Tuesday, March 3, 2020

লেখা সংকলন ২





https://justpaste.it/lekhacollection2





লেখা সংকলন ২








প্যারিস প্রেমের গল্প!
এস এম নাহিদ হাসান

১৮৩০ সালে আলজেরিয়া দখলের মধ্য দিয়ে আফ্রিকায় প্রবেশ করে ফ্রান্স। তারা দেশটি শাসন করে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। আলজেরীয় তথ্যসূত্র মতে প্রায় ১৩০ বছরের ‘সভ্যতার মিশনে’ তারা ২০ লাখের বেশি আলজেরীয়কে হত্যা করেছে।
আলজেরীয়দের দমনের জন্য তাৎক্ষণিক যে গণহত্যা চালানো হয়, তাতে নিহত হয় প্রায় ৪৫ হাজার লোক। কতোটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিলো তা ফুটে ওঠে এক ফরাসি সেনা কর্মকর্তার মন্তব্যে। আলজেরীয়দের লাশ গুম করার দায়িত্বে নিয়োজিত ওই সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গের অফিসারকে বলেন, "তুমি এত দ্রুতগতিতে তাদেরকে কচুকাটা করে চলেছো যে, আমি মাটিচাপাদিয়ে শেষ করতে পারছি না!"
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক অ্যালিস্টার হর্ন তার বিখ্যাত অ্য সেভেজ ওয়্যার অব পিস বইতে লিখেছেন, অভিযান চলাকালে নৃশংসভাবে আলজেরীয় নারীদের ধর্ষণ করে ফরাসি সেনারা। ধর্ষণ শেষে অনেক নারীর স্তুন তারা কেটে ফেলে। হত্যার পর অনেকের মৃতদেহ বিকৃত করতেও ছাড়েনি সভ্যতার "সোনারা"।
বিখ্যাত ফরাসী ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ অ্যালেক্সিস দ্য তকিউভিলে ১৮৩৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘Democracy in America’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আমরা যদি আমাদের চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ্য করি, আমাদেরকে প্রায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, ইউরোপীয়রা মানবজাতির এক ভিন্ন গোত্রভুক্ত সম্প্রদায়, যেমন ইতর প্রাণীর বিপরীতে মানব সম্প্রদায়। সে তার নিজের প্রয়োজনে তাদেরকে বশীভূত করে এবং যখন তা করতে ব্যর্থ হয় তার বিনাশ সাধন করে।’
তথ্যসূত্র : জেনোসাইড সিন্স নাইনটিন ফরটি ফাইভ : ফিলিপ স্পেন্সার, দ্য গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া, আলজেরিয়া ডটকম
স্রেফ একটা ফুটবলে লাথি দেওয়ার কৌশলে আমরা সবকিছু ভুলে যেতে পারি না।


বর্ণভেদঃ একটি জাহেলিয়্যাত
শরীফা আল হুসাইন

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক 'সিদ্দিকী নাজমুল আলম'কে ট্রল, তার ছবি নিয়ে Meme ইত্যাদি প্রায়ই চোখে পরে।
দেখে বুঝাই যায় তার চেহারা নিয়েই এসব করা হয়।
.
এসব দেখে আশ্চর্যই হতে হয়। অনেক বুঝদার 'প্র্যাক্টিসিং মুসলিম'রাও এসব করে মজা পায়।
আপনার আমার আইডিওলজি তার বিপরীত, তার মানে তার চেহারা নিয়েও হাসাহাসি করতে হবে? এগুলো কী ধরনের ছেলেমানুষি?
.
সে যেসব ভুল করছে, ভুল বলছে' অন্যায় করছে, অন্যায় বলছে সেগুলো নিয়ে কথা বলুন। ইচ্ছে হলে সেগুলো নিয়ে হাসিহাসি করতে পারেন, যদি সে হাসাহাসি করার মত কিছু বলে।
কিন্তু তার গায়ের রং, দেহাকৃতি, চেহারা নিয়ে ট্রল বানাতে হবে কেন?
.
আল্লাহর রাসূল (সা) কোনো কাফিরকেও সাদা-কালো আর চেহারার মানদন্ডে বিচার করেছেন?
মুসলমিদের কাছে ভালো মন্দের মাপকাঠি তো হলো 'ঈমান, তাকওয়া'
.
তার চেহারা নিয়ে হাসাহাসি করার আগে তার চেহারাটাকে নিজের উপর বসিয়ে তারপর ভাবুন, তখন কি নিজের চেহারা নিয়েও হাসাহাসি করতেন?
.
এটা যে শুধু সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ব্যাপারে বলছি, তা নয়। যে কারো চেহারাই হোক। হোক সে মুসলিম কিংবা কাফির।
.
আমরা যারা তাকওয়া দিয়ে মানুষের মাঝে পার্থক্য করি, তাদের থেকে এসব কেন আসবে?
আসলে আমাদের কথা শুধু মুখেতেই থাকে। আখলাকের মাঝে সেটা খুজেও পাওয়া যায় না।
.
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা বলেন.....
লাক্বাদ কানা লাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাহ
অর্থাৎ 'তোমাদের জন্য মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।'
তবে কেন আমরা তার (সা) অনুসরণ বাদ দিয়ে নাফসের অনুসরণ করছি?





















তাবিজ
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (রুকইয়া বিশেষজ্ঞ)

কুফরি তাবিজের ব্যাপারে বলতে লাগলেই আমাদের যেসব ভাইয়েরা ঝাড়ফুঁকের কথা টেনে ওটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। তাদেরকে আমি সচরাচর কিছু প্রশ্ন করে থাকি-
-----
ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে মুসলিম শরিফে যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর সাফ হাদিস আছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর যাচাই করার পর শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
.
১. আজকাল যেসব "২৪৬৮ ৭৬৮ ৫৮০ ইয়া ফিরাউন ইয়া জিবরাইল" তাবিজ আমাদের হুজুররা লেখে। এসব তাবিজের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে অনুমতি দিয়েছেন?
.
২. আপনারা শর্ত সাপেক্ষে তাবিজ জায়েজ বলেন - ভালো কথা। তো তাবিজ জায়েজ হওয়ার শর্তের সাথে মিলে এরকম তাবিজ জীবনে কয়টা দেখেছেন?
.
৩. যেসব তাবিজের চর্চা হয়, এর শতকরা ৯৯.৯৯% আপনাদের ফাতওয়ার হিসেবেই হারাম কুফর। এরপরেও এই ফিতনার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চুপ কেন? ফিতনার দরজা বন্ধ করা না ওয়াজিব?
.
৪. গাইরে মাহরামের সাথে অহেতুক চ্যাট করা, পত্রালাপ করা, ফোনে কথা বলা - এটার হুরমত তো নফসান বা ক্বাত'আন না, তবুও আলেমরা এটা নিষিদ্ধ বলেন কেন? কারণ এটা হচ্ছে হারাম কাজে পৌঁছানোর রাস্তা, শুরুতেই ফিতনার দরজার বন্ধ না করলে এটা যিনা পর্যন্ত পৌছাবে। সবাই তো আর যিনা করে না, তবুও ফোনে প্রেম করা হারাম বলেন কেন? কারণ এটা হারাম পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম। খুতুওয়াতিশ শাইত্বান।
তাবিজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, আপনি প্রথমে না থামালে তাঁরা কুফরি-শিরকি তাবিজে পৌঁছাবে। আর এমনটাই হচ্ছে আমাদের সমাজে।
.
৫. এক মাযহাব মানা আবশ্যক বলেন, কারণ সাধারণ মানুষকে ইচ্ছামত মাযহাব মানতে দিলে তাঁরা ফিতনার জন্ম দিবে। আওয়ামরা উসুল বুঝবে না, একেক মাজহাবের সব সহজ বিষয় নিয়ে ধর্মকে জগাখিচুড়ী বানাবে।
তা ভাই আপনার তাবিজের উসুলগুলা কজন আওয়াম বুঝে? তাদেরকে যে ফিতনার রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন, এরপর যখন সে স্বয়ং শয়তানের লেখা তাবিজ নিবে, তখন এর দায় আপনি নিবেন?
দোষ তো আপনার! ফিতনার দরজা খালি মাজহাবের সময়েই বন্ধ করেছেন, তাবিজের সময় আরও রাস্তা দেখাইছেন।
---
রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রেও বলেছেন- "তোমাদের ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র আমাকে দেখাও, যদি শিরক না থাকে সমস্যা নাই" (মুসলিম)
তখনও কুফরি শিরকির প্রচলন ছিল বিধায় ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচাই করে তারপর অনুমতি দিয়েছেন আমভাবে দেননি। সাহাবায়ে কিরাম সুরা ফাতিহা দিয়ে রুকইয়াহ করেও নিশ্চিত হননি, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছেন- কাজটা ঠিক হয়েছে তো?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
.
৬. আপনারা তাবিজ নিলে কি সেটা যাচাই করেন? উম্মতকে কখনও বলেন যাচাই করার কথা? নাকি উল্টা পরামর্শ দেন "সমস্যা হইছে? কবিরাজের কাছে যান!"
.
৭. শেষ প্রশ্ন, আপনারাও তো কবিরাজদের কাছে যান। তাবিজ নেন। জীবনে কয়টা তাবিজ ভেঙ্গে দেখেছেন এটা জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا
হে ইমানদাররা! কোন পাপাচারী ব্যক্তি যখন তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তখন সেটা যাচাই কর। ভেরিফাই কর। (সুরা হুজুরাত-৬)
.
-------------------
তাবিজের ব্যাপারে আমার দর্শন উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের অনুরূপ।
আমি বলব, তাবিজ পাইলে সবার আগে ভাঙবেন! দেখবেন ভেতরের লেখাটা কি খালি কোরআনের আয়াত, নাকি সাথে প্রাইমারির ২৪৬৮ নামতা লেখা আছে? খালি কোরআন আঁকা আছে, নাকি সাথে যাদুকরদের নকশাও আছে? খালি আল্লাহর যিকর আছে, নাকি চিপা দিয়ে ফেরাউন শয়তানের যিকরও আছে।
যদি কোন সমস্যা না পান, অস্পষ্ট কিছু না থাকে। তখন আপনার সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিলাম সেটা যা ইচ্ছা করতে পারেন।
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াত দেয়।
হিট এন্ড ডাই
শরীফ আল হুসাইন

আইন জালুতের যুদ্ধে মুসলিমরা অপরাজেয় মোঙ্গলদের পরাজিত করতে পেরেছিলো 'ইনগিমাসি (গেরিলা)' কৌশলের কারণে।
.
সুলতান সাইফু্দ্দীন কুতুয (রহ.) মুসলিম যোদ্ধাদের একটি গ্রুপকে ঘন জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
রুকুনুদ্দীন বাইবার্সকে (রহ.) দিয়ে একটা ক্ষুদ্র দল পাঠিয়ে দেন মোঙ্গল বাহিনীর কাছে। যারা শত্রুদের উপর 'হিট এন্ড রান' পদ্ধতিতে হামলা করে তাদেরকে উত্তেজিত করে তোলে। বেশিরভাগ মুসলিম যোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন।
.
বাকি যোদ্ধারা পিছু হটে পাহাড়ে লুকিয়ে রাখা গ্রুপের দিকে আসতে থাকে। যেখানে মুসলিম যোদ্ধারা ওৎ পেতে ছিলো হামলা করার জন্য।
মোঙ্গলরা এই ফাদে পা দেয়। ইনগিমাসি যোদ্ধাদের পিছু নিয়ে ঘন জঙ্গল ঘেরা এলাকায় মুসলিম বাহিনীর এম্বুশের মাঝে ঢুকার সাথে সাথে লুকিয়ে থাকা যোদ্ধাদের তীর বৃষ্টি তাদের উপর আছড়ে পরে।
বাকি সৈন্যদের নিয়ে সাইফুদ্দীন কুতুয (রহ.) মোঙ্গলের ঘিরে ফেলেন।
প্রাণপণ যুদ্ধ করেও একসময় মোঙ্গলরা দুর্বল হয়ে পরাজিত হয় আর পালাতে থাকে। যার মূল কারণ ছিলো এই কৌশল।
এসব মোটামুটি সবারই জানা। তবুও বললাম।
এমন কৌশল আজও চলছে। ইনগিমাসিরা 'হিট এন্ড রান' এবং 'হিট এন্ড ডাই' পদ্ধতিতে কুফফার সম্প্রদায়ের অন্তর কাঁপিয়ে চলছে।
আর মুসলিমরা সেগুলোকে 'সন্ত্রাসী হামলা' উপাধিতে ভূষিত করছে।
(৯/১১ এর আক্রমণও এমনই ছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো ক্রুসেডার আম্রিকাকে নিজেদের খোয়াড় থেকে বের করে আনা।)
মানুষ না মুসলিম?
সালাফী সুফী (ছদ্মনাম)

-তুমি কি আগে মানুষ না মুসলিম?
-মানুষ!
-ইবলিশ কেও একই রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছিল?
-যেমন?
-সে আগে আগুনের তৈরী জ্বীন নাকি আল্লাহর সিদ্ধান্তের কাছে আত্মসমর্পণকারী মাখলূক!



















শিশু বয়সের বুনিয়াদী অবস্থায় শিরক কুফর চেনা
তাহমিদ ইব্রাহিম

স্কুলে যেদিন ভর্তি হয়েছিলাম তার দু'তিনদিন পর পুরোদমে ক্লাস শুরু হলেও আরও কয়েকদিন পর এসেম্বলি করানো শুরু হয়েছিলো। এসেম্বলি বলতাম ছোট থেকেই, এটার আরেক নাম বোধয় পিটি।
যাইহোক, প্রথম স্কুল অভিজ্ঞতা জানতে আব্বু দুপুরে খাবার টেবিলে জিজ্ঞেস করেছিলো, "কিরে আজকে কেমন লাগসে?" আমি বললাম- আজকে এসেম্বলি করাইসে। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াইসে।
আব্বু- জাতীয় সঙ্গীত গাইস না। এইটাতে শিরক মেশানো লাইন আছে।
আমি- কিন্তু, স্যারেরা তো লাইনের মাঝে হেটে হেটে চেক করে কে গাচ্ছে আর কে গাচ্ছে না।
আব্বু- তাইলে ঠোট নাড়াইস খালি। গাইস নাদেখাবি যে গাচ্ছিস।
আমি- ওহ! কিন্তু শিরক কি??
আব্বু- ঈমান ধ্বংস করে দেয়। একজন মুসলিম আর মুসলিম থাকেনা।
এরপর থেকে লাইফে কখনোই মুখে জাতীয় সঙ্গীত আওড়াইনাই।

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরের মাস ছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারি। স্কুল থেকে বলে দিলো ভোর ৬ টায় যেন স্কুলের সামনে চলে আসি। উখান থেকে র‍্যালি বের হয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবে।
এজ ওয়েল এজ এইটাও বললাম আব্বুকে যে, আগামীকাল ফুল দিতে যাব সকালে শহীদ মিনারে।
আব্বু- না, যাইস না। এইটা শিরক। খাম্বায় ফুল দিয়ে লাভ কি?
আমি- ওহ! তাইলে ঘুমাবো।
আব্বু- ঘুমাইস, তাও ভালো।

ছোটকাল থেকে যেই মাইন্ড সেটাপ করে দিয়েছিলো বাসা থেকে। ওটা আমার বড় হয়ে বেশ কাজে এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। এটলিস্ট শিশু বয়সের বুনিয়াদী অবস্থা থেকে এমন শিরক কুফর চেনার সুযোগও অনেকের হয়না।

আকাবিরগনের পারস্পরিক সৌহার্দ্যতা তেজদিপ্ত ঈমান

আবদুল্লাহ নোমান

১। ভারতীয় উপমহাদেশের জনস্বার্থের যেকোনো আন্দোলন বা স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরামের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ও অনস্বীকার্য অবদান ছিল সবসময়। ১৮৫৭ সালের “সিপাহী বিপ্লবের” উত্তালে যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম শুধু মুখে বা ফতওয়া জারির মাধ্যমে নয়, বরং প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন এবং কারাগারের কালো- কুঠরিতে নির্যাতিত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদি, মোহাম্মাদ জা’ফার থানেসারি, আল্লামা শাহ্‌ আহমাদুল্লাহ মাদ্রাসি, ও আল্লামা সায়্যিদ কেফায়াত আলি কাফি মুরাদাবাদি (রঃ) ছিলেন অন্যতম। নিম্নোক্ত ঘটনা প্রমান করে, কতটা আন্তরিক ছিলেন আকাবিরগন একে অন্যের প্রতি।

“কালা পানিঃ তাওারিখে আজিব” নামে মোহাম্মাদ জা’ফার থানেসারি একটি বই লিখেন, যেটা প্রকাশিত হয় ১৮৭৯ সালে। তিনি দেওবন্দি আকিদার লোক ছিলেন। এই বইতে তিনি তার দীর্ঘ ২০ বছর কারা-জীবনের বর্ণনা দেন, যে দুই দশক তিনি কাটিয়েছিলেন সীমাহীন অত্যাচারে, আন্দামানের “কালা পানি” জেলে। “কালা পানি কারাগার” যেটা পরবর্তীতে “Cellular Jail” নামে নামকরণ হয়, এটা ভারতের “নিকোবার আইল্যান্ডের” আন্দামানে অবস্থিত। তৎকালীন ব্রিটিশরা এই কারাগার কে ব্যাবহার করত স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের উপর অকথ্য নির্যাতন করার জন্য, যেন তারা স্বাধীনতা আন্দোলন কে বেগবান করতে না পারে। ১৯০৬ সালে পরিপূর্ণভাবে সেখানে পাকা দালানের জেল তৈরি হয়। কিন্তু, এর পূর্বেও আন্দামানের ঐ জায়গাটা জেল হিসেবে ব্যাবহার করা হত। তখনকার জেলার ছিল “ডেভিড বেরি” ও “মেজর জেমস ওয়াকার”। ঐ সময় যে সকল কয়েদীদের কে আন্দমানে পাঠানো হতো, তাঁদের উপর পশুর চেয়েও জঘন্য অত্যাচার করা হতো, তাদেরকে দিয়েই তৈরি করানো হয় “Cellular Jail”। এই অত্যাচারের মাত্রা এতটা ভয়াবহ ছিল, যা তখনকার সময়ে “কালা পানি কি সাজা” নামে ব্যাপক পরিচিত ছিল। সে সময় এই নামে মানুষের কলিজা কেঁপে যেত। সে এক বর্বর ইতিহাস।

মূল ঘটনায় আসি। আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদি ছিলেন একাধারে একজন লেখক, দার্শনিক, কবি, ও মুসলিম স্কলার। আর তিনি ছিলেন বেরলভি আকিদার লোক। কিন্তু তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার জিহাদের ফাতওয়া জারির কারনে। এই ফাতওয়া জারির কিছুদিন পরেই তাঁকে কারাগারে বন্দী করা হয়। কারাগারের নির্মম নির্যাতনে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়, যদি তিনি তাঁর ফাতওয়া উঠিয়ে নেন, তাহলে সাথে সাথে তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু, এতো কঠিন মসিবতের সময়েও তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাঁর মজবুত মনোবলে হতাশ হয়ে ব্রিটিশরা অন্য পথে চেষ্টা চালায়। তারা মোহাম্মাদ জা’ফর থানেসারি-র কাছে প্রস্তাব পাঠায়, যদি তিনি আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদি এর ফাতওয়ার বিরোধিতা করেন তাহলে তাঁকে “কালা-পানি কারাগার” থেকে মুক্ত করে দেয়া হবে। তখন জা’ফর থানেসারি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “যদি তোমাদের মনে হয় এই নির্মম অত্যাচার থেকে মুক্তির আশায় আমি আমার ভাইয়ের বিরোধিতা করব, তাহলে তোমরা তোমাদের চাবুকের ধারকে আরো শাণিত কর, তোমাদের চাবুক নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে”। তিনি তাদের উদ্দেশ্য কবিতার দুটি লাইন বলেন-

লাব্-পে বাম ভি পুকারা, সারে দারদ-ভি শাদা-দী
মে কাঁহা কাঁহা পহচা তেরি দীত-কি লাগান মে
দুইজন দুই মাসলাকের হয়েও কতটা শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতা ছিল উনাদের মাঝে। উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের কুরবানি করেছেন, সদা আপোষহীন ছিলেন জালিমের বিরুদ্ধে, এক হয়ে। হায় আফসোস! আমাদের কি এখনো সময় হয়নি ঐক্যের ???

২। আল্লামা শাহ্‌ আহমাদুল্লাহ মাদ্রাসিও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ব্রিটিশরা তাঁর মাথার বিনিময়ে ৫০,০০০ হাজার রুপি পুরষ্কার ঘোষণা করে। তবু তিনি তাঁর আন্দোলন চালিয়ে গেছেন আমরণ। আল্লামা সায়্যিদ কেফায়াত আলি কাফি মুরাদাবাদি (রঃ) ছিলেন সুন্নি ও সাচ্চা “আশিকুন-নাবি” (সঃ)। ব্রিটিশ সরকার “ব্রিটিশ বিরোধী” আন্দোলনের শাস্তি হিসেবে তাঁর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় তিনি হাসিমুখে পড়ছিলেন, যেটা তাঁর “দেওয়ানে- কাফিতে” সংকলন করা হয়েছে-

কোই গুল বাকি রাহেগা না চামান রেহ জায়েগা
পার রাসুলুল্লাহ (সঃ) কা দ্বীন- হাসান রেহ জায়েগা
হাম সাফিরো বাগ মে হে কোই দম কা চায় চাহা
বুলবুলে উড জায়েগি, সুনা চামান রেহ জায়েগা
জো পডেগা সাহেবে আওলাদ পার দরুদ
আগ চে মেহফুয উনকা তান-বাদান রেহ জায়েগা
সাব ফানা হো জায়েজ্ঞে কাফি
লেকিন, হাশর তাক নাতে হযরত কা জবান পার সোফান রেহ জায়েগা

কতটা ঈমান আর ঈশকে- রাসুলের বলে বলিয়ান ছিলেন আমাদের আকাবিরে কেরামগন। কতটা তেজদিপ্ত ছিল তাঁদের ঈমান ও আদর্শ। কবে ফিরে আসবে এই উম্মতের আমানতদার গনের হুঁশ। উম্মতের জেগে উঠার আশায়-
বহত কম নসীব , জো কারার তাক না পহচে
দ্বার- ইয়ার তাক তো পহচে, লেকিন দিল- ইয়ার তাক না পহচে







কুরআনি ভাবনা: ১৩৫
আতিক উল্লাহ

কেউ হানাফী, কেউ শাফেয়ী, কেউ মালেকী!
হানাফী হওয়ার পর, কেউ আত্মপরিচয়কে আরও স্পষ্ট করার জন্যে বলে ‘দেওবন্দী’।
এই মাযহাবী পরিচয়ের বিরোধীতা করে আরো দল বেরিয়েছে।
তাদের কেউ নিজেদেরকে ‘সালাফী’
কেউ আহলে হাদীস
কেউআসারী
বলে পরিচয় দিতে বেশ সুখ অনুভব করে তারাই সত্যিকারের হকের উপর আছে, এমন একটা ভাবনার দ্যুতি, তাদের চোখমুখ দিয়েঠিকরেবেরোতে চায় আত্মপরিতৃপ্তি তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ে মাযহাবী পরিচয়ধারীদের প্রতি, তারা কেমন যেন করুণা আর হেলাভরা দৃষ্টিতে তাকায়,
-আহ বেচারারা! কী সব বেদাতি আকীদায়মুবতালাহয়ে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে মরছে!
.
আমরা বলি কি,
-এসব পরিচয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমরা শুধুমুসলিমহবো!
এটাই কুরআনের কথা
আল্লাহর কথা
নবীজি সা.-এর কথা
সাহাবায়ে কেরামের কথা
.
এবার সবাই একযোগে হাঁক করে তেড়ে এসে বলবে,
-কীহ! আমরা তো মুসলিমই!
-তাহলে এসবনিকনেমকেন? শুধু মুসলিমই বলুন! যাবতীয়দীর্ঘ-ঈকার বাদ দিয়ে ফেলুন না
কুরআনের আলোয় উড়ে যাক, যাবতীয়



হজের সামানা পরিকল্পনা
সাকিব মুস্তানসির

আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য হজের সামানা পরিকল্পনা ।
১- ইহরামের কাপড় ২+১=৩ সেট , আমি একসেট আব্বার পুরাতন কাপড় নিতে চাই। সম্ভব হলে তামিম ভাইয়ের একসেট নিবো। শীত কতটা থাকবে খুঁজ নিতে হবে। শীত থাকলে একটা কাপর ভারী নিতে হবে, বাসায় আছে।
২- বার্মিজ/বাটা স্যান্ডেল ২+সেট।কিনতে হবে
৩- পাঞ্জাবী পাজামা ৩+সেট। আমার কাপড় তৈরি আছে। তুমি একসেট হালকা কালারের পাঞ্জাবী পাজামা বানাবা
৪- লুঙ্গি ২+টি। তোমার লুঙ্গি আছে কেনার দরকার নেই। আমি টা কিনবো
৫- হাতাকাটা গেঞ্জি ২+নতুন কেনার দরকার নাই। আমি একটা কিনবো।
৬- টিশার্ট ২+কেনার দরকার নাই।
৭- হালকা রঙের বড় সুতির গামছা ( প্রয়োজনে গোসল করা যায় এমন ) ১+কিনতে হবে
৮- বিছানার চাদর বালিশের কভার সহ ১+কিনতে হবে। একটা সিঙ্গেল একটা ডাবল যা মিনায় কাজে লাগবে।
৯- ব্রাশ টা , পেস্ট টা মেসওয়াক টা কিনতে হবে
১০- গায়ে দেয়ার সাবান টি। কাপর কাচার সাবান টি।আধাকেজি হুইল পাউডার।ফেসওায়শ টি।
১১- মোবাইল মোবাইলের চার্জার
১২- বাতাস দিয়ে ফুলানো যায় এমন বালিশ টা
১৩- মেলামাইনের প্লেট মগ/গ্লাস টা কেনার প্রয়োজন নেই। প্রচুর পানির বোতল পাওয়া যায়। মগ নেয়ার দরকার নেই।
১৪- প্লাস্টিকের দস্তরখানা টা কিনতে হবে
১৫- কালোজিরা ভেঁজে ব্লেন্ড করা আধাকেজি , শুকনামরিচ ২৫০ গ্রাম ভাঁজা প্রয়োজনে খাওয়ার জন্য
১৬- সরিষার তেল আধাকেজি
১৭- ভেজলিন ১০০ গ্রাম না নিলেও চলবে, খালাম্মাদের কাছেই থাকার কথা লোসন টি
১৮- চিড়া এক কেজি, গুঁড় / চিনি আধাকেজি অথবা টোস্ট বিস্কিট কেজি প্রয়োজনে খাওয়ার জন্য
১৯- রেজার ১টি, ব্লেড প্যাকেট, কটনবার্ড প্যাকেট, নেইলকাটার টি , ছোট কাঁচি টি, চিরুনি টি , সেফটি পিন প্যাকেট, বড় পলিথিন ব্যাগ টি ( আমি নিয়ে আসবো ), পাতলা পলিথিন ব্যাগ ৮/১০ টি ( বমন করলে ব্যবহার করা যায় এমন ) ব্যাগ বাধার রশি সুই সুতা ( খালাম্মারা নিবেন , আমাদের না নিলেও চলবে)
২০-জুতা রাখার ব্যাগ টি, কোমরের বেল্ট টি ( আমার বেল্ট আছে ) , বুকের মাঝারি ব্যাগ ২টি , বড় ঝুলা টি ( পিঠে বহন করা যায় এমন একটা বড় ব্যাগ নেয়া যায় ) বাসায় কি কি আছে খুঁজে দেখতে হবে। না থাকলে কিনতে হবে।
২১- পাতলা জায়নামাজ টি বাসায় থাকার কথা জায়নামাজ মক্কায় গিয়েও কেনা যাবে।
২২- টুপি ২+টি কেনার দরকার নাই।
২৩- লাগেজ টি একটি লাগেজ নিলে চলবে কিনা আলোচনা করে নিতে হবে। দুজনের জন্য লাগেজ চললে আমরা একটাই নিয়ে যাবো। লাগেজ বাসায় আছে।
২৪- পাসপোর্ট, NID অন্যান্য কাজগপত্রের ফটোকপি নিতে হবে।
২৫- টিস্যু প্যাকেট
২৬- কাগজ-কলম-পেন্সিল
২৭- পার্মানেন্ট মার্কার টি লাল/কালো
২৮- মাস্কিন টেপ বড় টি আমি নিয়ে আসবো
২৯- খাবার স্যালাইন বক্স প্রয়োজনিও ঠাণ্ডার ওষুধ ( তোমার জন্য অবশ্যই লাগবে) গ্লুকোজ এক প্যাকেট।
৩০- প্রয়োজনীয় ওষুধ (প্যারাসিটামল, ফ্লাজিল/ফিলমেট, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক, এলার্জি চুলকানির ওষুধ ইত্যাদি ) ড. সাজাহান ভাইকে বলতে হবে
৩১- ছোট কোরআন শরীফ ( মোবাইলে এপস নামিয়ে নিলেই হবে )
৩২- তায়াম্মুমের মাটি টুকরো।
৩৩- হজের বই টি
৩৪- রোদ চশমা













মোবাইল
নাইলাহ আমাতুল্লাহ

মোবাইল যে মানুষের জীবনের কতগুলো মূল্যবান সময় নিয়ে নেয় তা আমরা বুঝার ক্ষমতাও দিন দিন হারিয়ে ফেলছি।
একটক সময় ছিলো যখন সারাদিনের পরিশ্রম শেষে মানুষের রিল্যাক্স করার মাধ্যম ছিলো পরিবার। বাবা মা, ভাই বোন, স্বামী স্ত্রী বা সন্তানের সাথে সময় কাটিয়েই মানুষ সারাদিনের কষ্ট ভুলে যেত। পরিবারের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পেত।
এখন মানুষ সারাদিনের পরিশ্রমের পর মোবাইল নিয়ে শুয়ে বসে রিল্যাক্স করে।ফেসবুকিং, ইউটিউব বা গেম এখন মানুষের মনে শান্তি দেয়!!
বাবা মা হয়তো সংসারের জরুরী ব্যাপার আলাপ করবে ছেলে অফিস থেকে আসলে।কিন্তু দেখা গেল ছেলে কানে হেডফোন দিয়ে বসে আছে।সম্পূর্ণ কথা বলার পর দেখা গেল ছেলে আসলে কিছুই শুনেনাই!!
বাচ্চাটা সারাদিন বেল বাজলেই দরজার কাছে ছুটে গেছে বাবা এসেছে বাবা এসেছে বলে।কিন্তু বাবা এসে ৫ মিনিট একটু আদর করেই মোবাইল নিয়ে বসে যায়। বাচ্চাটা হয়তো খেলার জন্য বা কিছু দেখানোর জন্য ডাকে।কিন্তু বাবার মোবাইল থেকে চোখ সরানোর সময়ও হয়না।হ্যা হু করে মোবাইলে ডুবে যায়।
বউ সারাদিন অপেক্ষা করেছে কখন তার স্বামী বাসায় আসবে। একসাথে খেতে বসলেও দেখা যাবে এক হাতে মোবাইল, চোখ মোবাইলের দিকে আর আরেক হাতে কোন রকমে ভাত খাওয়া হচ্ছে।ঘুমাতে শুয়েও দেখা যায় মোবাইল হাতে নিয়েই কখন জানি ঘুম। কত কথা থাকতে পারে, কত গল্প জমা থাকতে পারে।কিন্তু সেই সময়টা মোবাইল দখল করে নেয়।
পারিবারিক মূল্য বলতে এখন আর কিছু নাই।বাইরে খেতে যাওয়া বা বউ নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ছবি আপলোড করার মাধ্যমেই এখন পারিবারিক মূল্য সীমিত।
মোবাইল থাকবে, যুগে যুগে আরও উন্নত হবে, ইন্টারনেট থাকবে। কিন্তু জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান সময়গুলো আর আসবেনা।
যে বাচ্চার সাথে খেলার সময় আপনার হয়না সে বাচ্চা বড় হলে আপনার কথা শোনার জন্যেও সময় পাবেনা।আর এই শিক্ষা তো আপনার থেকেই সে পেয়েছে।
বাবা মা চিরদিন বাঁচবেনা।যার কথা শোনার, খোঁজ নেওয়ার সময় আজ হয়না, একদিন যখন তারা থাকবেনা তখন বুঝবেন এতীম হওয়ার কষ্ট কি।চাইলেও তখন তাদের কথা শুনতে পারবেন না।
আর মেয়েদের আল্লাহ মানিয়ে নেওয়ার চমৎকার ক্ষমতা দিয়েছেন।একদিন আপনি অবাক হয়ে দেখবেন আপনার কষ্ট শেয়ার করার বা কথা শোনার সময় আর আপনার স্ত্রীর নাই। যে সময়টা আগে সে আপনার জনন্য অপেক্ষা করতো সেই সময়ে এখন সে অন্য কাজে ব্যস্ত। এখন সেও রাতে অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে যায় বা নিজেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
আপনি নিজের বুঝবেন না সবার মাঝে থেকেও আপনি কেন সবার সাথে এক হতে পারছেন না। একই পরিবারের সদস্য হয়েও কেন আপনি অনেক কিছুই জানেন না।কেন আপনার সাথে আর কেও ডিসিশন নেওয়ার ব্যাপারে আলাপ করার প্রয়োজন বোধ করেনা।আপনি কিছুই বুঝবেন না।
আপনি তো থেকেও ছিলেন না। সবাই আপনাকে ছাড়া থাকাই শিখে গেছে।
দুনিয়ার হাজার উন্নত টেকনোলজি, মজার মজার পোস্ট, কমেন্ট, মুভি, গেম বা আপনার দিন রাত পরিবারকে সময় না দিয়ে অর্জন করা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন সম্পদ কিছুই আপনার কাজে আসবেনা
দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। আপনি বাবা মায়ের প্রতি এহসান করেছেন কতটুকু, স্ত্রীর কাছে আপনি কতটা উত্তম, বাচ্চাদের আপনি কি শিক্ষা দিয়ে সাদকায়ে জারিয়ে হিসেবে কি রেখে যাচ্ছেন এসব যখন হিসাব করতে বসবেন, ভরণপোষণ দেওয়া ছাড়া আরর কি অর্জন খুঁজে পাবেন??
আখিরাতের জন্য কি জমা করছেন একবার কি ভেবে দেখেছেন?













বিয়ের ব্যাপারে পিতামাতার অবহেলা ও সন্তানের মুজাহাদা
আবু যুওয়াইনাহ

আমাদের সমাজে এই প্রজন্মের সাথে আগের প্রজন্মের একটা বিরাট গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আমাদের বাবা-মায়ের বিয়ে কম বয়সে হলেও তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে তারা খুব বেশি মাত্রায় উদাসীন। তারা অনেকেই সন্তানের পড়ালেখা ও চাকরি-বাকরি নিয়ে আগে ভাবেন। ভাবেন না আশপাশের যৌনতাপূর্ণ সমাজের প্রতিটা বিন্দু কীভাবে তার সন্তানকে এখানে ইমান নিয়ে টিকে থাকাই কঠিন করে দিচ্ছে। এখন আপনার বাবা-মা আপনার বিয়ে ভাবনা এগোতে না চাইলে কী করণীয়? কিছু ব্যাপার ভাবা যাক-
প্রথমত, বাবা মার সাথে রাগ করা যাবে না তারা যতই না বুঝুক। ধীরে ধীরে বুঝিয়ে যেতে হবে। আপনি কালই বিয়ে করে ফেলতে পারবেন তারও গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয় জানেন।
দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি সমস্যাপূর্ণ। বাস্তব। বাস্তব যে গুনাহ করার ট্রিগার অনেক বেশি। আর আরও বাস্তব যে এ সময়ে সাত বছরের বালক থেকে শুরু করে আশি বছরের বৃদ্ধ অনেকেই যৌনতাপূর্ণ এ সমাজের কড়াল থাবার ফিতনার মধ্যে। কথা হলো আমরা হুট করেই যিনাপূর্ণ এ সমাজ চেঞ্জ করতে পারবো না। না পারবো সবার মানসিকতা রাতারাতি চেঞ্জ করতে। আল্লাহ সহায় হলে সবই অবশ্য সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে শত্রুরা অনেক দিকের। অনেক ধরণের। তারা স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্য দিয়ে অবাস্তব এক ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে আগেভাগে বিয়ে করলে স্টাডি আর ক্যারিয়ার বরবাদ। অথচ কত মানুষ দেখেছি যারা বলে যে বিয়ে করার ফলেই তার পড়ায় মনোযোগ বেড়েছে। আর সহজলভ্য করেছে প্রেম, যিনা, ব্যভিচার, ধর্ষণ।
এখন করবেন কী?
নারীর প্রতি দুর্বলতার একেবারে বেসিক কারণ হচ্ছে চোখকে লাঘামহীন করে দেওয়া। নারী-পুরুষের অত্যন্ত "ইজি" হওয়া, অবাধে "জাস্ট-ফ্রেন্ড" বা "কাছের মানুষ" হওয়া আর মেলামেশা ও চোখকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা গুনাহর দরজা উন্মুক্ত করে দেয়। আর নারীর প্রতি আকর্ষণ চোখের দৃষ্টি থেকেই সৃষ্ট।
.
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিঃ বলেন,
"চোখ অন্তরের আয়না স্বরূপ, চোখ বন্ধ করলে অন্তরও তার প্রবৃত্তির ওপর পর্দা টেনে দেয়। আর চোখ উন্মুক্ত রাখলে অন্তরও তার প্রবৃত্তি উন্মুক্ত করে রাখে।"
.
তিনি আরো বলেন, "অন্তরের মধ্যে কু-দৃষ্টির প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার পর, ব্যক্তি যদি দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করে এবং সাথে সাথে তার মূল উপড়ে ফেলে, তবে এর প্রতিকার করা খুব সহজ। এর বিপরীতে যদি সে বারবার তাকাতে থাকে, তার ছবি অন্তরে বারবার স্মরণ করতে থাকে, তবে তার ভালবাসা অন্তরে প্রোথিত হয়ে যাবে। কারণ, বারবার দৃষ্টি দেয়ার অর্থ হচ্ছে কু-প্রবৃত্তির গাছটি পানি দ্বারা সিঞ্চন করা। আর এভাবেই প্রবৃত্তির গাছটি ক্রমশ বড় হয়ে একদিন তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, ভুলিয়ে দিবে তাকে নিজ দায়িত্ব। অধিকন্তু সে এর কারণে বিভিন্ন পরীক্ষা ও কষ্টের সম্মুখিন হবে, নানা অপকর্মে লিপ্ত হবে।"
(রওজাতুল মুহিব্বীন : পৃ : ৯২-৯৫)
প্রাইমারিলি এ কাজগুলো করেন:
১. চোখের হেফাজত
২. রোযা (নবয়ী সমাধান নিজেকে নিয়ন্ত্রণের)
এরপর-
১. মূলত আপনার বাবা-মাকে বোঝাতে হবে। ধীরে হলেও। উপায়-
ক. আপনার এমন কোন আত্মীয় বা অন্য কেউ আছে কিনা দেখুন যার কথার উপর আপনার বাবা-মায়ের আস্থা রয়েছে। যার কথাকে উনারা বোঝেন। খুঁজে বের করেন।
খ. না পেলে নিজেই এমন কোনো লেকচার বা ওয়াজ খুঁজে বের করুন যেখানে বর্তমানের যুবক-যুবতীদের ফিতনার আলোচনা আছে আর তার সাপেক্ষে সমাধান দেওয়া আছে। আপনি এমন বয়ান পেলে আপনার বাবার ফোনে তা কপি করে তা হাইলাইট করে শুনতে দিয়ে চলে যেতে পারেন। কিংবা একইসাথে শুনতে পারেন।
গ. বাবা-মায়ের বই পড়ার অভ্যাস থাকলে ইসলামিক প্যারেন্টিং কিংবা "ভালোবাসার চাদর" জাতীয় বই উপহার দিতে পারেন।
ঘ. একেবারে না পেলে আপনি এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করেন, রিসোর্সফুল হোন। আর বাবা-মাকে নিজেই বোঝান।
২. এতকিছুতেও সমাধান না পেলে আর যদি ইমান হারানোর উপক্রম হয় তবে আপনি পারলে একাই বিয়ে করতে পারেন। ছেলেদের বিয়েতে ওয়ালির অনুমতি লাগে না। তবে মেয়েদের ব্যাপারটা আলাদা। এখানে ওয়ালির প্রয়োজন।
--
তবে এও সাজেশন দিবো যে মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। আল্লাহ সহায়ক হোন আপনার বিয়ে দ্রুত হওয়ার ব্যাপারে। তবে যদি তা নাও হয়, মনে রাখবেন গুনাহমুক্ত তবুও থাকা যায় তা যতই কঠিন হোক।
কথা হলো, এ পার্থিব জগতে পুরুষের জন্য সব চেয়ে ক্ষতিকর বস্তু ও পরীক্ষার জিনিস হচ্ছে নারী।
রাসূল সা. বলেন, "আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীরাই হবে পরীক্ষার বস্তু।" (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
"আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দূর্বল করে।" (নিসা : ২৮)
এর ব্যাখ্যায় ইমাম তাউস রহ. বলেন, "নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে পুরুষরা দূর্বল তথা ধৈর্য হারা হয়ে যায়।"
সালাফদের অনেকেই বিয়ে না করেই জীবন পার করেছেন। "ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার উলামায়ে কেরাম" বইটাতে পাবেন। এমনকি শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহও বিয়ে করেননি।
অর্থাৎ বিয়ে না করেও গুনাহমুক্ত থাকাও সম্ভব। যেহেতু এটা আমাদের জন্য রিস্কি, কিন্তু আপাত সমাধান হিসেবে রোযা রাখা আর চোখের হিফাজত। আর বাকীগুলো এরই সাথে কনটিনিউ করতে হবে।
আল্লাহ সহজ করুক। আমীন।
টপিকঃ ম্যারেজ টিপস
আদনান ফয়সাল

আমি ম্যারেজ বা রিলেশনশীপ এক্সপার্ট নই, একজন অনুবাদক মাত্র। এই লেখাটি লিখেছি বলে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আমি বুঝি খুব আদর্শ স্বামী। তবে হ্যাঁ, আপনাদের সবার মতো আমিও একজন আদর্শ স্পাউস হবার স্বপ্ন দেখি।
“আর তাঁর আশ্চর্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের মধ্যে শান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে দিয়েছেন প্রেম আর মায়া। যারা চিন্তা করে তাদের জন্য নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে। (সূরা রুম:২১)
***
একটা সুন্দর সংসারের জন্য স্বামী-স্ত্রীর কী করা উচিত আর কী না করা উচিত এগুলো নিয়ে আমরা তো কত লেখাই পড়ি। কত মানুষের কত উপদেশই শুনি। তার কতটা সত্য কতটা মিথ্যা কে জানে?
কিন্তু, একটি সুখী বিবাহিত জীবন পাওয়ার জন্য কী করতে হবে – সেই শর্তগুলি যদি সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে আসলে তাহলে কেমন হয়? যিনি স্রষ্টা তাঁর চাইতে বেশী কে জানবে তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে? ভেবে দেখুন, যেখানে মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সরাসরি বলে দিচ্ছেন – এই যে মানুষ! শোনো! তুমি যদি সুখী সংসার চাও তোমাকে এই এই কাজগুলো করতে হবে – তাহলে আমাদের কি আর অন্য কোনো দিকে তাকানো ঠিক হবে?
একটা আনন্দময় সংসারের জন্য স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কী হবে – এই লেখায় তা আমরা কুরআন মাজিদের সূরা নিসা-র ৩৪তম আয়াতের প্রথম অংশের আলোকে আলোচনা করব। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে প্রথমে ছেলেদের কী করণীয় তা বলেছেন, এরপর মেয়েদের কী করণীয় তা নিয়ে বলেছেন। আমি আয়াতটির বাংলা অনুবাদে ইচ্ছে করে গুরুত্বপূর্ন শব্দগুলোকে আরবীতে রাখব। তারপর সেই আরবী শব্দগুলোর অর্থ ধরে ধরে স্বামী/স্ত্রীর পারষ্পরিক করণীয় কাজগুলির তালিকা বের করব। আসুন তাহলে শুরু করা যাক।
মহান আল্লাহ বলেন:
“ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে “ক্বাওয়াম” হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন, এবং কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে।
কাজেই, “সালিহা” মেয়েরা হবে “কানিতা” ও “হাফিযা” – হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেফাযত করতে বলেছেন। … (সূরা নিসা: ৩৪)
আয়াতাংশটা যে জটিল তাতে সন্দেহ নেই। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এখানে আসলে দুইটা বাক্য আছে (উল্লেখ্য, বাক্য আর আয়াত এক জিনিস নয়। অনেক বাক্য মিলে এক আয়াত হতে পারে, আবার একাধিক আয়াত মিলেও একটা বাক্য হতে পারে)।
প্রথম বাক্যে আল্লাহ্‌ ছেলেদের করণীয়গুলি নিয়ে বলেছেন, আর দ্বিতীয় বাক্যে বলেছেন মেয়েদের করণীয়গুলি নিয়ে।
ছেলেদের করণীয় কাজগুলি দিয়ে শুরু করা যাক।
ছেলেদের করণীয়:
ছেলেদের করণীয় বুঝতে হলে আমাদেরকে “কাওয়াম” শব্দের অর্থ বুঝতে হবে। আরবী ভাষায় একটা ক্রিয়া (verb)-কে বোঝা যায় তার বিপরীত ক্রিয়ার সাথে তুলনা করে। কাওয়াম বা উঠে দাঁড়ানো হলো বসে থাকার উল্টো। কাওয়াম বলতে বোঝায় সক্রিয়তা, যা নিষ্ক্রিয়তার উল্টো।
ছেলেদের করণীয় ১# সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে উদ্যোগী (active) হবে
আল্লাহ্‌ যখন বলছেন ছেলেদের “কাওয়াম” হতে হবে, তখন তিনি বলছেন সম্পর্ক রক্ষায় ছেলেদের অ্যাক্টিভ হতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে, শুরু করতে হবে। একটা ছেলে যখন তার স্ত্রীকে দেখবে সে রান্নাঘরের কাজ নিয়ে, বাচ্চা নিয়ে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে – তখন নিজের উদ্যোগে এগিয়ে যেয়ে সাহায্য করতে হবে। ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যেতে মন চায় – সেটা ছেলেকেই আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী কী করছে তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেকেই আগে শুভেচ্ছা জানাতে হবে।
ভুল বুঝাবুঝি বা ঝগড়া হলে ছেলেটির যতই ইচ্ছে করুক ঘাপটি মেরে বসে থাকতে, যতই মনে আসুক ‘ও ভুল করেছে ওকে ক্ষমা চাইতে হবে’, নিজের মনের এসব ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে উদ্যোগী হতে হবে, ঝগড়াঝাটির জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এগিয়ে যেয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, মন থেকে ক্ষমা করে দিতে হবে। মেয়েরা সৃষ্টিগতভাবে লাজুক প্রকৃতির, তাই এমনকি অন্তরঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেটিকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
ছেলেদের করণীয় ২# সম্পর্ক নবায়নে ক্রমাগত চেষ্টা চালাবে/ Showing continuous commitment
কাওয়াম শব্দের আরেক অর্থ হলো – কোনো কিছু দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা, কিছুতেই ছেড়ে না দেয়া। আরবী ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য হলো একটি শব্দের মধ্যে যদি কোনো অক্ষর পরপর দুইবার আসে তাহলে তা পুনরাবৃত্তি ও আধিক্য বুঝায়। যেহেতু কাওয়াম শব্দের মাঝখানে ‘ওয়াও’ অক্ষরটি দুইবার আছে, তাই এখানে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে বলা হচ্ছে – ছেলেদের বারবার চিন্তা করে দেখতে হবে, প্ল্যান করতে হবে, কী করলে আমাদের সম্পর্কটা দিনে দিনে আরো চুম্বকীয় হবে।
‘আরে ও তো আমারই, ও কি আর আমাকে ছেড়ে যাবে’ – এই জাতীয় চিন্তা বাদ দিতে হবে। কাজের মধ্যে থাকুন, অফিসে থাকুন আর যেখানেই থাকুন, মাঝেমধ্যে ফোন করে খবর নিতে হবে। শত ব্যস্ততার ভিড়েও প্রায়োরিটি দিয়ে স্ত্রীর জন্য সময় বের করতে হবে। স্ত্রী সুন্দর করে সাজলে তার প্রশংসা করতে হবে।
কারণ ছাড়াই মাঝেমধ্যে স্ত্রীকে স্পর্শ করতে হবে, জড়িয়ে ধরতে হবে। আয়েশা(রা)-এর হাদিস থেকে আমরা জানি যে, রাসূলুল্লাহ(সা) বাসা থেকে বের হওয়ার সময় প্রায়ই তাঁকে চুমু দিয়ে বের হতেন।
ছেলেদের করণীয় ৩# ছেলেরা মেয়েদের শারিরীক ও মানসিকভাবে
প্রতিরক্ষা (to protect her) করবে
কাওয়াম শব্দের তৃতীয় অর্থ হলো – physically কোনো কিছুর সাথে থাকা ও তাকে protect করা। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বলছেন ছেলেরা মেয়েদের কাছাকাছি থেকে তাদেরকে নিরাপত্তা দিবে, কখনো একাকিত্ব বোধ করতে দিবে না। এই প্রোটেকশন কিন্তু শুধু শারিরীক নয়, মানসিকও। মেয়েরা ছেলেদের চাইতে বেশী আবেগপ্রবণ হওয়ায় লোকে কী বললো তা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করে, কেউ বাজেভাবে কথা বললে অনেক বেশী ভেঙ্গে পড়ে।
কোনো মেয়ে যখন তার মানসিক অশান্তি নিয়ে কথা বলবে – একজন ছেলে সেটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না, কটাক্ষ করবে না, উপদেশ না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুধু শুনবে। ছেলেরা মেয়েদের প্রোটেকশন দিবে – শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে।
ছেলেদের করণীয় ৪# ছেলেরা মেয়েদের প্রয়োজন (to fulfill her needs) পূরণ করবে
কাওয়াম শব্দের চতুর্থ অর্থ হলো – যত্ন নেয়া, পরিচর্যা করা, Take-care করা, চাহিদা পূরণ করা। মহান আল্লাহর একটা নাম হলো – আল-কাইয়ূম যা একই শব্দমূল “কা-মা” থেকে এসেছে। কাইয়ূম শব্দের অর্থ হলো – যে শুধু সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেয়নি, সবসময় তার যত্ন নিচ্ছে, দেখ-ভাল করছে। আল্লাহ্‌ এই আয়াতে কাওয়াম শব্দের মাধ্যমে আমাদের বলছেন – ছেলেরা মেয়েদের যত্ন নিবে, দেখভাল করবে, তাদের কী প্রয়োজন তা জিজ্ঞেস করবে, জানতে চাইবে।
ছেলেদের করণীয় ৫# ছেলেরা মেয়েদের সাথে ন্যায্য (fair) আচরণ করবে
কাওয়াম শব্দের পঞ্চম অর্থ হলো – কাউকে বা কোনো কিছুকে তার ন্যায্য পাওনা দেয়া। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি – “আল্লাহ্‌ নামাজ কায়েম করতে বলেছেন”। আমরা কিন্তু বলি না আল্লাহ্‌ নামাজ পড়তে বলেছেন। কারণ “কায়েম” শব্দটা আরো উঁচু স্তরের শব্দ – যার অর্থ যতটুকু মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে নামাজ পড়া দরকার ঠিক সেভাবে নামাজ পড়া। অন্যভাবে বলতে গেলে – আমাদের উপর নামাজের যে দাবী তা ন্যায্যভাবে আদায় করা।
একইভাবে –ছেলেদেরকে মেয়েদের ব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে তার ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। আল্লাহ্‌ একজন ছেলেকে তার পরিবারের মেয়েদের উপর জিম্মাদার করে পাঠিয়েছেন। তাই একজন ছেলে নিজেকে সবসময় জিজ্ঞেস করবে – আমি কি ওর সাথে ন্যায্য আচরণ করছি? আমার শক্তি বেশী, গলার জোর বেশী, মনের দৃঢ়তা বেশী – এগুলো ব্যবহার করে আমি ওর উপর কোন জুলুম করছি না তো?
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন – তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর/পরিবারের প্রতি শ্রেষ্ঠ (মুসলিম)।
ছেলেদের করণীয় ৬# ছেলেরা মেয়েদের খরচ চালাবে
“ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে “ক্বাওয়াম” হবে; কারণ, আল্লাহ্‌ তাদের কাউকে কারো উপর সুবিধা দিয়েছেন, এবং কারণ তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করবে”। (সূরা নিসা ৪:৩৪ আয়াতাংশ)
নারীর জন্য খরচ করার ব্যাপারে কিপটামি করা যাবে না। ইসলামে এমনকি ডিভোর্স দেয়ার সময়েও গিফট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই, স্ত্রী থাকাকালীন সময়ে যে গিফট দিতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – কেউ তার পরিবারের জন্য যা ব্যয় করে তা সাদাকাহ বলে গণ্য হয়।
উপরের কথাগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারছি আল্লাহ্‌ ছেলেদেরকে মেয়েদের ব্যাপারে অনেক দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। আর লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো – আল্লাহ্‌ কিন্তু বলেননি “স্বামীরা স্ত্রীর ব্যাপারে কাওয়াম হবে”, বরং বলেছেন “ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে কাওয়াম হবে”। অর্থাৎ, একজন ছেলেকে শুধু তার স্ত্রীর সাথেই নয়, শরীয়ত তাকে যেসব নারীদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের সবার সাথেই তাকে কাওয়াম হতে হবে। একজন ছেলেকে তার মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুপু সহ সবার ব্যাপারে কাওয়াম হতে হবে।
তাদের সবার সাথে সম্পর্ক রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে, যোগাযোগ রাখতে হবে, মানসিক-শারিরীক প্রতিরক্ষা দিতে হবে, কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে হবে, তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
দায়িত্বের এই লিস্ট পাওয়ার পর কোনো ছেলে চার বিয়ে করা তো দূরে থাক, প্রথম বিয়ে করার আগেই একশ’ বার চিন্তা করবে – ওরে বাবা! এত দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো তো? কেন যে পুরুষ হয়ে জন্মেছিলাম!
অধৈর্য হবেন না। এবার আসতে যাচ্ছে মেয়েদের দায়িত্বের তালিকা …
মেয়েদের করণীয়:
সূরা নিসার ৩৪তম আয়াতে ছেলেদের করণীয় কাজগুলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ্‌ মেয়েদের সম্পর্কে বলছেন –
কাজেই, “সালিহা” মেয়েরা হবে “কানিতা” ও “হাফিযা” – হেফাযত করবে যা দেখা যায় না এবং যা আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেফাযত করতে বলেছেন।
আল্লাহ্‌ বাক্যটি শুরু করলেন ‘ফা’ বা ‘কাজেই/সুতরাং’ দিয়ে। অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ বললেন যেহেতু ছেলেদেরকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, মেয়েদেরকেও স্বাভাবিকভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এরপর লক্ষ্য করুন বাক্যটির ব্যতক্রমী গঠন।
আল্লাহ্‌ কিন্তু বলেননি – “মেয়েরা হবে সালিহা, কানিতা, হাফিযা …”। বরং তিনি বলেছেন – “সালিহা মেয়েরা হবে কানিতা ও হাফিযা – …”। তার মানে আল্লাহ্‌ বলছেন না যে সব মেয়েরা কানিতা, হাফিযা হতে পারবে। বরং, মেয়েদের প্রবণতা হলো কানিতা ও হাফিযা না হওয়া। শুধু সেসব মেয়েই এই গুণ অর্জন করতে পারবে যারা সালিহা। অর্থাৎ, অন্য সব গুণ অর্জনের পূর্বশর্ত হলো “সালিহা” হওয়া। আসুন তাহলে “সালিহা” শব্দের অর্থ সম্পর্কে জানা যাক।
“সালিহা” এসেছে “সালাহা” থেকে যার অর্থ একটি অর্থ হলো “ভালো”। কোন কিছু নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সেটাকে ঠিক করে ফেলাকে আরবীতে বলে “সালাহা”।
স্কলারেরা বলেন, এখানে আল্লাহ্‌ মেয়েদের ব্যাপারে “সালাহা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন কারণ মেয়েদের মধ্যে আল্লাহ্‌ এমন বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়েছেন যে তারা চাইলে যে কোনো কিছুরই খুঁত ধরতে পারে। একজন মেয়ের স্বামী যতই তার সাথে ভালো করুক না কেন, সে চাইলেই তার দোষ ধরতে পারবে – এই গুণ তার আছে। কিন্তু, আল্লাহ্‌ সবচেয়ে প্রথমে এই কাজটিই করতে নিষেধ করছেন।
মেয়েদের করণীয় ১# স্বামীর দোষ উপেক্ষা করবে
আল্লাহ্‌ বলছেন একজন স্ত্রীর সবচাইতে বড় গুণ হলো স্বামীর দোষ এড়িয়ে যাওয়া, দেখেও না দেখার ভান করা, ভুলে যাওয়া। প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে তার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করা। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে – কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনো দোষ দেখে বিরক্ত বোধ করে, তখন সে তার এমন গুণের কথা স্মরণ করুক যার জন্য সে তাকে ভালবাসে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন – কোনো মেয়ে যখন তার স্বামীর দোষ ধরে তখন স্বামীটি এটাকে তার Manliness এ আঘাত বলে মনে করে। ফলে, আরো বেশী চটে উঠে। স্বামীর কোনো দোষ চোখে পড়লে যথাসম্ভব চেষ্টা করুন তা না দেখার ভান করতে, আর একদমই সহ্য না করতে পারলে তাকে কটাক্ষ না করে বুঝিয়ে বলুন, অনুরোধ করুন। এ বিষয়ে She Knows Blog[৪] এর এই লেখাটি পড়তে পারেন।
মেয়েদের করণীয় ২# সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করবে
মানুষের দোষ উপেক্ষা করা সহজ না, খুব কঠিন একটা কাজ, আর স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য করা তো আরো কঠিন। আর তাই মহান আল্লাহ্‌ মনে করিয়ে দিলেন – না, না। তুমি দোষ উপেক্ষা করে ভালো আচরণ করবে, কারণ তুমি “কানিতা”। “কানিতা” শব্দের অর্থ হচ্ছে “যে খুশী মনে নিজের ইচ্ছার পরিবর্তে অন্যের ইচ্ছাকে মেনে নেয়”। কিন্তু, “কুনুত” শব্দটি ইসলামে ব্যবহৃত হয় নিজের ইচ্ছার উপর আল্লাহর ইচ্ছাকে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে।
অর্থাৎ – এখানে আল্লাহ্‌ বলছেন – মেয়েরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্বামীর সাথে ভালো আচরণ করবে, তার কথা শুনবে। স্বামীর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ – তা দেখে বুঝা যায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কতটা ভালো না মন্দ। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – আমি যদি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীদেরকে হুকুম করতাম স্বামীকে সিজদা করার জন্য (ইবনে মাজাহ)।
মেয়েদের করণীয় ৩# স্বামীর অবর্তমানে তার দোষের কথা বলবে না
এরপর আল্লাহ্‌ মেয়েদেরকে বলেছেন “হাফিযা” বা প্রতিনিয়ত রক্ষা করতে – আল্লাহ্‌ তাদের রক্ষা করতে বলেছেন “যা দেখা যায় না”। এর প্রথম অর্থ হলো – স্বামীর অবর্তমানে মেয়েরা তার সম্মান রক্ষা করবে, তার দোষের কথা মানুষকে বলবে না, তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করবে না। স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে একে অপরের অংশ। একজন স্বামী/স্ত্রী যখন সঙ্গীর অবর্তমানে তার দোষের কথা বলে, তখন সে তার নিজের একটা অংশেরই অপমান করে।
মেয়েদের করণীয় ৪# বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না
“হাফিযা” হওয়ার দ্বিতীর অর্থ হলো – স্বামী যখন তাদের দেখছে না তখনও মেয়েরা তার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। অন্য পুরুষেরা হয়তো মেয়েটার সাথে বেশী বেশী কথা বলতে চাইবে, কাছে আসতে চাইবে, চান্স নিতে চাইবে। কিন্তু, মেয়েরা স্বামীর অবর্তমানে এমন কিছু করবে না, যা তার স্বামী সামনে থাকলে সে করতো না। স্বামী যেখানে যেতে নিষেধ করবে সেখানে যাবে না, যার সাথে কথা বলতে নিষেধ করতে তার সাথে কথা বলবে না, যে কাপড় পরতে মানা করেছে তা পরবে না। “হাফিয” হচ্ছে আল্লাহর একটি নাম। এর থেকেই বুঝা যায় মেয়েদের প্রতি অর্পিত এই দায়িত্ব কতটা পবিত্র।
মেয়েদের করণীয় ৫# স্বামীর আকাঙ্ক্ষা পূরনে নিজেকে প্রস্তুত (beautify herself) করবে
“হাফিযা” হওয়ার তৃতীয় অর্থ হলো মেয়েরা তার স্বামীর আকাংক্ষাকে রক্ষা (to protect his desire) করবে। স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী কোথায় যাচ্ছে সে কিন্তু জানে না। স্ত্রীর দায়িত্ব হলো – যাদেরকে সে দেখতে পাচ্ছে না তাদের থেকেও স্বামীকে রক্ষা করা।
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন – শয়তান পরনারীকে ছেলেদের চোখে সুন্দর করে দেখায়। কাজেই, একজন মেয়ের দায়িত্ব হলো তার স্বামী যাতে শয়তানের সাথে লড়াইয়ে বিজয়ী হয় তাতে সাহায্য করা। স্বামী যখনই তার স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইবে – অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী তাকে না করবে না, কারণ এতে একজন স্বামী খুব কষ্ট পায়, তার মন ভেঙ্গে যায়। আর এই সুযোগে শয়তান এসে মনের মধ্যে ফিসফিস করতে থাকে – আমি বলেছিলাম না, সে তোমাকে ভালোবাসে না!
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন – ছেলেরা সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ বোধ করে চোখের দেখায় [৬]। স্বামী ঘরের ফেরার আগে মাত্র পাঁচ মিনিট ব্যয় করেই কিন্তু একটা মেয়ে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করতে পারে। মেয়েদের সহজাত প্রবণতা হলো – স্বামী ছাড়া পৃথিবীর সবার জন্য সে সাজবে। অথচ, একটা মেয়েকে সুন্দর দেখার সবচেয়ে বেশী অধিকার হলো তার স্বামীর। এখানে বলা হচ্ছে না যে, সব মেয়েদের সুপার মডেল হয়ে যেতে হবে। স্বামীরা জানে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে একটা মেয়েকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। এখানে খুব সাধারণ সাজগোজের কথা বলা হচ্ছে যা পাঁচ-দশ মিনিটেই করা যায়।
সাহাবাদের স্ত্রীরা স্বামীর ঘরের ফেরার সংবাদ পেলে নিজেকে সুন্দর করে প্রস্তুত করে রাখতেন। স্বামীর সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করাও একটা ইবাদত। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ(সা) এমনকি মদীনায় দূত পর্যন্ত পাঠাতেন – অনেক সময় নির্দেশ দিতেন যাতে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের স্বাগত জানানোর জন্য সেজেগুজে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
এতে সবচেয়ে বেশী লাভ কার? সবচেয়ে বেশী লাভ মেয়েদেরই। কারণ, যখন স্বামী বুঝতে পারবে তার স্ত্রী তাকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে, তখন সে তার প্রতি আরো বেশী ভালাবাসা ও আকর্ষণ বোধ করবে। আর যখন স্বামী দেখবে স্ত্রী তার জন্য নিজেকে সুন্দর করে রাখে না – সেই স্ত্রী ক্রমেই তার স্বামীর ভালোবাসা হারাবে।
শেষ কথা:
স্কলারেরা [২,৩] বলেন – দুইটি মাত্র হাদিস আছে – যার একটা স্বামীর জন্য আর আরেকটা স্ত্রীর জন্য – এই একটা করে হাদিস যদি একজন স্বামী ও স্ত্রী মনে রেখে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে সেটাই তাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য যথেষ্ট হবে।
পুরুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি হচ্ছে:
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন – “মেয়েদের সাথে কোমল আচরণ করো, কারণ তাদেরকে বাঁকা পাঁজর থেকে তৈরী করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের উপরের অংশ। যদি তুমি একে সোজা করতে চাও এটা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে দাও তো বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই, মেয়েদের সাথে নমনীয় আচরণ করো ” [বুখারী ও মুসলিম, আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত]
হাদিসটির ব্যাখায় স্কলারেরা বলেন –
১) পাঁজর যেমন হৃদপিন্ডকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, একজন ভালো স্ত্রীও তার স্বামীকে বাইরের কলুষতা থেকে রক্ষা করে।
২) একজন স্বামীর দৃষ্টিতে অনেক সময় তার স্ত্রীকে গোঁয়ার ও হৃদয়হীনা বলে মনে হতে পারে। স্ত্রীর আচরণ ভুল মনে হলে স্বামী তার সাথে চিতকার-চেঁচামেচি করবে না, জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দিবে না। বরং, কোমল আচরণের মাধ্যমে, শান্ত ভাষায় তাকে বুঝাতে চেষ্টা করবে।
৩) স্ত্রীর সাথে জোরজবরদস্তির ফল কখনোই ভালো হবে না। বেশী জোরাজুরি করলে সম্পর্কটি ভেঙ্গে পর্যন্ত যেতে পারে।
৪) স্ত্রীর সাথে ঝগড়াঝাঁটি হয়ে গেলে তাকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। ঠিক যেমনি – ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়, মেয়েরা মন ভাঙলেও তা সারতে সময় লাগে। সুতরাং, একজন স্বামীকে তার স্ত্রীর দোষগুলি উপেক্ষা করে, গুণের কথা মনে রেখে, ধৈর্য ধরে, ভালো ব্যবহার করে যেতে হবে। আর, মহান আল্লাহ্‌র কাছে সুন্দর সম্পর্কের জন্য দু’আ করতে হবে।
আর মেয়েদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি হচ্ছে:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন – “আমি যদি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য”। (ইবনে মাজাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা থেকে বর্ণিত)
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় স্কলারেরা বলেন – একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসবে, সম্মান করবে ও তার মতামত অনুসারে কাজ করবে (হারাম কাজ ছাড়া) এবং তার সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবে।
তবে, স্বামীকে সম্মান করার অর্থ এই নয় যে, স্বামী অন্যায়-অত্যাচার করলেও তাকে মুখ বুঁজে মেনে নিতে হবে। সম্মান করার অর্থ এটাও নয় যে, স্ত্রী স্বামীর সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। বরং, স্ত্রী স্বামীর সাথে ভিন্নমত পোষন করতে পারবে, পরামর্শ দিবে, প্রয়োজনে যুক্তি সহকারে নিজের মতকে তুলে ধরবে – কিন্তু এই সবই সে করবে সম্মানের সাথে, কটাক্ষের ছলে নয়।
রাসূলুল্লাহ(সা)-এর সাথে তাঁর স্ত্রীরা অনেক সময় ভিন্নমত পোষন করেছেন, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় স্ত্রীর পরামর্শেই রাসূলুল্লাহ(সা) সর্বপ্রথম তাঁর মাথার চুল চেঁছে ফেলেছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, যদি এমন হয় যে – কোনো মেয়ের স্বামী তাকে কিছু করতে বলে, আর মেয়েটির পিতা-মাতা ও ভাই-বোন তাকে অন্য কোনো কিছু করতে বলে, সেক্ষেত্রেও মেয়েটিকে তার স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে [৫]। এ বিষয়ে পাশ্চাত্যের বহু রিলেশনশিপ এক্সপার্টও এখন বলেন – “দ্য হ্যাপিয়েস্ট ওয়াইফ ইয দা সারেন্ডারড ওয়াইফ” (এ বিষয়ে লরা ডয়েল এর বেস্ট-সেলিং বই “দা সারেন্ডারড ওয়াইফ” [৭] পড়ে দেখতে পারেন)।
কোনো কিছুই এমনি এমনি হয় না। যে কোনো কিছু পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করতে হয়। একটা সুন্দর সুখী সংসার গড়ার জন্যও চেষ্টা করতে হয়। একটি সুন্দর-সুখী পরিবার গড়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী দুইজনকেই চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে ভুল হবে, মান-অভিমান হবে, কিন্তু সেটাকে ধরে রাখলে চলবে না।
একে অপরের ভুলকে উপেক্ষা করে সুন্দর সংসারের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
[এই লেখাটি স্বামী-স্ত্রীর পারষ্পরিক দায়িত্বের কোনো পরিপূর্ণ/কম্প্রিহেনসিভ লিষ্ট নয়। ছেলে-মেয়ের সুন্দর, ভালোবাসাময়, শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যে প্র্যাক্টিকাল স্টেপগুলো নিতে হবে শুধু সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
এগুলোর বাইরেও স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অনেক ধর্মীয় দায়িত্ব (যেমন – পরষ্পরকে ইসলাম পালন করতে সাহায্য করা, উৎসাহ দেয়া, ইসলাম শিক্ষা করা ইত্যাদি) আছে।]























ইসলাম
মুহাম্মাদ সাওয়াবুল্লাহ

আমাদের ধর্মকে দ্বীনুল ফিতরাহ বা স্বভাবজাত ধর্ম বলা হয়। অর্থাৎ স্বভাবগতভাবে যা ভালো আপনি ইসলামেও সেই বিষয় কে ভালো হিসেবে পাবেন। সুগন্ধি ভালো, দেখবেন ইসলামেও সুগন্ধি ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ডান হাত স্বভাবগতভাবে ভালো কাজে ব্যবহার করা হয়, দেখবেন আমাদের ধর্মেও খাওয়া দাওয়া এবং উত্তম কাজের ব্যাপারে ডান হাত ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে। এরকম প্রত্যেকটা বিষয় কেই আপনি স্বাভাবিক স্বভাবের অনুগত হিসেবে পাবেন।
.
এখন প্রশ্ন হল, সবই যদি স্বভাবজাত হয় তাহলে আলাদা করে সেখানে ওহীর বিধানের কি প্রয়োজন অথবা একজন নবীর দিকনির্দেশনা কেন প্রয়োজন হবে ?
.
এর অনেকগুলো উত্তর রয়েছে।
.
প্রথম উত্তরটি এরকম, পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিচারে মানুষের স্বভাবে পরিবর্তন আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সমাজে যা এক সময় টাবু তাই সমাজের মানুষের ভিতরকার পরিবর্তনের কারণে একসময় স্বত:সিদ্ধ হয়ে যায়। এগুলোর অসংখ্য উদাহরণ পেশ করা যাবে। আশেপাশে তাকালেই তা বুঝতে পারবেন।
.
দ্বীতিয় উত্তরটি হল, ভালো মন্দের সীমা পরিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া। একটা সাধারণ বিষয় ভালো হতে পারে কিন্ত তা কতদূর পর্যন্ত ভালো বা কখন এই ভালো বিষয়টিই মন্দের রূপ নিতে পারে তা মানুষের স্বাভাবিক বিবেক সাধারণত সবসময় স্পর্শ করতে পারে না। যেমন: ধরুন, নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্কের জন্য বিয়ে একটা উত্তম উপায়। কিন্ত বিবেক এ কাজকেই পজিটিভ ওয়েতেই সাড়া দেবে। কিন্ত যখন প্রশ্ন তোলা হবে, কোন নারী কে বিয়ে করা যাবে আর কোন নারীকে যাবে না। তখন এক একজনের বিবেক একেক রকম জবাব দিবে।.
.
যদি আপনি ওহীর জ্ঞান হতে দূরে থাকেন তখন আপনার স্বভাব পদে পদে উষ্ঠা খাবে। চায়ের দোকানে অনেক বক্তাকেই বলতে দেখবেন, 'ইসলামের অমুক বিধানটা কিন্ত ভালো। প্রাকৃতিকভাবেই অমুক বিধানটি ভালো। সত্যিকার অর্থেই ইসলাম সত্য ধর্ম।
.
এটাইপের খুচরা বক্তাদেরকেই অনেক সময় ইসলামের কোন বিধানের ডিটেলস পরিপূর্ণতা বিষয়টা যখন সামনে আসে তখন তারা তা মেনে নিতে চায় না। যেমন ধরুন, এটা বলা সহজ যে পর্দা অনেক সুন্দর একটা বিধান যা সমাজকে অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করে। কিন্ত এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন আপন চাচির কেন তার ভাতিজার সামনে পর্দা করতে হবে? অথবা খালুর কেন তার ভাগ্নীর সাথে পর্দা করতে হবে ? অথবা ছেলের সমান ভাতিজা নতুন বিয়ে করেছে তার বউকে কেন চাচা দেখতে পারবে না। অথবা মামা কেন তার ভাগ্নের বউ কে দেখতে পারবে না। বিষয়টা স্পষ্ট। আল্লাহ তায়ালা গায়রে মাহরামদের যেই চার্ট দিয়েছেন তার মধ্যে এরা অন্তর্ভুক্ত। কিন্ত যারা কথায় কথায় বলত ইসলামের এই বিধানটা ভালো। তাদের মুখ থেকেই এখন শুনবেন, " এটাকে বাড়াবাড়ি বলে। এত বাড়াবাড়ি কিন্ত ভালো না। " মামা তার ভাগ্নে বা ভাতিজার বউকে দেখলে কি সমস্যা ?
.
এখানে পর্দার কন্সেপ্ট স্বভাবজাত ভাবে মেনে নিলেও কার কার সাথে পর্দা করতে হবে এই কন্সেপ্টটা তাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
.
ইসলামের প্রত্যেকটা ব্যাপারেই আপনি এরকম খুঁজে পাবেন। দেখবেন সবাই কোন নির্দিষ্ট বিধানের ব্যাপারে কথা বলছে যে এটা অনেক ভালো একটা বিষয় কিন্ত বিধানের বাস্তব আমলগত ব্যাপারটি যখন চলে আসবে তখনই এরা প্রশ্ন তুলে এত কড়াকড়ি কি ঠিক হচ্ছে। এটা তো বাড়াবাড়ি। এতটুকু তে থামলেও চলত, এরা এরপর বলে ইসলাম সহজ। ইসলাম এত কঠিন না। ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং এটাইপের মডারেট মজলেমদের সংস্পর্শ হতে নিজেকে দূরে রাখুন। যদিও মডারেটদের মনে হয় তারা ইসলামের একনিষ্ঠ আশেক কিন্ত তারা মূলত তাদের স্বভাবজাত নফসকেই ইসলাম নাম দিয়ে অনুসরণ করছে।



















নতুন দ্বীনের পথে আসা আপু ভাইয়াদের জন্য নাসীহাহ
যাইনাব আল গাযী

এমন কাউকে মাসালা জিগেস করবেন না যে জানলেও উত্তর দিবে,না জানলেও উত্তর দিবে।অর্থাৎ ভুল ভাল একটা উত্তর দিয়ে আপনাকে বুঝ দিবে। সে পারে না এই বিষয় টা বুঝতে দিতে চায়না,সে জানে সে যা বলবে আপনি সেটাই সহিহ হিসেবে মেনে নিবেন।
বরং এমন কারো থেকে জানুন যে জানলে উত্তর দিবে আর না জানলে কোন ভণিতা লজ্জা ছাড়াই বলবে “আমার জানা নেই,জেনে এরপর জানাবো ” কিংবা চুপ থাকবে বিনয়ের সাথে।
সাহাবীরা রা. যারা রাসুল সা. সাথে ছিলেন চলাফেরা করেছেন, নিজের চোখে দেখেছেন তারাও পর্যন্ত উত্তর জানা সত্ত্বেও চুপ থাকতেন।
আর আমাদের যে আজকাল কি হলো, আমরা কোন কিছু না জেনেও একেকজন অনেক বড় বড় আলেম আলহামদুলিল্লাহ্‌।














পূর্বকালের মুরজিয়া বনাম নব্য মুরজিয়া
জামিল হাসান

মুরজিয়াদেরকে এজন্য মুরজিয়া বলা হত, যেহেতু তারা আমলকে ঈমানের পেছনে ফেলে দিয়েছে অর্থাৎ ঈমান আনার পর কুফর,শিরক ও অন্যান্য যত অপরাধই করুক না কেনো, তাতে ঈমানের কোনো ক্ষতি হয় না এই আকীদা রাখত।
তবে যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম দাবি করে দ্বীনের প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়কে অস্বীকার করতো, মনগড়া ব্যাখ্যা আরোপ করতো কিংবা শরীয়তের কোনো বিধানের বিরোধিতা করতো, তাহলে পূর্বকালের মুরজিয়ারাও এধরণের লোকদেরকে মুরতাদ মনে করত।
.
কিন্তু বর্তমানের মুরজিয়ারা শুধু আমল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই বরং কুফুরী আকীদা রাখার পরও কিংবা দ্বীনের বিভিন্ন আহকামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, শরীয়তের অনেক আহকামকে এক বাক্যে অস্বীকার করার আকীদায় বিশ্বাস করা এবং তার উপর অটল থাকার পরও তারা তাদেরকে মুসলিম-ই মনে করে।
বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কুফরের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অর্থাৎ রাষ্ট্র থেকে ইসলাম আলাদা থাকবে এই আকীদায় বিশ্বাস রাখা।
.
সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার একাডেমিক ও প্রায়োগিক একটি সংজ্ঞা এখানে উপস্থাপন করছি,
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত ক্যামব্রিজ ডিকশনারি’র অনলাইন সংস্করণে সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,
The belief that religion should not be involved with the ordinary social and political activities of a country.
অর্থাৎ “(ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে) এমন বিশ্বাস যে, একটি দেশের গতানুগতিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম যুক্ত থাকা উচিৎ নয়।”
.
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান আকীদা হচ্ছে, যে কোনো ধর্ম (হোক সেটি ইসলাম বা অন্যকিছু) শুধু মানুষের ব্যক্তি জীবনে এবং বড়জোর সামাজিক কিছু অনুষ্ঠান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে না।
ধর্মনিরপেক্ষতার এই আকীদার মাধ্যমে ইসলামের রাষ্ট্রপরিচালনা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়নযোগ্য এমন সকল আহকামকে এক বাক্যে অস্বীকার করা হয়। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাস করে, এটি তাদের সুস্পষ্ট আকীদা।
.
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের এই আকীদা কোনো গোপন বিশ্বাস কিংবা পরোক্ষ কোনো বক্তব্য নয় বরং এটি তাদের লিখিত এবং বারবার উচ্চারিত প্রকাশ্য আকীদা, যা তারা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন ও সম্পদ ব্যয় করছে। এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং যারা আল্লাহর শরী’আহ কায়েম করার কথা বলেন কিংবা দাবি জানান, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এমন মুসলিমদেরকে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী বলে প্রচারণা চালায় এবং তাদেরকে বন্দী ও হত্যা করার মাধ্যমে ইসলামী শরী’আহ কায়েমের এই আওয়াজকে চিরতরে নির্মূল করতে সকল অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে।
.
আমরা যদি এই মুরজিয়াদেরকে জিজ্ঞেস করি, কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি আহকামকে অস্বীকার করলে কিংবা সেটি বর্তমানে পালনযোগ্য নয় এবং মানতে দেওয়া হবে না এমন আকীদা পোষণকারীর হুকুম কী ??
তাহলে রাষ্ট্রীয় বিষয়ের সাথে জড়িত ইসলামের শতশত আহকামকে অস্বীকার করার আকীদা পোষণ করা ব্যক্তির হুকুম কী হতে পারে ???
.
আল্লাহর বিধানকে বাতিল করে দিয়ে শরী’আহর মোকাবেলায় নিজেরাই আইন তৈরি করা, রাষ্ট্র এবং ইসলাম আলাদা করার আকীদা রাখা, আল্লাহর বিধান চায় এমন লোকদের নির্মূল করার অব্যাহত ও প্রকাশ্য প্রকল্প নেওয়া এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদী-খ্রিস্টান সম্মিলিত ক্রুসেডার বাহিনীকে প্রকাশ্য সর্বাত্মক সহযোগিতাকারী মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা যদি এরপরও নিজেকে মুসলিম দাবি করার কারণে ‘মুসলিম শাসক’ ‘উলুল আমর’ ‘ভবিষ্যৎ খলীফাতুল মুসলিমীন (কারো কারো ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলছে)’ ইত্যাদি খেতাব পাওয়ার যোগ্য হয়ে থাকে, তাহলে কোন কারণে শুধুমাত্র একটি মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে যাকাত না দেওয়া ব্যক্তিরা সাহাবায়ে কিরামের ইজমার ভিত্তিতে মুরতাদ আখ্যা পেয়েছিল ??
.
তারাওতো নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করেছিল। শুধু তাই নয়, তারা সলাত আদায় করতো এবং ইসলামের অন্যান্য আহকাম মেনে চলতো। তাদের দাবি ছিল যাকাতের হুকুম সংক্রান্ত আয়াত রাসূল সাঃ সাথে সম্পৃক্ত, তাই উনার ইন্তেকালের পর যেহেতু উনি নেই, তাই তারা কাকে যাকাত দিবে !
.
কোন কারণে নিজেকে মুসলিম দাবী করা, সলাত-সাওমসহ অন্যান্য আহকাম পালন করার পরও কাদিয়ানীরা কাফির হলো, তা সবিনয়ে জানতে চাই !
উল্লেখ্য কাদিয়ানীরা মুহাম্মাদ সাঃ কে নবী হিসেবেও মানে।
কোন উসুলের ভিত্তিতে যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিরা এবং কাদিয়ানীরা মুরতাদ হয়ে, আমরা তাদের সেই উসুল জানতে চাই !!
.
আল্লাহর যমীনে কুফরের হুকুমত প্রতিষ্ঠার বৈধতাদান এবং তা টিকিয়ে রাখতে এই নব্য মুরজিয়ারা তাদের বিকৃত ও মনগড়া দ্বীনের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই মুরজিয়ারা ত্বগুত শাসকদের ভাষায় কথা বলে। তারা তাদের এই বিকৃতির মাধ্যমে তাওহীদ ও জিহাদের বিরুদ্ধে কুফফারদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশীদার। সুতরাং এই নব্য মুরজিয়াদের বিকৃতির মোকাবেলায় দলীল প্রমাণের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেখানেই এরা এই বাতিল মতবাদের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাবে, সেখানেই তাওহীদের বিশুদ্ধ আকীদা উপস্থাপন করে তাদের বাতিল আকীদা স্পষ্ট করে দিতে হবে।






জীবন
রাজিব হাসান

"একটা কচ্ছপ তিনশত বছর বাঁচে অথচ মানুষ মাত্র ৬৫-৭০ বছর"
হা-হুতাশ করে উক্তিটি করেছিলেন বাংলার প্রয়াত এক কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার। জীবনের অংকুরোদগমের সে সময়টায় কথাটা ভাবাত আমায়, বেশ ডুবাতো আমায়। আল'হামদুলিল্লাহ! ডুবে হারিয়ে যাইনি। দুদিনে আগে তার ভাইও তার কথার জের টেনে ধরে হরহরাইলেন। বললেন, এই সৃষ্টির এই অসমতার কথা, বেখাপ্পা সৃজনশীলতার উপর আক্ষেপ করলেন।
অথচ মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র ক্বুর'আনে ইরশাদ করেন,
"আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা" (সূরা জুমার, আয়াত:৬২)
"আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছ সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন" (সূরা ক্বাসাস, আয়াত:৬৮)
"এবং আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা সেটাই করেন" (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত:২৭)
"আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৩০)
.
আল্লাহ খালিক্ব, সৃষ্টিতে কোন খুঁত নেই। নেই কোন অসাড়তা, নেই কোন অসমতা। আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দিয়ে আল্লাহ্‌ আল-হাকিমের প্রজ্ঞা বুঝার মন মানসিকতা আর নিজের আকলের ফিল্টারে খালিক্ব আল্লাহ্‌র সৃষ্টির প্রতি আঙুল প্রদর্শন করার কারণে এরকম মনে হয়। সৃষ্টির রহস্য সন্ধান যদি সত্য অন্বেষণের জন্য হয় তবেই পথের বাঁকে খাবি খাওয়া পথিক পথ খুঁজে পায়। পিতা ইব্রাহীম (আ:) সৃষ্টির রহস্যে সত্যের তালাশ করতেন, তাতে নিজের আক্বল ব্যবহার করতেন না। তিনি ঠিকই সত্য খুঁজে পেয়েছিলেন। মানুষ একবার মৃত্যু বরণ করে আবার কিভাবে পুনরুত্থিত হবে তার ডেমো দেখতে চেয়েছিলেন, শুধুমাত্র ঈমানের ছুরিতে ক্ষুরধার দেওয়ার জন্য। তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন বা তাতে সন্দেহ পোষণের জন্য নয়। আল্লাহ আযযা ওয়াজাল তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। ডেমো দেখিয়ে পুনরুত্থানের সত্যতা দেখিয়ে পিতা ইব্রাহীম (আ:)-এর অন্তর প্রশান্ত করেছিলেন। (সুবহানাল্লাহ)
নিয়্যতের গণ্ডগোলের কারণে কেউ হয় পথহারা আর কেউ উপকৃত হয় ঐশী নিদর্শন দ্বারা। সত্যের তালাশে সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য নিয়ে চিন্তা করা আর নিজের আঊলানো আক্বল দিয়ে সৃষ্টির প্রতি আঙুল তোলা -এক ফিল্টার নয়। হিদায়েতের তালাশ আর গোমরাহীর ফিল্টার ভিন্ন, আলাদা। সৃষ্টিরহস্য জানতে চাইলে খালিক্ব আল্লাহ্‌ ব্যবস্থা করে দেন অলৌকিকভাবে। প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মজুদ আছে। কেউ না দেখলে চাইলেও মহান আল্লাহ্‌ দেখান। আর কেউ দেখার পর মুখ ঘুরিয়ে নিলে মহান আল্লাহ্‌ তাকে সেদিকেই পরিচালিত করেন। তার কাজগুলিকে সুশোভিত করে দেন এক নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।
.
ভঙ্গুর এই দুনিয়াতে কচ্ছপ তিনশত বছর বাঁচুক আর তিনহাজার বছর বাঁচুক তার কপালে চিরস্থায়ী জান্নাত নাই। ক্বিয়ামত দিবসে সে প্রতিশোধ গ্রহণ করে মাটিতে মিশে যাবে। তার পরিণাম ঐ পর্যন্তই। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
"সেদিন যারা কুফরী করেছে ও রাসূলের নাফরমানী করেছে, তারা আকাঙ্ক্ষা করবে যে তাদের যদি মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হত! বস্তুত: তারা আল্লাহ্‌ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না" (সুরা-আন্নিসা, আয়াত:৪২)
উক্ত আয়াতের বর্ণনায় এসেছে, ক্কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে যখন জ্বীন, মানব ও সকল প্রাণিকুলকে একত্রিত করা হবে তখন জ্বীন ও মানব জাতি ছাড়া অন্যান্য প্রাণিজগতকে তাদের মধ্যে কেউ কারো ওপর অত্যাচার করে থাকলে একের থেকে অন্যের প্রতিশোধ গ্রহণের পর তাদেরকে মাটির সাথে মিশে যাবার নির্দেশ দেওয়া হবে।
.
বিজ্ঞান বলছে কচ্ছপের শরীরে "স্লো মেটাবলিজম" অর্থাৎ ধীরগতির মেটাবলিজমের কারণে তারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাঁচে। আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য শরীরে যে বিপাক প্রক্রিয়া হয় সেটাই আসলে মেটাবলিজম ( set of life-sustaining chemical transformations within the cells of living organisms)। সহজ ভাষায় মেটাবলিজমের কারণে প্রাণিদেহ টিকে থাকে ও বেড়ে ওঠে। দেহের গঠন ঠিক থাকে, পুনরুৎপাদনে সক্ষম হয় এবং পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিজ্ঞান এও বলছে যে, এই স্লো মেটাবলিজমের কারণেই কচ্ছপ আজ বিলুপ্তির পথে। আর মানুষ দ্রূত মেটাবলিজমের কারণে এখনো দুনিয়াতে টিকে আছে। উলেখ্য মানুষের শরীরে এই মেটাবলিজম বাড়ানোর জন্য ডাক্তারবাবুরা বিভিন্ন খাবারও প্রেস্ক্রাইব করেন। যেন তার স্বাভাবিক বেঁচে থাকাটা তরান্বিত হয়। কচ্ছপ আর মানুষের তুলনা যারা করেন তারা এই সহজ বায়োলজিক্যাল হিসাবাদি হাইড করে যান। শতাব্দীর পর শতাব্দী আয়ুষ্কাল নিয়েও কচ্ছপদের ক'টা দুনিয়ার কোন কাজটিতে অবদান রাখতে পেরেছে মানুষের ভোগের বস্তু হওয়া ছাড়া?।
সৃষ্টির রহস্য বুঝতে রকেট সায়েন্স লাগে না, লাগে "শুনলাম আর মেনে নিলাম" আক্বিদার মন-মানসকিতা। "বুঝলাম, কিন্তু কথা হইল" এই আক্বিদা নয়। মহান আল্লাহ্‌ জ্বীন ও মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন পরখ করার জন্য, স্লো মেটাবলিজমের অলসতার ডিম প্রসবকারী কচ্ছপ হয়ে বছরের পর বছর ঘাড় উঁচিয়ে কাতরিয়ে কাতরিয়ে হাটার জন্য নয়।
.
খন্ডিত সত্য সত্য নয়। সত্য খুঁজতে চাইলে পূর্ণ সত্য খুঁজতে হবে। ধরলাম এখনকার মানুষ ৬০-৭০ বছর বাঁচে। কিন্তু সৃষ্টির শুরুর দিকের মানুষগুলির দিকে দেখেন। আদম (আ:) বেঁচেছিলেন ১০০০ বছর, নূহ (আ:) ৯৫০ বছর, শুয়াইব (আ:) ৮৮২ বছর, সালিহ (আ:) ৫৫৮ বছর, পিতা ইব্রাহীম (আ:) ১৯৫ বছর। এই সত্যটা কি প্রমাণ করেনা মানুষ কচ্ছপের চাইতে বেশী সময়কাল বাঁচত। এটাই হাকিম আল্লাহর হিকমাহ। উক্ত আম্বিয়া ক্বিরামগণ (আলাইহিমুস সাল্লাম)-এর লম্বা আয়ুষ্কাল তদ্বকালীন সময়ে দরকার ছিল বলেই মহান আল্লাহ্ তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কুর'আন খুলে দেখুন জাহালাতের সমাজে শিরক আর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার দাওয়াতে উনাদের অবদান কতটুকু। বর্তমানে আমাকে আপনাকে এতদিন হায়াতের জিন্দেগী দিলে সে দাওয়াত হবে সেক্যুলারিজম আর জাহালতের দাওয়াত। বাড়বে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সৃষ্টির খুঁত খুঁজে বেড়িয়ে নিজেকে আগুনের পথের যাত্রী করার আহবান।
.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের আয়ু ষাট থেকে সত্তর বছরের মধ্যে, কম লোকই এ বয়স অতিক্রম করে।’’ (তিরমিযী ২৩৩১, ৩৫৫০, ইবনে মাজাহ ৪২৩৬, হাকেম ৩৫৯৮, বাইহাক্বী ৬৭৫৯, সহীহুল জামে’ ১০৭৩)
নবী (সা:) ভবিষ্যৎবাণী করেছেন ৬০-৭০ বছর আর আমরা আফসোস করি তিনশত বছর বাঁচার। অথচ এই অল্প-স্বল্প আয়ু উত্তমরুপে কাজে লাগিয়ে জান্নাতের চিরস্থায়ী জীবন অর্জন করার মধ্যেই সার্থকতা নিহিত। এই সহজ সমীকরণটা বুঝতে চাইনা, মাথায়ও ঢুকেনা। ভোগের জীবনের প্রতি রাজ্যের
আকর্ষণ। কোন জীবন আসল আর কোন জীবন নকল সেইটা ফিল্টার করতে চাই না। বিজ্ঞানের লিটমাস পেপার দিয়ে এসিড-ক্ষার টেষ্ট করতে পারি, শুধু পারিনা জ্ঞানের লিটমাসে জান্নাত-জাহান্নামের পার্থক্যটা গড়তে।
.
"তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না।" (সূরা মূলক, আয়াত:০৩)

















বিকৃত যৌনাচারঃ সমকাম
আব্দুল্লাহ আল ফারুক

“আমরা মৃত সাগরের পূবপ্রান্তের উপকূলের সেই স্থানটিতে পৌঁছি, যাকে স্থানীয় জনগণ ‘আল-লিসান’ বলে থাকে। এর কাছেই দক্ষিণ দিকে মৃত সাগরের সেই স্থানটি অবস্থিত, যেই স্থান সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এখানে সাদুম নগরী ও লুত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের আরেকটি নগরী ডুবে গিয়েছিল। এ কারণেই মৃত সাগরের এ অংশটিকে ‘লুত উপসাগর’ বলা হয়।
মৃতসাগরের আশপাশের পুরো অঞ্চলটির দিকে তাকালে এখনো পরিষ্কার বুঝে আসে যে, মারাত্মক আযাবের কারণে জায়গাটির বিভিন্ন স্থান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় স্পষ্ট ধসের দাগ দেখা যাচ্ছে।
-সীরাত বিশ্বকোষ
প্রথম খণ্ড। ২৯২ পৃষ্ঠা। (প্রকাশিতব্য)
লুত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের যে বৈশিষ্ট্যগুলো কিতাবে পাওয়া যায়,
১. তারা নির্লজ্জ পাপাচারী ছিল। প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করতো।
২. তারা সমকামিতায় অভ্যস্থ ছিল। সমকামিতা তাদের সমাজে স্বীকৃত ছিল।
৩. লুণ্ঠন-লুটতরাজ তাদের নিতনৈমিত্তিক কাজ ছিল।
৪. লুত আলাইহিস সালাম যখন তাদেরকে এ সব পাপাচার ছেড়ে আল্লাহর অনুগত হওয়ার আহবান জানান তখন তারা তার কথা কানে তোলে নি; বরং তারা উপহাস শুরু করে। তারা কটাক্ষ করে বলতো- ‘আহা কী ঢং! লোকটি সাধু থাকতে চায়’।
৫. এমনকি তারা আল্লাহর মহান এ নবীকে তাদের অঞ্চল থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তাদের এই ঔদ্ধত্ব্যের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করেন যে, আজ হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জনপদ থেকে ধ্বংসচিহ্ন এখনো মুছে যায়নি।
মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়ে ভাবি, আমাদের ওপর আল্লাহ সীমাহীন দয়াবান। সাইয়্যেদুনা লুত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মাঝে যেই পাপাচারগুলো ছিল, সেগুলো তো আমাদের মাঝেও আছে।
এখন তো পুরো পৃথিবীতেই প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ চলে।
বাংলাদেশের মতো অনুন্নত রাষ্ট্রও অশ্লীলতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। টিভি চ্যানেলগুলোতে হরদম অশ্লীল দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক ক্লিকেই পর্ন চলে আসে।
বিশ্বের অনেকগুলো দেশে সমকামিতা এখন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। মানুষ পথে-ঘাটে তো পরের কথা, নিজের ঘরে থেকেও লুণ্ঠন-লুটতরাজের শিকার হচ্ছে। যাদের দায়িত্ব লুণ্ঠন বন্ধ করা, সেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লুণ্ঠন থেকেও মানুষ নিরাপদ নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই উম্মাহর জন্যে অশ্রুবিজড়িত দুআ করে না থাকলে সেই কবেই আমরা ধ্বংস হয়ে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম। একটি বিধ্বংস জাতি হিসেবে আমরাও পৃথিবীর ইতিহাসের কালো উদাহরণগুলোর একটি হতাম।
আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাওবার সবগুলো সুযোগ এখনো অবারিত করে রেখেছেন।

আমরা কি সেই সুযোগ কাজে লাগাব না?






















শাহি এলান!
আইনুল হক কাসিমী
শাহি এলান! শাহি এলান! আওয়াজটা শুনতেই আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই সচকিত হয়ে উঠল। তারা কান পেতে শুনতে চেষ্টা করল। তারা দেখতে পেল, জনৈক ঘোষককে। তার হাতে একটি শিঙা। শিঙায় মুখ লাগিয়ে সে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে চলছে। রাস্তা, ঘাট, অলিগলি ও শহর, নগর-বন্দরে তার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ছে। খলিফার এলান প্রজাদের শুনিয়ে দিচ্ছে! সে কী এলান করছে? সে এলান করছে-
♤যে ব্যক্তি বিয়ে করতে চায়, তাকে আমরা বিয়ে করিয়ে দেব।
♤যে ব্যক্তি ঘর নির্মাণ করতে চায়, তাকে আমরা ঘর নির্মাণ করে দেব।
♤যে ঋণগ্রস্থ, ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না; তার ঋণ আমরা পরিশোধ করে দেব।
♤যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরা করতে চায়, তাকে আমাদের খরচে হজ্জ বা উমরা করাব।
দুঃখিত, এলানটা এ যুগের নয়। এলানটা এ যুগের এমন কারও নয়; যে যুগে মুসলিম দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস, তেল, পেট্রল ইত্যাদি খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। এলানটা এমন যুগের কারও নয়, যে যুগে মুসলিম বিত্তশালীরা বিলাসবহুল গগনচুম্বী অট্রালিকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় আয়েশ করে। যে যুগের ধনীরা শুধু ধনী হতে থাকে, আর দরিদ্ররা আরও দরিদ্র। বরং এলানটা আজ থেকে প্রায় সাড়ে তেরশত বছর আগে খলিফাতুল মুসলিমিন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহ.-এর!
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহ. -এর কাছে যখন লোকেরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাকাত এর মাল নিয়ে আসলো, তখন তিনি এই এলান করিয়েছিলেন। তিনি লোকদের সম্বোধন করে বলেছিলেন- এই মাল ফকিরদের মধ্যে বিতরন করে দাও। তারা উত্তর দিয়েছিল-
- মুসলিম উম্মাহর মাঝে কোনো ফকির নেই!
-তাহলে এই মাল দিয়ে মুজাহিদ বাহিনীদের রণসাজে সজ্জিত করে দাও।
-মুজাহিদ বাহিনীগুলো তো সারা পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছে!
-তাহলে এই মাল দিয়ে যুবকদের বিয়ে করিয়ে দাও।
-বিবাহেচ্ছুকদের বিয়ে করিয়ে দিয়েছি, এরপরও মাল রয়ে গেছে!
-তাহলে এই মাল দিয়ে ঋণগ্রস্তদের ঋণ আদায় করে দাও।
-আদায় করে নিয়েছি, কিন্তু এরপরও মাল রয়ে গেছে!
-তাহলে দেখো কোনো ঋণগ্রস্থ ইয়াহুদি/খ্রিস্টান পাও কি না, পেলে ঋণ আদায় করে দাও।
-করে দিয়েছি, কিন্তু তারপরও মাল রয়ে গেছে!
-তাহলে এই মাল আহলে ইলমদের দিয়ে দাও।
-দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তারপরও মাল রয়ে গেছে!
এবার উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহ. বললেন- তাহলে এই মাল দিয়ে গম কিনে পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ছিটিয়ে দাও, যাতে এই কথা বলা না হয় যে, মুসলমানদের দেশে পাখ-পাখালিরা উপোষ রয়েছে!!!
সূত্র: كتاب الأموال, পৃষ্ঠা: ৬২৫, ইমাম আবু উবাইদ কাসিম বিন সাল্লাম।
অ্যামেরিকা!!
নাফিজ মুকতাদির
এক দ্বীনি ভাইকে দেখলাম ফেসবুকে অ্যামেরিকা যাওয়ার উপায় বলে দিচ্ছেন।
.
সন্দেহ নেই লেখকের নিয়ত ভাল। তিনি স্বদেশী ভাই-বেরাদারদের হেল্প করতে চান।
.
তবে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, আমেরিকায় যাওয়া কি ইসলাম অনুসারে বৈধ হবে?
.
আগেই বলা নেয়া দরকার, শুধু অ্যামেরিকা নয় যেকোন কাফির অধ্যুষিত এলাকায় মাইগ্রেট করাই হারাম।
.
কারন রাসুলুল্লাহ সা বলেন-
.
"আমি প্রত্যেক ঐ মুসলিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করি, যারা মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করে।"
(আবূ দাউদ, আলবানী (র) এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন)
.
আর আপনি যদি কাফির অধ্যুষিত এলাকায় জন্মগ্রহন করে থাকেন, তাহলে আপনার উপর হিজরত ফরয
.
ইবনে আল আরাবি আল মালিকি বলে, হিজরত হল অমুসলিমদের ভুমি হতে মুসলিমদের ভুমিতে যাওয়া। এটি রাসুলুল্লাহ সা এর যুগেও ফরয ছিল, এখনও ফরয রয়েছে।
.
যারা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাফির দেশ হতে হিজরত না করে, তাদের উদ্দেশে আল্লাহ তা'লা বলেন-
.
যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলেঃ এ ভূখন্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান।
(সূরা নিসাঃ৯৭)
.
সবিশেষে আমেরিকায় বাস করা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধের শামিল। কারন অ্যামেরিকা হল দারুল হারব অর্থাৎ মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত জাতি। তারা ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, মালিতে লক্ষাধিক মুসলিম হত্যা করেছে এবং এখনও করছে।
.
আর আপনি সেই আমেরিকায় গিয়ে আমেরিকান সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করছেন। সেই ট্যাক্সের টাকায় তারা বোমা তৈরি করে। সেই বোমা মুসলিম নারি-শিশুদের প্রাণ হরনে ব্যবহার করা হয়।
.
তারপরেও যারা অ্যামেরিকা যেতে ইচ্ছুক, তাদের সম্পর্কে আমরাও একই কথা বলব, যে কথা রাসুলুল্লাহ সা বলেছেন-
.
আমরা প্রত্যেক ঐ মুসলিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করি, যারা মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করে।
মানুষ শুধুমাত্র এসবের অস্তিত্ব জানতে পেরেছে
সাইফুর রহমান

মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ ও চিন্তাশক্তি কিভাবে শয়তান নিজের কব্জায় নিয়ে গেছে তা ভাবলে অবাক হই। অবসর সময়ে শান্ত মস্তিষ্কে একটু ভাবনার সুযোগও শয়তান রাখেনি।
মহাবিশ্ব নিয়ে একটু ভাবুন। মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় পৃথিবীর অনুরূপ হলেও বসবাসের অনুপযোগী কেনো? বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট এই মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক গ্রহ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত অবস্থা থেকে শীতলতর হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। পৃথিবী সহ সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহগুলো একই সোর্স ও একই প্রসেসের মাধ্যমে সৃষ্টি হলে বাকি গ্রহগুলো কেনো বসবাসের জন্য পৃথিবীর মতো আরামদায়ক হলো না? একই কথা প্রযোজ্য সূর্যের ক্ষেত্রে। পৃথিবী গরম থেকে ঠান্ডা হলো, কিন্তু সূর্য কেনো উত্তপ্তই থেকে গেলো? এসব প্রশ্নের উত্তর আসলে মানুষের জানা নেই।
আসল সত্য হলো, মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এতটাই নগন্য যেমনটা নগন্য সমুদ্রের মধ্যে ডুবানো সুচের গায়ে লেগে থাকা পানির পরিমান পুরো সমুদ্রের পানির তুলনায়। তারপরেও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ মহাবিশ্বের এই অসীম সৃষ্টিকে 'প্রাকৃতিকভাবে তৈরী' বলে নিজের মনকে শান্তনা দেয়। সামান্য একটা মাটির পুতুল যেখানে প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হয়না, কোনো কারিগরের সাহায্য ছাড়া, সেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহপুঞ্জ নিজে নিজে তৈরী হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করা মানুষের সংখ্যাই সমাজে বেশি। আরো অবাক করা বিষয় মানুষ নিজে সৃষ্টি করতে অক্ষম যেমন ধরুন, মানুষ চাইলেও একটা 'চাঁদ' বা আরেকটা গ্রহ বানাতে পারবেনা, কিন্তু অন্য কেউ সৃষ্টি করেছে সেটা মানতে নারাজ। মানুষ এতটাই জ্ঞানহীন নিজেদের অক্ষমতা মানতেও কষ্ট হয় এদের।
শয়তানের আরেকটা অস্ত্র হলো, বিজ্ঞানের মাধ্যমে ধোঁকা দেয়া। মানুষ চাঁদে গেছে বা মঙ্গলের ছবি তুলেছে, এসবের প্রচার এমনভাবে করানো হয় যেনো মানুষ নিজেদের মহাশক্তিধর হিসাবে প্রমান করতে পেরেছে। মঙ্গলের ছবি তোলা বা চাঁদে অভিযান দিয়ে কিছুই প্রমান হয়না, এর দ্বারা এটা প্রমান হয় না যে, মঙ্গল বা চাদ মহাশক্তিধর কোনো সত্তা তৈরী না করে মানুষেরা তৈরী করেছে। অনুরূপভাবে, কোষের মধ্যকার জটিল মেকানিজম বের করা বা ডিএনএ, আর.এন.এ এর গঠন ও কার্যপ্রণালীর রহস্য উন্মোচন দিয়ে বিশেষ কিছু প্রমাণিত হয়না। এসব মেকানিজম বা ডিএনএ, প্রোটিন আগে থেকেই কোষের মধ্যে মজুদ ছিল। মানুষের কৃতিত্বটা কি এখানে? মানুষ কি পেরেছে সামান্য একটা কোষ তৈরী করতে?
যেসব জিনিস আগে থেকেই মজুদ ছিল, মানুষ শুধুমাত্র এসবের অস্তিত্ব জানতে পেরেছে, নিজেরা এসব জিনিস সৃষ্টি করতে অক্ষম, অথচ এতেই নাকি মানুষ সব কিছু জয় করে নিয়েছে, মহাশক্তিধর হওয়ার দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আহ, কি ধোঁকা!! শয়তান আসলেই অনেকটা সফল।


দারুল ইসলাম নাকি দারুল কুফর
আলি হাসান উসামা

কোনো দেশ দারুল ইসলাম হওয়া-না হওয়ার সঙ্গে দেশের নাগরিকরা ব্যক্তিজীবনে কোন ধর্ম পালন করছে—এর সম্পর্ক নেই। সাহাবিরা কোনো অঞ্চল স্বাধীন করলে পরমুহূর্তেই সে অঞ্চলের সব নাগরিকরা মুসলিম হয়ে যায়নি; অথচ বিজয়ের পর দেশগুলো কিন্তু দারুল কুফর ছিল না; বরং দারুল ইসলাম হয়ে গিয়েছিল।
দেশের অধিকাংশ, বরং প্রায় সকল নাগরিক অমুসলিম হওয়ার পরও দেশ দারুল ইসলাম হতে পারে। আবার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ব্যক্তিজীবনে ইসলাম পালন করার পরও দেশ দারুল কুফর হতে পারে।
দেশ দারুল ইসলাম বা দারুল কুফর হওয়ার ভিত্তি হলো দেশে ইসলাম থাকা বা না থাকা। ব্যক্তিগত পরিসরে ইসলাম থাকা বা না থাকার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয়—এই যুক্তি দিয়ে দেশকে দারুল ইসলাম বলার সুযোগ নেই। বরং দেশকে দারুল ইসলাম বলতে হলে আপনাকে দেখাতে হবে যে, দেশ ইসলাম অনুযায়ী চলে।
উল্লেখ্য, ইমান এবং কুফরের মিশ্রণ হলে তার ওপর ইমানের হুকুম আরোপ করা হয় না; বরং কুফরের হুকুম আরোপ করা হয়। যেমনিভাবে দুধ এবং প্রস্রাবের মিশ্রণ হলে তার ওপর পাক হওয়ার হুকুম আরোপ করা হয় না; বরং নাপাক হওয়ার হুকুম আরোপ করা হয়। কারণ, ফিকহের মূলনীতি হলো, বিধান সর্বদা আরজাল (নিকৃষ্ট বস্তু)-এর অনুগামী হয়।











ডেসটিনি ডিজরাপ্টেড বইয়ের কিছু বিষয়ের পর্যালোচনা (পর্ব-১)
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

ডেসটিনি ডিজরাপ্টেড বইটি মূলত ইংরেজিতে লেখা। লেখক হলেন তামিম আনসারি। আফগান বংশোদ্ভুত। তবে তিনি বাস করেন আমেরিকাতে। এই বইতে তিনি ইতিহাসের কথা বলতে চেয়েছেন সাদামাটাভাবে। অল্প কথায়। ইতিহাস বলতে সাধারণ ইতিকাস নয়। ইসলামের ইতিহাস। বাংলায় ভাষান্তর করেছেন আলী আহমাদ মাবরুর। প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান প্রকাশনী।
গতোকাল কিতাব মার্কেটে গেলাম। বইটা সামনে পড়লো। হাতে নিয়ে দেখলাম। সুন্দর ঝকঝকে প্রচ্ছদ। দোকানে দাড়িয়ে দাড়িয়েই পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম। হঠাৎ হঠাৎ চোখে এসে পড়ছিলো কিছু বিষয়। যা পর্যালোচনার দাবি রাখে। সেই পৃষ্ঠাগুলো ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম। হয়তো একাধিক পর্বে পর্যালোচনাগুলো করবো। শুরু করছি সেই বিষয় দিয়ে, আমার কাছে যা সবচে মারাত্মক লেগেছে এবং যা পড়ে আমি ব্যাথিত হয়েছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর সাহাবীদের ঐক্যমতে আবু বকর রা.কে খলীফা মনোনীত করা হয়। কিন্তু শিয়ারা তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি হলো খলীফা হবার হকদার ছিলেন আলী রা.। কিন্তু আবু বকর ও উমর রা. সেই খিলাফত ছিনিয়ে নেন। ফলে তারা এই দুই সাহাবিকে গালমন্দ করে ও কাফের বলে নাউযুবিল্লাহ। এই দুই সাহাবিকে নিয়ে তারা বহু মিথ্যাচার করে থাকে। সেরকমই একটি মিথ্যাচার ডেসটিনি ডিজারেপ্টেড এর লেখক খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আসুন বই থেকেই ঘটনাটি পড়ি
"আবু বকর রা. এর কিছু একপেশে ভক্ত তাকে [মানে আলী রা.কে] বেশ হুমকি ধমকি দিয়েছিলো এবং তার পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলো। এরকমই এক ঘটনায় একবার কোন একজন তার বাসার দরজা বেশ জোরে বন্ধ করেছিলো। সেই দরজাটি সোজা গিয়ে ধাক্কা লাগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে ও আলী রা. এর স্ত্রী বিবি ফাতেমার রা. পেটে, যিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সেই আঘাতে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। তা না হলে হয়তো আমরা ইতিহাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লালামের তৃতীয় দৌহিত্রকে দেখতে পেতাম।" (দেখুন: ৭৪-৭৫ পৃষ্ঠা)
# পর্যালোচনা:
এবার ঘটনাটি একটু পর্যালোচনার দৃষ্টিতে আমরা দেখবো।
{ক} খিলাফত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো নবিজীর মৃত্যুর পরপরই। তখন যারা ছিলেন সকলেই নবিজীর সংস্রবপ্রাপ্ত সাহাবা ছিলেন। তো একপেশে ধমকিদাতা বলে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সকলেই যে সাহাবি ছিলেন সেটা বলাই বাহুল্য। এটা হলো সাহাবিদের প্রতি উক্ত ঘটনায় আরোপ করা প্রথম অপবাদ। বাস্তব ইতিহাসে এর অস্তিত্ব আমরা দেখি না।
{খ} আবু বকর রা. এর সমর্থক কর্তৃক নবি পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে । এটা হলো সাহাবিদের প্রতি আরোপ করা দ্বিতীয় অপবাদ। অথচ সাহাবিদের জীবন-চরিতের সাথে যাদের সামান্য সম্পর্কও আছে তারা জানেন যে, সাধারণ সাহাবিরা নবি পরিবারকে কতোটা শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন। এটি এতোটাই প্রসিদ্ধ ও যাহের বিষয় যে, এর জন্য বইপত্র থেকে দলিল-প্রমাণ তুলে ধরারও প্রয়োজন মনে করছি না।
{গ} আবু বকর রা. কোন একজন সমর্থক কর্তৃক ফাতিমা রা.কে আঘাত করা এবং বাচ্চা নষ্ট করার অভিযোগ করা হয়েছে। যারা শিয়াদের তৈরি ইতিহাস পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে এই "কোন একজন" বলতে উমর রা.কে বুঝানো হয়েছে। তাঁর ব্যাপারেই শিয়ারা এই অভিযোগ করে থাকে। অথচ এটা যে ডাহা মিথ্যা সে ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম বহু আগে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন।
আমি এখানে শুধু দুইজনের বক্তব্য তুলে ধরছি:
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ শিয়াদের খণ্ডনে লিখিত তাঁর বিখ্যাত বই মিনহাজুস সুন্নাহতে বলেন:
"তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলে যে, তারা (আবু বকর রা. এর সমর্থক সাহাবিরা) ফাতিমা রা. এর পেটে আঘাত করার দরুন তাঁর গর্ভপাত হযে যায়। যার সামান্যতম ইলম রয়েছে সে-ও জানে যে এটি মিথ্যা।" [মিনহাজুস সুন্নাহ: ৪:৪৯৩]
বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকা বিশেষজ্ঞ আল্লামা শাহরাস্তানি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত বই 'আলমিলাল ওয়ান নিহাল'-এ নাযযাম নামক এক ব্যক্তি, যে এই বানোয়াট ঘটনাটি তৈরি করেছে, তার ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন:
"সে ছিলো রাফেযি (উগ্র শিয়া) মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট। বড়ো বড়ো সাহাবিদের হেয় করতো। তার বানানো মিথ্যার মধ্যে একটা হলো, বাইআতের দিন উমর রা. ফাতিমার পেটে আঘাত করেন। ফলে তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। সে সময় তিনি (উমর রা.) চিৎকার করে বলছিলেন, 'ঘরটিকে ভেতরে যারা আছে তাদেরসহ জ্বালিয়ে দাও।' অথচ সেসময় ঘরের ভেতর ছিলো আলী, ফাতিমা, হাসান, হুসাইন।"
[আলমিলাল ওয়ান নিহাল: ১:৫২]
এর বাইরেও আরও বহু আলেমগণ এটা নিয়ে কলম ধরেছেন। নিজেদের কিতাবাদিতে উমর রা. এর প্রতি আরোপ করা এই অপবাদকে নাকচ করে এর মাথ্যা হবার জোরালো প্রমাণ দিয়েছেন। [দেখুন- আল্লামা যাহাবির 'সিয়ারু আলামিন নুবালা: ১৫/৫৭৭-৫৭৮;]
উমর রা. এর প্রতি আরোপিত এই অপবাদ যে সঠিক নয় তার একটা বড়ো প্রমাণ এটাও যে, উমর রা. এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলী রা. এর সাথে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। এমনকি আলী রা. ও ফাতিমা রা. এর মেয়ে উম্মু কুলসুমকে উমর রা. বিবাহও করেন। যা কিনা বাইআতের ঘটনার পরে ঘটে। তো সত্যিই যদি উমর রা. এমন কিছু করতেন তাহলে কি কখনও আলী রা. আপন মেয়েকে তাঁর সাথে বিবাহ দিতেন? কস্মিনকালেও না।
তাছাড়া আলী রা. এর বীরত্ব ও সাহসিকতার ঘটনা সকলেরই জানা আছে। এতো বড়ো ঘটনা ঘটার পরও।তিনি চুপচাপ বসে ছিলেন তা কী করে ধারণা যায়?
আরও কথা আছে। ঘটনা যদি সত্যি হতো তাহলে তো উমর রা.কে হত্যার কিসাস না হোক, অন্তত দিয়ত বা রক্তপণ দিতে হতো। সেটাও ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই না। মোটকথা হলো, এটা যে একটি ভ্রান্ত ঘটনা তা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট।
{ঘ} সবশেষে এই ঘটনায় আমরা লেখকের চতুরতা লক্ষ্য করি। তিনি কী সুন্দরে সাধারণ পাঠকের ভেতর একটা বিষ প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তারপর একটা বাক্য ছুঁড়ে দিয়ে আবেগের উপর আঘাত করে তাকে উত্তেজিত করে তুলছেন এই বলে-
"তা না হলে হয়তো আমরা ইতিহাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লালামের তৃতীয় দৌহিত্রকে দেখতে পেতাম।"
সাধারণ মুসলিমদের নবি-পরিবারের প্রতি ভালোবাসা সর্বজনবিদিত। একজন মুসলিম যখন পড়েন যে, এই করুন ও নির্মম ঘটনার কারণে নবি-পরিবারের একজন সদস্যকে পৃথিবীর বুকে আসার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে তখন তার মনের অবস্থা কেমন হবে চিন্তা করে দেখুন। কতোটা ঘৃণার জোয়ার তার বক্ষে
উথলে উঠবে কল্পনা করুন। অথচ পুরো ব্যপারটাই মিথ্যার উপর দণ্ডায়মান।
এই ঘটনা যত্নের সাথে উল্লেখ করার পর লেখক গর্ভপাতের পেছনে কারও দায় না থাকার বিষয়ে 'অন্য একটি বর্ণনা আছে' বলে মন্তব্য করেন। তার বর্ণনাভঙ্গিতে তিনি ঘটনাটাকে বাস্তব ধরে বইতে উল্লেখ করেছেন খুব যত্নের সাথে। তারপর এক লাইনে এর বিপরীত মত থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। সেই বিপরীত মত থাকাটাকেও তিনি গুড়িয়ে দিয়েছেন এই কথা বলে:
"তবে ইতিহাসে এই দুই রকমের বর্ণনা আজও বিদ্যমান। কারণ সঠিক যুক্তিপ্রমাণ নিয়ে সঠিক বিষয়টি আজও প্রমাণ করা যায় নি।"
তো তিনি প্রথমে গর্ভপাতের ঘটনা যত্নসহকারে আনলেন, সেটাকে সত্য ধরে মন্তব্য করলেন- "তা না হলে হয়তো আমরা ইতিহাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লালামের তৃতীয় দৌহিত্রকে দেখতে পেতাম।" তারপর খুব দুর্বল ভঙ্গিমায় সামান্য এক লাইনে ভিন্ন বর্ণনা থাকার কথা বলে সেটাকে আবার নিজেই বাতিল করে দিলেন এই বলে যে- "যুক্তিপ্রমাণ নিয়ে সঠিক বিষয়টি আজও প্রমাণ করা যায় নি।" এটা যে লেখকের অজ্ঞতা তাতে কোনই সন্দেহ নাই। অন্যথায় গর্ভপাতের এই মিথ্যা ঘটনা কোন ব্যক্তি রটিয়েছে, তার নামধাম কি,।তার স্বভাব কেমন ছিলো ইত্যাকার সব কিছুই হাদীস বিশারদ আলেমগণ বলে দিয়ে গেছেন তাদের বইপত্রে। তারা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও শক্তিশালীভাবে এর মিথ্যা হবার প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁঁছার সামর্থ্য কি সত্যিই ডেসটিনি ডিজরাপ্টেড বইয়ের লেখকের আছে?
তিনি শিয়াদের বানোয়াট বর্ণনা আর বিশুদ্ধ বর্ণনাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। দুইয়ের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান আছে সেই খবরই তার নাই। ওয়া ইলাল্লাহি আশতাকি।
তিনি এমন কাণ্ড আরও ঘটিয়েছেন। হুসাইন রা. এর কারবালাতে শহীদ হবার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়েও শিয়াদের ইতিহাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেভাবেই তা তুলে ধরেছেন। তারপর যেটা সঠিক ইতিহাস সেটাকে 'অন্য বর্ণনায় আছে যে...' এভাবে দুর্বল ভঙ্গিমায় এক দুই লাইনে উপস্থাপন করে সামনে বেড়ে গেছেন। তাছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয় নজরে এসেছে। যা সংশোধনযোগ্য ও সুস্পষ্ট ভুল-ভ্রান্তি। এই বিষয়ে সামনে আরও লেখার ইচ্ছা আছে। যদি আল্লাহ তাওফীক দেন ও সময় সুযোগ হয়।





মন্দের ভালো
ইফতেখার সিফাত

মন্দের ভালোকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হয়। শরীয়তের মূলনীতি এটাই। যদি সত্যিই এরদোগান মন্দের ভাল হয় মানে সেখানে আপাতত তার চেয়ে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে, তবে তার বিজয়কে মন্দের ভালো দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করা যেতে পারে।
সূরা রুমে মহান আল্লাহ তা'য়ালা খ্রিস্টানদের কাছে পারস্যের পরাজয়ের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এটাকে মুসলমানদের জন্য একটা সুসংবাদ ও বলা হয়েছে। এর কারন হচ্ছে পারস্যদের তুলনায় খ্রিষ্টানরা মুলমানদের জন্য বেশী অনুকূলে ছিল। যেমন সূরা মায়িদার ৮২ নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। আয়াতের অর্থের সারমর্ম হল, ইহুদীরা মুসমানদের জন্য কঠোর ছিল যার তুলনায় খ্রিষ্ঠানরা ছিল সহনীয়। তবে উভয়েই মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সবার সাথেই মুসলমানদের যুদ্ধ হয়েছে।
যদি বাস্তবিকপক্ষেই এরদোগান এই সমীকরণের আওতায় পরে, তবে তার বিজয় মুসলমানদের জন্য তুলনামূলক সহনীয় হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
কিন্তু এজন্য এটা কখনোই অনুমোদিত নয়, তার প্রশংসা আমার করতে হবে, তার কুফুরী কাজগুলোকে ডিফেন্স করতে হবে, তাল পাকিয়ে সেগুলোকে সঠিক দাঁড় করাতে হবে, ভালবাসতে হবে, তার পক্রিয়াকে সফল ভাবতে হবে শর'য়ী পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে। এছাড়াও আরো যা যা করা হচ্ছে আবেগের বশে, এর কিছুই অনুমোদিত নয়। বরং তার দোষগুলোকে মুসলমানদের জন্য প্রকাশ করতে হবে, তার ঈমান বিধ্বংসী কর্মের ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে।
যেমন মহান আল্লাহ তা'য়ালা নাসারাদের বিজয়কে ফোকাস করেছেন ঠিক সাথে সাথে তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও মতকে রদ করেছেন,সেগুলোর
অসারতা বর্ণনা করেছেন,সতর্ক করেছেন। তাদেরকে মুসলমানদের কর্ণধার সাবেত করেননি, মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত ও করেননি। এমনকি তাদের সাথে বারা'আতের সবক ও দিয়েছেন যতক্ষণ না তারা ইসলামে ফিরে আসবে।
তাই এরদোগানের সাথেও আমার বারা'আত থাকবে, যতক্ষণ না সে তার কুফুরী কর্ম থেকে পরিপূর্ণরূপে
ফিরে আসতে পারে। মানবরচিত বিধান, কাফেরদের সাথে হয়ে মুসলিম হত্যা, মুখে চিল্লিয়ে ভিতরে কাম ঠিক রাখা, হারাম কাজের অনুমতি প্রদান ইত্যাদি বিষয় থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার এসব কাজের ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করা ঈমানি দায়িত্ব। আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ এর ইকফারুল মুলহিদীন আমাদের এই সবকই দেয়। এটাই কালিমার দাবি।
আর যারা বৈশ্বিক রাজনীতির কথা বলেন, তারা পারলে এই অজুহাতের পিছনে শরীয়তের দলিল পেশ করেন। মুসলমানদের কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাফেরদের কাতার থেকে দলবদ্ধভাবে যুদ্ধের সহায়তা করা কোন অজুহাতেই বৈধ নয়। ১৫-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মদ, জিনা, সমকাতিতার লাইসেন্স বিদ্যমান থাকা কোন অজুহাতে পড়ে না। শরীয়ার একটি আইন ও বাস্তবায়ন না করা উলটো যেসব স্থানে শরীয়তে আইন যারা জারি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এর কিছুই বিশ্ব রাজনীতির অজুহাতে বৈধ হয় না।সুতরাং বিশ্ব রাজনীতির দোহাই দিতে আসবেন না। ইমান ও ইসলামের প্রশ্নে আমরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আদিষ্ট না।আমরা আদিষ্ট বাহ্যিক অবস্থার উপর, স্বীকারোক্তির উপর, কর্মের উপর। ব্যক্তি নিজে অন্তরগত ক্রিয়াই আদিষ্ট ;তাকে বিচার করতে গিয়ে অন্যরা না।
আর দীর্ঘ করা দরকার নেই। মোট কথা এরদোগানের বিজয় উল্লেখিত বাস্তবতার আওতায় পড়লে মুসলমানদের জন্য মন্দের ভাল হিসেবে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য তার কুফুরীর বৈধতা এবং নেতা মানা যাবে না। তাকে তার উপযুক্ত বিধেয় দিতে হবে। এটাই সুন্নাতুল্লাহ।
বিপরীতে আপনি যদি তার ভুলগুলোর ব্যাপারে চুপ থাকেন, তাকে সার্বিকভাবে প্রমোট করেন, পরিপূর্ণ ইতিবাচক ধারণার সবক দেন তাহলে জাতি এর থেকে যে ভুল মেসেজ নিবে সে দায় নিতে হবে আপনার। এটা কখনোই ইলমের দাবি হতে পারে না। ফলে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছেই। ইতিমধ্যেই এর শত নজির দৃশ্যমান। তাই আমাদের সুন্নাতুল্লায় ফিরে আসতে হবে।

No comments:

Post a Comment