Monday, September 10, 2018

সমাজে প্রচলিত জাহেলিয়াত (১ম পর্ব) (সন্তানের নাম রাখা)



জাহেলিয়াত মানে অজ্ঞতা। আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাহেলিয়াত ঢুকে পড়েছে। অধিকাংশ মানুষের ইসলাম সম্পর্কে বেসিক নলেজ নেই। ফলে প্রতিনিয়ত শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আমরা অজ্ঞতাকে ধারণ করছি এবং ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সমাজের কিছু প্রচলিত জাহেলিয়াত নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো তাই রেফারেন্স দিয়ে পোস্ট ভারি করবো না। এই লেখা কপি করতে পারবেন।

১. সন্তানের অনৈসলামিক নাম রাখাঃ একজন মুসলিম শিশুর নাম হতে হবে ইসলামিক। শুধু আরবি হলেই চলবে না, আরবি ভালো অর্থবোধক নাম হতে হবে। আমাদের সমাজে জাহেলিয়াতটি হচ্ছে সার্টিফিকেটের নাম ইসলামিক হলেও ডাকনাম হিসেবে বাংলা নাম রাখা হয়, যেমন আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, বল্টু, পল্টু, মন্টু। কিন্তু রাসূল সাঃ এর সুন্নাত হচ্ছে কুরআনের ভাষায় নাম রাখা, নাম যেন তার মুসলিম পরিচয় বহন করে।

আরবি নাম রাখলেও জানতে হবে সেটা ইসলামিক কিনা। এজন্য আরবি জানা আলিমের কাছ থেকে নামের অর্থ জেনে নিতে হবে। কিন্তু অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নাম খোঁজে অথচ এই নামটি তার সন্তানকে সারাজীবন বয়ে বেরাতে হবে। বিষয়টিকে খেলো মনে করলে চলবে না। যে নামগুলো পছন্দ হবে তার অর্থ কোনো আলিমের কাছে পাঠিয়ে জেনে নিতে হবে। এরপর বাছাই করে সুন্দর নাম রাখতে হবে।
যেসব নামের অর্থ নেতিবাচক যেমন - দুঃখ, কষ্ট, অভাগা ইত্যাদি সেসব নাম রাখা যাবে না। অনেকেই এই ভুলটা করে। কুরআনে একটা শব্দ পছন্দ হলেই সেটা নাম রেখে দেয়, কিন্তু দেখা যায় সেটার অর্থ নেতিবাচক। গর্ভবতী মায়েদের উচিৎ অর্থ সহ মুসলিম নামের একটা বই কিনে নেয়া। এরপর পছন্দের নামগুলোর অর্থ আলিমের কাছ থেকে শিউর হওয়া।

মায়ের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে বা কোনো নির্দিষ্ট অক্ষর দিয়ে নাম খোঁজ করা আরো একটি ভুল কাজ। এমন কাজ ইসলাম সমর্থিত নয়, আবার নিষিদ্ধও নয়। সুন্দর নাম রাখাই বাবা মার দায়িত্ব। আনকমন নাম খুঁজতে গিয়ে অনেকে এমন সব নাম রাখে যা আর ইসলামিক থাকে না।
 
আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নাম আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান। আব্দ এর পর আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোও আল্লাহর পছন্দ। যেমন আব্দুল মালিক, আব্দুল হাকিম ইত্যাদি। কিন্তু এসব নাম রাখলে অনেকে শুধু রহমান, হাকিম এভাবে ডাকে যা মারাত্মক গুনাহ। এজন্য বাবা মায়ের অভ্যাস করতে হবে পুরো নাম ডেকে। আব্দুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক এভাবে পুরো নাম ধরে ডাকা উচিৎ।

সন্তানের জীবনে নামের প্রভাব পড়ে। তাই নেতিবাচক নাম রাখা যাবে না। যেসবের অর্থ রুগ্ন, কষ্ট, অসুস্থ সেসব নাম কিছুতেই রাখা যাবে না।

এছাড়া আলিফ, মিম, এরকম আরবি অক্ষর দিয়ে নাম রাখাও ইসলাম সমর্থিত নয়। কারণ এগুলো শুধু বর্ণমালা, এর অর্থ হয় না।

আব্দ শব্দ যুক্ত এমন নাম রাখা যাবে না যেগুলো আল্লাহর নাম নয়। যেমন আব্দুন নবী, আব্দুর রসূল। এই নামগুলো শিরকি নাম, দ্রুত বদলানো জরুরী। আব্দ অর্থ দাস। মানুষ শুধু মাত্র আল্লাহর দাস।

তবে গোলাম অর্থ সবসময় দাস হয় না, তাই গোলাম মোস্তফা নামে সমস্যা নাই। কিন্তু কেউ যদি সেফ সাইডে থাকতে চায় তবে এই নামও পরিহার করতে পারে।

কোনো হিন্দুয়ানী, খৃস্টানী নাম রাখা যাবে না। যেমন মাইকেল, লক্ষ্মী, দুর্গা ইত্যাদি।

অনেকে দেখা যায় নামের আগে মোঃ রাখে। এভাবে মোঃ রাখা সাহাবীদের আমলে দেখা যায় না। তবে কেউ যদি রাখতে চায় তাকে মুহাম্মাদ রাখতে হবে। লেখার সময় মুহাম্মাদ লিখতে হবে, মোঃ লেখা অনুচিত। আর মোঃ এর পর আব্দ যুক্ত নাম রাখা যাবে না। যেমন মোঃ আব্দুর রহমান।

নামের সাথে পিতার নাম যুক্ত করা উত্তম। যেমন হাসান বিন আলি, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিনতে হয়।

কেউ যদি আনকমন নাম খুঁজে থাকেন তবে সাহাবীদের নামে খোঁজ করুন। সাহাবীদের সংখ্যা অনেক, তাদের নামে অনেক আনকমন নাম পাবেন। তবে সেটাও ভালো অর্থবোধক নাম হতে হবে। ভালো করে জেনে বুঝে নাম রাখবেন।

দ্বিতীয় পর্ব অন্য কোনো ভুলভ্রান্তি নিয়ে ইনশাআল্লাহ।

No comments:

Post a Comment