, আমাদের সন্তানরা বদকার, বদমাশ ও ফাসেক-নষ্ট হবে এই স্বাভাবিক।
এজন্য অত্যন্ত জরুরি হলো, সন্তানদেরকে সবরকম হারাম, এমনকি সন্দেহযুক্ত খাবার দেয়া থেকেও সতর্ক থাকা। তাহলে আমাদের সন্তানরা নেককার পরহেজগার হবে, পিতা-মাতার প্রতিও আনুগত্যনীল হবে৷
ইনশাআল্লাহ
ইমাম শাফিয়ী
তানভির হাসান বিন আব্দুর রফিক
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আশ-শাফিয়ী (১৫০-২০৪ হি) রহিমাহুল্লাহ। মাত্র ৫৪ বছর বেঁচে ছিলেন এবং এরই মাঝে জগৎকে করেছেন আলোকময়।
তিনি কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশ ও তাঁর বংশ একই ছিল।
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যকার এক মাযহাবের ইমাম তিনি। তিনি যখন মায়ের কোলে দু বছরের শিশু তখন তাঁর পিতা মারা যান। পিতা মারা যাওয়ার পর আর্থিক টানাপোড়েন ও অন্যান্য দুঃখ-কষ্ট তাদের ঘিরে ধরে। এ পর্যায়ে বুদ্ধিমতি মা তাকে নিয়ে মাক্কায় চলে আসেন।
মাত্র ৭ বছর বয়সেই তিনি কুরআন হিফয করেন এবং মুওয়াত্তা মালিক মুখস্ত করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মতান্তরে ১৮ বছর বয়সেই তিনি ফতোয়া প্রদান শুরু করেন। তাঁর শাইখ মাক্কার মুফতী মুসলিম বিন খালিদ আয-যানজী (১৭৯ হি) রহিমাহুল্লাহ তাকে ফাতওয়া প্রদানে অনুমতি দেন। তিনি তাঁর এই শাইখ থেকে সাহাবায়ে রদিয়াল্লাহ আনহুম আজমাঈন থেকে প্রাপ্ত ফিক্হ শিক্ষা করেন।
তিনি ইসমাইল বিন কুসত্বনত্বীন (১৭০ হি) রহিমাহুল্লাহকে কুরআনুল কারীম পড়ে শুনান। যার কিরাআত সূত্র পরম্পরায় প্রখ্যাত সাহাবী উবাই বিন কা'ব রদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌছেছে। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শিখেছেন জীবরিল আলাইহিস সালাম থেকে, যা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছিলেন।
ভাষা ও কবিতার দিকে তাঁর ঝোক ছিল। কবিতায় তিনি খুব প্রাজ্ঞ ছিলেন এবং তাঁর রচিত বহু কবিতাও রয়েছে। তিনি খুব সুন্দর ও বিশুদ্ধভাবে আরবী বলতে পারতেন। তীর চালনায়ও তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন এবং এ কাজকে খুব ভালোবাসতেন।
তিনি বহু অঞ্চলে সফর করেছেন, তন্মধ্যে মাদীনা, বাগদাদ, মিসর অন্যতম। প্রত্যেক স্থানেই তাঁর উস্তায ও ছাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
ইমাম মালিক বিন আনাস (৯৩-১৭৯ হি) রহিমাহুল্লাহর কাছে ইল্ম অর্জনের উদ্দেশ্যে মাদীনাতে আগমণের পূর্বেই তাঁর রচিত কিতাব মুওয়াত্তা তিনি আগোগোড়া মুখস্ত করে নেন। পুরো কিতাব মুখস্তের জন্য তাঁর মাত্র ৯টি রাত অতিবাহিত হয়। এরপর তিনি মাদীনাতে এসে ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহকে পুরো কিতাব মুখস্ত শুনিয়েও দেন। ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ তাঁর পড়া ও স্পৃহা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর উস্তায ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাথে মাদীনাতেই রয়ে যান।
বাগদাগে গেলে তাঁর সাথে ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি) রহিমাহুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শাইবানী (১৩১- ১৮৯ হি) রহিমাহুল্লাহর পরিচয় ঘটে এবং তিনি তাঁর কাছ থেকে আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর ফিক্হ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যকার অন্যতম ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহও (১৬৪-২৪১ হি) তাঁরই ছাত্র। এছাড়াও তাঁর শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে অনেক প্রসিদ্ধ ইমামরা রয়েছেন।
কিছুদিন তিনি নাজরানের বিচারক পদে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কিছু লোক তাঁর বিপক্ষাবলম্বন করে এবং খলীফার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করে। এর ফলে তাকে খচ্চরের পিঠে বেধে বাগদাদে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাঁর উস্তায মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শাইবানী রহিমাহুল্লাহ খলীফাকে বুঝাতে সক্ষম হলে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
তিনি প্রতি রাতে পুরো কুরআনুল কারীম একবার পড়তেন। যখন রমাদ্বান মাস চলে আসতো তখন তিনি রাতে একবার এবং দিনে একবার পুরো কুরআনুল কারীম পড়তেন। এভাবে পুরো রমাদ্বানে তাঁর ৬০ বার খতম পূর্ণ হতো।
তিনি হাদীসের উপর বহু খিদমাত করেছেন। তিনি নিজেই বলেন, "বাগদাদবাসীরা আমাকে ;নাসিরুস সুন্নাহ' (সুন্নাহর সাহায্যকারী) উপাধি দিয়েছে''। অন্য বর্ণনায় নাসিরুস সুন্নাহর স্থলে 'নাসিরুল হাদীস' (হাদীসের সাহায্যকারী) উল্লেখিত হয়েছে।
তাঁর ছাত্র ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ প্রায়শই বলতেন,
مَا عرفت نَاسخ الحَدِيث ومنسوخه حَتَّى جالست الشَّافِعِي
''আমি ততদিন পর্যন্ত রহিতকারী (নাসিখ) হাদীস ও রহিত (মানসুখ) হাদীসের পরিচয় লাভ করতে পারিনি, যতদিন না শাফিয়ীর মাজলিসে বসেছি।''
কুরআন ও সুন্নাহর মত খলীফাদের জীবনিও তাঁর সংরক্ষণে ছিল। তিনি বাগদাদ ও মিসরের বড় বড় সাহাবীদের তালিকাও করেছিলেন। বিশুদ্ধ সূত্র মতে ইমাম শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহকেই উসূলুল ফিক্হের (ফিক্হের মূলনীতিসমূহ) প্রনেতা হিসেবে ধরা হয়। এ ব্যাপারে তাঁর রচিত কিতাবের নাম 'আর-রিসালাহ'। এ কিতাবকেই উসূলুল ফিক্হ ও উসূলুল হাদীসের (হাদীসের মূলনীতিসমূহ) সর্বপ্রথম কিতাব হিসেবে ধরা হয়। আব্দুর রহমান বিন মাহদী (১৩৫-১৯৮ হি) রহিমাহুল্লাহ তাকে এ ধরণের একটি লেখা তৈরী করার জন্য চিঠি প্রেরণ করলে তাঁর অনুরোধে তিনি এ কিতাবটি লিখেন।
আব্দুর রহমান বিন মাহদী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
ما أصلي صلاة إلا وأنا أدعو للشافعي فيها
''আমি এমন কোন সলাত পড়িনি, যাতে শাফিয়ীর জন্য দু'আ করিনি।''
তিনি নানানধর্মী কিতাব রচনা করেছেন; তাফসীর, হাদীস , ফিক্হ, উসূলুল ফিক্হ ইত্যাদি শাস্ত্রে তাঁর খিদমাত ও রচনাবলী রয়েছে। বিভিন্ন শাস্ত্রের উপরে লেখা তাঁর ১৪টি কিতাব ইবনু হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ তাঁর "তাওয়াল্লী তা'সীস' গ্রন্থে তালিকাবদ্ধ করেছেন।
আবূ মুহাম্মাদ আল-হাসান বিন মুহাম্মাদ আল-মারওয়াযী রহিমাহুল্লাহ বলেন, "বলা হয়ে থাকে শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহ তাফসীর, ফিক্হ, আদব ও অন্যান্য বিষয়ে ১১৩টি কিতাব রচনা করেছেন''।
[আল-মাজমূ' শারহুল মুহাযযাব, নাবাবী, ১/১২; তাহযীবুল আসমায়ু ওয়াল লুগাত, নাবাবী, ১/৫৩]
তাঁর ছাত্র ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ নিজ উস্তায সম্পর্কে বলেন,
إنّ اللَّه يُقيَّض للنّاس في رأس كل مائة سنة من يعلمهم السُّنَن وينفي عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الكذب. فنظرنا، فإذا في رأس المائة عُمَر بْن عَبْد العزيز، وفي رأس المائتين الشّافعيّ
নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক শতাব্দির মাথায় মানুষের জন্য কিছু ব্যক্তিদের বাছাই করে নেন, যারা তাদেরকে সুন্নাহ শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যারোপ করা থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। সুতরাং, যখন প্রথম শতাব্দি আগমণ করল, তখন আমরা উমার বিন আব্দুল আযীযকে দেখলাম আর দ্বিতীয় শতাব্দির মাথায় শাফিয়ীকে দেখতে পাচ্ছি।
আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ (২১৩-২৯০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম,
يا أَبَه، أيُّ رجلٍ كَانَ الشافعي؟ فإنّي سمعتك تُكثِر من الدّعاء لَهُ؟
হে আব্বা, এই শাফিয়ী নামক লোকটা কে? যার জন্য আমি আপনাকে খুব বেশি পরিমাণে দু'আ করতে শুনি?
-
তখন আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ বললেন,
يا بُنيّ، كَانَ الشّافعيّ كالشمس للدنيا، وكالعافية للنّاس، فهل لهذين من خَلَفَ، أو منهما عِوَض؟
হে আমার ছেলে, শাফিয়ী ছিলেন দুনিয়ার সূর্য তুল্য এবং মানুষের জন্য সুস্থতা স্বরূপ। এর বিপরীতে ভিন্ন কিছু আসবে কি কিংবা এ দুয়ের বিকল্প কিছু হবে কি?
যেসব গ্রন্থ হতে সহায়তা নেয়া হয়েছেঃ
=======================
১) আদাবুশ শাফিয়ী ওয়া মানাকিবুহু, ইবনু আবী হাতিম
২) তারীখু বাগদাদ, খতীব আল-বাগদাদী
৩) আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনু কাছীর
৪) সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, শামসুদ্দীন যাহাবী
৫) তারীখুল ইসলাম, শামসুদ্দীন যাহাবী
৬) তাওয়াল্লী তা'সীস, ইবনু হাজার আসকালানী
৭) তারতীবুল মাদারিক ও তাকরীবুল মাসালিক, কাযী আইয়াদ্ব
ভণ্ডামি ট্রেন্ড
মুহাম্মাদ সাওয়াবুল্লাহ
আমাদের মেয়েদের একটা ট্রেন্ড হল যখন তাদের রূপ জৌলুশ ফুরিয়ে যাবে তখন তারা মাথায় কাপড় দিয়ে হিজাব বেধে চলাচল শুরু করবে। আগের সেই উগ্র সাজ যা হাজারটা মানুষের দৃষ্টিকে করত চুরি সেই সাজ আর হবে না। লম্বা ব্লাউজ পরিধান শুরু হবে আগে যেখানে যাই পড়া হত তা হাফ হাতার নিচে হতনা। কিন্ত এখন কেন যেন সবকিছুই বড় বড় পড়তে চাওয়া।
এটা কি ভালো দিক নাকি খারাপ দিক। ভালো পরিবর্তন সব সময়ের জন্যই ভালো। আপনার যখন রূপ জৌলুশ ছিল তখন মানুষকে তা দেখিয়ে বেরিয়েছেন হয়তবা তখন আপনার বুঝ ছিল না। কিন্ত বুড়ো বয়সে আপনার বুঝ এসেছে তাই উগ্রতা ছেড়ে আসতে আসতে ধর্মের পথে ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন এটা মোটেও মন্দ কিছু নয়। বরং আল্লাহ তায়ালার নিকট আপনার এ ব্যাপারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে তিঁনি আপনাকে ভুল বোঝার তৌফিক দিয়েছেন। আপনি আপনার পূর্ববর্তী উগ্র চালচলনের জন্য অনুতপ্ত।
কিন্ত আপনি আসলেই কি অনুতপ্ত ? আপনি হয়তবা আপনার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারে অনুতপ্ত। কিন্ত আপনার পুরো ফ্যামিলির ব্যাপারে ? আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই অনুতপ্ত হন তাহলে তো কৈশোরে পা দেওয়া কন্যাদের কে উগ্র সাজ বা বেপর্দা করে বিয়ে, জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ঘুড়াতেন না। আপনার মেয়ে আপনার সামনের তাই বুকের ওড়না এদিক সেদিক সরিয়ে রেখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছে। তা কি করে আপনার চোখ এড়ায় ! সে যে বিউটি পার্লার থেকে ভ্রু প্লাক আর অন্যান্য সাজ দিয়ে নিজেকে স্মার্ট বানানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সে পয়সাটার ব্যবস্থা কে করে দেয়?
এটা ভন্ডামি ট্রেন্ড নয় কি ? যৌবনে জাহেলিয়াতের মত রূপ সাজ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো। আর বুড়োতে মানুষ এখন আর তাকাবে না বা আমার সময় শেষ এই ভয়ে সূরত পালটিয়ে ফেলা। সূরত যদি পালটিয়ে ফেলতে হয় তাহলে কেন তা কার্যকারী সময়ে পালটানো হয় নি। দিন শেষে মানুষ কি বলবে এটাই কি সবকিছু ? আল্লাহর সামনে দাঁড়ালে নিজেকে কি হিসেবে তুলে ধরবেন? তখন কি বলবেন এই যারা আমার যৌবনের প্রশংসা করেছ তারা বেরিয়ে এসে এই মহা আপদ থেকে উদ্ধার কর ? কোন কথা বের হবে মনে হয়? আপনার জবান বন্ধ করে দেওয়া হবে । আপনার অঙ্গ প্রত্যঙ্গই সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করবে যে আপনি তাদেরকে কাদের জন্য সাজিয়েছিলেন। আপনি সাজুগুজু আর খুশবু মেখে মানুষের মাঝে চলাচল করে উগ্রতা ছড়িয়ে মনে করেন অনেক উচুতে উঠে গিয়েছেন। কিন্ত হাদিসে আপনাকে ব্যভিচারীনী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আপনি আসলেই তাই। এর চেয়ে দু:খের ব্যাপার কি হতে পারে ব্যাভিচার না করেও ব্যাভিচারের গুন লেগে যাওয়া তাও আবার আল্লাহর রসূলের পক্ষ থেকে !
ইসলাম সন্যাসীদের ধর্ম নয়। যে তা আপনাকে সাজতে নিষেধ করবে। আপনি সাজেন। কিছু বেসিক ঠিক রেখে মনের মত সাজেন কিন্ত সেই সাজা হবে একমাত্র আপনার স্বামীর জন্য। এই সাজার জন্য আপনি মোটেও ব্যাভিচারিনী মহিলা হিসেবে সাব্যস্ত হবেন না বরং হবেন নেককার মহিলা হিসেবে সাব্যস্ত। সুতরাং বোন আপনার সাজুগুজু দ্বারা মানুষের দিলের পরিবর্তন আসলেও আল্লাহতায়ালার বিধানে কোন পরিবর্তন আসবে না। তাই পরিবর্তনের হাওয়া যদি লাগাতে চান তাহলে এই যৌবন থাকতে থাকতেই লাগান।
ইসলামকে জানুন
সিহিন্তা শারিফাহ
ছোটবেলায় আমি যখন অমুসলিম ছিলাম, প্রথম প্রথম মুসলিমদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না। তাদের সম্পর্কে জানা প্রথম তথ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যে তারা শুকরের মাংস খায় না। এটা খাওয়া নাকি “হারাম”। হারাম শব্দটাও এই শুকর দিয়েই শেখা।
তখন আমি খুব ছোট। বাসার কাজে সাহায্যকারী মেয়েটি ছিল আমাদের দুই বোনের খেলার সাথী। ওর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম হিন্দুরা যেমন গরু খায় না, মুসলিমরা শুকরের মাংস খায় না। পরবর্তীতে স্কুলের মুসলিম সহপাঠী থেকে শুরু করে চেনাজানা অন্যান্য মুসলিমদের কাছে জেনেছিলাম যে শুকর নামের প্রানীটা এতটাই “হারাম”, যে এর নাম পর্যন্ত মুখে নেয়া যায় না! অথবা এর নাম শুনলে বা ছবি দেখলেও নাকি ঘেন্না লাগে। এমন কি, আমাদের অমুসলিম কারো বাসায় এই জিনিস রান্না করলে তার একটা কোড নেইম ব্যবহার হতো।
বড় হয়ে যখন আল্লাহ আমাকে মুসলিম বানিয়ে দিলেন, জানলাম হারাম শুধু শুকরের মাংস না - হারাম হচ্ছে মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, সুদ-ঘুষের আদান-প্রদান, গান-বাজনা, অমুসলিমদের উৎসবে যোগদান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বেপর্দা থাকা, ফরয ইবাদাত না করা ইত্যাদি ইত্যাদি...।
অদ্ভুত লেগেছিল ব্যাপারটা!
চারপাশের মুসলিমরা সব নিষিদ্ধ কাজই দেদারসে করে বেড়াচ্ছে, অথচ শুকরের মাংস খাওয়ার ব্যাপারে তারা মহা কট্টর। হাজারটা হারামে ডুবে থাকা ব্যক্তি যত যাই করুক, শুকর ছোঁবে না কিছুতেই।
কেন এমন হলো?
শিশুবেলায় পরিবার আর চারপাশের পরিবেশ আমাদের একমাত্র শিক্ষাক্ষেত্র। এখানে আমরা তাই শিখি যা আমরা দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে বড় হই। আমরা কী ধরনের মুসলিম হব তা নির্ভর করে পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার উপর। শুকরের ব্যাপারটাও তাই। আমাদের ইসলামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শেখানো হোক আর না হোক - এই ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বের সাথে শেখানো হয়। আর তাই আমরা গুরুত্বের সাথেই তা মেনে চলি।
কেমন করে?
বাচ্চাদের ছোট থেকেই জানানো হয় যে এই বিশেষ প্রানীর মাংস হিন্দু-খ্রিস্টানরা খায়, আমরা খাই না। মদ, ঘুষ, সুদ ইত্যাদি হারাম বিষয় বড়রা নিজেরাই করে বেড়াচ্ছে, কাজেই এসব নিষেধাজ্ঞা শেখানোর প্রয়োজন বোধ করে না। তাই হারাম বলতে ওরা শুধু ওই একটা জিনিসই বোঝে।
এটা ঠিক যে শুকর আল্লাহ হারাম করেছেন। সেই সাথে অন্য অনেক কিছু হারাম করেছেন যেগুলো আমাদের জানানো হয় না বা জেনেও মানতে চাই না। আমাদের কাছে ইসলাম বলতে শুকর না খাওয়া, দলীলবিহীন কিছু প্রথা মানা আর কিছু অহেতুক আবেগ প্রকাশের মাঝে সীমাবদ্ধ।
আমাদের অধিকাংশ মুসলিম পরিবারে ইসলামের মৌলিক বিধিনিষেধগুলো মানি আর না মানি, কিছু কিছু বিষয়ে আমরা কিন্তু সেইরকম প্র্যাক্টিসিং! আমাদের মেয়েরা সারাজীবন খোলামেলা থেকেও শুধু আযানের সময় বা ইফতারের সময় মাথা ঢাকতে ভুলে না। আমাদের কুরআনের মুসহাফটা কাপড়ে জড়িয়ে উঁচু স্থানে তুলে রাখা হয়, ধুলিমলিন কিতাবটা শুধু রমাদানেই “খতম” দেয়ার উদ্দেশ্যে হাতে নেয়া হয়। আমরা নিয়মিত সলাত আদায় করলেও সলাতে কী বলছি না বলছি কিছুই বুঝি না। উচ্চারণেও থাকে শত ভুল। আমরা এখন পর্দা করা বলতে বুঝি মাথায় বাধাকপির ন্যায় পট্টি বেঁধে মুখে রং মেখে সং সাজা। সোশাল মিডিয়ায় আমরা অদ্ভুত অদ্ভুত “ইসলামিক” তথ্য শেয়ার দিতে থাকি, কোথাও আমীন না বলে যাই না।
মানবশিশুর মস্তিষ্কে শিশুকালেই যে তথ্যগুলো দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেয়া হয়, সাধারণত সারাজীবন তা মেনে চলে সে। মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতে থাকে তা।
একটা মেয়ে যখন এটা দেখতে দেখতে বড় হয় যে টিভিতে মহা আগ্রহে সবাই অভিনেত্রী, গায়িকা আর মডেলদের দেখছে; তাদের রূপের প্রশংসা করছে; তাদের জীবন নিয়ে আলোচনা করছে - স্বাভাবিকভাবেই সে ওই দিকে আকৃষ্ট হয়। নিজেকে ওই অবস্থানে কল্পনা করে। ওই সস্তা মেয়েগুলোকে তখন ওর সবচাইতে দামী বলে মনে হতে থাকে। মাথা, ঘাড়, ঠোঁট বেঁকিয়ে অপ্রকৃতস্থের মতো পোজ দিয়ে সেল্ফি তুলে আপলোড করে সে। কিছু সস্তা লাইকে আবেগে আপ্লুত হয়। ইসলাম থেকে সরে যায় যোজন যোজন দূরে।
একটা ছেলে তার ক্লিন শেইভড বাবা, ধূমপায়ী চাচা, সুদি ব্যাংকে চাকুরীরত মামা অথবা প্রেমিক বড় ভাইকে দেখে কখনোই শিখবে না ইসলামে এসবের বিধান কী।
আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, নিয়মিত কুরআন পড়েন, হজ্জটাও সেড়ে ফেলেছেন। অথচ বাসায় হুজুর রেখে ভেবে নিয়েছেন সন্তানদের ইসলাম শেখানোর দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন।
আসলে তা নয় বোন। ইসলাম মানে শুধু সলাত সিয়াম নয়। ইসলাম মানে আল্লাহ প্রদত্ত প্রত্যেকটা বিধিনিষেধ মেনে চলা, শিশুকাল থেকেই তাদের মনে সঠিক ইসলামকে গেঁথে দেয়া। তাকে তার রবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনার। এই দায়িত্বে অবহেলা করলে প্রতিফল একদিন আপনাকেই পেতে হবে।
ভাই, আপনি যদি এখনই মেয়েকে পর্দা করতে না শেখান, ভবিষ্যতে “দায়্যুস” হিসেবে গণ্য হবেন। দায়্যুসের জন্য জান্নাত হারাম। শুধু আদেশ না দিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন। রবকে ভালোবাসতে শেখান, তাহলে রবের দেয়া বিধান আপনাতেই মেনে নেবে সে।
যদি আপনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করেন, তাহলে সবার আগে নিজে সঠিক ইসলামকে জানুন। কুরআনের অর্থের অনুবাদ পড়ুন। আজকাল ইসলাম শেখার জন্য রিসোর্সের অভাব নেই। আপনি শিখুন, নিজের জীবনে মেনে চলুন। সন্তানের জন্য নিজেকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করুন। ইনশাআল্লাহ্ তারা শুধু শুকর হারাম ছাড়াও আরো অনেক কিছুই শিখে ফেলবে।
সত্যিকার অর্থে ‘ইসলাম’ পালন
মাহফুজ আলামিন
***রমাদান মাস- কমবেশি আমরা সবাই রোজা বা সিয়াম পালন করছি। তবে এই রমাদান পালনের পেছনে আমাদের অন্তরের উদ্দেশ্য কি যাচাই করেছি কখনো?
ইসলাম এর একটা বেসিক ফান্ডামেন্টাল হচ্ছে- "প্রত্যেক কাজ এর ফলাফল তার নিয়ত এর উপর নির্ভরশীল।" এই নিয়ত নাওয়াইতুয়ান ... মার্কা নিয়ত না, ইট্স অল এবাউট ইনটেনশন অফ দ্যা হার্ট"।
এখন ধরুন, আপনি সারাবছর চরম পরিশ্রম করে পড়াশোনা করলেন, কিন্তু বছরের শেষে পরীক্ষা দিয়ে দেখলেন ফলাফল শুণ্য, আপনি ফেল করেছেন, তখন এতো কষ্টের শূন্য ফলাফল পেয়ে আপনার কেমন লাগবে? নিশ্চই এই কষ্ট আপনি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবেন না।
ঠিক তেমনি, নামাজ, রোজা, দান সদকা, যাই টুকটাক ভালো কাজ করিনা কেনো, তার যদি দিন শেষে আখিরাতে ফলাফল শুন্য হয়, তার চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর নেই, তাইনা?
আসুন এবার আমাদের ভালো কাজের ফলাফলের আগে নিয়াত টা চেক করে নেই, আদৌ আমাদের মনের গহীনে ইনটেনশন আসলে কি ইংগিত করে...
আমাদের যত ইবাদাত আছে, সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। কিন্তু যদি সেখানে এই উদ্দেশ্য আমাদের মনে না থাকে, এবং তা যদি শুধুমাত্র- অন্য সবাই রাখছে (সিয়াম) , তাই আমিও রাখছি নীতিতে হয়, সামাজিকতা রক্ষার্থে হয়, এবং অন্যরা পালন না করলে আমার ও করার ইচ্ছা হারিয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে, আমার নিয়াত এ সমস্যা। এই অবস্থায় আমি যতই উপোস থাকি না কেনো, ইবাদাত করি না কেনো তা কবুল হবার নয়, বরং সারাবছর কষ্ট করে বছর শেষে ফলাফল শুন্য হবার মতই ব্যর্থ প্রয়াস মাত্র।
রোজার মাস এলেই আমরা যারা ইসলাম এর অন্যান্য নিয়ম কানুন মানি আর না মানি, রোজা ঠিক ই রাখি। রোজা রেখেও নামাজ না পড়া, মুভি, নাটক, গান, অযথা কথাবার্তায় সময় পার করা, গীবত থেকে বিরত না থাকা, ঈদের পোশাকের জন্যই রোজার মাস কে গুরুত্ব দেয়া, এবং ঈদের দিন আসা মাত্রই লুঙি ড্যান্সে ফিরে যাওয়া, রোজার আগের মত পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাওয়া, এই সব কিছুই নির্দেশ করে আমার ইন্টেনশন আসলে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তার নৈকট্য লাভের জন্য ছিলো না, বরং সামাজিক পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানো ছিল মূল নিয়াত।
যখন সমাজের কেউ রোজা না রাখলেও আমি একা হলেও রাখবো এমন মনোভাব থাকবে, কেউ নামাজ না পড়লেও আমি পড়বোই এই নিয়াত সত্যি ই থাকবে, কেউ ইসলাম এর আদর্শ অনুযায়ী না চললে ও আমি সর্বাত্মক ভাবে চলার চেষ্টা করবোই এমন নিয়াত মনে পরিষ্কার থাকবে তখন ই আমাদের সামান্য কাজের ও বিশাল পুরস্কার পাবার, যথাযোগ্য ফলাফল পাবার আশা আমরা করতে পারি।
অন্যথায়, শুধু বাকি সবার মত উপোস ই থাকা হবে, হাত পা নেড়ে নামাজ এর নামে ব্যয়াম ই করা হবে, এক মাসের সামাজিকতা শেষে আবার লুঙ্গী ড্যান্সেই ফিরে যাওয়া হবে! আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ ফলাফল আর পাওয়া হবে না এবার যতই উপোস থাকি না কেনো, ব্যায়াম করি না কেনো!
তাই, অন্তত সামান্য ভালো কাজ করলেও তার যথাযথ ফলাফল প্রাপ্তির আশায় নিজেদের নিয়াত ঠিক করি, সৃষ্টিকর্তা কে প্রকৃতরুপে বিশ্বাসের জন্য, তার প্রত্যেকটি কথা বিশ্বাসের মত ঈমানের জন্য খুঁজি আদৌ কেনো তাকে মানবো, না মানলে আসলেই আমার ইহকাল পরকালে কেনো ধ্বংস, কেনো একমাত্র তার ইবাদাতের মাধ্যমে ভালোবাসা অর্জন ই জীবনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
আসুন অন্তত সামাজিক ইসলাম এর আবরণ থেকে বেড়িয়ে আল্লাহর দেয়া ইসলাম পালনের চেষ্টাটুকু করি... নাহলে, ফলাফল যে শুন্য, শুধুই শুন্য এবং শেষ গন্তব্য.... ( জা...... সবাই জানি!)
সস্তা বিনোদনের জয়জয়কারঃ পতন অনিবার্য সভ্যতার বৈশিষ্ট্য
আসিফ আদনান
বলুন তো ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী অ্যাথলিটের নাম কী? মেসি? লেব্রন জেইমস? টাইগার উডস? রোনালদো? না। সঠিক উত্তরের জন্য আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। প্রায় দু হাজার বছর পেছনে। ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী অ্যাথলিট ছিল গায়াস অ্যাপুলেইয়াস ডায়োক্লিস নামের এক স্প্যানিয়ার্ড। ডায়োক্লিসের পছন্দের খেলা ছিল রথচালনা – অনেকটা আজকের ফর্মূলা ওয়ান রেইসিং এর মতো, শুধু গাড়ির বদলে ঘোড়ায় টানা রথ দিয়ে। প্রাচীন রোমের এই সেলিব্রিটি সারথি ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে আয় করেছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি রোমান সিস্টার্সিস। আজকের বাজারদরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।
.
দেখা যাচ্ছে দক্ষ ও জনপ্রিয় খেলোয়ারদের পেছনে টাকার পাহাড় ওড়ানোর প্রবণতা বরং বেশ পুরনো। কিন্তু কেন? খেলা আর খেলোয়ারের পেছনে এতো টাকা ওড়ানোর পেছনে কারণ কী? নিছক বিনোদন? সস্তা, সাময়িক উত্তেজনার জন্য খরচটা একটু বেশি হয়ে গেল না?
.
মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তার চিন্তা ওপর কবজা। এই চিন্তাকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য রোমের রাজনীতিবিদরা চমৎকার একটা বুদ্ধি বের করেছিল। জাকজমকপূর্ণ বিশাল সব স্পোর্টিং ইভেন্টস। কোন অসন্তোষ দেখা দিলেই শাসকেরা হাজির করতো নতুন কোন উত্তেজক ইভেন্ট । উদ্দেশ্য – গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে রাখা, সহজলভ্য বিনোদনের বন্যায় অনুভূতিগুলোকে অবশ করে দেয়া। গ্ল্যাডিয়েটর টুর্নামেন্ট, চ্যারিয়ট রেইসিং, বিসটিয়ারি, ড্যামনেশিও অ্যাড বিসটিয়াস - বিশ্বকাপ, লা লিগা, ফর্মুলা ওয়ান, টি-টোয়েন্টি, ইউএফসি, রিয়েলিটি টিভি। ব্রেড অ্যান্ড সার্কাসেস।
.
রোমান সাম্রাজ্যের সাথে, বিশেষ করে এ সাম্রাজ্যের অবনতির পর্যায়ের সাথে আমাদের এ সভ্যতার বেশ অনেকগুলো মিল আছে। অধিকারগুলো যখন ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে আসে, যখন আইনের শাসনের মৌলিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে যখন বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য, যখন অসন্তোষ দানা বাধতে থাকে তো বাধতেই থাকে, মানুষ যখন ফুঁসতে থাকে রাগে, যখন মিডিয়ার মায়াজালের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় – তখনই সম্রাট হাজির হয়ে যায় নতুন কোন কলৌসিয়াম, নতুন কোন বিশ্বকাপ, নতুন কোন গ্ল্যাডিয়েটর, নতুন কোন ইভেন্ট, স্ক্যান্ডাল কিংবা মুভি নিয়ে। খরচ করা হয় লক্ষ কোটি টাকা।
.
বাস্তবতাকে মিউট করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বোকা বাক্সের দিকে চেয়ে থাকে সভ্যতার দাসেরা, শক্ত করে দরজা-জানালা বন্ধ করে, নরম গদিতে আধশোয়া হয়ে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয় কল্পনার রাজ্যে। এমন এক জগত যেখানে আর্জেন্টিনা হারলে মানুষের আত্মহত্যা, জমি বিক্রি করে জার্মানির পতাকা, নিয়ম করে নব্বই মিনিট দৌড়ে বেড়ানো ছোকরার পেছনে ওড়ানো কোটি কোটি ডলার, জেনোসাইডকে ছাপিয়ে যাওয়া খেলা, কুকুরের মতো রাস্তায় মার খাওয়া ছাত্রদের ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ড্রিম টিম বানানোর অ্যাপ অর্থবোধক হয়। পরিতৃপ্তি দেয়। যেখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পরিণত হয় তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে আচ্ছন্ন, উন্মত্ত ফ্যান আর দর্শকে। সত্য শোনার সময় তাদের হয় না। ইচ্ছে হয় না চোখ খুলে বাস্তবতাকে দেখার, চিন্তা করার, পরোয়া করার। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে অবহেলা ভরে সে মুক্তির পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে নিয়ন্ত্রিত হয়, ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত হতে হতে ব্যবহৃত হওয়াতেই আনন্দ খুঁজে পায়, খুঁজে পায় জীবনের উদ্দেশ্য।
.
ব্রেড অ্যান্ড সার্কাসেস। সাধন ভোগ আর শরীরের। মনোরঞ্জন - বিক্ষিপ্ত, অবশ আর অন্ধ করার। সভ্যতার অধঃপতন।
.
সস্তা সুখ আর বিনোদনের নেশা শেষ পর্যন্ত রোমানদের পতন ডেকে এনেছিল। এ সভ্যতার জন্য ভিন্ন কিছু অপেক্ষা করছে বলে মনে হয় না।
কুরআনের প্রতি ভালোবাসা
মঞ্জুরুল করীম
ফেবুতে আমি খুঁজে খুঁজে কুর’আন বিষয়ক পোস্টেই লাইকাই বেশি। কুর'আনের আয়াত দেখলে অন্যদিকে আর যেতে মন চায়না। আল্লাহ তা'আলা অন্তরের কুর'আনের ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দিন,কেননা হক অনুযায়ী ভালোবাসার তুলনায় খুব অল্পই অর্জন করেছি।.
.
আবার সেই চর্বিতচর্বণ করি, ফেবুতে কুর'আন বিষয়ক পোস্টেই লাইক সবচেয়ে কম পড়ে, নিজেই দেখেন ঘেঁটেঘুঁটে। এটা কুর'আনের প্রতি নামমাত্র ঈমান ও ভালোবাসার ফল। কুর'আনের তাজিম আমাদের থেকে ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কালামুল্লাহর চেয়ে কালামুন নাসের দিকেই আমাদের আকর্ষণ বেশি। এজন্য কথিত তাফসির মাহফিলে তাফসির ছাড়া সবই পাওয়া যায়,ইল্লা মা শা আল্লাহ।.
.
শুধু মুখের দাবিতে তো উম্মাহর অগ্রগতি ঘটবে না যদি না কাজে এর প্রকাশ ঘটে। খোদ কিতাবুল্লাহর সাথে এত দুর্বল সম্পর্ক রেখে সফলতা কি আসতে পারে?
আদর্শ, না তরবারি?
মুনিরুল ইসলাম ইবনু যাকির
ইসলাম একমাত্র ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। শান্তি ও শাস্তি, উদারতা ও কঠোরতার অসাধারণ সম্মিলন ঘটেছে এই দীনে। শুধু উদারনীতি প্রয়োগ করে পৃথিবীতে কোনো মতবাদ টিকতে পারেনি। এ জন্যই দেখা যায়, উদারনীতির সবক শেখানো মতবাদগুলোই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহতার ইতিহাস রচনা করেছে। এ জন্য প্রয়োজন উদারতা ও কঠোরতার সামঞ্জস্যকরণ। যা কেবলই ইসলামেই রয়েছে। এই দীনের প্রতিষ্ঠায় সর্বদায়ই ছিল পথপ্রদর্শনকারী কিতাব ও তার সাহায্যকারী তরবারি। আল্লাহ ﷻ কিতাবের সাথে হাদিদ নাযিল করেছেন, যারা কিতাব মানবে না তাদের শিফাস্বরূপ। এটাই ছিল সাহাবাদের বুঝ। সালাফুস সালিহিনও ছিলেন এই বুঝেরই উপর।
আল্লাহ ﷻ বলেন,
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِٱلْبَيِّنَٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلْقِسْطِۖ وَأَنزَلْنَا ٱلْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِٱلْغَيْبِۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
আমি স্পষ্ট নিদর্শনসহ আমার রাসূলদেরকে পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড দিয়েছি, যাতে মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি লোহাও দিয়েছি, যার মধ্যে (যুদ্ধের জন্য সহায়ক) প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য অনেক কল্যাণ আছে; এজন্য যে, আল্লাহ জানতে (যাচাই করতে) চান, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। [কুরআন, ৫৭:২৫]
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱْ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﺑِﺎﻟﺴَّﻴْﻒِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻌْﺒَﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ، ﻻ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻭَﺟُﻌِﻞَ ﺭِﺯْﻗِﻲ ﺗَﺤْﺖَ ﻇِﻞِّ ﺭُﻣْﺤِﻲ، ﻭَﺟُﻌِﻞَ ﺍﻟﺬِّﻟَّﺔُ ﻭَﺍﻟﺼَّﻐَﺎﺭُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺧَﺎﻟَﻒَ ﺃَﻣْﺮِﻱ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
“আমি কিয়ামতের পূর্বে তরবারি সহকারে এ উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি যে, কেবলমাত্র এক আল্লাহ তায়ালারই ইবাদত করা হবে। আর আমার রিযিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। যারা আমার আদেশের বিরুদ্ধে যাবে তাদের জন্য অপমান (আর লাঞ্ছনা) নির্ধারিত রয়েছে। আর যে কেউ তাদের অনুকরণ করে সে তাদেরই একজন।” [আহমাদ: ৪৮৬৯, বুখারিতে তা'লিক হিসেবে বর্ণিত]
তিনি আরও বলেছেন,
انا نبي الرحمة... وانا نبي الملحمة
আমি রহমতের নবি... আমি যুদ্ধের নবি। [যাদুল মায়াদ, ১/৮৮]
সাহাবা আজমাইনও এই বুঝই ধারণ করেছিলেন। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ রা. একবার এক হাতে কুরআন অপর হাতে তরবারি নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন- “রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের আদেশ করেছেন, এটা (কুরআন) থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদেরকে এটা (তরবারি) দিয়ে আঘাত করার জন্য।” [তারিখু ইবনি আসাকির, ৫২/২৭৯]
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে...।” [কুরআন, ৩: ১১০] এই আয়াতটি সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, 'মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসা হয়, এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে।' [সহিহুল বুখারি: ৪৫৭৭]
ইসলামের ব্যাপারে সালাফদের বুঝও ছিল অনুরূপ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহি.) বলেছেন,
“...আনুগত্য হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য, আর আল্লাহর কালিমা হবে সমুন্নত। আল্লাহর কালাম হচ্ছে সর্বব্যাপী। আর আল্লাহ ﷻ বলেন, 'আমি আমার রাসূলদেরকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।' [কুরআন, ৫৭:২৫]
নবি-রাসূল প্রেরণ ও কিতাব নাযিলের মাকসাদ হচ্ছে মানবজাতি যেন আল্লাহর হক ও বান্দার হকের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এরপর আল্লাহ তায়ালা বলছেন, 'আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রাসূলগণকে সাহায্য করে।'
কাজেই যে বিচ্যুত হয়ে পড়ে আল্লাহর কিতাবের পথ হতে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে লৌহের শক্তি দ্বারা। এভাবেই এই দীনের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পায়- কুরআন ও তরবারির মাধ্যমে। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা.) বলেন, 'আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদেরকে আদেশ করেছেন এটা (তরবারি) দিয়ে আঘাত করতে, যে কেউ এটা (কুরআন) থেকে ফিরে যায়।” [মাজমুয়ুল ফাতাওয়া, ২৮/২৬৩]
তিনি আরও বলেন,
“যখন কিতাব ও সুন্নাহর ইলম প্রচার লাভ করবে, আর তরবারি তার সঙ্গী হবে, তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে এই দীন।” [মাজমুয়ুল ফাতাওয়া, ২০/৩৯৩]
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহর আরেকটা মশহুর কওল আছে- ﻓَﺎﻟْﻜِﺘَﺎﺏُ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﻭَﺍﻟﺴَّﻴْﻒُ ﻳَﻨْﺼُﺮُ “কিতাব হলো পথপ্রদর্শক, তরবারি হলো সাহায্যকারী।”
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহি.) বলেন,
“আল্লাহ তাঁর রাসুলকে কিয়ামতের পূর্বে প্রেরণ করেছেন হিদায়াতের কিতাব ও বিজয়ী তরবারি সহকারে, যেন একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাত করা হয় শরিকবিহীন অবস্থায়, আর তাঁর রিযিক নির্ধারিত হয়েছিল তরবারি ও বর্শার ছায়াতলে। আল্লাহ তায়ালা এই দীনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একদিকে দলিল-প্রমাণ, আর অন্যদিকে তরবারি ও বর্শা দিয়ে। এই দু'টো বিষয় এমন ঔতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যার একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যায় না।” [আল-ফারুসিয়্যাহ, পৃ. ১৮]
.
প্রজন্মপরম্পরায় অবিচ্ছিন্নভাবে মুসলিম উম্মাহ দীন-ইসলামের ব্যাপারে এই বুঝই বহন করছিল। কোনোকালেই ইসলামকে কেবলই শান্তি আর শান্তির ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। মুসলিমরা কখনই কাফিরদের থেকে ইসলামের উদারনীতির সবক শিখেনি। কাফিররা এই সাহসও করতে পারেনি। কারণ, কিতাব ও তরবারি প্রয়োগের বাস্তব নমুনা তখন উপস্থিত ছিল।
কিন্তু কিতাব থেকে যখন তরবারি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, দীর্ঘ একটা কাল পর্যন্ত যখন উম্মাহ তরবারির প্রয়োগ দেখেনি, চারিদিক থেকে যখন উম্মাহর পতনের পর পতনের খবরই ভেসে আসছিল, তখন শত্রুরা নতুন এক ফাঁদ পাতলো। মুস্তাশরিকিন বা ওরিয়েন্টালিস্টদের পলিসি সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা ব্যাপারটা সহজেই বুঝতে পারবেন। ইসলামের এই প্রকৃত রূপটা তাদের কাছে খুবই অপ্রীতিকর। শঙ্কারও কারণ বটে। তাই তারা প্রথমে ইসলামের এই 'ভয়ঙ্কর' রূপটা চিহ্নিত করল, আদর্শ আর সংগ্রামকে আলাদা দু'টি মেরুতে নিয়ে দাঁড় করালো। প্রশ্ন তৈরি করল- 'ইসলাম কি আদর্শের জোরে প্রসার লাভ করেছে, নাকি তরবারির জোরে?' অথচ এই প্রশ্নটার মধ্যেই আছে মারাত্মক চতুরতা। এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে, আপনাকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। হয় আদর্শ, নয় তরবারি। আবার তারাই এর সল্যুশন দিলো, এক নয়া সহনশীল, উদারনৈতিক, অহিংস, শান্তিবাদি ইসলামের প্রচার শুরু করল। প্রাচ্যবিদ থমাস আরনল্ড তারﺍﻟﺪﻋﻮﺓ ﺇﻟﻰ ﺍﻹﺳﻼﻡ গ্রন্থে লিখল- ﺃﻥ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻟﻢ ﻳﻨﺘﺸﺮ ﺑﺎﻟﺴﻴﻒ ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺍﻧﺘﺸﺮ ﺑﺎﻟﺪﻋﻮﺓ ﺍﻟﺴﻠﻤﻴﺔ ﺍﻟﻤﺘﺒﺮﺋﺔ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻗﻮﺓ “ইসলাম তরবারির মাধ্যমে প্রসারিত হয়নি, বরং শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের মাধ্যমে, কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই ইসলাম প্রসারিত হয়েছে।”
ধর্মনিরপেক্ষতার জয়জয়কারের যুগে পরাজিত মানসিকতার বহু ইসলামিস্ট নিজেদেরকে সাধু প্রমাণার্থে চতুরতাপূর্ণ এই শ্লোগানকেই আঁকড়ে ধরল, তারাও ওরিয়েন্টালিস্টদের সহযোগি হয়ে সেই নয়া ইসলাম প্রচারে নেমে পড়ল। মূলত তারা চাইছিল, এই 'কলঙ্ক' থেকে ইসলামকে মুক্ত করতে। তাই কুরআন, সুন্নাহর সুস্পষ্ট আদিল্লাহ, আসহাবুর রাসুল ও আসলাফ আল-ইসলামের ফাহম বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং দীনের সমস্ত উসুল ও উসলুবকে পাশ কাটিয়ে ওদের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে লাগলো- “না, না, ইসলাম উদারতা, সহিষ্ণুতা, অহিংসতা ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম শুধুমাত্র তার অন্তর্নিহিত আদর্শের বলেই প্রসার লাভ করেছে। আর যা-ও কিছু যুদ্ধ হয়েছে, সবগুলোই ছিল আত্মরক্ষামূলক; কক্ষণই আক্রমণাত্মক নয়!”
এই কথাগুলো আজ মুসলিমদের মধ্যকার সেলিব্রিটি দাঈ ও স্কলারদের মুখ থেকেই বেরিয়ে আসছে। এমনসব স্কলার, যাদের নাম শুনলেও আপনি হয়তো থ মেরে থাকবেন। জাকির নায়েকের মতো একজন ধীমান ব্যক্তিও শেষতক আটকা পড়েছেন এই ফাঁদে। প্রাচীনধারায় ইসলাম চর্চাকারিদের মধ্য থেকেও বেরিয়ে এসেছে ওয়াহিদুদ্দিন খান আর ফরিদুদ্দিন মাসুদের মতো ব্যক্তিরা। কট্টর যাহিরি ড. আসাদুল্লাহ গালিব থেকে শুরু করে মুতাসাহিল হানাফি বলে খ্যাত আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির পর্যন্ত পা বাড়িয়েছেন এ পথে। মুফতি মেঙ্ক, বিলাল ফিলিপস, ইয়াসির কাদি, নুমান আলি খান আর হামযা ইউসুফরা পুরো পৃথিবীটাই কুল আর পীস দিয়ে ভরে দিয়েছেন। কুফ্ফারদের প্রতি সহনশীল, উদার, সহিষ্ণু, অহিংস একটা উম্মাহ গড়ে তুলেছেন। এমন এক ইসলাম তারা শিখিয়েছেন, যার নমুনা ইসলামের পুরো ইতিহাসজুড়ে পাওয়া যায় না। এমনসব উসুল প্রণয়ন করেছেন, যার অস্তিত্ব সম্পর্কেও আমাদের উসুলিয়্যিন ইমামগণ অবহিত ছিলেন না। আল-ইয়াযু বিল্লাহ।
.
এই শতাব্দির অন্যতম একটি ফিতনাহ হলো তথাকথিত পীসফুল এই ‘মডারেট ইসলাম’। যা
যিনদিক আকবরের দীন-ই-ইলাহির চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ দীন-ই-ইলাহির বিকৃতি সবাই বুঝতে পারলেও এই বিকৃত মডারেট ইসলামের বিকৃতি সবাই ধরতে পারে না। আর এই বিকৃত ইসলামকে যখন কুফ্ফারগোষ্ঠি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রমোট করে, তখন তো এর ঝলমলে পর্দার পেছনের রহস্য জানার সামর্থ্য অনেক শক্তিমান পুরুষেরও থাকে না।
খেলা দেখা
এম মাহবুবুর রহমান
যারা নেশা করে, কেন করে ? একটা বড় কারণ হচ্ছে দুনিয়া থেকে কিছুক্ষণ আইসোলেটেড থাকা। মস্তিষ্ক তখন তেমন কাজ করে না, ওয়ান ট্র্যাক হয়ে যায়। এই পিনিক ফিলিংটাই তাদের পছন্দ, কেউ তাদের তখন কোন দুনিয়াবি কাজে বিরক্ত করবে না, টেনশন দিবে না, কেউ কোন কাজ করতে বলবে না।
.
ড্রাইভিং করা বেশ ক্লান্তিকর একটা কাজ, ঢাকায় তো কয়েক গুন বেশি। কারণ কী ? কারণ ড্রাইভারকে চার হাত পা, চোখ, মস্তিষ্ক - সব রেড অ্যালার্ট লেভেলে নিয়ে গাড়ী চালাতে হয়। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর সাইড ভিউ মিরর, ব্যাক ভিউ মিরর, ড্যাশবোর্ড - সব কিছু খেয়াল রাখতে হয়। এজন্য শরীরের তেমন কসরত না হলেও, কয়েক ঘণ্টা ড্রাইভ করলে বেশ ক্লান্ত লাগে। যারা রেড অ্যালার্ট লেভেল মেইন্টেইন করে ড্রাইভিং করে না, প্রায়ই অ্যাকসিডেন্ট করে।
--
বিশ্বকাপ খেলাধুলার বা সিমিলার আয়োজন সেরকম একটা দুনিয়া থেকে আইসোলেট করার উপায় মাত্র। এই টুর্নামেন্ট এর সময়ে হাইয়েস্ট প্রায়োরিটি এই খেলাধুলার সব অ্যাকটিভিটি। ইবাদতের কথা না হয় না-ই বললাম, বেসিক সামাজিক দায়িত্ব থেকেও পুরোপুরি অব্যাহতি নেয় এসময় অনেকেই। কারণ খেলাধুলার সেডিটিভ নিয়েছে সে অলরেডি।
একজন দায়িত্ববান মানুষের স্বরূপ হচ্ছে, সে তার চারপাশের এমন খবর রাখবে + নিজেকে ইনভলভড রাখবে যা তার ব্যক্তিত্বকে কমপ্লিমেন্ট করে। অনেকটা সেভাবে, যেভাবে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভার ড্রাইভিং করে। সময়মত কাজ ডেলিভারি দেয়া, নিজের পরিবারের খোঁজ নেয়া, নিকট বন্ধুদের কোন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা - এসবই ব্যক্তিত্বকে কমপ্লিমেন্ট করে। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি এই ম্যাডনেস কি আসলেই কারো ব্যক্তিত্বকে কমপ্লিমেন্ট করে ? আপনি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির ডাই হার্ড সাপোর্ট করে আপনার ব্যক্তিত্বে কতটুকু ভ্যালু অ্যাড করছেন ? এর অনেস্ট উত্তর নেগেটিভের দিকে যাবার কথা।
.
একটা মেশিন দ্রুত কনটেক্সট সুইচ করতে পারে, মানুষ পারে না। দেশে এবং বহির্বিশ্বে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো আপনার কাছে কোন পাত্তা পাবে না, কারণ একটু পরেই তো ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে খেলা দেখতে হবে, অতএব জিনিসপত্র সিরিয়াসলি নেয়া যাবে না। আপনার সহপাঠীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুকুরের মত পিটালে, হাতুড়ি দিয়ে তার টিবিয়া-ফিবুলা দ্বিখণ্ডিত করলেও আপনি তেমন প্রভাবিত হবেন না অথবা হতে চাইবেন না, কারণ আপনাকে ওয়ার্ল্ডকাপের সেডিটিভ দেয়া হয়েছে। আপনি চান এসব গ্লানি থেকে দূরে থাকতে, অথবা এসব গ্লানিকে কৃত্রিম গ্লানি বলে চালিয়ে দিতে। "কী লাভ এত লোড নিয়ে ? লাইফ বলে তো কিছু আছে নাকি? "।
.
বাংলাদেশের খেলাপাগল দর্শকদের সবার ফেবারিট দলগুলো আউট, যে আশা নিয়ে শুরু করেছিল, অনেক আগেই হতাশা দিয়ে তা শেষ হলো। আল্লাহর কসম, বিশ্বাস করুন যারা এসব ফেইক সেডিটিভ দিয়ে প্রভাবিত না, তারা আপনাদের চেয়ে মানসিকভাবে এক্ষেত্রে অনেক শান্তিতে আছে। যখন থেকে তারা আলেমদের মাধ্যমে জানতে পেরেছে এগুলো ঈমান বিধ্বংসী, তখন থেকে এগুলো থেকে দূরে থেকে ভাল আছে, আলহামদুলিল্লাহ। আফটার অল, আপনার আত্মার খোরাকের জন্যই তো খেলা দেখছেন, সেই আত্মার খোরাকের জন্যই এ থেকে দূরে থেকে আল্লাহর আরও নিকটবর্তী হবার চেষ্টা করুন, ইনশা আল্লাহ্ হতাশ হবেন না।
..................
বড় রোগের মূল বলবো গণতন্ত্রকে। এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাধারণ মানুষের মনে পুরোপুরি ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব হয় নি 'ধর্ম - নিরপেক্ষাতা' শব্দ চয়নের কারণে। অন্যদিকে গণতন্ত্র শব্দটি ঢুকিয়ে দেয়া গিয়েছে। এজন্য বর্তমানে আবার সেকুলারসিম শব্দটি প্রোমট পাচ্ছে। এবং অনেক সেকুলার বোদ্ধারাও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি পাবলিক প্লাটফর্মে এড়িয়ে চলছে।
তাত্ত্বিকভাবে সেকুলারিসম মূল শত্রু হলেও, প্র্যাক্টিক্যালী ইট ইস ড্যেমক্রেসি, যেটা মূলত সিস্টেমটাকে নৈতিক ভিত্তি দিচ্ছে, কালচার সৃষ্টি করছে, এবং এই গণতন্ত্র শব্দটার মাধ্যমেই রাজনৈতিক দলাদলি, সংবিধান পূজা, রাষ্ট্র পূজা, সরকার পূজা ইত্যাদিকে মানুষের মনে লেজিটিমাইয করা হয়েছে।
-মিফতাহ আয-যামান
বৃষ্টি-বাদলা
মুহাম্মাদ নাফিস নাওয়ার
বৃষ্টিস্নাত রাত, বৃষ্টিভেজা দিন নিয়ে আমাদের কতখানি রোমান্টিসিজম সেটা আমাদের গল্প কবিতাতে এক পলক নজর বুলালেই বোঝা যায়। বৃষ্টিতে ভেজা কারো খুব পছন্দ,কারো কাছে একেবারেই বিরক্তিকর। কিন্তু এক পশলা বৃষ্টি যে কারো মনেই খানিকটা হলেও স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়। মনের অজান্তেই তাই অনেক সময় আমরা একেকজন হয়ে উঠি আনমনা বৃষ্টিবিলাসী!
তিনি বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসতেন। যেনতেন ভাবে নয়, বড় আবেগ নিয়ে বৃষ্টির প্রথম ফোটাগুলোর স্নিগ্ধ স্পর্শে সিক্ত করতেন নিজেকে। কখনও জামার হাতা গুটিয়ে নিতেন রাহমাতের এই বারিধারার মধুর স্পর্শ পেতে! অন্তর দিয়ে অনুভব করতেন মহান রাব্বের দয়া,তীব্র ভালোবাসা। হ্যাঁ, আবেগের মিষ্টতায় মাখানো, রোমান্টিক একটা মন ছিল তাঁর। তিনি রোবট ছিলেন না, রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। তিনি সারাদিন গুরুগম্ভীর ভাষণ দিয়ে বেড়াতেন না। তিনিও মজা করতেন, হাসতেন, গল্প করতেন, কখনো বা আবেগে আপ্লুত হতেন। তিনি ছিলেন তাঁর চারপাশের মানুষগুলোর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। কতখানি প্রিয়? যতখানি প্রিয় হতে পারলে মানুষের হৃদয়ের পুরোটুকু জুড়ে থাকা যায়। তাঁর জন্য তাঁর সংগীদের ছিল হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। এতোটাই ভালোবাসার ছিলেন তিনি!
অবশ্য আমাদের এত কিছু জানার দরকার পড়ে না। আমরা রোমান্টিসিজম শিখি বলিউডের খানদের কাছ থেকে। ভালোবাসা শিখতে আমাদের দ্বারস্থ হতে হয় হুমায়ুন, মিলন, রবীন্দ্রনাথের গল্প উপন্যাসের। টাইটানিকের করুণ পরিণতি দেখে আমরা হায়হায় করি, সস্তা আবেগে টইটম্বুর বলিউড মুভি দেখে চোখের জলে নদী বানাই। পৃথিবীর নিখাদতম মানুষটির নিখাদ আবেগ, অনিন্দ্যসুন্দর অনুভূতি আমাদের এই রোবোটিক মনকে ছুঁয়ে যায়না! কি দরকারই বা এসবের, আমাদের বলিউড আছে না!! ভালোবাসার সূতিকাগার!!!!
আমাদের কাছে প্রফেট মানেই সারাদিন গুরুগম্ভীর ভাষণ দিয়ে বেড়ানো গম্ভীরদর্শন এক ব্যক্তিত্ব। অথচ...............
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
#KnowMuhammad (SAW)
#KnowYourDeen
জালিম ও যুলুম
শহীদুর রহমান শহীদ
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা জালিমের পরিচয় তুলে ধরে ঘোষণা করছেন, ‘যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না তারাই জালিম।’ [মায়িদাঃ ৪৫]। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, দুনিয়ায় যারা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে না এবং বিচারব্যবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে না তারাই জালিম। [মারিফুল কুরআন]। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর বিধানের সীমারেখা অতিক্রম করে তারাই জালিম।’ [বাকারাঃ ২২৯]।
ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচারকে সম্পূর্ণ রূপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তি যেমন নিজের ওপর জুলুম করা থেকে সর্বদা বিরত থাকবে তেমনি অন্যের ওপর জুলুম করা থেকেও সর্বদা বিরত থাকবে। হাদিসে কুদসিতে মহানবী সাঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে এরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করে দিয়েছি আর তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অন্যের ওপর জুলুম করো না।’ [মুসলিম]।
জুলুম একটি মারাত্মক ব্যাধি। অতএব সমাজ বা রাষ্ট্রে তা প্রকাশ মাত্র এর মূলোৎপাটন করা অপরিহার্য। না হয় তার বিপদ সমাজ বা রাষ্ট্রের সবাইকে ভোগ করতে হবে। জালিমদের পক্ষ অবলম্বন, তাদের কাজে সন্তুষ্টি জ্ঞাপন এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। জালিম এবং তার কাজে সহযোগিতা প্রদানকারী একই পরিণতি ভোগ করবে মর্মে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘যারা জালিম তাদের প্রতি তোমরা ঝুঁকে পড়ো না,তাহলে তোমাদেরও অগ্নি স্পর্শ করবে।’ [হুদঃ ১৩] অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জালিমদের জন্য কেউ দরদি হবে না,আর না এমন শাফায়াতকারী হবে না।’ [হজ্জঃ ৭৯]।
কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের সর্বত্র যখন জুলুমের বিস্তার ঘটে তখন এর ফলস্বরূপ নিকৃষ্ট সব লোক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ফলে ওই জাতির সাধারণ লোকদের জালিমদের অত্যাচারে ফল ভোগ করতে হয় এবং তাদের মন্দকাজের স্বাদ আস্বাদন করতে হয়। আল্লাহায়ালা পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ করেন, ‘এ রূপে আমি তাদের কৃতকর্মের জন্য জালিমের এক দলকে অন্য দলের ওপর প্রবল করে থাকি।’ [আনআমঃ ১২৯]।
জালিমরা যে সমাজ বা রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয় সে সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর থেকে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি উঠে যায়।
উপরন্তু সেই সমাজ বা রাষ্ট্র অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, ইহকাল ও পরকাল ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। আল্লাহতায়ালা এ মর্মে এরশাদ করেন, ‘ওই সব জনপদ যাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম তাদের জুলুমের দরুন এবং তাদের ধ্বংসের জন্য আমি নির্ধারিত করেছিলাম একটি নির্দিষ্ট ক্ষণ।’ [কাহাফঃ ৫৯]।
পবিত্র কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী জালিমদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো জাহান্নামের নিকৃষ্টতম আবাসস্থল। যারা অন্যায়ভাবে কোনো মানুষের ওপর জুলুম করে তাদের মহান আল্লাহতায়ালা পরকালে কঠিন আজাবের সম্মুখীন করবেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘সে দিন জালিমদের সম্পত্তি কোনো কাজে আসবে না। তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।’ [মুমিনঃ ৫২]।
আপাতদৃষ্টিতে জালিমদের জুলুমের প্রোপাগান্ডা দেখে মানব মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মহান আল্লাহ কি তার বান্দাদের এ দুর্দশা অবলোকন করেন না? বস্তুত আল্লাহতায়ালা জালিমদের সব জুলুম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত আছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘তুমি কখনো মনে করো না যে জালিমরা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অনবহিত। আসলে আল্লাহ তাদেরকে ওই দিনের জন্য অবকাশ দিচ্ছেন, যে দিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে এবং তারা মাথা উঁচু করে দৌড়াতে থাকবে।’ [ইব্রাহিমঃ ৪২]।
আল্লাহপাক আরোও বলেন 'যখন তাদের সে ওয়াদা(নির্দিষ্ট সময়)এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে,। [ সুরা ইউনুস ১০:৪৯ ]
এ সম্পর্কিত একটি হাদিস হজরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে গ্রেফতার করেন তখন আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘আর তোমার রব যখন কোনো জালিম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তার পাকড়াও এমনই হয়ে থাকে। তার পাকড়াও বড়ই কঠিন, নির্মম ও পীড়াদায়ক।’ [হুদঃ ১০২], [বুখারি]।
জালিমের জুলুমের পরিণতি সম্পর্কে মহানবী সাঃ আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমিতে জুলুম করল কেয়ামতের দিন সাত তবক পরিমাণ জমিন তার গলায় লটকে দেয়া হবে।’ [বুখারি ও মুসলিম]।
জালিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মহানবী সাঃ মুসলমানদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। হাদিসে এসেছে এক ব্যক্তি মহানবী সাঃ-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! একজন মুসলিমের পরিচয় কী? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, ‘যে নিজে জুলুম করে না এবং অন্যের জুলুমেরও শিকার হয় না।’ [বুখারি]। অন্য হাদিসে এসেছে মহানবী সাঃ বলেন, ‘জালিম ও মজলুম উভয় অবস্থায় তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি ওই ব্যক্তি মজলুম হয় তবে তো তাকে সাহায্য করা যায়, কিন্তু জালিম হলে সাহায্য করব কিভাবে? তিনি বললেন,তাকে বাধা দাও এবং জুলুম থেকে বিরত রাখো, এটাই তার সাহায্য।’ [বুখারি ও মুসলিম]।
হাদিস শরিফে মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে ভয় করতে বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আবাস রাঃ বলেন, নবী করিম সাঃ মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ-কে ইয়েমেনে পাঠানোর কালে বললেন, ‘হে মুয়াজ! মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করো, কেননা তার বদদোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।’ [বুখারি]।
হজরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের ইজ্জত-সম্মান বিনষ্ট করে কিংবা কোনো বিষয়ে জুলুম করে, সে যেন আজই তার কাছে কৃত জুলুমের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয় সে দিন আসার আগে, যে দিন তার কোনো অর্থসম্পদ থাকবে না। সে দিন তার কোনো নেক আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের দায় পরিমাণ নেক আমল কেটে নেয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেক আমল না থাকে তাহলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে সমপরিমাণ পাপ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’ [বুখারি]।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের উপরিউক্ত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জুলুমের পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাত কোনো কালেই সুখকর নয়। ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা গোষ্ঠীগত কোনো স্বার্থোদ্ধারের জন্য অন্যের ওপর জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে অন্যের ওপর জুলুম করা থেকে হেফাজত করুন।
সবশেষে একজন বিখ্যাত কবির নিম্মোক্ত উপদেশ স্মরণের মাধ্যমে শেষ করতে চাইঃ ‘
তোমার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারো ওপর জুলুম করো না। কেননা জুলুমের শেষ ফল বড়ই লজ্জাজনক। তুমি তো নিদ্রায় বিভোর থাকো, কিন্তু মজলুম ব্যক্তি বিনিদ্র রজনী যাপন করে তোমার জন্য বদদোয়া করতে থাকে। আল্লাহ সদা জাগ্রত।
ফুটবল
সাইমুম সাদী
শতাধিক ফুটবল টিম রয়েছে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে! শুধু তাই নয় তারা নিয়মিতই খেলাধুলা করে।
ইন্টারেস্টিং স্টোরি।
কথা হচ্ছিল যার সাথে তিনি একজন রোহিঙ্গা মুহাজির। শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে একটি টিনশেড ঘরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, আর কি কি খেলা আপনাদের প্রিয়?
বললেন সব ধরণের খেলাই প্রিয়। কিন্তু ফূটবলের ব্যাপারটা সম্পুর্ণ আলাদা। তরুণ যুব বৃদ্ধ সকলেই ফুটবল ভালবাসে।
আমি বললাম, ঠিকই বলেছেন মুসলমান ভাইটি। আপনারা ফুটবল প্রেমিক জাতি। আপনাদের খেলাধুলার প্রতি প্রেম বিশ্বের আর কেউ স্বীকৃতি না দিলেও মায়ানমার সরকার দিয়েছে।
কি বললেন, ন বুঝি। বুঝতে পারি নাই।
বললাম, আপনারা ফুটবল প্রেমিক। মায়ানমার সরকার তাই ফুটবলের মত লাথি মেরে আপনাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। কি আরামের সংবাদ তাই না?
স্বাধীনতা ভুলে খেলা নিয়ে ব্যাস্ত রইলেন। ওরা জন্মভূমি থেকে বের করে দিল এই সুযোগে...
মুহাজির ভাই কেদে ফেললেন। বললেন, গণহত্যা শুরুর আট দশদিন আগেও বড় একটা ফুটবল টুর্ণামেন্ট সমাপ্ত হয়েছিল উনাদের এলাকায়। আরেকটার জন্য আলাপ আলোচনাও চলছিল। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে চলে আসতে হল ওপার থেকে।
কিছু শক্ত কথা বলতে গিয়েও বললামনা। ক্রিকেট এবং ফুটবল উন্মাদ জাতি হিসেবে আমার নিজের কথা মনে পড়ল নতুন করে।
(খোদা না করুন) কোন একদিন টেলিভিশনে খেলা দেখতে গিয়ে ঘুমুতে অনেক রাত হয়ে যাবে। সকালে অনেক দেরী করে ঘুম থেকে উঠে দেখব বাইরে ভিনদেশী সৈন্যদের বুটের ভারী শব্দ এবং দুপুর নাগাদ জেনে যাব আমরা এখন পরাধীন...
বোরকা পড়ে মুখ না ঢাকলে কি হয়!!
Ambitious Aysha
আমাদের অধিকাংশের অনেক বড় একটা সমস্যা আছে। আমরা কুরআনের কিছু অংশ মানি আর কিছু অংশ মানিনা। যেটুকু পছন্দ হয়না সেটুকু বাদ দেই। আর নিজে নিজে খুশি হতে থাকি যে ওটাতো মানছিই, এটা না হয় নাই মানলাম! আর জিনিসটা চরম বাজে আকার ধারণ করে যখন মানুষ নিজের ব্যক্তিগত ভাল লাগা শরীয়তের বিরুদ্ধে চলে যায় তখন সেই বিরুদ্ধে যাওয়া নিয়মকে বৈধতা দিতে নানান পথ খুঁজে। আর আরো ভয়ংকর ব্যাপার হয় তখন যখন নিজেরাতো মানেই না বরং যারা মানছে বা মানা শুরু করেছে কিংবা মানতে চাচ্ছে তাদেরকেও নিজের দলে টানতে চেষ্টা করে, তাদের কাজে বাঁধা দিতে থাকে। আর এই কাজগুলো দূরের কেউ নয় বরং আমাদের পরিবারের আপনজনেরাই করে।
.
আমাদের সমাজের এইরকম একটা সমস্যা হল নিকাব করা যেটা শরঈ পর্দার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। অনেকেই এই নিয়মটা পছন্দ করেন না বা জরুরী মনে করেন না । আর নিজের এই মতের বৈধতা দিতে নানান রকম কুযুক্তি দাঁড় করিয়ে দেয়।
সেই রকমই কিছু যুক্তির একটা যুক্তি হল, "হজ্জে তো দেখা যায় কত মানুষ মুখ খোলা রাখে তাহলে আমরা কেন খোলা রাখতে পারবো না?"
.
তারা ভাবে বর্তমান জমানায় যারা হজ্জ করতে যায় তারা সবাই ব্যক্তিগত জীবনে ১০০% ইসলাম মেনে চলা মানুষ। তাই তারা যা করে সেটা সবটাই সঠিক। আসলে এমন ধারণা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না। হজ্জে যেসব মহিলা মুখ খোলা রেখে দেয় আসলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ। আর কারো ব্যক্তিগত পছন্দ দিয়ে ইসলাম চলেনা। ইসলাম চলে শুধুমাত্র একটা মানুষের কথায় যার নাম নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) । নবী আমাদের সেই আদেশই দিয়ে গেছেন যেটা আল্লাহ বলেছেন। একজন মহিলা যিনি হজ্জে গিয়ে মুখ খোলা রেখে দিয়েছেন তারা আমাদের আদর্শ নন। যেই হাফেজা / আলেমা টিভিতে অনুষ্ঠান করার সময় মুখ খুলে রেখে দিয়েছেন সে আমাদের আদর্শ নয়। আমাদের আদর্শ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) । মুসলিম হতে চাইলে যার কথা এক বাক্যে মেনে নিতে হবে। সেখানে নিজের পছন্দ অপছন্দের কোন জায়গা থাকবেনা। ঈমানদার সেই যে শুনার সাথে সাথেই আল্লাহর বিধান মেনে নেয়। আর মুসলিমতো সেই যে নিজের ইচ্ছা নয় বরং আল্লাহর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা বানিয়ে নেয়।
.
মুখ খুলে রাখা মহিলাদের আমাদের চোখে পড়ে কিন্তু মুখ ঢেকে রাখা এতো এতো ঈমানদার নারীদের আমাদের কেন চোখে পড়েনা? কেন মনের মধ্যে একটিবার প্রশ্ন আসেনা যে এইসব মহিলারা কেন এতো কষ্ট করে নিজেদের পর্দায় আবৃত করে রেখেছেন! কেন তাদের মুখ তো পরের ব্যাপার তাদের হাত পাটাও কেন দেখা যায়না! অনেক মহিলা আছেন যারা নিজেদের চোখটাও ঢেকে রাখেন। এগুলো তাদের চোখে পড়লেও এদেরকে এরা আদর্শরূপে গ্রহণ করেনা।
.
যদি হজ্জের কথাই বলতে হয় তবে বলবো হজ্জে শুধুমাত্র ইহরাম অবস্থায় মহিলারা মুখ খোলা রাখবে আর বাকি সবজায়গায় ঢেকে রাখবে। এটাই বিধান। শুধু তাই নয় ইহরাম অবস্থায় কোন পুরুষ এসে পড়লেও মুখ ঢেকে ফেলতে হবে । চলুন কিছু হাদীস দেখিঃ-
.
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়।
{মুসন্নাফআব্দুর রাজ্জাক, হাদীসনং-৮৮৫৯}
.
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।”
[সহীহ বুখারী ৪/৬৩ , হাদীস ১৮৩৮]
.
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন।
এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।
.
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তার হজ্বের বিবরণে বলেছেন, ‘ইহরামে কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষেরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন।
তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন।’
(মুসনাদে আহমদ ৬/৩০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ১৭৫৭)
.
ফাতিমা বিনতুল মুনযির (রাহঃ) বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।’
(আল মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; আলমুসতাদরাক, হাকিম ১/৪৫৪)
.
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন, ‘সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/১১৪)
.
ইবনুল কাইয়িম রাহ. বলেন, ‘নারী নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে যাওয়ার অবকাশ নেই।’
(ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন ২/৪৭)
.
শায়খ ইবনে বায (রাহঃ), শায়খ ইবনে উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীলও একই ফতোয়া দিয়েছেন।
দেখুনঃ (রিসালাতুনফিলহিজাবি ওয়াসসুফূর, পৃ.১৯; ফাতাওয়াউলামাইল বালাদিল হারাম পৃ. ১১৬৯)
.
এখানে এসে অনেকেই বলেন যে হাত- পা- মুখ তো সতরের অংশ নয় তাহলে কেন এটি ঢেকে রাখবো? জ্বি এগুলো খোলা রাখতে পারবেন শুধুমাত্র মাহরাম পুরুষের সামনে। সতর আর পর্দা দুইটা দুই জিনিস। পুরুষের সতরের সীমানা আমরা সবাই জানি। তাই বলে একজন পুরুষ কোন বেগানা মহিলার সামনে শুধু সতর ঢেকে চলাফেরা করতে পারবেনা। তাই সতরের সাথে পর্দাকে এক করে ফেলবেন না। মহিলাদের সর্বাঙ্গই পর্দার অন্তর্ভুক্ত। আর এক কথায় এটা আমাদের মেনে চলতে হবে।
.
শুধু তাই নয়, একজন মহিলা পর্দার সকল কোডস অফ কন্ডাক্টস মেনে বাহিরে গেল কিন্তু ঘরে গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে সব দেখিয়ে বেড়ালো , তখনও কিন্তু তার ১০০% ফুলফিল হলোনা। বাহিরে হয়েছে কিন্তু ঘরে হয়নি। পর্দা পোষাক এর সাথে সাথে অন্তর, চোখ, জিহবা, হাত - পা, ব্যবহার , মোটকথা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শালীনতার একটা টোটাল প্যাকেজ। একটি ছাড়া অপরটি অসম্পূর্ণ!!!
.
এখন অনেকেই সম্পূর্ন পর্দার ৮০% হয়তো মানেন, কেউ ৮৫% আবার অনেকেই ৯০/৯৫ এবং ১০০% ও মানেন। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড হবে ১০০% । আমরা কখনোই পর্দার ১০০% কোড অফ কন্ডাক্টস অনুসরণ না করা মহিলাদের আদর্শ হিসেবে নিতে পারবোনা যদি আমরা সত্যিকারের মুসলিম হতে চাই।
.
কুরআনের অসংখ্য আয়াত আছে, অসংখ্য হাদীস (মুখ ঢাকার দলিলসহ) আছে শরঈ পর্দার ব্যাপারে। কিয়াসের আলোকেও মহিলাদের সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে একই বিধান। তাই আমাদের উচিত ঈমানদার নারী হতে গেলে ১০০% ই মানা। ঈমানদার নারী সেই যে আল্লাহ-র সকল বিধান অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে এবং সাথে সাথে সেই অনুযায়ী আমলও করে।
.
এইসকল ঈমানদার নারীকে পর্দার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
.
"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা আন- নূর : ৩১)
.
এখন আপনিই ঠিক করুন আপনি ঈমানদার মুমিনা মুসলিম নারী হবেন নাকি কুরআনের কিয়দাংশ মানা আর বাকিটুকু না মানা বেহায়া নারী হবেন!! Now Choice is yours...!! আর নিজে না মানলে না মানবেন কিন্তু অন্যকে বাঁধা প্রদান করার আপনি কে? নাকি ইবলিশ শয়তানের মত নিজেও জাহান্নামে যেতে চান আর সাথে সাথে বাকি সবাইকেও নিতে চান?
.
চলুন আজ থেকে নিজেরা ঈমানদার হই, সত্যিকারের মুসলিম হই। সাথে সাথে অন্যকেও আল্লাহ-র বিধান মানতে সাহায্য করি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
"হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।" (সূরা আল- ইমরানঃ ১০২)
বান্দার সর্বশেষ কাজের ভিত্তিতেই তার হিসাব-নিকাশ হবে...
মোহাম্মদ মুরাদ খান
কেউ যদি নেক আমলরত অবস্থায় মারা যায় যেমনঃ স্বলাতরত অবস্থায়, কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায়, স্বলাতে সিজদা রত অবস্থায়, নিসন্দেহে সে ভাল অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো।
আর কেউ যদি গান (বাদ্যযন্ত্রে ভরপুর) শোনা অবস্থায়, পর্ণো দেখা অবস্থায় বা শারিরীক জিনায় রত অবস্থায় মারা যায় বা যেকোন গুনাহের কাজে রত অবস্থায় মারা যায় তাহলে স্পষ্টতই সে হারাম ও খারাপ কাজে রত অবস্থায় মারা গেল (ওয়াল্লাহু আলাম)।
নিচের হাদিসটি পড়লেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে ইং শা আল্লাহ্।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর পথে কে জিহাদ করছে, তা তিনিই ভাল জানেন এবং কে তাঁর পথে আহত হয়েছে আল্লাহ্ই অধিক অবগত আছেন।
সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুশ্রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধ লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্রিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হবে। একজন সহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে, তা শুনে সহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্র মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত ‘আমাল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত ‘আমাল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’ (৪২০৩, ৪২০৭, ৬৪৯৩, ৬৬০৭) (মুসলিম ১/৪৭ হাঃ ১১২, আহমাদ ২২৮৯৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯৫)
হাদিসের মানঃ সাহিহ।
আমাদের সর্বোত্তম আমলটি যেন হয় আমাদের সর্বশেষ কাজ, আমাদের সর্বশেষ কাজটিই যেন হয় আমাদের সর্বোত্তম আমল।
মূর্তি ধ্বংসকারী উমর
নাফিজ মুকতাদির
বুম!
.
১৭০০ বছর ধরে সগৌরবে দাড়িয়ে থাকা বামিয়ানের মূর্তিটির আর কোন অস্তিত্ব রইল না।
…………………
আজকের ঘটনা বামিয়ানের বৌদ্ধমূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে। তবে এটি কোন সাধারন মূর্তি ভাঙ্গার গল্প নয়, এতে রয়েছে মুসলিমদের জন্য এক গভীর শিক্ষা। অবশ্য আমি শুধু গল্পটাই বলব, কি শিক্ষা সেটা আপনাদের নিজ থেকে বের করে নিতে হবে।
চলুন শুরু করা যাক।
………………
মোল্লা উমরকে চিন্তিত দেখা যাচ্ছে। তিনি খবর পেয়েছেন, 'বামিয়ানের বৌদ্ধমূর্তিটি' ফিতনার জায়গায় পরিনত হয়েছে এবং অনেকেই এখানে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হচ্ছে।
.
কিন্তু তিনি তো ভাল করেই জানেন আল্লাহর আইনের অধীনে পরিচালিত রাষ্ট্রে মূর্তির কোন স্থান নেই। একজন প্রাক্তন মাদ্রাসা শিক্ষক এবং সিরাতের একনিষ্ঠ পাঠকারী হিসেবে তার ভাল করেই জানা যে, রাসুলুল্লাহ (সা) মক্কা বিজয়ের পর সর্বপ্রথম সমস্ত মূর্তি ধ্বংস করেন। তাছাড়া দুর্বল অবস্থায়ও আল্লাহর রাসুল (সা) আলী (রাঃ)কে নিয়ে লুকিয়ে মূর্তি ভাঙতেন।[1]
অবশেষে মোল্লা উমরের সামনে শুধু একটি অপশনই বাকি রইল।
.
তিনি ঘোষণা করলেন যে, বামিয়ানের মূর্তিটি ধ্বংস করা হবে।
.
আফগানিস্তানের কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করায় ইতিমদ্ধেই পশ্চিমা দেশগুলোর চুলকানি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই ঘোষণা যেন তাদের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিল।
.
BBC, CNN ইত্যাদি চ্যানেলগুলুতে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, এক সাধারন মোল্লা তাদের হাজার বছরের পুরনো কুফরের নিদর্শনকে ধ্বংস করে ফেলবে। ফলাফলস্বরূপ, পশ্চিমা সরকারগুলো মোল্লা উমরকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে লাগল।
.
তৎকালীন জাতিসংঘ প্রধান কফি আনান মোল্লা উমরের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইল।
.
আপনারা জানেন যে, মোল্লা উমর আলেমদের খুব সহজে সাক্ষাৎ দিলেও কাফির রাষ্ট্রপ্রধান বা বিদেশি কূটনৈতিকদের সাথে তেমন দেখা করতেন না। তাই তিনি আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা উবাইদুল্লাহকে কফি আনানের সাথে দেখা করতে বলেন।
.
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বৈঠক বসল।[2]
.
মোল্লা উবাইদুল্লাহ কফি আনানকে জানালেন যে, শুধু বাদিয়ানের মূর্তিই নয় বরং কাবুলের মিউজিয়ামে রাখা অন্যান্য মূর্তিও ধ্বংস করা হচ্ছে।
.
বলাবাহুল্য, বৈঠক ব্যর্থ হয়।
.
আমেরিকার নির্দেশে সৌদি, মিশর এবং পাকিস্তানের কিছু পা চাটা আলেম এসে মোল্লা উমরের দরবারে উপস্থিত হলেন। তারা মোল্লা উমরকে অনুরোধ করল মূর্তি ধ্বংস না করার জন্য।
.
মোল্লা উমর ধৈর্যের সাথে তাদের কথা শুনলেন এবং অতঃপর তাদেরকে সম্মানের সহিত তার আপত্তির কথা জানালেন। দরবারি আলেমদেরকে খালি হাতে ফিরে যেতে হল।
.
তৎকালিন সময়ে জাপান আফগানিস্তানকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য টাকা পয়সা দান করত।
.
তারা মোল্লা উমরকে জানাল যে, তিনি যদি মূর্তি ধংসের এই পরিকল্পনা বাদ না দেন, তাহলে তারা সাহায্য বন্ধ করে দিবে।
.
মোল্লা উমর তাদের জানালেন যে, যে ভুমিতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানে কোন মূর্তি থাকবেনা, তারা যা ইচ্ছে করুক।
.
জাপান হার মানতে রাজি নয়। তারা বামিয়ানের মূর্তিকে রক্ষা করেই ছাড়বে।
.
তারা প্রস্তাব রাখল যে, মূর্তি ধ্বংস করার প্রয়োজন নেই, তারা নিজ খরচে এই মূর্তিকে ঢেকে দিবে এবং সাহায্যও বন্ধ করবেনা।
.
মোল্লা উমর আবারো তাদের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিলেন।
.
নাছোড়বান্দা জাপান আবারো নতুন প্রস্তাব রাখল।
.
তারা বলল, ঠিক আছে মূর্তি আফগানিস্তানে থাকার দরকার নেই। মূর্তিকে কেটে আমরা জাপানে নিয়ে যাবো এবং মূর্তির মূল্য বাবদ তালেবানকে বিরাট অঙ্কের টাকাও প্রদান করা হবে।
.
এর প্রত্যুতরে মোল্লা উমর বললেন, কখনোই না। আমি চাই না কেয়ামতের দিন আমাকে মূর্তি বিক্রয়কারী উমর বলে ডাকা হোক, বরং আমি চাই আমাকে মূর্তি ধ্বংসকারী উমর বলে ডাকা হোক।
.
অতঃপর আর কিছু বলার অবকাশ রইল না এবং নির্দিষ্ট দিনে মূর্তিটি ধ্বংস করা হল।
[1] ইসলামের প্রাথমিক সময়কালের ঘটনা, মুসলিমরা তখন দুর্বল। আলি (রা) বর্ণনা করেন-
"রাসূল (সা) এবং আমি বের হলাম আর কাবা পর্যন্ত পৌঁছুলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বললেন, ‘বসো’; এবং তিনি আমার কাঁধের উপর উঠলেন। অতঃপর আমি তাকে উঁচু করতে লাগলাম, কিন্তু তিনি আমার দুর্বলতা বুঝতে পারলেন।
সুতরাং তিনি নামলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সা) আমার জন্য বসে পড়লেন এবং বললেন, “আমার ঘাড়ের উপর উঠো”। তিনি(আলী (রাঃ)) বলেন, ‘সুতরাং আমি তাঁর ঘাড়ের উপর উঠলাম’। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, আমার মনে হতে লাগল যেন আমি ইচ্ছা করলে আকাশের দিগন্তে পৌঁছাতে পারতাম যতক্ষণ না আমি সেই ঘরের (কাবা) উপর পৌঁছুলাম যেখানে তামা বা পিতলের মূর্তি ছিল।
সুতরাং এটিকে এর ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে ঠেললাম, যতক্ষণ না এটি আমার আয়ত্তে আসল। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বললেন, ‘এবার ওটাকে ফেলে দাও।’সুতরাং আমি এটাকে ফেলে দিলাম এবং এটি ভাঙা বোতলের ন্যায় চূর্ণ হয়ে গেল। এরপর আমি নামলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এবং আমি দ্রুত প্রস্থান করলাম যতক্ষণ না আমরা বাড়িগুলোর মাঝে লুকালাম, এই ভয়ে যে কওমের কেউ হয়ত আমাদের দেখে ফেলবে।”
(আহমদ, হাদিসটি হাসান)
[2] https://tinyurl.com/yacl5z98
একেকটা অনর্থক কাজ আপনার বিরুদ্ধে শয়তানের একেকটা গোল
আব্দুল্লাহ জোবাইর
ফুটবল খেলা নিয়া ব্যাপক হয়রানি গেল আমাদের।
আর্জেন্টিনা গোল খেল না গোল দিল, কোনটায় বেশী খেয়েছে কোনটায় কম- এসব নিয়ে আমাদের ঘুম নেই।
কয়েকজন আত্মহত্যা করলো।
স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে কোপ দিল।
ক্লাস টেনের ধাড়ি ছেলেটা হাউমাউ করে কাঁদলো।
গভীর রাতে আকস্মিক চিৎকারে ডাকাত পড়েছে ভেবে নিরীহ লোকদের ঘুম ভেঙে গেল।
প্রিয় দল হেরেছে বলে দামী টিভি সেটটা আছড়ে পড়লো রাস্তায়।
কত কিছু হয়ে গেল নিছক কয়েকটি খেলার জন্য। আশি মিনিটের খেলার মতো খেলো একটা জিনিসকে নিয়ে আমরা কত সিরিয়াস হয়ে গেলাম! অথচ এই ক’মিনিটে মৃত্যু যে আরও কাছিয়ে এলো; শ্বাসগুলো খর্চা হয়ে গেলো- তার কোন হিসাব নেই।
টিভির খেলা ছেড়ে জীবনের খেলায় যদি আমরা একটু সিরিয়াস হতে পারতাম!
অনেক লম্বা হায়াত পাওয়া ব্যক্তির হায়াতের পরিধিও হয়তো আশি বছর। আশি বছর ধরে শয়তান আপনাকে গোল দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। রেফারি হিসেবে আছেন মালাকুল মাওত।
তিনি শেষ মুহূর্তের বাঁশী বাজাবেন। আপনি শয়তান আর নফসকে শায়েস্তা করে একের পর এক গোল দিয়ে যান। শয়তান যেন গোল দিতে না পারে। আপনার আমল আর ঈমানের পাল্লা ভারী থাকুক। শেষ মুহূর্তে নেইমারের মত না কেঁদে আপনি হাসুন।
একেকটা অনর্থক কাজ আপনার বিরুদ্ধে শয়তানের একেকটা গোল। শেষপর্যন্ত জিততে না পারলে আপনার কাপ কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাবে....।
No comments:
Post a Comment