বিয়ের আগে থেকেই মনে মনে চাইতাম, আল্লাহ যদি আমাকে সন্তান দেন, সেটা যেন
মেয়ে হয়। কিন্তু সুবাইতা যখন তার মায়ের পেটে আসে, তখন সেই দুআটা আর করতাম
না। ভয় লাগতো, যদি আল্লাহ না দেন, খারাপ লাগবে খুব। বরং এভাবে দুয়া করতাম,
আল্লাহ সুস্থ সন্তান দিও। ছেলে হোক, মেয়ে হোক, তোমার ফায়সালাতেই রাজি।
আল্লাহ মেয়ে দিলেন। সুস্থ হিসেবেই দুনিয়াতে আনলেন। প্রথমবারের মত উপলব্ধি
করলাম, আমার মুখের ভাষা, দুআর শব্দ যিনি শুনেন, তিনি তো মনের গভীরে লুকিয়ে
থাকা ইচ্ছেটাও জানেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি আমার রব তার বান্দাকে চোখে পানি চলে আসার মত খুশি করে দিলে তার তো কোন ক্ষতি নেই।
দ্বিতীয় বার। প্রথমটা যেহেতু মেয়ে, বাসার সবাই চায় ছেলে হোক। প্রতিবার
আলট্রাসোনাগ্রাফির সময় বাচ্চার মা ডক্টরকে জিজ্ঞেস করেন, ছেলে না মেয়ে।
একেকবার একেক কারনে ডক্টর বলেন না। মনে মনে আগেরবারের মতই দু'আ করি, আল্লাহ
যা দিবা, আমি খুশি। একবার যা চেয়েছি তাই পেয়েছি, দ্বিতীয়বার আল্লাহর
ফায়সালাতেই রাজি থাকি।
ডেলিভারির দুইদিন আগে জানতে পারলাম, ছেলে
হবে ইন শা আল্লাহ। তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না। দুইদিন পর যখন পুচকাটাকে কোলে
নেই, ডক্টর আযান দিতে বলে, অনেকক্ষন মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছিল না। কাঁদতে
থাকলে মানুষ কি কথা বলতে পারে?
বিয়ের আগে ও পরে এরকম শত শত দু'আ
করেছি, যার ধারে কাছেও কখনো পাই নি। বরং যা চেয়েছি তার উলটোটাও হয়েছে
বহুবার। মুষড়ে পড়েছি, কষ্টও লেগেছে। অভিমান তো হতই।
আজ যখন দুই ভাই
বোন পাশাপাশি ঘুমাচ্ছিল, শান্ত দু খানা মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন
করছিলাম, কোনটা বেশি? অপ্রাপ্তির কষ্ট না প্রাপ্তির আনন্দ? উত্তর আসতে দেরী
হল না একটুও। প্রাপ্তির আনন্দ - সে তো তুলনাহীন ভাবে বেশি।
-------------------
ভরসা রাখুন তার ওয়াদার উপর। যিনি আপনার সব প্রার্থনা শোনার পরও আপনার আশা
পুরন করছেন না, তিনি নির্দয় নন, পরম দয়ালু। বাঁধ ভাঙ্গা খুশিই হয়তো
অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। একটু ধৈর্য ধরলেই যার নাগাল পেয়ে যাবেন আপনি।
নিশ্চয়ই যিনি কাঁদান, তিনিই হাসান।
No comments:
Post a Comment