শাইখ ডঃ তারিক আব্দুল হালিম কায়রোর জামে’ ইসমালিয়াহ গ্রামে জন্ম গ্রহণ
করেন। তাঁর পিতা হলেন আব্দুল হামিদ আহমাদ আল-মাহামি। তিনি মিসরের কর
বিভাগের সাবেক প্রধান ছিলেন। শাইখ উচ্চ মিসরের কিনা জেলার আহমাদ আব্দুল
হালিম পরিবারের বংশধর। তাঁর মাতা হলেন যাইনাব আব্দুল আযিয সালিম আলবিশরি।
তিনি মিসরের একজন প্রসিদ্ধ লেখক ও সাহিত্যিক “আধুনিক যুগের প্রতিবাদ” নামে
খ্যাত শাইখ আব্দুল আযিয আলবিশরির মেয়ে, এবং ইমাম সালিম বিন আবু ফিরাজ
আলবিশরি (শাইখুল আজহার আব্দুল মাজিদ সালিম) এর নাতনী। তাঁরা মিসরের
বাহিরিয়্যাহ জেলার বিশর এর অধিবাসী ছিলেন।
ডঃ তারিক আব্দুল হালিম কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদ থেকে ডিগ্রি
নেন। আরব বিশ্বের নানা প্রান্তে তিনি কাজ করেছেন, যেমন সৌদি আরব, কুয়েত,
জর্ডান ইত্যাদি। অতঃপর ১৯৮৫ সালে তিনি মাস্টার ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য
ব্রিটেনে গমন করেন। সেখান থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার অভিবাসী হিসেবে কানাডা
যায়। .
.
ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি উস্তাদ সাইয়েদ কুতুবের রাহিমাহুল্লাহ বইসমূহ নিজ
হাতে কপি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করে দাওয়াতের পথচলা
শুরু করেন। অতঃপর তা প্রসারিত হতে থাকে, এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে
ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাঁর দাওয়াতি কাজের চল্লিশ বছর তিনি আরব বিশ্ব, ইউরোপ ও
আমেরিকায় ব্যয় করেছেন।
শাইখের ইসলামী জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তথা আকিদা, ফিরাকে বাতেলা,
উসুলে ফিকহ সম্পর্কে প্রচুর বই/প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তেমনিভাবে পত্রিকা ও
সাময়িকীতে রাজনীতি, খালেস দীনী ও সাহিত্যে শাইখের অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত
হয়েছে। যেমন আলমানারুল জাদিদ, মাজাল্লাতুল বয়ান সহ অন্যান্য পত্রিকা। গত
শতাব্দীর আশির দশকে প্রকাশিত ‘মাজাল্লাতুল বয়ান’ এর প্রকাশনার কাজেও শাইখ
শরীক ছিলেন। শাইখ একইসাথে আরবি ও ইংরেজিতে লেখালেখি করতেন, বর্তমানের
সালাফিয়্যাতের দাবিদারদের ভুলভ্রান্তি যেমন লিখতেন, তেমনি শিরক-বিদআত নিয়েও
অনেক লেখালেখি করেছেন, বিশেষত সুফিবাদ সম্পর্কিত ভুলভ্রান্তিগুলো নিয়ে।
শাইখ নিজে সালাফি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে যারা নিজেদের সালাফি দাবি করে
তাদের ভুলভ্রান্তি নিয়ে লেখা “ফিতনাতু আদইয়াউস সালাফিয়্যাহ
ওয়াইনহিরাফাতিহিম” শাইখের একটি যুগান্তকারী রচনা। শাইখের অনেক কিতাব
উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে, যেমন কিতাবুল মু’তাজিলাহ, সুফিয়াহ,
মিফতাহুদ দুখুল ইলা ইলমিল উসুল, পাকিস্তানে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র
মাঝেও তিনি অনেক জনপ্রিয়। বাংলাতেও শাইখের কিছু প্রবন্ধ অনুবাদ হয়েছে।
.
শাইখ তারিক আব্দুল হালিম আমেরিকা ও কানাডায় বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ
করতেন, কিন্তু এই সকল সম্মেলন ও সেমিনারে তিনি মুসলমানদের অল্পবিস্তর
উপকারের সাথে সাথে সময় ও অর্থের অধিক ক্ষতি দেখে পরবর্তীতে বর্জন করেন।
শাইখ আশির দশকের শেষের দিকে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার পর ‘দারুল আরকাম’
প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ‘আলজামিয়াহ আল আমিরিকিয়্যাহ আলইসলামিয়্যাহ’র
সহযোগিতায় ইসলামী শরিয়াহর উপর ডিপ্লোমা শিক্ষা দান শুরু করেন। অনেক ছাত্র
তাঁর থেকে ডিপ্লোমা নেয়। এমনিভাবে শাইখ টরেন্টোতে ‘উম্মাতুল ইসলাম’ নামে
আরবি ও ইংরেজিতে অনেক বছর একটি ম্যাগাজিন বের করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment